জনসংখ্যা পরিবর্তন বলতে কি বুঝায়? এর মূল উপাদানগুলি কি?
প্রজননশীলতা বলতে কি বুঝায়? প্রজননশীলতা এবং প্রজননক্ষমতার পার্থক্যকরণ করুন।


কালীক পর্যায়ে জনসংখ্যার পরিমাণ বা সংখ্যাগত যে হ্রাস-বৃদ্ধি হয় তাকে জনসংখ্যা পরিবর্তন বলে।
একটি দেশে বা জনগোষ্ঠীতে জনসংখ্যা পরিবর্তন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রথমত এই পরিবর্তন ধারা
পর্যালোচনা করে জনমিতিক ক্ষয়পূরণ তথা ভারসাম্য নিরীক্ষণ করা যায়। একটি জনসংখ্যার মৃত্যু অথবা
সদস্যদের বহির্গমনের ফলে একটি জনগোষ্ঠীর বা সমাজের ক্ষয় হয়, আবার জন্ম অথবা অন্তর্গমনের
দ্বারা এই ক্ষয় পূরণ, এমন কি জনসংখ্যার বৃদ্ধি ঘটে। কাজেই জনসংখ্যা পরিবর্তন সাধনে তিনটি
উপাদান গুরুত্বপূর্ণ:
(ক) জন্ম বা প্রজননশীলতা; (খ) মৃত্যু বা মরণশীলতা; এবং (গ) অভিগমন।
উপরোক্ত উপাদানসমূহের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মধ্যে ভারসাম্য থাকা প্রয়োজন। তবে তা বাস্তবে কদাচিৎ
ঘটতে পারে। মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধি যেমন ক্ষতিকর মাত্রাতিরিক্ত হ্রাসও তেমনি ক্ষতিকর।
জনসংখ্যা হ্রাস পেলে শ্রমশক্তি হ্রাস পায়, ফলশ্রæতিতে আপেক্ষিক উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে;
এমন কি সমাজের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে। অনুরূপভাবে জন্ম হার হ্রাস-বৃদ্ধি সমাজে ভোগ ও চাহিদা
বৃদ্ধি, অব্যবহৃত শ্রমিক বেকার সমস্যার সৃষ্টি, খাদ্যাভাব, কর্ম ও গৃহায়ন, সামাজিক সুবিধাদি এবং
যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবস্থার উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, জাতীয় সম্পদের
উপর চাপ সৃষ্টি করে।
সাম্প্রতিক দশকে বাংলাদেশের জনসংখ্যার মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি দেশের উন্নয়ন গতিকে যথেষ্ট ব্যাহত
করেছে এবং সামাজিক -অর্থনৈতিক অবকাঠামোর উপর যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করেছে। প্রায় বিকাশশীল
দেশে এই পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলা যায়। জনসংখ্যা পরিবর্তন পরিমাপ করার বেশ কয়েকটি পদ্ধতি
রয়েছে। তবে সহজসাধ্য উপায় হলো দুইটি আদমশুমারীর মধ্যে জনসংখ্যার শতকরা পরিবর্তন লক্ষ্য
করা। এর থেকে বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার নির্ণয় করা যায়। তবে এর থেকে জনসংখ্যা উপাদানসমূহের
আপেক্ষিক ভ‚মিকা পরিমাপ করা যায় না। এজন্য পৃথকভাবে উপাদানসমূহ পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।
প্রজননশীলতা
প্রজননশীলতা (ঋবৎঃরষরঃু) বলতে সজীব (খরাব) শিশু জন্মকে বুঝায়। সংশিষ্ট শব্দ ‘প্রজনন ক্ষমতা'
অর্থাৎ, শিশু জন্মদান ক্ষমতা (ঋবপঁহফরঃু) এবং ‘প্রজননশীলতা' ভিন্নতর। প্রজননশীলতা প্রতি হাজার
জনসংখ্যায় পরিমিত হয়। প্রজননশীলতা জনসংখ্যা পঠন-পাঠনের একটি প্রধান বিষয় কেননা, এটি
মরণশীলতা এবং অভিগমনের চাইতে অধিক হারে ঘটে, ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রধান অনুঘটক।
যেখানে মরনশীলতা ব্যক্তিকেন্দ্রিক অবশ্যম্ভাবী এবং অনিয়ন্ত্রিত, সেখানে প্রজননশীলতায় এগুলির
কোনটি প্রযোজ্য নয় বরং কোনভাবেই স্থির বা অনুমানযোগ্য নয়। প্রজননশীলতাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়
এবং সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং মনস্তাত্বিক নিয়ামক দ্বারা প্রভাবিত হয়। উপরন্তু,
মরণশীলতা যে কোন বয়সের জন্য প্রযোজ্য, কিন্তু প্রজননশীলতা কেবল নির্দিষ্ট বয়সসীমার মহিলাদের
ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ফলে, প্রজননশীলতার হারে মরণশীলতা অপেক্ষা অনেক সময় স্বল্পকালীন উত্থান-পতন
দেখা যায়।
প্রজননশীলতা হারের হ্রাস-বৃদ্ধি অনেক সময় তথ্যের ঘাটতির জন্য ঘটতে পারে। জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
সংক্রান্ত তথ্যও প্রায় দেশের জন্য ভ্রান্তিপূর্ণ। তবে জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিভাগ এ সমস্ত ভ্রান্তি
সংশোধনের জন্য উন্নত পদ্ধতি বের করেছে যা দ্বারা কোন দেশের প্রজননশীলতা হারের পরিসংখ্যান
সংশোধন সম্ভব। অবৈধ সন্তান ধারণ বা জারজতা অনেক সময় প্রকৃত প্রজননশীলতা হারকে প্রভাবিত
করতে পারে। এ ধরনের ভ্রান্তি মধ্য আমেরিকান দেশসমূহে প্রায় দেখা যায়।
প্রজননশীলতা বিভিন্নতার কারণ:
মানব জনসংখ্যায় সকল নারী সন্তান ধারণ এবং জন্মদান ক্ষমতা ও সংখ্যা সমরূপ নয়। অর্থাৎ
প্রজননশীলতার দিক থেকে এদের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। এর পেছনে কারণগুলো পরিবেশগত
থেকে আর্থ-সামাজিক হয়ে থাকে। ফলে উন্নত বিশ্বে স্থূল জন্ম (ঈৎঁফব ইরৎঃয জধঃব-ঈইজ) প্রতিহাজার
জনসংখ্যায় হার ১০ থেকে ১৫ জন কিন্তু বিকাশশীল দেশে এই হার ২৫ থেকে ৫০ হতে পারে। এই
হারের দেশ ভিত্তিক পার্থক্য আরও ব্যাপক। আবার একই জনসংখ্যার বিভিন্ন শ্রেণীর (ঝঁনমৎড়ঁঢ়/ঝঁনপষধংং) মধ্যেও প্রজননশীলতার তারতম্য হতে পারে। অনেকে মনে করেন যে, আবহাওয়া-জলবায়ু
প্রজননশীলতার উপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে। বিষয়টি মারাÍক ভ্রমাÍক, কেননা একই জলবায়ু অঞ্চলের
ইসরাইল এবং জর্ডান বা মিশরের স্থূল জন্মহারের মধ্যে মারাÍক পার্থক্য রয়েছে। তেমনি দক্ষিণ এশিয়
দেশসমূহের মধ্যেও এই হারের পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। বর্তমান যুগে এই বিভিন্নতার কারণ প্রধানত:
আর্থ-সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক। কোন জলবায়ুগত কারণের তেমন কোন ভ‚মিকা নেই বা এর কোন
বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
সারণী ৩.২.১: স্থূল জন্মহারের বিশ্ব আঞ্চলিক বিন্যাস, ২০১০
স্থূল জন্মহারের বিশ্বআঞ্চলিক বিন্যাস, ২০১০
সমগ্রবিশ্ব: ২৭ এশিয়া: ২৭
উন্নত অঞ্চল ১৫ পূর্বএশিয়া ১৮
বিকাশশীল অঞ্চল ৩১ দক্ষিণ-পূর্বএশিয়া ৩২
আফ্রিকা: ২৭ দক্ষিণ এশিয়া ৩৬
উত্তর আফ্রিকা ৪২ পশ্চিম এশিয়া ৩৮
পশ্চিম আফ্রিকা ৪৯ ওশানিয়া: ২১
ইউরোপ: ১৪ অস্ট্রেলিয়া ১৬
পূর্বইউরোপ ১৬ নিউজিল্যান্ড ১৬
উত্তর ইউরোপ ১৩ অন্যান্য ২৫
দক্ষিণ ইউরোপ ১৫ উত্তর আমেরিকা: ১৬
পশ্চিম ইউরোপ ১২ ল্যাটিন আমেরিকা: ৩২
উৎস: ডড়ৎষফ ইধহশ জবঢ়ড়ৎঃ ২০১০.
নিচে প্রজননশীলতার অসমতার কতিপয় উল্লেখযোগ্য কারণ আলোচনা করা হল:
বৈবাহিক বৈশিষ্ট্য : বৈবাহিক অবস্থা বিশেষ করে বিবাহের বয়স, একাধিক বিবাহ, বিবাহ বিচ্ছেদ প্রভৃতি
বিষয় সম্পর্কিত রীতিনীতি প্রজননশীলতার তারতম্যের অন্যতম কারণ। বিলম্বে বিবাহ নারীর
প্রজননকালকে সংক্ষিপ্ত করে, ফলে জন্ম হার কম হয়। বিবাহ বিচ্ছেদের ফলেও প্রজননকাল সংক্ষিপ্ত
হয়, ফলে প্রজননশীলতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। পাশ্চাত্য দেশসমূহে দেরীতে বিবাহ, অর্থাৎ
উচ্চ গড় বিবাহ বয়স এবং বিবাহিত জীবন ধারা, বিশেষ করে এ সময়ে জন্ম নিয়ন্ত্রণ উপকরণের উচ্চ
হারের কারণে নি¤œ প্রজননশীলতা অবস্থা লক্ষ্য করা যায়। এ সমস্ত দেশে নারীর গড় বিবাহ বয়স প্রায়
২৫ বৎসর। পক্ষান্তরে, বিকাশশীল দেশে এই বয়স মাত্র ১৭ বৎসর। ফলে বিকাশশীল দেশে নারীদের
দীর্ঘ প্রজননকাল অতিবাহিত হয় সন্তান ধারণে, যার কারণে এ সমস্ত দেশে উচ্চ জন্ম হার লক্ষ্য করা
যায়।
শিক্ষাগত অবস্থা: শিক্ষা প্রজননশীলতার তারতম্যের ক্ষেত্রে অন্যতম একটি উপাদান। বিভিন্ন
জনগোষ্ঠীতে দেখা গেছে শিক্ষা ও প্রজননশীলতার মধ্যে নেতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে। শিক্ষার মান ও
পর্যায় বৃদ্ধি পেলে প্রজননশীলতা হ্রাস পায়। অপরদিকে স্বল্প শিক্ষিত দেশে বা জনগোষ্ঠীতে বিপরীত
সম্পর্ক দেখা যায়। উচ্চ-শিক্ষিত নারীরা শিক্ষার প্রয়োজনের স্বার্থে বিবাহ অবস্থা বিলম্বিত করেন এবং
অথবা বিবাহিতগণ সন্তান ধারন বিলম্বিত করেন এবং বিবাহিত জীবনে সন্তান ধারণে স্বীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ
করে থাকেন। ফলে, প্রজননশীলতা প্রভাবিত হয়। এই পরিস্থিতি উন্নত ও বিকাশশীল উভয় বিশ্বে
দৃশ্যমান। এ কারণে জন্ম হার হ্রাসকরণের ক্ষেত্রে অনেক দেশে সামগ্রিক শিক্ষা অবস্থা, বিশেষ করে নারী
শিক্ষার উন্নতির উপর সাম্প্রতিককালে গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
পেশা: পেশাগত পার্থক্যের জন্যও প্রজননশীলতার বিশেষ তারতম্য হয়ে থাকে। সাধারণভাবে প্রাথমিক
পর্যায়ের কর্মকান্ডে নিয়োজিত এবং নি¤œহারের একটি ভ‚মিকা কার্যকর থাকতে পারে। অপরদিকে,
মাধ্যমিক ও তৃতীয় পর্যায়ের কর্মকান্ডে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর, যাদের মধ্যে শিক্ষার হার বেশী, অর্থাৎ
পেশাজীবীদের মধ্যে নি¤œ জন্ম হার দেখা যায়। পেশার এই প্রভাব পাশ্চাত্যে নি¤œ জন্মহারের জন্য বিশেষ
ভ‚মিকা রেখেছে। অপরদিকে, পেশাজীবী নারীদের মধ্যে সীমিত পরিবার সৃষ্টির লক্ষ্যে নি¤œ জন্ম হার
লক্ষণীয়। এক্ষেত্রে নারীর চাকুরীর দায়িত্ব পালন এবং সন্তান ধারণ ও লালন-পালন একটি বিপরীতধর্মী
সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে - যার প্রভাব নারীদের নি¤œ প্রজননশীলতার মাধ্যমে
প্রতিভাত হয়। উন্নত ও বিকাশশীল উভয় ধরনের দেশে এই পরিস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
আবাসিকতা: গ্রাম ও শহরে আবাসিকতা ও প্রজননশীলতার মধ্যে সুŒষ্ট বিপরীত সম্পর্ক রয়েছে। পল্লী
এলাকার চাইতে শহর এলাকায় প্রজনন হার কম দেখা যায়। বাংলাদেশে বিবাহিত নারীর জীবিত সন্তান
জন্মদানের গড় সংখ্যা (২০১০) শহর এলাকায় ৩.৪ এবং পল্লী এলাকায় ৩.৯ ছিল। উন্নত বিশ্বে এই
পার্থক্য আরও ব্যাপক। আবাসিকতা অনুযায়ী প্রজননশীলতার পার্থক্য প্রধানত জনগোষ্ঠীর শিক্ষা ও
পেশাগত কাঠামোর সাথে সম্পর্কযুক্ত। এছাড়াও শহরাঞ্চলে উচ্চ লিঙ্গ-হার, আবাসিক সমস্যা,
অভিগমনে বয়স ও লিঙ্গ ভিত্তিক প্রবণতা ইত্যাদি পরিস্থিতিতে, বিশেষ করে বিকাশশীল দেশসমূহের
নগরগুলিতে নারীগণ কম হারে বসবাস করে এবং অনেক পরিবার সন্তানদের পল্লী অঞ্চলে রেখে আসে।
এহেন পরিস্থিতি স্বাভাবিকভাবে নি¤œ প্রজননশীলতা ও নি¤œ জন্মহারের সৃষ্টি করে।
ধর্মীয় কাঠামো : প্রজননশীলতার তারতম্যে কোন কোন দেশের ধর্মীয় কাঠামোর বিশেষ ভ‚মিকা রয়েছে।
অনেক ধর্মে বিবাহিত অবস্থাকে উৎসাহিত করা হয়। আবার কোন কোন ধর্মে জন্মনিয়ন্ত্রণকে পাপ বলে
পরিগণিত হয়। এ সমস্ত ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির কারণে মুসলমান, ক্যাথলিক খৃষ্টান এবং ইহুদীদের মধ্যে উচ্চ
প্রজননশীলতা লক্ষ্য করা যায়। এমন কি ইউরোপের ক্যাথলিক অধ্যুষিত ইতালী, গ্রীস ও স্পেনে
অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের তুলনায় উচ্চ জন্ম হার দেখা যায়। দক্ষিণ এশিয়ায় হিন্দুদের মধ্যে বিধবা
বিবাহ নিরুৎসাহ করার সংস্কৃতি থাকায় এবং অপরদিকে মুসলমানদের মধ্যে এদের পুনর্বিবাহ প্রচলিত
থাকায় মুসলমানদের মধ্যে হিন্দু অপেক্ষা উচ্চ জন্ম হার লক্ষ্য করা যায়।
উপরোক্ত প্রধান নিয়ামকসমূহ ব্যতীত সমষ্টিগতভাবে একটি দেশের বয়-লিঙ্গ কাঠামো, লিঙ্গ ও বয়স
ভেদে মরণশীলতা,পরিবার কাঠামো সম্পর্কীয় সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সাম্প্রতিককালে শিশু মৃত্যু হারের
ক্রমাবনতি, মাতৃ মৃত্যুর হ্রাস, নারীর অবস্থানের প্রতি পরিবর্তিত সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, নারীর সন্তান ধারণ
এবং পারিবারিক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্রমবর্ধমান ক্ষমতা এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের
ক্রম বর্ধমান ক্ষমতা এবং জন্ম নিয়ন্ত্রণ উপকরণের ব্যাপক ব্যবহার প্রজননশীলতার উপর নেতিবাচক
প্রভাব বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখছে। এই সমস্ত অবস্থার অনেকগুলিই সম্প্রতি বিকাশশীল দেশে
কার্যকর দেখা গেছে। এ সমস্তের ফলশ্রæতিতে বিশ্বের প্রায় সকল দেশে জন্মহারের উল্লেখযোগ্য হ্রাস
ঘটেছে।
প্রজননশীলতার বিশ্বধারা
স্থান ও কাল হিসেবে বিশ্বব্যাপী প্রজননশীলতার পার্থক্য রয়েছে। জন্ম হার সর্বনি¤œ প্রতি হাজারে ৪০
থেকে ২৪০ (১০-৪৯ বয়-সীমায়) হতে পারে। সর্বোচ্চ প্রজননশীলতা (জন্ম হার প্রতি হাজারে ৪০-এর
উপরে) এবং প্রজনন হার ১২০-এর বেশী ল্যাটিন আমেরিকার অধিকাংশ দেশে, আফ্রিকা, পশ্চিম ও
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দেখা যায়। শিশু ও যুবা বয়সে উচ্চ মৃত্যু হার এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী মনে করা
হয়। ল্যাটিন আমেরিকার দেশসমূহে দ্রæত হ্রাসপ্রাপ্ত মৃত্যু হার, অভিবাসন উচ্চ জন্মহারের প্রধান কারণ।
অপরদিকে, এশিয়ার ব্যাপক অঞ্চলে উচ্চ জন্ম হার অতি উচ্চ জনসংখ্যা বন্টন ও ঘনত্বের সাথে
সম্পর্কযুক্ত। এ সমস্ত অঞ্চলে নি¤œ শিক্ষাহার, কৃষিভত্তিক পেশা কাঠামো, ধর্মীয় সংস্কার উচ্চ
প্রজননশীলতার পেছনে কার্যকর। বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয় যে, বিশ্বের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জনসংখ্যা, যারা
প্রধানত: বিকাশশীল দেশে বাস করে সেখানে স্থূল জন্ম হার ৪০-এরও বেশী। অপরদিকে, নি¤œ
প্রজননশীলতা সম্পন্ন উন্নত বিশ্বে, প্রধানত: ইউরোপে স্থূল জন্ম হার ১৫-এরও নিচে।
সারণী ৩.২.২: স্থূল মৃত্যু হারের বিশ্ব আঞ্চলিক বিন্যাস, ২০১০
স্থূল মৃত্যুহারের বিশ্ব আঞ্চলিক বিন্যাস, ২০১০
বিশ্ব: ২৪ মধ্য আফ্রিকা ৪৬ ইউরোপ: ১১
উন্নত বিশ্ব ১২ দক্ষিণ আফ্রিকা ২৫ উত্তর ইউরোপ ১৩
বিকাশশীল বিশ্ব ২৮ এশিয়া: ২৪ পশ্চিম ইউরোপ ১১
আফ্রিকা: ৪১ পশ্চিম এশিয়া ৩১ পূর্ব ইউরোপ ১০
উপ-সাহারা ৪৪ দক্ষিণ এশিয়া ৩১ দক্ষিণ ইউরোপ ১১
উত্তর আফ্রিকা ৩২ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ২৬ উত্তর আমেরিকা ২৬
পশ্চিম আফ্রিকা ৪৫ পূর্ব এশিয়া ১৭ ল্যাটিন আমেরিকা
মধ্য আমেরিকা
২৬
২৯
পূর্ব আফ্রিকা ৪৬ ওসানিয়া ১৯ ক্যারিবীয় অঞ্চল ২৩
পাঁচ থেকে সাত দশকে পূর্বে নি¤œ প্রজননহার প্রধানত: পশ্চিম ইউরোপে, বিশেষ করে, স্ক্যান্ডিনেভিয়
দেশসমূহের বৈশিষ্ট্য ছিল। বর্তমানে প্রায় সকল মধ্য এবং পূর্ব ইউরোপীয় দেশসমূহে অতি নি¤œ
প্রজননশীলতা দেখা যায়। তবে ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক কারণে আলবেনিয়া (৩৫), আইসল্যান্ড (২৩),
পর্তুগাল (২৩), সার্বিয়া (২৩) এবং আয়ারল্যান্ডে (২০) ইউরোপীয় মাপকাঠিতে উচ্চ প্রজননশীলতা
দেখা যায়। সর্বনি¤œ প্রজননশীলতার জন্য (১২-এর নিচে) জার্মানী, হাঙ্গেরী, সুইডেন, চেকোশ্লোভাকিয়া,
অষ্ট্রিয়া এবং সুইজারল্যান্ড বিখ্যাত।
এশীয় দেশসমূহের মধ্যে নি¤œ প্রজননশীলতার জন্য জাপান (১২-এর নিচে) উল্লেখযোগ্য। মধ্যম মাত্রার
(১৫-৩০) প্রজননশীলতা হংকং, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশে দেখা যায়।
অপরদিকে অবশিষ্ট দেশসমূহে এখনও উচ্চ প্রজননশীলতা বিরাজ করছে। পশ্চিম এশিয়া ও উত্তর
আফ্রিকার দেশসমূহে উচ্চ প্রজননশীলতার জন্য বিখ্যাত। সাম্প্রতিককালে রাষ্ট্রীয় আইনের আওতায়
চীনে প্রজননশীলতার অতি দ্রæত হ্রাস বিশেষ উল্লেখ্য। মধ্যম পর্যায়ের প্রজননশীলতা উত্তর আমেরিকা,
ল্যাটিন আমেরিকার দক্ষিণ ভাগের দেশসমূহ, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে দেখা যায়। মধ্য
আমেরিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশসমূহ এখনো উচ্চ প্রজননশীলতা বিরাজ করছে।
উপরের পর্যালোচনা থেকে আমরা প্রজননশীলতার নিন্মোক্ত পাঁচটি বিশ্বধারা লক্ষ্য করতে পারি।
(ক) ল্যাটিন আমেরিকা, আফ্রিকা এবং এশিয়ার অধিকাংশে বা বেশিরভাগ দেশসমূহে অতি উচ্চ
প্রজননশীলতা;
(খ) বেশ কিছু বিকাশশীল দেশে উচ্চ প্রজননশীলতা;
(গ) বেশ কিছু বিকাশশীল দেশে দীর্ঘ মেয়াদী এবং শ্লথ প্রজননশীলতা হ্রাস;
(ঘ) কিছু উন্নত দেশে সম্প্রতি মধ্যম ও সামান্য উচ্চ প্রজননশীলতা পরিস্থিতি; এবং
(ঙ) কিছু দেশে, বিশেষ করে উত্তর ও মধ্য ইউরোপে স্থিতিশীল প্রজননশীলতা।
পাঠসংক্ষেপ:
কালীক পর্যায়ে জনসংখ্যার পরিমাণ বা সংখ্যাগত যে হ্রাস-বৃদ্ধি হয় তাকে জনসংখ্যা পরিবর্তন বলে।
একটি দেশে বা জনগোষ্ঠীতে জনসংখ্যা পরিবর্তন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
জনসংখ্যা পরিবর্তন সাধনে তিনটি উপাদান গুরুত্বপূর্ণ:
(ক) জন্ম বা প্রজননশীলতা; (খ) মৃত্যু বা মরণশীলতা; এবং (গ) অভিগমন।
এই পাঠে উপরোক্ত তিনটি উপাদানের মধ্যে জন্ম বা প্রজননশীলতা নিয়ে আলোচনা করেছি।
প্রজননশীলতা (ঋবৎঃরষরঃু) বলতে সজীব (খরাব) শিশু জন্মকে বুঝায়। প্রজননশীলতার বিভিন্নতার
কারণসমূহ হচ্ছে- বৈবাহিক বৈশিষ্ট্য, শিক্ষাগত অবস্থা, পেশা, আবাসিকতা, ধর্মীয় কাঠামো প্রভৃতি।
এছাড়া প্রজননশীলতা বিশ্ব ধারা সম্পর্কে ধারণা লাভ করেছি। স্থান ও কাল হিসেবে বিশ্বব্যাপী
প্রজননশীলতার পার্থক্য রয়েছে। এই পার্থক্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন:
১. শূন্যস্থান পূরণ করুন:
১.১. ----- পর্যায়ে জনসংখ্যার পরিমাণ বা সংখ্যাগত যে হ্রাস-বৃদ্ধি হয় তাকে জনসংখ্যা পরিবর্তন
বলে।
১.২. প্রজননশীলতা প্রতি ----- জনসংখ্যায় পরিমিত হয়।
১.৩. উন্নত বিশ্বে স্থূল জন্ম প্রতিহাজার জনসংখ্যায় হার ----- থেকে ১৫ জন কিন্তু বিকাশশীল দেশে
এই হার ২৫ থেকে ----- হতে পারে।
২. সত্য হলে ‘স' মিথ্যা হলে ‘মি' লিখুন:
২.১. একই জলবায়ু অঞ্চলের ইসরাইল এবং জর্ডান বা মিশরের স্থূল জন্মহারের মধ্যে মারাÍক পার্থক্য
রয়েছে।
২.২. বিলম্বে বিবাহ নারীর প্রজননকালকে সংক্ষিপ্ত করে, ফলে জন্ম হার বেশী হয়।
২.৩. বিবাহ বিচ্ছেদের ফলেও প্রজননকাল সংক্ষিপ্ত হয়।
২.৪. বাংলাদেশে বিবাহিত নারীর জীবিত সন্তান জন্মদানের গড় সংখ্যা (২০১০) শহর এলাকায় ৩.৪
এবং পল্লী এলাকায় ৩.৯ ছিল।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন:
১. জনসংখ্যা পরিবর্তন বলতে কি বুঝায়? এর মূল উপাদানগুলি কি?
২. প্রজননশীলতা বলতে কি বুঝায়? প্রজননশীলতা এবং প্রজননক্ষমতার পার্থক্যকরণ করুন।
৩. প্রজননশীলতার বিভিন্নতার প্রধান কারণগুলি কি কি?
রচনামূলক প্রশ্ন:
১. জনসংখ্যা পরিবর্তন বলতে কি বুঝায়? প্রজননশীলতার বিশ্ব বিন্যাস ধারা আলোচনা করুন।
২. প্রজননশীলতা বলতে কি বুঝায়? প্রজননশীলতার বিভিন্নতার প্রধান কারণগুলি ব্যাখ্যা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]