জীবজগতের যে কোন সদস্যের মত মানুষ মরণশীল। জন্মে যে জীবন শুরু মৃত্যুতে তার আমোঘ
পরিসমাপ্তি। মানুষের মৃত্যু হলেও সমাজ মরণশীল নয়; কেননা মৃত্যুর ফলে সমাজের যে ক্ষয় তা জন্মের
মাধ্যমে পূরণ হয়। প্রকৃতপক্ষে, প্রজননশীলতা ও মরণশীলতা সমাজে সংখ্যাগত ভারসাম্য রক্ষা করে।
তবে মরণশীলতা পরোক্ষভাবে প্রজননশীলতাকেও প্রভাবিত করতে পারে। বিশ্বের বিকাশশীল অঞ্চলের
উচ্চ প্রজননশীলতার উপর শিশু মৃত্যুহারের বিশেষ প্রভাব রয়েছে।
মরণশীলতা জনসংখ্যার বৃদ্ধি প্রক্রিয়াকেই শুধু প্রভাবিত করে না, সামাজিক-আর্থনীতিক বিকাশের
প্রক্রিয়াকেও প্রভাবিত করতে পারে। উচ্চ মৃত্যু হার জনসংখ্যা কাঠামো বিভিন্ন অংশ যেমন, সামাজিক
কাঠামো, বয়-কাঠামো, বিবাহ-কাঠামো, এবং আর্থনীতিক কাঠামো বিশেষ করে শ্রম শক্তি সরবরাহকে
প্রভাবিত করে থাকে।
মৃত্যু সাধারণত: একটি জনসংখ্যার সদস্যদের বার্ধক্য জনিত অথবা ব্যাধি জনিত কারণে ঘটে থাকে।
জনসংখ্যার এই মৃত্যু প্রবণতাকে মরণশীলতা (গড়ৎঃধষরঃু) বলে। প্রজননশীলতার মত মরণশীলতাও
প্রতি হাজার জনসংখ্যায় সাধারণত: নির্মিত হয়। মৃত্যুকে নিয়ন্ত্রণ জন্ম নিয়ন্ত্রণের চাইতে মানব সমাজে
অধিকতর গ্রহণীয়। যার ফলে বিশ্বব্যাপী রোগ-শোক হ্রাসের প্রচেষ্টা ও প্রবণতা সভ্যতার শুরু থেকে
গুরুত্বলাভ করেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতিই এর প্রতিফলন। বিশ্বের অঞ্চল বিশেষে প্রজননশীলতা
হ্রাসের চাইতে মরণশীলতা হ্রাসের ব্যাপকতা সহজে ও দ্রæত ঘটেছে। এর প্রতিফলন ঘটেছে বিভিন্ন
অঞ্চলে মানুষের আয়ুষ্কাল (খড়হমরারঃু) বৃদ্ধিতে। মরণশীলতার দ্রæত হ্রাস এবং আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি বিশ্বের
অঞ্চল বিশেষে ‘জনসংখ্যা বিস্ফোরণ' এর জন্য দায়ী। এ কারণে ভ‚গোলবিদগণ জনসংখ্যার
মরণশীলতার বিন্যাসের প্রতি বিশেষ আগ্রহী।
সারণী ৩.৩.১: নির্বাচিত দেশসমূহের গড় আয়ুষ্কাল, ২০১০
নির্বাচিত দেশসমূহের জনসংখ্যার গড়
আয়ুষ্কাল ২০১০
দেশ গড় আয়ু (বৎসর)
বাংলাদেশ ৬৬.৯
শ্রীলঙ্কা ৭৪.৪
ভুটান ৬৫.৭
মালদ্বীপ ৭২.৩
পাকিস্তান ৬৭.২
ভারত ৬৪.৪
নেপাল ৬৭.৫
জাপান ৮৩.২
যুক্তরাষ্ট্র ৭৯.৬
চীন ৭৩.৫
ব্রাজিল ৭২.৯
আফগানিস্তান ৪৪.৬
উৎস : ডড়ৎষফ ইধহশ উবাবষড়ঢ়সবহঃ জবঢ়ড়ৎঃ ২০১০
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে শিশুর
জন্মকালীন প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল প্রায় ৬০ বৎসর। উন্নত ও বিকাশশীল দেশে এই হার যথাক্রমে ৭৫ এবং
৫৭ বৎসর। দক্ষিণ এশিয়ার এই আয়ুষ্কাল ৫৫ বৎসর এবং বাংলাদেশে ৫৮ বৎসর। জাপানে জন্মকালীন
প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল ৮০ বৎসর। ইউরোপীয় দেশসমূহে এই বয়স ৭৫ থেকে ৭৮। আফ্রিকার দেশসমূহে
জন্মকালীন প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল অপেক্ষাকৃত কম ৩০ থেকে ৫০ বৎসর।
মরণশীলতার কারণ:
মরনশীলতার বিভিন্ন পরিমাপকে বিশ্বধারা এবং জন্মলগ্নে প্রত্যাশিত আয়ুষ্কালের বিশ্বব্যাপী বিভিন্নতা
থেকে অনুধাবন করা যায় যে পরিণত বয়সে অসুখ-বিসুখে মৃত্যু অর্থাৎ স্বাভাবিক মৃত্যু ছাড়াও অনেক
মানুষ পরিণত বয়সের পূর্বেই মারা যান। একে অকাল মৃত্যু বলা হয়। বিশ্বে অস্বাভাবিক বা অকাল
মৃত্যুর প্রধান কারণগুলি এখন সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।
হৃদযন্ত্র এবং কিডনী সংক্রান্ত জটিলতা: যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, উত্তর-পশ্চিম ইউরোপীয় দেশসমূহের মোট
মৃত্যুর ৫০ শতাংশ হৃদযন্ত্র এবং কিডনী ও মূত্রাশয় সংক্রান্ত রোগের কারণে ঘটে থাকে। এই কারণদ্বয়
ভ‚-মধ্যসাগরীয় ইউরোপ, জাপান, চীনে ৩০ শতাংশ এবং বিকাশশীল দেশসমূহে ১০ শতাংশ মৃত্যুর
জন্য দায়ী। এই হার গত ৫০ বৎসরে বিশেষ কোন পরিবর্তন ঘটে নাই বরং যুক্তরাষ্ট্রে এই হারের
ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা গেছে।
ক্যান্সার: ক্যান্সার যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের মোট মৃত্যুর ১৭
শতাংশ, স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশসমূহ, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড এবং জার্মানীর ২০ শতাংশ ঘটে থাকে।
তবে উন্নতর রোগ চিহ্নিতকরণ এবং চিকিৎসার সুযোগ ও ব্যবস্থাপনার জন্য ক্যান্সারের ফলে মৃত্যুর হার
কিছুটা নি¤œগামী হয়েছে।
বহুমূত্র : যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিম ইউরোপে বহুমূত্র রোগ মোট মৃত্যুর ২ শতাংশ ঘটিয়ে থাকে। পাশ্চাত্যের
অন্যান্য দেশে ১ থেকে ২ শতাংশ মৃত্যু এই কারণে ঘটে। বিকাশশীল দেশে মোট মৃত্যুর ১ শতাংশেরও
কম বহুমূত্র জনিত। গত প্রায় ৫০ বৎসরে এই ধারা অপরিবর্তিত রয়েছে।
য²া : য²া স্পেনে মোট মৃত্যুর ৩ শতাংশ, পর্তুগালে ৪ শতাংশ এবং বিকাশশীল দেশে ৫ থেকে ৬
শতাংশ ঘটিয়ে থাকে। আফ্রিকায় এই হার অপেক্ষাকৃত উচ্চ। তবে, সাম্প্রতিক দশকে উন্নতর চিকিৎসা
ব্যবস্থার কারণে য²াজনিত মৃত্যু হার অতি দ্রæত কমছে।
যকৃত প্রদাহ : যকৃত প্রদাহ ফ্রান্সের ৭ম, সুইজারল্যান্ড, জার্মানী, পর্তুগাল, ইটালী এবং রাশিয়ায় ৯ম,
যুক্তরাষ্ট্র ১০ম এবং বিকাশশীল দেশসমূহে ২০ তম প্রধান মৃত্যুর কারণরূপে চিহ্নিত। মদ উৎপাদন ও
মাদকাসক্তির সাথে এই মৃত্যু ধারার সম্পর্ক রয়েছে। বর্তমান বিশ্বে, বিশেষ করে রাশিয়ায় ও পশ্চিম
ইউরোপে যকৃত প্রদাহ জনিত মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আত্মহনন: পশ্চিমা বিশ্বে বস্তুবাদ নির্ভর সংস্কৃতি, কর্মস্থলে প্রতিযোগিতা, মানসিক চাপ এবং বিবিধ
সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণে আত্মহত্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ মৃত্যুর কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
সুইজারল্যান্ড, ডেনমার্ক এবং সুইডেন ৬ষ্ঠ, জার্মানী ও ফিনল্যান্ড, কানাডা এবং বেলজিয়ামে ১০ম এবং
বিকাশশীল বিশ্বে ২২তম প্রধান মৃত্যুর কারণ হলো আত্মহত্যা। ইদানিংকালে বিশ্বে এই ধারার তেমন
কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না।
দুর্ঘটনা এবং দুর্যোগ : বিশ্বে বিশেষ করে পাশ্চাত্যদেশে মটরগাড়ী ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনা মৃত্যুর ৪র্থ
প্রধান কারণ। এই ধরনের দুর্ঘটনা বিকাশশীল বিশ্বে কম। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ জনিত দুর্ঘটনায় বিশেষ
করে বিকাশশীল দেশে হঠাৎ প্রচুর মৃত্যু ঘটে থাকে। এই মৃত্যু প্রধানত: বন্যা, নদীভাঙ্গন, ঘূর্নিঝড় ও
উপক‚লীয় ঝড়, ভ‚মিকম্প ইত্যাদি কারণে ঘটে থাকে। আর্দ্র নিরক্ষীয় অঞ্চলে এই ধরনের প্রাকৃতিক
দূর্ঘটনার প্রবণতা বেশী।
১৯৭০ সালে ১২ নভেম্বর বাংলাদেশের উপক‚লীয় অঞ্চলে ঘূর্ণি ঝড়ের ফল ৫০,০০০ লোকের মৃত্যু
ঘটে। ১৯৮৫ সালের মে মাসে অনুরূপ দুর্যোগে ১৫,০০০ লোক প্রাণ হারায়। ১৯৯২ সালের উপক‚লীয়
ঝড়ে প্রায় ১০,০০০ লোক মারা যায়।
দূষণ: অধুনা বিশ্বে বিশেষত: পরিবেশ দূষণের দীর্ঘ মেয়াদী প্রতিক্রিয়া একাধিক রোগাক্রান্ততার কারণ।
দূষণ জনিত কারণে উপরে বর্নিত ক,খ এবং ঘ রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করা হয়।
তেজষ্ক্রীয় বিকিরণজনিত কারণে রাশিয়া চীন, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রে নানাবিধ শারীরিক ও ¯œায়ুবিক
রোগের বৃদ্ধি ঘটেছে। বিকাশশীল দেশেও দূষণ জনিত রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উপরোক্ত কারণ ছাড়াও বিশেষ করে বিকাশশীল দেশে সাম্প্রতিক দশকে ম্যালিরিয়া, টাইফয়েড, সন্তান
ধারণজনিত সমস্যা (মাতৃমৃত্যুর প্রধান কারণ) শ্বাসযন্ত্র সংক্রান্ত রোগ, ডাইরিয়া, আমাশয় এবং দীর্ঘস্থায়ী
অপুষ্টি জনিত অবস্থা মৃত্যুর উল্লেখযোগ্য কারণ। অপরদিকে উন্নত ও বিকাশশীল উভয় বিশ্বে যুদ্ধের
কারণে প্রচুর লোক হতাহত হয়ে চলেছে। বর্তমানে আফগানিস্তান, ইরাক, কসভো, মধ্য আফ্রিকা প্রভৃতি
দেশে যুদ্ধজনিত কারণে মৃত্যুর ঘটনা প্রতিটি দেশে লক্ষ পর্যায় ছাড়িয়ে গেছে। এ সমস্ত যুদ্ধে স্থানীয়
খাদ্যাভাব ও অপুষ্টি অধিকভাবে শিশু মৃত্যুও ঘটিয়ে থাকে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে ইউরোপে মৃত্যু হার প্রতি
হাজারে ৫০ ছাড়িয়ে যায় এবং মোট মৃত্যু সংখ্যা প্রায় ১১ মিলিয়নে দাঁড়ায়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের
মুক্তিযুদ্ধে পাকিবাহিনীর হাতে ৩ মিলিয়ন লোক নিহত হয়।
এতদসত্তে¡ও বেশ কিছু নতুন রোগ, যেমন, এইডস্ বিশ্ব মরণশীলতার বর্তমান ধারাকে ব্যাপকভাবে
প্রভাবিত করেছে।
মরণশীলতার বিশ্বধারা
উপরের আলোচনায় দেখা যায় যে, উন্নত বিশ্বে বিশেষ কিছু রোগ মৃত্যুর প্রধান কারণ। কিন্তু বিকাশশীল
দেশে এগুলি ছাড়াও বেশ কিছু সংক্রামক রোগ মৃত্যু ঘটিয়ে থাকে। এই সামগ্রিক চিত্রের পটভ‚মিকায়
মরণশীলতার বিশ্বব্যাপী বিভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। এর প্রধান কারণ :
সাম্প্রতিক দশকে চিকিৎসা প্রযুক্তির উন্নতি ও বিস্তার;
ব্যক্তিগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার উন্নতি;
কতিপয় ক্ষতিকর রোগাক্রান্ত অবস্থার নিয়ন্ত্রণ (যেমন, টি. বি, কলেরা, গুটি বসন্ত ইত্যাদি);
রোগ চিহ্নিতকরণ ব্যবস্থার উন্নতি এবং তদানুযায়ী চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা;
নবজাতক ও শিশু মৃত্যুহারের অতিদ্রæত নি¤œগতি; এবং
আন্তর্জাতিক সহায়তামূলক প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রচেষ্টায় মহামারী এবং দুর্ভিক্ষের সফল নিয়ন্ত্রণ।
এতদসত্তে¡ও বিশ্বের গড় স্থূল মৃত্যু হার (ঈৎঁফব উবধঃয জধঃব-ঈউজ) প্রতি হাজারে প্রায় ১৭ জন। এই
হার বিশ্ব গড় জন্ম হারের প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি। বিশ্ব গড় মাত্রার উপরে মৃত্যু হারযুক্ত দেশসমূহ
প্রধানত: দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা এবং মধ্য ও ল্যাটিন আমেরিকার অংশ বিশেষে (আর্জেন্টিনা, চিলি,
ভেনেজুয়েলা এবং উরুগুয়ে ব্যতীত)। এ সমস্ত দেশে উচ্চ মৃত্যুহারের কারণ প্রধানত: অতি উচ্চ
নবজাতক ও শিশু মৃত্যু হার (১০০ থেকে ২০০ প্রতি হাজারে) এবং নি¤œ আয়ুষ্কাল (৩০ থেকে ৫০
বৎসর)। এ পরিস্থিতির মূলে রয়েছে প্রধানত: নি¤œ জীবনযাত্রা মান, সীমিত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা এবং নি¤œ
স্বাস্থ্য পরিবেশ।
উচ্চ জীবনযাত্রা মান সত্তে¡ও পশ্চিম ইউরোপের কিছু দেশে নবজাতক ও শিশু মৃতু্যুহার প্রতি হাজারে
৩০-এর নিচে,আয়ুষ্কাল প্রায় ৭০ বৎসর এবং মৃত্যু হার ১০ থেকে ১২। এই নি¤œহার প্রধানত: বৃদ্ধ
জনসংখ্যার আধিক্যের কারণেও প্রভাবিত হয়েছে। স্ক্যান্ডিনেভিয় দেশসমূহ নেদারল্যান্ড এবং আরও
কয়েকটি দেশে অতি নি¤œ শিশু মৃত্যু হার, উচ্চ আয়ুষ্কাল এবং স্বাস্থ্য সেবার অতি উচ্চ মানের কারণে
মৃত্যু হার ১০-এর নিচে দেখা যায়। এ ধরনের মৃত্যু হার কিছু পূর্ব ও দক্ষিণ ইউরোপীয় দেশসমূহে যুবা
বয় কাঠামোর কারণে দেখা যায়। এ ধরনের বিভিন্নতা সত্তে¡ও ইউরোপের প্রায় সর্বত্র মৃত্যুহারের মাত্রা
জন্মহারের নিচে অবস্থান করছে।
অপরদিকে, যুবা বয়:কাঠামো, উচ্চ জীবন যাত্রা মান এবং প্রজননশীলতার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ধারা অস্ট্রেলিয়া,
নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র। কানাডা এবং রাশিয়ার নি¤œ মৃত্যু হারকে প্রভাবিত করেছে। সম্প্রতি জাপান,
আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে এবং কিছু ল্যাটিন আমেরিকার দেশে এই ধারা অনুসরণ করছে। সম্পদের উপর
চাপ, উচ্চ জীবনযাত্রা মান, নি¤œ প্রজননশীলতা এবং মান সম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা দ্বারা বেশ কিছু ক্ষুদ্র
দেশের নি¤œ মৃত্যু হার প্রভাবিত হয়েছে। এগুলি হলো : বার্মুদা (৬), পুর্টোরিকো (৬), আইসল্যান্ড (৬),
তাইওয়ান (৬), হংকং (৫), এবং সিঙ্গাঁপুর (৫)। এ সমস্ত দেশে অতি নি¤œ জন্ম ও মৃত্যু হার জনসংখ্যার
স্বাভাবিক বৃদ্ধিহারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
মরণশীলতার বিভিন্নতা: স্মর্তব্য যে, মরণশীলতার উপরোক্ত ধারার মধ্যে যথেষ্ট আভ্যন্তরীণ বিভিন্নতা
রয়েছে। এই বিভিন্নতা বিশেষভাবে প্রকট বয়স এবং নারী-পুরুষ অনুযায়ী। সাধারণভাবে ১ বৎসরের
কম বয়স্ক শিশু এবং ৬০ বা ৬৫ বৎসরের উপরে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর মৃত্যু হার বেশী হয়ে থাকে। নি¤œ
বয়স-সীমায় শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সীমিত থাকে। শিশুদের জন্ম সংক্রান্ত বিভিন্ন সঙ্কট বা
রোগ, বৃদ্ধদের রোগাক্রান্ততা হওয়ার প্রবণতা এর জন্য দায়ী।
৫-২৫ বৎসরের এবং কোন কোন দেশে ৫-২৪ বৎসরের মধ্যে মৃত্যু হার সবচেয়ে কম হয়ে থাকে।
অপরদিকে, শিশু বয়সে পুরুষ শিশুদের ৫ বৎসর বয়স পর্যন্ত শারীরিক গঠনগত কারণে মৃত্যু প্রবণতা
বেশী থাকে। এই বয়সে নারী শিশুদের একই কারণে মৃত্যু হার কম থাকে। কিন্তু ৫ বৎসর বয়সের পর
এই ধারার, বিশেষ করে বিকাশশীল দেশে, বিপরীতমুখী প্রবণতা দেখা যায়। এর কারণ প্রধানত:
সামাজিক ও আর্থনীতিক। প্রায় সকল দেশে এবং বিশেষ করে বিকাশশীল দেশে পুরুষ শিশুদের বিশেষ
গুরুত্ব প্রদান করা হয়। এর পেছনে বিবিধ সাংস্কৃতিক কারণও বিদ্যমান। ফলে নারী শিশুরা সহজাত
অবহেলার শিকার হয়। এই অবহেলা পারিবারিক পর্যায়ে যতœ থেকে স্বাস্থ্য-চিকিৎসা, শিক্ষা প্রভৃতির
মধ্যে প্রকাশ পেতে থাকে। ফলে, ৫ বৎসর বয়সের পর নারী-শিশুদের মৃত্যু সম্ভাব্যতা পুরুষ-শিশু
অপেক্ষা অধিকতর বৃদ্ধি পায়, যা পরিশেষে নারী-শিশুদের উচ্চ মৃত্যুহারের মধ্যে প্রকাশিত হয়।
অপরদিকে ১৫-৪৫ বৎসর বয়সে পুরুষ অপেক্ষা নারীদের মধ্যে মৃত্যু হার অধিক পরিলক্ষিত হয়। এই
উচ্চ হার বিশেষভাবে বিকাশশীল দেশে দেখা যায়। এর প্রধান কারণ উচ্চ মাতৃ মৃত্যু হার কিন্তু ৪৫
বৎসর বয়সের পর, যখন মহিলাদের সন্তান ধারনের সম্ভাব্যতা কমে যায় বা লোপ পায় তখন তাদের
মৃত্যু হার লক্ষ্যণীয়ভাবে কমে যায়। অপরদিকে এই বয়সের পর পুরুষদের মৃত্যু হার বাড়তে থাকে। এর
কারণ, সমস্ত কর্মজীবনে পুরুষদের শারীরিক ও মানসিক চাপ বৃদ্ধ বয়সকালে বিভিন্ন রোগাক্রান্ততার
মধ্যে প্রকাশ পেতে থাকে এবং তা পরিশেষে তাদের উচ্চ মৃত্যুহারের মধ্যে প্রকাশিত হয়।
বৈবাহিক অবস্থার সাথে মরণশীলতার বিভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। সাধারণভাবে অবিবাহিতদের তুলনায়
বিবাহিতদের মধ্যে মৃত্যু হার কম দেখা যায়। জীবন ধারণে অধিকতর নিয়মানুবর্তিতা, দৈহিক ও
মানসিক স্থিতিশীলতা এই ধারার কারণ বলে মনে করা হয়। লক্ষ্যনীয় যে, উন্নত দেশে অবিবাহিতদের
মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা অধিক। গ্রাম ও শহর এলাকার মধ্যে মৃত্যুহারের বিশেষ তারতম্য লক্ষ্যণীয়।
উন্নত দেশে সাধারণত: শহরে মৃত্যু হার বেশী হয়ে থাকে। অতি উচ্চ জনসংখ্যা ঘনত্ব, জনাধিক্য, বদ্ধ
পরিবেশ ও বিবিধ দূষণ সমস্যা এবং দুর্ঘটনা এর প্রধান কারণ। পশ্চিমা শিল্পোন্নত দেশসমূহ হংকং,
সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপানের নগরগুলিতে গ্রামাঞ্চলের তুলনায় প্রায় ৫ শতাংশ বেশি মৃত্যু হার
পরিলক্ষিত হয়। একই সাথে পেশাও মরনশীলতার তারতম্য ঘটায়। কেননা, পেশার সাথে কর্ম
পরিবেশ, আবাসিক অবস্থা, শারীরিক ও মানসিক চাপ প্রভৃতি জড়িত। সাধারণভাবে পেশাদার বুদ্ধিজীবী
সম্প্রদায়ের মধ্যে মৃত্যু হার কম এবং শ্রমজীবী, বিশেষ করে যারা কায়িক শ্রম প্রদান করে থাকে তাদের
মধ্যে মৃত্যু হার বেশী হয়ে থাকে। তবে বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে মরণশীলতার পেশাগত পার্থক্য
অনেকটা হ্রাস পায়।
সামাগ্রিকভাবে শিক্ষার সাথে মৃত্যু হারের বিপরীতমুখী সম্পর্ক রয়েছে। উচ্চ শিক্ষিতের মধ্যে মৃত্যু হার
কম। শিক্ষিতের মধ্যে অধিক সচেতনতাই এর প্রধান কারণ। মরণশীলতার মান একই ধরনের
বিপরীতমুখী সম্পর্ক দেখা যায় আয়ের সাথে। নি¤œ আয় সম্পন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে মৃত্যু হার বেশী। আয়
বেশী হলে মৃত্যু হারও কমে যায়। স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণে সক্ষমতা আয় দ্বারা প্রধানত: প্রভাবিত হয় বলে
এই ধরণের ধারা লক্ষ্য করা যায়।
পাঠসংক্ষেপ:
মরণশীলতার উপর প্রভাব বিস্তারকারী উপরোক্ত প্রভেদক ছাড়াও ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পর্যায়ে
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ব্যায়াম, পানাভ্যাস ইত্যাদি মরণশীলতার উপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে থাকে -
যা একটি জনগোষ্ঠীর বা দেশের মরণশীলতা নির্দিষ্ট পর্যায়ের মধ্যে প্রকাশিত হতে পারে। সাম্প্রতিক
তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের বিকাশশীল অঞ্চলে, বিশেষ করে ল্যাটিন আমেরিকা, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া এবং
দক্ষিণ এশিয়ায় মৃত্যু হার যথেষ্ট হ্রাস পেয়েছে। পশ্চিম এশিয়ার তৈল সম্পদ সমৃদ্ধ দেশসমূহেও মৃত্যু
হার সাম্প্রতিককালে যথেষ্ট হ্রাস পেয়েছে। এর কারণ হিসেবে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা, ঔষধ ও
প্রতিষেধক সমূহের ব্যাপক ও দ্রæত প্রসার এবং প্রায় অঞ্চলে আবাসন পরিবেশের উন্নতি উল্লেখযোগ্য।
অপরদিকে, আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ফলে দুর্ভিক্ষ ও অনাহার জনিত মৃত্যু-রোধ যেমন সম্ভব হয়েছে
তেমনি ম্যালেরিয়া, বসন্ত ও কলেরার মত কতিপয় মহামারী নির্মূলও সম্ভব হয়েছে। অনেক দেশে রাষ্ট্রীয়
পর্যায়ে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন কর্মসূচী এ সমস্তের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবকারী কারণও বটে।
১. শূন্যস্থান পূরণ করুন:
১.১. সাধারণভাবে ----- বৎসরের কম বয়স্ক শিশু এবং ৬০ বা ৬৫ বৎসরের উপরে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর
মৃত্যু হার বেশী হয়ে থাকে।
১.২. মরণশীলতা প্রতি ---- জনসংখ্যায় সাধারণত: নির্মিত হয়।
২. সত্য হলে ‘স' মিথ্যা হলে ‘মি' লিখুন:
২.১. প্রকৃতপক্ষে, প্রজননশীলতা ও মরণশীলতা সমাজে সংখ্যাগত ভারসাম্য রক্ষা করে।
২.২. ইউরোপের প্রায় সর্বত্র মৃত্যুহারের মাত্রা জন্মহারের উপরে অবস্থান করছে।
২.৩. ৫-২৫ বৎসরের এবং কোন কোন দেশে ৫-২৪ বৎসরের মধ্যে মৃত্যু হার সবচেয়ে বেশী হয়ে
থাকে।
২.৪. সামগ্রিকভাবে শিক্ষার সাথে মৃত্যু হারের বিপরীতমুখী সম্পর্ক রয়েছে।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন:
১. মরণশীলতা বলতে কি বুঝায়?
২. মরণশীলতার প্রধান কারণ কি?
রচনামূলক প্রশ্ন:
১. মরণশীলতার বিশ্ব বিন্যাস ধারা ব্যাখ্যা কর।
FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ