পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে আলোচনা করুন।
১৪৫৩ সালকে আধুনিক যুগের সূচনাকাল হিসেবে চিহ্নিত করা যায় কি? উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি দিন।


 আধুনিক যুগের ঐতিহাসিক সীমারেখা।
ইতিহাসের কাল নিরবচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে চলেছে। মানুষের কর্ম বা কৃতি, প্রযুক্তির বিকাশ,
প্রকৃতির উপর মানুষের অধিকতর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতি, জীবন ও জগত
সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি, উৎপাদন ব্যবস্থার পরিবর্তন এবং সমাজ অভ্যন্তরে শ্রেণী বিন্যাস
প্রভৃতি বিষয়াবলী সমাজ ও সভ্যতার পরিবর্তনের সূচক হিসেবে কাজ করে থাকে। বিকাশের
স্বাভাবিক নিয়মে মানব সমাজ ও সংস্কৃতি অতীতের সত্য ও সুন্দরকে গ্রহণ করে এবং
অসুন্দরকে বর্জন করে। এভাবেই ইতিহাসের কাল পরম্পরা পরস্পর সম্পর্ক যুক্ত। প্রাচীন
সুমেরীয়, মিশরীয়, চৈনিক, ভারতীয় ও গ্রিক সভ্যতার অবসানের পর রোমান সভ্যতার উত্থান
ঘটে। এই রোমান সভ্যতা প্রাচীন ও মধ্য যুগের সভ্যতা ও সংস্কৃতির মাঝে সেতুবন্ধন রচনা
করে। বস্তুত এই রোমান সভ্যতা ও সংস্কৃতির ধারাবাহিক ইতিহাসই হলো মধ্যযুগের
ইউরোপের ইতিহাস। পরবর্তী রোমান সভ্যতা তথা মধ্যযুগের ইউরোপীয় সভ্যতার পতনের
পটভ‚মিতে উত্থান ঘটে আধুনিক পাশ্চাত্যের। উত্থান ঘটে আধুনিক পশ্চিম ইউরোপীয় রাষ্ট্র,
সমাজ ও সংস্কৃতির। পঞ্চদশ শতাব্দী থেকে নিরন্তর প্রক্রিয়ায় উন্মেষ ও বিকাশ ঘটেছে
আধুনিক পাশ্চাত্যের সমাজ ও সংস্কৃতির।
রোমান সাম্রাজ্য
খ্রিস্টপূর্ব ৭৫৩ সালে ইতালির টাইবার নদীর তীরে রোম নগরী স্থাপিত হয়। এই নগরীর
গোড়াপত্তন করেন রোমাস ও রমুলাস নামে দুই ভাই। প্রথম দিকে ছিল এটা একটি বাণিজ্যিক
ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। ক্রমে গ্রিক সভ্যতার পতন ৪৭৬ (খ্রি.) ঘটলে এই রোম সমগ্র ইতালি ও
ভ‚মধ্যসাগরীয় অঞ্চল দখল করে এক বিশাল রোমান সাম্রাজ্য গড়ে তোলে। আরও
পরবর্তীকালে রোমানদের হাতে পতন ঘটে সমগ্র ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা এবং পশ্চিম
এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। এই বিশাল সাম্রাজ্য শাসনের জন্য রোমান সম্রাট কনস্টানটাইন
সাম্রাজ্যের পূর্বাঞ্চলে কৃষ্ণসাগর তীরবর্তী বাইজান্টিয়াম নামক স্থানে দ্বিতীয় রাজধানী প্রতিষ্ঠা
করেন। ৩৩০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই দ্বিতীয় রাজধানীর নামকরণ করা হয় কনস্টান্টিনোপল। এই
নামকরণ করা হয়েছিল সম্রাট কনস্টানটাইনের নামানুসারে। পূর্ব রাজধানীকে কেন্দ্র করে
রোমান সাম্রাজ্যের পূর্বাঞ্চল তথা পূর্ব ইউরোপ, পূর্ব-ভ‚মধ্যসাগরীয় অঞ্চল, কৃষ্ণসাগরীয় অঞ্চল,
এশিয়া মাইনরসহ পশ্চিম এশিয়া অঞ্চল শাসিত হতো।



রোমান সাম্রাজ্যের পতন : ৪৭৬ সাল
পঞ্চম শতকের মাঝামাঝি সময়ে গথ, ভ্যান্ডাল প্রভৃতি বর্বর জার্মান জাতিসমূহ রোমন
সাম্রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে পুনঃ পুনঃ আক্রমণ পরিচালনা করতে থাকে। তাদের এই আক্রমণে
পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্য ভেঙ্গে যায় এবং অনেকগুলি ছোট ছোট আঞ্চলিক রাজ্যে বিভক্ত হয়ে
পড়ে। ৪৭৬ সালকে পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতনের কাল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই
সময়ে বর্বর জাতি সমূহের হাতে রোমের পতন ঘটে। গথ এবং ভ্যান্ডাল প্রভৃতি বর্বর জাতি
তাদের আক্রমণ, দখল ও ধ্বংসলীলা পশ্চিম ইউরোপে সীমাবদ্ধ রেখেছিল। এই সময়
কনস্টান্টিনোপল কেন্দ্রিক পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য অক্ষত থেকে যায়। তখন থেকে এই অঞ্চল
পূর্ব-রোমান সাম্রাজ্য বা বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য নামে অভিহিত হয়। ষষ্ঠ শতাব্দীতে আরবীয়
সভ্যতার উত্থান ও বিকাশের পটভ‚মিতে পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের
হাতছাড়া হয়ে যায়।
পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা : ৮০০ সাল
আধুনিক ইউরোপের উত্থানের পূর্বে ইউরোপের ইতিহাসে পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের ধারণা
প্রবলভাবে বিরাজমান ছিল। এমন কি ফরাসি বিপ্লবের সময় পর্যন্ত ইউরোপের সামন্ত
শাসকশ্রেণী এবং তাদের অনুগত প্রজাদের একাংশ পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য পুনঃ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন
দেখতো। পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের ধারণাটি শুরু হয় নবম শতকে। পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের
পতনের পরবর্তী তিন শতাব্দীকাল এই অঞ্চল অনেকগুলি ছোট ছোট রাজ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
বিভিন্ন জাতির আঞ্চলিক রাজাগণ এই আঞ্চলিক রাজ্যগুলির নেতৃত্ব প্রদান করতো। আঞ্চলিক
রাজ্যগুলির মধ্যে দ্ব›দ্ব ও সংঘাত ছিল নিয়মিত ব্যাপার। অষ্টম শতকের শেষদিকে জার্মান
জাতির একটি শাখা প্রবলভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠে। এরা ইতিহাসে ফ্রাঙ্ক নামে পরিচিত ছিল।
এই ফ্রাঙ্ক জাতি জার্মান ও ফ্রান্সের বিস্তৃত অঞ্চল দখল করে পুণরায় রোমান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার
চেষ্টা চালায়। ক্রমে অষ্টম শতকের মধ্যেই ফ্রাঙ্ক জাতি রোমান সাম্রাজ্য পুনঃ প্রতিষ্ঠায় সক্ষম
হয়। উক্ত বংশের শ্রেষ্ঠ পুরুষ মহান শার্লামেন (তিনি চার্লস নামেও পরিচিত) ৮০০ সালে
রোমের সম্রাট পদে অধিষ্ঠিত হন। তিনি ছিলেন যিশু খ্রিষ্টের গভীর অনুরাগী এবং খ্রিস্ট ধর্মের
একান্ত পৃষ্ঠপোষক। খ্রিস্টান ধর্মকে ভিত্তি করে শার্লেমান বিশাল সাম্রাজ্য গঠন করেন। তার
উদ্যোগে সমগ্র ইউরোপে খ্রিস্টান ধর্মের বিস্তৃতি লাভ করে। সাম্রাজ্যের শাসন, আইন, কানুন,
নিয়ম নীতি, প্রথা ইত্যাদি ছিল খ্রিস্টান ধর্মভিত্তিক। সামগ্রিকভাবে ধর্মাশ্রয়ী বলে এই সাম্রাজ্যের
নাম হয়েছিল পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য (ঐড়ষু জড়সধহ ঊসঢ়রৎব)। দশম শতাব্দীতে এসে এই
পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য ভেঙ্গে পড়তে শুরু করে। ফ্রান্স একটি স্বাধীন রাজ্যে পরিণত হয়।
ইতালি এবং জার্মানি অনেকগুলি ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে। মূলত এই রাজ্যগুলি ছিল
সামন্ত রাজ্য। সমগ্র ইউরোপে তখন সামন্ত আর্থ-সামাজিক কাঠামো বিরাজমান ছিল। সামন্ত
রাজন্যবর্গ পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের আধ্যাত্মিক নেতা মহান পোপের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ
করতেন মাত্র। এভাবেই নামেমাত্র পশ্চিম ইউরোপে পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য টিকে থাকে।
আধুনিক পাশ্চাত্যের উত্থানের পূর্বে এই ছিল পশ্চিম ইউরোপের রাজনৈতিক চিত্র।


বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের পতন : ১৪৫৩ খ্রি:
পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে ইসলামী সভ্যতার উত্থান ও বিকাশের পটভ‚মিতে বাইজান্টাইন
সাম্রাজ্যের সীমা ষষ্ঠ শতাব্দী থেকে ক্রমাগত সংকুচিত হয়ে পড়তে থাকে। আব্বাসীয়
শাসনামল পর্যন্ত ইসলামী সাম্রাজ্য পশ্চিম ইউরোপের স্পেন, সমগ্র উত্তর আফ্রিকা, মধ্য এশিয়া
এবং দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। ১২৫৮ সালে মোঙ্গল নেতা হালাকু খানের হাতে
বাগদাদের পতন ঘটার পর ইসলামী সভ্যতার নেতৃত্ব গ্রহণ করে ওসমানীয় তুর্কিরা। চতুর্দশ
শতাব্দী থেকে ওসমানীয় তুর্কিদের শক্তি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। সারা মুসলিম দুনিয়ার উপর
তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। ক্রমে ওসমানীয় তুর্কিরা ইউরোপের দিকে সাম্রাজ্য বিস্তারে
মনোনিবেশ করে। ১৪৫৩ সালে ওসমানীয় খলিফা দ্বিতীয় মোহাম্মদের হাতে বাইজান্টাইন
সাম্রাজ্যের রাজধানী কনস্টান্টিনোপলের পতন ঘটে। পরবর্তী পর্যায়ে তুর্কি শক্তি সমগ্র গ্রিস
অঞ্চলসহ পূর্ব ইউরোপের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তাদের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। ১৪৫৩ সাল ইউরোপ
তথা পৃথিবীর ইতিহাসে একটি মাইল ফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।
আধুনিক ইতিহাসের যুগ বিভাজন সমস্যা
মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশমান গতিধারাই হলো ইতিহাসের বিষয়বস্তু। মানব জাতির চলার
পথের গতি প্রবাহ কখনোই থেমে থাকে না। কখনো কখনো কোনো সভ্যতা বা জনগোষ্ঠীর
ইতিহাস বা বিকাশ স্থবির মনে হলেও বাস্তবিক পক্ষে তা কখনো স্থবির ছিল না, থাকে না।
বহুমুখী অভিঘাতের ভেতর দিয়ে বিচিত্র পথে ইতিহাস এগিয়ে চলে। মানব সভ্যতার বিকাশের
ক্ষেত্রে সব সময় একই রকম বৈশিষ্ট্য বজায় থাকে না। সমাজ ও সভ্যতার জন্য যা কিছু
প্রয়োজনীয় তাকে গ্রহণ, যা কিছু অপ্রয়োজনীয় তা বর্জন করার মধ্য দিয়ে মানব সভ্যতার
ইতিহাস অগ্রসর হয়েছে। প্রকৃতির উপর মানুষের অধিকতর নিয়ন্ত্রণ, উৎপাদনের নব নব
হাতিয়ার আবিষ্কার এবং উৎপাদন সম্পর্ক মানব সমাজকে একটি স্তর থেকে অন্য স্তরে উন্নীত
করেছে। তবে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশ ও জাতির জীবনে
কখনো কখনো বড় ধরনের উত্থান যেমনিভাবে ঘটে, আবার কখনো কখনো পতনও ঘটে
থাকে। এ সব বিচিত্র কোনো বিশেষ অঞ্চল পূর্ববর্তী উৎপাদন ব্যবসা, সামাজিক চরিত্রকে
পরিত্যাগ নতুন উৎপাদন সম্পর্ক এবং ব্যবসার ভিত্তি তৈরি করে অগ্রসর হওয়াটি ইতিহাসের
খুব স্বাভাবিক নিয়ম। তারপরও একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিশেষ ধরনের আর্থ-সামাজিক ও
রাজনৈতিক ব্যবস্থাই ঐ দেশ বা সমাজে প্রধান থাকে। এটি কয়েক হাজার বছর হতে পারে।
ইতিহাসের প্রতিটি স্তরের আর্থ-সামাজিক কাঠামো আলাদা বৈশিষ্ট্য দ্বারা চিহ্নিত হয়। পৃথিবীর
যে কোনো অঞ্চলে কিম্বা জনগোষ্ঠীর সভ্যতার উত্থান পতন, উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক ঘটনা
প্রবাহ, উৎপাদন পদ্ধতি ও উৎপাদন সম্পর্কের গুণগত পরিবর্তন ও উত্তরণ, সাংস্কৃতিক জীবনের
সমৃদ্ধি কিম্বা অবক্ষয় প্রভৃতি বহুমাত্রিক সূচকের উপর ভিত্তি করে ইতিহাসের কাল বিভাজন ঘটে
থাকে। একই দেশের কিংবা একই অঞ্চলের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং
সাংস্কৃতিক ইতিহাসের সীমারেখার বিভাজন একই ধরণের নাও হতে পারে। আবার দু‘একশত
বছর সময়েও হতে পারে। নির্দিষ্ট সময় ধরে অভিন্ন চরিত্রের রাষ্ট্র, আর্থ-সামাজিক ও সংস্কৃতি
প্রধান বৈশিষ্ট্য হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে সেই দেশ বা সমাজ। সেই যুগে বা কালে পরিচিত


যেমন - আদি যুগ, প্রাচীন যুগ, প্রাচীন, মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগ। এসব যুগ বিভাজনের সঙ্গে
এক একটি বিশেষ ধরনের সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার অভ্যুদয়, বিকাশও পতনের ইতিহাস
রয়েছে। এভাবেই ইতিহাসে যুগ বিভাজন হয়ে থাকে।
ইউরোপের ইতিহাসে আধুনিক যুগের সূচনা
ইউরোপের ইতিহাসে একটি বিশেষ তারিখকে আধুনিক যুগের সূচনা হিসেবে চিহ্নিত করা যায়
না। পঞ্চম শতক থেকে শুরু হওয়া ইউরোপের সামন্তবাদী সমাজ, সামন্ত উৎপাদন ব্যবস্থা
এবং সামন্ত আর্থ-সামাজিক কাঠামো ত্রয়োদশ শতক থেকে ক্রমাগত দুর্বল হয়ে পড়তে থাকে।
রাজনৈতিক দিক থেকে ইউরোপ অনেকগুলি ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এই সময়ের
ইউরোপে একটি প্রধান জ্ঞান সাধনার ও সংস্কৃতির কেন্দ্র ছিল কনস্টান্টিনোপল। ১৪৫৩ সালে
অটোমান তুর্কিদের হাতে এই জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটির পতন ঘটে। সঙ্গে সঙ্গে
এখানকার শিল্পী, সাহিত্যিক, পন্ডিত ও বিদ্বান মনীষীরা ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চল বিশেষত
ইতালিতে এসে আশ্রয় গ্রহণ করে। ইতালির ভ‚মধ্যসাগরীয় অঞ্চলের জেনোয়া, ফ্লোরেন্স,
ভেনিস প্রভৃতি ছোট ছোট শহর ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যে অগ্রসর এবং অনেকটা সামন্ত সমাজ
কাঠামোর আওতামুক্ত। এই শহরগুলিকে ঘিরে একটি স্বাধীন বাণিজ্যিক অর্থনীতির উন্মেষ
ঘটতে থাকে। কনস্টান্টিনোপলের পন্ডিতদের জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা গোটা পশ্চিম ইউরোপ
বিশেষত ইতালিতে এক নবজাগরণের সূত্রপাত ঘটায়। দক্ষিণ ইতালিতে বিকাশমান ব্যবসাবাণিজ্য, শিল্প তথা নতুন উৎপাদন পদ্ধতির জ্ঞান-বিজ্ঞানের বহুমাত্রিক ভাবনা, জীবন ও
জগতের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন সমন্বিত হয়ে এক ব্যাপক সমাজ পরিবর্তনের প্রবাহ
সৃষ্টি করে। এ ধরনের উত্তরণ প্রক্রিয়াকে ইউরোপের ইতিহাসে রেনেসাঁস বা নবজাগরণের
অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। রেনেসাঁসের মধ্য দিয়ে ইউরোপের উত্তরণ ঘটে মধ্যযুগ
থেকে আধুনিক যুগে। ইউরোপের ইতিহাস আধুনিক যুগে উত্তরণের প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছিল
১৪৫৩ সালে। তাই ১৪৫৩ সালকে আধুনিক ইতিহাসের সূচনাকাল হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।
তবে এটাও বলা প্রয়োজন যে কনস্টান্টিনোপলের পতন ইউরোপে নবজাগরণের একমাত্র
কারণ নয়, অন্যতম প্রধান কারণ মাত্র। তবে রেনেসাঁসের প্রভাবে ইউরোপের অধিকাংশ
অঞ্চলে শিক্ষা, সংস্কৃতি, উৎপাদন তথা আর্থ-সমাজিক ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন ঘটে তার ফলে
সামন্ত আর্থ-ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে, রাজনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবেও রাজতন্ত্র গভীর সংকটে নিপতিত
হয়। এর স্থলে উদিত হতে থাকে নতুন আর্থ- সামাজিক তথা ধনবাদী ব্যবস্থা, এর অনুষঙ্গ
হিসেবে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার ধারণা, উপাদান ও শক্তিসমুহের উম্মেষ ঘটতে থাকে।
এভাবেই আধুনিক ইতিহাসের আধুনিক যুগের সূচনা ঘটে।


পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরে টিক () চিহ্ন দিন।
১। রোম নগরী স্থাপিত হয়।
(ক) খ্রি.পূ. ৭১২ সালে (খ) খ্রি.পূ. ৭৫০ সালে
(গ) খ্রি.পূ. ৭৫৩ সালে (ঘ) খ্রি.পূ. ৮১০ সালে
২। কন্সটান্টিনোপল নগরী প্রতিষ্ঠা করেন।
(ক) রমুলাস, (খ) জুলিয়াস সিজার
(গ) কনস্টানটাইন (ঘ) পিথাগোরাস
৩। ফ্রাঙ্ক জাতি কোন দেশের অধিবাসী।
(ক) ফ্রান্স (খ) জার্মানি
(গ) ইতালি (ঘ) স্পেন
৪। কনস্টান্টিনোপলের পতন ঘটে
(ক) সুলতান মাহমুদের হাতে (খ) দ্বিতীয় মোহাম্মদের হাতে
(গ) কামাল পাশার হাতে (ঘ) সেনাপতি খালেদের হাতে
উত্তর : ১। (গ), ২। (ক), ৩। (ক), ৪। (খ)।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে আলোচনা করুন।
২। আধুনিক যুগ বিভাজনের সমস্যাবলী কি কি ?
৩। ১৪৫৩ সালকে আধুনিক যুগের সূচনাকাল হিসেবে চিহ্নিত করা যায় কি? উত্তরের স্বপক্ষে
যুক্তি দিন।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। ফ্রাঙ্ক জাতি সম্পর্কে আলোচনা করুন।
২। বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য কেন সংকুচিত হয়ে পড়তে থাকে?
৩। রেনেসাঁস বলতে কি বুঝায়?

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]