কৃষিতে পুঁজিবাদ বলতে কি বুঝায়?


ভৌগোলিক আবিষ্কারের ফলে যে বাণিজ্য বিপ্লব সংগঠিত হল তার ব্যাপক প্রভাব পড়ল
তৎকালীন উৎপাদন ব্যবস্থায়। ইউরোপ এখন নিজের জন্যই নয় বরং পুরো বিশ্বের জন্য
উৎপাদন করতে লাগল। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের কাঁচামাল ইউরোপের বাজারে প্রবেশ করল।
এই প্রেক্ষাপটে সনাতনী কৃষি ও শিল্প ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন দেখা দিলো।
ক) পুঁজিবাদী কৃষিব্যবস্থার জন্ম
কৃষিব্যবস্থাপনা এক ধরনের পুঁজিবাদী নীতি দ্বারা পরিচালিত হওয়া শুরু করলো। ইউরোপে
স্বয়ংসম্পূর্ণ কৃষি ব্যবস্থার পরিবর্তে বাজার উপযোগী কৃষি ব্যবস্থার বিকাশের সূচনা হলো।
সহজে পুঁজিবাদ বলতে এমন এক প্রক্রিয়া বুঝানো হয় যেখানে উৎপাদন, বন্টন এবং বিনিময়ে
সঞ্চিত সম্পদের ব্যবহারের মাধ্যমে মালিকের সবার্ধিক লাভ থাকে। মধ্যযুগীয় ম্যানর প্রথায়
উৎপাদন ছিল ম্যানরের লোকজনের প্রয়োজন অনুযায়ী। ওদের চাহিদার সবটুকু খাদ্যশষ্য,
কাপড়-চোপড়, তৈজসপত্র ইত্যাদি ম্যানরেই উৎপাদিত হতো। যা কিছু উৎপাদন করা হতো
তার সবটুকু ব্যবহার করা হতো। উদ্বৃত্ত বিক্রি বা জমা করে ভবিষতে কাজে লাগানোর চিন্তা
করা হতো না। উৎপাদন করা হতো সবার সিদ্ধান্ত ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে, লাভকে ঘৃণার
চোখে দেখা হতো। কিন্তু এখন যখন ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশ ঘটলে, ‘ব্যবসার প্রয়োজনে
উৎপাদন ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটল’ লাভের জন্য এখন কৃষিজ উৎপাদন করা শুরু হলো।
জমিদার এখন ভ‚মিদাস ও কৃষকদের থেকে ব্যক্তিগত সেবা বা দ্রব্যের আকারে প্রাপ্য নেওয়ার
পরিবর্তে অর্থের আকারে তা চাইতে লাগলো। জমিদার তার কর্তৃত্বাধীন খামারকে আরো
লাভজনক করার জন্য খামারের দেখা শোনার ভার কর্মকর্তা কর্মচারীর দায়িত্বে ন্যস্ত করল এবং
নিজে শহরে বসবাস করে ব্যবসা বাণিজ্যে মনোনিবেশ করলো। খামারের কর্মকর্তাকর্মচারীদেরকে নির্দেশ দেওয়া হলো তারা যেন যত বেশি সম্ভব কৃষকদের কাছ থেকে কর
আদায় করে। এই ব্যবস্থার ফলে কৃষকের দুর্দশা বেড়ে গেলো। প্রথমত: তারা তাদের যা কিছু
স্বাধীনতা ছিল তা হারিয়ে পরনির্ভরশীল কৃষি শ্রমিকে পরিণত হলো। দ্বিতীয়ত: জমিদার শহরে
বসবাস করার ফলে জমি পুঁজিবাদী নীতিতে বা লাভের জন্য চাষবাস হওয়ার ফলে এবং
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্যাতনে চাষীর জীবনে যে দুঃখ-কষ্ট নেমে আসে তা জমিদার সচক্ষে
দেখতে পারছিলো না। জমিদার ও চাষীর মধ্যে যে পিতৃবৎ সম্পর্ক ছিল শুধু তাই ভেঙ্গে গেলো

না, জমিদার চাষীর জীবনযাত্রার মানের মধ্যে পূর্বে যা তফাৎ ছিল এখন তা আরো বিস্তৃত
হলো। ধনী জমিদার আরও ধনী হলো, গরিব চাষী আরো গরিব হলো। তবে এই ব্যবস্থায়
উৎপাদন যে বাড়ল তা নিসন্দেহ।
খ) বেষ্টনী প্রথার আন্দোলন (ঊহপষড়ংঁৎব গড়াবসবহঃ)
প্রথমে ইংল্যান্ডে এবং পরে ইউরোপের অন্যান্য দেশে কৃষি জমিতে এক ধরনের বেষ্টনী দেয়ার
প্রথা চালু হয় এবং পরে তা একটা আন্দোলনে পরিণত হয়। এই আন্দোলন বা এনক্লোজার
মুভমেন্টের সূচনা হয় দূর দেশে ইংল্যান্ডের ভেড়া থেকে আহরণ করা উলের চাহিদা বৃদ্ধির
কারণে। মধ্যযুগে একটা ম্যানরে জমি চারভাবে বিভক্ত ছিল, তিনটিতে গম ও বার্লি রোপন
করা হতো। চতুর্থটি খালি রাখা হতো, কমন ল্যান্ড (ঈড়সসড়হ খধহফ) বা এজমালি জমি বলে
পরিচিত এই ভ‚খন্ড সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল। এখানে গ্রামের সবাই তাদের গরু ভেড়া চরাত।
উলের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় জমিদার জমি খ্যলি রাখাকে অপচয় মনে করতে লাগলো।
জমিদার এই কমন ল্যান্ডের চারপাশে বেড়া দিয়ে ভেড়া পালনের জন্য নির্দিষ্ট করে দিলো।
কৃষিকাজ করা থেকে ভেড়াপালন সহজতর ছিল। লোকবলের প্রয়োজন কম হতো, সর্বোপরি
এর থেকে আয়ও ছিল প্রচুর। ক্রমেই মুনাফার লোভে জমিদার শষ্যের আবাদি জমিকে বেষ্টনী
দিতে শুরু করল এবং অবস্থানরত কৃষকদেরকে উৎখাত শুরু করলো। ইংল্যান্ডের পার্লামেন্ট
প্রথমে বেষ্টনি আন্দোলনকে বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করল পরে, এই পার্লামেন্টই বেষ্টনী
আন্দোলনের বড় সমর্থক হয়ে উঠল। জমিতে বেষ্টনী থাকলে বেশ কিছু সুবিধা পাওয়া যেত।
দলভ্রষ্ট গরু ভেড়ার আক্রমণ থেকেই এটা খামারের ফসলকে রক্ষা করল না, জমিদারকে তার
মালিকানাধীন জমি সম্পর্কেও সুস্পষ্ট ধারনা দিল। পরবর্তী সময়ে এই প্রথা চাষ পদ্ধতি ও
বিভিন্ন ফসল চাষ সম্পর্কে পরীক্ষা নিরীক্ষার সুযোগ দিল। ইংল্যান্ডে এক সময় যে কৃষি বিপ্লব
সংগঠিত হলো তার পিছনে বেষ্টনী আন্দোলন বড় ভ‚মিকা রাখে। তবে বেষ্টনী বা এনক্লোজার
আন্দোলন সাধারণ চাষীর জন্য দুর্দশা বয়ে নিয়ে এলো। ম্যানোরিয়াল ব্যবস্থায় ফসলের জন্য
নির্ধারিত জমিতে কি ফসল বা কোনো জমিতে তা ফলবে তার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো
যৌথভাবে। এখন কৃষক এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার হারালো। প্রথাগতভাবে প্রত্যেক চাষী
এমনকি প্রান্তিক চাষীর এজমালি বা কমন জমির উপর অধিকার ছিল, সেখানে সে গরু চরাতো,
মাছ ধরত বা প্রয়োজনীয় কাঠ সংগ্রহ করত। এই এক ধরনের সামাজিক স্বাধীনতা যা সে সব
সময় ভোগ করত তা নতুন ব্যবস্থায় সে হারালো। প্রান্তিক চাষী (পড়ঃঃধমবৎং) বা বিনা স্বত্বে
জমির অধিকারীরা (ংয়ঁধঃঃবৎং) এখন ভ‚মিহীন কৃষকে পরিণত হলো।
গ) নতুন শষ্যের আবাদ
আমেরিকা হতে আগত দুটো নতুন শষ্য আলু ও ভ‚ট্টা ইউরোপের কৃষিতে নিয়ে এলো ব্যাপক
বৈচিত্র্য। ইউরোপে জনসংখ্যা বাড়ছিলো, আর খাদ্যের চাহিদা ক্রমান্বয়ে উর্ধ্বগামী হচ্ছিল।
এখন আলু এবং ভ‚ট্টা খাদ্য তালিকায় যুক্ত হয়ে গরীব মানুষের পুষ্টি চাহিদা জোগান দিতে শুরু
করলো। যেহেতু ভ‚ট্টা রোদ্র উজ্জ¦ল এবং শুকনো আবহাওয়ায় ভালো জন্মায় তাই ইতালি ও
দক্ষিণ-পূর্ব-ইউরোপে এর আবাদ ছড়িয়ে পড়ল। একটি সাধারণ শষ্যের মোচায় যেখানে চারটি
দানা থাকে, ভ‚ট্টার একটি মোচায় আশিটি দানা পর্যন্ত ফলন দেয়। ‘যাদুর শষ্য’ হিসাবে ভ‚ট্টা
চাষীর গোলা ভরিয়ে দিলো। আলুও ‘যাদুর’ ফসল হিসাবে স্বীকৃতি পেল। যেখানে অন্য ফসল
হতে চায়না এমন বালুকাময় মাটি অথবা ভিজা মাটিতে আলু ভালো হয়। এফসলের আরো

সুবিধা এই যে অল্প জমিতে এটি চাষ করা যায়। প্রথমে ইউরোপে অনেকে আলুকে খাদ্য
হিসাবে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। অনেকের আপত্তি যে এটার উল্লেখ বাইবেলে নেই।
কারো কারো মধ্যে কুসংস্কার ছিল যে এটা কুষ্টরোগ ছড়ায়। এরপরও ক্রমান্বয়ে আলু জনপ্রিয়
খাদ্য হিসাবে ছড়িয়ে পড়ে।
শিল্প ক্ষেত্রে অগ্রগতি
(ক) গিল্ড ব্যবস্থার প্রাধান্য লোপ
ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতির ফলে পন্য উৎপাদন ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক পরিবর্তন এলো। মধ্যযুগে
বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করত বিভিন্ন পেশার কারিগরদের সংগঠন গিল্ড। গিল্ড পণ্যের
উৎপাদন ও বন্টনের সব দিক নিয়ন্ত্রণ করত। গিল্ড দ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ করত, কোন সদস্য
ঐ নির্ধারিত মূল্য থেকে কম দামে পণ্য বিক্রি করে অন্য সদস্যকে অসুবিধায় ফেলছে কিনা তা
দেখাশুনা করতো। সংগঠনটি সদস্যদের কাজের সময় নির্ধারণ করে দিতো। নির্দিষ্ট সময়ের
অতিরিক্ত কাজ করে বেশি ব্যবসা ছিল নিষিদ্ধ। একটা পণ্যের গিল্ডে কতজন শিক্ষানবীশ
থাকবে তাও গিল্ড ঠিক করে দিতো। এর উদ্দেশ্য ছিল সদস্যদের জন্য যথেষ্ট কাজের নিশ্চয়তা
বিধান। গিল্ডের সদস্য হতে পারতো শুধু মাষ্টার ক্রাফটসমেন (সধংঃবৎ পৎধভঃংসধহ) বা ওস্তাদ
কারিগর। একজন কারিগর যখন দক্ষতার চরম পর্যায়ে উঠতে পারতেন তখনই তাকে ওস্তাদ
কারিগর বলা হতো। ওস্তাদ কারিগর নিজে কাঁচামাল সংগ্রহ করতো, এগুলোকে নিজের
পরিবার বা তার অধীন মজুর এবং শিক্ষানবিশের শ্রমকে কাজে লাগিয়ে পণ্যে রূপান্তরিত করে
নিজের আঙ্গিনায় বিক্রি করতো। গিল্ডের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ওস্তাদ কারিগরের উৎপাদন করা
ছিল অসম্ভব। কিন্তু ভৌগোলিক আবিষ্কারের ফলে ব্যবসা বাণিজ্যের ব্যাপক উন্নতি হওয়ায়
পণ্যের চাহিদা বাড়তে লাগলো। গিল্ড গুলি সারাবিশ্বের চাহিদা পূরণের জন্য পণ্য উৎপাদন
এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রবাহিত কাঁচামালের মোকাবিলায় ছিল খুবই অসহায়। গিল্ডের
বাইরে অনেক কারিগর এখন উৎপাদন শুরু করলো। গিল্ডের আওতা বর্হিভ‚ত কারিগররা
নিজেদের স্বাধীনতাকে কাজে লাগিয়ে সম্পদশালী হতে লাগলো। অনেক গিল্ডের মজুর
(লড়ঁৎহবুসধহ) এবং শিক্ষানবীশ ওস্তাদ কারিগর হওয়ার স্বপ্ন বাদ দিয়ে ভাড়ায় খাটা মজুরে
রুপান্তরিত হয়। কিছু কিছু গিল্ড অস্তিত্ব রক্ষার জন্য প্রবেশাধিকার ফি বা প্রবেশের যোগ্যতাকে
বাড়িয়ে দিয়ে নিজেদের স্বাতন্ত্র বাড়িয়ে তোলে। মজুর ও শিক্ষানবীশদেরকে বেশি করে শোষণ
করে এবং বিশাল বাজারের চাহিদা মিটিয়ে সম্পদশালী হতে থাকে।
(খ) পুটিং আউট বা অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ব্যবস্থা (ঢ়ঁঃঃরহম ড়ঁঃ ড়ৎ উড়সবংঃরপ ংুংঃবস)
নতুন যুগের চাহিদার প্রেক্ষাপটে গিল্ড ব্যবস্থার উৎপাদন ও বন্টনের উপর আরোপিত নিয়ন্ত্রণ
এড়িয়ে নতুন উৎপাদন ব্যবস্থা ইউরোপে জায়গা করে নিলো। এই ব্যবস্থাকে পুটিং আউট বা
অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ব্যবস্থা বলা হয়। এই ব্যবস্থার অধীনে একজন উদ্যোক্তা তার খাটানো
পুঁজির সর্বোচ্চ মুনাফার জন্য কাঁচামাল যেমন, তুলা বা শন (ভষধী) বুননের জন্য গ্রামীণ
কারিগর ও শ্রমিকদের সরবরাহ করত। এর জন্য কারিগর ও শ্রমিকদেরকে মজুরি দেওয়া
হতো। বুননের কাজ হয়ে গেলে উদ্যোক্তা বুনন করা সুতা গ্রামীণ তাঁতীদেরকে কাপড়
বানানোর জন্য দিতো। কাপড় তৈরি হলে উদ্দোক্তা ঐগুলো রঙ বা ডিজাইন করার জন্য রঙের
বা ডিজাইনের কারিগরদেরকে দিতো। উৎপাদনের প্রত্যেকটি পর্যায়ে শ্রমের ভিত্তিতে মজুরি

নির্ধারিত হতো। পণ্য বিক্রির জন্য তৈরি হওয়ার পর উদ্দোক্তা এগুলি পাইকারি বিক্রেতা বা
নিজস্ব দোকানে তার খরচ পুঁষিয়ে লাভে বিক্রি করতো। ত্রয়োদশ দশকে ইতালিতে এই প্রথা
শুরু হয়, পরে রাইনের উপত্যকা ছাড়িয়ে ঋষধহফবৎং (ফরাসী অঞ্চল) এবং ইংলিশ চ্যানেল
অতিক্রম করে ইংল্যান্ডে প্রবেশ করে।
উৎপাদন পদ্ধতির এই নতুন ব্যবস্থা কতগুলি কারণে জনপ্রিয় হয়ে উঠে। উদ্যোক্তা এই
ব্যবস্থার ফলে আগের চেয়ে বড় এলাকায় তার পণ্য দ্রব্য ছড়িয়ে দিতে পারতো। তাছাড়া
উদ্যোক্তা ভ‚মি থেকে উৎখাত হওয়া চাষী, ভ‚মিদাস ও তাদের স্ত্রীদেরকে সস্তায় কাজে লাগাতে
পারতো। গিন্ডের মতো শুধুমাত্র দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শ্রমিকদের কাজে লাগানোর প্রতিবন্ধকতা
থেকে উদ্যোক্তা রক্ষা পেলো। তদপুরি এই ব্যবস্থায় উদ্যোক্তার পুঁজি বেশী বিনিয়োগ হওয়ায়
উৎপন্ন দ্রব্য জমিয়ে সুবিধাজনক দামে বিক্রি করার সুযোগ পেলো। এছাড়া উদ্যোক্তা যন্ত্রপাতি
কিনে পুঁজির টাকা আটক রাখার ঝামেলা থেকে রক্ষা পেলো, কেননা এই ব্যবস্থায়
শ্রমিকদেরকে নিজ খরচে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি জোগাড় করতে হতো।
গ্রাম্য শ্রমিকরা এ ব্যবস্থাকে দারিদ্র্য বিমোচনের উপায় হিসেবে স্বাগত জানালো। অজম্মা, খরা
ইত্যাদি কারণে ফসল নষ্ট হয়ে গেলে চাষী পূর্বের মতো না খেয়ে মরার ভয় থেকে রক্ষা
পেলো। এই ব্যবস্থায় শ্রমিকের কাজের সঙ্গে সঙ্গে তার পরিবারের অন্য সদস্যদেরও কাজের
সংস্থান হলো। যেমন কাপড় বুননের কাজে ছোট্ট শিশুটিও নিয়োজিত হতে পারলো। অতিরিক্ত
আয়ের বাইরে পারিবারিক উৎপাদন ব্যবস্থায় আরো কিছু সুবিধা ছিলো। এখন গ্রামের শ্রমিক
তার সময়ের মূল্যবান ব্যবহার করতে পারলো। অর্থাৎ ফসল বুনা বা ফসল তোলার সময়
শ্রমিকের কৃষিকাজ বেড়ে গেলে সে তখন কারখানার কাজ বাদ দিয়ে কৃষিতে পুরোপুরি নজর
দিতে পারতো।
পারিবারিক উৎপাদন ব্যবস্থায় বেশ কিছু অসুবিধাও ছিলো। আলো বাতাসহীন গরীব শ্রমিকের
ঘর কারখানার কাজের জন্য প্রায়ই উপযুক্ত ছিল না। অনেক সময় যে ঘরে শ্রমিক থাকত সে
ঘরে উৎপাদনকারী তার যন্ত্রপাতি সরঞ্জামাদি রাখতো। আরেকটা অসুবিধা হলো অনভিজ্ঞ
উদ্যোক্তার হাতে শ্রমিক প্রায়ই জিম্মি হয়ে থাকতো। মাঝে মাঝে বাজারের চাহিদা বুঝতে না
পেরে অনভিজ্ঞ উদ্যোক্তা বুননকারী এবং তাঁতীদেরকে প্রচুর অর্ডার দিতো। কিন্তু চাহিদা পড়ে
গেলে তাদের কাজ বাতিল করে দিতো।
নতুন এই উৎপাদন ব্যবস্থাপনায় পুঁজি এবং শ্রমের মধ্যে যে পার্থক্য ছিল তা আরো সুস্পষ্ট
হয়ে উঠলো। ক্রমান্বয়ে শ্রমের উপর পুঁজির আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হতে লাগলো। দক্ষ কারিগর
ও শিক্ষানবীশ শ্রমিকের মধ্যে যে একটা মানবিক সম্পর্ক ছিল তা ক্ষীণ হয়ে গেলো।

সারসংক্ষেপ
ভৌগোলিক আবিষ্কারের পথ বেয়ে যে বাণিজ্য বিপ্লব সংগঠিত হলো, তার সঙ্গে তাল মিলাতে গিয়ে
কৃষি এবং শিল্পের উৎপাদন ব্যবস্থাও পরিবর্তিত হয়ে গেলো। অধিক লাভের জন্য কৃষি ও পণ্য দ্রব্য
উৎপাদিত হতে লাগলো। কৃষিতে ম্যানর ব্যবস্থা ভেঙ্গে জমি বেষ্টনী আন্দোলনের শুরু হয়। শিল্পে গিল্ড
ব্যবস্থার প্রাধান্য লুপ্ত হয়ে ঘরোয়া উৎপাদন পদ্ধতির সৃষ্টি হলো। এই সব পরিবর্তনে ইউরোপের
উৎপাদন বহুগুণ বেড়ে গেলো এবং মানুষের জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধি পেলো। কিন্তু এতে সাধারণ কৃষক
ও শিল্প মজুরদের জীবন খুব সুখকর হলো না।

পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
১। ম্যানর ব্যবস্থায় উৎপাদন ছিল
(ক) বেশি লাভের জন্য (খ) অল্প লাভের জন্য
(গ) চাহিদার তুলনায় বেশি উৎপাদনের জন্য (ঘ) চাহিদা অনুযায়ী
২। বেষ্টনী প্রথার আন্দোলন শুরু হয়।
(ক) উলের চাহিদার জন্য (খ) গরু ছাগলের হাত থেকে ফসল রক্ষার জন্য
(গ) ভালো সেচের জন্য (ঘ) কৃষিজ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য
৩। গিন্ড নিয়ন্ত্রণ করতো
(ক) পণ্যের উৎপাদন ও বন্টন (খ) শ্রমিকের চাকুরী
(গ) শ্রমিকের বেতন (ঘ) শিক্ষানুবিশদের ট্রেনিং।
৪। পারিবারিক উৎপাদন ব্যবস্থায়
(ক) উৎপাদন হতো ওস্তাদ কারিগরের বাড়িতে (খ) শ্রমিকের বাড়িতে
(গ) কারখানার মালিতকের বাড়িতে (ঘ) দোকানদারের বাড়িতে
রচনামূলক প্রশ্ন
১। কৃষিতে পুঁজিবাদ বলতে কি বুঝায়?
২। পারিবারিক উৎপাদন ব্যবস্থায় উদ্যোক্তা এবং শ্রমিকের কি সুবিধা ছিল?
নৈব্যক্তিক প্রশ্নের উত্তর
১। (ঘ), ২। (ক), ৩। (ক), ৪। (খ)।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. বেষ্টনী প্রথার আন্দোলন কেন বিকশিত হলো আলোচনা করুন।
২. গিল্ড ব্যবস্থার প্রধান্য নষ্ট কেন হলো আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]