ক্যাথলিক ধর্ম পুনরুজ্জীবনে মৌলিক আদর্শ বা ভিত্তি কি ছিলো। পোপ এবং ট্রেন্ট অনৈতিকতা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন?


প্রতিসংস্কার আন্দোলন ইউরোপের সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে
সক্ষম হয়েছিল। এটি যেমন একদিকে ক্যাথলিক ধর্মমতকে জাগিয়ে তুলেছিল, স্বীয় মর্যাদায়
প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিল, তেমনি একই সঙ্গে ইউরোপের সমাজে ধর্ম ও রাজনীতি
মিশ্রিত হয়ে রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা এবং অস্থির সময়ের সূচনা করে।
১। ক্যাথলিক ধর্মের পুনরুজ্জীবন
প্রতিসংস্কার আন্দোলনের অন্যতম মূল লক্ষ্যই ছিলো ক্যাথলিক ধর্মমতের পুনরুজ্জীবন ঘটনো।
ক্যাথলিক ধর্মের সকল প্রকার অনাচার এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে একটি সুসংগঠিত আন্দোলনে
রূপান্তরিত হয়ে ইউরোপের বিভিন্নদেশে প্রোটেস্টান্ট আন্দোলন ছড়িয়ে পড়লে রোমান
ক্যাথলিক চার্চ নিজেরাই নিজেদের অসংগতি এবং গাফিলতি দ‚রীকরণের লক্ষ্যে এক নুতন
আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনের মুল লক্ষ্যই ছিলো ক্যাথলিক চার্চের সংস্কারের মাধ্যমে
ক্যাথলিক ধর্মকে পুনরুজ্জীবিত এবং শক্তিশালী করা। এছাড়াও প্রোটেস্টান্ট ধর্মমতে বিশ্বাসী
অঞ্চলগুলিকে আবার ক্যাথলিক ধর্মে তথা ক্যাথলিক চার্চের অধীনে নিয়ে আসাও ছিল তাদের
অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। এ কারণে তারা ক্যাথলিক ধর্মমতের পুনর্জাগরণের জন্য সর্বশক্তি
নিয়োগ করেন।

বলা যায়, প্রোটেস্টান্টদের উত্থান ষোড়শ শতাব্দীতে ক্যাথলিক চার্চের বিশ্বাসযোগ্যতাকে ধ্বংস
করে দেয়। ইউরোপের প্রায় অর্ধেকের বেশি দেশে দ্ব›দ্ব-সংঘাত ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয় এবং ঐ
অঞ্চলের অধিবাসীরা ক্যাথলিক চার্চের প্রতি তাদের আনুগত্য প্রকাশ করতে অস্বীকার করে।
তবে এই সময় কিছু যুক্তিবাদী উদার মুক্তচিন্তার যাজক এবং পোপ নিজ ধর্ম তথা
ক্যাথলিকবাদকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেন। প্রথমদিকে প্রোটেস্টান্টবাদের সঙ্গে একটি
সমঝোতামূলক নীতি গ্রহণ করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে ক্যাথলিক চার্চের অবশ্য করণীয় কাজটি
হয়ে দাঁড়ায় নিজেদের ভিতর থেকেই সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু করার।
ক্যাথলিক ধর্মতন্ত্রের পুনর্বিন্যাস এবং ধর্মতত্ত¡সমূহের যথার্থ প্রতিস্থাপিত করে সকল ভ্রান্তি থেকে
মুক্ত এবং পবিত্র করাই ছিল ক্যাথলিকদের মূল লক্ষ্য। লুথারের মতবাদকে চ্যালেঞ্জ করার
ক্যাথলিক মতবাদকে বিন্যাসের উদ্দেশ্যে বলা হয়, যে ক্যাথলিক ধর্মমতের মূলভিত্তি হলো
থমাস এ্যাকুইনাস কর্তৃক প্রচারিত খ্রিস্টান ধর্মতত্ত¡। শুধুমাত্র ক্যাথলিক চার্চেরই বাইবেল বা
পবিত্র ধর্মগ্রন্থ সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেবার অধিকার আছে। একই সঙ্গে লুথারের অনুগ্রহ (এৎধপব)
এবং ভাগ্যচক্রের নির্ভরতা (ঔঁংঃরভরপধঃরড়হ ড়ভ ঋধরঃয) নীতিসমূহকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করা
হয়। ক্যাথলিক চার্চের অন্তর্নিহিত নীতি বা খ্রিস্টধর্মের ভাবগম্ভীর অনুষ্ঠান ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা,
প্রভুর ভোজসভা, খ্রিস্টান সাধু সন্নাসীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ইত্যাদি বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস
পুন:স্থাপন করা হয়। তাছাড়া শ্রদ্ধাভক্তির বস্তুরূপে সংরক্ষিত মৃতসাধুদের দেহের অংশ বা
তাদের ব্যবহৃত কোনো জিনিসপত্র প্রতিমা বা প্রতিমূর্তি, এর উপর পবিত্রভাব জাগিয়ে তোলা
হয়। তবে ইনডালজেন্স বা মুক্তিপণ বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। চার্চের নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলা,
আইন বা সংবিধির মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়। এ ছাড়াও ট্রেন্টের সভাগুলিতে চার্চের ভাবমূর্তি
পুনরুদ্ধারে হাতে কলমে শিক্ষা দানের জন্য বিভিন্ন সেমিনারের আয়োজন করা হয়। বাইবেলের
অন্তর্গত সকল প্রামাণিক পুস্তকসমূহ-এর ব্যাখ্যাদানের ক্ষেত্রে পোপের সর্বোচ্চ ক্ষমতা এবং
তার অধস্তনদের প্রতি প্রভুত্ব বা কতৃর্ত্ব নির্ধারণ করা হয়। প্রোটেস্টান্টরা বিভিন্ন দেশে জায়গা
করে নিতে থাকলে প্রতিসংস্কারবাদীরা অত্যন্ত আন্তরিক এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তাদের
সকল মন্দ দিকগুলি ঝেড়ে ফেলতে সক্ষম হয়। এভাবে ষোড়শ শতাব্দীতে ক্যাথলিক চার্চের
পুনরূজ্জীবন ঘটে এবং চার্চ খ্রিস্টান জনগোষ্ঠীর কাছে মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়।
২। প্রতি সংস্কার আন্দোলনের ফলে প্রোটেস্টান্ট ধর্মমতের অগ্রগতি এবং প্রভাব হ্রাস পায়
এই সমস্ত কর্মকান্ডের ফলে ক্যাথলিক ধর্মমত ক্রমশ শক্তি সঞ্চয় করে এগিয়ে যেতে থাকে।
এর ফলে প্রোটেস্টান্ট ধর্মমতের অগ্রগতি এবং প্রভাব হ্রাস পায়। শিক্ষামূলক এবং সামাজিক
কর্মকান্ডের মাধ্যমে জেসুইট পিতারা রোমান ক্যাথলিক চার্চকে মানুষের কাছে অধিকতরও
গ্রহণযোগ্য হিসেবে গড়ে তোলে। জেসুইটদের সহজ, সরল, সাধারণ জীবন, অকপট এবং
আবেগপূর্ণ প্রচারণা, উদার চিন্তা, জীবনাচরণ যারা প্রোটেস্টান্ট ধর্ম গ্রহণ করেছিলো তাদের
আবার ক্যাথলিক চার্চের অধীনে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। বিশেষত বেলজিয়াম, পোল্যান্ড,
ব্যাভারিয়া, চেকোশ্লাভাকিয়া, হাঙ্গেরি, স্পেন নেদারল্যান্ড-এমনকি দক্ষিণ জার্মানিতেও
ক্যাথলিক ধর্মমত আবার সমহিমায় ফিরে আসে।
৩। আান্তর্জাতিক ধর্ম হিসেবে ক্যাথলিক ধর্মমতের প্রতিষ্ঠা লাভ

জেসুইট পিতারা বিশ্বের প্রায় সকল দেশে এবং মহাদেশে অত:পর খ্রিস্টধর্ম বিশেষত ক্যাথলিক
ধর্মমত ছড়িয়ে দিতে শুরু করে। যারা খনিতে, আবাদী জমিতে, জমিদার শ্রেণীর বড় ভ‚-
সম্পত্তিতে কিংবা ঔপনিবেশিক অঞ্চলে কাজ করতো তারা খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেছিলো।
শ্রেণীবিভক্ত বা বর্ণাশ্রয়ী সমাজে (যেমন ভারত) নীচুবর্ণের অস্পৃহ্য, জাতিচ্যুত শ্রেণী দলে দলে
খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করতে শুরু করে। এভাবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ক্যাথলিকরা
প্রোটেস্টান্টদের কাছে তাদের অবস্থান হারালেও ইউরোপের বাইরে এসে মিশনারি প্রচারণার
মাধ্যমে বিশ্বের প্রায় সকল দেশে ক্যাথলিক ধর্মমত প্রচার করে এবং এটিকে একটি
আন্তর্জাতিক ধর্মে রুপান্তরিত করে।
৪। ইউরোপের দেশে দেশে ধর্মীয়, উম্মাদনা অসন্তোষ, কলহ : গৃহযুদ্ধ এবং ধর্মীয় বিদ্রোহের
সূচনা
প্রতিসংস্কার আন্দোলনের ফলে প্রোটেস্টান্টপন্থী এবং ক্যাথলিকপন্থীদের মধ্যে যে দ্ব›দ্ব সংঘাত
এবং অসহিঞ্চুতা ছড়িয়ে পড়ে তাতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গৃহযুদ্ধ এবং ধর্মীয় বিদ্রোহ দেখা
দিতে শুরু করে।
ধর্মসংস্কার আন্দোলনের নেতারা যুক্তিবাদ এবং মানবতাবাদী নীতি দ্বারা বিশ্বাসী হয়ে উঠার
কারণে সহিঞ্চুতার নীতি গ্রহণ করেছিলেন। তবে তাদের অনুসারীরা অনেক ক্ষেত্রেই তাদের
এই নীতি ধরে রাখতে সক্ষম হয় নি। প্রোটেস্টান্টরা যেমন ক্যাথলিকদের ঘৃণা করত তেমনি
রোমান ক্যাথলিকরাও তাদের বিরুদ্ধ পক্ষের প্রতি তীব্র ঘৃণা, নিজস্ব ধর্মবিশ্বাস, বিপক্ষ ধর্মীয়
গ্রæপের উপর চাপিয়ে দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করতো না। এর ফলে ইউরোপের প্রতিটি খ্রিস্টান
দেশে ঝগড়া-বিবাদ, অসহিষ্ণুতা, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, চরম ঘৃণা, বিদ্বেষ এবং সামাজিক বিশৃঙ্খলা
সৃষ্টি হয়।
ইউরোপের রাজাদের মধ্যেও এই সময় ধর্মীয় উম্মাদনা ছড়িয়ে পড়ে, সহিষ্ণুতা সেই সময়ে
একটি বিরল ঘটনা হয়ে দাড়াঁয়। রাজারা আশা করেন যে, তাদের প্রজারা তাদের ধর্ম মেনে
নিতে বাধ্য থাকবে। তাদের নিজেদের ধর্ম অনুসরণ করতে বাধ্য করার ফলে ফ্রান্স, স্পেন,
পর্তুগাল এবং অন্যান্য দেশে প্রোটেস্টান্ট প্রজারা নিষ্ঠুর নির্যাতনের সম্মুখীন হয়। ফ্রান্সে
হিউগিনেট এবং পিউরিটানবাদীরা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়। আবার ইংল্যান্ডে অষ্টম হেনরি
ক্যাথলিকদের উপর নির্যাতন নিপীড়ন চালান।
ইউরোপের দেশে দেশে ধর্মের উম্মাদনা অসহিষ্ণুতা সৃষ্টি হয়েছিল, রাজারা ধর্মীয় স্বাধীনতাকে
দমন করতে চেষ্টা করেছিলেন, তাদের ধর্মমতের বিরুদ্ধেবাদীদের উপর নিষ্ঠুর নির্যাতন করতে
প্রচেষ্টা চালান; তাই ইউরোপের দেশে দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু স¤প্রদায় ও নির্যাতিত গোষ্ঠী
বিদ্রোহী হয়ে উঠে।
ইউরোপীয় সমাজে একজন প্রোটেস্টান্ট যেহেতু একজন ক্যাথলিককে ঘৃণা করতো, একটি
ধর্মীয় গ্রæপ যেমন অপর একটি ধর্মীয় গ্রট্টপের সঙ্গে কলহে লিপ্ত থাকতো, তাই ইউরোপের
দেশে দেশে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ধর্মীয় এই অসহিষ্ণুতার সবচাইতে বড় চিত্র দেখা
যায় জার্মানির গৃহযুদ্ধ এবং পরবর্তীকালে ত্রিশ বছরব্যাপী যুদ্ধে। উভয় পক্ষের কেউই নিজ ধর্ম

বিরুদ্ধবাদীদের সহ্য করতে পারতো না, একে অপরের বিরুদ্ধ পক্ষকে নিষ্ঠুরভাবে পুড়িয়ে
মারতো। এভাবে জার্মানি, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড এবং অন্যান্য দেশে গৃহযুদ্ধ ব্যাপক রক্তপাত,
মৃত্যু এবং ধ্বংস ডেকে আনে।
৫। ধর্মীয় ঘৃণা বিদ্বেষ : ইউরোপের এক দেশ অপর দেশের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া
প্রতিসংস্কার আন্দোলনের ফলে ইউরোপ ধর্মক্ষেত্রে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। ইতালি, ফ্রান্স,
দক্ষিণ জার্মানি, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি ক্যাথলিক ধর্মে বিশ্বাসী হয়ে যায়। ইংল্যান্ড, জার্মানি, হল্যান্ড,
সুইজারল্যান্ড প্রভৃতি দেশে প্রোটেস্টান্ট ধর্মমতের প্রসার ঘটে।
হল্যান্ড এবং স্পেনের মধ্যে ধর্মীয় বিরোধিতায় যুদ্ধ সংগঠিত হয়। হল্যান্ডের জনগণ ছিলো
প্রোটেস্টান্টপন্থী, তারা রাজা দ্বিতীয় ফিলিপের (পবিত্র রোমান সম্রাট পঞ্চম চার্লসের পুত্র)
হাতে নির্যাতিত হতে থাকে। তিনি ছিলেন একজন গোঁড়া রোমান ক্যাথলিক। হল্যান্ড এই যুদ্ধে
জয়লাভ করে এবং ১৬০৯ সালে উইলিয়াম অরেঞ্জের নেতৃত্বে স্বাধীনতা লাভ করে।
প্রোটেস্টান্ট হল্যান্ড প্রথম এলিজাবেথের অধীনে ডাচ প্রোটেসটান্টদের সমর্থন করে, বিশেষত
ক্যাথলিক স্পেনের বিরুদ্ধে। প্রায়শই তারা সকল স্পেনিস জাহাজ ধ্বংস করতো। এর ফল
স্বরূপ এ্যাংলো-স্পেনিস যুদ্ধ শুরু হয়। ইংল্যান্ড এই যুদ্ধে অজেয় এবং দুভের্দ্য স্পেনিস
আর্মাডাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে। স্পেন তথা ফিলিপের জন্য এর চাইতে গৌরবের আর কোনো
কিছুই ছিলো না।
দ্বিতীয় (পবিত্র রোমান সম্রাট) বোহেমিয়ার প্রোটেস্টান্টদের উপর নির্যাতন চালালে (যারা
ছিলেন জন হাসের অনুসারী) ত্রিশ বছরব্যাপী যুদ্ধের সূচনা হয় (১৫১৮ - ১৬৪৮)।
ওয়েস্টফেলিয়া চুক্তির মাধ্যমে (১৬৪৮) এই যুদ্ধ সমাপ্ত হলে রোমান সাম্রাজ্য এই যুদ্ধের ফলে
দুর্বল এবং নি:শোষিত হয়ে পড়ে।
৬) জেসুইটদের তৎপরতা এবং শিক্ষা বিস্তার
সোসাইটি অব জেসুইট বা জেসুইট সংঘ ধর্মপ্রচার এবং শিক্ষা এই দুই কার্যেই অত্যন্ত
পারঙ্গমতা দেখিয়েছিল। তবে যে ক্ষেত্রটিতে জেসুইটরা সবচাইতে বেশি সাফল্য লাভ করেছিল
তা হলো শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমে তাদের কর্মক্ষেত্রকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ায়। লয়লা এবং
তার শিক্ষিত অনুসারীরা তৎকালীন মানবতাবাদী আদর্শ এবং প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে স্কুল গড়ে
তোলেন। এইসব স্কুলে সামরিক বিশিষ্ট নিয়মনীতি অনুসরণ করা হতো। অনেক সময় একটি
স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিদ্যালয় অথবা বিশ্বদ্যিালয়ের সঙ্গে যোগসূত্র হিসেবে বিদ্যালয় সমূহ
গড়ে উঠে।
জেসুইটদের মূল úোগানই ছিলো “আপনার শিশুকে স্কুলে পাঠান।” ধর্ম ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়
যেমন শারীরিক চর্চা, ভ‚গোল, ইতিহাস, বিজ্ঞান, নৈতিক উৎকর্ষ, আধুনিক ভাষা ইত্যাদি বিভিন্ন
বিষয়ে পড়াশোনা হতো। জেসুইট শিক্ষকরা গভীর আগ্রহ নিয়ে শিক্ষাদান করতো, প্রত্যেকের
ব্যক্তিগত চাহিদা, পছন্দ অপছন্দের দিকে নজর দিতো, ছাত্রদের শারীরিক এবং নৈতিক শিক্ষা

দেয়া হতো। এরা শিক্ষাক্ষেত্রে প্রশ্নোত্তর প্রক্রিয়া চালু করে। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পরীক্ষার
ব্যবস্থা করা হয়।
এছাড়া জেসুইটরা বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম
হন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত পাঠক্রম রচনা করেন। লয়লার মৃত্যুর সময়ে ৩৫টি স্কুল
প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তবে এটি বেড়ে সমগ্র ইউরোপে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
শিক্ষা প্রসারে জেসুইট স¤প্রদায় ইউরোপের বাইরে ভারত, চীন, ব্রাজিল, কোরিয়া, জাপান,
পারাগুয়ে তথা ল্যাটিন আমেরিকা এবং নতুন আবিষ্কৃত মহাদেশে তিন হাজার স্কুল কলেজ
প্রতিষ্ঠা করে। যেখানেই তারা স্থায়ী আবাস স্থাপন করে সেখানেই স্কুল, কলেজ অর্থাৎ শিক্ষা
এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ড শুরু করে। উপনিবেশিক অঞ্চলসমূহ জ্ঞান, বিজ্ঞান, সাহিত্য ও
দর্শনের প্রভাবে যথেষ্ট উন্নতি লাভ করে।
ষোড়শ শতাব্দীতে প্রোটেস্টান্টরাও তাদের সন্তানদের ক্যাথলিক স্কুলে পাঠাতো। জেসুইট
স্কুলগুলি ছিল উন্নত। স্যার ফ্রান্সিস বেকন জেসুইটদের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রশংসা করেন। এভাবে
শিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রে জেসুইট নেতারা অবিস্মরণীয় সাফল্য লাভ করেন।
৭। নারী শিক্ষা প্রসার
প্রতিসংস্কার আন্দোলন নারী শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। খ্রিস্টধর্ম নারীকে
বাইবেল পড়ার অনুমতি দেয়। ক্যাথলিক ধর্মমত বিস্তারের ক্ষেত্রে নারীকে বিভিন্ন সেবামূলক
এবং সমাজ সেবামূলক কর্মকান্ডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সেন্ট থেরেসা অফ আফিলা (১৫১৫ -
১৫৮২) সন্ন্যাসী পাদরীদের নিয়ে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। নারী সমাজ সেবামূলক
প্রতিষ্ঠান “উরস্যালিন” ও “সিসটারস অব চ্যারিটি” ছিল উল্লেখযোগ্য। উরসালিন এর
প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ব্রেসিয়ার এ্যানজেলা মেরিসি। এই সংগঠনকে তৃতীয় পল অনুমোদন দেন।
এই সংঘঠনের মূলকার্যক্রম ছিলো মেয়ে শিশুদের শিক্ষা এবং যতœ করা। এ ছাড়াও অসুস্থদের
সেবা দেয়ার ক্ষেত্রেও বিশেষ ভ‚মিকা পালন করে। এভাবে নারীদের দ্বারা সংগঠিত বিভিন্ন
গ্রট্টপের মাধ্যমে নারীদের শিক্ষার হার বাড়তে থাকে এবং সমাজ সেবামূলক কর্মকান্ডে কৃতিত্ব
দেখায়।

সারসংক্ষেপ
সংস্কার আন্দোলনের প্রতিক্রিয়া স্বরূপ প্রতিসংস্কার আন্দোলন ক্যাথলিক ধর্মকে পুনরুজ্জীবিত করে।
পোপদের কঠোর নিয়মশৃঙ্খলা, ট্রেন্টের বিভিন্ন নৈতিক শিক্ষা এবং জেসুইটদের বিশ্বব্যাপী শিক্ষা
কার্যক্রম ক্যাথলিক ধর্মকে আন্তর্জাতিক ধর্মে পরিণত করে। যদিও ক্যাথলিকদের পুনরুজ্জীবন দেশে
দেশে দ্ব›দ্ব-কলহ গৃহযুদ্ধ এমনকি ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মধ্যে যুদ্ধ সংগঠিত করে। তথাপি এটি
ক্যাথলিক ধর্মকে তার অতলধ্বংস¯ু‘প থেকে উদ্ধার করে শেষ পর্যন্ত প্রোটেষ্টান্টবাদের বিপরীতে
ক্যাথলিকবাদের বিজয়কে নিশ্চিত করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাথলিকবাদ যুক্তিবাদী এবং সহিষ্ণু খ্রিস্ট
ধর্মকেই পুনরুজ্জীবন ঘটায়। ষোড়শ শতাব্দীতে প্রোটেস্টান্টবাদ ক্যাথলিকবাদের মতই অসহিষ্ণু
ধর্মমতছিল। যুক্তিবাদের চেয়ে প্রোটেস্টান্টরা অন্ধবিশ্বাসকেই বেশি প্রাধান্য দিত। তবে প্রতিসংস্কার
আন্দোলনকারীরা ধর্মতত্ত¡ বা সেন্ট থমাস এ্যাকুইনাসের শিক্ষায় ফিরে যাবার ফলে মানুষের মুক্তবুদ্ধি
এবং যুক্তিবাদী চেতনার উপর ভিত্তি করে ক্যাথলিক ধর্মমতের পুনরুজ্জীবনের চেতনাকে গড়ে তোলে।
প্রোটেস্টান্টবাদীরা অন্ধবিশ্বাস এবং ধর্মশাস্ত্রকে একমাত্র ধর্মীয় বিশ্বাস এবং ভিত্তি হিসেবে মনে করেন।
তবে পুনুরুজ্জীবিত ক্যাথলিক মতবাদ যুক্তিবাদিতার উপর গড়ে উঠে। এর ফলশ্রæতিতে সপ্তদশ
শতাব্দীতে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার সমূহ এবং আধ্যাত্বিকবাদ কঠোর বিজ্ঞান অনুসন্ধিৎসা নীতি গ্রহণ
করেছিল। এর ফলে ক্যাথলিক ধর্ম আন্তর্জাতিক ধর্মে পরিণত হয়।

পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশ্বে টিক ( ) চিহ্ন দিন।
১। কোন সাধুর ধর্মতত্ত¡কে খ্রিস্টান ধর্মের মূলভিত্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়?
ক) সেন্ট পল খ) থমাস একুইনাস
গ) সেন্ট অগাস্টিন ঘ) এ্যারাসমাস
২) ফ্রান্সের প্রোটেস্টান্টরা কি নামে পরিচিত ছিল?
ক) পিউরিটানবাদ খ) হিউগিনেট
গ) জুইলিয়ান ঘ) স্যাক্সন
৩। ইংল্যান্ডের কোন রানী প্রোটেস্টান্টদের উপর নির্যাতন চালান?
ক) রানী এলিজাবেথ খ) রানী ভিক্টোরিয়া
গ) রানী ম্যারি ঘ) রানী ক্রিস্টিন
৪। হল্যান্ড কত সালে স্বাধীনতা অর্জন করে?
ক) ১৬০১ সালে খ) ১৬০৩ সালে
ঘ) ১৬০৬ সালে ঘ) ১৬০৯ সালে
৫। জেসুইটদের মূল শ্লোগান কি ছিল?
ক) আপনার শিশুকে স্কুলে পাঠান খ) শিশুকে ধর্মীয় শিক্ষা দিন
গ) শিশুকে কারিগরী শিক্ষা দিন ঘ) আপনার শিশুকে বাসায় রেখে গৃহ শিক্ষকের কাছে শিক্ষা
দিন।
৬। জেসুইটদের শিক্ষা ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য ছিল?
ক) দূর শিক্ষণ ব্যবস্থা খ) মৌখিক শিক্ষা ব্যবস্থা
গ) ছাত্র শিক্ষক সমন্বয়ে শ্রেণী কক্ষে প্রত্যক্ষ শিক্ষাদান করা গ) কারিগরী শিক্ষায় পারদর্শী করা
৭। কোন দার্শনিক জেসুইটদের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রশংসা করেন?
ক) স্যার ফ্রান্সিস বেকন খ) মাইকেল ডি মনটেইন
গ) ডেসকার্টিজ গ) জিওরদানো ব্রæনো
৮। ‘উরসালিন’ সংঘ কোন সন্নাসী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়?
ক) সেন্ট থেরেসা আফিলা খ) সিসটার লিওনাবা
গ) সিসটার বারবারা ঘ) সেন্ট ম্যারি
উত্তর : ১। (খ), ২। (খ), ৩। (ক), ৪। (খ), ৫। (ক), ৬। (গ), ৭। (ক), ৮। (ক)।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। ক্যাথলিক ধর্মমত কীভাবে একটি আন্তর্জাতিক ধর্মে পরিণত হয়?
২। প্রতিসংস্কার আন্দোলন কীভাবে শিক্ষা এবং সমাজ সেবায় নারীকে এগিয়ে নিয়ে যায়?

রচনামূলক প্রশ্ন
১। ক্যাথলিক ধর্ম পুনরুজ্জীবনে মৌলিক আদর্শ বা ভিত্তি কি ছিলো। পোপ এবং ট্রেন্ট অনৈতিকতা ও
দুর্নীতির বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন?
২। প্রতিসংস্কার আন্দোলনের ফলে ইউরোপের সমাজ জীবনে যে অসহিষ্ণুতার ছাপ পড়ে তার
সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিন।
৩। ধর্ম বিদ্বেষের ফলে ইউরোপে সংগঠিত বিভিন্ন যুদ্ধ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করুন।
৪। শিক্ষা বিস্তারে জেসুইটদের সাফল্যের বিবরণ দিন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]