ভৌগোলিক আবিষ্কারের পেছনে কি কি কারণ কার্যকরি ছিল
ষোড়শ শতকের ভৌগোলিক আবিষ্কারসমূহের বিবরণ দাও


আধুনিক যুগের বৈশিষ্ট্য সমূহ
ইতিহাসের প্রবাহমান ধারায় প্রত্যেকটি যুগ কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য দ্বারা চিহ্নিত। একটি যুগের
সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কুতি, সাহিত্য, শিল্পকলা, মনন চর্চা প্রভৃতির আলোকে ঐ
যুগের বৈশিষ্ট্য নির্ধারিত হয়ে থাকে। তবে ইতিহাসের স্বাভাবিক নিয়মে একটি যুগের সাথে
আরেকটি যুগের একটি যোগসূত্র বিদ্যমান থাকে। মানব সমাজের কতিপয় বৈশিষ্ট্য আবহমান
কাল ধরে একই ধারায় প্রবাহিত হয়। ইউরোপের ইতিহাসে মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগের মধ্যে
সন্ধিক্ষণ হলো ইউরোপীয় রেনেসাঁস। উক্ত সন্ধিক্ষণের মধ্য দিয়ে পুরনো সামন্তবাদী ব্যবস্থার
বৈশিষ্ট্য সমূহের প্রায় বিলুপ্তি ঘটে, অন্যদিকে নতুন আর একটি সমাজ ব্যবস্থার বেশ
কিছু বৈশিষ্ট্য পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হতে শুরু করে। আর এই নতুন বৈশিষ্ট্যসমূহ ছিল মৌলিক
পরিবর্তনের সূচক। ইউরোপের ইতিহাসে আধুনিক যুগের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্বরূপ ঃ
(১) ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যের বিকাশ
ইউরোপে আধুনিক যুগের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যের বিকাশ। বস্তুত
আধুনিক পাশ্চাত্য সভ্যতা ও সংস্কৃতি দাঁড়িয়ে আছে উক্ত বৈশিষ্ট্যের ওপর। মধ্যযুগের
ইউরোপের সামন্তবাদী আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামোতে ব্যক্তির স্বাধীনতা কিম্বা
ব্যক্তির সামাজিক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় না। কেননা তখন সামন্ততান্ত্রিক রাজনীতি ও
প্রশাসন ছিল সম্পূর্ণভাবে রাজতন্ত্রের হাতের মুষ্ঠোয়। রাজা দেশের সর্বময় হর্তা কর্তা ছিলেন।
তিনি প্রশাসনের সর্বস্তরে রাজপরিবারের সদস্যদের নিয়োগ দিতেন। তাদের যোগ্যতার কোন
নির্ধারিত মাপকাঠি ছিল না। ধর্মের সর্বময় কর্তা ছিলেন যাজক এবং তার অধীনস্থ ধর্মগুরুগণ।
ধর্মগুরুগণ রাজাকে ঈশ্বরের প্রেরিত পুরুষ বলে অভিহিত করতেন। সুতরাং, রাজার কোনো
কাজের সমালোচনা করা হলে ঈশ্বরের বিরাগ ভাজন হওয়া, পাপ করার ভয় ছিল। ফলে
সাধারণ মানুষ তাদের জীবনের দুঃখ-যন্ত্রণা, কষ্টকে নীরবে সহ্য করতো বা নিয়তি হিসেবে
বিশ্বাস করতে বাধ্য ছিল। এর ফলে মধ্যযুগে ব্যক্তির কোন স্বাধীন অস্তিত্ব ছিলনা বললেই
চলে। মধ্য যুগে ব্যক্তি ছিল সমাজের প্রতিটি স্তরে বিভিন্ন ধরনের কঠোর নিয়ম নীতি, আচার
আচরণ এবং শৃঙ্খলে আবদ্ধ। সামন্ত প্রথায় কৃষকরা সার্ফ বা ভ‚মিদাস হিসেবে পরিচিত ছিল।
বহুস্তরে বিভক্ত সামন্ত জমিদার শ্রেণী একে অন্যের অধীন ছিল। আর পরিপূর্ণ ধর্ম ভিত্তিক
সমাজে ব্যক্তির অবস্থান ছিল গৌণ। এই পরিবেশে সমাজ বিকাশের স্বাভাবিক নিয়মেই ব্যক্তির
ইচ্ছা অনিচ্ছা, স্বাধীন মতামত ও ভাবনা প্রকাশের একটি আন্দোলন ধীর গতিতে এগুতে
থাকে। এর প্রতিফল লক্ষ্য করা যায় ত্রয়োদশ-উত্তর ইউরোপের রেনেসাঁসে। এটিকে



ইউরোপের ইতিহাসে রেনেসাঁস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই সময়ে পশ্চিম ইউরোপে
বিশেষত ইতালিতে সমুদ্রতীরে নতুন নতুন শহর গড়ে উঠতে থাকে এবং এই শহরগুলিতে গড়ে
উঠতে থাকে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ও। বস্তুত এই
সময় থেকে মানুষের মাঝে জীবন ও জগত সম্পর্কে অনুসন্ধিৎসার প্রাথমিক ধারণা দানা
বাঁধতে শুরু করে। পঞ্চদশ শতকের ইউরোপীয় নবজাগরণ বা রেনেসাঁস মানুষের মনোজগতে
যে সব পরিবর্তন নিয়ে আসে সেগুলোর প্রভাব ছিল সুদূর প্রসারী, এক কথায় বিপ্লবাতœক।
ব্যক্তির প্রকাশ, ব্যক্তির মুক্তি এবং মানবতাবাদই হলো উক্ত রেনেসাঁসের মূলকথা। উক্ত ব্যক্তির
মুক্তি মূলত সম্ভব হয়েছিল আধুনিক জ্ঞানবিজ্ঞান এবং যুক্তিবাদের বিকাশের মধ্য দিয়ে। যা
রেনেসাঁসের মনীষীগণ তাদের কর্মে ও চিন্তা-ভাবনায় শিখিয়ে ছিলেন। এর ফলে ব্যক্তিমানুষ
যেভাবে ইতিপূর্বে রাজা ও ধর্ম যাজকদের নিকট নিজেদেরকে সমর্পণ করে দিয়েছিল তার থকে
বে হয়ে আসা শুরু হয়, ব্যক্তি স্বাতন্ত্রের ধারা সূচিত হয়। ব্যক্তি স্বাতন্ত্রের বিকাশের মধ্য দিয়ে
ইউরোপের ইতিহাসে আধুনিক যুগের বিকাশ ত্বরান্বিত হয়।
(২) জাতীয় রাষ্ট্র
ইউরোপের ইতিহাসে আধুনিক যুগের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্যটি হলো জাতীয় রাষ্ট্রের উদ্ভব। মধ্যযুগের
ইউরোপে জাতীয় রাষ্ট্রের কোনো ধারণা ছিল না। ইউরোপের মানুষের মধ্যে রাষ্ট্রের ধারণা,
আদর্শ এবং মডেল ছিল পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য। এই সাম্রাজ্য দাঁড়িয়ে ছিল বহুস্তর বিশিষ্ট
সামন্তবাদী আর্থ-সামাজিক কাঠামোর উপর। ঐ সাম্রাজ্যের আদর্শিক ঐক্য ছিল খ্রিস্টান ধর্ম।
এ ক্ষেত্রে ধর্মের বিষয়াবলী এবং আইন ব্যাখ্যা করতেন খ্রিস্টান জগতের পোপ ও যাজকগণ।
রোমান সম্রাট, সামন্ত জমিদার কিম্বা আঞ্চলিক রাজাগণ এই আইনের প্রয়োগ করতেন। মূলত
সামাজিক শোষণ এবং অত্যাচারের মূল অস্ত্রটি ছিল খ্রিস্টান ধর্ম। মধ্যযুগের ইতিহাসে ক্ষুদ্র
ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত থাকার কারণে জাতিসত্তার বোধ, চেতনা বেড়ে ওঠার সুযোগ ছিল না।
সামন্ত আর্থ-সামাজিক কাঠামোর বিকাশ ও স্থিতিশীল পর্বে পোপ এবং সম্রাটের মধ্যে
মোটমুটিভাবে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক বজায় ছিল। মধ্যযুগের শেষদিকে অর্থাৎ সামন্ত সমাজ
কাঠামোর পতনের কালে রাষ্ট এবং ধর্মের উপর কর্তৃত্ব নিয়ে পোপ ও সম্রাটের মধ্যে দ্ব›েদ্বর
সূত্রপাত ঘটে। ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসেবে উভয়েই সাম্রাজ্যের উপর কর্তৃত্ব দাবি করেন।
একদিকে সামন্ত অর্থনীতির অবক্ষয় এবং অন্যদিকে ক্ষমতার প্রশ্নে পতনের পথে ধাবমান
বিশাল সাম্রাজ্যের প্রশাসনিক কাঠামো শিথিল হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চদশ ও ষোড়শ
শতাব্দী থেকে সমগ্র ইউরোপে বিভিন্ন আঞ্চলিক রাজা ও জমিদারগণ অনেকটা স্বাধীন হয়ে
উঠেন। ক্রমে পরিবর্তিত সামাজিক পরিস্থিতি এবং জ্ঞান ও মননের বিকাশের পটভ‚মিতে
জাতীয় রাষ্ট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন যে জাতীয় রাষ্ট্রের ধারণার
বিকাশের পাশাপাশি ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে জাতীয়তা বোধেরও উন্মেষ ঘটে। এই দুটি
মৌলিক প্রপঞ্চ আঠারো এবং উনিশ শতকে ইউরোপে আধুনিক জাতীয়তাবাদ এবং আধুনিক
জাতীয় রাষ্ট্রের বিকাশের গতিকে ত্বরান্বিত করে।
(৩) রেনেসাঁস বা নবজাগরণ


ইউরোপের ইতিহাসে আধুনিক যুগ চিহ্নিত হয়ে থাকে রেনেসাঁস বা নবজাগরণ দিয়ে। বস্তুতঃ
মধ্যযুগ এবং আধুনিক যুগের মাঝে চিহ্নিত সীমারেখা হলো এই নবজাগরণ। ফরাসি
জবহধরংংধহপব শব্দটির আভিধানিক অর্থ হলো পুনর্জন্ম। ইউরোপের ইতিহাসে প্রচলিত
অর্থে রেনেসাঁস বলতে বুঝায় প্রাচীন গ্রিক ও রোমান যুগের সাহিত্য, শিল্প, দর্শন, চিত্রকলা,
ভাস্কর্য, বিজ্ঞান-- এক কথায় প্রাচীন গ্রিক ও রোমান জ্ঞানবিজ্ঞানকে জানার জন্য গভীর আগ্রহ
এবং উৎসাহ সৃষ্টি হওয়া। মানব ইতিহাসের একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলো সমাজ ও সংস্কৃতির
বিকাশ, পরিবর্তন কিম্বা বিবর্তন সংঘটিত হয় বিদ্যমান আর্থ-সামাজিক অবস্থার উপর ভিত্তি
করে। অন্য কথায় বলা যায় যে একটি সমাজ কিম্বা জনগোষ্ঠীর বৈপ্লবিক পরিবর্তনের শর্তসমূহ
নিহিত থাকে চলমান আর্থ-সামাজিক কাঠামোর ভেতরে। সমাজ ইতিহাসের এই মৌলিক
বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে বলা যায় যে পঞ্চদশ শতকের ইউরোপীয় রেনেসাঁস হলো সমাজ
পরিবর্তনের প্রক্রিয়া। পুরো মধ্যযুগের স্থবির সামন্ত আর্থ-সামাজিক কাঠামো ভেঙ্গে নতুন
সমাজ ও সংস্কৃতি নির্মাণের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়েছিল এই রেনেসাঁস। প্রাচীন গ্রিক ও রোমান
জ্ঞানবিজ্ঞানের প্রতি গভীর আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছিল এই সামাজিক স্থবিরতার কারণে।
ইউরোপীয় রেনেসাঁস বা নবজাগরণের মূল আদর্শ ছিল বন্দিদশা থেকে মানুষের মুক্তি,
মানবতাবাদ, যুক্তিবাদ, বলিষ্ঠ সমালোচনা, গভীর অনুসন্ধিৎসা এবং ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি।
রেনেসাঁস বা নবজাগরণের ফলে মানুষ মধ্যযুগের গতানুগতিক সমাজ, আইন ও শাসন ব্যবস্থা
সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করে এবং পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের নামে প্রবর্তিত বিভিন্ন ধরনের শোষণ
থেকে মুক্তি লাভ করে। এই সময় থেকে মানুষের মাঝে শুরু হয় জীবন ও জগত সম্পর্কে এক
গভীর অনুসন্ধিৎসামূলক দৃষ্টিভঙ্গি। খ্রিস্টান ধর্মের নির্দিষ্ট গন্ডির বাইরে এসে মানুষ অজানাকে
জানার এবং অচেনাকে চেনার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠে। সর্বোপরি এই রেনেসাঁসের ভেতর
দিয়েই ইউরোপের আপামর সাধারণ মানুষ খ্রিস্টান ধর্মের শাসন, শোষণ ও অত্যাচার থেকে
বেরিয়ে এসে এক নতুন জীবন শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবে মানুষের কাছ থেকে ধর্মীয়
গোড়ামী দূর হতে শুরু করে। ধর্মের কাঠোর অনুশাসন সম্পর্কে মানুষের মধ্যে এক ধরনের
ঘৃণার উদ্রেক হয়। এর ফলশ্রæতিতে ইউরোপের মানুষের মাঝে ধর্ম সম্পর্কে সৃষ্টি হয়
উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি। এখান থেকেই বিকশিত হতে শুরু করে আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষ
ভাবনার।
(৪) ভৌগোলিক আবিষ্কার
ইউরোপের ইতিহাসে আধুনিক যুগের একটি অন্যতম অর্জন হলো ভৌগোলিক আবিষ্কার।
মধ্যযুগের মানুষের একটি সাধারণ ধারণা ছিল যে পৃথিবী ভ‚মধ্যসাগরকেন্দ্রিক এশিয়া, আফ্রিকা
এবং ইউরোপ মহাদেশ নিয়েই হলো পৃথিবী। পঞ্চদশ শতকের ইউরোপের নবজাগরণের
পটভ‚মিতে জীবন ও জগত সম্পর্কে মানুষের ধারণায় আমূল পরির্তন সাধিত হয়। অজানাকে
জানার জন্য এবং অচেনাকে চেনার জন্য মানুষের মাঝে সৃষ্টি হয় ব্যাপক আগ্রহ এবং
উদ্দীপনার। এদিকে ১৪৫৩ সালে উসমানীয় খলিফা দ্বিতীয় মোহাম্মদের হাতে
কন্সটান্টিনোপলের পতন ঘটার সঙ্গে সঙ্গে সমগ্র ভ‚মধ্যসাগরীয় অঞ্চলে তুর্কি শক্তির আধিপত্য
বিস্তৃত হয়। ফলে ভ‚মধ্যসাগরের পথে বাণিজ্য পরিচালনা তাদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই
সময় থেকে পশ্চিম ইউরোপের দেশসমূহ সমুদ্র পথে এশিয়ার সাথে বাণিজ্য পথ আবিষ্কারের
জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। প্রধানত এরই ফলশ্রæতিতে সংঘটিত হয় ভৌগোলিক আবিষ্কার। এ

ছাড়াও ভৌগোলিক আবিষ্কারের পেছনে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলির মধ্যে বাণিজ্যিক
প্রতিদ্ব›িদ্বতা, ইতালীয় নাবিক মার্কো পলোর ভ্রমণ বৃত্তান্ত, ইউরোপে প্রচুর মসলার চাহিদা,
অজানাকে জানার জন্য মানুষের অদম্য স্পৃহা ইত্যাদি কারণগুলি ক্রিয়াশীল ছিল।
ষোড়শ শতকে ইউরোপের ভৌগোলিক আবিষ্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেছিলেন
পর্তুগালের যুবরাজ নাবিক ইনফ্যান্ট হেনরি। তাঁর প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতা ও আর্থিক
সহযোগিতায় ১৪৩৩ সাল থেকে শুরু করে ১৪৬০ সাল পর্যন্ত পর্তুগালের নাবিকগণ প্রাচ্য
দেশে আসার জন্য সমুদ্র পথ আবিষ্কারের প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু এই পর্যায়ে কেউ সফল হতে
পারেনি। ১৪৮৭ সালে পর্তুগিজ নাবিক বার্থালমু দিয়াজ বর্তমান দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তমাশা
অন্তরীপ পর্যন্ত পৌঁছতে সক্ষম হন। এই ঘটনার পরবর্তী পর্যায়ে স্পেনের রানী ইসাবেলার
সহযোগিতায় এবং পৃষ্ঠপোষকতায় ইতালীয় নাবিক কলম্বাস ১৪৯২ সালে আমেরিকা আবিষ্কার
করেন। ১৪৯৮ সালে পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো ডা গামা দক্ষিণ আফ্রিকা ঘুরে ভারতের পশ্চিম
উপক‚লের কালিকট বন্দরে এসে পৌঁছেন। ১৫১৩ সালে ব্যালবোয়া নামে স্পেনের একজন
নাবিক প্রশান্ত মহাসাগর আবিষ্কার করেন। ১৫১৯ সালে ম্যাগেলান নামের একজন স্পেনিস
নাবিক ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছেন।
ভৌগোলিক আবিষ্কারের ফলে সারা পৃথিবীর দিগন্ত মানুষের সম্মুখে উন্মোচিত হয়। পশ্চিম
ইউরোপের দেশগুলি নব আবিষ্কৃত অঞ্চলসমূহ দখল করে তাদের উপনিবেশ স্থাপন করে। এই
সকল অঞ্চলে বসতি স্থাপন ও আবাদী কাজের জন্য উন্নত ইউরোপীয় জাতিগুলি আফ্রিকার
কালো মানুষদেরকে দাস হিসেবে নিয়োগ করতে শুরু করে। ফলে শুরু হয় দাস বাণিজ্য। এই
আবিষ্কারের ফলে মহাসাগরীয় বাণিজ্য যাত্রা শুরু হয়। এশিয়া আফ্রিকা ও আমেরিকার বিস্তীর্ণ
অঞ্চল ইউরোপের পদানত হওয়ার পাশাপাশি এই সকল অঞ্চলে ইউরোপের আধুনিক শিক্ষা
সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে। এ ছাড়াও মানুষের মাঝে যুক্তিবাদ ও বিজ্ঞান মনস্কতার বিস্তার, বিজ্ঞান
ও প্রযুক্তির অগ্রগতি, শিল্প সাহিত্যের বহুমুখী বিকাশ, ব্যাংকিং ব্যবস্থার গোড়াপত্তন, মুদ্রা
অর্থনীতর বিকাশ প্রভৃতি বিষয়কে আধুনিক যুগের বৈশিষ্ট্য হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। বস্তুত
এই সময় থেকেই সারা পৃথিবীতে আধুনিক যুগের যাত্রা শুরু হয়।


পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
১। ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদ বলতে বুঝায় -
(ক) ব্যক্তির স্বাধীনতা হরণ করা (খ) ব্যক্তিকে কঠোর নিয়ন্ত্রণে রাখা
(গ) ব্যক্তিকে পৃষ্ঠপোষকতা করা (ঘ) ব্যক্তির গুণাবলী সমহিমায় বিকশিত
হওয়া
২। জাতীয় রাষ্ট্র কি?
(ক) ধর্ম ভিত্তিক রাষ্ট (খ) অঞ্চলভিত্তিক রাষ্ট্র
(গ) জাতিভিত্তিক রাষ্ট (ঘ) সমগ্র অঞ্চলকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র
৩। রেনেসাঁসের মূল আদর্শ ছিল -
(ক) যুক্তিবাদ, মানবতাবাদ ও অনুসন্ধিৎস
(খ) সম্মিলিত ভাবে পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য রক্ষা
(গ) ধর্মভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করা
(ঘ) রাজার নির্দেশ পালন করা
৪। আমেরিকা আবিষ্কার করেন -
(ক) নাবিক হেনরি (খ) ভাস্কো ডা গামা
(গ) কলম্বাস (ঘ) ব্যালবোয়া
৫। ভাস্কো-ডা-গামা এসে পৌঁছেন ভারতের -
(ক) কালিকট বন্দরে (খ) বোম্বে বন্দরে
(গ) মাদ্রাজ বন্দরে (ঘ) কলকাতা বন্দরে
উত্তর : ১। (ঘ), ২। (গ), ৩। (ক), ৪। (গ), ৫। (ক)।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। ইউরোপের ইতিহাসে ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদ বিকাশের পটভ‚মি আলোচনা করুন
২। ইউরোপে জাতীয় রাষ্ট্রের উন্মেষ প্রক্রিয়া আলোচনা করুন
৩। ষোড়শ শতকের ভৌগোলিক আবিষ্কারসমূহের বিবরণ দাও
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। ভৌগোলিক আবিষ্কারের পেছনে কি কি কারণ কার্যকরি ছিল
২। নাবিক হেনরি কে ছিলেন
৩। দাস বাণিজ্য কিভাবে শুরু হয়

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]