ইংল্যান্ডে শক্তিশালী রাজতন্ত্র হিসেবে টিউডর রাজবংশের উদ্ভব
ষোড়শ শতাব্দীর প্রথম ভাগে জাতীয় রাষ্ট্রের উদ্ভব ইউরোপের ইতিহাসে অন্যতম যুগান্তকারী
ঘটনা। এই সব শক্তিশালী রাজতন্ত্রের মধ্যে ইংল্যান্ডে টিউডর, ফ্রান্সে বুরবোঁ, অস্ট্রিয়ায়
হ্রাপসবার্গ, রাশিয়ায় রোমানভ এবং তুরস্কে ওসমানিয়া রাজবংশের উদ্ভব হয়। এতে রাজা
পোপের বদলে জাগতিক এবং পারলৌকিক উভয় জগতের সর্বেসর্বা হয়ে উঠেন।
ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ড এই ক্ষুদ্র চারটি দ্বীপের সমন্বয়ে ইংল্যান্ড দ্বীপুঞ্জ
গঠিত হয়। টিউডরদের ইংরেজ সংস্কৃতি এ্যাংলো-স্যাক্সন ও নরম্যান ফরাসি এই দুই সংস্কৃতির
সামঞ্জস্যতায় গড়ে উঠেছিলো। ইংল্যান্ডের রাজা নরম্যান্নাসী বংশোদ্ভূত হওয়ায় তারা সমগ্র দেশ
জয় করতে ইচছুক হয়ে উঠেন। তারা আয়ারল্যান্ডে এবং ওয়েলসে ইংল্যান্ডের আধিপত্য
প্রতিষ্ঠা করলেও স্কটল্যান্ডে তা পারেনি । ফ্রান্স ছিলো ঐতিহ্যগতভাবে শত্রট্টুভাবাপন্ন দেশ এবং
দীর্ঘ একশত বছর (১৩৩৭ - ১৪৫৩খ্রি.) এরা একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলো। ১৩৯৯
- ১৪৮৫ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ড গৃহযুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিলো।
বলা যায় দ্বিতীয় রিচার্ডের পতন থেকে শুরু করে ১৪৮৫ সালে তৃতীয় রিচার্ডের মৃত্যু পর্যন্ত এই
দেশ যুদ্ধে বিধস্ত হয়। তৃতীয় এডোয়ার্ডের বংশধরদের উত্তারাধিকার দ্ব›দ্ব সংঘাতের ফল স্বরূপ
‘গোলাপ যুদ্ধের’ সৃষ্টি হয়। দুটো দলের এক পক্ষে ছিলো ইয়র্কশায়ারবাদীরা (সাদা গোলাপ)
এবং অন্যপক্ষে ল্যাংকাশায়ারবাদীগণ (লাল গোলাপ)। এরা দীর্ঘ ত্রিশবছর একে অপরের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। এই গৃহযুদ্ধের শেষে রাজা সপ্তম হেনরি চতুর্থ এডোওয়ার্ডের বোনকে বিয়ে
করেন এবং ১৪৮৫ সালে বসওয়ার্থের যুদ্ধে তৃতীয় রিচার্ডকে পরাজিত করেন। রিচার্ড
যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হলে সপ্তম হেনরি সিংহাসনে বসেন। তিনি ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক সকল
অনৈক্য ও অশান্তি দূর করে ইউরোপে একটি শক্তিশালী রাজতন্ত্রের সূচনা ঘটান।
২। সপ্তম হেনরি (১৪৮৫ - ১৫০৯ খ্রিঃ)
সপ্তম হেনরি টিউডর রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। ১৪৭১ সালে ওয়েলস-এর রাজকুমারের
মৃত্যুর পর তিনি ল্যাংকাস্টারিয়ান গোষ্ঠিভূক্ত স¤প্রদায়ের রাজা মনোনীত হন। ইংল্যান্ডের রাজ
সিংহাসন লাভের ক্ষেত্রে হেনরির প্রধান ভিত্তি হয়ে দাড়াঁয় ১৪৮৫ সালে বসওয়ার্থের যুদ্ধে তাঁর
বিজয়। এই যুদ্ধে তৃতীয় রিচার্ড মারা যান এবং হেনরি সপ্তম হেনরি উপাধি ধারণ করে
সিংহাসনে আরোহন করেন। তিনি চতুর্থ এডওয়ার্ডের কন্যা লেডি এলিজাবেথকে বিয়ে করেন।
দীর্ঘদিন গোলাপ যুদ্ধের ফলে ইংরেজ জাতির মনে দৃঢ় রাজতন্ত্রের শাসনাধীনে আসার ইচ্ছা
প্রবল হয়ে উঠে। সপ্তম হেনরি একজন শক্তিশালী শাসক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা
করেন, এবং এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে সাফল্যমন্ডিত হয়েছিলেন।
গোলাপযুদ্ধে ল্যাংকাস্টার এবং ইয়র্কশায়ার উভয়গোষ্ঠীর অভিজাত ও সামন্তশ্রেণী প্রত্যক্ষভাবে
অংশ নেয়। ত্রিশ বছরব্যাপী যুদ্ধে বহু অভিজাত পূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করেন। তাঁর অভ্যন্তরীণ
নীতি দেশের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়নের ক্ষেত্রে পরিচালিত
হয়েছিলো। তিনি অভিজাত শ্রেণীর ক্ষমতা খর্বে তিনটি নীতি গ্রহণ করেন।
প্রথমত, গোলাপ যুদ্ধের পর ১৪৮৭ সালে এক আইনে স্পষ্ট বলা হয় যে অভিজাত বা সামন্ত
স¤প্রদায়ের অধীনস্থ ব্যক্তিরা তার প্রভুর প্রতীক বা চিহ্ন অঙ্কিত কোনো উর্দি পরতে পারবে না।
দ্বিতীয়ত, সপ্তম হেনরি কোর্ট অব চেম্বার নামে একটি আদালত স্থাপন করে। এই কোর্টে রাজার
মনোনীত ব্যক্তিবর্গ জুরি হিসেবে ছিলেন। এই কোর্টের মোকদ্দমা পরিচালিত হতো গোপনে
এবং এর মাধ্যমে অবাধ্য একগুঁয়ে অভিজাত শ্রেণীকে কঠোর শাস্তি দেয়া হতো।
তৃতীয়ত, অর্থনৈতিক সংস্কারের ক্ষেত্রে তিনি অনুদানের জন্য পালামেন্টের ওপর নির্ভর হতে
চাননি। তিনি বাধ্যতামূলক বিভিন্ন ঋণ, সামন্ত ঋণ রাজকীয় জমির উপর খাজনা ও রপ্তানি
পণ্যের উপর খাজনা ধার্য করেন। ১৪৮৫ সালে তিনি নৌবাণিজ্য আইন পাশ করেন। এই
আইনের মাধ্যমে ইংরেজ বাণিজ্য জাহাজ শুধু ইংরেজদের মাধ্যমে চালিত হবে এবং ইংরেজ
জাহাজের মাধ্যমে পণ্য আনা নেয়ার বিধান রাখা হয়।
ইংল্যান্ডের পার্লামেন্ট দেশের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখলেও
সপ্তম হেনরির রাজত্বের প্রথম ১১ বছরে ৬ বার এবং রাজত্বের বাদবাকি সময়ে মাত্র একবার
পার্লান্টের অধিবেশন আহবান করা হয়।
সপ্তম হেনরি তাঁর ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য কাউন্টি বা জেলা প্রশাসন এবং বিভিন্ন স্থানীয়
উচ্চ পদস্থ ব্যক্তিদের ওপর নির্ভরশীর ছিলেন। চার্চের প্রতি তাঁর ক্ষোভ এবং কোনো কোনো
ব্যাপারে অপছন্দ থাকলেও তিনি চার্চের সঙ্গে দ্ব›েদ্ব জড়িয়ে পড়েননি।
সপ্তম হেনরি ইংল্যান্ডে রেনেসাসেঁর প্রসারে বিশেষভাবে সহায়তা করেন। অক্সফোর্ডকে তিনি
গ্রিক শিক্ষার কেন্দ্রস্থল হিসেবে গড়ে তোলেন। মূলত তিনি ইতালীয় শিল্প এবং স্থাপত্যের
পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।
হেনরির বৈদেশিক নীতি যুদ্ধ নয় বরং ইউরোপীয় রাজন্যবর্গের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের
ভিত্তিতে গড়ে উঠেছিলো। বৈবাহিক সম্পর্ক এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তির
ক্ষেত্রেই তিনি বিশেষ জোর দিয়েছিলেন।
এ ছাড়াও বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে সপ্তম হেনরি ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ
সম্পর্ক বজায় রাখেন। তিনি নিজে ইয়র্কশায়ার গোষ্ঠীভুক্ত রাজকন্যা এলিজাবেথকে বিয়ে
করেন। তিনি তাঁর পুত্র প্রিন্স আর্থারকে রাজকন্যা ক্যাথরিনের সঙ্গে বিয়ে দেন। ক্যাথরিন
ছিলেন স্পেনের রাজা ফার্ডিনান্ডের কন্যা। প্রিন্স আর্থার মারা গেলে হেনরি পোপের অনুমতি
নিয়ে ক্যাথরিনের সঙ্গে তাঁর দ্বিতীয় পুত্রের বিয়ে দেন। পরবর্তীকালে অষ্টম হেনরি নামে
পরিচিত হয়ে তিনি সংস্কার আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন।
ইংল্যান্ড সপ্তম হেনরির সময়ে ব্রিটেনি নামক অঞ্চলটিকে কেন্দ্র করে ফ্রান্সের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত যুদ্ধে
জড়িয়ে পড়ে। তবে ১৪৯২ সালে ইটাপলিস এর চুক্তির মাধ্যমে এই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে।
এভাবে সপ্তম হেনরি টিউডর বংশের উত্থানে এক গৌরবোজ্জ্বল যুগের সূচনা করেন। তিনি ঘরে
এবং বাইরে ইংল্যান্ডের সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হন। তিনি তাঁর পুত্রের জন্য
ইংল্যান্ডে একটি পরিপূর্ণ রাজকোষ, শান্তিও স্বচ্ছতা রেখে গিয়েছিলেন। নি:সন্দেহে বলা যায়
‘‘সপ্তম হেনরির সময় ছিলো ইংল্যান্ডের সকল উন্নতি এবং সমৃদ্ধির বীজ বপনের সময়।’’
৩। অষ্টম হেনরি (১৫০৯ - ১৫৪৯)
টিউডর রাজবংশ তার শক্তিমত্তা ও সাফল্যের সর্বোাচ্চ চ‚ড়ায় আরোহন করে অষ্টম হেনরির
সময়ে। মাতা এলিজাবেথের কনিষ্ঠপুত্র অস্টম হেনরি আঠারো বছর বয়সে একজন রেনেসাঁস
যুবরাজ কোলেট, এ্যারাসমাস এবং স্যার থমাস মুরের সমসাময়িক ছিলেন। তিনি ল্যাটিন,
ফরাসি, ইতালি ও রোমান ভাষা জানতেন। ভালোবাসতেন সঙ্গীত, নৃত্য ও ক্রীড়াশৈলী।
অষ্টম হেনরি ছিলেন শক্তিশালী রাজতন্ত্রের মূর্তপ্রতীক। তিনি কোনোরকম বিরোধিতা সহ্য
করতেন না। সেটি পোপ বা তাঁর ঘনিষ্ঠ সহকর্মী যে কারো কাছ থেকেই নয়। তাঁর শাসনের
প্রথম দিকে তিনি তাঁর সহকর্মী ওলসি থমাস ক্রেনমারের পরামর্শ ও বুদ্ধিমতে চালিত হলেও
পরবর্তীকালে তিনি সিদ্ধান্ত ও নীতির ব্যাপারে কারো ওপর নির্ভরশীল ছিলেন না। তবে
রাজনৈতিক ক্ষমতার উচ্চশিখরে উঠার পর পোপের সঙ্গে তার সংঘাত ও দ্ব›দ্ব অপ্রতিরোধ্য
হয়ে উঠে।
৪। অষ্টম হেনরি এবং ইংরেজ সংস্কার আন্দোলন
ইংল্যান্ডের সংস্কার আন্দোলন ছিলো রাজনৈতিক। ইংল্যান্ডের রাজা ছিলেন সত্যিকার অর্থে
একজন গোঁড়া ক্যাথলিক। ধর্ম সংস্কার আন্দোলনের প্রতি তাঁর ছিলো তীব্র ঘৃণা। রাজা
ক্যাথলিকবাদের সপক্ষে ঞযব উবভবহপব ড়ভ ঝধপৎধসবহঃ নামে একটি ছোট্ট পুস্তিকা রচনা
করেন। পোপ এতে অত্যন্ত সন্তুষ্ট হন এবং তাঁকে ধর্মরক্ষক বা (উবভবহফবৎ ড়ভ ঋধরঃয) হিসেবে
ঘোষণা দেন। কিন্তু এর কিছুকাল পরেই সবাইকে অবাক করে পোপ এবং রাজার মধ্যে দ্ব›দ্ব
শুরু হয়। রাজা নিজেকে ইংরেজ চার্চের প্রধান হিসেবে ঘোষণা করেন।
ব্যক্তিগত এবং রাজনৈতিক কারণে তিনি পোপকে তাঁর প্রথম স্ত্রী ক্যাথরিন আরাগনের সঙ্গে
বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটাতে নিদের্শ দেন। মূলত পুত্র সন্তান না হওয়ায় এ্যানি বোলেন নামক
মহিলাকে ১৫৩৩ সালে গোপনে বিয়ে করার তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন। অপরদিকে ক্যাথরিন
ছিলেন স্পেনের পঞ্চম চার্লসের ভগ্নী। পোপকে চাপ দিলেন যাতে তিনি হেনরির অনুরোধ
মেনে না নেন। এর ফলে পোপ অষ্টম হেনরির নির্দেশের উত্তর না দিয়েই ব্যাপারটি ঝুলিয়ে
রাখলেন। ইংরেজরা মনে করলো পোপ নয় বরং পঞ্চম চার্লস এই ইস্যুতে প্রভাব বিস্তার
করছে। হেনরি থমাস ক্রেনমারকে ক্যান্টাবেরির প্রধান যাজকে নিযুক্ত করেন যিনি বিবাহ
বিচেছদ মামলাটি নিষ্পত্তি করেন। পার্লামেন্টের আইনের মাধ্যমে (পার্লামেন্ট হেনরির অধীনে
ছিলো) হেনরি পোপকে ইংল্যান্ডের চার্চের প্রধান-এর পদ থেকে সরিয়ে দেন। ক্যাথরিন এই
বিচ্ছেদের বিরুদ্ধে পোপের কাছে অভিযোগ বা আবেদনপত্র পেশ করতে পারবে না বলে
পার্লামেন্টে আইন পাশ করানো হয়। ‘এ্যাক্ট অফ সুপ্রিমেসি’ বা ‘আধিপত্যের আইনের’ মাধ্যমে
রাজাকে ইংল্যান্ডের চার্চের সর্বোচ্চ শাসক হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়।
এই আইনের মাধ্যমে ইংল্যান্ড থেকে পোপকে কোনো প্রকার অর্থ পাঠানোর উপর নিষেধাজ্ঞা
আরোপ করা হয়। যদিও রাজা ইংল্যান্ডের চার্চের ক্ষমতাকে অনেকটা দুর্বল করে দিতে সক্ষম
হন, তবে তার অনুরোধে পার্লামেন্টে ছয় শর্তের আইন (ঝরী অৎঃরপষবং অপঃ) নামে একটি
আইন প্রণীত হয় যা ক্যাথলিক ধর্মমতের মূল সুত্রগুলিকেই নিশ্চিত করেছিলো। এভাবে তিনি
বহু প্রোটেস্টান্টকে আশাহত করে ছিলেন যারা ইংল্যান্ডের চার্চকে সম্পূর্ণভাবে প্রোটেস্টানট
চার্চে পরিণত করতে চেয়েছিলেন।
প্রোটেস্ট্যান্টবাদের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে ল্যাটিন ভাষায় রচিত বাইবেলের বদলে ইংরেজিতে
অনুবাদকৃত বাইবেল সকল চার্চে রাখার ঘোষণা দেন তিনি। ১৫৪১ সালে ক্রেনমারের অনুবাদ
চার্চে প্রতিস্থাপন করা হয় এবং ধর্মীয় পুস্তকটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়। তিনি পাদরি বা
যাজকদের জন্য দশম শর্ত (ঞবহ অৎঃরপষবং) গ্রহণ করতে বাধ্য করেন। এই অনুচ্ছেদগুলি
চার্চের বা রোমের মতবাদ ছাড়া আর কিছুই নয়। ছয় শর্তের আইনে পাদরি বা যাজকদের
প্রথাগত বিশ্বাস বিহীত না করে আনুগত্য, ট্র্যানসারস্ট্যানশিয়েশন (মাংস ও রক্তের পরিবর্তে
রুটি ও মদের খাদ্য ব্যবস্থা) ইত্যাদির মাধ্যমে ক্যাথলিক ধর্মমতগুলিকেই মেনে নেয়া হয়।
তবে তার এই ধর্মীয় নীতিতে ক্যাথলিক বা প্রোটেস্টান্ট কেউ খুশি হয়নি। ক্যাথলিকরা তাঁর
বিরুদ্ধে ছিলেন যেহেতু তিনি পোপের সার্বভৌমত্বকে খর্ব করেন, আবার প্রোটেস্টান্টরা খুশি
ছিলেন না যেহেতু ক্যাথলিকদের পুরানো রীতি নীতি বাতিল করা হয় নি।
তাঁর শাসনের প্রথম পর্যায়ে হেনরি মন্ত্রীদের পরামর্শ নিয়ে কাজ করলেও পরবর্তী কালে তাঁর
বিদেশ মন্ত্রী ওলসির বুদ্ধিমত্তায় মন্ত্রীদের বা রাজকীয় কর্তৃত্ববাদকে অপসারণ করে মধ্যবিত্ত
শ্রেণীর সমর্থন নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি সপ্তম হেনরি প্রবর্তিত কোর্ট অব স্টার চেম্বারের
মাধ্যমে অভিজাত শ্রেণীর ক্ষমতা খর্ব করেন। পার্লামেন্টের উপর নির্ভশীলতা কমিয়ে আনার
জন্য তিনি (১৫১৫ থেকে ১৫২২) এই সাত বছর পার্লামেন্টের অধিবেশন ডাকা থেকে বিরত
থাকেন।
পরাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে অষ্টম হেনরির রাজত্বকাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। সপ্তম হেনরির
রাজত্বকালে ইউরোপের রাজনৈতিক পরিস্থিতির বৈশিষ্ট্য ছিলো স্পেন, অস্ট্রিয়া, হ্যাপসবার্গ ও
ফ্রান্সের বুরবোঁ পরিবারের দ্ব›দ্ব। ওলজির পররাষ্ট্র নীতির মূল লক্ষ্য প্রথমত, ইউরোপের ব্যালেন্স
অব পাওয়ার বা ক্ষমতার ভারসাম্য নীতি টিকিয়ে রাখা এবং দ্বিতীয়ত, ইউরোপের রাজনীতিতে
যে কোনো পক্ষে যোগ দানের ক্ষেত্রে ইংল্যান্ড তার নিজের স্বার্থের প্রতিই সর্ব প্রকার নজর
দেবে।
অষ্টম হেনরির আমলে ইংল্যান্ড একটি মর্যাদাপূর্ণ দেশে পরিণত হয়েছিলো। ধর্মক্ষেত্রে
প্রোটেস্টান্ট এবং ক্যাথলিকদের মধ্যে সমঝোতার নীতি, অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে দৃঢ়শাসন,
আর্ন্তজাতিক ক্ষেত্রে ইংল্যান্ড ইউরোপীয় রাজনীতিতে বলিষ্ঠভাবে অংশ নেওয়া এবং বহু ত্রট্টটি
বিচ্যুতির পরও ইংল্যান্ড মহাদেশীয় শক্তির মর্যাদা লাভ করে।
৪। রাজা এডওয়ার্ড : (১৫৪৭ - ১৫৫৩)
অষ্টম হেনরির মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র ষষ্ঠ এডওয়ার্ড সিংহাসনে আরোহন করেন। তিনি নাবালক
হওয়ায় তাঁর চাচা ডিউক অফ সামারসেটের নেতৃত্বে এবং পরবর্তীকালে নর্দাম্বারল্যান্ড তাঁর
রাজপ্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এই সময় ইংল্যান্ডের ধর্মনীতির ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট নীতি
গ্রহণ করা হয়। অষ্টম হেনরি তাঁর ধর্মনীতির ক্ষেত্রে ক্যাথলিক এবং প্রোটেস্টান্ট কাউকেই খুশি
করতে পারে নি। এডওয়ার্ড ইংল্যান্ডের চার্চকে সত্যিকার প্রোটেস্টান্ট করতে এগিয়ে আসেন।
তিনি লুথার এবং ক্যালভিনের ধর্মমত সমগ্র ইংলান্ডে প্রচার এবং প্রসাবের ব্যবস্থা করেন।
এ্যাংলিকান চার্চের মূলসূত্র বা অনুচ্ছেদসমূহ প্রোটেস্টান্ট প্রভাবে সহজবোধ্য সুস্পষ্ট এবং
আকর্ষণীয় করে তোলেন। আর্চবিশপ ক্রেনমারের নিদের্শনায় ইংরেজিতে বাইবেলের অনুবাদের
ব্যবস্থা নেয়া হয়। সাধারণ প্রার্থনা (পড়সসড়হ ঢ়ৎধুবৎ নড়ড়শ) নামক পুস্তকে উপাসনা পদ্ধতি
লিপিবদ্ধ করা হয়। এ ছাড়াও নর্দায়াম্বারল্যান্ডের সময় ৪২ দফা ধর্মনীতি সংকলিত একটি
আইনে প্রোটেস্টান্টধর্ম নীতির সংকলিত একটি আইনে প্রোটেস্টান্ট ধর্মনীতিগুলি বিধিবদ্ধ করা
হয়। এ্যাংলিকান চার্চকে প্রোটেস্টান্ট চার্চে পরিণত করা হয়। তাঁর সময়ে বিশপদের বিয়ে
করার অনুমতি দেয়া হয়, বিরুদ্ধবাদীর বিরুদ্ধে আইন শিথিল করা হয়।
৫। রানী ম্যারি টিউডর (১৫৫৩ - ১৫৫৮খ্রি:)
রানী ম্যারি ছিলেন অষ্টম হেনরি ও ক্যাথরিনের কন্যা। তার স্বামী স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ
ছিলেন ক্যাথলিক ধর্মের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। সিংহাসনে আরোহনের সময় তাঁর বয়স ছিলো
সতের বছর। তাঁর মায়ের ট্রাজেডি তাঁকে সর্বদা ভারাক্রান্ত করে রাখতো। ছোটকাল থেকেই
তাঁকে একই শিক্ষা দেয়া হয়েছিল যে, ইংল্যান্ডকে আবার রোমের ক্যথলিক চার্চ প্রতিষ্ঠিত
করতে হবে। তবে তিনি বুঝতে সক্ষম হন নি যে প্রজারা পুনরায় আবার ক্যাথলিক ধর্মে ফিরে
যেতে ইচ্ছুক নন।
ম্যারি তাঁর মায়ের মতই গোঁড়া ক্যাথলিকপন্থী ছিলেন বিধায় ১৫৫৩ সালে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত
হওয়ার পর তিনি তাঁর লোকদের পূর্ববর্তী ধর্মীয় জীবনে ফিরে যেতে এবং সবাইকে ক্যাথলিক
ধর্মে দীক্ষিত করতে বাধ্য করেন। তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে পোপের আনুগত্য মেনে নেবার
আহবান জানান। পূর্বেকার ক্যাথলিক বিরোধী আইন তুলে দিয়ে পুনরায় ইংল্যান্ডে পোপের
প্রাধান্য স্থাপিত হয়। সেই সমস্ত বিশপদের মধ্যে যারা রাজার আধিপত্য মেনে নিয়ে শপথ
নিতে অস্বীকার করে তাদের আবার চাকুরিতে পুর্ণবহাল করা হয়েছিলো। প্রায় তিনশত ভিন্ন
মতাবলম্বীকে বিধর্মী হিসেবে চিহ্নিত করে পুড়িয়ে মারা হয়। এ ছাড়াও হাজার হাজার
প্রোটেস্টান্টকে দেশত্যাগে বাধ্য করে। যেহেতু বিপুলসংখ্যক প্রোটেস্টান্টদের পুড়িয়ে মারা
হয়েছিল তাই ইংল্যান্ডের ইতিহাসে তিনি রক্তপিপাসু ম্যারি (ইষড়ড়ফু গধৎৎু) নামে পরিচিত
হলেন।
ম্যারির বৈদেশিক নীতি তাঁর পূর্বপুরুষের নীতি থেকে সরে আসে এবং ক্রমশ বিপদগামী হয়ে
পড়ে। তিনি ইংল্যান্ডের ওপর পোপের আধিপত্য বজায় রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন এবং
ইংল্যান্ডের স্বার্থকে স্পেনের কাছে বিসর্জন দিয়েছিলেন।
ম্যারি স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। ম্যারি দ্বিতীয় ফিলিপকে বিয়ে
করেছেন এই সংবাদে ইংল্যান্ডে দাঙ্গা হাঙ্গামার সৃষ্টি হয়। বিশেষত মিডলল্যান্ড এবং ওয়েলসে
দাঙ্গা হয়। তবে এত সব বিদ্রোহের পরও ম্যারি ফিলিপকে বিয়ে করেন। ইংল্যান্ড, নেপলস,
স্পেন, জেরুজালেম, আয়ারল্যান্ড, সিসিলি, অস্ট্রিয়া, মিলান প্রভৃতি দেশের রাজাও রানী
হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। দ্বিতীয় ফিলিপের সাথে এই বিয়ে রোমের সঙ্গে ঐক্যের পথকে
সুগম করে। তিনি ক্যাথলিক ধর্মমতের বিরুদ্ধে আইন বাতিল করে পুরাতন ধর্মকে আবার
পুনপ্রতিষ্ঠা করেন।
১৫৫৮ সালে ইংল্যান্ড এক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। নেপলস থেকে স্পেনীয়দের বের করে দেবার
লক্ষ্যে পোপ এবং ফ্রান্স ১৫৫৭ সালে দ্বিতীয় ফিলিপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ম্যারি এই
যুদ্ধে স্বামীর পক্ষ নেয় এবং ইংল্যান্ড ফ্রান্সের বিরুদ্ধে স্পেনের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করতে বাধ্য হয়।
এই যুদ্ধে প্রথমদিকে এ্যাংলো স্যাক্সন শক্তি জয়ী হয়। তবে ১৫৫৮ সালে ক্যালিস অঞ্চলটি
ফরাসি সেনাপতি স্যালি কর্তৃক ফ্রান্সের কাছে হস্তগত হয়। এই ক্যালিস অঞ্চলটি ছিলো দীর্ঘ
দুইশত বছর ফ্রান্সের বুকে ইংল্যান্ডের শেষ অধিকৃত ভ‚মি। ক্যালিস হারানোর পর ম্যারি
ভীষণভাবে মুষড়ে পড়েন এবং বলেন যে তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর কবরের উপর যাতে ক্যালিস
নামটি লেখা হয়। এ ভাবে ফিলিপের সঙ্গে বিয়ে রাজনৈতিক কি ব্যক্তিগত কোন ভাবেই ম্যারি
উপকৃত হন নি।
শেষ জীবনে রানী ম্যারির অসুখী ছিলেন। তাঁর স্বামী তাঁকে ছেড়ে চলে যান। ইংল্যান্ডে রোমান
চার্চ বা ক্যাথলিকবাদ পুন:প্রতিষ্ঠার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এই অবস্থায় এলিজাবেথকে তাঁর
উত্তরাধিকারী মনোনীত করে ১৫৫৮ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
৬। রানী এলিজাবেথ ( ১৫৫৮ - ১৬০৩)
ইংল্যান্ডের জাতীয় জীবন যখন ধর্মীয় বিরোধ দ্বারা বিভ্রান্ত ছিলো তখন তরুণী এলিজাবেথ
সিংহাসনে আরোহন করেন। তিনি ছিলেন অসাধারণ মানসিক বল ও প্রত্যুৎপন্নমতীসম্পন্ন
রানী। এলিজাবেথ ছিলেন অষ্টম হেনরি এবং এ্যানি বোলেনের কন্যা। ১৫৫৮ সালে যখন তিনি
সিংহাসনে বসেন তখন তাঁর বয়স ছিল পঁিচশ বছর। তিনি ছিলেন দীর্ঘাঙ্গী, উঁচু গ্রীবাসম্পন্ন
খাঁড়া নাক এবং তামাটে রঙের আধিকারীনী। এলিজাবেথ অভ‚তপূর্ব বুদ্ধিমত্তার অধিকারী
ছিলেন এবং তাঁর আচরণ ছিলো রাজসুলভ। সিংহাসনে আরোহনের প্রথম দিন থেকেই তিনি
তার জনগণকে মুগ্ধ করে রেখেছিলেন। তার প্রতিটি কার্য, কর্মপন্থা এবং চিন্তা ইংরেজ জাতির
স্বার্থ বা উদ্দেশ্যের নিরিখে পরিচালিত হয়েছিল। জনগণ তাঁকে “এড়ড়ফ ছঁববহ ইড়ংব”
হিসেবে অভিহিত করতো।
এলিজাবেথ সিংহাসনে আরোহনের সময় থেকেই ইংল্যান্ড নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল।
সেই সময় গৃহযুদ্ধের হুমকি সমগ্র দেশকে গ্রাস করেছিলো। গোড়াঁ ক্যাথলিকরা এলিজাবেথকে
একজন ক্ষমতা দখলকারী হিসেবে ঘোষণা দেয়। আবার প্রোটেস্টান্টরাও তাঁর প্রতি রাগান্বিত
ছিলো ম্যারি টিউডরের সময়কার নিষ্ঠুর নির্যাতনের জন্য। ক্যাথলিক এবং প্রোটেস্টান্টদের দ্ব›দ্ব
ছাড়াও ইংল্যান্ড তখন ছিলো অর্থাভাবে জর্জরিত। তবে এলিজাবেথ এই সকল সমস্যার
সমাধান করে ইংল্যান্ডকে একটি শক্তিশালী মহান দেশে পরিণত করেন।
রানী এলিজাবেথের সবচাইতে বড় কৃতিত্ব হলো ধর্মীয় সমস্যার সমাধান করা। তাঁর সামনে বহু
পথ খোলা ছিলো। তিনি বোন ম্যারির মতো রোমের সঙ্গে সম্পর্ক পুনপ্রতিষ্ঠা করতে পারতেন।
ভাই ষষ্ঠ এডোওয়ার্ডের নীতি অর্থাৎ প্রোটেস্টান্ট চার্চ প্রতিষ্ঠা বা তার পিতার মতো
সমঝোতামূলক নীতি গ্রহণ করতে পারতেন। তবে তিনি ধর্মের ব্যাপারে যে নীতি অনুসরণ
করেন তা এ্যাংলিকানিজম নামে পরিচিত। প্রোটেস্টান্ট এবং ক্যাথলিক এই দুই স¤প্রদায়ের
মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের জন্য এলিজাবেথ উগ্র প্রোটেস্টান্ট মতকে কতক পরিমাণে নরম
করেছিলেন। এভাবে উভয় পক্ষে সমঝোতা বা মধ্যপন্থা নীতির মাধ্যমে দুই দলকেই খুশি
করতে চেয়েছেন এবং চিরস্থায়ীভাবে ইংল্যান্ড ধর্ম সমস্যার সমাধান করে।
এলিজাবেথ পার্লামেন্টের মাধ্যমে ধর্ম সংক্রান্ত আইনগুলি পাশ করেন। আইন পাশ করে তিনি
ইংল্যান্ডের চার্চকে রোমের পোপ থেকে বিচ্ছিন্ন করেন এবং রাজকীয় কতৃত্ববাদ পুনরুদ্ধার
করেন। প্রাধান্যের আইন (অপঃ ড়ভ ঝঁঢ়ৎবসধপু) দ্বারা তিনি পোপের প্রাধান্য খর্ব করেন।
এলিজাবেথকে চার্চের প্রধান নিযুক্ত করা হয়। পিতার ন্যায় সর্বোত্তম প্রধান (ঝঁঢ়ৎবসব ঐবধফ)
এর বদলে সর্বোচ্চ শাসক (ঝঁঢ়ৎবসব এড়াবৎহড়ৎ) এর পদবী গ্রহণ করেন। ক্রেনমারের
পুরস্কারকৃত (অ ইড়ড়শ ড়ভ ঈড়সসড়হ চৎধুবৎ) বইটি আবার প্রকাশিত হয়। এছাড়াও এ্যাক্ট
অব ইউনিফরমিটি (অপঃ ড়ভ টহরভড়ৎসরঃু) দ্বারা ষষ্ঠ এডওয়ার্ডের প্রার্থনা পুস্তক প্রচলন করা
হয়। এছাড়া বাইবেলই হবে খ্রিস্ট ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ এই নীতি অনুসরণ করা হয়।
এভাবে বলা যায় প্রোটেস্টান্ট ধর্মনীতি প্রবর্তন হলেও তা করা হয়েছিল ক্যাথলিক ধর্মীয়
কাঠামোর মধ্যে। অর্থাৎ ক্যাথলিক ধর্মীয় বিশ্বাসের অবয়বে প্রোটেস্টান্ট ধর্মমতসমূহ
কার্যসম্পাদনা করতে থাকে। তাঁর এই বন্দোবস্ত এলিজাবেথীয় বন্দোবস্ত বা এ্যাংলিকানিজম
(অহমষরপধহরংস) নামে পরিচিত হয়।
রানী এলিজাবেথের শাসনের অধিকাংশ সময়ই ক্যাথলিক পন্থীরা ইংল্যান্ডে পুনরায় ক্যাথলিক
ধর্মের প্রবর্তন ও পোপের প্রাধান্য স্থাপনে ইচ্ছুক ছিলো। তাঁর ধর্মীয় বন্দোবস্ত প্রথম বারো বছর
সাফল্য অর্জন করলেও ১৫৭০ সাল থেকে তা বিরোধিতার সম্মুখীন হয়। ১৫৭০ সালে পোপ
তাঁকে সমাজচ্যুত বা গির্জার সংশ্রব থেকে বঞ্চিত করেন। অপরদিকে ১৫৭১ সালে রানী আইন
পাশ করেন যে পোপের কথা প্রতিষ্ঠিত ধর্মের বিরুদ্ধে হলে তাকে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে চিহ্নিত
করা হবে।
এ ছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে ক্যাথলিকদের বহু ষড়যন্ত্র সংগঠিত হয়েছিলো। এদের মধ্যে প্যাপিস্ট
ডিসেনটারস, কনফারমিস্ট, ক্যাথলিক প্রেসব্যাটারিয়ান এবং পিউরিটানবাদী উল্লেখযোগ্য।
এলিজাবেথের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্রের মূলে ছিলো ম্যারি স্টুয়ার্ট যিনি ছিলেন স্কটল্যান্ডের
রানী। তবে রানী এলিজাবেথ এই সমস্ত ষড়যন্ত্র নির্মূল করতে নিজের অবস্থানকে সুদৃঢ় করতে
সক্ষম হন।
খ) এলিজাবেথের বৈদেশিক নীতি
এলিজাবেথের বৈদেশিক নীতি ছিলো শান্তির সপক্ষে। তার সকল নীতি জাতীয় স্বার্থে ব্যবহৃত
হয়। এলিজাবেথের মূল লক্ষ্যই ছিল ইংল্যান্ডকে যে কোনো যুদ্ধ থেকে দূরে রাখা এবং বিদেশী
শক্তির সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা। ফ্রান্স এবং স্পেন এই দুই দেশের যৌথ আক্রমণের
ভয়ে তিনি আতংকগ্রস্ত ছিলেন। তিনি এই দুই দেশের সঙ্গে ছলে বলে কৌশলে সৌহার্দ্যপূর্ণ
সম্পর্ক বাজায় রাখার চেষ্টা করতেন। ফ্রান্সের গৃহযুদ্ধের সুযোগে স্কটল্যান্ডে দ্ব›দ্ব সংঘাত
উসকিয়ে দেয়া হয় এবং স্পেনের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী চেতনা বিকাশের মাধ্যমে তিনি তাঁর
বৈদেশিক নীতি পরিচালিত করেন।
যখন এলিজাবেথ সিংহাসনে বসেন ইংল্যান্ড তখনও ফ্রান্সের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত ছিলো। ফ্রান্স তখন
গাইস পরিবার কর্তৃক শাসিত হতো। এই পরিবার এলিজাবেথের বদলে স্কটল্যান্ডের ম্যারি
স্টুয়ার্টকে ইংল্যান্ডের বৈধ উত্তরাধিকারী মনে করেন। দুটি কারণে এলিজাবেথ ক্যালিস
পুনরুদ্ধারে চেষ্টা করেন। প্রথমত, ফ্রান্স ও স্কটল্যান্ড একত্রিত হলে তাঁর জন্য ক্ষতির কারণ
হয়ে দাঁড়াবে। দ্বিতীয়ত, ক্যালিস ছিলো ইউরোপের বুকে ইংরেজদের শেষ পদচিহ্ন।
এলিজাবেথ ফ্রান্সের গৃহযুদ্ধের সুযোগে হিউগিনটদের সঙ্গে গোপন চুক্তি সম্পাদন করেন। এর
পরিবর্তে ক্যালিস ফিরে পেতে ইচ্ছুক হন। ক্যালিস উদ্ধারের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। তবে ১৬৫৭
সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্সের অবস্থার উন্নতি হতে থাকে। স্কটল্যান্ড স্পেনের ক্রমবর্ধমান
উত্থান এবং পোপ কর্তৃক ১৫৭০ সালে এক্সকম্যুনিকেশন ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড কাছাকাছি চলে
আসে।
এই মৈত্রীর ফলে ফ্রান্সের ডিউক অব আনজুর সঙ্গে ১৫৭২ সালে এলিজাবেথকে বিয়ের প্রস্তাব
দেয়া হয়। এলিজাবেথ এই প্রস্তাব গ্রহণ করেন। তবে এরই মধ্যে বার্থলোমিওর দিন প্যারিস
এবং প্যারিসের বাইরে দশ হাজার হিউগিনটকে হত্যা করা হয়। এই হত্যাযজ্ঞের পর ১৫৭২
সালে স্বাক্ষরিত ব- াইস চুক্তি ভঙ্গ না করলেও এলিজাবেথ বলেন যে, প্রোটেস্টান্টদের হত্যা
করার পর ডিউক আনজুকে বিয়ে করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে তিনি এমন ধারণা সৃষ্টি
করেন যে ডিউক এলিনকন ডিউগিনটদের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ না হলে কেবল তাঁকে বিয়ে করতে
রাজি আছেন।
ইংল্যান্ড তথা এলিজাবেথের সঙ্গে স্কটল্যান্ডের সম্পর্ক কমই সুখকর ছিলো। ফরাসিরা
স্কটল্যান্ডের রাজনীতি নিয়ন্ত্রন করতো। স্কটল্যান্ডে ফ্রান্সের গাইস পরিবারের দারুণ প্রভাব
ছিলো। ১৫৬১ সালে ম্যারি স্টুয়ার্ট ফ্রান্স থেকে স্কটল্যান্ডে আসেন এবং তাঁকে এলিজাবেথের
উত্তরাধিকারী হিসেবে ঘোষণা করার অনুরোধ করলে এলিজাবেথ তা অস্বীকার করেন। এতে
স্কটল্যান্ড এবং ইংল্যান্ড এই দুই দেশের মধ্যে ক্যাথলিকরা তাঁকে হত্যা করতে এগিয়ে আসে।
ইতিমধ্যে ম্যারি ডারনবিকে বিয়ে করেন। তবে ডারবিন নিহত হন এবং ম্যারি এরপর
বথওয়েলকে বিয়ে করলে তাঁর প্রজারা তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। তাঁর পুত্র ষষ্ঠ জেমসের
পক্ষে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। এই পরিস্থিতিতে ম্যারি ইংল্যান্ডে পালিয়ে আশ্রয় নিলে
এলিজাবেথ উভয় সঙ্কটে পড়েন। ইর্য়ক এবং ওয়েস্ট মিনিস্টারে তার স্বামী ডারনবিকে হত্যার
বিচার শুরু হলেও সঠিক প্রমাণ না পাওয়ায় ১৬৫৯ সালে এলিজাবেথ তাঁকে বাঁচিয়ে দেন এবং
ইংল্যান্ডে বন্দী হিসেবে থাকেন। তবে ইংল্যান্ডের ক্যাথলিকরাও তাঁর মুক্তির জন্য এবং
এলিজাবেথকে হত্যা করে ম্যারিকে ইংল্যান্ডের সিংহাসনে বসানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র
করতে থাকে। ১৫৭১ সালে রিডলফি প্লট, ১৫৮৩ সালে থমসন প্লট এবং শেষে ১৫৮৬ সালে
বিখ্যাত ব্যারিংটন পরিকল্পনায় এলিজাবেথকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়। এই ব্যারিংটন প্লটে
ম্যারির জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। শেষে তাঁকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। ক্যাথলিকরা তাঁর
মৃত্যুতে মাতম শুরু করে এবং আশা করা হয় যে এই অবস্থায় স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ
তাদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবেন। তবে এর বদলে স্পেনের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে
জড়িয়ে পড়ে যা সমগ্র ইংল্যন্ডে জাতীয়তাবাদী চেতনার সৃষ্টি করে। ক্যাথলিক এবং প্রোটেস্টান্ট
উভয়েই এই যুদ্ধে এলিজাবেথের পাশে এসে দাঁড়ায়।
১৫৭০ সালে রোমের পোপ রানী এলিজাবেথকে খ্রিস্টান জগত থেকে বিচ্ছিন্ন করে। স্পেনের
রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ ইংল্যান্ডকে ক্যাথলিক ধর্মমতে নিয়ে আসার জন্য সকল প্রকার চেষ্টা
করেছিলেন। এমন কি এলিজাবেথকে হত্যা করে স্কটল্যান্ডের ম্যারি স্টুয়ার্টকে ইংল্যান্ডের
সিংহাসনের বসানোর বহু চেষ্টা করা হয়।
তাঁর রাজত্বের প্রথমদিকে এলিজাবেথের সঙ্গে স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপের সঙ্গে সুসম্পর্ক
বজায় ছিলো। তখন ইংল্যান্ডের সঙ্গে ফ্রান্স যুদ্ধে লিপ্ত ছিলে। একই সঙ্গে স্পেনের বিরুদ্ধে
এলিজাবেথের যুদ্ধ করা হতো বিরাট ভুল। তাই এলিজাবেথ দ্বিতীয় ফিলিপের সঙ্গে বিয়ের
প্রস্তাব গ্রহণ করেন। ফিলিপও দ্বিতীয় এলিজাবেথকে বিয়ে করার আশায় ক্যালিস উদ্ধারে তাঁকে
সহায়তা করেন। দ্বিতীয় ফিলিপ এর প্রতিনিধি বা দূত এলিজাবেথের নিরাপত্তা দেখতো। তবে
এই অবস্থায় বেশি দিন চলে নি। দুই দেশের মধ্যে দ্ব›দ্ব ক্রমশ বাড়তে থাকে। দ্বিতীয় ফিলিপ
ইংল্যান্ডে ক্যাথলিকবাদের সহায়তায় এলিজাবেথকে সরাতে উঠে পড়ে লাগে। অপরদিকে
নেদারল্যান্ডের বিদ্রোহীদের প্রতি ইংল্যান্ডবাসীর সহানুভুতি ছিলো যারা স্পেনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ
করেছিলো, এলিজাবেথ তাঁদের গোপনে সাহায্য দিতো। এ ছাড়াও দুই দেশের মধ্যে সংঘাতের
অর্থনৈতিক কারণও ছিলো। ম্যারি স্টুয়ার্টের মৃত্যুর পর অবস্থার আরো অবনতি ঘটে। ঐ
বছরই স্পেন কর্তৃক ইংল্যান্ড আক্রমণের কথা ছিলো। তবে রবার্ট ড্রেক কার্ডিজে স্পেনীয়
জাহাজ (প্রায় ত্রিশটি) অগ্নিদ্বগ্ধ ও ধ্বংস করলে স্পেনের আক্রমণের সম্ভাবনা পিছিয়ে যায়।
এভাবে দুই পক্ষই সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে থাকে। জনহকিন্স এর নেতৃত্বে ব্রিটিশরা
নৌবাহিনী পুনর্গঠন করে। পুরানো বৃহতাকার জাহাজের বদলে দ্রæতগামী ছোট গ্যালন জাহাজ
প্রস্তুুত করে। অপরদিকে দ্বিতীয় ফিলিপ তাঁর বিখ্যাত বিশাল অজেয়, দুভের্দ্য রণপোত বহর বা
আর্মাডা নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন। তাঁর বিশাল রণপোতের মধ্যে ছিলো ১৬০টি নৌকা (৪টি
এক পাটাতন বিশিষ্ট পাল দাঁড় দিয়ে চালানো জাহাজ বা গ্যালি) ২৫০০ বন্দুক, ৮০০০ নাবিক,
২২,০০০ সৈন্য এবং ৭ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। এটি ডিউক অব মেডোনার নেতৃত্বে ইংরেজ
বাহিনীকে আক্রমণ করতে উদ্যত হয়।
১৫৮৮ সালের মে মাসে স্পেনিশ রণপোত বহর লিসবন ত্যাগ করে এবং ফ্লেমিশ বন্দর
(নেদারল্যান্ডের) সম্মুখে উপস্থিত হয়। সেখানে প্রায় ১৭,০০০ স্পেনীয় সৈন্যবাহিনীর সঙ্গে
মিলিত হয়েছিলো। অপরদিকে লর্ড হার্ডওয়ার্ডের নেতৃত্বে এগিয়ে যায়। প্রচন্ড ঝড়ের কারণে
জাহাজ তার গন্তবে পৌঁছায় বহু দেরিতে (জুলাই)। ইংরেজদের জাহাজগুলি বৃহৎ স্পেনিশ
জাহাজ ডুবিয়ে দেয়। ব্রিটিশদের জাহাজ আকারে ছোট হওয়ায় আক্রমণে তাদের সুবিধা হয়।
গ্রাডিলাইনসের যুদ্ধে স্পেনিশরা পরাজিত হয় এবং প্রচন্ড ঝড় জাহাজ গুলিকে ছত্রভঙ্গ করে
দেয়। দ্বিতীয় ফিলিপ আশা করেছিলেন যে ইংরেজ জাতি যেহেতু বিভক্ত তাই এলিজেবেথের
বিরুদ্ধবাদীরা তাঁকে সাহায্য করবে। তবে তেমন কিছু হয় নি। বরং এই যুদ্ধে ইংল্যান্ডের
জাতীয়তাবাদী চেতনা জাগ্রত হয়ে উঠে। প্রোটেস্টান্ট এবং ক্যাথলিক দুই পক্ষই রানীর পাশে
দাঁড়ায়। এ্যাংলো-স্পেন যুদ্ধ ১৬০৪ সাল পর্যন্ত চলে, তবে কোনো পক্ষই চ ড়ান্ত জয় লাভ
করতে পারে নি। তবে স্পেনের জন্য এই যুদ্ধে তার সম্পদ এবং অর্থ নিঃশ্বেষ করে দেয়।
পরবর্তী রাজা প্রথম জেমস স্পেনের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করে ইংরেজ সিংহাসনে বসার জন্য।
আমার্ডার পতন একটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তিকারী ঘটনা। এটি ইংল্যান্ডকে ইউরোপের সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তি
এবং ইংল্যান্ডকে সমুদ্রের একছত্র রানী হিসেবে ঘোষণা করে। এলিজাবেথের ধর্মীয় সংস্কার
এতে পূর্ণতা পায় এবং এই যুদ্ধের পর ক্যাথলিক আক্রমণের ভীতি দূর হয়। অপরদিকে
স্পেনের জন্য এটি ছিলো চ‚ড়ান্ত পতন। এরপর তাঁর মহাদেশে দীর্ঘকালীন শ্রেষ্ঠত্ব এবং
একচ্ছত্র কর্তৃত্ব নষ্ট হয়।
রানী এলিজাবেথের যুগ ইংল্যান্ডের ইতিহাসে এক স্বর্ণযুগ। এই সময় ইংল্যান্ড জ্ঞান, বিজ্ঞান,
শিল্প, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি সকল ক্ষেত্রেই গৌরবের সর্বোাচ্চ শিখরে উন্নীত হয়। সারা
বিশ্বে ইউনিয়ন জ্যাক এর পতাকা উড়তে থাকে। তাঁর প্রতিভাবান উপদেষ্টা ছিলেন স্যার
উইলিয়াম সিসিল, রবার্ট ভাত্তালি, স্যার নিকোলাস ও স্যার ফ্রান্সিস ওয়াশিংটন। এলিজাবেথের
সময় ইংরেজি সাহিত্য, শিল্প, স্থাপত্য, ঔপনিবেশ প্রতিষ্ঠা সর্বক্ষেত্রেই সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে
উন্নীত হয়। এডমন্ড স্পেনসার, শেক্সপিয়ার, বেনজনসন খ্রিস্টোফার মারলো, স্যার ফ্রান্সিস
বেকন সাহিত্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবিস্মরণীয় অবদান রাখেন। সঙ্গীতে জনসন ও হেরিক
জনপ্রিয় ছিলেন। স্থাপত্য শিল্পে গথিক রীতির পরিবর্তে ইতালির ক্লাসিক প্রবর্তিত হয়। এ
ছাড়াও এলিজাবেথের সময় ইংল্যান্ডের নৌবাণিজ্যের জয়যাত্রা সূচিত হয়। এর ফলে দ্রæত
ইংল্যান্ডের উপনিবেশ গড়ে উঠে।
রানী এলিজাবেথ ইউরোপ তথা ইংল্যান্ডের শ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছেন। কোনো
শাসক তাঁর মতো এতো বেশি সমস্যার সম্মুখীন হননি এতো যোগ্যতা এবং সাফল্যের সঙ্গে
দমন করার ক্ষমতাও রাখেন নি। ব্যক্তিগতভাবে তিনি পছন্দনীয় এবং আর্কষণীয় ব্যক্তিত্বের
অধিকারী ছিলেন। তাঁর জীবনা যাপন পবিত্রম দেশের প্রতি ভালবাসা তাঁকে জনপ্রিয় করে
তুলেছিলো। এলিজাবেথ নিজেই নিজের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। প্রায় ৪৫ বছর যুদ্ধ এবং শান্তির
মধ্যে তিনি যোগ্যতার সঙ্গে দেশ শাসন করেন। তিনি ছিলেন রেনেসাঁসের সন্তান। তিনি ধর্মকে
কোলেট, এ্যারাসমাস এর চেতনা দিয়ে গ্রহণ করেছিলেন। ধর্মবিষয়ের স্থায়ী বন্দোবস্ত এবং
ইংল্যান্ডকে ইউরোপের শ্রেষ্ঠ শক্তিশালী দেশ হিসেবে পরিণত করার ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের
ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ শাসকদের অন্যতম ছিলেন রানী এলিজাবেথ।
সারসংক্ষেপ
শক্তিশালী রাজতন্ত্রের যুগে ইংল্যান্ড টিউটর রাজবংশের উত্থান এক যুগান্তকারী ঘটনা। এই রাজবংশের
রাজারা সকলেই দক্ষতা এবং যোগ্যতার সঙ্গে ইউরোপের রাজনীতি এবং ইংল্যান্ডের অবস্থানকে
সুসংহত করেন। ইউরোপে ধর্মকেন্দ্রিক দ্ব›দ্ব সংঘাত অর্থাৎ ক্যাথলিক এবং প্রোটেস্টান্ট দ্ব›দ্ব সংঘাত
তাদের প্রত্যেকের শাসনকে আচ্ছন্ন করে রাখে। তবে এরা সবাই শক্তিশালী রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে
ধর্মের প্রভাবকে উপড়ে ফেলে দিয়ে রাজার একচছত্র অধিপত্য বা কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠায় সক্ষম
হয়। সপ্তম হেনরি ইউরোপীয় রাজনীতিতে ইংল্যান্ডের অংশ গ্রহণের পথ সূচনা করেন। অষ্টম হেনরি
ধর্মীয় সংস্কারের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ এবং পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে শক্তিশালী নীতি অবলম্বনের মাধ্যমে
ইংল্যান্ডকে ইউরোপীয় শক্তির মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেন। এডোওয়ার্ড এবং রানী ম্যারির সময় ধর্মীয়
সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হয়। রানী এলিজাবেথের সময় ইংল্যান্ড সর্বশ্রেষ্ঠ ইউরোপীয় শক্তিতে
পরিণত হয়। ধর্মক্ষেত্রে স্থানীয় সমস্যা, অভ্যান্তরীণ ক্ষেত্রে রেনেসাঁস যুগের ব্যাপক সংস্কার এবং
পররাষ্ট্রনীতিতে ইউরোপের একচছত্র শক্তি স্পেনকে পরাজিত করে তিনি ইংল্যান্ডকে ইউরোপের
সর্বশ্রেষ্ঠ নৌবাণিজ্যিক শক্তিতে পরিণত করেন। এই সময় থেকে ইংল্যান্ড ইউরোপে একচ্ছত্র আধিপত্য
প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়।
প্রশ্নোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পার্শ্বে টিক () চিহ্ন দিন।
১। টিউডর রাজবংশের প্রতিষ্ঠতা ছিলেন কে ?
ক) অষ্টম হেনরি খ) রানী ম্যারি
গ) এডোওয়ার্ড ঘ) সপ্তম হেনরি
২। কোন আইনের মাধ্যমে রাজাকে ইংল্যান্ডের চার্চের সর্বোাচ্চ শাসক হিসেবে গ্রহণ করা হয়?
ক) এ্যাক্ট অব সুপ্রিমেসি খ) দশ শর্তের আইন
গ) ছয় শর্তের আইন ঘ) এ্যানাট আইন
৩। টিউডর কোন রাজার সময়ে ইংল্যান্ডে সত্যিকার অর্থে প্রোটেস্টান্ট ধর্ম প্রবর্তিত হয়?
ক) অষ্টম হেনরি খ) এলিজাবেথ
গ) এডওর্য়াড ঘ) সপ্তম হেনরি
৪। অষ্টম হেনরির পররাষ্ট্র মন্ত্রীর নাম কি ছিলো?
ক) কার্ডিনাল রিশুল্য খ) ল্যাটিমার
গ) রিডলি হুপার ঘ) ওলজি
৫। রানী ম্যারিকে কোন উপাধিতে ভুষিত করা হয়?
ক) মহান রানী ম্যারি খ) রক্তপিপাসু ম্যারি
গ) ডাকিনী ম্যারি ঘ) জনগণের সেবক রানী ম্যারি
৬। রানী ম্যারি বিয়ে করেন?
ক) ফ্রান্সের প্রথম ফ্রান্সিসকে খ) রোমান সেনাপতি ম্যাক্সিমিলানকে
গ) স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপকে ঘ) স্কটল্যান্ডের দ্বিতীয় হেনরিকে
৭। রানী এলিজাবেথের সময়ে কোনটিকে ইংল্যান্ডের জাতীয় ধর্ম হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়?
ক) ক্যাপটিমিডমে খ) এ্যাংলিকানিজম
গ) প্রোটেস্টান্ট ঘ) ক্যাথলিক
৮। ক্যাথলিকরা স্কটল্যান্ডের কোন রানীকে ইংল্যান্ডের বৈধ শাসক মনে করতো?
ক) ম্যারি গাইস খ) দ্বিতীয় হেনরী
গ) প্রথম ফ্রান্সিস ঘ) ম্যারি স্টুয়ার্ট
৯। ইংল্যান্ড কত সালে অজেয় আর্মাডার পতন ঘটাতে সক্ষম হয়?
ক) ১৫৮২ খ) ১৫৮৪
গ) ১৫৮৮ ঘ) ১৫৮৬
১০। রানী এলিজাবেথ দীর্ঘ কত বছর শাসন করেন?
ক) ৪২ বছর খ) ৪৮ বছর
গ) ৪৪ বছর ঘ) ৪৫ বছর
উত্তর : ১। (ঘ), ২। (ক), ৩। (ঘ), ৪। (ঘ), ৫। (খ), ৬। (গ), ৭। (খ), ৮। (ঘ), ৯।
(গ), ১০। (ঘ)।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। টিউডর রাজবংশের উত্থান সংক্ষেপে আলোচনা করুন।
২। ষষ্ঠ এডোয়ার্ডের ধর্মনীতি ব্যাখ্যা করুন।
৩। টিউডর রানী ম্যারিকে কেন ‘রক্তপিপাসু ম্যারি’ নামে আখ্যা দেয়া হয়?
রচনামূলক প্রশ্ন
১। সপ্তম আভ্যরীণ ও বৈদেশিক নীতি মূল্যায়ন করুন।
২। অষ্টম হেনরি ধর্মনীতির কোনপন্থা অবলম্বন করেন? ইউরোপীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে এই
সময় ইংল্যান্ডের অবস্থান কি ছিলো।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত