রানী এলিজাবেথ ( ১৫৫৮ - ১৬০৩)

৬। রানী এলিজাবেথ ( ১৫৫৮ - ১৬০৩)
ইংল্যান্ডের জাতীয় জীবন যখন ধর্মীয় বিরোধ দ্বারা বিভ্রান্ত ছিলো তখন তরুণী এলিজাবেথ
সিংহাসনে আরোহন করেন। তিনি ছিলেন অসাধারণ মানসিক বল ও প্রত্যুৎপন্নমতীসম্পন্ন
রানী। এলিজাবেথ ছিলেন অষ্টম হেনরি এবং এ্যানি বোলেনের কন্যা। ১৫৫৮ সালে যখন তিনি
সিংহাসনে বসেন তখন তাঁর বয়স ছিল পঁিচশ বছর। তিনি ছিলেন দীর্ঘাঙ্গী, উঁচু গ্রীবাসম্পন্ন
খাঁড়া নাক এবং তামাটে রঙের আধিকারীনী। এলিজাবেথ অভ‚তপূর্ব বুদ্ধিমত্তার অধিকারী
ছিলেন এবং তাঁর আচরণ ছিলো রাজসুলভ। সিংহাসনে আরোহনের প্রথম দিন থেকেই তিনি
তার জনগণকে মুগ্ধ করে রেখেছিলেন। তার প্রতিটি কার্য, কর্মপন্থা এবং চিন্তা ইংরেজ জাতির
স্বার্থ বা উদ্দেশ্যের নিরিখে পরিচালিত হয়েছিল। জনগণ তাঁকে “এড়ড়ফ ছঁববহ ইড়ংব”
হিসেবে অভিহিত করতো।
এলিজাবেথ সিংহাসনে আরোহনের সময় থেকেই ইংল্যান্ড নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল।
সেই সময় গৃহযুদ্ধের হুমকি সমগ্র দেশকে গ্রাস করেছিলো। গোড়াঁ ক্যাথলিকরা এলিজাবেথকে
একজন ক্ষমতা দখলকারী হিসেবে ঘোষণা দেয়। আবার প্রোটেস্টান্টরাও তাঁর প্রতি রাগান্বিত
ছিলো ম্যারি টিউডরের সময়কার নিষ্ঠুর নির্যাতনের জন্য। ক্যাথলিক এবং প্রোটেস্টান্টদের দ্ব›দ্ব
ছাড়াও ইংল্যান্ড তখন ছিলো অর্থাভাবে জর্জরিত। তবে এলিজাবেথ এই সকল সমস্যার
সমাধান করে ইংল্যান্ডকে একটি শক্তিশালী মহান দেশে পরিণত করেন।
রানী এলিজাবেথের সবচাইতে বড় কৃতিত্ব হলো ধর্মীয় সমস্যার সমাধান করা। তাঁর সামনে বহু
পথ খোলা ছিলো। তিনি বোন ম্যারির মতো রোমের সঙ্গে সম্পর্ক পুনপ্রতিষ্ঠা করতে পারতেন।
ভাই ষষ্ঠ এডোওয়ার্ডের নীতি অর্থাৎ প্রোটেস্টান্ট চার্চ প্রতিষ্ঠা বা তার পিতার মতো
সমঝোতামূলক নীতি গ্রহণ করতে পারতেন। তবে তিনি ধর্মের ব্যাপারে যে নীতি অনুসরণ
করেন তা এ্যাংলিকানিজম নামে পরিচিত। প্রোটেস্টান্ট এবং ক্যাথলিক এই দুই স¤প্রদায়ের
মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের জন্য এলিজাবেথ উগ্র প্রোটেস্টান্ট মতকে কতক পরিমাণে নরম
করেছিলেন। এভাবে উভয় পক্ষে সমঝোতা বা মধ্যপন্থা নীতির মাধ্যমে দুই দলকেই খুশি
করতে চেয়েছেন এবং চিরস্থায়ীভাবে ইংল্যান্ড ধর্ম সমস্যার সমাধান করে।
এলিজাবেথ পার্লামেন্টের মাধ্যমে ধর্ম সংক্রান্ত আইনগুলি পাশ করেন। আইন পাশ করে তিনি
ইংল্যান্ডের চার্চকে রোমের পোপ থেকে বিচ্ছিন্ন করেন এবং রাজকীয় কতৃত্ববাদ পুনরুদ্ধার
করেন। প্রাধান্যের আইন (অপঃ ড়ভ ঝঁঢ়ৎবসধপু) দ্বারা তিনি পোপের প্রাধান্য খর্ব করেন।
এলিজাবেথকে চার্চের প্রধান নিযুক্ত করা হয়। পিতার ন্যায় সর্বোত্তম প্রধান (ঝঁঢ়ৎবসব ঐবধফ)
এর বদলে সর্বোচ্চ শাসক (ঝঁঢ়ৎবসব এড়াবৎহড়ৎ) এর পদবী গ্রহণ করেন। ক্রেনমারের
পুরস্কারকৃত (অ ইড়ড়শ ড়ভ ঈড়সসড়হ চৎধুবৎ) বইটি আবার প্রকাশিত হয়। এছাড়াও এ্যাক্ট
অব ইউনিফরমিটি (অপঃ ড়ভ টহরভড়ৎসরঃু) দ্বারা ষষ্ঠ এডওয়ার্ডের প্রার্থনা পুস্তক প্রচলন করা
হয়। এছাড়া বাইবেলই হবে খ্রিস্ট ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ এই নীতি অনুসরণ করা হয়।
এভাবে বলা যায় প্রোটেস্টান্ট ধর্মনীতি প্রবর্তন হলেও তা করা হয়েছিল ক্যাথলিক ধর্মীয়
কাঠামোর মধ্যে। অর্থাৎ ক্যাথলিক ধর্মীয় বিশ্বাসের অবয়বে প্রোটেস্টান্ট ধর্মমতসমূহ

কার্যসম্পাদনা করতে থাকে। তাঁর এই বন্দোবস্ত এলিজাবেথীয় বন্দোবস্ত বা এ্যাংলিকানিজম
(অহমষরপধহরংস) নামে পরিচিত হয়।
রানী এলিজাবেথের শাসনের অধিকাংশ সময়ই ক্যাথলিক পন্থীরা ইংল্যান্ডে পুনরায় ক্যাথলিক
ধর্মের প্রবর্তন ও পোপের প্রাধান্য স্থাপনে ইচ্ছুক ছিলো। তাঁর ধর্মীয় বন্দোবস্ত প্রথম বারো বছর
সাফল্য অর্জন করলেও ১৫৭০ সাল থেকে তা বিরোধিতার সম্মুখীন হয়। ১৫৭০ সালে পোপ
তাঁকে সমাজচ্যুত বা গির্জার সংশ্রব থেকে বঞ্চিত করেন। অপরদিকে ১৫৭১ সালে রানী আইন
পাশ করেন যে পোপের কথা প্রতিষ্ঠিত ধর্মের বিরুদ্ধে হলে তাকে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে চিহ্নিত
করা হবে।
এ ছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে ক্যাথলিকদের বহু ষড়যন্ত্র সংগঠিত হয়েছিলো। এদের মধ্যে প্যাপিস্ট
ডিসেনটারস, কনফারমিস্ট, ক্যাথলিক প্রেসব্যাটারিয়ান এবং পিউরিটানবাদী উল্লেখযোগ্য।
এলিজাবেথের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্রের মূলে ছিলো ম্যারি স্টুয়ার্ট যিনি ছিলেন স্কটল্যান্ডের
রানী। তবে রানী এলিজাবেথ এই সমস্ত ষড়যন্ত্র নির্মূল করতে নিজের অবস্থানকে সুদৃঢ় করতে
সক্ষম হন।
খ) এলিজাবেথের বৈদেশিক নীতি
এলিজাবেথের বৈদেশিক নীতি ছিলো শান্তির সপক্ষে। তার সকল নীতি জাতীয় স্বার্থে ব্যবহৃত
হয়। এলিজাবেথের মূল লক্ষ্যই ছিল ইংল্যান্ডকে যে কোনো যুদ্ধ থেকে দূরে রাখা এবং বিদেশী
শক্তির সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা। ফ্রান্স এবং স্পেন এই দুই দেশের যৌথ আক্রমণের
ভয়ে তিনি আতংকগ্রস্ত ছিলেন। তিনি এই দুই দেশের সঙ্গে ছলে বলে কৌশলে সৌহার্দ্যপূর্ণ
সম্পর্ক বাজায় রাখার চেষ্টা করতেন। ফ্রান্সের গৃহযুদ্ধের সুযোগে স্কটল্যান্ডে দ্ব›দ্ব সংঘাত
উসকিয়ে দেয়া হয় এবং স্পেনের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী চেতনা বিকাশের মাধ্যমে তিনি তাঁর
বৈদেশিক নীতি পরিচালিত করেন।
যখন এলিজাবেথ সিংহাসনে বসেন ইংল্যান্ড তখনও ফ্রান্সের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত ছিলো। ফ্রান্স তখন
গাইস পরিবার কর্তৃক শাসিত হতো। এই পরিবার এলিজাবেথের বদলে স্কটল্যান্ডের ম্যারি
স্টুয়ার্টকে ইংল্যান্ডের বৈধ উত্তরাধিকারী মনে করেন। দুটি কারণে এলিজাবেথ ক্যালিস
পুনরুদ্ধারে চেষ্টা করেন। প্রথমত, ফ্রান্স ও স্কটল্যান্ড একত্রিত হলে তাঁর জন্য ক্ষতির কারণ
হয়ে দাঁড়াবে। দ্বিতীয়ত, ক্যালিস ছিলো ইউরোপের বুকে ইংরেজদের শেষ পদচিহ্ন।
এলিজাবেথ ফ্রান্সের গৃহযুদ্ধের সুযোগে হিউগিনটদের সঙ্গে গোপন চুক্তি সম্পাদন করেন। এর
পরিবর্তে ক্যালিস ফিরে পেতে ইচ্ছুক হন। ক্যালিস উদ্ধারের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। তবে ১৬৫৭
সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্সের অবস্থার উন্নতি হতে থাকে। স্কটল্যান্ড স্পেনের ক্রমবর্ধমান
উত্থান এবং পোপ কর্তৃক ১৫৭০ সালে এক্সকম্যুনিকেশন ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড কাছাকাছি চলে
আসে।
এই মৈত্রীর ফলে ফ্রান্সের ডিউক অব আনজুর সঙ্গে ১৫৭২ সালে এলিজাবেথকে বিয়ের প্রস্তাব
দেয়া হয়। এলিজাবেথ এই প্রস্তাব গ্রহণ করেন। তবে এরই মধ্যে বার্থলোমিওর দিন প্যারিস
এবং প্যারিসের বাইরে দশ হাজার হিউগিনটকে হত্যা করা হয়। এই হত্যাযজ্ঞের পর ১৫৭২

সালে স্বাক্ষরিত ব- াইস চুক্তি ভঙ্গ না করলেও এলিজাবেথ বলেন যে, প্রোটেস্টান্টদের হত্যা
করার পর ডিউক আনজুকে বিয়ে করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে তিনি এমন ধারণা সৃষ্টি
করেন যে ডিউক এলিনকন ডিউগিনটদের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ না হলে কেবল তাঁকে বিয়ে করতে
রাজি আছেন।
ইংল্যান্ড তথা এলিজাবেথের সঙ্গে স্কটল্যান্ডের সম্পর্ক কমই সুখকর ছিলো। ফরাসিরা
স্কটল্যান্ডের রাজনীতি নিয়ন্ত্রন করতো। স্কটল্যান্ডে ফ্রান্সের গাইস পরিবারের দারুণ প্রভাব
ছিলো। ১৫৬১ সালে ম্যারি স্টুয়ার্ট ফ্রান্স থেকে স্কটল্যান্ডে আসেন এবং তাঁকে এলিজাবেথের
উত্তরাধিকারী হিসেবে ঘোষণা করার অনুরোধ করলে এলিজাবেথ তা অস্বীকার করেন। এতে
স্কটল্যান্ড এবং ইংল্যান্ড এই দুই দেশের মধ্যে ক্যাথলিকরা তাঁকে হত্যা করতে এগিয়ে আসে।
ইতিমধ্যে ম্যারি ডারনবিকে বিয়ে করেন। তবে ডারবিন নিহত হন এবং ম্যারি এরপর
বথওয়েলকে বিয়ে করলে তাঁর প্রজারা তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। তাঁর পুত্র ষষ্ঠ জেমসের
পক্ষে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। এই পরিস্থিতিতে ম্যারি ইংল্যান্ডে পালিয়ে আশ্রয় নিলে
এলিজাবেথ উভয় সঙ্কটে পড়েন। ইর্য়ক এবং ওয়েস্ট মিনিস্টারে তার স্বামী ডারনবিকে হত্যার
বিচার শুরু হলেও সঠিক প্রমাণ না পাওয়ায় ১৬৫৯ সালে এলিজাবেথ তাঁকে বাঁচিয়ে দেন এবং
ইংল্যান্ডে বন্দী হিসেবে থাকেন। তবে ইংল্যান্ডের ক্যাথলিকরাও তাঁর মুক্তির জন্য এবং
এলিজাবেথকে হত্যা করে ম্যারিকে ইংল্যান্ডের সিংহাসনে বসানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র
করতে থাকে। ১৫৭১ সালে রিডলফি প্লট, ১৫৮৩ সালে থমসন প্লট এবং শেষে ১৫৮৬ সালে
বিখ্যাত ব্যারিংটন পরিকল্পনায় এলিজাবেথকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়। এই ব্যারিংটন প্লটে
ম্যারির জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। শেষে তাঁকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। ক্যাথলিকরা তাঁর
মৃত্যুতে মাতম শুরু করে এবং আশা করা হয় যে এই অবস্থায় স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ
তাদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবেন। তবে এর বদলে স্পেনের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে
জড়িয়ে পড়ে যা সমগ্র ইংল্যন্ডে জাতীয়তাবাদী চেতনার সৃষ্টি করে। ক্যাথলিক এবং প্রোটেস্টান্ট
উভয়েই এই যুদ্ধে এলিজাবেথের পাশে এসে দাঁড়ায়।
১৫৭০ সালে রোমের পোপ রানী এলিজাবেথকে খ্রিস্টান জগত থেকে বিচ্ছিন্ন করে। স্পেনের
রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ ইংল্যান্ডকে ক্যাথলিক ধর্মমতে নিয়ে আসার জন্য সকল প্রকার চেষ্টা
করেছিলেন। এমন কি এলিজাবেথকে হত্যা করে স্কটল্যান্ডের ম্যারি স্টুয়ার্টকে ইংল্যান্ডের
সিংহাসনের বসানোর বহু চেষ্টা করা হয়।
তাঁর রাজত্বের প্রথমদিকে এলিজাবেথের সঙ্গে স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপের সঙ্গে সুসম্পর্ক
বজায় ছিলো। তখন ইংল্যান্ডের সঙ্গে ফ্রান্স যুদ্ধে লিপ্ত ছিলে। একই সঙ্গে স্পেনের বিরুদ্ধে
এলিজাবেথের যুদ্ধ করা হতো বিরাট ভুল। তাই এলিজাবেথ দ্বিতীয় ফিলিপের সঙ্গে বিয়ের
প্রস্তাব গ্রহণ করেন। ফিলিপও দ্বিতীয় এলিজাবেথকে বিয়ে করার আশায় ক্যালিস উদ্ধারে তাঁকে
সহায়তা করেন। দ্বিতীয় ফিলিপ এর প্রতিনিধি বা দূত এলিজাবেথের নিরাপত্তা দেখতো। তবে
এই অবস্থায় বেশি দিন চলে নি। দুই দেশের মধ্যে দ্ব›দ্ব ক্রমশ বাড়তে থাকে। দ্বিতীয় ফিলিপ
ইংল্যান্ডে ক্যাথলিকবাদের সহায়তায় এলিজাবেথকে সরাতে উঠে পড়ে লাগে। অপরদিকে
নেদারল্যান্ডের বিদ্রোহীদের প্রতি ইংল্যান্ডবাসীর সহানুভুতি ছিলো যারা স্পেনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ
করেছিলো, এলিজাবেথ তাঁদের গোপনে সাহায্য দিতো। এ ছাড়াও দুই দেশের মধ্যে সংঘাতের

অর্থনৈতিক কারণও ছিলো। ম্যারি স্টুয়ার্টের মৃত্যুর পর অবস্থার আরো অবনতি ঘটে। ঐ
বছরই স্পেন কর্তৃক ইংল্যান্ড আক্রমণের কথা ছিলো। তবে রবার্ট ড্রেক কার্ডিজে স্পেনীয়
জাহাজ (প্রায় ত্রিশটি) অগ্নিদ্বগ্ধ ও ধ্বংস করলে স্পেনের আক্রমণের সম্ভাবনা পিছিয়ে যায়।
এভাবে দুই পক্ষই সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে থাকে। জনহকিন্স এর নেতৃত্বে ব্রিটিশরা
নৌবাহিনী পুনর্গঠন করে। পুরানো বৃহতাকার জাহাজের বদলে দ্রæতগামী ছোট গ্যালন জাহাজ
প্রস্তুুত করে। অপরদিকে দ্বিতীয় ফিলিপ তাঁর বিখ্যাত বিশাল অজেয়, দুভের্দ্য রণপোত বহর বা
আর্মাডা নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন। তাঁর বিশাল রণপোতের মধ্যে ছিলো ১৬০টি নৌকা (৪টি
এক পাটাতন বিশিষ্ট পাল দাঁড় দিয়ে চালানো জাহাজ বা গ্যালি) ২৫০০ বন্দুক, ৮০০০ নাবিক,
২২,০০০ সৈন্য এবং ৭ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। এটি ডিউক অব মেডোনার নেতৃত্বে ইংরেজ
বাহিনীকে আক্রমণ করতে উদ্যত হয়।
১৫৮৮ সালের মে মাসে স্পেনিশ রণপোত বহর লিসবন ত্যাগ করে এবং ফ্লেমিশ বন্দর
(নেদারল্যান্ডের) সম্মুখে উপস্থিত হয়। সেখানে প্রায় ১৭,০০০ স্পেনীয় সৈন্যবাহিনীর সঙ্গে
মিলিত হয়েছিলো। অপরদিকে লর্ড হার্ডওয়ার্ডের নেতৃত্বে এগিয়ে যায়। প্রচন্ড ঝড়ের কারণে
জাহাজ তার গন্তবে পৌঁছায় বহু দেরিতে (জুলাই)। ইংরেজদের জাহাজগুলি বৃহৎ স্পেনিশ
জাহাজ ডুবিয়ে দেয়। ব্রিটিশদের জাহাজ আকারে ছোট হওয়ায় আক্রমণে তাদের সুবিধা হয়।
গ্রাডিলাইনসের যুদ্ধে স্পেনিশরা পরাজিত হয় এবং প্রচন্ড ঝড় জাহাজ গুলিকে ছত্রভঙ্গ করে
দেয়। দ্বিতীয় ফিলিপ আশা করেছিলেন যে ইংরেজ জাতি যেহেতু বিভক্ত তাই এলিজেবেথের
বিরুদ্ধবাদীরা তাঁকে সাহায্য করবে। তবে তেমন কিছু হয় নি। বরং এই যুদ্ধে ইংল্যান্ডের
জাতীয়তাবাদী চেতনা জাগ্রত হয়ে উঠে। প্রোটেস্টান্ট এবং ক্যাথলিক দুই পক্ষই রানীর পাশে
দাঁড়ায়। এ্যাংলো-স্পেন যুদ্ধ ১৬০৪ সাল পর্যন্ত চলে, তবে কোনো পক্ষই চ ড়ান্ত জয় লাভ
করতে পারে নি। তবে স্পেনের জন্য এই যুদ্ধে তার সম্পদ এবং অর্থ নিঃশ্বেষ করে দেয়।
পরবর্তী রাজা প্রথম জেমস স্পেনের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করে ইংরেজ সিংহাসনে বসার জন্য।
আমার্ডার পতন একটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তিকারী ঘটনা। এটি ইংল্যান্ডকে ইউরোপের সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তি
এবং ইংল্যান্ডকে সমুদ্রের একছত্র রানী হিসেবে ঘোষণা করে। এলিজাবেথের ধর্মীয় সংস্কার
এতে পূর্ণতা পায় এবং এই যুদ্ধের পর ক্যাথলিক আক্রমণের ভীতি দূর হয়। অপরদিকে
স্পেনের জন্য এটি ছিলো চ‚ড়ান্ত পতন। এরপর তাঁর মহাদেশে দীর্ঘকালীন শ্রেষ্ঠত্ব এবং
একচ্ছত্র কর্তৃত্ব নষ্ট হয়।
রানী এলিজাবেথের যুগ ইংল্যান্ডের ইতিহাসে এক স্বর্ণযুগ। এই সময় ইংল্যান্ড জ্ঞান, বিজ্ঞান,
শিল্প, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি সকল ক্ষেত্রেই গৌরবের সর্বোাচ্চ শিখরে উন্নীত হয়। সারা
বিশ্বে ইউনিয়ন জ্যাক এর পতাকা উড়তে থাকে। তাঁর প্রতিভাবান উপদেষ্টা ছিলেন স্যার
উইলিয়াম সিসিল, রবার্ট ভাত্তালি, স্যার নিকোলাস ও স্যার ফ্রান্সিস ওয়াশিংটন। এলিজাবেথের
সময় ইংরেজি সাহিত্য, শিল্প, স্থাপত্য, ঔপনিবেশ প্রতিষ্ঠা সর্বক্ষেত্রেই সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে
উন্নীত হয়। এডমন্ড স্পেনসার, শেক্সপিয়ার, বেনজনসন খ্রিস্টোফার মারলো, স্যার ফ্রান্সিস
বেকন সাহিত্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবিস্মরণীয় অবদান রাখেন। সঙ্গীতে জনসন ও হেরিক
জনপ্রিয় ছিলেন। স্থাপত্য শিল্পে গথিক রীতির পরিবর্তে ইতালির ক্লাসিক প্রবর্তিত হয়। এ

ছাড়াও এলিজাবেথের সময় ইংল্যান্ডের নৌবাণিজ্যের জয়যাত্রা সূচিত হয়। এর ফলে দ্রæত
ইংল্যান্ডের উপনিবেশ গড়ে উঠে।
রানী এলিজাবেথ ইউরোপ তথা ইংল্যান্ডের শ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছেন। কোনো
শাসক তাঁর মতো এতো বেশি সমস্যার সম্মুখীন হননি এতো যোগ্যতা এবং সাফল্যের সঙ্গে
দমন করার ক্ষমতাও রাখেন নি। ব্যক্তিগতভাবে তিনি পছন্দনীয় এবং আর্কষণীয় ব্যক্তিত্বের
অধিকারী ছিলেন। তাঁর জীবনা যাপন পবিত্রম দেশের প্রতি ভালবাসা তাঁকে জনপ্রিয় করে
তুলেছিলো। এলিজাবেথ নিজেই নিজের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। প্রায় ৪৫ বছর যুদ্ধ এবং শান্তির
মধ্যে তিনি যোগ্যতার সঙ্গে দেশ শাসন করেন। তিনি ছিলেন রেনেসাঁসের সন্তান। তিনি ধর্মকে
কোলেট, এ্যারাসমাস এর চেতনা দিয়ে গ্রহণ করেছিলেন। ধর্মবিষয়ের স্থায়ী বন্দোবস্ত এবং
ইংল্যান্ডকে ইউরোপের শ্রেষ্ঠ শক্তিশালী দেশ হিসেবে পরিণত করার ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের
ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ শাসকদের অন্যতম ছিলেন রানী এলিজাবেথ।
সারসংক্ষেপ
শক্তিশালী রাজতন্ত্রের যুগে ইংল্যান্ড টিউটর রাজবংশের উত্থান এক যুগান্তকারী ঘটনা। এই রাজবংশের
রাজারা সকলেই দক্ষতা এবং যোগ্যতার সঙ্গে ইউরোপের রাজনীতি এবং ইংল্যান্ডের অবস্থানকে
সুসংহত করেন। ইউরোপে ধর্মকেন্দ্রিক দ্ব›দ্ব সংঘাত অর্থাৎ ক্যাথলিক এবং প্রোটেস্টান্ট দ্ব›দ্ব সংঘাত
তাদের প্রত্যেকের শাসনকে আচ্ছন্ন করে রাখে। তবে এরা সবাই শক্তিশালী রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে
ধর্মের প্রভাবকে উপড়ে ফেলে দিয়ে রাজার একচছত্র অধিপত্য বা কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠায় সক্ষম
হয়। সপ্তম হেনরি ইউরোপীয় রাজনীতিতে ইংল্যান্ডের অংশ গ্রহণের পথ সূচনা করেন। অষ্টম হেনরি
ধর্মীয় সংস্কারের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ এবং পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে শক্তিশালী নীতি অবলম্বনের মাধ্যমে
ইংল্যান্ডকে ইউরোপীয় শক্তির মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেন। এডোওয়ার্ড এবং রানী ম্যারির সময় ধর্মীয়
সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হয়। রানী এলিজাবেথের সময় ইংল্যান্ড সর্বশ্রেষ্ঠ ইউরোপীয় শক্তিতে
পরিণত হয়। ধর্মক্ষেত্রে স্থানীয় সমস্যা, অভ্যান্তরীণ ক্ষেত্রে রেনেসাঁস যুগের ব্যাপক সংস্কার এবং
পররাষ্ট্রনীতিতে ইউরোপের একচছত্র শক্তি স্পেনকে পরাজিত করে তিনি ইংল্যান্ডকে ইউরোপের
সর্বশ্রেষ্ঠ নৌবাণিজ্যিক শক্তিতে পরিণত করেন। এই সময় থেকে ইংল্যান্ড ইউরোপে একচ্ছত্র আধিপত্য
প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]