কমনওয়েলথ-এর প্রধান হিসেবে ক্রমওয়েলের কার্যাবলী আলোচনা করুন।

ভ‚মিকা
ইংল্যান্ডে টিউডরদের পরে স্টুয়ার্ট বংশের উত্থান হয়। স্টুয়ার্ট রাজা প্রথম জেমসের পতনের
পর ক্রমওয়েল হন ইংল্যান্ডের রাষ্ট্র প্রধান। রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা দূর করে তিনি ইংল্যান্ডকে
একটি প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করেন। এটিকে মধ্যবর্তী অবস্থা নামে অভিহিত করা হয়। এটি
ইংল্যান্ডের অন্যতম আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা।
টিউডর রাজবংশের পরে ইংল্যান্ডে স্টুয়ার্ট রাজবংশের উত্থান ঘটে এবং বেশ কয়েক বছর সেই
শাসন অব্যাহত থাকে। টিউডররা স্বেচ্ছাচারী হলেও জনপ্রিয় ছিলেন। তবে স্টুয়ার্ট রাজবংশের
স্বৈরাচারী মনোভাব ইংল্যান্ডের জনগণ সেই অর্থে গ্রহণ করে নি। টিউডরদের জনপ্রিয়তার মূল
কারণসমূহের মধ্যে ছিলো এলিজাবেথের রাজত্বকালে বৈদেশিক আক্রমণের ভীতি দূর হওয়া
এবং রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের ফলে ক্রমেই ইংরেজদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনা
জাগ্রত হওয়া। টিউডর রাজাদের নেতৃত্বের গুণাগুণ, যোগ্যতা, জ্ঞান, শক্তি, সাহস
ইংল্যান্ডবাসীর শ্রদ্ধাও সম্মান অর্জন লাভে সমর্থ হয়। তবে স্টুয়ার্টরা টিউডরদের মতো ততোটা
জনপ্রিয় ছিলো না।
রানী এলিজাবেথের মৃত্যুর পর স্কটল্যান্ডের রাজা ষষ্ঠ জেমস প্রথম জেমস উপাধি ধারণ করে
সিংহাসনে আরোহন করেন। তিনি ছিলেন স্কটল্যান্ডের রানী মেরির পুত্র।
১। প্রথম জেমস : (১৬০৩ - ১৬২৫)
প্রথম জেমস ইংরেজ তথা ইউরোপের রাজতন্ত্রের ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা বিদ্যান ব্যক্তি বলে
বিবেচিত। তবে তিনি বিদ্যান, দয়ালু সৎবুদ্ধিসম্পন্ন হলেও রাজকার্যের জন্য যে দূরদর্শিতা,

বিচক্ষণতা ও বিচারবুদ্ধির প্রয়োজন সেগুলির কোনটাই তার মধ্যে ছিলো না। এ জন্যে তাকে
“খ্রিস্টান জগতের পন্ডিত মূর্খ” নামে আখ্যা দেয়া হয়। প্রথম জেমস ঈশ্বর প্রদত্ত রাজতান্ত্রিক
ক্ষমতায় বিশ্বাসী ছিলেন। সুতরাং, তার বিরুদ্ধে যে কোনো প্রতিরোধকে তিনি কঠোরভাবে
দমন করতেন। প্রথম জেমসের সঙ্গে পার্লামেন্টের দ্ব›েদ্বর মূল কারণ ছিলো।
১) তার সিংহাসনে আরোহনের সময় ইংরেজ জাতির মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতানা বৃদ্ধি
পাওয়ায় জনগণ ঈশ্বর প্রদত্ত স্বৈরাচারী শাসন নির্বিবাদে মেনে নিতে রাজি ছিল না।
২। প্রথম জেমসের সময় রাজনৈতিক দ্ব›েদ্বর চেয়েও ধর্মনৈতিক দ্ব›দ্ব জটিল আকার ধারণ করে।
ক্যাথলিকরা ভেবেছিলো যে তিনি ধর্মের ব্যাপারে তাদের পক্ষ অবলম্বন করবেন এবং
পিউরিটানবাদীদের সপক্ষে ধর্মসংস্কার করতে রাজি হবেন। এভাবে ঈশ্বর প্রদত্ত ক্ষমতা, নতুন
কর প্রবর্তন, পররাষ্ট্রনীতি ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে প্রথম জেমস ও পার্লামেন্টের মধ্যে তীব্র দ্ব›দ্ব
সৃষ্টি হয়। প্রথম জেমসের আমলে ১৬০৪ সালে প্রথম পার্লামেন্ট, ১৬১৪ সালে দ্বিতীয়
পার্লামেন্ট, ১৬২১ সালে তৃতীয় পার্লামেন্ট এবং ১৬২৪ সালে চতুর্থ পার্লামেন্ট বসে। মূলত
জেমসের আমলে পালামেন্ট রাজার যে সব ক্ষমতা খর্ব করে তা হলো :
ক. রাজার একচেটিয়া ক্ষমতা ব্যবহারের অধিকার;
খ. কমন্স সভা স্ফীত করার প্রাচীন অধিকার;
গ. রাজার ইচ্ছার বিরুদ্ধে শাসন সংক্রান্ত যে কোনো আলোচনা করার অধিকার দাবি করে;
ঘ. রাজার আইনবহিভর্‚ত কর ও শুল্ক স্থাপনের বিরুদ্ধে তীব্র মতামত জানায়।
ঙ. কমন্সসভা নির্বাচন সংক্রান্ত অভিযোগের চ‚ড়ান্ত মীমাংসার ক্ষমতা আদায় করতে সমর্থ হয়।
জেমস শান্তির সপক্ষে ছিলেন। রানী এলিজাবেথের আমলে স্পেনের সঙ্গে যে যুদ্ধ চলছিলো তা
তার আমলে শেষ হয় (১৬০৪)। ত্রিশ বছর ব্যাপী যুদ্ধে তিনি প্রোটেস্টান্টদের পক্ষে ছিলেন না,
যদিও তার জামাতা প্যালাটিনেট এর রাজা ফ্রেডারিখ তার কাছে সাহায্য সহযোগিতা
চেয়েছিলেন। ১৭০৭ সাল পর্যন্ত দুটি দেশ আলাদা ছিলো।
প্রথম জেমসের সময় থেকেই বৃটিশ ঔপনিবেশিক শক্তি বৃদ্ধি পেয়ে ভারতের সুরাট,
মসলিপট্রমে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে। উত্তর আমেরিকায় ইংরেজ ঊপনিবেশের গোড়াপত্তন
শুরু হয়।
এভাবে প্রথম জেমস পার্লামেন্টের সঙ্গে দ্ব›দ্ব এবং রাজার ক্ষমতা শক্তিশালীকরণের প্রচেষ্টার
মাধ্যমে ১৬২৫ সাল পর্যন্ত শাসন পরিচালনা করেন।
২। প্রথম চার্লস (১৬২৫ - ১৬৪১)
১৬২৫ সালে পিতার মৃত্যুর পর প্রথম চালর্স সিংহাসনে আরোহন করেন। প্রথম চালর্স তার
পিতা জেমসের মতো প্রতিক‚ল অবস্থার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন। তাঁর শাসনকে চার
ভাগে ভাগ করা হয়।

১। ১৬২৫ সালে থেকে ১৬২৯ সাল ছিলো প্রথম পর্ব। এই সময় রাজা বিভিন্ন যুদ্ধে জড়িয়ে
পড়েন এবং পার্লামেন্টের সঙ্গে সম্পর্ক ক্রমশ উত্তপ্ত হতে থাকে;
২। ১৬২৯ থেকে ১৬৪০ সালের মধ্যবর্তী সময় প্রথম চালর্স পার্লামেন্ট ছাড়াই দেশ শাসন
করেন;
৩। ১৬৪০ থেকে ১৬৪২ সালে তৃতীয় পর্বে স্বল্প এবং দীর্ঘ পার্লামেন্ট;
৪। দুটি গৃহযুদ্ধে (১৬৪২ - ১৬৪৯) প্রথম চার্লসের মৃত্যুদন্ড দেয়া হয় এবং ক্রমওয়েল
সিংহাসনে আরোহন করেন।
পিতার ন্যায় প্রথম চালর্স ঈশ্বর প্রদত্ত ক্ষমতায় বিশ্বাসী ছিলেন। মূলত পার্লামেন্টের সঙ্গে দ্ব›েদ্বর
মূল কারণ ছিলো :
ক) একদিকে রাজার ঈশ্বর প্রদত্ত ক্ষমতায় বিশ্বাস, অপরদিকে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক চেতনা
বৃদ্ধি;
খ) পিউরিটানবাদীদের উপর অত্যাচার এবং বিশপযুদ্ধে পার্লামেন্টের সঙ্গে দ্ব›দ্ব;
গ) পার্লামেন্টের বিনা অনুমতিতে কর আদায়ে বিরোধ সৃষ্টি;
ঘ) পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রেও পার্লামেন্ট এবং চার্লসের মধ্যে বিরোধ।
স্পেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের খরচ সংকুলানের জন্য চালর্স প্রথম পার্লামেন্ট আহবান করেন ১৫২৬
সালে। টনেজ এবং পাউন্ডেজ নামক কর থেকে প্রাপ্ত অর্থ মাত্র এক বছরের জন্য মঞ্জুর করলে
ক্ষুদ্ধ হয়ে রাজা পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দেন।
প্রথম পার্লামেন্ট দুটো সাবসিডাইস বা অর্থপ্রাপ্তির পরও যুদ্ধ ঘোষণা করেন এবং উিউক অব
বাকিংহামকে স্পেনের সঙ্গে যুদ্ধ পরিচালনার ভার দেন। তবে বাকিংহামের নেতৃত্বে অভিযান
সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়। কমন্স সভা বাকিংহামকে ইম্পীচ করতে উদ্যত হলে কমন্সসভা ভেঙ্গে দেয়া
হয়। পরবর্তী দুই বছর চালর্স পার্লামেন্টের অনুমোদন ভিন্ন জোরজবরদস্তিমূলকভাবে অর্থ
সংগ্রহ করতে থাকেন।
১৬২৯ সালে চালর্স অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা দূর করার জন্য আরো একটি পার্লামেন্ট ডাকলে
রাজার অবৈধ অর্থ আদায়ের তীব্র প্রতিবাদ করে। এই পার্লামেন্ট কমন্সসভা তাঁর বিখ্যাত
অধিকার তথা আবেদনপত্র বিল বা পিটিশন অব রাইট বিল পাশ করে-যার নীতিমালাসমূহের
মধ্যে ছিলোক) কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে কাউকে বন্দী করা যাবে না। এটি ‘হ্যাবিয়েস কপার্স’ আইন
নামে পরিচিত হয়।
খ) অনুমোদন ব্যতীত জোর জবরদস্তিমূলক কর আদায় করা যাবে না। এরই মধ্যে বাকিংহাম
১৬২৮ সালের ২৩ মে গুপ্ত হত্যার শিকার হন। তৃতীয় পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দেবার পর চালর্স
এগারো বছর পার্লামেন্টের অধিবেশন ছাড়াই দেশ শাসন করেন যা ব্যক্তিগত শাসন নামে
পরিচিত। নানা উপায়ে তিনি অর্থ সংগ্রহ শুরু করেন।
১) টনেজ পাউন্ডেজ নামক শুল্ক;

২) যাদের সম্পত্তির বাৎসরকি আয় বিশ পাউন্ড ছিল অর্থের বিনিময়ে তাদের নাইট উপাধি
গ্রহণ করতে বাধ্য করা;
৩) অভিযুক্ত ব্যক্তিদের উচ্চহারে কর আদায় করা;
এই কর আরোপে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
ধর্মনীতি
অর্থনৈতিক সমস্যা ছাড়াও ধর্মীয় ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দেয়। ধর্মীয় ব্যাপারে তার পরামর্শদাতা
আর্চবিশপ উইলিয়াম লিস এ্যাংলিকান মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। তবে তিনি ইংল্যান্ডের লোক
ছিলেন। উইলিয়ামের মূলনীতি ছিলো পিউরিটানবাদীদের নিশ্চহ্ন করে নিজ ধর্মমত প্রতিষ্ঠা
করা।
স্কটল্যান্ড
স্কটল্যান্ডে উইলিয়ামের নীতি সমালোচিত হয়েছিলো। স্কটল্যান্ডবাসীরা ছিলো প্রেসব্যাটারিয়ানপন্থী।
সেখানে স্কটিশ প্রেসব্যাটারিয়ান চার্চে তিনি সংস্কার আনতে উদ্যোগী হলেন। নতুন প্রার্থনা বই
বিশপদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ১৬৩৯ থেকে ১৬৪০ সালে বিশপের যুদ্ধ শুরু
হয়। ১৬৩৯ সালে জুন মাসে বিশ হাজার লোক স্কটল্যান্ডের সীমান্তে চলে আসে। চালর্স
পরাজিত হয় এবং বারইউকের সন্ধি নামে একটি অপমানজনক চুক্তি সাক্ষরে বাধ্য হন।
স্কটল্যান্ডের বিদ্রোহ দমনের ব্যর্থতায় ১৬৪০ সালে অর্থাভাবে আরো একটি পার্লামেন্ট পুনরায়
আহবান করেন। তবে পূর্বের অভিযোগ দূর না হওয়া পর্যন্ত পার্লামেন্ট এক কপর্দক ও দিতে
রাজি হলো না। চার সপ্তাহে তর্কযুদ্ধের পর অধিবেশন মুলতবি হয়ে যায়। ক্ষণস্থায়ী হওয়ায়
এটিকে ক্ষণস্থায়ী পার্লামেন্ট বলে অভিহিত করা হয়।
ক্ষণস্থায়ী পার্লামেন্ট থেকে অর্থের কোনো সমাধান না পেয়ে ১৬৪০ সালে চালর্স আরো একটি
অধিবেশন আহবান করেন যা দীর্ঘ পার্লামেন্ট নামে অভিহিত হয়ে আছে। এটি ১৬৪০ থেকে
১৬৬০ পর্যন্ত কার্যকর ছিলো।
দীর্ঘ পার্লামেন্ট ইংল্যান্ডের রাজাকে পার্লামেন্টের অধীনে নিয়ে আসতে সাহায্য করে এবং
রাজার স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এ সময়কালকে তিন পর্যায়ে ভাগ করা
যেতে পারে।
১। পার্লামেন্টের সদস্যদের মধ্যে ঐক্য;
২। সদস্যদের মধ্যে মতানৈক্য (১৬৪১ - ৪২);
৩। গৃহযুদ্ধ বা রাজার সঙ্গে যুদ্ধ (১৬৪২ - ৪৮)।
সৈন্য ও নৌবলের দায়িত্বসহ শাসনের সর্বপ্রকার দায়িত্ব দীর্ঘ পার্লামেন্ট গ্রহণ করতে চাইল।
এই পার্লামেন্ট স্ট্যাফোর্ড এবং ল্যাজক বিল অব এ্যাটেন্টডারের মাধ্যমে ইম্পীচ করে।

এই পার্লামেন্টের দ্বিতীয় অধিবেশনে টনেজ পাউন্ডেজ কর মাত্র দুই মাসের জন্য রাজাকে দেয়া
হলো। অন্য কোনো উপায়ে রাজার পক্ষে অর্থ আদায় করা নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করা হলো।
পার্লামেন্টে ত্রৈবার্ষিক আইন পাশ করা হয়। এতে বলা হয় তিন বছরের আগে পার্লামেন্ট
বাতিল করা যাবে না। শাসনকার্যের প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের সম্পূর্ণ ক্ষমতা কমন্সসভার উপর
বর্তায়, তবে এই বিল নিয়ে প্রথম বারের মত বির্তর্কের সৃষ্টি হওয়ায় বিলটি বাতিল হয়।
১৬৪১ সালে আয়ারল্যান্ডে বিদ্রোহ শুরু হয়। এই বিদ্রোহ দমনের ক্ষেত্রে সৈন্যবাহিনী পাঠানোর
প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তবে পার্লামেন্টের সদস্যরা রাজার অধীনে তা পাঠাতে ইচ্ছুক ছিলো
না। এর পরিপ্রেক্ষিতে গ্র্যান্ড রেমোনস্ট্রেশন নামে একটি আইন আদালতে পাশ করা হয়।
এতে বলা হয় রাজা এমন লোক থেকে তার মন্ত্রী নির্বাচিত করবেন যাদের পার্লামেন্টের উপর
পূর্ণ আস্থা আছে।
এই বিলের মাধ্যমে চালর্স তার ক্ষমতা বহুল পরিমাণে হারিয়েছিলেন। তিনি জানতেন
স্কটল্যান্ডের বহু মানুষ তাকে সাহায্যের জন্য প্রস্তুত। রাজার সমর্থকদের এই সময় ক্যাভালিয়ার
(ঈধাধষরবৎ) এবং পার্লামেন্টের সমর্থকদের রাউন্ড হেডস (জড়ঁহফ ঐবধফং) বা ন্যাড়ামাথার
দল বলে অভিহিত করা হয়। পার্লামেন্টের এই বিভক্তি রাজাকে পুনরায় শক্তি অর্জন এবং
সগৌরবে তাকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়। ১৬৪২ সালের জানুয়ারি মাসে এ্যাটর্নি জেনারেল
পামি, হ্যাম্পডেন, হ্যাডেলবিগ, হোলস, ও স্টোজকে ষড়যন্ত্রে অভিযুক্ত করেন। অভিযোগ করা
হয় যে তারা ৫ জন স্কটদের সঙ্গে রাজাকে শত্রট্ট পক্ষ দিয়ে হত্যা করতে চায়। চালর্স কর্তৃক
কমন্সসভার এই অপমান রাজা ও পার্লামেন্টের প্রকাশ্য দ্ব›েদ্বর সূত্রপাত ঘটায়। এই সময়
মিলিশিয়া বিল নামে একটি বিল তার সম্মুখে পেশ করা হয়। এর ফলে রাজা সেনা বাহিনীর
উপর সমস্ত ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত হতে থাকে। রাজা হলেন এরপর নামে-মাত্র শাসক। তবে
রাজা এই আইন মেনে নিতে রাজি হন নি। চালর্স সেনাবাহিনী এবং যুদ্ধের অর্থজোগাড় করতে
শুরু করলেন। পার্লামেন্টে যুদ্ধ আগেই শুরু হয়েছিলো এবং ২২ আগস্ট রাজা নটিংহামে তার
সেনাবাহিনী নিয়ে আসলে গৃহযুদ্ধের পদধ্বনি শোনা যায়। গৃহযুদ্ধে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক উভয়
কারণই ছিলো। বলা যায় দক্ষিণউত্তর এবং পশ্চিম অংশ রাজার পক্ষে এবং দক্ষিণ ও পূর্ব অংশ
পার্লামেন্টের পক্ষে ছিলো। প্রথম দিকে রাজার বাহিনী জয়লাভ করলেও পরবর্তীকালে
পার্লামেন্টের বাহিনী এগিয়ে যেতে থাকে । ১৬৪২ সালে যুদ্ধ শেষ হয় দুই পক্ষের চ‚ড়ান্ত
কোনো বিজয় ছাড়া।
১৬৪৪ সালে যুদ্ধ আবার শুরু হয়। ক্রমওয়েল এবং টমাস ফরফাক্স রাজকীয় বাহিনীকে
সম্পূর্ণভাবে নিউব্যারিতে পরাজিত করেন। ১৬৪৮ সালে স্কটদের কাছে রাজার বাহিনী
পরাজিত হয়। পরাজয়ের পর প্রথম গৃহযুদ্ধ শেষ হয়। সেনাবাহিনী পরাজয়ের পর প্রথম
গৃহযুদ্ধ সমঝোতা করার কথা বলে। তবে চালর্স এটিকে প্রত্যাখ্যান করেন। চার্লস স্কটদের
সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। তিনি গোপন চুক্তিতে প্রতিজ্ঞা করেন যে ইংল্যান্ড প্রেসব্যাটরিয়ান
চার্চ প্রতিষ্ঠা করবেন, যদি স্কটরা তাকে ইংল্যান্ডের সিংহাসনে বসতে সাহায্য করে। এটি দ্বিতীয়
গৃহযুদ্ধের সূচনা করে।

দ্বিতীয় গৃহযুদ্ধ ১৬৪৮ সালে শুরু হয়। দ্বিতীয় গৃহযুদ্ধ খুব দীর্ঘ ছিলো। এই যুদ্ধ ছিলো খুবই
তিক্ত। স্কট এবং প্রেসব্যাটারিয়ানরা প্রথমে চালর্সের পক্ষে যুদ্ধ করে এবং সেনাবাহিনী
পার্লামেন্টের পক্ষে যায়। ক্রমওয়েলের নেতেৃত্বে নিউ মডেল বাহিনী ১৬৪৮ সালে আগস্ট মাসে
হ্যামিল্টনে স্কটদের পরাজিত করে। সমস্ত ইংল্যান্ড তখন নিউ মডেল সেনাপতির অধীনে চলে
যায়। ক্রমওয়েল ইংল্যান্ড স্কটল্যান্ডের স্বৈরাচারী হিসেবে আবির্ভ ত হন এবং দ্বিতীয় গৃহযুদ্ধের
সমাপ্তি ঘঠে।
পার্লামেন্ট রাজার সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করে। তবে সৈন্য বাহিনী রাজাকে বিশ্বাস করতো না।
তারা বরং গৃহযুদ্ধের জন্য দায়ী করে শাস্তিদান করে। যারা রাজার সঙ্গে সমঝোতা করতে
এগিয়ে এসেছিল ডিসেম্বরে ১৬৪৮সালে কর্নেল প্রাইড হাউস অব কমন্স তাদের তাড়িয়ে দেয়।
এটিকে প্রাইডের শুদ্ধি অভিযান নামে অভিহিত করা হয়। ৬০ জন সদস্যকে নিয়ে একটি
সংখ্যালঘু পার্লামেন্ট কাজ চালিয়ে যায়। এটি রাম্প পার্লামেন্ট নামে পরিচিত। ১৬৪৯ সালের
জানুয়ারি মাসে রাজাকে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। ২৭ জানুয়ারি হোয়াইট হল
রাজপ্রাসাদে তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। ১৬৪৯ সালের ফ্রেব্রæয়ারি মাসে ইংরেজ রাজতন্ত্র
লর্ডসভা কর্তৃক বাতিল হয়।
৩। ক্রমওয়েলের উত্থান এবং কমনওয়েলথ
ওলিভার ক্রমওয়েলের শাসন কমনয়েলথ এবং প্রোটেকটোরেট দুইভাগে বিভক্ত ছিলো। যদিও
সরকার ব্যবস্থা ছিলো প্রজাতন্ত্র। তবে প্রকৃত পক্ষে ইংল্যান্ড একটি সামরিক শাসনের অধীনে
চলে যার নেতৃত্বে ছিলো ক্রমওয়েল। ক্রমওয়েলের এই শাসন ইংলেন্ডের একটি মধ্যবর্তী
অবস্থা হিসেবে পরিচিত ছিলো। যেহেতু এর আগে রাজতন্ত্র ছিলো এবং এরপর আবার
রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। তাই এটি ছিলো একটি মধ্যবর্তী অবস্থা।
প্রথম চার্লসের মৃত্যুদন্ডের কয়েক সপ্তাহ পরেই পার্লামেন্ট ইংরেজ শাসন থেকে রাজতন্ত্রের
উচ্ছেদ ঘটাতে এক প্রস্তাব পাস করে। এই প্রস্তাবে বলা হয় যে রাজপদ অপ্রয়োজনীয়,
ব্যয়বহুল, জনসাধারণের নিরাপত্তা ও স্বার্থের প্রতিকূলে। ইংল্যান্ড রাষ্ট্রকে একটি প্রজাতন্ত্র বা
কমনওয়েলথ বলে ঘোষণা করা হয়। এক চল্লিশ সদস্য নিয়ে কাউন্সিল অব স্টেট নামে রাষ্ট্রের
কার্যনির্বাহক সভা গঠিত হয়।
প্রথম থেকেই প্রজাতান্ত্রিক সরকারকে নানা ধরনের বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। রাজার
মৃত্যুদন্ড একধরনের অস্থিরতার সৃষ্টি করে এবং বিপ্লবী কমনওয়েলথ তার মুখোমুখি হতে হয়।
রাজতান্ত্রিক দল প্রথম চালর্সের প্রতি দুর্বল হতে থাকে। রাজার প্রতি সহমর্তিতা এবং
সহানুভ‚তি ও বাড়তে থাকে। ইউরোপীয় দেশগুলিও কমনওয়েলথ এবং প্রজাতন্ত্রের বিরোধিতা
করতে থাকে। স্কটল্যান্ড প্রথম চার্লসের পুত্র দ্বিতীয় চালর্স উপাধি ধারণ করে স্কটল্যান্ডের রাজা
হন। আয়ারল্যান্ডের ক্যাথলিকরা দ্বিতীয় চালর্সকেই উত্তরাধিকার হিসেবে মেনে নিতে ইচ্ছুক
ছিলো। ইংল্যন্ডের সমর্থকেরাও রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে। শত্রট্টপক্ষ রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার
চেষ্টা করে থাকে। তাঁরা অশান্তি ও আক্রোশ ক্রমশ ছড়িয়ে দিতে থাকে।

আয়ারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ড রাম্প পার্লামেন্টের বাইরে ছিলো। ক্রমওয়েল আয়ারল্যান্ডের লর্ড
নিযুক্ত হন। আয়ারল্যান্ড দ্বিতীয় চালর্সকে আশ্রয় দিয়েছিলো। পিউরিটান সেনাবাহিনী আয়ারল্যান্ডে
আক্রমণ করে এবং ক্যাথলিক উত্থানকে কঠোর হাতে দমন করে। ড্রাগেডার যুদ্ধে ক্রমওয়েল
অকথ্য বর্বতার সাহায্যে তাদের বিদ্রোহ দমন করে। ১৬৫০ সালে আয়ারল্যান্ডবাসী পরাজিত
হয় ওয়েক্সফোর্ড এবং ব্রেগ হেডস এ। ক্রমওয়েল সেখানেও নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ চালায়।
ক্রমওয়েলের অত্যাচারী নীতিই ইংল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডকে চিরশত্রট্টতে পরিণত করে।
স্কটল্যান্ডকেও আয়ারল্যান্ডের ভাগ্যবরণ করতে হয়। স্কটরা দ্বিতীয় চালর্সকে তাদের বৈধ রাজা
হিসেবে ঘোষণা দেয় এবং তার সমর্থনে বিদ্রোহ দেখা দেয়। ১৬৫০ সালে ক্রমওয়েল নিজেই
স্কটল্যান্ডে পৌঁছান। জনগণ প্রাণ রক্ষার্থে পলায়ন করে। ডানবারের যুদ্ধে ক্রমওয়েল
স্কটল্যান্ডের সৈন্যদের সম্পূর্ণভাবে পরাজিত করলেন।
প্রথম ইঙ্গ-ওলন্দাজ যুদ্ধ শেষ হবার পূর্বেই (১৬৫৩) ক্রমওয়েলকে রাম্প পার্লামেন্টের বিভিন্ন
ভুলত্রট্টটি এবং অগণতান্ত্রিক নীতিসমূহের কারণে নানা সমস্যা এবং একনায়কতন্ত্রসুলভ আচরণ
করতে হয়। এর সদস্যরা প্রায়শই ঘুষ নিতো এবং তাদের আতœীয় স্বজনকে চাকুরীতে ঢুকানো
হত। ১৬৫৩ সালে র‌্যাম্প পার্লামেন্ট নিজে ক্ষমতা স্থায়ী করার উদ্দেশ্যে এক প্রস্তাব দিলে
ক্রমওয়েল ক্রুদ্ধ হয়ে সৈন্যদের সাহায্যে রাম্প পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দেন। এ ভাবে ক্রমওয়েল চার
বছর রাম্প ও ইংল্যান্ডকে শাসন করে। তবে তাঁর মূলশক্তি ছিলো সৈন্য বাহিনী।
দীর্ঘ রাম্প পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দেওয়ার পর ক্রমওয়েল এবং তার কাউন্সিল অব স্টেট বেরবন
পার্লামেন্ট নামে একটি পার্লামেন্ট গঠন করেন। ১৪০ জন সদস্যদের একজন চর্মব্যবসায়ী
প্রেইসগড বেরবন-এর নাম অনুসারে এই পার্লামেন্টের নাম হয়। এই পার্লামেন্ট বিভিন্ন
সংস্কারের সূচনা করলেও টিথ নামক কর বাতিল করার চেষ্টা এবং ধর্মানুষ্ঠান ব্যতিরেকে
চুক্তিমূলক বিয়ের প্রস্তাবে ভ‚স্বামী স¤প্রদায় এবং যাজকদের রাগান্বিত করেছিলো। এভাবে
বেরবন জনপ্রিয় হতে শুরু করলে ক্রমওয়েল পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দেন।
৪। ওলিভার ক্রমওয়েল : লর্ড প্রোটেকটোরেট : (১৬৫৩ - ১৬৫৮)
বেরবন পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দেয়ার পর সেনাবাহিনী ক্রমওয়েলকে সমর্থন করে একটি সংবিধান
রচনা করে। এই সংবিধান ইনস্ট্রোমেন্ট অব গর্ভমেন্ট নামে একটি দলিল প্রস্তুত করে। এই
ইনস্ট্রোমেন্ট এক কক্ষ বিশিষ্ট একটি পার্লামেন্ট এবং এটি আধুনিক যুগের প্রথম লিখিত
সংবিধান রচনা করে। এভাবে রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতা রাষ্ট্ররক্ষক, কাউন্সিল এবং এককক্ষযুক্ত
পার্লামেন্টের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়। ওলিভার ক্রমওয়েলকে লর্ড প্রোটেকটোরেট বা
রাষ্ট্ররক্ষক ঘোষণা দেয়া হয়। সারা জীবনের জন্য তাঁকে ক্ষুদ্র কাউন্সিল অব স্টেট প্রোটেক্টর
হিসেবে সমর্থন করে। পার্লামেন্ট ১৬৫৪ সালে মিলিত হয়েছিলো। এটি ইনস্ট্রোমেন্ট এর
যৌক্তিকতা এবং ক্রমওয়েলের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে ক্রমওয়েল পার্লামেন্ট ভেঙ্গে
দেন।
আঠারো মাস ক্রমওয়েল ব্যক্তিগত শাসন চালান। সম্পূর্ণ সামরিক কায়দায় তিনি শাসন
করেন। তার উদ্দেশ্য ছিলো সুদৃঢ় শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা। পার্লামেন্টের অনুমোদন

ব্যতিরেকে কর ধার্য করা হয়। তিনি ইংল্যান্ডকে ১০টি বিভাগে (ফরংঃৎরপঃ) ভাগ করেন।
ক্রমওয়েল ইংল্যান্ডে পিউরিটান চার্চ প্রতিষ্ঠা করেন এবং এতে ধর্মীয় ক্ষেত্রে সর্বোাচ্চ স্বাধীনতা
বা সহিষ্ণুতা প্রদান করা হয়। প্রেসব্যাটারিয়ান, ব্যাপটিস্ট এবং ইনডিপেনডেন্টস সবাইকে
ধর্মক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হয়।
তবে ১৬৫৬ থেকে ১৬৫৮ সালের মধ্যে ক্রমওয়েল দ্বিতীয় পার্লামেন্ট আহবান করেন। এই
পার্লামেন্ট ডাচযুদ্ধের জন্য অর্থ সাহায্য দেয়। এটি ক্রমওয়েলের শত্রট্টুদের শাস্তিদানের জন্য
হাইকোর্টও প্রতিষ্ঠা করে। এছাড়া এই পার্লামেন্ট সবিনয় অনুরোধ ও উপদেশ নামে একটি
নতুন আইন প্রণয়ন করে। এর মাধ্যমে ক্রমওয়েলকে রাজমুকুট গ্রহণের জন্য সবিনয় অনুরোধ
ও উপদেশ (ঐঁসনষব চবঃরঃরড়হ ্ অফারপব) জানায়। ক্রমওয়েল এতে পার্লামেন্টের কোনো
দুরভিসন্ধি আছে অভিযোগ এনে জানুয়ারি ১৬৫৮ সালে পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দেন। এরপর তিনি
সেনা বাহিনীর সহায়তায় শাসন করতে থাকেন। নিরপেক্ষ বিচারে দেখতে গেলে প্রথম চার্লসের
স্বেচ্ছাচার অপেক্ষা ক্রমওয়েলের শাসনকার্য অধিকতর স্বেচ্ছাচারী ছিলো। ১৬৫৮ সালের
সেপ্টেম্বর ডানবার বিজয় উৎসবের দিন তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
৫। ক্রমওয়েলের বৈদেশিক নীতি
অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে সাফল্য না থাকলেও ক্রমওয়েল পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের মর্যাদা এবং
শক্তি যথেষ্ট বাড়িয়েছিলেন। তাঁর পররাষ্ট্র নীতির মূল উদ্দেশ্য ছিলো :
১। ইংল্যান্ডের বাণিজ্যিক ও সামুদ্রিক প্রাধান্য স্থাপন করা;
২। ইউরোপে প্রোটেস্টান্ট ধর্মের নেতা ও রক্ষাকর্তার পদ গ্রহণ করা;
৩। ইউরোপীয় রাজনীতিতে ইংল্যান্ডের মর্যাদা ও প্রাধান্য স্থাপন করা এবং
৪। ইংল্যান্ডের সিংহাসনে স্টুয়ার্ট রাজবংশের পুনপ্রতিষ্ঠা বন্ধ করা।
সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ইংল্যান্ড বাণিজ্যিক ও সামুদ্রিক প্রাধান্য স্থাপনে সমর্থ হয়। প্রজাতন্ত্র
প্রতিষ্ঠিত হবার পর ইংল্যান্ড পুনরায় নিজ মর্যাদা ও বৈদেশিক স্বার্থ পুনরুদ্ধারে অগ্রসর হয়।
ক্রমওয়েল ইংল্যান্ডকে নৌশক্তিতে বলীয়ান হবার ক্ষেত্রে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন। এই সময়
আমেকিার উপক‚লে মাত্র একখানা ইংরেজ বাণিজ্য জাহাজ দেখা যায়। স্যার হেনরি মেইন
কাউন্সিল অব স্টেটের একজন সুদক্ষ সদস্যের হাতে ইংল্যান্ডের নৌবহরের উন্নতির ভার দেয়া
হয়। দুবছরের মধ্যে তাঁর চেষ্টায় ইংরেজ নৌবহর দ্বিগুণ শক্তিশালী হয়। মাত্র চল্লিশটা যুদ্ধ
জাহাজের বদলে আশিটি যুদ্ধ জাহাজ সমুদ্রবক্ষে বৃটিশ জাতির স্বার্থ রক্ষার জন্যে প্রস্তুত হয়।
সামুদ্রিক বাণিজ্যে ওলন্দাজদের একচেটিয়া আধিপত্য ক্ষুন্ন করার এবং ইংল্যান্ডকে শক্তিশালী
বাণিজ্যিক দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে ইংরেজরা সর্বশক্তি প্রয়োগ করে। ১৬৫১ সালে বিখ্যাত
নেভিগেশন এ্যাক্ট চালু করা হয়। এই আইন দ্বারা ইংল্যান্ডের আমাদানিকৃত দ্রব্যাদি ইংল্যান্ডের
বাণিজ্য জাহাজ অথবা যে দেশ থেকে মালামাল আমদানি করা হয় সেই দেশের জাহাজ ভিন্ন
অপর কোনো দেশের জাহাজ কতৃক বহন করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এই যুদ্ধ

ছিলো খুবই ভয়াবহ। ১৬৬৪ সালের শান্তিচুক্তি মারফত ওলন্দাজরা নেভিগেশন আইনের
শর্তাদি মেনে নেয় এবং ইংলিশ চ্যানেলে ইংরেজ জাহাজকে অভিবাদন জানাতে বাধ্য হয়।
এ ছাড়াও ইংল্যান্ডের বাণিজ্যিক উন্নতির জন্য ক্রমওয়েল ডেনমার্ক, সুইডেন এবং পুর্তগালের
সাঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি করেন। স্পেনের সঙ্গে যুদ্ধ বাধলে ক্রমওয়েল ফ্রান্সের সঙ্গে মিত্রতাসূত্রে
আবদ্ধ হন। ইঙ্গ-ফরাসি যুগ্মবাহিনী স্পেনের অধিকৃত ডানকার্ক বন্দর দখল করেন। ১৬৫৭ খ্রি.
ইংরেজ এ্যাডমিরাল বে- ক সান্টাক্রুজ বন্দর আক্রমণ করে একটি স্পেনীয় নৌবহর ধ্বংস
করেন। এছাড়াও স্পেনের নিকট স্পেনীয় আমেরিকায় বাণিজ্যে নিয়োজিত স্পেনীয়
ইংরেজদের ধর্ম পালনের স্বাধীনতা দেবার প্রস্তাব করা হয়। এই সূত্রেই ক্রমওয়েল স্পেনের
বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। এই অভিযানে স্যান ডমিনিয়োগ দখল করতে ব্যর্থ হলে ইংল্যান্ড
জেনেকা দ্বীপটি দখল করে (১৬৫৫) নেয়।
এভাবে সমুদ্রবক্ষে ইংরেজ শক্তি অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠে। প্রথম দুজন স্টুয়ার্ট
রাজার আমলে ইংল্যান্ড ইউরোপে যে মর্যাদা হারিয়েছিলো ক্রমওয়েল তা পুনরুদ্ধার করেন।
তাঁর পররাষ্ট্রনীতির সাফল্যে ঐতিহাসিক ক্ল্যারেন্ডন বলেন “ক্রমওয়েলের অভ্যন্তরীণ সাফল্য
তার পররাষ্ট্রনীতির সাফল্যের ছায়ামাত্র” । তবে তাঁর পররাষ্ট্রনীতি ক্রুটিহীন বলা চলে না। তিনি
ফ্রান্সের পরিবর্তে স্পেনকে ইংল্যান্ডের প্রধান শত্রট্টু বলে ধরে নিয়েছিলেন। ইংল্যান্ডের প্রধান
শত্রট্টু যে ফ্রান্স তা তিনি উপলদ্ধি করেন নাই। এ ছাড়াও যুদ্ধটি ব্যয় সাপেক্ষ বিধায় ইংল্যান্ডের
জনসাধারণকে করভারে পীড়িত করায় তাঁর নীতি জনসমর্থন লাভ করে নি।
তবে বলা যায়, ক্রমওয়েলের অভ্যন্তরীণ নীতির ক্ষেত্রে নানারকম প্রশ্ন উত্থাপিত হলেও তিনি
ইংল্যান্ডকে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। ইংরেজদের বাণিজ্যের শ্রেষ্ঠত্ব
এবং সমুদ্রে ইংরেজ শাসনও তাঁর সময়ে প্রতিষ্ঠা হয়। তাঁর আমলের বৈদেশিক নীতি
এলিজাবেথের সময়ের গৌরব নিয়ে আসে।
৬। পিউরিটান বিপ্লবের সমাপ্তি এবং ইংল্যান্ডে রাজতন্ত্রের পুনপ্রতিষ্ঠা
১৬৫৮ সালে ক্রমওয়েল মারা যান। তার মৃত্যুতে সৈন্যবাহিনী নেতৃত্ববিহীন এবং দেশ
সরকারবিহীন হয়ে পড়ে। ওলিভার ক্রমওয়েলের পুত্র রিচার্ড ক্ষমতায় আসেন। তবে তিনি তার
পিতার মতো শক্ত শাসক ছিলেন না। তাঁর স্বল্প সময়ের শাসনে পার্লামেন্ট এবং সেনাবাহিনী
কারো উপরেই নিয়ন্ত্রন আনতে পারেনি। তিনি দীর্ঘ পার্লামেন্ট বাতিল করার আহবান জানান,
সৈন্যবাহিনী ক্ষমতা দখলের পায়তারা করে এবং প্রেসব্যাটারিয়ান সদস্যরা বহিষ্কৃত হয়। এর
পরিপ্রেক্ষিতে ১৬৫৯ সালের ২৬ মে রিচার্ড প্রটেকটর হিসেবে পদত্যাগ করেন। এমতাবস্থায়
তখন একমাত্র পথ খোলা ছিলো পুরোনো রাজা এবং সংবিধানে ফিরিয়ে আসা। ইতিমধ্যে
জেনারেল মঙ্ক স্কটল্যান্ড থেকে সৈন্যসহ লন্ডনে ফিরে আসেন। তিনি ক্রমওয়েলের সময়
স্কটল্যান্ডের গভর্নর ছিলেন। জেনারেল মঙ্কের ইচ্ছানুসারে এবং বিখ্যাত পার্লামেন্ট সদস্যরা
কয়েক বছরের অব্যবস্থার কথা স্মরণ করে সর্বসম্মতিক্রমে দ্বিতীয় চালর্সকে ইংল্যান্ডের
সিংহাসনে বসানোর সিদ্ধান্ত নেন। ইতিমধ্যে দ্বিতীয় চার্লস মঙ্কের সঙ্গে গোপনে পত্রালাপ
করলে মঙ্ক দ্বিতীয় চার্লসকে আমন্ত্রণ জানান। দ্বিতীয় চালর্স ব্রেডার ঘোষণা দ্বারা নিউমডেল
সেনাবাহিনীর প্রাপ্য বেতন মিটিয়ে দিতে, ধর্মব্যাপারে স্বাধীনতা দান করতে, কমনওয়েলথের

সময়ে যে জমি লোকে ক্রয় করেছে তা আইনত অপরাধমুক্ত বলে ঘোষণা করতে, স্বীকৃতি
জানালেন। এ ছাড়া সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। ১৬৬০ সালের ২৯ মে তারিখে এক
অভ‚তপূর্ব আনন্দ উৎসবের মাধ্যমে দ্বিতীয় চালর্স ইংল্যান্ডে আগমন করেন এবং সিংহাসনে
বসেন। ইংল্যান্ডের সর্বত্রই রাজতন্ত্রের এই পুনপ্রতিষ্ঠাকে স্বাগত জানানো হয়ে ছিলো। বিশ
বছর পর ইংল্যান্ডের পথে আবার ‘ম্যারি ইংল্যান্ড’ গান শোনা যায়। রাজতন্ত্রের এই উত্থানকে
রেস্টোরেশন বা ‘পুনরুদ্ধার’ নামে পরিচিত হয়। তবে রাজতন্ত্রের পক্ষে পূর্বের নীতি অন্ধভাবে
অনুসরণ করা অসম্ভব হয়ে উঠে এবং ইংল্যান্ডের ইতিহাসে সাংবিধানিক বা নিয়মতান্ত্রিক
রাজতন্ত্রের পথ প্রশস্ত হয়ে উঠে।

সারসংক্ষেপ
টিউডর বংশের শৌর্যবীর্য এবং অভ‚তপূর্ব সাফল্যের পর স্টুয়ার্ট বংশ ইংল্যান্ডের সিংহাসনে বসলেও
তাদের স্বেচ্ছাচারী এবং এর স্বৈরাতান্ত্রিক নীতিসমূহ জনগণ মেনে নেয় নি। স্টুয়ার্ট প্রথম রাজা জেমস
এবং প্রথম চালর্স পার্লামেন্টের অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে পার্লামেন্টের সঙ্গে বিরামহীনভাবে দ্ব›েদ্ব লিপ্ত
ছিলেন। পার্লামেন্টে রাজার যে কোনো দাবি মেনে নিতে প্রস্তুত ছিলো না। বরং পার্লামেন্ট অন্যায়ভাবে
রাজার গৃহীত যে কোন নীতিকে দমন করতে উদ্যোগী হয়ে উঠে। এর ফলে পার্লামেন্ট এবং রাজার
বাহিনীর দ্ব›েদ্ব ইংল্যান্ডে গৃহযুদ্ধের সৃষ্টি হয় এবং ওলিভার ক্রমওয়েল ক্ষমতায় আসেন। রাজতন্ত্রের
অবসান ঘটিয়ে তিনি ইংল্যান্ডেকে প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করেন। ইংল্যান্ডের ইতিহাসে এটি ছিলো
অভূতপূর্ব। তবে প্রজাতন্ত্র ঘোষিত হলেও ইংল্যান্ড এই সময়ে সামরিক শক্তির উপর নির্ভরশীল হয়ে
পড়ে, কঠোর নিয়মশৃঙ্খলার উপর ভিত্তি করে শাসন ব্যবস্থা পরিচালন এবং বিদ্রোহসমূকে দমন করা
হয়। এটি ইংল্যান্ডের দীর্ঘদিনের বিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে। রাজতন্ত্রের স্বেচ্ছাচারিতা
থেকে মুক্ত হয়ে সামরিক নিয়ন্ত্রনে ইংল্যান্ডের সর্বত্র শান্তি শৃংখলা ফিরে আসে।

পাঠত্তোর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পার্শ্বে টিক () চিহ্ন দিন।
১। ইংল্যান্ডের ক্রমওয়েলের কোন অবস্থা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে?
ক) পূর্ববর্তী অবস্থা খ) মধ্যবর্তী অবস্থা
গ) অগ্রবর্তী অবস্থা ঘ) পশ্চাৎবর্তী অবস্থা
২। ফর্ম অব এ্যাপোলজি বা আবেদন পত্রের আইন কোন রাজার সময় ইংল্যান্ডের কমন্সসভায়
পাশ হয়?
ক) দ্বিতীয় চালর্স খ) ষষ্ঠ এডোওয়ার্ড
গ) প্রথম জর্জ ঘ) প্রথম জেমস
৩। ‘পিটিশন অব রাইট’ বা আবদেন পত্রের আইন চালর্স এর কোন পার্লামেন্টে পাস করা হয় ?
ক) প্রথম খ) তৃতীয়
গ) দ্বিতীয় ঘ) চতুর্থ
৪। রাজা প্রথম চালর্সের সমর্থকদের কোন নামে অভিহিত করা হতো?
ক) টোরি খ) উইগ
গ) রাউন্ড হেডস ঘ) ক্যাভিলিয়ার
৫। ইংল্যান্ডে প্রথম গৃহযুদ্ধের সময়কাল ছিলো?
ক) ১৬৪২ - ১৬৪৬ খ) ১৬৫০ - ৫৪
গ) ১৬৬২ - ১৬৬৬ ঘ) ১৬৭০ - ১৬৭৪
৬। ক্রমওয়েল ইংল্যান্ডে কোন সরকার প্রবর্তন করেন?
ক) রাজতন্ত্র খ) যুক্তরাষ্ট্রীয়
গ) ডোমিনিয়ন ঘ) প্রজাতন্ত্র
৭। ওলিভার ক্রময়েলকে কত সালে প্রোটেকটোরেট হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়?
ক) ১৬৬১ খ) ১৬৫৫
গ) ১৬৫৩ ঘ) ১৬৫৭
৮। নৌবাণিজ্যের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠায় ক্রমওয়েলের সময় ইংল্যান্ড ইউরোপের কোনদেশের সঙ্গে
যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলো?
ক) সুইডেন খ) ওলন্দাজ
গ) পর্তুগাল ঘ) প্রাশিয়া
উত্তর : ১। (খ), ২। (ঘ), ৩। (গ), ৪। (ঘ), ৫। (ক), ৬। (খ), ৭। (গ), ৮। (খ)।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। পার্লামেন্টের সঙ্গে প্রথম জেমসের সম্পর্ক নিরুপণ করুন।
২। প্রথম গৃহযুদ্ধ এবং ক্রমওয়েলের উত্থান সম্পর্কে লিখুন।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। পার্লামেন্টের সঙ্গে প্রথম জেমসের সম্পর্ক কিরূপ ছিলো? তিনি কীভাবে পার্লামেন্টকে দমন
করতে এগিয়ে আসেন?
২। কমনওয়েলথ-এর প্রধান হিসেবে ক্রমওয়েলের কার্যাবলী আলোচনা করুন।
৩। লর্ড প্রোটেকটোরেট হিসেবে ক্রমওয়েলের অভ্যন্তরীণ এবং পররাষ্ট্রনীতি মূল্যায়ন করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]