গৌরবময় বিপ্লবের (১৬৮৮) কারণ

২। গৌরবময় বিপ্লবের (১৬৮৮) কারণ
দ্বিতীয় জেমস তাঁর ভ্রাতা দ্বিতীয় চালর্স থেকে ভিন্ন প্রকৃতির ছিলেন। তিনি ছিলেন ঘোরতর
ক্যাথলিক ধর্মবিশ্বাসী। তাঁর এই গোড়াঁমীর কারণে মাত্র তিনবছরের (১৬৮৫ - ১৬৮৮)
রাজত্বকালের মধ্যেই তিনি সিংহাসন হারান।
১৬৮৮ সালে ইংল্যান্ডে একটি যুগান্তকারী ঘটনা ঘটে। ইংল্যান্ডের পার্লামেন্ট এবং রাজতন্ত্র
দীর্ঘ সময়কাল ধরে প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার দ্ব›দ্ব চলে আসছিলো। স্পেনের আর্মাডার পতনের পর
পার্লামেন্ট রাজার অধীনতা মানতে অস্বীকার করে। রানী এলিজাবেথের মৃত্যুর পর অবস্থা
ক্রমশ খারাপ হতে থাকে। প্রথম জেমসের আমলে রাজা বা পার্লামেন্ট কেউ মাথা নত করেনি।
প্রথম চার্লসকেও এই সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। দু’টি গৃহযুদ্ধে ইংল্যান্ড ক্ষতবিক্ষত
হয়েছিলো। প্রথম চার্লসের মৃত্যুদন্ড হয়। ক্রমওয়েল এবং তাঁর পুত্র রিচার্ড প্রায় এগারো বছর

(১৬৪৭-৬০) ইংল্যান্ড শাসন করেন। তবে ক্রমওয়েলের পিউরিটানবাদী শাসন সমালোচিত
হলে রাজতন্ত্র ফিরে আসে।
১৬৬০ সালে দ্বিতীয় চালর্স সিংহাসনে বসেন এবং দ্বিতীয় চার্লসের পর দ্বিতীয় জেমস
সিংহাসনে আরোহন করেন (১৬৮৫ - ১৬৮৮)। দ্বিতীয় জেমসের মতো শক্তিশালী রাজা
ইংল্যান্ডে খুব কম ছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন এবং গৌরবময় বিপ্লবের
মাধ্যমে ইংল্যান্ডে পার্লামেন্টের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। তাঁর পতন এবং ১৬৮৮ সালের বিপ্লবের
নিন্মোক্ত কারণসমূহকে চিহ্নিত করা যায়।
১। এই বিপ্লবের অন্যতম প্রধান কারণ ছিলো ইংল্যান্ডে দ্বিতীয় জেমসের ক্যাথলিকবাদ
পুনপ্রতিষ্ঠার উদ্যোগ। তিনি ধর্মের জন্য তাঁর রাজ সিংহাসন ত্যাগ করতেও পিছপা ছিলেন না।
তাঁর তিন বছর শাসনে ক্যাথলিকবাদের পুনপ্রতিষ্ঠায় তিনি বহু কিছু করেন। দ্বিতীয় চালর্স-এর
ডিক্লারেশন অব ইনডালজেন্স দ্বিতীয় জেমস পুনপ্রবর্তনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। প্রথম পার্লামেন্ট
(১৬৮৫) রাজার প্রতি অনুগতশীল ছিলো। টোরি তাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলো। এরা রাজাকে প্রচুর
অর্থ সাহায্যও দিয়েছিলো। কিন্তু যখন দ্বিতীয় জেমস টেস্ট এ্যাক্ট প্রত্যাহার করার কথা বলেন
তখন পার্লামেন্ট তা সমর্থন দিতে অস্বীকার করে।
২। দ্বিতীয় জেমসের শান্তিপূর্ণ শাসনে দুটি ঘটনা অশান্তির সৃষ্টি করে। একটি ছিলো
এ্যারোগলের বিদ্রোহ (১৬৮৫) এবং দ্বিতীয়টি ছিলো মনমউথের ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র ।
মনমউথের মৃত্যুদন্ডকে জনগণ সবচাইতে বেশি সমর্থন করেছিলো। কারণ, এটি তাদের কলঙ্ক
ঘোচাবে বলে তাঁদের ধারণা ছিল। কেননা, জনগণ মনমউখকে ঘৃণা করতো এবং উইগরা তার
মৃত্যুদন্ডকে সমর্থন করার মাধ্যমে পুনরায় শক্তি সঞ্চয় করতে সমর্থ হয়। উইগরা দ্রæত জনপ্রিয়
হতে থাকে এবং এটিই ১৬৮৮ সালে বিপ্লবে জেমসকে অপসারণের ক্ষেত্রে সবচাইতে বড়
ভ‚মিকা পালন করে।
এছাড়াও মনমউথের বিদ্রোহের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলো তাদের বিচারের জন্য দ্বিতীয় জেমস
‘রক্তমাখা বিচার’ (ইষড়ড়ফু অংংরুব) নামে একটি বিচারালয় বা আদলত স্থাপন করেন। এই
আদালতের নিষ্ঠুরতা নির্মমতায় মানুষ শিহরিত হয়ে উঠে এবং টোরিরাও এর কর্মপন্থার নিন্দা
জানায়।
৩। ইংল্যান্ডের জনগণ জেমসের বৈদেশিক নীতি বা কর্মকান্ডে সন্ধিগ্ধ হয়ে উঠে। তারা সন্দেহ
করতে থাকে যে জেমস ফ্রান্সের রাজা চতুদর্শ লুই-এর কাছ থেকে নির্দেশ হিসেবে গ্রহণ
করেছেন। চতুদর্শ লুই ১৬৮৫ সালে এডিক্ট অব নানটিস বাতিল করেন। এর ফলে প্রায় দশ
হাজার ফরাসি প্রোটেস্টান্ট ইংল্যান্ডে ও অন্যান্য দেশে আশ্রয় নেয়। এটি সবাই বিশ্বাস করতে
থাকে যে দ্বিতীয় জেমস চতুদর্শ লুই এবং জেসুইটদের সঙ্গে মৈত্রী করে ক্যাথলিকবাদ পুনরুদ্ধার
করতে যাচ্ছে। ইংল্যান্ডের রাজা বিদেশী রাজার কাছ থেকে বুদ্ধি বিবেচনা নেবে তা ইংল্যান্ডের
জনগণ মানতে রাজি ছিলো না।

৪। দ্বিতীয় জেমস আরেকটি ভুল করেছিলেন যে ডিউক অব মনমউথ এর বিদ্রোহ দমনের জন্য
যে সৈন্যবাহিনী নিযুক্ত করা হয় তা তিনি ভেঙ্গে দিতে অস্বীকার করেন। দ্বিতীয় জেমস স্থায়ী
সৈন্যবাহিনী গঠন করলে তার খরচ নিয়ে জনগণের মধ্যে রিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছিলো।
৫। দ্বিতীয় জেমস যখন ‘এক্লেসিয়াসটিকেল কমিশন’ নামে ব্যক্তিগত অধিকার বা সুবিধা
অর্জনের জন্য একটি আদালত গঠন করেন তখন তাঁর জনপ্রিয়তা হারান । এটি ১৬৪১ সালের
আইনের বিরুদ্ধে ছিলো। এর ফলে স্টার চেম্বার, কাউন্সিল অব নর্থ ‘হাইকমিশন’ নামে সকল
বিশেষ অধিকার প্রাপ্ত আদালতে বাতিল হয়ে যায়।
৬। দ্বিতীয় জেমস যে কোনো ব্যক্তিকে যে কোনো আইনের প্রয়োগ থেকে অব্যাহতি দেবার
ক্ষমতা দাবি করেন। তিনি মনে করেন দেশের যে কোনো আইনকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা তাঁর
আছে। রাজা বলেন যে, কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তি আইন ভঙ্গ করলে তার শাস্তি হবে কি হবে না তা
হবে রাজার এখতিয়ারভুক্ত। এই ক্ষমতাবলেই টেস্ট এ্যাক্ট অগ্রাহ্য করে ধর্মাধিষ্ঠান ও
শাসনব্যবস্থায় বহু ক্যাথলিক ধর্মার্বলম্বীকে চাকুরী দেওয়া শুরু হয়। আবার ‘সাসপেনডিং
ক্ষমতা’ (ঝঁংঢ়বহফরহম চড়বিৎ) দ্বারা তিনি নিজ ইচ্ছানুযায়ী যে কোনো আইন স্থগিত রাখার
ক্ষমতা দাবি করেন এবং ক্যাথলিকদের সাহায্য করবার উদ্দেশ্য ক্যাথলিক বিরোধী আইনগুলি
স্থগিত রাখার ক্ষমতা প্রয়োগ করেন।
দ্বিতীয় জেমস তাঁর পিতার পথকে অনুসরণ করে বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ে ক্যাথলিকদের নিয়োগ
দেয়া শুরু করেন। তিনি সানডারল্যান্ডের আর্ল রবার্ট স্পেনসারকে তাঁর প্রধান পরামর্শদাতা
হিসেবে নিযুক্ত করেন। জেমস রোমান ক্যাথলিক স্যার এডওয়ার্ড হেলসকে তার একটি
রেজিমেন্টের কর্নেল নিযুক্ত করেন। তিনি কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে একজন বেনেডিক্ট
এবং যাজক ফ্রান্সিসকে এম এ ডিগ্রি দিতে বলেন। তাঁর নির্দেশে ম্যাগডেলান কলেজ
(অক্সফোর্ডের)-এর ফেলোদের একজন রোমান ক্যাথলিককে প্রেসিডেন্ট বা ‘ডীন’ হিসেবে
নিযুক্তির নির্দেশ দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাথলিক ফেলো এবং চার্চ অব ইংল্যান্ডে ক্যাথলিকদের
নিয়োগ দিলে জনগণ অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে উঠে। তার গোঁড়া সমর্থকরাও এ সময়ে তার প্রতি
ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে উঠে।
৭। ইংল্যান্ডের সর্বত্রই এ সময়ে প্রোটেস্টান্টবাদের রক্ষার জন্য জেগে উঠে। তবে
ক্যাথলিকবাদের পুনরুদ্ধারে সর্বত্র চেষ্টা করলেও ইংল্যান্ডে তখন যাদের নিয়ে তিনি একটি
শক্তিশালী রাজনৈতিক দল গড়ে তুলতে সমর্থ হবেন এমন অধিক সংখ্যক রোমান ক্যাথলিক
সমর্থক তাঁর ছিলো না। আয়ারল্যান্ডের ক্যাথলিকদের নিয়েও তিনি কোনো শক্তিশালী গ্রæপ
গড়ে তুলতে পারেননি।
৮। নিরাপত্তার নামে লন্ডনের উপকন্ঠে এবং প্রতিবেশী অঞ্চলে তিনি সৈন্যবাহিনী নিয়োগ
করেন। তবে লন্ডনবাসীর কাছে এটি একটি হাস্যকর ব্যাপার হিসেবে চিহ্নিত হয় এবং এতে
চরম বিরক্তির সৃষ্টি হয়।

৯। রোমান ক্যাথলিকদের প্রতি পক্ষপাতিত্বের প্রক্রিয়া হিসেবে ১৬৮৭ সালে প্রথম ডিক্লারেশন
অব ইনডালজেন্স ইস্যু করা হয়। এর ফলস্বরূপ রোমান ক্যাথলিক এবং ভিন্নমতাবলম্বীরা
মুক্তভাবে উপাসানা করার অধিকার অর্জন করে। এতে টোরি এবং উইগ উভয় পক্ষই উত্তেজিত
হয়ে পড়ে। তারা ভীত হয়ে পড়ে যে দ্বিতীয় জেমস ধর্মীয় সহিষ্ণুতার নামে ক্যাথলিকবাদকে
উৎসাহিত করছেন।
১০। ১৬৮৮ সালে দ্বিতীয় ইনডালজেন্স নীতি ঘোষণা করা হয়। এতে বলা হয় যে এই
‘ডিক্লারেশন অব ইনডালজেন্স’ নীতি প্রতিটি চার্চে পাঠ করতে হবে। সাতজন বিশপ রাজাকে
চার্চের এই ইনডালজেন্স নীতি থেকে পাঠ করতে অব্যাহতি দানের জন্য অনুরোধ জানান।
তাঁরা রাজাকে এই ব্যাপারে পিটিশন করেন। তবে রাজাকে বিশপদের আবেদন বা পিটিশন
করার কোনো অধিকার নেই বলে রাজা উল্লেখ করেন। এই সাত বিশপদের গ্রেফতার করা হয়
এবং তাদের টাওয়ারে রাখা হয়। তবে আদালতের বিভক্ত রায় (দুজন বিচারক রাজতন্ত্র এবং
দুজন বিচারক বিশপদের পক্ষে ছিলো) জুরিদের কাছে দেয়া হলে জুরিরা তাদের মুক্তি দেন।
বিশপদের এই মুক্তি সমগ্র ইংল্যান্ডে আনন্দ উৎসবের সৃষ্টি হয়।
৩। গৌরবময় বিপ্লবের মূল ঘটনাসমূহ
দ্বিতীয় জেমসের সংক্ষিপ্ত শাসনামলে তাঁর হঠকারী কর্মকান্ডের কারণে সবদিক থেকে তিনি
বিরুদ্ধবাদিতার সম্মুখীন হয়েছিলেন। তা সত্তে¡ও বেশির ভাগ লোকই তাকে মেনে নিয়েছিলো।
এর মূল কারণ ছিলো যে, তাঁর দুটি প্রোটেস্টান্ট কন্যা ছিলো-একজন ম্যারি এবং অন্যজন
এ্যানি। ম্যারি হল্যান্ডের রাজা তৃতীয় ইউলিয়ামের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন।
সবাই আশা করেছিলো যে জেমস এর মৃত্যুর পর তাঁর কন্যা ম্যারি এবং স্বামী উইলিয়াম
পরবর্তী রাজা হবেন। যেহেতু ভবিষ্যতের উত্তরাধিকারী হবে প্রোটেস্টান্ট রাজা তাই তারা
এতদিন এ সম্পর্কে কিছু বলে নি।
ইংল্যান্ডের মানুষজন যখন বিশপদের বেকসুর মুক্তির জন্য আনন্দ উল্লাস করছিলো তখন খবর
এলো যে জেমসের দ্বিতীয় পতœী মেরি অব মোডেনার গর্ভে একটি পুত্র সন্তান জন্ম নিয়েছে।
এটি ইংল্যান্ডবাসীর জন্য সুখবর ছিলো না। রাজার পুত্র সন্তান জন্মলাভের পর তারা শঙ্কিত হয়
এই ভেবে যে উক্ত ছেলে ক্যাথলিক শিক্ষকদের কাছে পাঠ নিয়ে গোড়াঁ ক্যাথলিক হয়ে গড়ে
উঠবে এবং এই ক্যাথলিক রাজার অধীনে তাদের দু:খ-দুর্দশার সীমা থাকবে না। এর বিরুদ্ধে
উইগ, টোরি মিলে সবাই একত্রিত হয় এবং সবাই রাজাকে উচ্ছেদ করতে উঠে পড়ে লেগে
যায়। এর ফলে উইগরা হল্যান্ডের তৃতীয় উইলিয়ামকে আমন্ত্রণ জানায়। সাতজন বিশপ মুক্তি
পেয়েছিলো ১০ জুন তারাও জেমসের পুত্র সন্তানের খবর শুনে ম্যারির স্বামী উইলিয়াম অব
অরেঞ্জকে আমন্ত্রণ করেন। কট্টর উইগ ডেভেনশায়ার এবং ড্যানবির মত গোড়াঁপন্থী টোরিরাও
আমন্ত্রণপত্রে সই করে। উইলিয়াম এবং তাঁর পতœীকে যুগ্ম রাজা ও রানী হিসেবে ঘোষণা দেয়া
হবে এই শর্তে উইলিয়াম ইংল্যান্ডে আসেন। তিনি আমন্ত্রণ পত্র গ্রহণ করেন ৫ নভেম্বর
তারিখে। সমগ্র ইংল্যান্ড তখন জেমসের বিরুদ্ধে ছিলো। তিনি কোট অব হাইকমিশন বাতিল
করেও জনগণের মন জোগাতে পারেন নি। তাঁর অনুগামী সৈন্যরা তাকে পরিত্যাগ করে এবং
যেহেতু ডাচরা ক্রমশ লন্ডন অভিমুখে এগিয়ে আসতে থাকে এবং জেমস বুঝতে সক্ষম হন যে
প্রতিরোধ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়, তাই তিনি ফ্রান্সে পালিয়ে যান (১৮ ডিসেম্বর ১৬৮৮)।

এভাবে ইংল্যান্ডের সিংহাসনে ১৬৮৮ সালে এক যুগান্তকারী ঘটনা বিনা রক্তপাতে সংগঠিত হয়
যা গৌরমময় বিপ্লব নামে খ্যাত। যৌথ শাসক হিসেবে উইলিয়াম এবং ম্যারিকে ঘোষণা করা
হয়। তারা সংবিধান মেনে চলার অঙ্গীকার করেন। এই বিপ্লব ঐশ্বরিক বা ভগবান প্রদত্ত
বিশ্বাসী স্বৈরতন্ত্রের সমাপ্তি টানে। এভাবে এটি ইংল্যান্ডে সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার
মাধ্যমে একটি নতুন যুগের সূচনা করে। এর ফলে ইংল্যান্ডে পার্লামেন্টের আধিপত্য স্থাপন
এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়।
সমগ্র দেশের প্রতিনিধি হিসেবে উইলিয়াম একটি কনভেনশন পার্লামেন্ট আহবান করেন
(১৬৮৯ সালে ২২শে জুন জানুয়ারি)। এই কনভেনশনে ‘অধিকার বিল’ (ইরষষ ড়ভ জরমযঃং)
নামে একটি বিল পাস হয়। এই বিলে জেমসের বেশির ভাগ কার্যকলাপ অবৈধ বলে বাতিল
করা হয়। কনভেনশন এমন একটি রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে বলে প্রতিশ্রæতি দেয় যেখানে
পার্লামেন্ট কর্তৃক শাসন নিয়ন্ত্রিত হবে এবং পার্লামেন্টের কাছে দায়বদ্ধ রাখার ব্যবস্থা থাকবে।
এভাবে পুরানো টোরিদের ঈশ্বর প্রদত্ত বা ভগবান প্রদত্ত ক্ষমতায় বিশ্বাসী রাজতন্ত্র বাতিল হয়
এবং একটি নিয়মতান্ত্রিক বাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। অতএব, সপ্তদশ শতাব্দীতে রাজা এবং
জনগণের মধ্যে যে দ্ব›দ্ব ছিলো তার অবসান ঘটে এবং রাজার উপর পার্লামেন্টের জয়ের
মাধ্যমে তার পরিসমাপ্তি ঘটে।
৪। গৌরবময় বিপ্লবের ফলাফল
কোনো প্রকার রক্তপাতহীন অভ্যুত্থান ছাড়াই সংগঠিত হয় বলে ১৬৮৮ সালের ইংল্যান্ডের
বিপ্লবকে গৌরবময় বিপ্লব বলে অভিহিত করা হয়। এই বিপ্লবের ফলাফল ছিল -
১। গৌরবময় বিপ্লবের ফলে ঈশ্বর প্রদত্ত রাজশক্তির মতবাদ ইংল্যান্ড থেকে চিরদিনের জন্য
বিদায় নেয়।
২। স্টুয়ার্ট রাজা এবং পার্লামেন্টের মধ্যে যে নিরবচ্ছিন্ন দ্ব›দ্ব ছিলো তার সমাপ্তি টানে ১৬৮৮
সালের গৌরবময় বিপ্লব। সপ্তদশ শতাব্দীতে রাজা এবং পার্লামেন্টের মধ্যে কে অগ্রগণ্য বা
শক্তিশালী এই প্রশ্নটিকে সামনে নিয়ে আসে। উভয় পক্ষই সর্বশক্তি দিয়ে নিজ আধিপত্য বজায়
রাখার চেষ্টা করে। ইংল্যান্ড এই দ্ব›েদ্ব গৃহযুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিলো। দ্বিতীয় জেমস আধিপত্য
ধরে রাখতে চাইলেও তিনি শেষ পর্যন্ত তা ধরে রাখতে পারেন নি, অধিকন্তু দেশ থেকে
পালিয়ে যান। ইংল্যান্ডের সিংহাসনে ম্যারি এবং তার স্বামী উইলিয়াম সিংহাসনে বসেন। এরা
দেশের আইনকে মেনে নিয়ে শাসন করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। এর ফলে পার্লামেন্টের বিজয়কে
ত্বরান্বিত করে। বিপ্লবের একশত বছর পরেও ইংল্যান্ড যে বুর্জোয়া শ্রেণী দ্বারা পার্লামেন্ট
কর্তৃক শাসিত হতো তা শুধু রাজা নন বরং নতুন উত্থিত ব্যবসায়ী এবং ভ‚-স্বামী শ্রেণীকেও
প্রতিনিধিত্ব করতে থাকে।
৩। স্টুয়ার্ট রাজাদের পরাজয়ে ইংল্যান্ডে রোমান ক্যাথলিকবাদের উত্থান বন্ধ হয়ে যায়। যদি
দ্বিতীয় জেমস ইংল্যান্ডের রাজা হিসেবে শাসন চালিয়ে যেতে পারতেন তাহলে ইংল্যান্ডে
ক্যাথলিকবাদ পুনরুদ্ধারের একটি সম্ভাবনা দেখা দিত। কিন্তু দ্বিতীয় জেমসের ফ্রান্সে আশ্রয়
নেওয়ায় সেই স্বপ্ন ধূলিস্যাৎ হয়ে যায়।

৪। স্টুয়ার্ট রাজাদের সঙ্গে যুদ্ধ ছিলো মূলত জনগণের অধিকার রক্ষার জন্য। পার্লামেন্ট ১৬৮৯
খ্রি: “বিল অব রাইটস” (ইরষষ ড়ভ জরমযঃং) বা অধিকার আইন পাশ করে। এতে উইলিয়াম ও
মেরির পরে কে ইংল্যান্ডের সিংহাসনে বসবেন তা স্থির হয়। সিদ্ধান্ত হয় -
ক) কোনো ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বী ব্যক্তি অথবা যিনি কোনো ক্যাথলিকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে
আবদ্ধ হয়েছেন এমন কেউ ইংল্যান্ডের সিংহাসনে বসতে পারবেন না।
খ) হাইকমিশন নামক বিচারালয় এবং অন্যান্য বিচারালয় যেগুলির সাহায্যে স্টুয়ার্ট রাজাগণ
জনসাধারণের নামে অত্যাচার করতেন তা বাতিল করা হয়।
গ) পার্লামেন্টের প্রতিনিধি নির্বাচন স্বাধীন ও নিরপেক্ষ হবে। পার্লামেন্টের সদস্যদের মিলিত
হওয়ার এবং তাদের বক্তৃতা দেবার স্বাধীনতা থাকবে।
ঘ) পার্লামেন্টের অনুমোদন ব্যতিরেকে স্থায়ী সৈন্যবাহিনী রাখা হবে না।
ঙ) পার্লামেন্টের অনুমোদন ভিন্ন কোনো প্রকার কর ধার্য করা আইন বিরুদ্ধ হবে।
চ) শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে অধিক অর্থদন্ড দেওয়া চলবে না।
জ) প্রয়োজন হলে প্রজা সাধারণ রাজার নিকট যে কোনো বিষয়ে আবেদন করতে পারবে।
এভাবে রাজার ক্ষমতা স্বৈরাচারী করে তুলবার পথ রুদ্ধ করে ইংল্যান্ডে নিয়মতান্ত্রিক
রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়।
৫। উইলিয়াম প্রবর্তিত বাৎসরিক বাজেট প্রস্তুতে পার্লামেন্টকে সরকারি আয়-ব্যয়ের উপর
অধিকতর ক্ষমতা দান করে।
৬। এই বিপ্লবের ফলে অরেঞ্জ পরিবারের তৃতীয় উইলিয়াম ইংল্যান্ডের সিংহাসনে আরোহন
করার ফলে ফরাসি রাজা চুর্তুদশ লুই এর ক্ষমতা খর্ব করতে সমর্থ হয়।
৭। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এই বিপ্লব অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণকে শিথিল করে। গিল্ড
ব্যবস্থা ধ্বংস প্রাপ্ত হয় এবং তাদের একচেটিয়া আধিপত্য ধরে রাখতে ব্যর্থ হয় বলে মনে
করা হয়।
৮। এই বিপ্লবের ফলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের অবস্থান শক্ত ভিতের উপর প্রতিষ্ঠিত
হয়। টেমস নদীর তীরে অবস্থিত লন্ডন ইউরোপের অন্যতম প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে
প্রতিষ্ঠা পায়।
৯। এই বিপ্লবের ফলে ইউরোপের দেশগুলির স্বৈরাচারী রাজাদের ঈশ্বর প্রদত্ত রাজক্ষমতার
বিশ্বাস ভেঙ্গে যায়। সংসদই যে সার্বভৌম শক্তি তা ইউরোপের দেশগুলির সম্মুখে প্রমাণিত
হলো। পরবর্তী কালে ফরাসি বিপ্লবের ওপর এই বিপ্লবের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।

এভাবে ১৬৮৮ খ্রিস্টাব্দে গৌরবময় বিপ্লব ইংল্যান্ডে এমন একটি সংসদীয় রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত
করতে সক্ষম হয়েছিলো যা দ্বিতীয় চালর্স এবং দ্বিতীয় জেমস থেকে গুণগতভাবেই আলাদা
চরিত্রের অধিকারী ছিল। এরপর থেকে ইংল্যান্ডের সংবিধান ক্রমশ পরিপুষ্ট হতে থাকে।
পার্লামেন্ট ১৬৮৮ সালের পর সম্পূর্ণ জনগণের অধীনে চলে আসে।
সারসংক্ষেপ
টিউডর এবং স্টুয়ার্ট-এর যুগ থেকেই ইংল্যান্ডে রাজা পার্লামেন্টের মধ্যে দ্ব›দ্ব ছিলো। দুটি গৃহযুদ্ধও এই

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]