ত্রিশবছরব্যাপী যুদ্ধে গাস্টাভাসের মূল উদ্দেশ্য কি ছিলো? গাস্টাভাসের কৃতিত্ব মূল্যায়ন করুন।
৪। রিশল্যুর পররাষ্ট্রনীতির মূল উদ্দেশ্য কি ছিল? ওয়েস্টফেলিয়া চুক্তি স্বাক্ষরের পটভ‚মি বিশ্লেষণ করুন।


পটভুমি
ত্রিশবছরব্যাপী যুদ্ধ ১৬১৮-১৬৪৮ খ্রি: দীর্ঘমেয়াদি সংঘটিত একটি অনুক্রমিক যুদ্ধ। সপ্তদশ
শতাব্দীর প্রথমভাগে ইউরোপে প্রোটেস্ট্যান্ট এবং ক্যাথলিকদের মধ্যে এই যুদ্ধ সংগঠিত হয়।
ধর্মই এই যুদ্ধের একমাত্র কারণ ছিলো তা নয়, বরং ধর্ম এবং রাজনীতি উভয় কারণে এক
জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে এটি একটি আন্তর্জাতিক যুদ্ধে পরিণত হয়। এই যুদ্ধে প্রোটেস্টান্ট
এবং ক্যাথলিক উভয়েই তাদের নিজস্ব শক্তি বজায় রেখে এগিয়ে যেতে থাকে।
১। ত্রিশবছরব্যাপী যুদ্ধের কারণ
ত্রিশবছরব্যাপী যুদ্ধের কারণ হিসেবে প্রধানত ধর্মীয় অসন্তোষকেই চিহ্নিত করা হয়। এই যুদ্ধ
প্রোটেস্টান্ট এবং ক্যাথলিকদের পারস্পরিক বিবাদের ফলে সংগটিত হয়। ষোড়শ শতাব্দীর
প্রথমদিকে জার্মানি ক্যাথলিক এবং প্রোটেস্টান্ট এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। উভয়
স¤প্রদায়ই চরম অনমনীয় ও আপোষহীন মনোভাব পোষণ করে এবং ত্মঘাতী যুদ্ধে লিপ্ত হয়।
ইউরোপ সপ্তদশ শতাব্দীতে ধর্মীয় যুদ্ধে বা দ্ব›েদ্ব ক্ষতবিক্ষত হয়েছিলো। ১৫৫৫ সালে
সম্পাদিত আগর্সবার্গের চুক্তি রোমান সাম্রাজ্যের অমীমাংসিত ইস্যুসমূহের সম্মানজনক মীমাংসা
করতে পারেনি।
প্রথমত, এই শান্তিচুক্তি কেবলমাত্র ক্যাথলিক এবং লুথারবাদীদের স্বীকৃতি দিলেও
ক্যালভিনপন্থীদের স্বীকৃতি দেয়নি। অথচ ১৬ শতাব্দীর শেষার্ধে সমগ্র ইউরোপে
ক্যালভিনপন্থীদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকে।
দ্বিতীয়ত, “এক্লেসিয়াসটিক্যাল রিজারভেশন’’ নীতি গ্রহণের মাধ্যমে চার্চের সম্পত্তিকে রাষ্ট্রায়ত্ত¡
করার যে নীতি প্রোটেস্টান্টরা সর্বত্র অগ্রাহ্য করে। দুপক্ষই এর ফলে ক্ষিপ্ত হয়ে একে অপরের
বিরুদ্ধে উন্মত্ত হয়ে উঠে।
তৃতীয়ত, এই শান্তি চুক্তিটি “রাজার ধর্মই প্রজার ধর্ম’’ নীতির উপর ভিত্তি করে গড়ে
উঠেছিলো। অর্থাৎ ইউরোপের রাজারা যে ধর্মাবলম্বী হবেন প্রজারাও হবে সেই ধর্মের
অনুসারী। যে সব রাষ্ট্রে প্রোটেস্টান্ট রাজা শাসন করতো লুথারবাদ সেই এলাকার রাষ্টীয় বা
জাতীয় ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে, আবার ক্যাথলিক রাজ্য শাসিত অঞ্চলে ক্যাথলিক ধর্ম
স্বীকৃতি পায়। এই নীতির সুবাদে রাজারা তাদের ভিন্নধর্মী প্রজাদের উপর অত্যাচার করার
সুযোগ পায়। ক্যাথলিক রাজাগণের অধীনে প্রোটেস্টান্টগণ এবং প্রোটেস্টান্ট রাজাগণের

অধীনে ক্যাথলিকগণ অত্যাচারিত হতে থাকে। এই নির্যাতন ক্যাথলিক এবং প্রোটেস্টান্ট
স¤প্রদায়ের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করে।
এভাবে জার্মানি আর্গসবার্গ চুক্তির পর থেকেই ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হয়। ধর্মীয় আন্দোলন জনজীবনে
নতুন যুগের সম্ভাবনাকে খুলে দেবার পরিবর্তে জার্মানিতে বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রট্টপের অন্ত:কলহ
মারাÍক রূপ ধারণ করে। জার্মানি এই সময় ক্যাথলিক, প্রোটেস্টান্ট এবং ক্যালভিনিস্ট তিনটি
পরস্পর বিবাদমান ধর্মালম্বী গ্রট্টপে বিভক্ত হয়ে পড়ে। তবে শুধু ক্যাথলিক এবং
প্রোটেস্টান্টদের মধ্যেই ধর্মীয় দ্ব›দ্ব বিরাজমান ছিলো না, বরং প্রোটেস্টান্ট গ্রæপসমূহের মধ্যে
অর্š দ্ব›দ্ব এবং বিরোধও ছিলো তুঙ্গে।
জার্মানির উত্তরাংশ ছিলো সম্পূর্ণভাবে প্রোটেস্টান্ট ধর্মাবলম্বী। ১৫৫৫ সালের চুক্তি
লুথারপন্থীদের স্বীকৃতি দেয়া হলেও ক্যালভিনপন্থীদের তা দেয়া হয়নি। তবে সমগ্র ইউরোপে
মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে ক্যালভিনবাদ প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। ক্যালভিনবাদীরা নব্য
জার্মানির বোহেমিয়ায়, রাইনল্যান্ড দক্ষিণ ও পশ্চিম জার্মানি এমনকি ফ্রান্সেও (হিউগিনেট)
ক্রমশ শক্তি সঞ্চয় করতে থাকে। এই দুই দলের পরস্পর দ্ব›েদ্বর সুযোগে ক্যাথলিকপন্থীরা
নিজেদের রক্ষা এবং শক্তি সঞ্চয়ের পথ বেছে নিয়েছিলো।
প্রতিসংস্কার আন্দোলন শুরু হলে ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বীগণ বিশেষত জেসুইটরা ক্যাথলিকবাদ
প্রচার করতে থাকে। দক্ষিণ জার্মানি, ব্যাভারিয়া, অষ্ট্রিয়ার হ্যাপসবার্গ এবং রাইনে ক্যাথলিক
ধর্ম পুন প্রতিষ্ঠা পায়।
“এক্লেসিয়াসটিক্যাল রিজারভেশন” নামে যে নীতি গ্রহণ করা হয় তাও ধর্ম ভিত্তিক বিদ্বেষের
কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়। এর শর্তানুযায়ী বিশপসহ যারা স্বেচ্ছায় প্রোটেস্টান্ট ধর্মগ্রহণ
করেছিলেন তাদের পদবিসহ ক্যাথলিক চার্চের সকল সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়
এবং উক্ত সম্পত্তি চার্চের অধীনে থাকবে বলে নিয়ম করা হয়। তবে এই নীতি লুথারপন্থীরা
অগ্রাহ্য করে। কিন্তু পঞ্চম চার্লস চার্চের জমিকে নিরপেক্ষ করার বিরুদ্ধে ডিক্রি দেন। এর ফলে
উভয় দলেই প্রচন্ড বিদ্বেষ এবং অস্থিরতা দেখা দেয়।
ত্রিশ বছরব্যাপী যুদ্ধ একটি ধর্মীয় যুদ্ধ হলেও অল্প কিছুদিনের মধ্যে এটি জটিল রাজনৈতিক
সংঘর্ষে পরিণত হয়। উল্লেখ্য ধর্মীয় কারণে এই যুদ্ধের সূত্রপাত হলেও এর পিছনে রাজনৈতিক
কারণও ছিল বলা যায়। ধর্ম বিষয়ে দুইটি পরস্পর বিরোধী বিভক্তি পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের
রাজনৈতিক ঐক্য বিনষ্ট করে। পবিত্র রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ফার্ডিনান্দ এই দ্ব›েদ্বর সুযোগে
জার্মানিতে স্বীয় প্রাধান্য স্থাপনের চেষ্টা করেন। আবার সুইডেনের রাজা গাস্টাভাস নিরাপত্তা
বিধানের উদ্দেশ্যে এবং বাল্টিকে সুইডেনের প্রভাব বিস্তার ও ইউরোপে প্রোটেস্টান্টদের রক্ষা
করার নামে যুদ্ধে যোগদান করেন। অপরদিকে ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী রিশল্যু স্পেন ও অস্ট্রিয়ার
হ্যাপসবার্গের প্রাধান্য খর্ব করার উদ্দেশ্য এই যুদ্ধে যোগদান করেন।
পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য রাজন্যবর্গের নেতৃত্বে দুটি পরস্পর বিরোধী জোটে বিভক্ত হয়ে পড়লে
যে কোনো মুহূর্তে উভয়ের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা তৈরি হয়। ১৬০৮ সালে

প্রোটেস্ট্যান্টরা একটি ইভানজেলিক ইউনিয়ন বা প্রোটেস্টান্ট ইউনিয়ন গঠন করে। এটি
হয়েছিলো প্যালাটিনেট এবং ক্যালভিনিস্ট রাজকুমার ফ্রেডারিখের নেতৃত্বে। এর বিরুদ্ধে ১৬০৯
সালে ক্যাথলিকরাও পবিত্র সংঘ বা হোলি লীগ নামে অনুরূপ একটি সংঘ স্থাপন করে।
ব্যাভারিয়ার ম্যাক্সিমিলানের নেতৃত্বে যুদ্ধংদেহী জোট গঠনের পরিপ্রেক্ষিতে জার্মানিতে দ্ব›দ্ব
অবশ্যাম্ভাবী হয়ে উঠে।
প্রোটেস্টান্টরা অভিযোগ করে যে চার্চ তাদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করেছিল।
যেহেতু ক্যালভিনিস্টদের কোনো ধর্মীয় মর্যাদা ছিলো না তাই তারা সোচ্চার হয়ে উঠে। ফলে
জার্মানিতে ধর্মীয় আগুন দ্রæত ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
ইউরোপ সপ্তদশ শতাব্দিতে ধর্মযুদ্ধ বা ধর্মীয় দ্ব›েদ্ব ক্ষতবিক্ষত হয়েছিলো। ১৫৪০ সাল থেকেই
পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের প্রোটেস্টান্ট এবং ক্যাথলিকদের মধ্যে সংঘাত চলে আসছিলো।
ধর্মের নামে যুদ্ধ ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, হল্যান্ডসহ সমগ্র ইউরোপে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ফ্রান্সে
প্রোটেস্টান্টবাদী ক্যালভিনরা হিউগিনট নামে পরিচিত ছিল। ১৫৭২ সালে বার্থলোমিউর দিনে
(২৪শে আগস্ট) সকল হিউগিনেট নেতা এবং হাজার হাজার প্রোটেস্টান্টকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা
করা হয়। সমগ্র ইউরোপে হিউগিনদের বিরুদ্ধে হত্যাকান্ড ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিবেশী নেদারল্যান্ড
প্রোটেস্টান্ট এবং ক্যাথলিকদের মধ্যে তীব্র সংঘাত শুরু হয়।
এ ছাড়াও প্রোটেস্টান্ট হল্যান্ড এবং স্পেনের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ চলতে থাকে। ১৫৮৮
সালে স্পেনিশ আর্মাডার পতনের পর ইউরোপে প্রোটেস্টান্ট ধর্মের অন্যতম শ্রেষ্ঠ
রক্ষাকারীদেশ হিসেবে ইংল্যান্ড আবির্ভ‚ত হয়। জার্মানিতে দ্বিতীয় রুডলফের পর
প্রোটেস্ট্যান্টদের অবস্থা আরো খারাপ হতে থাকে। ক্যাথলিকরা আগ্রাসী ভ‚মিকা গ্রহণ করে
এবং জার্মান ডায়েট বা বিধায়ক সভায় প্রোটেস্টান্ট বিরোধী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দ্বিতীয়
রুডলফের পর ফার্ডিনান্ড বোহেমিয়া আক্রমণ করলে ত্রিশবছর ব্যাপী যুদ্ধ শুরু হয়।
মূলত অনৈতিকতা সেই যুগটিকে গ্রাস করেছিলো। সাংস্কৃতিক রীতি, নীতি, নৈতিক দৃঢ়তা,
আচার আচরণ, নীতিশাস্ত্র ক্রমশ নি¤œমুখী হতে শুরু করে। রাস্তাঘাটে ডাকাতি, নরহত্যা, খুন
জখম ইত্যাদি ছিলো নিত্য নৈমত্তিক ঘটনা। রেনেসাঁস বা ধর্ম সংস্কার আন্দোলন নৈতিক
অধপতন, নিষ্ঠুরতা ও অসহিষ্ণুতাকে মুছে ফেলতে পারে নি। ধর্মসংস্কার আন্দোলনের নেতারাও
ধর্ম গ্রন্থের বাইরে কোনো কিছু চিন্তা করতে পারতো না। জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চা ততোটা অগ্রসর ছিল
না। ধর্মীয় আলোচনাগুলো ছিল বিদ্বেষপূর্ণ। এভাবে ধর্মীয় বিদ্বেষ, অনৈতিকতা এই যুগটিকে
ক্রমশ অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং অসহিষ্ণু করে তোলে। যুদ্ধের অন্যতম কারণ হিসেবে এ সবকেই
চিহ্নিত করা হয়।
যুদ্ধের তিনটি প্রধান বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়
প্রথমত, এটি বোহেমিয়ার একটি স্থানীয় দ্ব›দ্ব থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণ জার্মানিতে বিস্তার লাভ
করে। সেখানে থেকে ডেনমার্ক হয়ে ক্রমশ সমগ্র ইউরোপে বিস্তৃত হয়। এভাবে সমগ্র
ইউরোপকে যুদ্ধের আর্বতে ঢেকে ফেলে।

দ্বিতীয়ত, এই যুদ্ধ ছিলো মূলত প্রোটেস্টান্ট এবং ক্যাথলিক দ্ব›দ্ব।
তৃতীয়ত, এটি ছিলো হ্যাপসবার্গ এবং বুরবোঁ এই দুই রাজ বংশের ইউরোপীয় রাজনীতিতে
আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লড়াই। সুতরাং ত্রিশবর্ষব্যাপী যুদ্ধকে কেবলমাত্র ধর্মযুদ্ধ মনে করা ঠিক হবে
না।
২। ত্রিশবছর ব্যাপী যুদ্ধের পর্বসমূহ
ত্রিশবছরব্যাপী যুদ্ধ চারটি পর্যায়ে বিভক্ত ছিল১। বোহেমিয়া বা প্যালাটিনেট পর্ব; ২। ডেনিশ পর্ব ৩। সুইডিশ পর্ব এবং ৪। ফরাসি
পর্ব। এই
বোহেমিয়া বিদ্রোহ বা বোহেমিয়া-প্যালেটিনেট পর্যায়
ত্রিশবর্ষব্যাপী যুদ্ধের নিকটবর্তী কারণ ছিলো বোহেমিয়ার রাজধানী প্রাগের বিদ্রোহ। পবিত্র
রোমান সাম্রাজ্যের সম্রাট রুডলফের সঙ্গে তাঁর ভাই ম্যাথিয়াসেব দ্ব›েদ্বর সুযোগ নিয়ে
বোহেমিয়াবাসী ১৬০৯ সালে প্রোটেস্টান্টদের ধর্মপালনের স্বাধীনতা আদায় করে নিয়েছিলো।
১৬০৯ সালে রুডলফ বোহেমিয়ানদের একটি রাজকীয় চার্টার বা অধিকার সনদ
(ম্যাজেসটাট্সব্রিশ) প্রদান করেন। এতে প্রোটেস্টান্ট ধর্ম সম্প্রাদায়গুলি ক্যাথলিকদের
সমপর্যায়ভুক্ত ধর্মীয় অধিকারসমূহ প্রাপ্ত হয়। রুডলফের উত্তরাধিকারী ম্যাথিয়ুসকে তিনি সম্রাট
হিসাবে স্বীকার করে নিয়েছিলেন (১৬১২)। মাথিয়াস (১৬১২) চার্টারে প্রাপ্ত অধিকারসমূহ খর্ব
করতে উদ্যত হলে প্রোটেস্টান্টরা প্রতিজ্ঞা করে যে এই বৃদ্ধ রাজার মৃত্যুর পর এমন কাউকে
রাজা নিয়োগ করা হবে যিনি প্রোটেস্টান্টদের প্রতি সহানুভুতি সম্পন্ন হবেন। ১৬১৯ সালে
সম্রাট ম্যাথিয়াস মারা যাবার আগে ফার্ডিনান্ড স্টিরিয়াকে তাঁর বৈধ উত্তরাধিকারী হিসেবে
মনোনীত করে যান। কিন্তু তিনি ছিলেন গোঁড়া ক্যাথলিক।
দ্বিতীয় ফার্ডিনান্ড পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী মনোনীত হয়েই প্রাগে প্রোটেস্টান্ট
চার্চ ধ্বংস করার নিদের্শ দেন। চার্চের ধ্বংসযজ্ঞ বোহেমিয়ার প্রোটেস্টান্ট এবং চেক
অভিজাতবর্গের মধ্যে জাতীর চেতনা সৃষ্টি করে। প্রোটেস্টান্টরা সম্রাটের কাছে এর প্রতিকারের
জন্য আবেদন করে। তবে সম্রাটের কাছ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে তারা বিদ্রোহী হয়ে
উঠে। অভিজাত শ্রেণী ছিলেন ক্যালভিনিস্ট পন্থার। তারা প্রাগের রাজ প্রাসাদে গমন করেন।
সেখানে সম্রাটের অফিসারদের একটি কনফারেন্স বা সম্মেলন কক্ষে ঢুকে তাদেরকে অবরোধ
করে এবং পুরানো বোহেমীয় রীতি বা ঐতিহ্য অনুযায়ী দুর্গের জানালা দিয়ে রাজ প্রতিনিধিদের
প্রায় ৫০ থেকে ৬০ ফুট নীচে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।
এভাবে রাজপ্রতিনিধিদের ছুঁড়ে ফেলার মতো ঘটনার মধ্যদিয়ে ত্রিশবছরব্যাপী যুদ্ধের সূত্রপাত
ঘটে। ১৬১৯ সালে বোহেমিয়ার সংসদ মিলিত হয় এবং ফার্ডিনান্ডকে ক্ষমতাচ্যুত করে। তারা
ঘোষণা দেয় যে ফার্ডিনান্ড এখন থেকে বোহেমিয়ার আর রাজা নন, বরং তারা একজন নতুন
রাজা মনোনীত করবেন।

বোহেমিয়ার সংসদ প্যালাটিনেটের ইলেকটর এবং জার্মান ক্যালভিনিস্ট নেতা ফ্রেডারিখকে
(ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম জেমসের কন্যা এলিজাবেথের জামাতা) নতুন রাজা হিসেবে ঘোষণা
দিয়ে রাজসিংহাসনে বসার আমন্ত্রণ জানায়। ফার্ডিন্যান্ড যখন জানলেন যে বোহেমিয়াবাসী
প্রজারা তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে এবং রাজসিংহাসন একজন ক্যালভিনিস্টপন্থী ইলেকটর
ফ্রেডারিখের হাতে অর্পণ করা হয়েছে তখন তিনি রাগান্বিত হন এবং এই বিদ্রোহী প্রজাদের
শাস্তি দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। ফার্ডিনান্ড বোহেমিয়া থেকে ফ্রেডারিখকে উৎখাত করতে সর্বশক্তি
নিয়োগ করেন।
যুদ্ধে ফার্ডিনান্ড এবং ফ্রেডারিখ উভয়েই নিজ নিজ অবস্থান বজায় রাখেন। বিভিন্ন রুটিবিচ্যুতির
পরও প্রোটেস্টান্ট গ্রæপগুলি আশা করেছিল ইংল্যান্ড এই অবস্থায় প্রোটেস্টান্ট পক্ষকে সাহায্য
করতে এগিয়ে আসবে। কিন্তু জেমস তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেননি। তিনি স্বীয়
রাজবংশের সম্মান রক্ষার্থে তার পুত্রের সঙ্গে স্পেনের রাজকন্যা ইফানটার বিয়ের ব্যবস্থা
করেন। এ ছাড়াও ফ্রেডারিখ জার্মানির লুথারবাদী রাজন্যবর্গের কাছ থেকে সাহায্য আশা
করেছিলেন। তবে যখন এই বিষয়টি পরিষ্কার হয় যে, ইংল্যান্ড জার্মানিতে হস্তক্ষেপ করবে না
তখন লুথারবাদী রাজন্যবর্গ নিজেদের নিরপেক্ষ রাখার কথা ঘোষণা করে।
অপরদিকে দ্বিতীয় ফার্ডিনান্ড তাঁর জ্ঞাতি ভাই দ্বিতীয় ফিলিপের অধীনে স্পেনের সৈন্য বাহিনীর
সহায়তায় প্যালাটিনেট আক্রমণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন এবং বাভারিয়ার ম্যাক্সিমিলান ও
অস্ট্রিয়া বাহিনীর সহায়তায় বোহেমিয়া আক্রমণে এগিয়ে আসেন। তাঁর সৈন্যবাহিনীর নেতৃত্বে
ছিলেন জ্যানসার ক্লেস এবং ব্যারন ভন টিলি। ফ্রেডারিখ আক্রমনাÍক নীতি গ্রহণ করেন এবং
ট্রান্সসেলভানিয়ার বিদ্রোহী রাজকুমার বেথলেন ক্যাবর এর সঙ্গে একত্রিত হয়ে ভিয়েনা অভিমুখে
ছুটতে থাকেন (ডিসেম্বর ১৬১৯)। প্রাগের অদূরে মাউন্টেনের যুদ্ধে ব্যারন ভন টিলী
ফ্রেডারিখের বাহিনীর মুখোমুখি হয় এবং যুদ্ধে ফ্রেডারিখের বাহিনীকে চ‚ড়ান্তভাবে পরাজিত
করা হয়। ফ্রেডারিখ নিরাপত্তার জন্য প্রথমে হেগে, পরে ইংল্যান্ডে আশ্রয় গ্রহণ করেন। দ্বিতীয়
ফার্ডিনান্ডকে রাজা হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। ক্যাথলিকরা তাদের বিজয়ে ত্মহারা হয়ে পড়ে।
অতি অল্পসময়ের মধ্যে রাইন অঞ্চলসহ জার্মানির প্রায় সকল অঞ্চল নিজেদের অধিকারে নিয়ে
আসে।
এই বিজয়ের পর সমগ্র জার্মানিতে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ১৬১৯ - ১৬২৯ মধ্যে অস্ট্রো -
ক্যাথলিক শক্তি অভূতপূর্ব সাফল্য লাভ করতে থাকে। সম্রাটের সহযোগিতায় ম্যাক্সিমিলানকে
ব্যাভারিয়ার অধীনে নিয়ে আসেন এবং তাকে ইলেক্টর পদে অধিষ্ঠিত করান। এভাবে ক্যাথলিক
শক্তি ক্রমশ উর্ধ্বগতিতে এগিয়ে যেতে থাকে। এ ছাড়াও ১৬০৯ সালে ডাচ এবং স্পেন তাদের
পূর্বেকার দীর্ঘ যুদ্ধকে স্থগিত করে বারো বছরের মৈত্রীচুক্তি সম্পন্ন করে।
দ্বিতীয় পর্যায় : ডেনিশপর্ব
ফ্রেডারিখের পরাজয়ে ইংল্যান্ডের প্রথম জেমস এবং ইউরোপের প্রোটেস্টান্ট রার্জন্যবর্গ শষ্কিত
হয়ে পড়ে। জেমস তার জামাতা ফ্রেডারিখকে পুনরায় প্যালটিনেটের ইলেকটর করার চেষ্টা
করে ব্যর্থ হন। এটি ভিন্ন জার্মানির লুথারবাদীরাও প্রথম পর্বের এই যুদ্ধে নিরপেক্ষ নীতি

গ্রহণের মাধ্যমে দ্বিতীয় চিন্তা শুরু করেন কিভাবে প্রোটেস্টান্টদের হৃত গৌরব পুনরুদ্ধার করা
যায়।
জার্মান রাজন্যবর্গ প্রথম পর্যায়ের বোহেমিয়ার দ্ব›দ্ব বা সংঘাত থেকে নিজেদেরকে দূরে সরিয়ে
রাখলেও এই যুদ্ধে জার্মানির অনৈক্যের মধ্যে প্রোটেস্টান্ট রাজকুমাররা এগিয়ে আসেন।
অস্ট্রিয়ার হ্যাপসবার্গের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ড, হল্যান্ড এবং ঐক্যবদ্ধহীন জার্মান রাজন্যবর্গ একত্রিত
হয়। অপরদিকে ক্যাথলিক লীগের সমর্থন নিয়ে ফার্ডিনান্ড এগিয়ে যেতে থাকেন।
ক্যাথলিকদের পিছনে ক্যাথলিক, স্যাক্সনির ইলেকটর, আর্চবিশপ আলবার্ট এবং স্পেনের রাজা
ঐক্যবদ্ধ হন।
ডেনিশরা জার্মানি আক্রমন করে। অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যেহেতু ইংল্যান্ড জড়িয়ে যায় তাই এই
যুদ্ধে জেনারেল টিলি পরাজিত হবেন এটিই ভাবা হয়েছিলো। সম্রাটের অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল
ছিল না। তাই তাঁর পক্ষে নতুন সৈন্য বাহিনী গড়ে তোলা সম্ভব ছিল না। ভাগ্য তার ভাল বলা
যায়। এই সময় পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য তখন অন্য জায়গা থেকে সাহায্যপ্রাপ্ত হয়। এই সময়
এ্যালবার্ট ভন ওয়েলেনস্টিন সম্রাটকে সৈন্যবাহিনী দিয়ে সাহায্য করার প্রস্তাব দেন। সম্রাট তার
তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে এটিকে ঈশ্বরের আর্শীবাদ বলে মনে করেন। ডিউক অব
ওয়েলেনস্টিন ছিলেন বোহেমিয়ার চেক এবং অভিজাত স¤প্রদায়র্ভুক্ত। ইউরোপের সকল
অঞ্চল থেকে তিনি সৈন্য সংগ্রহ করেন। এই সৈন্য বাহিনীতে যোগ দেয় ইতালি, সুইস, স্পেন,
জার্মান, পোল, ইংরেজ, স্কট প্রোটেস্টান্ট ও ক্যাথলিকরা। ১৬২৫ সালের মধ্যেই ওয়েলেনস্টিন
প্রায় পঞ্চাশ হাজারের মত সৈন্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হন।
এরই মধ্যে চতুর্থ খ্রিস্টান মধ্য জার্মানিতে অগ্রসর হতে থাকেন। সেখানে তিনি টিলির বাহিনীর
সঙ্গে মোকাবিলা করেন লুটারে ১৬২৬ সালে। লুটারে চতুর্থ খ্রিস্টান ওয়েলেনস্টিনের যৌথ
বাহিনীর কাছে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হয়েছিলো। ওয়েলেনস্টিন বোহেমিয়া থেকে এলবা নদী
পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছিলেন এবং টিলির সঙ্গে একত্রিত হয়ে ম্যাকলেনবার্গ, পোমারনিয়া,
সলসউইগ, জাটল্যান্ড দখল করে। ডেনমার্কের কিছু অংশ জয় করলে বাল্টিক এবং উত্তর
সাগরে নৌবাণিজ্যের দুর্বলতায় তিনি সমগ্র ডেনমার্ক জয় করতে ব্যর্থ হন। ১৬২৯ সালে
স্টলসান্ড নামক শহর আবরোধ করতে গিয়ে তিনি পরাজিত হন এবং ডেনমার্ক ত্যাগ করে চলে
আসতে বাধ্য হন। ওয়েলেনস্টিন এবং খ্রিস্টান এর মধ্যে ১৬২৬ সালের শেষে ল্যুবক চুক্তি
স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির মাধ্যমে তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত অঞ্চলসমূহ ধরে রাখতে সক্ষম
হলেও পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যে তার পরিবার কর্তৃক যেসমস্ত জার্মান বিশপারী অর্জিত হয়েছিলো
তা পরিত্যাগ করতে বাধ্য হন। এভাবে ডেনিশ পর্বের সমাপ্তি ঘটে।
ডেনমার্কের পরাজয় ক্যাথলিক শক্তিকে নিরঙ্কুশ করে তুলেছিল। এখন আর সম্রাটকে চ্যালেঞ্জ
করার মত কেউ রইল না। সমসাময়িক সবাই ভাবতে শুরু করেন যে, প্রোটেস্টান্ট শক্তি
নিঃশেষ হয়ে গেছে। এই বিজয়ের পর চতুর্থ ফার্ডিনান্ড প্রোটেস্টান্টদের বিরুদ্ধে বিজয়ের
আতিশয্যে রেস্টিটিউশন এডিক্ট নামে একটি নির্দেশ জারি করেন। এই আইন দ্বারা ১৫৫৫
সালের আগসবার্গের সন্ধির পর থেকে প্রোটেস্ট্যান্টরা যে সকল ক্যাথলিক গির্জার এবং অন্যান্য
চার্চের অধীনে সম্পত্তি দখল করেছিলো তা আবার ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়ে ছিল। এ ছাড়াও

এর মাধ্যমে ক্যাথলিকবাদী এবং লুথারবাদী ছাড়া অন্য ধর্মীয় গ্রæপ মতবাদকে নিষিদ্ধ করা হয়।
এই আইন দ্বারা ক্যাথলিকবাদীরা ২টি আর্চবিশপারী, ১২টি বিশপারী, ৩০টি হ্যানশহর, ১২০টি
মঠ এবং অন্যান্য চার্চের সম্পত্তি পুনরুদ্ধার করেতে সক্ষম হয়। তবে এই এডিক্টের দুটি প্রভাব
পরিলক্ষিত হয়। প্রথমটি হলো ওয়েলেনস্টিনের অভাবনীয় সাফল্য। খ্রিস্টান জগত তাঁর প্রতি
কৃতজ্ঞ থাকবে এমন ভাবলেও যুদ্ধে দখলকৃত স্থানগুলিতে নৃশংস ও লুন্ঠন তার বিরুদ্ধে যেতে
থাকে। তাকে পদচ্যুত করা হয়, দ্বিতীয়ত; সুযোগ বুঝে গাস্টাভাস এডোলফাস প্রোটেস্টান্টদের
পক্ষে ফার্ডিনান্ড-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হল।
গ) তৃতীয় পর্যায় : সুইডিশ পর্ব ( ১৬৩০ - ১৬৩৫)
এতদিন পর্যন্ত জার্মানিতে হ্যাপসবার্গের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক এবং ধর্মীয় অসন্তোষ কেবলমাত্র
ক্যালভিনিস্টদের মধ্যেই বিরাজমান ছিলো। তবে এডিক্ট অব রেস্টিটিউশন- এর বাস্তব প্রয়োগ
ক্যাথলিকবাদের বিরুদ্ধে সকল প্রোটেস্টান্টদের দাঁড়াবার সূচনা হিসেবে চিহ্নিত করে। এটি
লুথারবাদীদের ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলে। এর পর লুথারবাদীরা ক্যালভিনিস্টদের সঙ্গে
একত্রিত হয়ে নিজেদের বিবাদ ভুলে গিয়ে ক্যাথলিকদের বিরুদ্ধে, সম্রাট এবং সাম্রাজ্যের
বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। এই অবস্থাটিই উত্তরের প্রোটেস্ট্যান্ট দেশ সুইডেনের জন্য একটি অনুক‚ল
পরিবেশ সৃষ্টি করে।
সুইডেনের রাজা গাস্টাভাস এডালফাস ছিলেন তাঁর সময়ের অন্যতম আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব। তাঁর
এই যুদ্ধে যোগদানের পশ্চাতে কেবলমাত্র প্রোটেস্টান্ট ধর্মনীতির প্রতি ভালবাসা বা আনুগত্যই
মূল কারণ ছিলো না। বলা যায় ধর্মের পাশাপাশি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়েই তিনি এই যুদ্ধে
যোগদান করেন।
প্রথমত : পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের প্রভাব বলয় যদি জার্মানির উত্তর-উপক‚লে পর্যন্ত পৌঁছাতে
সক্ষম হয় তবে এটি তাঁর নিজ দেশের অধীনস্থ অঞ্চলগুলির উপরও প্রভাব বলয় স্থাপন করতে
সক্ষম হবে। এই বিবেচনা থেকেই গাস্টাভাস সুইডেনকে ইউরোপের নেতৃত্বদানকারী দেশ
হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।
দ্বিতীয়ত : একজন গোঁড়া লুথারবাদী হিসেবে তিনি তাঁর জার্মান প্রোটেস্টান্ট অনুসারীদের
সমর্থনে সর্বাগ্রে এগিয়ে আসেন। এভাবে গাস্টাভাস পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের অর্ন্তগত
প্রোটেস্টান্টদের মুক্তিদাতা বা চ্যাম্পিয়ান হিসেবে আবিভর্‚ত হন।
এই যুদ্ধে গাস্টাভাস ফরাসি মন্ত্রী রিশুল্যুর সমর্থন এবং যুদ্ধে ফ্রান্স কর্তৃক রসদও অর্থ সাহায্য
লাভ করেন। রিশল্যু ক্যাথলিক হলেও আর্ন্তজাতিক ক্ষেত্রে প্রাটেস্টান্টদের সাহায্যের জন্য
এগিয়ে আসেন। ফ্রান্সের দিক থেকে সুইডেনকে সাহায্য করার পশ্চাতে মনোভাব ছিল মূলত
হ্যাপসবার্গ- অস্ট্রিয়া স্পেনকে পরাজিত করতে পারলে বুরবোঁ রাজবংশ সবচাইতে বেশি
লাভবান হবে এমন ধারণা।
স্ুইডিশ সৈন্যবাহিনী সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ১৬৩০ সারে জুলাই মাসে জার্মানিতে অবতরণ
করে। এটি ছিল প্রথম আধুনিক জাতীয়তাবাদী এবং প্রগতিশীল একটি সৈন্যবাহিনী।

ফ্রান্সের সাহায্যপ্রাপ্ত হয়ে গাস্টাভাস ১৬৩০ সালে পোমারনিয়া উপক‚লে অবতরণ করেন। তিনি
উত্তরের প্রধান দুর্গগুলো দখল করেন। পোমারনিয়ার পতন ঘটে, ব্রান্ডেনবার্গের উিউক জর্জ
উইলিয়াম তাঁর গুরুত্বপূর্ণ দুর্গসমূহ আতœসমর্পন করতে বাধ্য হন। তবে এই সময় জার্মান
রাজন্যবর্গ তাঁকে কোনো সাহায্য করতে অস্বীকার করেন। কারণ তাদের ভয় ছিলো যে তাদের
সাহায্য জার্মানিতে সুইডিশ আধিপত্য বিস্তার করবে। রোমান সাম্রাজ্যের হাত থেকে
পোমাবানিয়া উদ্ধার করে গাস্টাভাস ওডার পর্যন্ত অগ্রসর হন এবং ফাঙ্কফুর্ট গ্রহণ করে টিলি
এবং ওয়েলেনস্টিন এর মিলিত জোটকে তাড়িয়ে দিতে সক্ষম হন। সম্রাটের সৈন্যবাহিনী
তিনদিন অবরোধের পর এর সুরক্ষিত দুর্গ ম্যাগডেবার্গ দখল করে (২০শে মে ১৬৩১)। এই
শহরের পতনের পর সমগ্র শহরে এক ধরনের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়, সমগ্র শহরটিতে
আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়, এতে প্রায় বিশ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে।
ম্যাগডেবার্গের নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতা প্রোটেস্টান্ট রাজন্যবর্গ তথা শক্তিকে জাগিয়ে তোলে।
প্রোটেস্টান্ট রাজন্যবর্গ যারা এতদিন নিরপেক্ষ ছিলেন তারা গাস্টাভাসের পতাকা তলে
সমাবেত হতে শুরু করেন। এভাবে স্যাক্সনি এবং ব্র্যান্ডেনবার্গ গাস্টাভাসের পক্ষে যোগদান
করলে প্রোটেস্টান্ট শক্তি বৃদ্ধি পায়। উত্তরের সিংহ গাস্টাভাস এরপর আক্রমণাÍক নীতি গ্রহণ
করেন। ১৬৩১ সালে গাস্টাভাস ব্যান্ডেনবার্গ এবং স্যাক্সনির সঙ্গে একত্রিত হয়ে লিপজিগের
কাছে ব্রাইটেনফিল্ডের যুদ্ধে টিলির বাহিনীকে সম্প র্ণভাবে পরাজিত করেন। বোহেমিয়া
আক্রমণ এবং প্রাগ জয় করে গাস্টাভাস বিজয়ীর বেশে টুরিঙ্গানা এবং ফাঙ্কোনিয়া পর্যন্ত অগ্রসর
হন। সমগ্র উত্তর এবং প্রোটেস্টান্ট জার্মানি আবার স্বাধীনভাবে নি:শ্বাস নিতে থাকে।
দানিয়ুবের কাছে লেনজ নদীর সংগমস্থলে লেচফিল্ডের যুদ্ধে টিলির সৈন্যবাহিনী সম্প র্ণভাবে
পরাজিত হয়। গাস্টাভাস এই বিজয়ের পর দানিয়ুব নদী অতিক্রম করেন। তিনি আগসবার্গ
এবং মিউনিখ শহর দখল করে নেন। সম্রাটের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যায় এবং মনে হতে থাকে
ভিয়েনার পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র। যুদ্ধে টিলির মৃত্যু এবং সুইডিশবাহিনী কর্তৃক মিউনিখ
দখলের ঘটনায় শঙ্কিক হয়ে সম্রাট ওয়েলেনস্টিনকে ডাকতে বাধ্য হন। অতি অল্প সময়ের
মধ্যে ওয়েলেনস্টিন এগিয়ে আসেন। অতি অল্প সময়ের মধ্যে ওয়েলেনস্টিন আবার
পাঁচমিশালী সৈন্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হন এবং সুইডিশ সৈন্য বাহিনীকে আক্রমণ করতে
উদ্যত হন। এই দুই শ্রেষ্ঠ সমরবিদ মুখোমুখি হয়েছিলেন লিপজিগের অদূরে লুজনে ১৬৩২
সালের ৬ নভেম্বর তারিখে। সারাদিনের ভয়াবহ এবং রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ওয়েলনস্টিন তার
সৈন্যবাহিনী উঠিয়ে নিতে বাধ্য হন, সুইডিশদের বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তবে
সুইডিশদের এই বিজয় অর্জিত হয়েছিল সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে। গাস্টাভাস যুদ্ধের ময়দানে
তার অসামান্য সাহসিকতার প্রদর্শন করে যুদ্ধে নিহত হন।
তবে সুইডিশ সৈন্যবাহিনী তার অসমসাহসী নেতার মৃত্যুর পর দুর্বল হয়ে পড়লেও নাবালিকা
রানী খ্রিস্টিনার অভিভাবক ও মন্ত্রী অক্সেনট্রিয়ানা প্রোটেস্টান্টদের পক্ষে যুদ্ধ চালাতে লাগলেন।
গাস্টাভাস হর্ন এবং গাস্টাভাস বার্ন এর নেতৃত্বে যুদ্ধ চালিয়ে গেলেও গাস্টাভাস এডালফাস
সমতুল্য নেতা সুইডেন পাননি। সুইডেনে তাঁর মৃত্যুর ক্ষতি আর পূরণ করা সম্ভব হয়নি।

অপরদিকে গাস্টাভাসের মৃত্যুর পর হ্যাপসবার্গ সম্রাট বোহেমিয়ার রাজসিংহাসন দখল করতে
ওয়েলেনস্টিন উৎসাহী এমন সন্দেহে ১৬৩৪ সালে দ্বিতীয় ফার্ডিনান্ড ঈর্ষা এবং সন্দেহ প্রবণ
হয়ে সর্বোচ্চ সেনানায়কের পদ থেকে তাকে বরখাস্ত করেন। এ্যাগার নামক স্থানে যাবার পথে
কাপ্তেন জেফোরসনের পরিচালনায় সম্রাটের নিদের্শে তাকে হত্যা করা হয়।
গাস্টাভাসের মৃত্যুর পর যুদ্ধ শেষ হবার সম্ভাবনা থাকলেও তা হয়নি মূলত ফরাসিরা তাদের
স্বার্থে বা অনুক‚লে কোনো অর্জন ব্যতীত যুদ্ধ বন্ধ করতে ইচ্ছুক ছিলো না বলে। তবে বসন্তে
নউলিং জনের যুদ্ধে হ্যাপসবার্গ বাহিনী সুইডেনকে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত করে এবং
সুইডিসবাহিনী হ্যাপসবার্গের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করতে সম্মত হয়। অপরদিকে গাস্টাভাসের মৃত্যু,
ওয়েলেনস্টিনের পদচ্যুতি, সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক শক্তির ক্ষয়, প্রোটেস্টান্ট রাজন্যবর্গ এমনকি
ক্যাথলিক সম্রাটও এই সময় শান্তিচুক্তি স্থাপনে ইচ্ছা পোষণ করে। এই অবস্থায় তৃতীয় বা
সুইডিশ পর্বের সমাপ্তির দিকে এগিয়ে যায়। ১৬৩৫ সালে প্রাগে একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়
এবং সকল রাজন্যবর্গ অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়। দুর্গগুলি আগের মতই আরো চল্লিশবছর
প্রোটেস্টান্টদের অধিকারে থাকবে বলে আগসবার্গের চুক্তিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
চতুর্থ পর্ব : ফরাসি পর্যায় (১৬৩৬ - ১৬৪৮)
প্রাগের শান্তিচুক্তির পর মনে হয়েছিলো যে এটি জার্মান যুদ্ধের এটি সম্মানজনক সমাধান এনে
দিয়েছে। সবাই ভেবেছিলো যুদ্ধ হয়তোবা শেষ হয়ে গেছে এবং এতদিনপর জার্মান ভূখন্ডে
শান্তি ফিরে আসবে। তবে প্রাগের শান্তিচুক্তি জার্মানিতে শান্তি ফিরিয়ে আনলেও এটি
প্রোটেস্টান্ট জার্মানির রাজন্যবর্গের অসন্তোষ অর্জন করে এবং ফ্রান্সের কার্ডিনাল রিশল্যু এই
চুক্তি মেনে নিতে ইচ্ছুক ছিলেন না।
ফ্রান্সের এসময়কার পররাষ্ট্রনীতির মূল উদ্দেশ্য ছিলো স্পেন অস্ট্রিয়ার হ্যাপসবার্গকে ফ্রান্সের
ওপর নির্ভরশীল করে রাখা। রিশল্যু নিজ দেশে ছিলেন ক্যাথলিক ধর্মানিষ্ঠানের কার্ডিনাল।
তিনি দেশের অভ্যন্তরে ক্যাথলিক এবং বিদেশে প্রোটেস্টান্ট এই নীতি অনুসরণ করেছিলেন।
তবে প্রাগের চুক্তির পর তিনি কোথাও হ্যাপসবার্গ শক্তির পতনের সম্ভাবনা খুঁজে পাচ্ছিলেন না।
মূলত নউলিংজেনের যুদ্ধে পরাজয়ের পর প্রোটেস্টান্ট পক্ষ দুর্বল হয়ে গেলে ফ্রান্সের
রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বিফল হতে বসেছে দেখে ফরাসিরাজ ত্রয়োদশ লুই তাঁর মন্ত্রী রিশল্যু
প্রোটেস্ট্যান্ট পক্ষের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। এভাবে যখন যুদ্ধ শেষ হয়ে যাচ্ছিল তখন মনে
হচিছল রিশল্যু হ্যাপসবার্গের ক্ষমতাকে ধ্বংস করতে এগিয়ে আসেন। এভাবে ত্রিশবছরব্যাপী
যুদ্ধ প্রধানত বুরবোঁ এবং হ্যাপসবার্গ পরিবারের রাজনৈতিক দ্ব›েদ্ব পরিণত হয়।
১৬৩৫ সালে রিশল্যু প্রকাশ্যেই জার্মান যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে শুরু করে। একদিকে ফরাসি এবং
সুইডিশরা এবং অন্যদিকে আস্ট্রিয়াও স্পেনিশরা এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলো যা আরো তেরো
বছর পর্যন্ত চলে। ফ্রান্স এবং তার মৈত্রী জোটে সুইডেন ডাচ এবং অন্যান্য রাজন্যবর্গের সঙ্গে
জোটবদ্ধ হয়েও প্রথম দিকে সাফল্য লাভ করতে পারেনি। স্পেনীয় বাহিনী অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের
নিয়ে গঠিত হয়েছিলো, তাদের যোগ্য জেনারেলদের মধ্যে ছিলো ইতালিয়ান প্রিন্স
পিকোলমিনি। ১৬৩৬ সালে বিশাল স্পেনীশ সৈন্য বাহিনী ফ্রান্স আক্রমণ করে এবং প্রায়

প্যারিস দখল করার মত অবস্থা তৈরি হয়। ১৬৩৭ সালে আরেকটি স্পেনীশ বাহিনী পিরেনিজ
পার হয় এবং দক্ষিণ ফ্রান্স আক্রমণ করে। ফ্রান্স সর্বক্ষেত্রে পরাজয়ের সম্মুখীন হতে থাকে।
কিন্তু ১৬৪০ সালের পর স্পেনিশরা পিছু হটতে থাকে, ফরাসিরা অগ্রসর হতে থাকে।
ফরাসি সৈন্যবাহিনী বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড, কমটি, উত্তর ইতালি এবং স্পেন আক্রমণ করে।
এর ফলে স্পেনিশ রাজা হল্যান্ডের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের আক্রমণাতœক নীতি থেকে সরে আসতে
বাধ্য হন এবং প্রোটেস্টান্টদের বিরুদ্ধে কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হন। অপরদিকে রিশুল্যু
সৈন্যবাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে নিয়ে আসেন এবং নতুন সৈন্য নিয়োগ করে শক্তিশালী
সৈন্যবাহিনী করে গড়ে তোলেন। ডাচরা হল্যান্ডে স্পেনের শাসনের অবসান ঘটানোর জন্য
ফরাসিদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়। স্পেনের অভ্যন্তরীণ সংঘাত স্পেনীয়দের বিপুল শক্তি ক্ষয় করে
এবং ১৬৪০ সালের বিদ্রোহ থেকে বোঝা যায় যে স্পেনের পরাজয় সময়ের ব্যাপার মাত্র।
এই যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ১৬৪২ সালে রিশল্যু মারা গেলেও তার উত্তরাধিকারী কার্ডিনাল
ম্যাজারিন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন। ফরাসি সৈনাধ্যক্ষ তুরিন এবং কান্ডির সমরকুশলাতায়
রাইন নদীর দক্ষিণ তীরে ফরাসি বাহিনী অবলীলা ক্রমে অগ্রসর হতে লাগল। তারা স্পেন
অস্ট্রিয়ার সম্মিলিত ক্যাথলিক বাহিনীকে পরাজিত করতে লাগলেন। প্রিন্স নডির সামরিক
শ্রেষ্ঠত্বে রকরয়ের যুদ্ধে ১৬৪৩ সালে ফরাসিরা চ‚ড়ান্ত বিজয় অর্জন করে এবং এই বিজয়
শতাব্দীকাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
নডি এবং তুরিন এর কাছে এরপর সব যুদ্ধে অস্ট্রিয়া পরাজয় স্বীকার করে নেয়। জার্মানিতে
অস্ট্রিয়ান হ্যাপসবার্গরাও স্পেনের ভাগ্য বরণ করে নিতে বাধ্য হয়। তবে এই সময় হ্যাপসবার্গ
সম্রাট ব্যাভারিয়ায় ম্যাক্সিমিলান এবং অন্যান্য ক্যাথলিক রাজন্যবর্গের সাহায্যার্থে প্রোটেস্টান্ট
জার্মানি এবং সুইডিশদের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলে। উপসাগর অঞ্চলে সুইডেন
এবং প্রোটেস্টান্টদের সঙ্গে কিছু সময়ের জন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলার পর অস্ট্রিয়ান সম্রাট
বুঝতে সক্ষম হন যে এই যুদ্ধে জয় লাভ করা কঠিন হবে। ইতোমধ্যে দ্বিতীয় ফার্ডিনান্ডের মৃত্যু
হয় এবং তাঁর পুত্র তৃতীয় ফার্ডিনান্ড সম্রাট পদ লাভ করেন। ১৬৪৬ সালে তুরিন ম্যাক্সিমিলান
অব ব্যাভারিয়াকে পরাজিত করলে যুদ্ধ পরিসমাপ্তির সঙ্কেত বেজে উঠে। তুরিন কর্তৃক
ব্যাভারিয়া দখল নির্দেশ করে যে তাঁর অস্ট্রিয়ার হ্যাপসবার্গের প্রতিরোধ তিনি ভেঙ্গে ফেলতে
সক্ষম হবেন। পরিস্থিতির চাপে পড়ে পবিত্র রোমান সম্রাট যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটাতে রাজি হন।
একটি সমঝোতা গঠন করার লক্ষ্যে কংগ্রেস আহবান করা হয় মুনস্টার এবং ওসনামব্রæকে।
এভাবে মুনস্টার এবং ওসনামব্রæকে ১৬৪৮ সালে কিছু পারস্পরিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যা
ওয়েস্টফেলিয়া চুক্তি নামে পরিচিত। এই চুক্তি হয়েছিলো একদিকে ফ্রান্স তার মিত্রসমূহ এবং
অপরদিকে স্পেন ও অস্ট্রিয়ার সঙ্গে। এভাবে পরিস্থিতির চাপে পড়ে ফার্ডিনান্ড ওয়েস্টফেলিয়ার
সন্ধি স্বাক্ষর করে এই যুদ্ধের অবসান ঘটান। তবে স্পেন এই সন্ধিতে যোগদান করে ও পরবর্তী
আরো এগার বছর যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকে। অবশেষে ১৫৫৯ খ্রি: পিরেনিজেব সন্ধি দ্বারা ফ্রান্স
এবং স্পেনের মধ্যে যুদ্ধের অবসান ঘটে।

সারসংক্ষেপ
ইউরোপে ধর্মকেন্দ্রিক যুদ্ধের সর্বশেষ উদাহরণ হলো ত্রিশবছরব্যাপী যুদ্ধ। প্রোটেস্টান্ট বিদ্রোহের
পরপরই সমগ্র ইউরোপে ধর্মবিদ্বেষ দ্রæত ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ক্যাথলিক এবং প্রোটেস্টান্টদের মধ্যে
যেমন দ্ব›দ্ব শুরু হয় তেমনি বিভিন্ন প্রোটেস্টান্ট গ্রæপগুলোর মধ্যেও তীব্র ঘৃণা, বিদ্বেষ পরিলক্ষিত হয়।
যার ফলে সমগ্র ইউরোপে ধর্মীয় উম্মত্ততা বাড়তে থাকে। ইউরোপীয় রাজন্যবর্গ নিজ স্বার্থোদ্ধারে যখন
এই যুদ্ধে যোগদান করেন তখন নি:সন্দেহে বলা যায় যে যুদ্ধের কারণ ধর্ম থেকে রাজনীতিতে
রূপান্তরিত হয়। প্রাগের একটি ছোট ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইউরোপীয় রাজন্যবর্গ এই যুদ্ধে জড়িয়ে
পড়ে। মূলত নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির কারণে নিজ নিজ অবস্থান সংহত রেখে ইউরোপীয় রাজারা এই
যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলো। প্রোটেস্টান্ট জার্মানির উপর অস্ট্রিয়ান হ্যাপসবার্গের-এর প্রভাব অক্ষুন্ন রাখা,
ডেনমার্কের রাজার উচ্চভিলাষ, বাল্টিক অঞ্চলে সুইডেনের একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার এবং হ্যাপসবার্গকে
পরাজিত করে ফ্রান্সকে ইউরোপের শ্রেষ্ঠ শক্তিতে পরিণত করা এসব নিয়েই যুদ্ধ প্রলম্বিত হতে থাকে।
ফান্সের কর্তৃত্ব সর্বত্র প্রতিষ্ঠিত করাই ছিল কার্ডিনাল রিশুল্যুর এই যুদ্ধে অংশ গ্রহণের অন্যতম নীতি।
ধর্মান্ধতা, স্বার্থপরতা, নিজেদের উচ্চাকাংক্ষা এবং প্রাধান্য বিস্তারের প্রতিযোগিতায় ইউরোপের সকল
দেশ এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ ত্রিশবছর ধরে যুদ্ধে সমগ্র জার্মানি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়।


নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পার্শ্বে টিক () চিহ্ন দিন।
১। আগসবার্গের চুক্তি কত সালে সম্পাদিত হয়?
ক) ১৫৫৯ সালে খ) ১৫৫৩ সালে
গ) ১৫৫৫ সালে ঘ) ১৫৫৭ সালে
২। ত্রিশ বছরব্যাপী যুদ্ধের প্রধান কারণ ছিলো
ক) জার্মানির লোরেন অঞ্চলের বিদ্রোহ খ) পবিত্র রোমান সম্রাটের মৃত্যু
গ) ধর্ম ভিত্তিক বিদ্বেষ ঘ) বোহেমিয়ার রাজধানী প্রাগের বিদ্রোহ।
৩। বোহেমিয়ার সংসদ কাকে বোহেমিয়ার রাজা হিসেবে মনোনীত করে?
ক) প্যালাটিনের ইলেকটর ফ্রেডারিখ খ) স্যাভয়ের ডিউক জনক্যাসেল
গ) স্যাক্সনির ডিউক জন জর্জকে ঘ) ব্রাডেনবার্গের ডিউক জর্জ উইলিয়াম
৪। ডিউক অব ওয়েলেনস্টিন কোন জাতিভুক্ত ছিলেন ?
ক) পোলিশ খ) জার্মান
গ) স্পেনীশ ঘ) চেক
৫। গাস্টাভাস কোন সাগরকে সুইডিশ লেকে পরিণত করতে চেয়েছিলেন?
ক) আড্রিয়াটিক সাগর খ) বাল্টিক সাগর
গ) ভ‚মধ্যসাগর ঘ) ক্যাম্পিয়ান সাগর
৬। কোন দুর্গের পতনের পর জার্মানির রাজন্যবর্গ গাস্টাভাস-এর দিকে মৈত্রীর হাত বাড়িয়ে
দেয়?
ক) ম্যাগডেবার্গ খ) স্যারিল
গ) হোহেনজোলার্ন ঘ) স্যাভয়
৭। কোন যুদ্ধে গাস্টাভাস টিলির সৈন্যবাহিনীকে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত করেন?
ক) ল্যুবকের খ) ব্রাইটেনফিল্ডের যুদ্ধ
গ) উইটেনফিল্ডের যুদ্ধে ঘ) পোমারনিয়ার যুদ্ধে
৮। কোন যুদ্ধে অসীম সাহসিকতা প্রদর্শন করে গাস্টাভাস মৃত্যুবরণ করেন?
ক) ল্যুবকের যুদ্ধ খ) বোহেমিয়ার যুদ্ধ
গ) স্যাভয়ের যুদ্ধ ঘ) লুজনের যুদ্ধ

৯। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রনীতির মূল রূপকার কে ছিলেন?
ক) কার্ডিনাল রিশল্যু খ) কার্ডনাল ম্যাজারিন
গ) কার্ডিনাল সালি ঘ) কার্ডিনাল কোলবেয়ার
১০। ওয়েস্টফেলিয়া চুক্তি কত সালে সম্পাদিত হয়?
ক) ১৬৪২ সালে খ) ১৬৪৪ সালে
গ) ১৬৪৬ সালে ঘ) ১৬৪৮ সালে
উত্তর : ১। (গ), ২। (গ), ৩। (ক), ৪। (খ), ৫। (খ), ৬। (ক), ৭। (খ), ৮। (ঘ), ৯।
(ক), ১০। (ঘ)।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। ত্রিশবছরব্যাপী যুদ্ধের ধর্মীয় কারণ সংক্ষেপে লিখুন।
২। ত্রিশবছরব্যাপী যুদ্ধের রাজনৈতিক কারণ ব্যাখ্যা করুন।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। বোহেমিয়ার বিদ্রোহ কীভাবে ত্রিশবছরব্যাপী যুদ্ধের সূচনা করে। ফ্রেডারিখের পরাজয়ের
মূল কারণ গুলি চিহ্নিত করুন।
২। ডেনিশ রাজা খ্রিস্টান এর ব্যর্থতাসমূহ চিহ্নিত করুন। এডিক্ট অব রেস্টোটিউশন কেন
প্রবর্তন করা হয়? এর প্রভাব কি ছিল?
৩। ত্রিশবছরব্যাপী যুদ্ধে গাস্টাভাসের মূল উদ্দেশ্য কি ছিলো? গাস্টাভাসের কৃতিত্ব মূল্যায়ন
করুন।
৪। রিশল্যুর পররাষ্ট্রনীতির মূল উদ্দেশ্য কি ছিল? ওয়েস্টফেলিয়া চুক্তি স্বাক্ষরের পটভ‚মি
বিশ্লেষণ করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]