ইউরোপে সাত বছরব্যাপী যুদ্ধের মূল কারণগুলি আলোচনা করুন।


সাত বছরব্যাপী যুদ্ধ ১৭৫৬ সালে ইউরোপে শুরু হয়। কিন্তুযুদ্ধটি একযোগে চলেছিল ভারত
উপমহাদেশে ও উত্তর আমেরিকায়। এ যুদ্ধের একপক্ষে ছিল অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স, সুইডেন এবং
সাকসনিসহ অপর কয়েকটি জার্মান রাজ্য, অপর পক্ষে ছিল গ্রেট বৃটেন ও প্রæশিয়া। যুদ্ধের
শুরুতে রাশিয়া প্রথম পক্ষে ছিল, কিন্তুশেষ পর্যায়ে এদেশটি প্রæশিয়ার পক্ষে যোগ দেয়।
১৭৬৩ সালে প্যারিসে স্বাক্ষরিত চুক্তি মোতাবেক এ যুদ্ধের অবসান হয়।
যুদ্ধের কারণ
ইউরোপে সাত বছরব্যাপী যুদ্ধের মূলে ছিল জার্মানিতে প্রাধান্য বিস্তারের প্রশ্নে অস্ট্রিয়া ও
প্রæশিয়ার মধ্যে প্রতিযোগিতা। এদিক থেকে বিবেচনা করলে বলা যায় যে, এ যুদ্ধ ছিল অষ্ট্রীয়
উত্তরাধিকার যুদ্ধের অনুবর্তন (ঈড়হঃরহঁধঃরড়হ)। অস্ট্রীয় উত্তরাধিকার যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল অস্ট্রিয়া নিজেই। সেজন্যে যুদ্ধের অব্যবহিত পরেই সম্রাজ্ঞী মারিয়া থেরেসা
পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার লক্ষ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকেন। তিনি প্রশাসনকে কেন্দ্রিভ‚ত
করেন; কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যের উন্নতির চেষ্টা করেন, সরকারের আয় বৃদ্ধি করেন এবং একটি
শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন। একই সঙ্গে তিনি ক‚টনৈতিক ক্ষেত্রে প্রæশিয়াকে
একঘরে করার চেষ্টায় নিয়োজিত হন। রাশিয়ার সাম্রাজ্ঞী (জারিনা) এলিজাবেথ বিভিন্ন কারণে
প্রæশিয়ার রাজা মহামতি ফ্রেডারিখের উপর অসন্তুষ্ট ছিলেন। এ সুযোগে মারিয়া তার সঙ্গে
মৈত্রীর সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তাঁর চেষ্টায় সুইডেনও প্রæশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক যুদ্ধে
অংশগ্রহণে সম্মত হয়। মারিয়ার ধারণা হয় যে, ইতিপূর্বে যুদ্ধকালে বৃটেন ও হল্যান্ডের সঙ্গে যে
মৈত্রী প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা অব্যাহত থাকবে। অতএব, তিনি ফ্রান্সের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা
করেন। এক্ষেত্রে তাঁকে সাহায্য করেন তাঁর বিখ্যাত পররাষ্ট্র মন্ত্রী কৌনিট্জ।
ক‚টনৈতিক বিপ্লব
কৌনিট্জ প্রস্তাব করেন যে, ফ্রান্স যদি প্রæশিয়ার পক্ষ ত্যাগ করে অস্ট্রিয়ার সঙ্গে মৈত্রীর সম্পর্ক
প্রতিষ্ঠায় সম্মত হয় তবে ফ্রান্সের হাতে অষ্ট্রিয়ার নেদারল্যান্ড বা বেলজিয়াম ছেড়ে দেওয়া
হবে। কিন্তুফ্রান্সের রাজা পঞ্চদশ লুই এ প্রস্তাবে সম্মত হলেন না, কেননা দীর্ঘদিন যাবৎ
ফ্রান্সের বুরবোঁ রাজবংশ অষ্ট্রিয়ার হ্যাপসবুর্গ রাজবংশের বিরোধিতা করে আসছিল। উপায়ান্তর
না দেখে কৌনিট্জ লুই-এর উপপতœী ম্যাডাম প্যাম্পাডুরের শরণাপন্ন হন এবং শেষ পর্যন্ত তার
প্রভাবে লুই অস্ট্রিয়ার সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে সম্মত হন। ইতোমধ্যে ইংল্যান্ড হ্যানোভারের

নিরাপত্তা ও জার্মানিতে শান্তির নিশ্চয়তা দিয়ে প্রæশিয়ার মহামতি ফ্রেডারিখের সঙ্গে একটি চুক্তি
স্বাক্ষর করেছিল। ১৭৫৪ সালে উত্তর আমেরিকায় ও ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যে সংঘাত শুরু
হলে ইংল্যান্ড সরাসরি প্রæশিয়ার সঙ্গে মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এভাবে অসমাপ্ত অস্ট্রীয়
উত্তরাধিকার যুদ্ধে ফ্রান্স ও প্রæশিয়া যেখানে অস্ট্রিয়া ও ইংল্যান্ডের বিরোধিতা করেছিল এবার
সাত বছরব্যাপী যুদ্ধের সময় ইংল্যান্ড ও প্রæশিয়া জোটবদ্ধ হয় অস্ট্রিয়া ও ফ্রান্সের বিরুদ্ধে। এ
ঘটনা ইউরোপের ইতিহাসে ক‚টনৈতিক বিপ্লব নামে অভিহিত।
ইউরোপে যুদ্ধ
ইউরোপে যুদ্ধের সূত্রপাত হয় ফ্রেডারিখ কর্তৃক স্যাক্সনি দখলের মাধ্যমে। অতর্কিতে তিনি এ
দেশটি আক্রমণ করেন এবং রাজাকে পরাজিত করে বিপুল পরিমাণ অর্থ যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ
হিসেবে আদায় করেন এবং সৈন্য সংগ্রহ করেন। অতপর তিনি বোহেমিয়া আক্রমণ করেন,
কিন্তুঅস্ট্রীয় বাহিনী তাকে বাধা দেয় এবং তিনি প্রাগের উপর অবরোধ প্রত্যাহার করে নিজ
দেশে সেনাবাহিনী ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হন। অতপর তার শত্রæ দেশগুলো (অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স,
সুইডেন ও রাশিয়া) বিভিন্ন দিক থেকে প্রæশিয়া আক্রমণ করে। কিন্তুযৌথ আক্রমণের মুখেও
ফ্রেডারিখ আশা ছাড়লেন না। তিনি সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে সচেষ্ট
হন এবং এমন সামরিক প্রতিভার পরিচয় দেন যে, মহামতি পদবী প্রাপ্তির যোগ্যতা অর্জন
করেন। ১৭৫৭ সালে তিনি মধ্য জার্মানির রসবাকে ফরাসি বাহিনীকে পরাজিত করেন।
অতপর তিনি সাইলেশিয়ায় ফিরে আসেন এবং অস্ট্রীয় বাহিনীকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত
করেন। কিন্তুতার সেনাবাহিনী দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বৃটেন থেকে আর্থিক সাহায্য
পেলেও তাঁর পক্ষে নতুন করে সৈন্য সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। রাশিয়ার সৈন্যবাহিনী পূর্ব
প্রæশিয়ায় ঢুকে পড়ে এবং ১৭৫৯ সালে বার্লিন দখল করে।
পারিবারিক চুক্তি (ঋধসরষু ঈড়সঢ়ধপঃ)
এদিকে রসবাকে পরাজিত হওয়ার পর ফ্রান্স হ্যানোভার আক্রমণ করে; কিন্তুফ্রেডারিখের ভাগ্নে
ব্রান্সউইকের ডিউকের নেতৃত্বে পরিচালিত বাহিনী ফরাসিদেরকে পরাজিত করে। এটি এবং
উত্তর আমেরিকা ও ভারত উপমহাদেশে পরাজয় রাজা পঞ্চদশ লুইকে দারুণভাবে বিব্রত করে।
এ অবস্থায় তিনি তাঁর আত্মীয় স্পেন, সিসিলি ও নেপলসের রাজার কাছে সাহায্যের আবেদন
জানান। এভাবে ১৭৬২ সালে পারিবারিক চুক্তি (ঋধসরষু ঈড়সঢ়ধপঃ) স্বাক্ষরিত হয় এবং
স্পেন সাত বছরব্যাপী যুদ্ধে যোগদান করে। কিন্তুঅন্য একদিক থেকে প্রæশিয়া ও ইংল্যান্ডের
অবস্থান শক্তিশালী হয়। ১৭৬২ সালে রাশিয়ার সম্রাজ্ঞী এলিজাবেথের মৃত্যু হয় এবং তৃতীয়
পিটার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। তিনি ছিলেন মহামতি ফ্রেডারিখের একনিষ্ঠ ভক্ত। ক্ষমতায়
এসেই তিনি প্রæশিয়ায় অধিকৃত অঞ্চল প্রæশিয়াকে ফেরৎ দেন এবং তাঁর সৈন্যবাহিনীকে
প্রæশিয়ার পক্ষ সমর্থন করার নির্দেশ দেন। তৃতীয় পিটার সেই বছরই ক্ষমতাচ্যুত হন, কিন্তু
রাশিয়ার নতুন শাসক দ্বিতীয় ক্যাথারিন তৃতীয় পিটারের নীতি অব্যাহত রাখেন। প্রসঙ্গক্রমে
উল্লেখ্য, দ্বিতীয় ক্যাথরিন ছিলেন জার্মানির এক ক্ষুদ্র রাজ্যের রাজকুমারী এবং ফ্রেডারিখের
উদ্যোগে তৃতীয় পিটারের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। এ কারণে দ্বিতীয় ক্যাথারিন মহামতি
ফ্রেডারিখের কাছে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ ছিলেন।

প্রæশিয়া ও ইংল্যান্ডের বিজয়
স্পেন সাত বছরব্যাপী যুদ্ধে অংশ নেয় অনেক বিলম্বে। ফলে ফ্রান্স যেসব অঞ্চল হারিয়েছিল
স্পেনের পক্ষে তা উদ্ধার করা সম্ভব হলো না। অপরদিকে অস্ট্রিয়া প্রæশিয়ার হাত থেকে
সাইলেশিয়া পুনর্দখল করতে ব্যর্থ হয়। সুইডেনের সেনাবাহিনী বার বার যুদ্ধে পরাজিত হয়।
অতপর ১৭৬৩ সালে স্বাক্ষরিত হিউবার্টুসবুর্গের চুক্তির মাধ্যমে ইউরোপে সাত বছরব্যাপী
যুদ্ধের অবসান হয়। এ চুক্তির শর্তানুযায়ী মহামতি ফ্রেডারিখ স্যাক্সনি ছেড়ে দিতে সম্মত হন,
কিন্তুসাইলেশিয়া তাঁর দখলেই থাকে। কিন্তুআপাতদৃষ্টিতে কোনো পক্ষই জয়ী না হলেও
প্রকৃত বিচারে মারিয়া থেরেসা এ যুদ্ধে পরাজিত হন এবং প্রæশিয়ার হোহেনজোলার্ন রাজবংশের
মর্যাদা অনেক বৃদ্ধি পায়। প্রকৃত পক্ষে প্রæশিয়া ইউরোপের প্রথম সারির একটি শক্তি হিসেবে
আত্মপ্রকাশ করে।
উত্তর আমেরিকায় যুদ্ধ
সাত বছরব্যাপী যুদ্ধকালে ইউরোপে প্রধান দুটো পক্ষ ছিল অস্ট্রিয়া ও প্রæশিয়া, কিন্তুভারতে ও
উত্তর আমেরিকায় প্রধান দুটো পক্ষ ছিল ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড। ইউরোপে বিরোধের কারণ ছিল
জার্মানিতে প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার আকাক্সক্ষা, উত্তর আমেরিকা ও ভারতে বিরোধ ছিল ঔপনিবেশিক
সাম্রাজ্য স্থাপনের লক্ষ্যে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যে প্রতিযোগিতা।
উত্তর আমেরিকায় যুদ্ধের সূচনা হয় ১৭৫৪ সালে। এ বছর ফরাসিরা পশ্চিম পেনসিলভানিয়ায়
মনোনগাহেলা ও এলোগনি নদীর সংযোগস্থলে নির্মিত ইংল্যান্ডের একটি দুর্গ দখল করে নেয়।
ইংরেজগণ বার বার চেষ্টা করে এ দুর্গ পুনরায় দখল করতে ব্যর্থ হয়। এভাবে ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে
ইংল্যান্ডের ভাগ্যাকাশে যে দুর্যোগ দেখা দেয় তা আরও ঘনীভ‚ত হয়। ইউরোপে ইংল্যান্ডের
মিত্র প্রæশিয়া পরাজিত হয়, ভ‚মধ্যসাগরে বৃটিশ নৌ-বাহিনী পরাজিত হয়, ফ্রান্স মিনকর্ট দ্বীপ
এবং উত্তর আমেরিকায় ইংল্যান্ডের কয়েকটি দুর্গ দখল করে নেয়। ১৭৫৭ সালে অবস্থার
পরিবর্তন ঘটে। সে বছর উইলিয়াম (জ্যেষ্ঠ পিট) মন্ত্রীসভায় যোগদান করেন এবং তিনি নতুন
প্রেরণায় যুদ্ধ করতে থাকেন। অনেক স্বেচ্ছাসেবক নিয়মিত সৈন্যদের সঙ্গে যোগ দেয় এবং এর
ফলে মোট সৈন্যের সংখ্যা দাঁড়ায় পঞ্চাশ হাজারে। এ সৈন্যবাহিনী ফরাসিদের হাত থেকে
অনেকগুলো দুর্গ দখল করে এবং কিউবেক ও মন্ট্রিয়েল আক্রমণ করে। ১৭৫৯ সালে শেষোক্ত
এ দুটো অঞ্চল অধিকৃত হয়। এরপর ১৭৬২ সালে ইংল্যান্ড ওয়েষ্ট ইন্ডিজে ফরাসি অধিকৃত
অঞ্চলগুলো অধিকার করে নেয়। ইতোমধ্যে পারিবারিক চুক্তি মোতাবেক স্পেন সাত
বছরব্যাপী যুদ্ধে যোগদান করেছিল। কিন্তুস্পেনও বৃটিশ বাহিনীর কাছে পরাজিত হয় এবং
ইংল্যান্ড কিউবা ও ফিলিপিন দ্বীপ দখল করে নেয়।
ভারত উমহাদেশে যুদ্ধ
সাত বছরব্যাপী যুদ্ধকালে ভারত উপমহাদেশেও ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্সের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু
হয়েছিল। আঠার শতকের প্রথমদিক থেকে মুগল শাসকদের দুর্বলতা ও বিভিন্ন এলাকার
শাসকদের মধ্যে বিরোধের সুযোগ নিয়ে ইংরেজ ও ফরাসি বণিকগোষ্ঠী এদেশে একটি
ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য স্থাপনের লক্ষ্যে কাজ করতে থাকে। এর ফলে তাদের মধ্যে বিরোধের
সূচনা হয় এবং শীঘ্রই এ বিরোধ সংঘর্ষের রূপ ধারণ করে। প্রথম সংঘর্ষ বাধে ১৭৫০ সালে।
সে বছর ফরাসি গভর্নর ডুপ্লে কর্নাটে তাদের তাবেদার মোহাম্মদ আলীকে সিংহাসনে বসায়।

কিন্তুইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ডুপ্লে পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দেয়। তারা কর্নাটের রাজধানী
আকম্বট দখল করে এবং মোহাম্মদ আলীকে ক্ষমতাচ্যুত করে। বাংলা থেকেও খুব শীঘ্র ফরাসি
প্রভাবের অবসান হয়। ১৭৫৬ সালে বাংলার নতুন নওয়াব ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে
বিরোধ দেখা দেয় এবং ফরাসিরা নবাবের পক্ষ সমর্থন করে। শেষ পর্যন্ত পলাশী নামক স্থানে
ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও নবাবের মধ্যে এক যুদ্ধ হয় এবং সেনাপতি মীর জাফরের
বিশ্বাসঘাতকতার কারণে বাংলার নবাব পরাজিত হয়। অতপর ইংরেজদের তাবেদার মীর
জাফর বাংলার মসনদে বসেন। ইতোমধ্যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রবার্ট ক্লাইভ বাংলায়
ফরাসি কুঠি চন্দননগর দখল করেছিলেন। এবার পলাশী যুদ্ধের পর ১৭৬১ সালে অপর একটি
ফরাসি কুঠি মন্ডিচেরী দখল করে নেয়। এভাবে উপমহাদেশের পূর্ব উপক‚লবর্তী অঞ্চলে বৃটিশ
প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্যারিস চুক্তি
১৭৬৩ সালে প্যারিসে স্বাক্ষরিত এক চুক্তির মাধ্যমে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও স্পেনের মধ্যে যুদ্ধের
অবসান হয়। এ চুক্তি মোতাবেক (১) ইংল্যান্ড ফ্রান্সের কাছ থেকে সেইন্ট লরেন্স উপত্যকার
সবটা, মিসিসিপি নদীর পূর্বতীরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের গ্রেনাডা দ্বীপ এবং
স্পেনের কাছ থেকে ফ্লোরিডা লাভ করে। (২) স্পেন ইংল্যান্ডের কাছ থেকে কিউবা বা
ফিলিপিন দ্বীপ ফেরত পায়। এছাড়া ফ্রান্স পশ্চিম লুইজিয়ানা স্পেনের হাতে ছেড়ে দেয়।
এভাবে নিউফাউন্ডল্যান্ড উপক‚লে দুটো দ্বীপ ওয়েস্ট ইন্ডিজে কয়েকটি ক্ষুদ্র দ্বীপ ও গায়ানা
ব্যতীত আমেরিকার আর কোনো অঞ্চল ফরাসিদের অধিকারে থাকলো না। (৩) ভারত
উপমহাদেশে ফ্রান্সকে তার বাণিজ্য কুঠিগুলো ফেরত দেয়া হয়, কিন্তুএসব কুঠিতে দুর্গ নির্মাণ
ও সৈন্য রাখা নিষিদ্ধ করা হয়। অর্থাৎ ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ফরাসি
প্রতিযোগিতার অবসান ঘটে।
যুদ্ধের ফলাফল
সাত বছরব্যাপী যুদ্ধ ইউরোপ, তথা সমগ্র বিশ্বের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। প্রথমত, এ
যুদ্ধের ফলে ইউরোপের একটি বড় শক্তি হিসেবে প্রæশিয়ার আবির্ভাব ঘটে। দ্বিতীয়ত, ইংল্যান্ড
শ্রেষ্ঠ ঔপনিবেশিক রাস্ট্র হিসেবে আÍপ্রকাশ করে। আমেরিকায় ইংল্যান্ডের অর্জনগুলো বেশি
দিন স্থায়ী হয় নি। কেননা মাত্র বিশ বছর পরেই আমেরিকার তেরটি উপনিবেশ স্বাধীনতা লাভ
করে। কিন্তুভারতে ইংরেজদের অবস্থান ক্রমশ শক্তিশালী এবং সম্প্রসারিত হয় এবং ভারত
সাম্রাজ্য প্রায় দুশ বছর টিকে থাকে। তৃতীয়ত, পরোক্ষভাবে এ যুদ্ধ আমেরিকার স্বাধীনতা
সংগ্রামের সূচনায় সহায়ক ভ‚মিকা পালন করে। কেননা যুদ্ধে ইংল্যান্ডের যে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়
তার জন্যে তেরটি উপনিবেশে নতুন করে কর ধার্য করা হয় এবং এ ঘটনা থেকেই শেষ পর্যন্ত
এসব উপনিবেশে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়।

সারসংক্ষেপ
সাত বছরব্যাপী যুদ্ধ একযোগে চলেছিল ইউরোপ, উত্তর আমেরিকায় এবং ভারত
উপমহাদেশে। এ যুদ্ধের এক পক্ষে ছিল ইংল্যান্ড ও প্রæশিয়া এবং অপরপক্ষে ছিল ফ্রান্স,
অস্ট্রিয়া, সুইডেন এবং স্যাক্সনিসহ কয়েকটি জার্মান রাজ্য। ১৭৬৩ সালে প্যারিস চুক্তির
মাধ্যমে এ যুদ্ধের অবসান হয়। এ যুদ্ধ পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
কেননা সাত বছরব্যাপী যুদ্ধে জয় লাভের ফলে ইংল্যান্ডের শ্রেষ্ঠতম ঔপনিবেশিক রাস্ট্র
হিসেবে আতœপ্রকাশ ঘটে এবং অপর দিকে প্রæশিয়া ইউরোপের একটি বড় শক্তি হিসেবে
স্বীকৃতি পায়।

পাঠোত্তর মূল্যায়ন
ক. নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশ্বে টিক () চিহ্ন দিন।
১। অস্ট্রিয়ার রাজবংশের নাম কি ছিল?
(ক) হোহেনজোর্লান (খ) হ্যাপসবুগ
(গ) হ্যানোভার (ঘ) বুরবোঁ
২। কৌনিট্জ কে ছিলেন?
(ক) ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী (খ) প্রæশিয়ার অর্থমন্ত্রী
(গ) ইউরোপের একজন বিখ্যাত দার্শনিক (ঘ) অস্ট্রিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী
৩। পারিবারিক চুক্তি কত সালে স্বাক্ষরিত হয়?
(ক) ১৭৫৯ সালে (খ) ১৭৬০ সালে
(গ) ১৭৬১ সালে (ঘ) ১৭৬২ সালে
৪। স্পেন কোন দেশের কাছ থেকে ফিলিপিন ফেরৎ পায়?
(ক) প্রæশিয়া (খ) ইংল্যান্ড
(গ) অস্ট্রিয়া (ঘ) ফ্রান্স
খ. সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। পারিবারিক চুক্তি বলতে কি বুঝায়?
২। সাত বছরব্যাপী যুদ্ধকালে ভারত উপমহাদেশে ইংরেজ-ফরাসি দ্বন্দে¡র বিবরণ দিন।
গ. রচনামূলক প্রশ্ন
১। ইউরোপে সাত বছরব্যাপী যুদ্ধের মূল কারণগুলি আলোচনা করুন।
২। ক‚টনৈতিক বিপ্লব ব্যাখ্যা করুন।
৩। প্যারিস চুক্তির প্রধান ধারাগুলির বর্ণনা দিন।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের উত্তর
১। খ, ২। ঘ, ৩। গ, ৪। খ

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]