ধর্ম, শিক্ষা ও বিচার বিভাগে প্রবর্তিত দ্বিতীয় ফ্রেডারিখের সংস্কারগুলি আলোচনা করুন।

● প্রæশিয়ার মহামতি ফ্রেডারিখের সংস্কারগুলো বর্ণনা করতে পারবেন;
● ফ্রেডারিখের বৈদেশিক নীতি আলোচনা করতে পারবেন।
ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে জার্মানি তিন শতেরও বেশি রাজ্যে বিভক্ত ছিল। এগুলোর মধ্যে অস্ট্রিয়া
ও প্রæশিয়া ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী। এদুটো দেশ যথাক্রমে হ্যাপসবুর্গ ও হোহেনজোর্লান
রাজবংশের শাসনাধীন ছিল। প্রæশিয়ার রাজাদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিলেন ফ্রেডারিখ
দ্বিতীয় উইলিয়াম বা মহামতি ফ্রেডারিখ। তিনি তাঁর পিতা ফ্রেডারিখ প্রথম উইলিয়ামের মৃত্যুর পর
১৭৪০ খ্রিস্টাব্দে প্রæশিয়ার সিংহাসনে বসেন এবং দীর্ঘ ৪৬ বছর রাজকার্য পরিচালনা করেন।
মহামতি ফ্রেডারিখের বাল্যকাল
বাল্যকালে ফ্রেডারিখ শিল্প-সাহিত্য ও দর্শনের প্রতি আকৃষ্ট হন। ফরাসি দেশীয় যে শিক্ষকের উপর
তার পড়াশুনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তিনি রাজকুমারকে ফরাসি সাহিত্য ও দর্শনের অনুরাগী হতে
অনুপ্রাণিত করেছিলেন। ভলতেয়ারের প্রতি ফ্রেডারিখের ভক্তি ছিল অপরিসীম। প্রকৃতপক্ষে তাঁর
উদ্দেশ্য ছিল দ্বিতীয় ভলতেয়ারে পরিণত হওয়া। এলক্ষ্যে তিনি ফরাসি ভাষায় কবিতা রচনায় এবং
অন্যান্য লেখায় হাত দেন। কিন্তুফ্রেডারিখ প্রথম উইলিয়াম এগুলো মোটেই পছন্দ করতেন না।
তিনি চেয়েছিলেন তাঁর ছেলে সমরবিদ্যায় পারদর্শী হউক এবং শাসনকার্যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করুক।
এলক্ষ্যে তিনি পুত্রকে সর্বদা উপদেশ দিতেন এবং কখনও কখনও তাঁর হাত থেকে পুস্তক কেড়ে
নিয়ে তা পুড়িয়ে ফেলতেন। প্রকাশ্যে তিনি পুত্রকে বেত্রাঘাত করতেও দ্বিধা করেন নি। পিতার
অত্যাচারের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যে যুবক ফ্রেডারিখ সেনাবাহিনীতে কর্মরত কেটে নামক
এক বন্ধুর সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। কিন্তুএ পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যায় এবং তাদের
উভয়কে বন্দি করা হয়। একটি সামরিক আদালতে কেটের বিচার হয় এবং তাকে কারাদন্ড দেওয়া
হয়। কিন্তুরাজা তার মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন। এ আদেশ কার্যকর করা হয় এমন জায়গায় যাতে
ফ্রেডারিখ দ্বিতীয় উইলিয়াম ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করতে পারেন। অতপর তিনি পিতার প্রতিটি আদেশ
মেনে চলবেন এরূপ প্রতিজ্ঞা করলে রাজকুমারকে মুক্তি দেওয়া হয়। প্রতিজ্ঞা মতো ফ্রেডারিখ
দ্বিতীয় উইলিয়াম শাসনকার্যে অভিজ্ঞতা অর্জনের বিষয়ে যথার্থই উৎসাহী হন এবং পিতা-পুত্রের
সম্পর্ক উন্নত হয়। মৃত্যুকালে ফ্রেডারিখ প্রথম উইলিয়াম বলতে পেরেছিলেন, “ঙয এড়ফ, ও ফরব

পড়হঃবহঃ, ংরহপব ও যধাব ংড় ড়িৎঃযু ধ ংড়হ ধহফ ংঁপপবংংড়ৎ.” (হে ঈশ্বর, আমার মৃত্যু স্বার্থক হচ্ছে
যেহেতুআমার এমন একজন যোগ্য সন্তান ও উত্তারাধিকার রেখে যাচ্ছি যে আমার মত।)
প্রজাহিতৈষী শাসক
মহামতি ফ্রেডারিখ ছিলেন প্রজাহিতৈষী স্বৈরতন্ত্রী শাসকদের মধ্যে অন্যতম। প্রকৃতপক্ষে, এ ধরনের
শাসনের অন্যতম প্রবক্তা ও তাঁর গুরু ভলতেয়ার কয়েক বছর ধরে ফ্রেডারিখের অতিথি ছিলেন।
শেষ পর্যায়ে অবশ্য বিভিন্ন কারণে তাদের সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠে এবং ভলতেয়ার পালিয়ে যান।
ফ্রেডারিখ তাঁর শাসননীতি সম্পর্কে একাধিকবার ঘোষণা করেন “শাসকের জন্যে জনসাধারণ নয়,
জনসাধারণের জন্যে শাসক। ভলতেয়ারকে তিনি বলেন, “আমার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে এদেশ থেকে
অজ্ঞানতা ও কুসংস্কার দূর করা\\ জনগণকে যতটা সম্ভব সুখী করা।” বিশেষভাবে সপ্তবর্ষব্যাপী
যুদ্ধের পরবর্তীকালে তিনি এ লক্ষ্য অর্জনে কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন। প্রত্যুষে ঘুম থেকে উঠে
তিনি সারাদিন শাসনকার্য পরিচালনায় ব্যাপৃত থাকতেন এবং সকল বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ-খবর
রাখতেন। তিনি এক বন্ধুকে লিখিত পত্রে বলেন, “তুমি সত্যই বলেছ যে, আমি কঠোর পরিশ্রম
করি। প্রকৃতপক্ষে আমি বেঁচে থাকার জন্যেই পরিশ্রম করি। কেননা আলস্যের ন্যায় আর কিছুই
মৃত্যুর সমকক্ষতা দাবি করতে পারে না।” এ ধারণার বশবর্তী হয়ে তিনি নিজে অপরিসীম পরিশ্রম
করতেন এবং রাষ্ট্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে অনুরূপ পরিশ্রমী হতে বাধ্য করতেন।
শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি
শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতির জন্যে মহামতি ফ্রেডারিখ তাঁর পূর্বপুরুষদের অনুসৃত বণিকবাদ
(গবৎপধহঃরষরংস) নীতি অবলম্বন করেন। তিনি বলেন, “শিল্প ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যে নীতি
অনুসরণ করতে হবে তা হলো দেশ থেকে স্থায়ীভাবে যেন অর্থ (সড়হবু) বিদেশে চলে না যায়
তার জন্যে ব্যবস্থা করা।” আর এ লক্ষ্য অর্জিত হতে পারে ইতিপূর্বে যেসব পণ্য আমদানি করা
হতো তা দেশে উৎপাদনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এ লক্ষ্যে তিনি বিদেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যের
উপর অধিক হারে শুল্ক ধার্য করেন, নতুন শিল্প স্থাপনে সহায়তা করেন এবং অর্থনৈতিক কর্মকাÐের
উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। তবে তাঁর অনেত পরিকল্পনাই সফল হয় নি। উদাহরণস্বরূপ
কফি আমদানির উপর উচ্চহারে শুল্ক ধার্যের কথা উল্লেখ করা যায়। এ সিদ্ধান্ত কফি সেবনকারীরা
স্বভাবতই পছন্দ করে নি এবং ফলে চোরাপথে কফি আমদানি শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত মহামতি
ফ্রেডারিখ এ শুল্ক প্রত্যাহার করেন। কিন্তুসামগ্রিক বিচারে একথা অনস্বীকার্য যে, তাঁর শাসন
আমলে প্রæশিয়া শিল্পে উন্নত হয় এবং ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হয়।
কৃষি উন্নয়ন
মহামতি ফ্রেডারিখ কৃষি উন্নয়নের লক্ষ্যে কতিপয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধের সময়
যেসব কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তিনি তাদের মধ্যে বিনামূল্যে শস্যবীজ ও জমি চাষের জন্যে গবাদি
পশু বিতরণ করেন, তাদের ঘরবাড়ি মেরামতের ব্যবস্থা এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের কর
লাঘব করেন। তিনি ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে লোকজনকে বসতি স্থাপনের জন্যে প্রæশিয়ায়
আসার আমন্ত্রণ জানান এবং তাঁর আমন্ত্রণে প্রায় তিন লক্ষ বিদেশী সাড়া দেয়। ফলে দেশে আবাদী

জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। তিনি সামন্তপ্রভুও ভ‚-স্বামীদেরকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ফসল ফলাতে
উৎসাহিত করেন। কিন্তু‘জ্ঞানদীপ্তম্ব এবং ‘প্রজাহিতৈষীম্ব বলে গর্ব করলেও ভ‚মিদাসদেরকে মুক্তি
দেয়ার ব্যাপারে তিনি উৎসাহী ছিলেন না। এছাড়া দুই লক্ষ সদস্য বিশিষ্ট বিরাট সেনাবাহিনীর
ভরণ-পোষণের জন্যে কৃষকদের উপর উচ্চ হারে কর ধার্য করেন। অবশ্য তিনি নিয়ম করেন যে,
যেসব চাষী সরকারি জমি চাষ করতো তাদেরকে সপ্তাহে চার দিনের বেশি শ্রম দিতে হবে না।
বিচার বিভাগে সংস্কার ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে সহনশীলতা
মহামতি ফ্রেডারিখ বিচার বিভাগে অনেক সংস্কার প্রবর্তন করেন। বিশেষ কতগুলো ক্ষেত্র ব্যতীত
তদন্তকার্যে নির্যাতনের ব্যবস্থা নিষিদ্ধ করা হয়, অদক্ষ ও দুর্নীতি পরায়ণ বিচারকদেরকে বরখাস্ত
করা হয়, সারাদেশে মামলার জন্যে একই হারে ফি ধার্য করা হয় এবং দ্রæত বিচারকার্য সম্পন্ন করার
জন্যে ব্যবস্থা গৃহীত হয়। এছাড়া জনগণের সুবিধার্থে দেশে প্রচলিত সকল আইনের সংকলন সহজ
ভাষায় প্রকাশ করা হয়। মোটের পর মহামতি ফ্রেডারিখের শাসনকালে বিচার বিভাগ দক্ষতা ও
সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে। ধর্মীয় বিশ্বাসের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন ইউরোপের সবচেয়ে
সহনশীল শাসক। তিনি ঘোষণা করেন, “আমার রাজ্যে সকল ধর্মকে সহ্য করা হবে এবং প্রত্যেকে
নিজ নিজ উপায়ে পরকালে মঙ্গলের পথ অনুসরণ করতে পারবে।” দীর্ঘ ৪৬ বছর রাজত্বকালে তিনি
এ নীতি থেকে কখনও বিচ্যুত হন নি।
রোমের পোপ জেসুইট সংঘের সদস্যদেরকে নির্মূল করার জন্যে যে ঘোষণা জারি করেন ফ্রেডারিখ
সে ঘোষণাকে প্রæশিয়ায় কার্যকর করতে অস্বীকৃতি জানান। ফলে ফ্রান্স, পর্তুগাল এবং স্পেনের মত
ক্যাথলিক রাষ্ট্র থেকে বহিষ্কৃত জেসুইটগণ প্রæশিয়ায় আশ্রয় নিতে পেরেছিল। তিনি ঘোষণা করেন,
“যদি তুর্কিরা প্রæশিয়ায় বসতি স্থাপন করতে চায় আমি তাদেরকে মসজিদ তৈরি করে দেবো। বলার
অপেক্ষা রাখে না যে, এ ঘোষণায় সকল গোষ্ঠীর খ্রিস্টান বিস্মিত, এমনকি আহত হয়েছিল। তবে
সকল ধর্মের মানুষকে স্বাধীনতা থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছিল। তাছাড়া কোন বিদেশী ইহুদী
প্রæশিয়ায় বসতি স্থাপনের ইচ্ছা প্রকাশ করলে তার কাছ থেকে উচ্চ হারে অর্থ আদায় করা হতো।
মহামতি ফ্রেডারিখের শাসন আমলে বাক-স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দেয়া হয়েছিল। তিনি
বলেছিলেন সংবাদপত্রকে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত নয়। ধর্মের সমালোচনার ক্ষেত্রে সংবাদপত্র যতটা
স্বাধীনতা ভোগ করতো অন্যান্য ক্ষেত্রে ততটা করতো না। ‘জ্ঞানদীপ্তম্ব-এর প্রভাবে মহামতি
ফ্রেডারিক ধর্ম সম্পর্কে সন্দিহান ছিলেন। অতএব ধর্মের বিরূপ সমালোচনায় তাঁর আপত্তি ছিল না।
শিক্ষা সংস্কার
শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে ফ্রেডারিখ সজাগ ছিলেন। তিনি বলেন, “যুব সমাজের শিক্ষার গুরুত্ব
সরকারকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে। তিনি আরও বলেন, “মানুষের বয়স যতই বৃদ্ধি পায় ততই
সে উপলব্ধি করে শিক্ষার গুরুত্বকে অবহেলা করলে কি ক্ষতি হয়।” কিন্তুএরূপ উপলব্ধি থাকলেও
প্রাইমারি শিক্ষা প্রসারের জন্যে কিছুবিদ্যালয় স্থাপন ব্যতীত শিক্ষার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য তেমন
কোনো সংস্কার প্রবর্তন করতে পারেন নি। এর প্রধান কারণ ছিল অর্থাভাব। বিরাট সেনাবাহিনীর
ভরণ-পোষণের জন্যে ততোটা অর্থের প্রয়োজন হয়েছিল যে প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষাক্ষেত্রে
বরাদ্দের পরিমাণ ছিল খুবই কম। উচ্চ শিক্ষা বিকাশের জন্যেও প্রয়োজন মতো অর্থের যোগান দেয়া
সম্ভব হয় নি।

রাজ্য বিস্তার
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে বাল্যকাল থেকেই শিল্প-সাহিত্য, সঙ্গীত ও দর্শনের প্রতি দ্বিতীয়
ফ্রেডারিখের উৎসাহ ছিল প্রচুর। শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পরেও তার এ উৎসাহ অব্যাহত
ছিল। কিন্তুএকই সঙ্গে তাঁর রাজ্যের সীমানা সম্প্রসারণে ছিল অসীম আগ্রহ। এজন্যে তিনি বিরাট
সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন এবং দুটো যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এ দুটো যুদ্ধ হচ্ছে অস্ট্রিয়ার
উত্তরাধিকার যুদ্ধ (১৭৪০-৪৮) ও সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধ (১৭৫৬-৬৩)। এ দুটো যুদ্ধের কারণ ও
ফলাফল ইতোপূর্বে বিস্তারিত আলোচিত হয়েছে। এ পাঠে এসব যুদ্ধে ফ্রেডারিখের ভ‚মিকা সংক্ষেপে
বর্ণনা করা হলো।
অষ্ট্রিয়ার উত্তরাধিকার যুদ্ধ
প্রæশিয়ার হোহেনজোলার্ন বংশীয় শাসকবর্গ দীর্ঘদিন যাবত অস্ট্রিয়ার অধীন সাইলেশিয়া দাবি করে
আসছিল। এবার ১৭৪০ সালে অস্ট্রিয়ার সম্রাট ষষ্ঠ চার্লসের মৃত্যুর পর দ্বিতীয় ফ্রেডারিখ ঘোষণা
করেন, “সব কিছুই প্রস্তুত রয়েছে, এবার শুধু দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পালা। এ
পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্যে তিনি যুদ্ধ ঘোষণা না করেই সাইলেশিয়া আক্রমণ করেন। এভাবে
শুরু হয় অস্ট্রিয়ার উত্তরাধিকার যুদ্ধ। চার্লসের কন্যা মারিয়া থেরেসা যুদ্ধের জন্যে মোটেই প্রস্তুত
ছিলেন না। ফলে অতি সহজেই প্রæশিয় বাহিনী জয়ী হয় এবং চৌদ্দ হাজার বর্গ মাইল আয়তন
বিশিষ্ট সাইলেশিয়া দখল করে। ১৭৪২ সালে ফ্রেডারিখ এ যুদ্ধ থেকে সরে দাঁড়ান। ১৭৪৮ সালে
যে চুক্তির মাধ্যমে এ যুদ্ধের অবসান হয় তাতে প্রæশিয়া কর্তৃক সাইলেশিয়া দখলের ঘটনাকে স্বীকৃতি
দেয়া হয়।
সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধ
কিন্তুমারিয়া থেরেসা কোনো মতেই অস্ট্রিয়ার উত্তরাধিকার যুদ্ধে পরাজয় (বিশেষ করে সাইলেশিয়া
হারানোর কথা) ভুলতে পারলেন না। ফলে সাইলেশিয়া ও অন্যান্য কয়েকটি প্রশ্নকে কেন্দ্র করে
আট বছর পর সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। এ যুদ্ধ একই সময়ে চলেছিল ইউরোপ, আমেরিকা
ও ভারত উপমহাদেশে। সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধে একমাত্র ইংল্যান্ড প্রæশিয়ার পক্ষে ছিলেন। ফ্রেডারিখ
কর্তৃক স্যাক্সনি দখল দিয়ে যুদ্ধের সূচনা হয়। অতপর তিনি বোহেমিয়া আক্রমণ করেন, কিন্তুদেশটি
দখল করতে ব্যর্থ হন। পরের বছর (১৭৫৭ সাল) প্রæশিয়া চতুর্দিক থেকে রাশিয়া, সুইডেন, অস্ট্রিয়া
ও ফ্রান্স কর্তৃক আক্রান্ত হয়। দেশের এ দুর্দিনে ফ্রেডারিখ এমন সামরিক প্রতিভার পরিচয় দেন যার
ফলে তিনি ‘মহামতিম্ব উপাধিতে ভ‚ষিত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন। তিনি অস্ট্রিয়া ও ফরাসি
বাহিনীকে পরাজিত করেন, কিন্তুএতে তাঁর সেনাবাহিনী ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে রাশিয়া
১৭৫৯ সালে পূর্ব প্রæশিয়া ও বার্লিন দখল করে। কিন্তুশেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সাহায্যেই ফ্রেডারিখ
রক্ষা পান। ১৭৬২ সালে রাশিয়ার সম্রাজ্ঞী এলিজাবেথ মৃত্যুবরণ করেন এবং রাশিয়ার সিংহাসনে
বসেন তৃতীয় পিটার। তিনি ছিলেন মহামতি ফ্রেডারিখের ভীষণ ভক্ত। তাই সিংহাসনে বসেই তিনি
রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সাহায্যে সেনাবাহিনীকে অধিকৃত অঞ্চলগুলো ছেড়ে দিয়ে ফ্রেডারিখ
স্যাক্সনিতে তাঁর দখল অব্যাহত রাখতে সমর্থ হন। ১৭৬৩ সালে স্বাক্ষরিত প্যারিস চুক্তির মাধ্যমে
সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধের অবসান হয়। এ সন্ধির শর্তানুযায়ী ফ্রেডারিখ স্যাক্সনি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন,
কিন্তুসাইলেশিয়া তাঁর দখলে থাকে।

মূল্যায়ন
মহামতি ফ্রেডারিখ ১৭৮৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি যখন সিংহাসনে আরোহন করেন তখন
প্রæশিয়ার জনসংখ্যা ছিল বিশ লক্ষ। তাঁর মৃত্যুকালে প্রæশিয়া ছিল চল্লিশ লক্ষ লোকের আবাস ভ‚মি।
এ থেকেই প্রমাণিত হয় তাঁর রাজত্বকালে প্রæশিয়ার আয়তন কতটা বৃদ্ধি পেয়েছিল। সামগ্রিক ভাবে
জার্মানির স্বার্থের প্রশ্ন তাঁর চিন্তা চেতনায় প্রাধান্য পায় নি। জার্মান ভাষায় তিনি লেখেন নি, এ
ভাষায় তিনি খুব একটা কথাও বলতেন না। হার্ডার, কান্ট, গ্যেটে প্রমুখ জার্মান লেখক সম্পর্কে তার
কোনো উঁচুধারণা ছিল না, তিনি ছিলেন ফরাসি ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও দর্শনের ভক্ত। তবুও
তিনি জার্মান জনগণ এবং লেখকদের ভালোবাসা পেয়েছিলেন।
সারসংক্ষেপ
মহামতি দ্বিতীয় ফ্রেডারিখ ১৭৮০ সালে প্রæশিয়ার সিংহাসনে বসেন এবং দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে
রাজকার্য পরিচালনা করেন। তিনি ছিলেন প্রজাহিতৈষী স্বৈরাচারী শাসকদের অন্যতম। তাঁর
রাজত্বকালে কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যের উন্নতি, শিক্ষা সম্প্রসারণ ও বিচার বিভাগের দক্ষতা বৃদ্ধির
জন্যে কতগুলো ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছিল। একই সংগে তিনি ধর্মীয় সহনশীলতার নীতি অনুসরণ
করেণ। কিন্তুইউরোপের অন্যান্য প্রজাহিতৈষী স্বৈরাচারী শাসকের ন্যায় ফ্রেডারিখও ছিলেন
পররাজ্য লোভী। তিনি পোল্যান্ডের প্রথম বিভাজন, অস্ট্রীয় উত্তরাধিকার যুদ্ধ ও সাত বছরব্যাপী
যুদ্ধে অংশ নেন এবং প্রæশিয়ার রাজ্যসীমা সম্প্রসারিত করেন।


ক. নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশ্বে টিক () চিহ্ন দিন।
১। দ্বিতীয় ফ্রেডারিখ কোন ভাষা কবিতা লিখতেন
(ক) জার্মান (খ) ফরাসি
(গ) ইংরেজি (ঘ) লাতিন
২। ফ্রেডারিখের সৈন্যবাহিনীতে সৈন্য সংখ্যা কত ছিল?
(ক) এক লক্ষ (খ) এক লক্ষ পচিশ হাজার
(গ) এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার (ঘ) দুই লক্ষ
৩। ফ্রেডারিখ কোন সম্প্রদায়ের মানুষকে কতগুলো নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করেন?
(ক) ইহুদী (খ) মুসলমান
(গ) প্রোটেষ্টান্ট (ঘ) ক্যাথলিক
৪। কোন অঞ্চল দখলের মাধ্যমে ইউরোপে সাত বছরব্যাপী যুদ্ধের সূত্রপাত হয়
(ক) বাভারিয়া (খ) স্যাক্সমি
(গ) বেলজিয়াম (ঘ) নরওয়ে
খ. রচনামূলক প্রশ্ন
১। প্রশাসনিক ক্ষেত্র এবং শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতির জন্যে দ্বিতীয় ফ্রেডারিখ কি কি ব্যবস্থা
নিয়ে ছিলেন?
২। ধর্ম, শিক্ষা ও বিচার বিভাগে প্রবর্তিত দ্বিতীয় ফ্রেডারিখের সংস্কারগুলি আলোচনা করুন।
৩। দ্বিতীয় ফ্রেডারিখের শাসনকালে প্রæশিয়ার রাজ্য বিস্তারের বর্ণনা দিন।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের উত্তর
১(খ), ২(খ), ৩(ক), ৪(খ)

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]