অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে পোল্যান্ডের দুর্বলতার কারণগুলি আলোচনা করুন।

আঠার শতকের শুরুতে পোল্যান্ড ছিল আয়তনের দিক থেকে ইউরোপের তৃতীয় বৃহত্তম এবং
জনসংখ্যার দিক থেকে চতুর্থ বৃহত্তম দেশ। দেশটির আয়তন এবং জনসংখ্যা ছিল যথাক্রমে
২৮০০০০ বর্গ মাইল এবং ১ কোটি ২০ লক্ষ জন। এদেশের বিস্তার ছিল বাল্টিক থেকে কৃষ্ণ সাগর
এবং জার্মানির পূর্ব সীমানা থেকে রাশিয়ার পশ্চিম সীমানা পর্যন্ত। পোল্যান্ডের সর্বশেষ খ্যাতিমান
রাজা ছিলেন জনসবিস্কি। তাঁর মৃত্যুর পর পোল্যান্ডের পতন শুরু হয় এবং পরপর তিনবার
ব্যবচ্ছেদের ফলে দেশটি ইউরোপের মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। পোল্যান্ডের প্রথম বিভাজন
ঘটেছিল ১৭৭২ সালে এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাজন ঘটেছিল যথাক্রমে ১৭৯২ এবং ১৭৯৫
সালে।
পোল্যান্ডের দুর্বলতার কারণ
বিভিন্ন কারণে আঠার শতকে পোল্যান্ডের পতন ঘটেছিল। এগুলো ছিল রাজতন্ত্রের দুর্বলতা,
সামন্তপ্রভুদের শ্রেণী দুর্বলতা, ধর্মক্ষেত্রে বিরোধ, জাতিগত সমস্যা, শক্তিশালী সেনাবাহিনী এবং
প্রাকৃতিক সীমানার অভাব। এসবের মধ্যে রাজনৈতিক কারণটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কেননা
সরকার শক্তিশালী হলে অন্যান্য সমস্যার সমাধান সম্ভব হতে পারতো।
সরকার ব্যবস্থা
সরকার ব্যবস্থার দিক থেকে পোল্যান্ডের অবস্থা ছিল ইউরোপীয় অন্যান্য দেশ থেকে ভিন্ন। কেননা
নিয়ম ছিল যে, দেশের রাজা সামন্তপ্রভুদের নিয়ে গঠিত পার্লামেন্ট বা ডায়েট কর্তৃক নির্বাচিত
হবেন। ১৫৭২ সালের আগে নিয়ম ছিল যে রাজার ছেলেকেই তার উত্তরাধিকার হিসেবে নির্বাচিত
করতে হবে। এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে রাজা কিছুস্বাধীন ক্ষমতা ভোগ করতেন। কিন্তু১৫৭২ সালে এ
দুটো নিয়ম পরিবর্তিত হয়। অতপর নির্বাচনকালে প্রত্যেক রাজাকে কতোগুলো শর্ত মেনে চলার
অঙ্গীকার করতে হতো। এসব শর্তের মধ্যে দুটো ছিল প্রধান। প্রথমত, রাজা কোনো উত্তরাধিকারের
নাম প্রস্তাব করতে পারবে না।
দ্বিতীয়ত, রাজা শুধুডায়েট কর্তৃক অনুমোদিত ক্ষমতা ভোগ করবেন। এভাবে ইউরোপের অন্যন্য
দেশের রাজা যখন সামন্তপ্রভুদের ক্ষমতা খর্ব করে শক্তিশালী হচ্ছিলেন এবং স্বেচ্ছাচারী শাসন
প্রতিষ্ঠা করেছিলেন পোল্যান্ডে তখন রাজা বেশি মাত্রায় সামন্তপ্রভুদের নিয়ন্ত্রণ মেনে নিচ্ছিলেন।

আঠার শতকের শুরুতে রাজা যেসব বিষয়ে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারতেন সেগুলোর
মধ্যে ছিল বেসামরিক ও ধর্মীয় কর্মকর্তা নিয়োগ। কিন্তুনিয়ম ছিল যে, এসব কর্মকর্তা আমরণ
ক্ষমতায় থাকতে পারবেন এবং তাদেরকে দোষী প্রমাণ না করে বরখাস্ত করা যাবে না। ফলে রাজা
এসব কর্মকর্তার উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারতেন না।
সামন্তপ্রভুদের সুযোগ-সুবিধা
এভাবে রাজা যখন ক্ষমতা হারাচ্ছিলেন সামন্তগোষ্ঠী তখন অধিকতর ক্ষমতাশালী হয়ে উঠেছিলো।
সামন্তপ্রভুরা ক্ষমতাশালী হয়ে উঠেছিলো। সামন্তপ্রভুরা ছিল দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র শতকরা
আট ভাগ, কিন্তুতারা শাসন ক্ষমতা থেকে অন্যান্য শ্রেণীর মানুষকে বঞ্চিত করেছিলো। কেননা শুধু
তাদের প্রতিনিধিদেরকে নিয়ে দেশের ডায়েট বা পার্লামেন্ট গঠিত ছিল, অথচ ডায়েটের হাতে আইন
প্রণয়ন, কর ধার্যকরণ, যুদ্ধ ঘোষণা, চুক্তি স্বাক্ষর প্রভৃতি ক্ষমতা ন্যস্ত ছিল। প্রশাসনিক উচ্চ পদে
নিয়োগ এবং শহরের বাইরে শুধুতারাই জমি ক্রয়ের সুযোগ পেতো। তাদের একমাত্র দায়িত্ব ছিল
যুদ্ধের সময় বাধ্যতামূলকভাবে সামরিক বাহিনীতে যোগদান করা। এছাড়া সামন্তপ্রভুরা ব্যবসাবাণিজ্য করতে পারতো না।
মধ্যবিত্ত শ্রেণীর দুর্বলতা
দেশে শক্তিশালী মধ্যবিত্ত শ্রেণী ছিল না। শহরবাসীরা ছিল মোট জনসংখ্যার শতকরা ১৪ ভাগ।
কিন্তুএদের অধিকাংশই ছিল ইহুদী এবং বিদেশী। মধ্যযুগে পোল্যান্ডের অনেক শহর সমৃদ্ধি লাভ
করেছিল, কেননা দেশের ভেতর দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পণ্যের আদান-প্রদান হতো। পরবর্তীকালে
কৃষ্ণ সাগরের তীরবর্তী অঞ্চলে তুর্কি শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এবং ভৌগোলিক আবিষ্কারের ফলে
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ভ‚মধ্যসাগরের পরিবর্তে আটলান্টিক মহাসাগরের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায়
পোল্যান্ডের ভেতর দিয়ে বাণিজ্যের পরিমাণ কমে যায়। এতে পোল্যান্ডের শহরগুলোর পতন শুরু
হয়। এছাড়া ডায়েট এমন সব আইন পাশ করে, যা ছিল ব্যবসায়ী শ্রেণীর স্বার্থের পরিপন্থী।
উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায় যে, ১৫৬৫ সালে ডায়েট দেশী বণিকদের জন্যে আমদানি রপ্তানি
বাণিজ্যে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১৬৪৩ সালে ডায়েট ব্যবসায়ীদের জন্যে লাভের সর্বোচ্চ
হার শতকরা সাতভাগে নির্ধারণ করে দেয়। এভাবে অন্যান্য দেশের সরকার যেখানে বণিকশ্রেণীর
বিকাশের জন্যে উৎসাহ দিচ্ছিল পোল্যান্ডের সরকার তখন এ শ্রেণীর বিকাশের পথকে রুদ্ধ করতে
সচেষ্ট হয়। এছাড়া আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রশাসনিক পদগুলো সামন্তপ্রভুদের জন্যে নিষিদ্ধ
ছিল। এতোসব বাধার কারণে দেশে শক্তিশালী মধ্যবিত্ত শ্রেণী গড়ে উঠে নি।
কৃষকদের শোচনীয় অবস্থা
দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা সত্তর ভাগ ছিল কৃষক, আর এদের মধ্যে ছয় ভাগের পাঁচ ভাগ
ছিল ভ‚মিদাস। এদের অবস্থা ইউরোপের অপর যে কোনো দেশের ভ‚মিদাসদের অবস্থার চেয়ে
শোচনীয় ছিল। ভ‚মিদাসদেরকে সপ্তাহের পাঁচ বা ছয় দিন সামন্তদের খামারে বেগার খাটতে হতো,
সামন্তদের আদালতে প্রদত্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করার কোন অধিকার তাদের ছিল না, কোন
ভ‚মিদাস সামন্তপ্রভুর হাতে নিহত হলে অপরাধীর উপর শুধুকিছুজরিমানা ধার্য করা হতো। অনেক
ক্ষেত্রে তারা কোন্ ধর্ম অনুসরণ করবে তা সামন্তপ্রভুনির্ধারণ করতো। এসব কারণে আঠার শতকে
পোল্যান্ডের কৃষক শ্রেণীর অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে।

ধর্ম ও জাতিগত বিরোধ
পোল্যান্ডের জনগোষ্ঠী ছিল বিভিন্ন জাতি ও ধর্মের। জনসংখ্যার মাত্র অর্ধেক ছিল পোলিশ,
লিথুয়ানিয়ায় ছিল রাশিয়ান ও লিথুয়ানিয়ান, ইউক্রেনে ছিল রাশিয়ান, পশ্চিমে প্রæশিয়ায় ছিল
জার্মান। এছাড়া দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিল পাঁচ লক্ষ ইহুদী। এসব জাতির মানুষের মধ্যে ঐক্য ছিল
না, ছিল বিরোধ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল ধর্মীয় বিরোধ। রোমান ক্যাথলিক ধর্ম ছিল রাষ্ট্রীয় ধর্ম,
কিন্তু পোলিশ ব্যতীত অন্যান্য গোষ্ঠীর ধর্ম ছিল ভিন্ন। একদল ছিল ইহুদী, জার্মানরা ছিল
প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মাবলম্বী এবং রাশিয়ানরা ছিল গ্রিক অর্থোডক্স গির্জার অনুসারী। শেষোক্ত দুটি গোষ্ঠী
‘ফরংংবহঃবৎং’ নামে পরিচিত ছিল। ১৭৩৩ ও ১৭৩৬ সালের আইনে এদেরকে রাজনৈতিক এবং
কোনো কোনো ক্ষেত্রে নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। ১৭১৭ সালের একটি আইন বলে
তাদের জন্যে গির্জা নির্মাণ নিষিদ্ধ করা হয়। ধর্মীয় ক্ষেত্রে সহনশীলতার অভাব স্বভাবতই তাদেরকে
ক্ষুব্ধ করে এবং এর ফলে জার্মানি ও রাশিয়া পোল্যান্ডের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ
পায়। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য যে গ্রিক অর্থোডক্স গির্জার অনুসারীদের আনুগত্য ছিল রাশিয়ার প্রতি এবং
জার্মানদের আনুগত্য ছিল প্রæশিয়ার প্রতি। এভাবে শুধুরাজনৈতিক ও সামাজিক কারণেই পোল্যান্ড
দুর্বল রাষ্ট্রে পরিণত হয় নি, এর পেছনে জাতিগত এবং ধর্মীয় কারণও ছিল।
প্রাকৃতিক সীমানার অভাব
প্রাকৃতিক সীমানার অভাব পোল্যান্ডের পতনের আর একটি কারণ। শুধুদক্ষিণ দিক ব্যতীত অন্যান্য
দিক থেকে পোল্যান্ড ছিল উন্মুক্ত, অর্থাৎ পোল্যান্ডের সীমারেখা নদী বা পাহাড়, পর্বত দিয়ে চিহ্নিত
ছিল না। এ দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার একমাত্র উপায় ছিল শক্তিশালী সেনাবাহিনী গঠন, কিন্তুএদিক
থেকেও পোল্যান্ড ছিল দুর্বল। সেনাবাহিনী শক্তিশালী হলে রাজা এর সাহায্যে শক্তিশালী হওয়ার
চেষ্টা করতে পারেন এ আশংকায় ডায়েট ১৭১৭ সালে পোল্যান্ডের সেনাবাহিনীকে নির্ধারিত করে
চব্বিশ হাজারে, কিন্তুসৈন্যসংখ্যা কখনও বারো হাজারের বেশি হয় নি। এভাবে পোল্যান্ড যখন
রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক থেকে দুর্বল হচ্ছিল পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলো
(রাশিয়া, অস্ট্রিয়া ও প্রæশিয়া) তখন ক্রমশ শক্তিশালী এবং উচ্চাকাক্সক্ষী হয়ে উঠেছিল। পোল্যান্ড বা
এর অংশ বিশেষ দখল করার লোভে এসব রাষ্ট্র কোনোদিন চায় নি যে পোল্যান্ড শক্তিশালী হয়ে
উঠুক, তাদের লক্ষ্য ছিল পোল্যান্ডকে দুর্বল রাখা এবং এ দুর্বলতার সুযোগে দেশটিকে গ্রাস করা।
পরপর তিনবার বিভাজনের ফলে সত্যিই একদিন পোল্যান্ড ইউরোপের মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে
যায়।
পোল্যান্ডের প্রথম বিভাজন
পোল্যান্ডের প্রথম বিভাজন ঘটে ১৭৭২ সালে। এ লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করে প্রæশিয়ার মহামতি
ফ্রেডারিখ এবং রাশিয়ার দ্বিতীয় ক্যাথারিন। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে তাঁরা উভয়েই ছিলেন
আঠার শতকের শ্রেষ্ঠ দার্শনিকদের চিন্তা-চেতনায় অনুপ্রাণিত অর্থাৎ ‘জ্ঞানদীপ্তিম্ব। কিন্তুঅস্ট্রিয়া
তাঁদের পরিকল্পনায় বিরোধিতা করতে পারে এমন আশংকায় ফ্রেডারিখ ও ক্যাথারিন অস্ট্রিয়ার
মারিয়া থেরেসাকে পোল্যান্ডের এক অংশ দেওয়ার প্রস্তাব করেন। তিনি এ প্রস্তাব গ্রহণ করেন।
পোল্যান্ডের অবস্থান প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর নিরাপত্তার জন্যে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে-এ অজুহাতে
তিনটি রাষ্ট্রের শাসক ১৭৭২ সালে দেশটির প্রথম ব্যবচ্ছেদ ঘটান। চুক্তির শর্তানুসারে প্রæশিয়া লাভ

করে ডানজিগ ও থর্ন ব্যতীত পশ্চিম প্রæশিয়ার সবটা, অস্ট্রিয়া লাভ করে গ্যালিচিয়া ও এর পার্শ্ববর্তী
অঞ্চল এবং রাশিয়া অধিকার করে শ্বেত রাশিয়া (ডযরঃব জঁংংরধ) ও অন্যান্য অঞ্চল।
দ্বিতীয় বিভাজন
প্রথম ব্যবচ্ছেদের পরবর্তী বিশ বছরে পোল্যান্ডকে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে
কতগুলো ব্যবস্থা গৃহীত হয়। এগুলো ছিল লিভারাস ভেটোর অবসান, সামন্তপ্রভুদের ক্ষমতা খর্ব,
বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা, কৃষকদের অবস্থার উন্নয়ন, ব্যবসায়ীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও
তাদেরকে ডায়েটের সদস্যপদ দান প্রভৃতি। কিন্তুএসব ব্যবস্থা স্বভাবতই রাশিয়া এবং প্রæশিয়ার
পছন্দ হয় নি। অতএব ১৭৯২ সালে রাশিয়ার এবং পরের বছর প্রæশিয়ার সেনাবাহিনী পোল্যান্ড
আক্রমণ করে। পোল্যান্ড পরাজিত হয়। ফলে রাশিয়া ত্রিশ লক্ষ এবং প্রæশিয়া দশ লক্ষ লোক
অধ্যূষিত পোল্যান্ডের একটি বিরাট অঞ্চল দখল করে নেয়। এবং পোল্যান্ড সংস্কার কর্মসূচি বাতিল
করতে বাধ্য হয়। অস্ট্রিয়া পোল্যান্ডের দ্বিতীয় বিভাজনে অংশগ্রহণ করে নি।
তৃতীয় বিভাজন
অতঃপর সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার আশংকা দূর করার জন্যে পোল্যান্ডবাসী সশস্ত্র প্রতিরোধ
আন্দোলন শুরু করে। এর নেতৃত্ব দেয় থেডিয়াস কস্কিউসকো (ঞযধফফবঁং কড়ংপরঁংশড়)। তিনি
আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রামে মার্কিনীদের পক্ষে অংশগ্রহণ করেছিলেন। প্রথমবারের মতো
পোল্যান্ডের কৃষক শ্রেণী অস্ত্রহাতে নেয়ার সুযোগ পায় এবং তারাও প্রতিরোধ আন্দোলনে অংশগ্রহণ
করে। প্রথমদিকে পোলিশ বাহিনী জয়লাভ করে, কিন্তুশেষ পর্যন্ত প্রæশিয়া, রাশিয়া ও অস্ট্রিয়ার
মিলিত বাহিনীর কাছে তারা পরাজিত হয়। পোল্যান্ডের রাজা স্টেনিসলস পদত্যাগ করতে বাধ্য হন
এবং দেশটির বাকি অংশ এ তিনটি রাষ্ট্র নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। অত:পর পোল্যান্ড নামক
আর কোনো রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ইউরোপের মানচিত্রে থাকলো না।

সারসংক্ষেপ
পোল্যােেন্ডর বিভাজন আঠার শতকের ইউরোপের ইতিহাসে একটি অন্যতম দুঃখজনক ঘটনা।
পর পর তিনবার (১৭৭২, ১৭৯২ ও ১৭৯৫ সালে) ব্যবচ্ছেদের ফলে পোল্যান্ড ইউরোপের
মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। পোল্যন্ডের প্রথম ব্যবচ্ছেদে অংশ নেয় প্রæশিয়ার দ্বিতীয়
ফ্রেডারিখ, রাশিয়ার দ্বিতীয় ক্যাথারিন এবং অস্ট্রিয়ার মারিয়া থেরেসা। অস্ট্রিয়া পোল্যান্ডের
দ্বিতীয় বিভাজনে অংশ নেয় নি। তৃতীয় বিভাজনে অস্ট্রিয়া প্রæশিয়া ও রাশিয়ার সংগে আবার
অংশ নেয়। পোল্যান্ডের বিভাজন সম্ভব হয়েছিল প্রধানত দুটো কারণে। এক দিকে অভ্যন্তরীণ
ক্ষেত্রে পোল্যান্ডের দুর্বলতা অপর দিকে প্রæশিয়া, রাশিয়া ও অস্ট্রিয়ার শাসকদের অন্যের রাজ্য
গ্রাসের লোভ। অভ্যন্তরীণক্ষেত্রে পোল্যান্ড দুর্বল হয়ে পড়েছিল এ কারণে যে, রাজা ছিলেন
সামন্ত প্রভুদের হাতের ক্রীড়নক মাত্র, দেশে শক্তিশালী মধ্যবিত্ত শ্রেণী বা সৈন্যবাহিনী ছিল না,
কৃষকদের অবস্থা ছিল শোচনীয় এবং ধর্ম ও জাতিগত বিরোধ ছিল তীব্র। পোল্যান্ডকে এর
দুঃখজনক পরিণতি বহন করতে হয়।

পাঠোত্তর মূল্যায়ন
ক. নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশ্বে টিক () চিহ্ন দিন।
১। সামন্ত প্রভুরা পোল্যান্ডের মোট জনসংখ্যার কত ভাগ ছিল?
(ক) ১২ ভাগ (খ) ১১ ভাগ
(গ) ১০ ভাগ (ঘ) ৮ ভাগ
২। পোল্যান্ডের শহরবাসীদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষ কোন সম্প্রদায়ভ‚ক্ত ছিল?
(ক) ক্যাথলিক (খ) প্রটেষ্টান্ট
(গ) ইহুদী (ঘ) এদের কোনটিই নয়।
৩। ডায়েট ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ মুনাফার হার নির্ধারণ করে কত সালে?
(ক) ১৬৪০ সালে (খ) ১৬৪১ সালে
(গ) ১৬৪২ সালে (ঘ) ১৬৪৩ সালে
৪। পোল্যান্ডের কৃষকদের মধ্যে কতভাগে ভ‚মিদাস ছিল?
(ক) ছয়ভাগের পাঁচ ভাগ (খ) সাত ভাগের ছয় ভাগ
(গ) পাঁচ ভাগের তিন ভাগ (ঘ) তিন ভাগের এক ভাগ
খ. সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। পোল্যান্ডের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অবস্থা আলোচনা করুন
২। পোল্যান্ডে ধর্ম ও জাতিগত বিরোধের বর্ণনা দিন।
গ. রচনামূলক প্রশ্ন
১। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে পোল্যান্ডের দুর্বলতার কারণগুলি আলোচনা করুন।
২। পোল্যান্ডের তিনটি বিভাজনের বিবরণ দিন।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের সঠিক উত্তর
১। (ঘ), ২। (গ), ৩। (খ), ৪। (ক)

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]