ফরাসি বিপ্লবের পটভ‚মি
পঞ্চদশ ষোড়শ লুই-র শাসন আমলের ব্যর্থতা আলোচনা করুন।


ফরাসি বিপ্লবের পটভ‚মি
১৭৮৯ সালের ফরাসি বিপ্লব ইউরোপ তথা পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সাম্য,
মৈত্রী ও স্বাধীনতার আদর্শে অনুপ্রাণিত এ বিপ্লব ইউরোপের পুরাতন সমাজ ও শাসন ব্যবস্থা ভেঙ্গে
দেয় এবং এক নতুন যুগের সূচনা করে। এ যুগের বৈশিষ্ট্য ছিল স্বেচ্ছাচারী রাজতন্ত্রের পরিবর্তে
গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা, জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ, ধর্মীয় ও ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং আইনের
দৃষ্টিতে সবার সমান অধিকারের ধারণা। পরবর্তীকালে এ বিপ্লবের প্রভাব প্রথমে ইউরোপ ও পরে
পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও অনুভ‚ত হয়। প্রকৃতপক্ষে ফরাসি বিপ্লবের আদর্শসমূহ বর্তমান সময়েও
প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। অতএব স্বাভাবিক কারণেই এ বিপ্লবের কারণ ও অর্জন সম্পর্কে
আমাদের অবহিত হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। বিপ্লবের কারণগুলো নিহিত ছিল বিপ্লব-পূর্ববর্তী অর্থাৎ
পুরাতন শাসন আমলের (ঙষফ বা অহপরবহঃ জবমরসব) রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা এবং
বুদ্ধিজীবীদের লেখনীর মধ্যে। অতএব এ ইউনিটের পাঠগুলোতে ফরাসি বিপ্লবের রাজনৈতিক,
আর্থ-সামাজিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পটভুমি আলোচনা করা হয়েছে। এ আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে
বিপ্লব-পূর্ববর্তীকালের রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার বহুবিধ ত্রæটি-বিচ্যুতি এবংসে সম্পর্কে -
● বিপ্লবÑপূর্ব ফ্রান্সের রাজনৈতিক অবস্থার বর্ণনা দিতে পারবেন;
● রাজার স্বেচ্ছাচারী শাসনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে ধারণা করতে পারবেন;
● প্রশাসনিক ও বিচার বিভাগের ত্রæটি সম্পর্কে জানতে পারবেন।
স্বেচ্ছাচারী রাজতন্ত্র
স্বেচ্ছাচারী রাজতন্ত্র ছিল ফ্রান্সের বিপ্লব-পূর্ববর্তী রাজনৈতিক অবস্থার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য।
ইউরোপের অন্যান্য দেশের ন্যায় ফ্রান্সেও মধ্যযুগে রাজা ছিলেন দুর্বল। কেননা রাজার হাতে যেসব
ক্ষমতা থাকার কথা ছিল তার অনেকটা ছিল রোমান ক্যাথলিক গির্জা এবং দেশের বিভিন্ন অংশের
সামন্তপ্রভুদের হাতে। কিন্তুআধুনিক যুগের শুরুতে রাজার ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং এক
পর্যায়ে দেশের সামগ্রিক ক্ষমতা রাজার হাতে ন্যস্ত হয়। প্রকৃতপক্ষে, রাজশক্তি এতই বৃদ্ধি পায় যে
ফ্রান্সের বুরবোঁ বংশীয় রাজা চতুর্দশ লুই ঘোষণা করেন ‘ও ধস ঃযব ংঃধঃব’ অর্থাৎ “আমিই রাষ্ট্র।''
অনুরূপভাবে এ বংশের শেষ রাজা ষোড়শ লুই দাবি করেন “আমি যা করি তাই আইন।'
রাজার হাতে সকল ক্ষমতা কেন্দ্রীভুত
রাজা ছিলেন একাধারে কার্যনির্বাহী এবং বিচার বিভাগের প্রধান এবং একমাত্র আইন-প্রণেতা।
কার্যনির্বাহী বিভাগের প্রধান হিসাবে তিনি সকল গুরুত্বপূর্ণ পদে (অর্থাৎ মন্ত্রী, দূত, প্রাদেশিক
শাসনকর্তা ও উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার) নিয়োগ দান করতেন। যুদ্ধ ও চুক্তি স্বাক্ষরসহ পররাষ্ট্রনীতির
ক্ষেত্রে সকল সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা তাঁর হাতে ছিল। তিনি ছিলেন বিচার বিভাগেরও প্রধান। সে
হিসেবে তিনি বিচারকদেরকে নিয়োগ দিতেন এবং যে কোন বিচারকার্য সম্পন্ন করতে বা অন্য
বিচারক কর্তৃক দেয়া রায় পরিবর্তন করতে পারতেন। অনুরূপভাবে তিনি ছিলেন দেশের একমাত্র
আইন প্রণেতা। ইংল্যান্ডের ন্যায় ফ্রান্সে কোন পার্লামেন্ট বা সংসদ ছিল না। সুতরাং, আইন
প্রণয়নের ক্ষেত্রে রাজার ছিল প্রায় একচ্ছত্র ক্ষমতা। জনগণের কাছ থেকে আদায়কৃত রাজস্বের
সবটাই রাজার প্রাপ্য ছিল। এ থেকে রাজা ইচ্ছামত রাজদরবার, রাজ পরিবার ও প্রশাসনের ব্যয়
নির্বাহ করতেন। তত্ত¡গতভাবে নিজের ইচ্ছায় কর ধার্যের অধিকার তাঁর ছিল। ষোড়শ লুই তাঁর
আতœজীবনীতে দাবি করেন, "করহমং ধৎব ধনংড়ষঁঃব সধংঃবৎং ধহফ ধং ংঁপয যধাব ধ হধঃঁৎধষ ৎরমযঃ
ঃড় ফবংঢ়ড়ংব ড়ভ বাবৎুঃযরহম নবষড়হমরহম ঃড় ঃযবরৎ ংঁনলবপঃং." “রাজারা হচ্ছেন সর্বময় প্রভুযেমন
প্রজাদের সব কিছুর ওপর কর্তৃত্ব করার সকল প্রাকৃতিক অধিকার রয়েছে।” সব কিছুকে কর্তৃত্ব
করার স্বাভাবিক অধিকার তাদের আছে।

জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের অভাব
এতসব ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে রাজা দেশের কারোর কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য ছিলেন না।
কেননা তিনি সৃষ্টিকর্তা থেকে প্রাপ্ত ক্ষমতায় (উরারহব জরমযঃ গড়হধৎপযু) বিশ্বাস করতেন। অর্থাৎ
তার সকল ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তার দেয়া এবং অতএব পৃথিবীতে কারোর কাছে জবাবদিহি করার
প্রয়োজন তাঁর নেই, একমাত্র সৃষ্টি কর্তার কাছে তিনি দায়ী ছিলেন। পঞ্চদশ লুই বলেছিলেন "অ
শরহম রং ধপপড়ঁহঃধনষব ভড়ৎ যরং পড়হফঁপঃ ড়হষু ঃড় এড়ফ." এ অবস্থায় স্বাভাবিকভাবে জনগণের
কোন গণতান্ত্রিক অধিকার ছিল না। অর্থাৎ রাজার কোন কাজের সমালোচনা করার বা রাজনৈতিক
দল গঠনের অধিকার তাদের ছিল না। কেউ রাজশাসনের সমালোচনা করলে ‘‘লেত্রী দ্য কেশে”
(খবঃঃবৎং ফব পধপযবঃ) নামক পরোয়ানা জারি করে তাকে গ্রেফতার করা হতো এবং বিনা বিচারে
অনির্দিষ্টকাল তাকে সাধারণত বাস্তিলের জেলখানায় (যা এককালে একটি দুর্গ ছিল) আটক রাখা
হতো। এ জন্যে বাস্তিলের জেলখানাকে দেশবাসী স্বেচ্ছাচারী রাজতন্ত্রের প্রতীক বলে বিবেচনা
করত। স্টেটস জেনারেল নামে দেশে একটি প্রতিনিধি সভা ছিল। কিন্তু ১৬১৪ সালের পর এ
সভার কোন অধিবেশন ডাকা হয় নি। ঐতিহাসিক শেভিল যথার্থই মন্তব্য করেছেন যে, “স্টেটস
জেনারেলের অধিবেশন বন্ধ থাকার ফলে সাধারণমানুষের অসুবিধা ও অভিযোগের কথা রাজার
নিকট পৌঁছানো সম্ভব হতো না। রাজার পক্ষেও দেশের সাধারণ প্রজার অবস্থার কথা জানা সম্ভব
হতো না। এর ফলে বুরবোঁ রাজতন্ত্র বৃহত্তর জনগোষ্ঠী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েপড়ে।” প্রসঙ্গক্রমে
উল্লেখের প্রয়োজন যে, পঞ্চদশ ও ষোড়শ লুই সমকালীন “প্রজাহিতৈষী স্বৈরতন্ত্রী” শাসনের মতবাদ
গ্রহণ করেন নি।
দেশে প্রকৃত ঐক্যের অভাব
কিন্তুআইনত রাজা নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী হলেও বাস্তবক্ষেত্রে তাঁকে নির্ভর করতে হতো রাজ
পরিষদ, মন্ত্রী ও অগণিত প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর উপর। তাছাড়া এক ব্যক্তি-কেন্দ্রিক
শাসন প্রচলিত থাকলেও অনেক দিক থেকে দেশে প্রকৃত ঐক্যের অভাব ছিল। কার্ডিন্যাল
রিসেলিওর ১৫৮৫-১৬৪২ খ্রি) আমল থেকে প্রদেশের শাসনভার ছিল ইনটেনডেট নামক এক
শ্রেণীর কর্মকর্তার হাতে। রাজার প্রতিনিধি হিসেবে তাদের ক্ষমতা নিরঙ্কুশ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু
সর্বক্ষেত্রে তা ছিল না। কোনো কোন ক্ষেত্রে প্রদেশে সামন্ত প্রভুরা কিছুক্ষমতা দাবি করতো। অপর
পক্ষে কোনো কোনো শহর এক ধরনের স্বায়ত্তশাসন ভোগ করতো। দেশের সর্বত্র এক ধরনের মুদ্রা
ব্যবস্থা, ওজন প্রণালী এবং কর ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এক প্রদেশ থেকে
অন্য প্রদেশে পণ্য বহন করতে হলে শুল্ক প্রদান করতে হতো।
বিভিন্ন ধরনের আইন ও বিচার ব্যবস্থা
দেশের সর্বত্র এক ধরনের আইন প্রচলিত ছিল না। প্রকৃত পক্ষে বিপ্লবের অব্যবহিত আগে দেশের
বিভিন্ন এলাকায় তিন শতেরও বেশি আইন প্রচলিত ছিল। অর্থাৎ কোথাও যা ছিল আইনসিদ্ধ অন্যত্র
তা ছিল বেআইনি। বিচারকার্যেও অনুরুপ বিশৃ´খলা ছিল। মধ্যযুগে দেশে রাজকীয় কোনো
আদালত ছিল না। সে সময়ে বিচারকার্য সম্পন্ন হতো সামন্ত আদালতে ও গির্জার আদালতে।
পরবর্তীকালে রাজক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার সংগে সংগে দেশের বিভিন্ন এলাকায় রাজকীয় আদালত
প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তুঅনেক ক্ষেত্রে পাশাপাশি সামন্তপ্রভুও গির্জা কর্তৃক পরিচালিত আদালতগুলো
তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। এসব আদালতের কর্তৃত্ব নির্ধারিত ছিল না। ফলে অনেক সময়

এগুলোর মধ্যে বিরোধ দেখা দিত। অতএব যদিও রাজা ছিলেন বিচার বিভাগের প্রধান এবং দেশের
সর্বত্র রাজকীয় আদালত সর্বেসর্বা হওয়ার কথা ছিল, বাস্তব অবস্থা ছিল ভিন্ন।
পঞ্চদশ ও ষোড়শ লুইর দুর্বলতা
চর্তুদশ লুইর রাজত্বকালে স্বৈরতন্ত্র চরমে পৌঁছলেও তাঁর আমলে শাসন ব্যবস্থা ছিল উন্নত।
অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করার ফলে তিনি ফরাসি জাতির আনুগত্য লাভ
করেন। কিন্তুআঠারো শতকের ফ্রান্স ছিল অকর্মণ্য রাজা পঞ্চদশ লুই, ডিউক অব অরলিয়েন্স,
ম্যাডাম প্যাম্পাডোর, দুর্বল-চিত্তের ষোড়শ লুই এবং তাঁর বিলাসপ্রিয় স্ত্রী মারিয়া আঁতোয়া কর্তৃক
শাসিত। ঐতিহাসিক শেভিলের ভাষায় পঞ্চদশ লুই ছিলেন ‘প্রজাপতি রাজা’ (ইঁঃঃবৎভষু
সড়হধৎপয)। তিনি আমোদ-প্রমোদে সময় কাটাতেন। তাঁর স্থায়ী উপপতœী ম্যাডাম প্যাম্পাডোর
রাজার দুর্বলতার সুযোগে প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করতেন। ফলে প্রশাসন ক্রমে ক্রমে অনেকটা রাজার
ব্যক্তিগত নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়। ষোড়শ লুই ছিলেন সৎস্বভাবের লোক, কিন্তুতাঁর চরিত্রে
কোন দৃঢ়তা ছিল না। তিনি ছিলেন তাঁর স্ত্রী (অস্ট্রিয়ার বিখ্যাত সম্রাজ্ঞী মারিয়া থেরেসার কন্যা)
মারিয়া আঁতোয়ার প্রভাবাধীন। পরবর্তী পর্যায়ের আলোচনায় দেখা যাবে ষোড়শ লুই তাঁর স্ত্রী ও
স্বার্থানে¦ষী মহলের চাপে রাজতন্ত্র ও দেশের স্বার্থে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হন।
ব্যর্থ পররাষ্ট্রনীতি
পঞ্চদশ ও ষোড়শ লুই তাঁদের অদূরদর্শী বৈদেশিক নীতি দ্বারা ফ্রান্সের এবং রাজবংশের মর্যাদা ক্ষুন্ন
করেন। পঞ্চদশ লুইর শাসন আমলে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ফ্রান্স অস্ট্রিয়ার উত্তরাধিকার যুদ্ধে (১৭৪০-
৪৮ খ্রি.) এবং সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধে (১৭৫৬-১৭৬৩ খ্রি.) লিপ্ত থাকে। এ দুটো যুদ্ধে ফ্রান্স শোচনীয়
ভাবে পরাজিত হয়। প্রচুর লোকবল ও অর্থের অপচয় ঘটে। তাছাড়া এ দুটো যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে
ভারত ও কানাডা থেকে ফরাসিরা বহিস্কৃত হয় এবং এ দুটো দেশে বৃটিশ উপনিবেশ স্থাপনের পথ
প্রশস্ত হয়। সমুদ্র পথেও ফ্রান্স প্রাধান্য হারায়। ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য স্থাপনের ক্ষেত্রে চির প্রতিদ্বন্দ¡ী
ইংল্যান্ডের কাছে পরাজয় ফরাসি রাজতন্ত্রের মর্যাদাকে ভীষণভাবে ক্ষুন্ন করে। এ দুটো যুদ্ধে ফ্রান্সের
রাজকোষ শূন্য হলেও ষোড়শ লুই নিরস্ত হন নি। তিনি ফ্রান্সকে আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে জড়িয়ে
দেন। ফলে রাজার অর্থ সংকট আরও তীব্র হয়।
অভ্যন্তরীণ শাসনক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা
রাজার দুর্বলতার ফলে অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে বিশৃ´খলা দেখা দেয়। কেননা, এ সুযোগে প্রশাসনিক
ক্ষেত্রে এবং বিচার ও কর বিভাগের ক্রটিÑবিচ্যুতিগুলো প্রকটভাবে আত্মপ্রকাশ করে। ইতোপূর্বে
উল্লেখ করা হয়েছে যে, আইনত রাজা নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী হলেও বাস্তবে তাঁকে নির্ভর
করতে হতো রাজ পরিষদ, বিভিন্ন মন্ত্রী অগণিত কর্মকর্তা এবং কর্মচারীর উপর। রাজার দুর্বলতার
সুযোগ নিয়ে রাজপরিষদ বিভিন্ন মন্ত্রীর ক্ষমতার দ্বন্দে¡ লিপ্ত হতো। মন্ত্রীদের মধ্যে কলহ লেগেই
থাকতো। কেননা, তাদের কর্তৃত্বের সীমারেখা চিহ্নিত ছিল না। অনুরূপভাবে অগণিত রাজ
কর্মচারীদের ক্ষমতা নির্দিষ্ট ছিল না। ফলে তাদের মধ্যে বিরোধ লেগেই থাকতো। কেন্দ্রীয়
সরকারের আদেশ দেশের সর্বত্র কার্যকর হতো না। বিচারকার্যে চরম অবনতি ঘটে। বিচার যেমন
ছিল ব্যয় সাপেক্ষও তেমনি ছিল দুর্নীতিগ্রস্ত। ন্যায়-অন্যায়ের প্রশ্ন বিবেচনা না করে অনেক ক্ষেত্রে

বিচারকগণ নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে ব্যস্ত ছিলেন। রিসেলিও, মাজারিন প্রমুখ সুদক্ষ শাসকদের
আমলে অভিজাত শ্রেণী রাজশক্তির বশ্যতা মেনে নিয়েছিল। কিন্তুপরবর্তীকালে রাজার দুর্বলতার
সুযোগ নিয়ে তারা আবার রাজসভায় এবং প্রাদেশিক প্রশাসনে প্রাধান্য বিস্তার করে। ইনটেনডেন্ট
নামক প্রাদেশিক শাসনকর্তার রাজস্ব আতœসাৎকারী “স্বার্থলোলুপ নেকড়ে বাঘে” পরিণত হয়েছিল।
তারা অনেক বাড়তি কর আদায় করতো এবং আদায়কৃত করের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আতœসাৎ
করতো। এর পাশাপাশি ছিল অন্যান্য শ্রেণীর আমলাদের অযোগ্যতা ও দুর্নীতি। এভাবে রাজার
দুর্বলতার কারণে স্বেচ্ছাচারী শাসনের সকল দোষ-ত্রæটি প্রকট হয়ে উঠে এবং রাজতন্ত্র জাতিকে
শাসন করার নৈতিক অধিকার হারিয়ে ফেলে। এ প্রসঙ্গে আরও একটি বিষয় উল্লেখ করা যায়।
রাজা কোনো নতুন আইন জারি করলে তা প্যারিস পার্লম নামক বিচার সভায় রেজিস্ট্রি করতে
হতো। কিন্তুএর সদস্যরা ছিল অভিজাত শ্রেণীর। যতদিন রাজতন্ত্র শক্তিশালী ছিল ততোদিন পার্লমঁ
তেমন অবাধ্য হয়নি। কিন্তুবিপ্লবের প্রাক্কালে এ সভা রাজার বিরোধিতা করে।
অতএব বলা যায় যে, অষ্টাদশ শতকের শেষার্ধের ইউরোপীয় অন্যান্য দেশের রাজতন্ত্র থেকে
ফরাসি রাজতন্ত্র দুদিক থেকে ভিন্ন প্রকৃতির ছিল। প্রথমত, তত্ত¡গতভাবে নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী
হলেও বাস্তবে রাজা ছিলেন দুর্বল। দ্বিতীয়ত, রাজকোষে দারুণ অর্থাভাব দেখা দিয়েছিল।
অর্থসংকটের বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কেননা অর্থাভাব দূর করার জন্যেই রাজা ষ্টেটস
জেনারেলের অধিবেশন আহŸান করতে বাধ্য হন, আর এ অধিবেশনই ১৭৮৯ সালের বিপ্লবের পথ
উন্মুক্ত করে।
সারসংক্ষেপ
স্বেচচ্ছাচারী রাজতন্ত্র ছিল বিপ্লব-পূর্ববর্তী ফ্রান্সের রাজনৈতিক অবস্থার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য
বৈশিষ্ট্য। রাজা ছিলেন বিচার, শাসন, আইন ও অর্থ বিভাগের প্রধান। কিন্তুপ্রচলিত ধারণা ছিল
এই যে, রাজ ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তার নিকট থেকে প্রাপ্ত। অতএব, পৃথিবীর কারোর কাছে রাজা
জবাবদিহি করতে বাধ্য ছিল না। রাজা যতদিন দক্ষতার সংগে দায়িত্ব পালন করেছিলেন
ততোদিন ফ্রান্সের মানুষ তাঁর স্বেচ্ছাচারী শাসন মেনে নিয়েছিল। কিন্তুপঞ্চদশ ও যোড়শ লুই
অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ক্ষেত্রে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেন। তাছাড়া তাঁদের শাসন আমলে
দারুন অর্থাভাব দেখা দেয়। এভাবে বুরবোঁ রাজবংশ দেশের শাসন কার্য চালানোর নৈতিক
অধিকার হারিয়ে ফেলে।

পাঠোত্তর মূল্যায়ন
ক. নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশ্বে টিক () চিহ্ন দিন।
১। বিপ্লবের প্রাক্কালে ফ্রান্সে কত ধরনের আইন প্রচলিত ছিল?
(ক) ৩০০ এর বেশি (খ) ২৫০ এর বেশি
(গ) ২২৫ এর বেশি (ঘ) ২০০ এর বেশি
২। কোন বুরবোঁ রাজাকে “প্রজাপতি রাজা” বলা হতো?
(ক) ষোড়শ লই (খ) ত্রয়োদশ লুই
(গ) পঞ্চদশ লুই (ঘ) এদের কেউ নন
৩। ১৭৮৯ সালের আগে কত সালে ষ্টেটস জেনারেলের শেষ অধিবেশন বসেছিল?
(ক) ১৬১০ সাল (খ) ১৬১১ সাল
(গ) ১৬১৩ সাল (ঘ) ১৬১৪ সাল
৪। কোন শ্রেণীর শাসনকর্তারা “স্বার্থ লোলুপ নেকড়ে বাঘ” বলে পরিচিত ছিল?
(ক) বিচার বিভাগের কর্মকর্তাগণ (খ) প্রাদেশিক শাসনকর্তারা
(গ) রাজস্ব বিভাগের শাসনকর্তারা (ঘ) এদের কেউ নন।
খ. রচনামূলক প্রশ্ন
১। বিপ্লবের প্রাক্কালে ফ্রান্সের স্বেচ্ছাচারী রাজার ক্ষমতার বিবরণ দিন।
২। পঞ্চদশ ষোড়শ লুই-র শাসন আমলের ব্যর্থতা আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]