ইউরোপে রেনেসাঁস সৃষ্টিতে মানবতাবাদী লেখকদের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করুন
রেনেসাঁস যুগের শিল্পীদের কর্মকান্ডের বিবরণ প্রদান করুন


 রেনেসাঁর কারণসমূহ;
 ইউরোপীয় রেনেসাঁসের মানবতাবাদী লেখক ও শিল্পীদের অবদান;
 ইতালিতে রেনেসাঁস শুরু হওয়ার কারণসমূহ।
পঞ্চদশ শতকের ইউরোপীয় রেনেসাঁস বা নবজাগরণ শুধু ইউরোপের ইতিহাসেই নয়, সমগ্র
মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি দিক পরিবর্তনকারী অধ্যায় হিসেবে পরিগণিত। আধুনিক
সমাজ, সংস্কৃতি, সাহিত্য, চিত্রকলা, ভাস্কর্যকলা, সঙ্গীত, রাজনীতি, অর্থনীতি সর্বোপরি মানুষের
মনন ও মেধা চর্চার অভিযাত্রা শুরু হয়েছিল এই রেনেসাঁস থেকে। তাই ঐতিহাসিক,
সমাজবিজ্ঞানী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, নৃতত্ত¡বিদ প্রমুখেরা এই রেনেসাঁসকে আধুনিক
সভ্যতার উন্মেষপর্ব হিসেবে চিহ্নিত করে থাকেন। মধ্যযুগের ইউরোপের সামন্ত আর্থ-সামাজিক
কাঠামোর অন্তিমপর্বে এই রেনেসাঁসের সূত্রপাত ঘটে। এই রেনেসাঁস প্রথমে শুরু হয়েছিল
পশ্চিম ইউরোপের ইতালিতে। ক্রমে তা ছড়িয়ে পড়ে ফ্রান্স, বৃটেন, জার্মানি, স্পেন, নরওয়ে,
সুইডেন, ডেনমার্ক সহ সমগ্র ইউরোপে। পরবর্তী পর্যায়ে ইউরোপ থেকে এই আধুনিক
সভ্যতার ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে এশিয়া এবং আফ্রিকার দেশসমূহে। সময়ের দিক থেকে পঞ্চদশ
এবং ষোড়শ শতককে রেনেসাঁর কাল হিসেবে অভিহিত করা হয়। রেনেসাঁস প্রথম শুরু
হয়েছিল ইতালিতে। তাই ইতালি পর্বের রেনেসাঁসকে রেনেসাঁসের আদি পর্ব বা রেনেসাঁসের
প্রথম পর্ব হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। আদি পর্বের রেনেসাঁসের কারণ সমূহ নিæে বর্ণিত হলোঃ
(ক) আরবীয় সভ্যতার প্রভাব
ইউরোপে রেনেসাঁস সৃষ্টির পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে আরবীয় সভ্যতার প্রভাবকে অভিহিত
করা যায়। মধ্যযুগের সমৃদ্ধ ও প্রভাবশালী সভ্যতা হলো আরবীয় সভ্যতা। হজরত মোহাম্মদের
(সঃ) আগমনের ভেতর দিয়ে সুদীর্ঘকাল ধরে অন্ধকারে নিমজ্জিত আরব জনগোষ্ঠী জেগে
উঠে। ইসলামের মহান সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতা, ভ্রাতৃত্ব, সহনশীলতা, অধিকার, জ্ঞান সাধনা,
মানবতাবোধ, ধৈর্য ও সাহসকে ধারণ করে অল্প সময়ের মধ্যে আরবরা চারিদিকে ছড়িয়ে
পড়ে। হজরত মোহাম্মদদের (সঃ) পরলোকগমনের শতাব্দীকালের মধ্যেই আরবরা সমগ্র
পশ্চিম এশিয়া অঞ্চল, মধ্য এশিয়া, ভারতবর্ষ, উত্তর আফ্রিকা এবং ইউরোপের স্পেন দখল
করে। এই বিজয়ের পাশাপাশি জ্ঞানবিজ্ঞানের জগতেও আরবদের অসাধারণ সাফল্য সমগ্র
বিশ্বকে অবাক করে দেয়। আব্বাসীয় শাসনামলে শুরু হয় আরবদের জ্ঞান সাধনার ইতিহাসে
এক স্বর্ণযুগ। বিশেষত সাহিত্য, গণিত, চিকিৎসাবিজ্ঞান, দর্শন, ধর্মতত্ত¡ জ্যোতির্বিদ্যা প্রভৃতি
জ্ঞানের মৌলিক শাখায় আরবদের অবদান ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়।একাদশ
শতক থেকে ত্রয়োদশ শতক পর্যন্ত ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী ক্রুসেড অভিযানের

সময় ইউরোপীয়রা আবরবদের সভ্যতা ও সংস্কৃতির সংস্পর্সে আসে। আরব সভ্যতা ও
সংস্কৃতি ইউরোপবাসীকে জাগ্রত করতে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে। এইভাবে আরব সভ্যতা ও
সংস্কৃতি ইউরোপের রেনেসাঁস সৃষ্টিতে পালন করে এক ইতিবাচক ভ‚মিকা।
(খ) জীবন ও জগতের প্রতি নতুন দৃষ্টিভঙ্গী
ইউরোপীয় রেনেসাঁসের অন্যতম প্রধান কারণ হলো ইউরোপের মানুষের জীবন ও জগতের
প্রতি নতুন দৃষ্টিভঙ্গী। মধ্যযুগের ইউরোপে ধর্মীয় শাসন ও শোষণের ফলে মানুষের চিন্তার
কোনো প্রকার স্বাধীনতা ছিল না। চর্তুদশ শতক থেকে সামন্তবাদী আর্থ-সামাজিক কাঠামো
দুর্বল হয়ে আসার পটভ‚মিতে পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য ভেঙ্গে পড়তে শুরু করে। এই সময় থেকে
পোপতন্ত্রের প্রভাব এবং ধর্মীয় অনুশাসন সমাজ জীবনে দুর্বল হয়ে পড়তে থাকে। পরিবর্তিত
অবস্থার প্রেক্ষাপটে জীবন ও জগতের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গীর আমূল পরিবর্তন হতে থাকে।
অজানাকে জানার এবং অচেনাকে চেনার জন্য মানুষের মধ্যে প্রবল আগ্রহ জাগ্রত হয়। মানুষ
যুক্তি এবং বুদ্ধি দিয়ে দেশ ও সমাজকে বিচার করতে শুরু করে। ইতিহাসের এই প্রক্রিয়া
ইউরোপে নবজাগরণে এক ইতিবাচক ভ‚মিকা পালন করে।
(গ) নতুন সাহিত্যের বিকাশ
পঞ্চদশ শতকে ইউরোপের রেনেসাঁস সৃষ্টিতে নতুন সাহিত্যের বিকাশ এক বিশেষ ভ‚মিকা
পালন করে। এইক্ষেত্রে সবচেয়ে অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করে ফরাসি দেশের চারণ কবিগণ।
তারা রাজা আর্থার, শার্লামেন, হোলি গ্রেল প্রমুখদের উপর গীতি রচনা করে সাধারণ মানুষের
মাঝে প্রচলন করেন। স্পেনের কবিরা এক ধরনের লোকজ ঐতিহ্যাশ্রয়ী কবিতা রচনা শুরু
করে। এই ধরনের কবিতাকে বলা হতো সিড। ইতালির কবি দান্তে তার রচিত ’ডিভাইন এন্ড
কমেডি’ নামক গ্রন্থে ইতালির কথ্য ভাষাকে সাহিত্য রচনার ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।
ইংল্যান্ডে চ্যসার ‘কেন্টারবেরি টেলস’ গ্রন্থে রোমান ও স্যাকসন ভাষার এক অপূর্ব সমন্বয়
ঘটিয়ে আধুনিক ইংরেজি ভাষার প্রকৃত রূপদান করেন। এই ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশ
ইউরোপের রেনেসাঁসকে নতুন গতি দান করেছিল।
(ঘ) ইতালির শহরগুলির অবদান
ইতালি তথা ইউরোপে রেনেসাঁ সৃষ্টিতে ইতালীর শহরগুলির অবদান অবশ্যই স্মরণীয়।
ইতালির দক্ষিণ অঞ্চল ভ‚মধ্যসাগরীয় তীরবর্তী অঞ্চলে এই শহরগুলি গড়ে উঠেছিল। এই
শহর গুলির অর্থনৈতিক ভিত্তি ছিল বাণিজ্য। বাণিজ্যের প্রয়োজনে এই শহরগুলিতে গড়ে উঠে
ছোট ছোট কারখানা। ইউরোপের সামন্তবাদী আর্থ-সামাজিক কাঠামোর প্রভাব সাগর তীরবর্তী
এই শহরগুলিতে খুবই দুর্বল ছিল। ফলে এই শহরগুলিতে স্বাধীন চিন্তা - চেতনা, ব্যক্তিত্বের
বিকাশ এবং নাগরিক আদর্শ সৃষ্টির এক অনুক‚ল পরিবেশ ছিল বিরাজমান। উপরন্তু মানুষের
ত্মনির্ভরশীল হওয়ার মত সুযোগ এখানে বর্তমান ছিল। ফলে স্বাভাবিকভাবে মানুষের মন ও
মানসিকতায় উদারনৈতিক ভাবনা, ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গী, সাহিত্য, শিল্পকলার প্রতি গভীর
আকর্ষণের সৃষ্টি হয়েছিল। বস্তুত জেনোয়া, ফ্লোরেন্স, ভেনিস প্রভৃতি শহর ইউরোপে রেনেসাঁস
সৃষ্টিতে কার্যকর ভ‚মিকা পালন করেছিল।

(ঙ) মানবতাবাদী লেখকদের অবদান
ইউরোপে রেনেসাঁসের পেছনে মানবতাবাদী পন্ডিতদের অবদান অপরিসীম। জ্ঞানের সাধক এই
সকল পন্ডিতেরা মানুষের সামগ্রিক কল্যানের জন্য, মানুষকে মানুষের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করার
জন্য আজীবন কাজ করে গেছেন। অতীত যুগের ইতিহাস, দর্শন, বিজ্ঞান, সাহিত্য, শিল্পকলা
প্রভৃতি অধ্যয়ন করে অর্জিত জ্ঞান সাধারণ মানুষের মাঝে বিতরণ করা ছিল তাদের জীবনের
মূল লক্ষ্য। জ্ঞান জগতে তাদের বিচরণ ছিল খ্রিস্টান ধর্মভিত্তিক চিন্তা ভাবনার বাইরে প্রধানত
গ্রিক ও রোমান শিল্প, সাহিত্য, ইতিহাস, বিজ্ঞান ও এবং দর্শনে। চিন্তা ও মননে এই সকল
পন্ডিত ছিলেন উদারনৈতিক, সহনশীল ও ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ। তাদের একটি প্রধান কাজ ছিল
প্রাচীন পান্ডুলিপি সংগ্রহ ও প্রচার করা। মানবতাবাদী পন্ডিতদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য
ছিলেন প্রেত্রার্ক এবং বোক্কাচো।
(১) ফ্রান্সিস পেত্রার্ক (১৩০৪-১৩৭৪)
ইতালির মানবতাবাদী পন্ডিতদের মাঝে প্রথম উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব হলেন ফ্রান্সিস পেত্রার্ক
(১৩০৪-১৩৭৪)। তাঁর ছোটবেলা সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য জানা যায় না। তিনি
অনেক পরিশ্রম করে প্রাচীন গ্রিক ও রোমান যুগের প্রায় দুইশত পান্ডুলিপি সংগ্রহ করেন।
বিশেষত তাঁর সংগৃহীত প্লেটোর গ্রন্থাবলী এবং হোমারের মহাকাব্য তরুণ সমাজকে
ব্যাপকভাবে আন্দোলিত করে। ইতালির শত শত তরুণ প্রচলিত বিদ্যাশিক্ষা ছেড়ে দিয়ে
পেত্রার্কের শীষ্যত্ব গ্রহণ করে। ফলে জ্ঞান বিজ্ঞানে এক প্রবল যুক্তিবাদের ধারার সৃষ্টি হয়।
প্রেত্রার্কের জ্ঞান সাধনার সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব এই যে তিনি তরুণদের মনে নতুন নতুন
জিজ্ঞাসা ও অনুসন্ধিৎসা জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হন। তিনি সনেট নামক চৌদ্দ লাইনের
কবিতারও জনক। এই কবিতার ধারা পরবর্তীকালে পৃথিবীর সব সাহিত্যের কবিদের কমবেশি
প্রভাবিত করেছে।
(২) বোক্কাচো (১৩১৩-১৩৭৫)
এই সময়ের একজন অন্যতম মানবতাবাদী লেখক হলেন গিওভান্নি বোক্কাচো (১৩১৩-
১৩৭৫)। তিনি ইতালির গদ্য সাহিত্যের জনক। তাঁর লিখিত ’ডেকামেরেন’ গ্রন্থ ইতালির গদ্য
সাহিত্যের পথ প্রদর্শকের ভ‚মিকা পালন করেছে। তিনি গ্রিক ভাষা শিক্ষা করেন এবং মহাকবি
হোমারের দুটি মহাকাব্য ’ইলিয়ড’ ও ’ওড়েসা’ লাতিন ভাষায় অনুবাদ করেন। বোক্কাচোর
আরেকটি কৃতিত্ব হলো গ্রিক ও রোমান যুগের প্রাচীন পান্ডুলিপি সংগ্রহ এবং এগুলির কপি
প্রস্তুত করে তরুণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা। মানুষের কর্মকান্ডের ওপর গভীরভাবে
আস্থাশীল, মানুষের অমিত সম্ভাবনা শক্তিতে বিশ্বাসী বোক্কাচোর লেখনী ও চিন্তাধারা ইতালির
তরুণদেরকে গভীরভাবে আন্দোলিত করেছিল।
(চ) মানবতাবাদী শিল্পীদের অবদান
পঞ্চদশ শতকের মানবতাবাদী শিল্পীরা রেনেসাঁসের সৃষ্টি এবং বিকাশে এক অভ‚তপূর্ব ভ‚মিকা
পালন করেছিল। মধ্যযুগের শিল্পকলার বিষয়বস্তু ছিল ঈশ্বর এবং যিশু। মানবতাবাদী শিল্পীদের
শিল্পকার্যের বিষয়বস্তু ছিল মানুষ ও পৃথিবীতে মানুষের জীবন। পৃথিবীতে মানুষের দুঃখ কষ্ট
আনন্দ বেদনা প্রভৃতি ফুটিয়ে তোলার মধ্য দিয়ে এই সকল শিল্পী শিল্পকলার ইতিহাসে এক

বিপ্লব সাধন করেন। এই সকল শিল্পীর কর্মতৎপরতার ফলে শিল্পের বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়ায়
মানুষ ও প্রকৃতি। মানবতাবাদী শিল্পীদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলেন- লিওনার্দো দ্যা
ভিঞ্ছি (১৪৫২-১৫১৯)। তিনি একজন বৈজ্ঞানিক, কবি এবং সঙ্গীতবিশারদ। তবে শিল্পী
হিসেবেই তিনি সমধিক পরিচিত। শিল্পকলার দুটি শাখা- ভাস্কর্যকলা এবং চিত্রকলায় তিনি
অবাধে বিচরণ করেছেন। তাঁর ’মোনালিসা’ এবং ইতালির মিলান গির্জার দেয়ালে অঙ্কিত ’শেষ
ভোজ’ ছবি দুটি সারা পৃথিবীর চিত্র শিল্পীদের কাছে বিস্ময়ের বস্তু। অন্য বিখ্যাত শিল্পীরা হলেন
র‌্যাফায়েল (১৪৮৩-১৫২০), মাইকেল এজ্ঞেলো (১৪৭৫-১৫৬৪), টিশিয়ান (১৪৭৭-১৪৭৬)
প্রমুখ। র‌্যাফায়েলের ’কুমারি’ চিত্র এবং মাইকেল এঞ্জেলোর ’শেষ বিচার’ সারা পৃথিবীর শিল্প
ভান্ডারের অমূল্য সম্পদ। এই সকল শিল্পীদের প্রয়াস ও প্রচেষ্টায় শিল্পের বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়ায়
জীবন ও জগতের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক। তাঁদের কর্ম, চিন্তা এবং দর্শন আধুনিক শিল্পকলার
ভিত্তি তৈরি করে।
(ছ) কন্সটান্টিনোপলের পতন ঃ ১৪৫৩
পঞ্চদশ শতাব্দীর ইউরোপীয় কিম্বা ইতালিয় রেনেসাঁসের একটি প্রধান কারণ হলো পূর্ব রোমান
সাম্রাজ্যের রাজধানী কন্সটান্টিনোপলের পতন। ১৪৫৩ সালে উসমানীয় তুর্কি সুলতান দ্বিতীয়
মোহাম্মদ এই শহরটি দখল করলে এখানকার পন্ডিতেরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিশেষত
ইতালিতে পাড়ি জমায়। এই সকল পন্ডিতেরা ইতালির বিভিন্ন স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা
পেশায় যোগদান করে। মধ্যযুগের অন্যতম প্রধান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র কন্সটান্টিনোপলের
পন্ডিতেরা ঐতিহ্যগতভাবেই গ্রিক জ্ঞান বিজ্ঞানের ধারক ও বাহক ছিলেন। ইতালিতে তাদের
আগমনের মধ্য দিয়ে প্রাচীন গ্রিক ও রোমান যুগের সাহিত্য, দর্শন, গণিত, ইতিহাস, বিজ্ঞান
প্রভৃতি জ্ঞানের ব্যাপক প্রচার ও প্রসার ঘটে। তাদের প্রচেষ্টায় প্রাচীন জ্ঞানের সাথে বিদ্যমান
জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বয়ের ভেতর দিয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞান, চিন্তা - চেতনা এবং মনন সাধনার ধারায়
এক গুণগত পরিবর্তন সাধিত হয়ে মহা আলোড়নের সৃষ্টি হয়। পরিণামে শুরু হয় রেনেসাঁস বা
নবজাগরণ।
(জ) মুদ্রণযন্ত্রের আবিস্কার
ইউরোপীয় রেনেসাঁসের একটি কার্যকর কারণ হলো মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কার। জার্মান দেশের
অধিবাসী জন গুটেন বার্গ (১৪০০-১৩৬৮) ১৪৫০ সালের দিকে সিসার টাইপ আবিস্কার
করেন। গুটেনবার্গের মুদ্রা যন্ত্র দ্বারা ১৪৫৪-৫৬ সালে প্রথম বাইবেল মুদ্রিত হয়। এই ল্যাটিন
ভাষায় বাইবেল ছাপা হওয়ার পূর্বে বই এবং ধর্মগ্রন্থ হাতে লিখে প্রতিলিপি প্রস্তুত করে প্রচার
করা হতো। এই জন্য বিশেষতঃ জনসাধারণের মাঝে বাইবেলের কোনো প্রচলন ছিল না।
গুটেনবার্গের আবিষ্কারের ফলে বাইবেল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। এটা তৎকালীন
সমাজ জীবনে এক যুগান্তর ঘটিয়ে দেয়।
(ঝ) প্রাচীন পান্ডুলিপি উদ্ধার ও সংরক্ষণ
প্রাচীন পান্ডুলিপি আবিষ্কার, উদ্ধার এবং সংরক্ষণ ইউরোপে নবজাগরণ সৃষ্টিতে সহায়ক ভ‚মিকা
পালন করেছিল। পঞ্চদশ শতকে ইউরোপে প্রাচীন পান্ডুলিপি উদ্ধারের কাজ শুরু হয়। এই
কাজটি ছিল পরিশ্রম সাপেক্ষ এবং আর্থিক দিক ব্যয়বহুল। যাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এই

পান্ডুলিপি সংগ্রহ এবং সংরক্ষণের বিষয়টি সফল হয়েছিল এরা হলেন পোপ পঞ্চম নিকোলাস
(১৪৪৭-১৪৫৫), পোপ দ্বিতীয় জুলিয়াস (১৫০৩-১৩) এবং পোপ দশম লিও (১৫১৩-
১৫২১)। তাদের প্রচেষ্টা ও আর্থিক সাহাহ্যে রোমে বেশ কয়েকটি প্রন্থাগার নির্মিত হয়েছিল।
লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত এই সকল প্রাচীন পান্ডুলিপি রোমকে এক জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে পরিণত
করেছিল। এর ফলে বেগবান হয়েছিল রেনেসাঁসের গতি।
(ঞ) ইতালিতে রেনেসাঁস শুরু হওয়ার কারণ
একথা পূর্বেই আলোচিত হয়েছে যে ইতালীয় রেনেসাঁসকে রেনেসাঁসের আদি পর্ব হিসেবে
চিহ্নিত করা হয়। এই রেনেসাঁস ইতালিতে শুরু হওয়ার কয়েকটি কারণ বিদ্যমান ছিল।
প্রথমত, ইতালির ভৌগোলিক অবস্থান। ভ‚মধ্য সাগরের তীরবর্তী দেশ হওয়ার কারণে মধ্যযুগে
ইতালি ব্যবসা-বাণিজ্যে ইউরোপের অন্যান্য দেশের চেয়ে অগ্রগামী ছিল। উপরন্তু সাগর
তীরবর্তী অবস্থানের কারণে ইউরোপের মূল ভ‚খন্ডের সামন্ত আর্থ-সামাজিক কাঠামো
ইতালিকে ততটা প্রভাবিত করেনি। ফলে রেনেসাঁস সৃষ্টির অনুক‚ল পরিস্থিতি এখানে বিরাজমান
ছিল।
দ্বিতীয়ত, ইতালীয়রা বরাবরই প্রাচীন গ্রিক ও রোমান যুগের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির
ধারক বাহক ছিলেন। এই প্রাচীন সভ্যতার ঐতিহ্য তাদেরকে নবজাগরণে উদ্বুদ্ধ করেছিল।
তৃতীয়ত ইতালির ধর্মাধিষ্ঠানসমূহ ছিল জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার কেন্দ্র। এই জন্য দেখা যায় যে
প্রাচীন পান্ডুলিপি সংগ্রহে পোপগণ পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেছেন। এটাও ইতালিতে রেনেসাঁস
শুরুর অন্যতম কারণ। চতুর্থত ইতালি ছিল বিভিন্ন জাতির মিলন ক্ষেত্র। এখানে ফ্রাঙ্ক, জার্মান,
নর্মান, গথ প্রভৃতি জাতি বসবাস করতো। এই বহু জাতির সহাবস্থানের ফলে এখানকার
সামাজিক জীবনে সহমর্মিতা বিরাজ করতো। এই জন্য ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে
পন্ডিতেরা এখানে আগমন করেছিলেন।

পাঠোত্তর মূল্যায়ন
ক. নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
১। স্পেনের কবিরা রচনা করেন -
(ক) প্রেমের কবিতা (খ) রাজনৈতিক কবিতা
(গ) লোকজ ঐতিহ্যাশ্রয়ী কবিতা (ঘ) আধুনিক কবিতা।
২। ফ্লোরেন্স শহরটি অবস্থিত -
(ক) দক্ষিণ ইতালিতে (খ) উত্তর ইতালিতে
(গ) দক্ষিণ ফ্রান্সে (ঘ) উত্তর ফ্রান্সে
৩। ডেকামেরেন রচনা করেন -
(ক) পেত্রার্ক (খ) বোক্কাচো
(গ) হোমার (ঘ) সেক্সপিয়র
৪। মোনালিসা ছবির শিল্পী কে?
(ক) লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্ছি (খ) টিশিয়ান
(গ) র‌্যাফায়েল (ঘ) মাইকেল এঞ্জেলো
৫। মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কারক -
(ক) গুটেনবার্গ (খ) আর্থার
(গ) জুলিয়ট (ঘ) দশম লিও।
উত্তর : ১। (গ) ২। (খ), ৩। (খ), ৪। (ক), ৫। (ক)।
(খ) রচনামূলক প্রশ্ন
১। ইউরোপে রেনেসাঁস সৃষ্টিতে মানবতাবাদী লেখকদের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করুন
২। রেনেসাঁস যুগের শিল্পীদের কর্মকান্ডের বিবরণ প্রদান করুন
৩। ইতালীতে রেনেসাঁস শুরু হয়েছিল কেন?
(গ) সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। রেনেসাঁসের আদি পর্ব বলতে কি বুঝায়?
২। কন্সটান্টিনোপলের পতন হয় কখন ?
৩। গুটেনবার্গ কে?

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]