১৯৪৮ সালের ফরাসি বিপ্লবের কারণগুলো বর্ণনা করুন। ফ্রান্সে বিপ্লবের ফল কি হয়েছিল?
১৮৩০ সালের বিপ্লবের সাথে ১৮৪৮ সালের বিপ্লবের তুলনামূলক বিচার করুন।


১৮৩০ সালের জুলাই বিপ্লবের ফলে যে রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল তা অনেকেরই সন্তুষ্টি বিধান করতে
পারেনি। বিভিন্ন ঘটনা ও কার্যকলাপকে কেন্দ্র করে ফ্রান্সের জনসাধারণ বিদ্রোহী হয়ে ওঠে এবং
রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে দ্বিতীয় সাধারণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করে। এই বিপ্লব সংগঠিত হওয়ার পশ্চাতে
নানাবিধ কারণ পরিলক্ষিত হয়।
১। লুই ফিলিপের মধ্যপন্থা নীতি
১৮৩০ সালের জুলাই বিপ্লবের সাফল্যের ফলশ্রæতি হিসেবেই লুই ফিলিপ সিংহাসনে আরোহণ করেন।
এ কারণে তিনি এটা উপলব্ধি করেন যে, জনসাধারণের সমর্থনের উপরেই তার ভবিষ্যত নির্ভরশীল।
তিনি নানাভাবে বিপ্লবের আদর্শের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে জনসাধারণের সন্তুুষ্টি বিধানে প্রয়াসী হন।
কিন্তু এতে করে তিনি আশানুরূপ সাফল্য অর্জনে ব্যর্থ হন। তিনি আপাতদৃষ্টিতে বিপ্লবের আদর্শের প্রতি
সহানুভূতি দেখালেও, প্রকৃতপক্ষে তিনি মধ্যপন্থা অনুসরণ করেন। নানা মতাদর্শ ও দলে বিভক্ত ফ্রান্সে
তাঁর শাসন ব্যবস্থা না ছিল রক্ষণশীল, না ছিল উদারপন্থী, না ছিল নরমপন্থী ফলে বিভিন্ন দলের আস্থা
অর্জনে তিনি ব্যর্থ হন। তাঁর এ ব্যর্থতাই বিপ্লব অনিবার্য করে তোলে।
২। রাজনৈতিক দলের মাঝে বিভক্তি ও অসন্তোষ
জুলাই রাজতন্ত্রের ভিত্তি প্রথম থেকে ছিল দুর্বল। এই রাজতন্ত্রের পেছনের শক্তি হিসেবে ফ্রান্সের কোনো
প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল বা স¤প্রদায়ের সহানুভূতি ছিলনা। দশম চার্লস এর গদি ত্যাগের পর
সাধারণপন্থী দল পুনরায় রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিরোধী ছিল। কিন্তু রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে তারা আশা
করেছিল যে, লুই ফিলিপ উদার জাতীয় নীতি অনুসরণ করে গণতান্ত্রিক অগ্রগতির দিকে দেশকে
পরিচালিত করবেন। কিন্তু তাদের সে আশা পূর্ণ হয়নি। বুরবোঁ বংশের সমর্থকগণ জুলাই রাজতন্ত্রকে
অবৈধ ও লুই ফিলিপকে জবর দখলকারী বলে মনে করে প্রথম থেকে তারঁ বিরুদ্ধাচরণ করতে থাকে।
বোনাপার্টিস্ট দল লুই কর্তৃক অনুসৃত দুর্বল ও ফ্রান্সের পক্ষে অমর্যাদাকর পররাস্ট্র নীতির তুলনা করে
লুই ফিলিপকে প্রথম থেকে পছন্দ করতেন না।
উপরি-উক্ত দলগুলির ন্যায় ফ্রান্সের শক্তিশালী সমাজতন্ত্রী দলও লুই বøাঙ্কএর নেতৃত্বে রাজতন্ত্রের
বিরোধিতা করতে থাকে। ফ্রান্সের শিল্প বিপ্লবের ফলে যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তন সংঘটিত
হয়েছিল তা রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও প্রতিফলিত হয়। শিল্প প্রসারের সাথে সাথে দেশে নতুন নতুন
কলকারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ধনপতিদের হাতে অনেক কাঁচা পয়সাও এসেছিল। কিন্তু সে অর্থের
অসম বন্টনের ফলে শ্রমিক শ্রেণীর অর্থনৈতিক অবস্থার কোনো পরিবর্তন সাধিত হয়নি। শ্রমিক সংঘ
স্থাপনেরও কোনো আইন ছিলনা। এ কারণে শ্রমিকদের মজুরি চাকুরি ও এ গুলোর স্থায়িত্ব মালিক



শ্রেণীর ইচ্ছা অনিচ্ছার উপর নির্ভর করত। আর এ কারণে শ্রমিক শ্রেনীর মাঝে গভীর অসন্তোষের সৃষ্টি
হয় এবং লুই বø্যাঙ্ক ও সেন্ট সাইমন প্রভৃতি সমাজতান্ত্রিকদের নেতৃত্বে ফ্রান্সে শ্রমিক আন্দোলন আরম্ভ
হয়। সমাজতন্ত্রবাদী নেতা সেন্ট সাইমন সর্বপ্রথম সকল শ্রেণীর স্বার্থে ফরাসি সমাজের পুনর্গঠনের
ব্যাপারে সমাজতান্ত্রিক পরিকল্পনার কথা প্রচার করেন। তাঁর মতাদর্শ ছিল এই যে, রাষ্ট্র উৎপাদনের
সকল উপরকণগুলি নিয়ন্ত্রণ করবে কিন্তু শ্রমিকদের শ্রম ও দক্ষতার ভিত্তির উপর শিল্প-সংস্থাগুলি সংগঠন
করবে। লুই বø্যাঙ্ক -এর মত বাস্তববাদী রাজনীতিবিদ সেন্ট সাইমনের মতবাদ জনপ্রিয় করে তোলেন।
প্রকৃতপক্ষে ফরাসি সমাজতন্ত্রীদের মাঝে লুই বøাঙ্কই রাজনৈতিক সংগঠন ও দলীয় কর্মসূচি প্রস্তুত করে
জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি জুলাই রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে এবং পরবর্তীকালে প্রজাতন্ত্র
প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছিলেন। বিভিন্ন রচনার মাধ্যমে লুই বø্যাঙ্ক
ফরাসি শ্রমিকগণকে ফ্রান্সের তৎকালীন অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে সজাগ করে তোলেন। তিনি লুই
ফিলিপ-এর সরকারকে ধনীদের সরকার, ধনীদের দ্বারা গঠিত সরকার এবং ধনীদের জন্য গঠিত
সরকার বলে কঠোর ভাষায় তিরস্কার করেন। হ্যাজেন এর ভাষায় “ঐব (খড়ঁরং ইষধহপ) ফবহড়ঁহপবফ
রহ াবযবসবহঃ ঃবৎসং ঃযব মড়াবৎহসবহঃ ড়ভ ঃযব নড়ঁৎমবড়রংরব ধং মড়াবৎহসবহঃ ড়ভ ঃযব ৎরপয নু ঃযব
ৎরপয ধহফ ভড়ৎ ঃযব ৎরপয”। লুই বø্যাঙ্ক লুই ফিলিপ এর সরকারকে উৎখাত করে গণতন্ত্রের ভিত্তির উপর
সরকার গঠনের কথা প্রচার করেন। তার রচিত ‘ঞযব ঙৎমধহরংধঃরড়হং ড়ভ ষধনড়ঁৎ’ নামক গ্রন্থের মাধ্যমে
প্রচার করতে থাকে যে, ব্যক্তিগত মূলধন (চৎরাধঃব ঈধঢ়রঃধষ) ও স্বাধীন প্রতিযোগিতা (ঋৎবব
ঈড়সঢ়বঃরঃরড়হ) শ্রমজীবীদের স্বার্থের পরিপন্থী। তার মতে বর্তমান শ্রমিকদের আর্থিক মুক্তি লাভ করার
জন্য প্রথমেই বুর্জোয়াতন্ত্রের অবসান প্রয়োজন। সমাজতন্ত্রীদের প্রস্তাব ব্যক্তিগত মূলধন ও স্বাধীন
প্রতিযোগিতার অবসান এবং শিল্প প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রায়ত্বকরণ লুই ফিলিপ ও তার বুর্জোয়া মন্ত্রীগণ গ্রহণ
করতে অস্বীকৃত হলে ফ্রান্সের সর্বত্র গুপ্ত সমিতিগুলি সক্রিয় হয়ে ওঠে। নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে
তাদের দাবি পূরনের কোনো সম্ভাবনা নেই দেখে শ্রমিকগণ রাজতন্ত্রের অবসান ঘটাবার জন্য প্রস্তুত হতে
থাকে।
মোটামুটি ভাবে লুই ফিলিপের শাসনের প্রতি ফ্রান্সের প্রায় সকল দলই বিরোধিতা করে। ন্যায্য অধিকার
নীতিতে বিশ্বাসী রাজতন্ত্রী, উগ্র ক্যাথলিক, লুই বø্যাঙ্ক এর নেতৃত্বে পরিচালিত সমাজতন্ত্রীগণ এবং
নেপোলিয়নের ঐতিহ্যের প্রতি আস্থাশীল বোনাপাটিস্টগণ সকলেই লুই ফিলিপের মধ্যপন্থী শাসনব্যবস্থার
পরিবর্তন করতে সোচ্চার হয়ে উঠে।
৩। মধ্যবিত্তশ্রেণীর প্রাধান্য
কোনো শক্তিশালী রাজনৈতিক দলের সমর্থন না থাকায় লুই ফিলিপ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মুখাপেক্ষী হয়ে
তাদের পরামর্শে দেশ শাসন করতে থাকেন। তৎকালীন ফ্রান্সে ভোটদানের অধিকার বা প্রতিনিধি
পরিষদের সদস্য হওয়ার জন্য অর্থ বা সম্পত্তিগত যোগ্যতা দেখাতে হত। যারা ২০০ ফ্রাংক বাৎসরিক
খাজনা বা কর প্রদান করত বা যারা ৫০০ ফ্রাংক পরিমাণ অর্থ প্রদান করতে পারত কেবলমাত্র তারাই
প্রতিনিধি পরিষদে প্রবেশাধিকারী হত। এইরূপ ব্যবস্থাকে গণতন্ত্রের পরিবর্তে অভিজাত সমাজতন্ত্র বলা
যায়। এর ফলে নি¤œবিত্ত ও বিত্তহীন শ্রেণীর পক্ষে ভোট দেওয়া বা পরিষদের সদস্য হওয়া ছিল অসম্ভব।
জনসাধারণ উপলব্ধি করে যে, জুলাই রাজতন্ত্র বুর্জোয়া শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষার্থেই নিয়োজিত এবং
জনসাধারণের স্বার্থের প্রতি সম্পূর্ণ উদাসীন। সুতরাং, জনসাধারণ পুনরায় বিপ্লবের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ
করে।
৪। পররাষ্ট্রনীতির দুর্বলতা ও ব্যর্থতা
লুই ফিলিপের জনপ্রিয়তা হ্রাস পাওয়ার অপর প্রধান কারণ ছিল তিনি নেপোলিয়নের ন্যায় শক্তিশালী ও
গৌরবোজ্জ্বল পররাষ্ট্রনীতি মোটেই অনুসরণ করতে পারেননি। ভিয়েনার ব্যবস্থাদির দ্বারা ফ্রান্সের যে
মর্যাদাহানি হয়েছিল তা ফরাসি জাতি কখনোই ভুলতে পারেনি। বলিষ্ঠ ও চমকপ্রদ পররাষ্ট্রনীতির দ্বারা


ফ্রান্সের হৃত গৌরব পুনরুদ্ধার করা হোক, ফরাসি জাতির এটাই কামনা ছিল। ইতালি ও পোল্যান্ডের
স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েও লুই ফিলিপ নিষ্ক্রিয় দর্শকের ভূমিকা পালন
করেন। বেলজিয়ামের বিদ্রোহ তিনি ফ্রান্সের স্বার্থের অনুক‚লে আনতে যেয়ে ইংল্যান্ডের কূটনীতির নিকট
পরাজিত হন। ১৮৪০ সালে মিশরের মোহম্মদ আলী যখন তুরস্ক আক্রমণ করতে অগ্রসর হন, তখন
ফ্রান্সের জনগণ আশা করেছিল যে ফিলিপ নেপোলিয়নের ন্যায় নিকট প্রাচ্যের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সক্রিয়
ভূমিকা গ্রহণ করবেন; কিন্তু পুনরায় তিনি ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পামারস্টোন কর্তৃক প্রতিহত হন। আবার
পারিবারিক স্বার্থে স্পেনের সাথে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে ফিলিপ বিদেশে ফ্রান্সের সম্মান ক্ষুন্ন
করেন। এই সকল কারণে জুলাই রাজতন্ত্রের পতন অনিবার্য হয়ে পড়ে।
৫। বিপ্লবের প্রত্যক্ষ কারণ
পরিশেষে ভোটাধিকারের প্রশ্নই বিপ্লবকে তরান্বিত করে। ফ্রান্সের প্রতিনিধি পরিষদেও (ঈযধসনবৎ ড়ভ
উবঢ়ঁঃরবং) নির্বাচন প্রথা ক্রটিপূর্ণ ছিল। সমগ্র ফ্রান্সে সেই সময় মাত্র দুই লক্ষ ভোটার ছিল এবং
পরিষদের সদস্য সংখ্যা ছিল ৪৮০। বিভিন্ন দুর্নীতি ও প্রলোভন দ্বারা ভোট সংগ্রহের ব্যবস্থা ছিল।
নির্বাচনের ত্রæটি-বিচ্যুতি দূরীকরণার্থে প্রতিনিধি পরিষদে এক সংস্কারপন্থী দলের সৃষ্টি হয়। এই দলের
নেতা ছিলেন থিয়ার্স (ঞযরবৎং)। থিয়ার্সের নেতৃত্বে এই দল ভোটাধিকার স¤প্রসারণের দাবি জানিয়ে
একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে। কিন্তু ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী গিজো (এঁরুড়ঃ) এই প্রস্তাব গ্রহণে অসম্মতি জানান।
তিনি ঘোষণা করেন যে, পূর্ণবয়স্কদের ভোটাধিকারের নীতি ফ্রান্সে কোনো অবস্থাতেই গৃহীত হতে পারে
না। এই পরিস্থিতিতে সংস্কারপন্থী দল এক নতুন পথ অবলম্বন করে তাদের দাবি জনপ্রিয় করার চেষ্টা
করে। ভোজ সভার আয়োজন করে সংস্কার পন্থীগণ বক্তৃতার দ্বারা তাদের দাবি প্রচার করতে থাকেন।
অল্প দিনের মধ্যেই সংস্কারের দাবি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু গিজোর অনমনীয় মনোভাবে বিরক্ত হয়ে
সংস্কাপন্থীগণ প্যারিসে এক বিরাট জনসভার আয়োজন করে। সরকার এই সভা বে-আইনি ঘোষণা
করলেও জনসাধারণ এই সভায় যোগদান করে গিজো মন্ত্রীসভার পদত্যাগের দাবি জানায়। রাজা ফিলিপ
ভীত হয়ে সংস্কার প্রবর্তন করতে সম্মত হন এবং গিজোকে পদচ্যুত করেন। কিন্তু এতেও অশান্তিদূর
হয়নি। সংস্কারপন্থী দল গিজোর বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করলে গিজোর দেহরক্ষীগণ
জনসাধারণের উপর গুলি বর্ষণ করে, এতে বহু লোক হতাহত হয়। এই সংবাদ নগরির সর্বত্র ছাড়িয়ে
পড়লে উত্তেজনার সৃষ্টি হয় এবং প্যারিসবাসীগণ সশস্ত্র বিদ্রোহ করে। চারিদিকে দাঙ্গা হাঙ্গামা শুরু হয়।
এর কিছুদিন পূর্বে সংস্কার দীর্ঘজীবী হোক (খড়হম খরাব জবভড়ৎস) এর শ্লোগান সকলের মুখে মুখে ছিল।
ফেব্রæয়ারি মাসে প্যারিসে দাঙ্গা হাঙ্গামা শুরু হলে ‘প্রজাতন্ত্র দীর্ঘজীবী হোক’ এ শ্লোগান হতে থাকে। এই
অবস্থায় লুই ফিলিপ নিজ পৌত্রের অনুকূলে সিংহাসন ত্যাগ করে ইংলন্ডে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।
অতপর সংস্কারপন্থী দলগুলো সম্মিলিত হয়ে রাজতন্ত্রের অবসান করে সাধারণতন্ত্রীদের নেতা লা মার্টিনের
নেতৃত্বে ফ্রান্সে ২৬ ফেব্্েরুয়ারি সাধারণতন্ত্র ঘোষণা করে। এটাই ফ্রান্সের দ্বিতীয় সাধারণতন্ত্র নামে
পরিচিত। শ্রমিক শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষা ও সকলের জন্য আয়ের ব্যবস্থা করা এই সরকারের উদ্দেশ্য বলে
ঘোষিত হয়।
ফ্রান্সে এ বিপ্লবের ফলাফল
নতুন শাসন ব্যবস্থায় ফ্রান্সের জাতীয় প্রতিনিধি পরিষদ (ঈযধসনবৎ ড়ভ উবঢ়ঁঃরবং) এর মধ্য থেকে
দশজনকে নিয়ে অস্থায়ী সরকারের একটি কার্যনির্বাহী (ঊীবপঁঃরাব) সমিতি গঠন করা হয়। প্রাপ্ত
বয়স্কদের ভোটাধিকার স্বীকৃত হয়। প্রাপ্ত বয়স্কদের ভোটের দ্বারা নির্বাচিত ৭৫০ জন সদস্যের এক
কক্ষযুক্ত একটি আইনসভা গঠিত হয়। চার বৎসরের জন্য প্রজাতন্ত্রের একজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের
ব্যবস্থা গৃহীত হয়। বলা হয় ১৭৮৯ সালের ফরাসি বিপ্লব ফ্রান্সের স্বেচ্ছাচারি রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে;


১৮৩০ সালের বিপ্লব যাজক ও উগ্রতন্ত্রীদের প্রতিপত্তি খর্ব করে এবং ১৮৪৮ সালের বিপ্লব ধনী মধ্যবিত্ত
শ্রেণীর প্রাধান্য বিলুপ্ত করে জনসাধারণের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করে।
১৮৪৮ সালের বিপ্লব রাজনৈতিক গণতন্ত্রের ইতিহাসের এক যুগান্তকারী ঘটনা। কারণ, ভোটাধিকার
স¤প্রসারিত হওয়ায় ক্ষমতা মধ্যবিত্ত শ্রেণীর হাত হতে সাধারণ মানুষের হাতে চলে যায়। অর্থনৈতিক
গণতন্ত্রের ইতিহাসেও এই বিপ্লব এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা কারণ এটা সমাজতন্ত্রের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সূচনা
করে। ১৮৪৮ সালের ফরাসি বিপ্লব ছিল মাত্র তিন দিন স্থায়ী, এত স্বল্পকালীন বিপ্লব এর পূর্বে ফ্রান্সে
কখনো ঘটেনি। উদারনৈতিক দাবি দাওয়ার প্রশ্ন নিয়ে এই বিপ্লব শুরু হয় এবং সমাজতন্ত্রবাদী প্রজাতন্ত্র
প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এর অবসান হয়। কর্মসংস্থানের জন্য জাতীয় কর্মশালা প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং শ্রমিকদের
কাজের সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। এছাড়া সকলের জন্য আয়ের ব্যবস্থা করা হয় ‘মজুর শ্রেণীর
স্বার্থরক্ষা ও সাধারণতন্ত্রকে সুদৃঢ় ভিত্তির উপর স্থাপন করা নতুন প্রজাতন্ত্রের প্রধান লক্ষ্য বলে ঘোষণা
করা হয়। অর্থনৈতিক ভিত্তির উপর গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা স্থাপনের প্রচেষ্টা সে সময় ফ্রান্সেই প্রথম
দেখা যায়। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ভোটদান সম্পর্কিত বিষয়ে বিশেষ সুযোগ সুবিধা বিলুপ্ত হয়। এই বিপ্লবের
ফলে ফ্রান্সের উপনিবেশগুলোতে দাসত্ব-প্রথা বিলুপ্ত হয় এবং লক্ষ লক্ষ সার্ফ বা ভূমিদাস মুক্তি লাভ
করে।
ইউরোপে ফেব্রæয়ারি বিপ্লবের প্রতিক্রিয়া
ইউরোপের একাধিক রাষ্ট্রে ১৮৪৮ সালের ফরাসি বিপ্লব এক ব্যাপক আন্দোলনের সৃষ্টি করে। ফরাসি
রাজ লুই ফিলিপের সিংহাসন ত্যাগ ও ইংল্যান্ডে তাঁর আশ্রয় গ্রহণের সংবাদ প্রচারিত হওয়ার সাথে সাথে
ইউরোপের বিভিন্ন রাষ্ট্রে প্রচলিত শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলন শুরু হয়। মেটারনিকের উক্তি
‘ডযবহ ঋৎধহপব পধঃপযবং পড়ষফ , ঊঁৎড়ঢ়ব ংহববুবং' যথার্থ প্রমাণিত হয়। ইউরোপের প্রায় সর্বত্র ফরাসি
বিপ্লবের প্রতিক্রিয়া তীব্রভাবে দেখা দেয়। অস্ট্রিয় সাম্রাজ্যের ভাঙ্গন ও মেটারনিকের পতন সর্বত্র গণআন্দোলনকে উৎসাহিত করে। বিপ্লবের প্রতিক্রিয়া ইংল্যান্ডের দেখা দেয়। সেখানে চার্টিস্ট আন্দোলন
(ঈযধৎঃরংঃ সড়াবসবহঃ) ও ‘স্বাধীন আয়ারল্যান্ড’ আন্দোলন অধিকতর তীব্র আকার ধারণ করে।
অস্ট্রিয়া
মেটারনিক ১৮৩০ সালের ফরাসি বিপ্লবের প্রভাব হতে অস্ট্রিয় সাম্রাজ্যকে রক্ষা করতে সমর্থ
হয়েছিলেন। কিন্তু ১৮৪৮ সালের ফরাসি বিপ্লবের প্রতিক্রিয়া মেটারনিক কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত শাসনতন্ত্রের
অবসান ঘটায়। মিলান, ভেনিস, বোহেমিয়া, হাঙ্গেরি এবং ভিয়েনায় প্রায় একই সময়ে গণআন্দোলন
আরম্ভ হলে মেটারনিক চ্যান্সেলর পদ পরিত্যাগ করে ইংল্যান্ডে পলায়ন করেন। তাঁর পতনের সাথে সাথে
‘মেটারনিক ব্যবস্থারও, পতন হয়। ভিয়েনা শহর ছাত্র ও অধ্যাপকদের কবলিত হয়। সম্রাট প্রথম
ফার্দিনান্ড এই অবস্থায় বাধ্য হয়ে উদারনৈতিক শাসনতন্ত্র ঘোষণা করে তাঁর ভাতুষ্পুত্র প্রথম ফ্রান্সিস
জোসেফের অনুকূলে সিংহাসন ত্যাগ করেন। ভিয়েনার অনুকূলে অস্ট্রিয়া অধিকৃত মিলান ও ভেনিসে
আন্দোলন শুরু হয়। সর্বত্র অস্ট্রিয়ার সেনাবাহিনী বিতাড়িত হয়। প্রাগে চেক ও শ্লাভ জাতিগোষ্টি
আন্দেলন করে। তারা স্বায়ত্তশাসন ও জার্মানদের সাথে সমঅধিকার দাবি করে। অস্ট্রিয়ার সম্রাট
স্বাধীন রাষ্ট্র স্বীকার করতে বাধ্য হন। হাঙ্গেরির প্রধান শহর বুদাপেস্টে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন লুই
কসুথ (কড়ংংঁঃয) যাকে হাঙ্গেররি ম্যাৎসিনি বলে অভিহিত করা হয়। পরিস্থিতির চাপে অস্ট্রিয়ার সম্রাট
হাঙ্গেরিয়ানদের দাবি পূরণ করতে বাধ্য হন।
জার্মানি


জার্মানির বিভিন্ন রাষ্ট্রেও ১৮৪৮ সালের ফরাসি বিপ্লব সংক্রমিত হয়। দেশের সর্বত্র ব্যাপক বিদ্রোহ
সংঘঠিত হয় এবং জনসাধারণ তাদের শাসকবর্গকে শাসনতান্ত্রিক সংস্কার প্রবর্তন করতে বাধ্য করে।
আন্দেলনের চাপে ক্রমশ স্যাক্সনি ব্যভেরিয়াও ও প্রæশিয়া ছাড়া অন্যান্য জার্মান রাষ্ট্রের নৃপতিবর্গ
আন্দোলনকারীদের সকল দাবি মেনে নেন। কিন্তু মেটারনিকের পতনের সংবাদ পাওয়া মাত্র ও প্রæশিয়ার
রাজ চতুর্থ ফ্রেডারিখ নতুন শাসনতন্ত্র ঘোষণা করেন এবং তার দৃষ্টান্তঅনুকরণে স্যাক্সনী ব্যাভেরিয়া ও
হ্যাানোবারের শাসক ও নতুন শাাসনতন্ত্র প্রবর্তন করেন। জার্মানির সর্বত্র উদারনীতি জয়যুক্ত হয়। কিন্তু
সামািয়কভাবে সাফল্য লাভ করলেও জার্মানির গণ-আন্দোলন শেষ পর্যন্তব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
অস্ট্রিয়া অত্যন্তকঠোরভাবে হাঙ্গেরির বিদ্রোহ দমন করে। এই সংবাদে উৎসাহিত হয়ে প্রাশিয়ারাজ তাঁর
প্রতিশ্রæতি ভঙ্গ করেন। ফলে অখন্ড জার্মান রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা আপাতত ব্যহত হয়।
ইংল্যান্ড
ইংল্যান্ডেও ফেব্রæয়ারি বিপ্লবের প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। চার্টিস্ট আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে এবং ইয়ং বা
নব্য আয়ারল্যান্ড (ণড়ঁহম ওৎবষধহফ) দলের পরিচালনায় সেখানে এক সশস্ত্র অভ্যুত্থান ঘটে।
১৮৪৮ সালের বিপ্লবের ব্যর্থতার কারণ
১৮৪৮ সালের ফরাসি বিপ্লবকে কেন্দ্র করে ইউরোপের অন্যত্র যে গণবিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল তা
ফ্রান্সের মতই সামায়িক সাফল্য লাভ করেছিল। অধিকাংশ রাষ্ট্রের শাসকগোষ্ঠী জনসাধারণের অনুকূলে
শাসন সংস্কার প্রবর্তন করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্তএই সাফল্য স্থায়ী হতে পারেনি। এর একাধিক
কারণ ছিল। আন্দোলনের উদ্যোগতাদের মাঝে নীতিগত প্রশ্ন নিয়ে মতবিরোধ ছিল। সমাজতন্ত্রী ও
সাধারণতন্ত্রীদের সম্মিলিত চেষ্টায় ফ্রান্সের বিপ্লব জয়যুক্ত হয়েছিল বটে, কিন্তু ফ্রান্সের ভবিষ্যত শাসনপদ্ধতির প্রশ্ন নিয়ে এই দুই দলের মাঝে মতানৈক্য উপস্থিত হয়। এর সুযোগ নিয়ে বোনাপাটিস্ট দলের
নেতা লুই নেপোলিয়ন ফ্রান্সে দ্বিতীয় সাম্রাজ্যের পত্তন করেন।
ইতালি ও জার্মানিতেও বিপ্লবী নেতাদের মাঝে মতানৈক্য দেখা দেয়। ঐক্যবদ্ধ জার্মানির শাসনরীতি
গণতান্ত্রিক না রাজতন্ত্র হবে এ প্রশ্ন প্রধান সমস্যা হয়ে দেখা দেয়। ফলে সর্বসম্মতিক্রমে কোনো শাসনতন্ত্র
রচনা করা সম্ভবপর হয়নি। ইতালির ভবিষ্যত নিয়েও ঘোরতর মত বিরোধ দেখা দেয়। সেখানে
সার্দিনিয়া পিডমন্টের রাজার নেতৃেত্ব রাজতন্ত্র, না পোপের অধীনের এক ধর্মরাজ্য অথবা সমগ্র ইতালি
ব্যাপী এক সাধারণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে এই প্রশ্নগুলির সমস্যা সমাধান করতে নেতৃবর্গ অসমর্থ হন।
পারস্পারিক মত বিরোধের কারণে আন্দোলন সর্বত্রই দুর্বল হয়ে পড়ে এবং মৃতপ্রায় প্রতিক্রিয়াশীল
শক্তিগুলি পুনরায় সঞ্জীবিত হয়ে আন্দোলন দমন করে।
অনুরুপভাবে, হাঙ্গেরির বিপ্লবী নেতা কসুথ ও তার ম্যাগিয়ার জাতিগোষ্ঠী কেবলমাত্র তাদের নিজেদের
জন্যই স্বাধীনতা দাবি করেছিল এবং অস্ট্রিয়ার সাম্রাজ্যভুক্ত অপরাপর জাতিগোষ্ঠীভুক্তদের স্বাধীনতা
দাবির বিরোধিতা করেছিল। পারস্পারিক বিবাদের ফলে সেখানে আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে এবং
অস্ট্রিয়া অতিসহজেই আন্দোলন দমন করে। আপরদিকে বোহেমিয়ার চেকগণ জার্মান জাতির সাথে
একাত্ম হয়ে অসম্মতি জানায়। এইভাবে দলগত বিরোধের ফলে বিপ্লব ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
ইউরোপের কোথাও রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনী বিপ্লবীদের সাথে যোগদান করেনি। অস্ট্রিয়ার সম্রাটের প্রতি
তাঁর সোনাবাহিনীর আনুগত্য অবশেষে সাম্রাজ্যকে নিশ্চিত ধবংসের হাত হতে রক্ষা করে। প্রাশিয়ার
সেনাবাহিনীও রাজার প্রতি অনুগত ছিল। অস্ট্রিয়া ও প্রƒশিয়ার সেনাবাহিনীর সঙ্গে রুশ-জারের
সেনাবাহিনী যোগদান করলে ইউরোপের সর্বত্র প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিগুলি গনআন্দোলন দমন করতে সমর্থ
হয়। এই বিপ্লবের সময় জনসাধারণ সর্বত্রই শাসক শ্রেণীকে উপেক্ষা করেছিল। তাদের সাথে আপোস


মীমাংসায় আনার কোনো চেষ্টা তারা করেনি। ফলে শাসকশ্রেণী বিপ্লবের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশের
পরিবর্তে বিরুদ্ধাচারণ করেন।
১৮৪৮ সালের বিপ্লবের গুরুত্ব
উদারনীতিকদের জন্য বিপ্লব সাফল্য আনতে পারেনি। সর্বক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়াশীলদের জয়লাভ হয় এবং
সর্বক্ষেত্রেই প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির শাসনতন্ত্র অব্যাহত থাকে। কিন্তু এ সত্তে¡ও স্বীকার করতে হবে যে,
বিপ্লব সামগ্রিকভাবে বিফল হয়নি। ইতালির পিডমন্ট ও জার্মানির প্রƒশিয়ায় শাসক কর্তৃক ঘোষিত নতুন
শাসনতন্ত্র বজায় থাকে। এদের দৃষ্টান্তেআতঙ্কিত হয়ে বেলজিয়াম ও হল্যান্ডের নৃপতিদ্বয় শাসন-সংস্কার
করতে বাধ্য হন। ফ্রান্সে রাজতন্ত্রের অবসান হয়। সেখানে সমাজতান্ত্রিক মতবাদ শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
ইউরোপের ভবিষ্যত গণতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে ১৮৪৮ সালের বিপ্লব প্রেরণা যোগায়।
এই দিক দিয়ে এই বিপ্লবের সুদুরপ্রসারী ফল অস্বীকার করা যায় না।
১৮৩০ এবং ১৮৪৮ সালের বিপ্লবের তুলনামূলক আালোচনা
দশম র্চালস কর্তৃক ১৮৪৮ সালের সনদ অমান্য ও প্রতিক্রিয়াশীল শাসন-পদ্ধতি অনুসরণ করার বিরুদ্ধে
প্রতিবাদস্বরূপ ফরাসি জনসাধারণ বিদ্রোহ করেছিল। উদারনৈতিক ভাবধারা হতেই এ বিপ্লবের সৃষ্টি এবং
নিয়মতান্ত্রিক শাসন পদ্ধতি প্রবর্তন করাই ছিল এর লক্ষ্য। এই বিপ্লব সাধারণতন্ত্রী আন্দোলন ছিলনা
এবং রাজতন্ত্রের বিরূদ্ধেও পরিচালিত হয়নি। বিপ্লবীগণ স্বৈরাতন্ত্রের অবসান চেয়েছিল মাত্র। বিপ্লবীগণ
দশম চার্লসকে বিতাড়িত করে গণতন্ত্রে বিশ্বাসী লুই ফিলিপকে সেই আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। কেবল
বেলজিয়ামের ব্যাপারেই কিছুটা পার্থক্য দেখা যায়। সেখানে বিপ্লবীগণ হল্যান্ড হতে মুক্ত হয়ে একটি
স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের দাবি করে।
অপরদিকে ১৮৪৮ সালের বিপ্লবকে সাধারণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন বলা যায়। রাজনৈতিক ও
অর্থনৈতিক কারণেই এই বিপ্লব সংগঠিত হয়েছিল। জনসাধারণ সর্বজনীন ভোটাধিকারের দাবি ও
সমাজতন্ত্রের ভিত্তিতে ফ্রান্সের সমাজ ও অর্থনৈতিক জীবন গঠন করতে চেয়েছিল। কেউ কোনোমতেই
রাজতন্ত্র বহাল রাখতে চায়নি। তাই লুই ফিলিপের পতনের সাথে সাথে ফ্রান্সে দ্বিতীয় সাধারণতন্ত্রের
প্রতিষ্ঠা হয়।
সুতরাং, দুইটি বিপ্লবের উদ্দেশ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। উভয় বিপ্লবই ইউরোপে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি
করেছিল। ১৮৩০ সালের বিপ্লবের স্বরূপ ছিল গণতান্ত্রিক। নিয়মতান্ত্রিক শাসন-পদ্ধতির প্রবর্তন করাই
ছিল এই বিপ্লবের মুখ্য উদ্দেশ্য। একমাত্র বেলজিয়ামেই জাতীয়তাবাদী আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল।
কিন্তু, ১৮৪৮ সালের আন্দোলন ইউরোপের সর্বত্রই জাতীয়তাবাদী ছিল, বিশেষ করে জার্মানি, ইতালি ও
হাঙ্গেরির আন্দোলন।
ফলাফলের দিক থেকে দুই বিপ্লবের মাঝে সাদৃশ্যও বিদ্যমান। উভয়ই শেষ পর্যন্তব্যর্থতায় পর্যবসিত
হয়। ১৮৩০ সালের বিপ্লবের একমাত্র সাফল্য হল বেলজিয়ামের স্বাধীনতা। কিন্তু তাও আবার বিদেশী
শক্তির হস্তক্ষেপের ফলে সম্ভব হয়েছিল। তারা উদারনৈতিক মতবাদ অপেক্ষা আত্মস্বাতন্ত্র্যই অধিকতর
বিশ্বাসী ছিল। অপরদিকে ১৮৪৮ সালের বিপ্লবের ফলে শুধুমাত্র সার্দিনিয়া ও ও প্রæশিয়ায় নিয়মতান্ত্রিক
শাসন ব্যবস্থা চালু হয়েছিল এবং তা এ দুই রাষ্ট্রের শাসকবর্গের উদারতার ফলেই সম্ভব হয়েছিল। ১৮৪৮
সালের বিপ্লবের গুরুত্ব হল এই যে, জনসাধারণের ন্যায় শাসকবর্গ ও নিয়মতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার
প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন। এই দিক দিয়ে বলা যায় যে, ১৮৪৮ সালের বিপ্লব ১৮৩০ সালের
বিপ্লব অপেক্ষা অধিকতর সাফল্য লাভ করেছিল।


সারসংক্ষেপ
১৮৩০ সালের পরবর্তী সময়ে ফ্রান্সের রাজনৈতিক বিশৃংখলা, অসন্তোষ, মধ্যবিত্ত শ্রেণীর প্রভাব ও
সামাজিক অসাম্যের কারণে ১৮৪৮ সালে ফেব্রæয়ারি বিপ্লব সংঘটিত হয়। এর ফলে শুধু ফ্রান্স নয় সারা
ইউরোপ প্রভাবিত হয়। ফ্রান্সে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে, জনসাধারণের রাজনৈতিক প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়
এবং ইউরোপের কয়েকটি দেশে সরকার পরিবর্তন ঘটে। এই বিপ্লবের সাফল্য দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
বিপ্লবীগণ তাঁদের আদর্শ ধরে রাখতে পারেনি। প্রতিক্রিয়াশীলরা পুনরায় তাদের হৃত ক্ষমতা পুনরুদ্ধার
করে এবং শেষ পরিণতিতে বিপ্লব ব্যর্থ হয়।
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস - ২ পৃষ্ঠা-৮৬
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্র্ব্যক্তিক প্রশ্ন
১। ফেব্রæয়ারি বিপ্লবের সময় ফ্রান্সের রাজা কে ছিলেন ?
ক) ষোড়শ লুই খ) চতুর্দশ লুই
গ) লুই ফিলিপ ঘ) তৃতীয় নেপোলিয়ন ।
২। ফেব্রæয়ারি বিপ্লব কবে সংঘটিত হয়েছিল ?
ক) ১৮৪৮ খ) ১৮৩০
গ)১৮১৫ ঘ)১৯৪৮।
৩। প্রতিনিধি পরিষদের সংস্কার পন্থীদের নেতা কে ছিলেন ?
ক) থিয়ার্স খ)সেন্ট সাইমন
গ) লুই বøাঙ্ক ঘ) গিজো।
৪। ফেব্রæয়ারি বিপ্লবের প্রাক্কালে ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন ?
ক) গিজো খ) থিয়ার্স
গ) লুই বøাঙ্ক ঘ) সেন্ট সাইমন।
৫। কাকে হাঙ্গেরির মাৎসিনি বলা হয়ে থাকে ?
ক) লুই কসুথ খ) ষোড়শ লুই
গ) লা মার্টিন ঘ) গিজো।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। লুই ফিলিপের মধ্যপন্থী নীতি কি?
২। লুই বøাঙ্কের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের বর্ণনা দাও।
৩। বিপ্লবের প্রত্যক্ষ কারণ কি ছিল?
৪। ফ্রাান্সে বিপ্লবের ফলাফল কি?
৫। ফেব্রæয়ারি বিপ্লব ব্যর্থ হয় কেন?
রচনামূলক প্রশ্ন
১। ১৯৪৮ সালের ফরাসি বিপ্লবের কারণগুলো বর্ণনা করুন। ফ্রান্সে বিপ্লবের ফল কি হয়েছিল?
২। ফেব্রæয়ারি বিপ্লবের কারণ ও ফলাফল বর্ণনা করুন। ইউরোপে এর কি প্রতিক্রিয়া হয়েছিল?
৩। ১৮৩০ সালের বিপ্লবের সাথে ১৮৪৮ সালের বিপ্লবের তুলনামূলক বিচার করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]