১। ইউটোপীয় সমাজতন্ত্রের ধারণা সম্পর্কে আলোচনা করুন।
২। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের ধারণা সম্পর্কে আলোচনা করুন।


সমাজতন্ত্রএক অর্থে একটি রাজনৈতিক মতাদর্শ(ওফবড়ষড়মু), অন্য অর্থে এটি একটি নির্দিষ্ট সমাজ
ব্যবস্থাও। রাজনৈতিক মতাদর্শ হিসেবে সমাজতন্ত্র সমাজ, প্রকৃতি ও মানুষ সম্পর্কে যে জ্ঞানতত্ত¡
উপস্থাপন করে তাই সেই নির্দিষ্ট সমাজ ব্যবস্থায় অর্থনীতি, রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতিতে প্রতিফলিত
হয়। সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় উৎপাদনের উপায়সমূহের মালিকানায় ব্যক্তির একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণের
স্থলে সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার মধ্য থেকেই ১৯১৭ সালে রাশিয়ায়
বিপ্লবের মাধ্যমে যে সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয় তা ছিল সমাজতান্ত্রিক। তবে সমাজতান্ত্রিক সমাজ
ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় আগেই সমাজতন্ত্রের মতাদর্শ দার্শনিক, প্রবক্তা এবং সংগ্রামীদের লেখা রচনাবলীতে
প্রাচরিত হয়েছে। দীর্ঘদিনব্যাপী সমাজতন্ত্রেবিশ্বাসী শ্রমিক শ্রেণী ও সমাজতন্ত্রের প্রবক্তারা পরিচালনা
করেছেন সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন। ইতিপূর্বে অন্য কোনো সমাজ ব্যবস্থাই সমাজতন্ত্রের মতো একটি
মতাদর্শের তাত্তি¡ক রূপরেখা দাঁড় করিয়ে তা প্রতিষ্ঠিা করার চেষ্টা করেনি। যদিও প্রত্যেক সমাজ
ব্যবস্থারই চরিত্র, আদর্শ এবং কর্মকান্ড থেকে উক্ত সমাজের একটি আদর্শ খুঁজে পাওয়া যায়। সমাজের
অগ্রসর মনীষীরা বিদ্যমান সমাজ ব্যবস্থার স্থলে নতুন সমাজ ব্যবস্থা গড়ার প্রতি জনসাধারণের সচেতনতা
বৃদ্ধি করার জন্য অগ্রসর সমাজব্যবস্থার একটি তাত্তি¡ক ধারণা উপস্থাপন করেন।রেনেসাঁসের মানবতাবাদী
দার্শনিক, কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পীরা সামন্তসমাজ ব্যবস্থায় মানুষের উপর মানুষে শোষণ ও নির্যাতনের
অবসান কামনা করেছিলেন। তবে তাঁরা সবাই পুঁজিবাদী সমাজের তত্ত¡ রচনা করেছেন তা কিন্তু বলা
যাবে না। তাঁরা একটি মানবতাবাদী সমাজ ব্যবস্থাই কামনা করেছিলেন। আধুনিক যুগে ইউরোপে
সামন্তবাদের অবসান ঘটিয়ে শিল্প কলকারখানার মাধ্যমে নতুন উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়।
অর্থনীতিতে এ সমাজ ব্যবস্থাকে ধনবাদী বা পুঁজিবাদী বলা হয়ে থাকে। ধনবাদী সমাজ ব্যবস্থা
নানাভাবেই মানব সভ্যতাকে সমৃদ্ধ করেছিল। কিন্তু এই ব্যবস্থাটিও সমাজের সকল মানুষকে সন্তুষ্ট করতে
পারেনি। কারণ, পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থাতেও মানুষে মানুষে চরম বৈষম্য বিরাজ করে এসেছে। শোষণ,
ক্ষুধা ও দারিদ্র্য থেকে মানুষকে মুক্তি দেওয়া যায়নি। ফলে সমাজের একটি সচেতন অংশ পুঁজিবাদী
সমাজ ব্যবস্থার অসঙ্গতি, ত্রæটি-বিচ্যুতি তুলে ধরেছিলেন। শোষণহীন একটি সমাজ ব্যবস্থার কিছু
আনুমানিক রূপরেখা তাদের রচনাবলিতে উপস্থাপন করেছিলেন। ক্রমে এই মতাদর্শ অধিকতর
যুক্তিনির্ভর হতে থাকে। পরবর্তীকালে সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শ একটি রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত
হয়। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার উৎপত্তি বেশি দিন আগে না হলেও এই মতাদর্শের উদ্ভব ও বিকাশের
ইতিহাস কয়েক শতাব্দীর। মনে রাখার বিষয় হচ্ছে, সমাজতন্ত্রের ধারণা এক একজন প্রবক্তা এক
একভাবে দিয়েছেন। সাধারণভাবে সমাজতন্ত্রের মতাদর্শকে দুটি পর্বে ভাগ করা যায়।



১. ইউটোপীয় সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শ - ১৮৪৮ সালের আগে রচিত তত্ত¡;
২. বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের পর্ব - ১৮৪৮ এর পরবর্তী যুগ।
প্রথম পর্ব : ইউটোপীয় সমাজতন্ত্র
১৮৪৮ সালের আগে ইউরোপীয় দেশসমূহে সমাজতন্ত্রের মতাদর্শের একটি দীর্ঘ ইতিহাস তৈরি
হয়েছিল। সমান্তবাদের অবক্ষয়ের যুগে সাম্যের ধারণা লেখক ও দার্শনিকদের লেখনীতে ব্যক্ত হয়েছে।
এই পর্বের সমাজতান্ত্রিক ধারণাকে এক কথায় টঃড়ঢ়রধ বা কাল্পনিক বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে।
টঃড়ঢ়রধ কথাটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন বৃটিশ লেখক টমাস ম্যুর (১৪৭৮-১৫৩৫ খ্রি:)। ১৫১৬
খ্রিস্টাব্দে তাঁর লেখা টঃড়ঢ়রধ গ্রন্থ প্রকশিত হয়। গ্রিক শব্দ ঙঠ মানে - নেই. ঞড়ঢ়ড়ং মানে - স্থান, অর্থাৎ
টঃড়ঢ়রধ-এর অর্থ হচ্ছে, বাস্তবে যে স্থানের অস্তিত্ব নেই। টমাস ম্যুর তাঁর লেখা গ্রন্থে দু‘জন ব্যক্তির সাথে
একান্তভাবে (তার এবং পিটার এজিড নামক অপর একজন বন্ধুর মধ্যে) যে কথোপকথন হয়েছে তা
বিবৃত করেছেন। জনৈক নাবিক এবং দার্শনিক রাফায়েল উভয়েই ইউটোপিয়া নামক এক অজ্ঞাত দ্বীপে
তাদের দীর্ঘদিন থাকার ও দেখার অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেছেন। সেই দ্বীপটিকে একটি নতুন রাষ্ট্র
হিসেবেই তারা আখ্যায়িত করেছেন। ঐ দ্বীপের সব কিছুরই মালিক হচ্ছে দ্বীপের সকল অধিবাসী।
দ্বীপে সবাই শ্রম দেয় (অবশ্য দৈনিক ছয় ঘন্টার বেশি নয়)। দ্বীপে কোনো পরগাছাজীবী নেই, টাকা
নেই, স্বর্ণ ও রৌপ্য দিয়ে ইউটোপীয়গণ সব কিছুই ধোয়া মোছার কাজ করেন। ইটোপীয় গ্রন্থের টমাস
ম্যুরকে অনুসরণ করে ইতালীয় লেখক টমাজ্জো ক্যাম্পানেল্লা (১৫৬৮-১৬৩৯) ‘সূর্যের শহর’ নামক
একটি গ্রন্থ রচনা করেন। ১৬১৩ খ্রিস্টাব্দে লাতিন ভাষায় গ্রন্থটি অনুবাদ করা হলেও ১৬২৩ সালে তা
প্রকাশিত হয়। গ্রন্থে ক্যাম্পানেল্লাও একটি কাল্পনিক শহরের ছবি আঁকেন। ব্যতিক্রমধর্মী রাষ্ট্র ব্যবস্থার
সুযোগ-সুবিধা অধিবাসীদের মধ্যে বিতরণ করে শহরটি মানুষের জীবনকে আলোকিত করে রাখে।
ব্রিটিশ লেখক জেফার্ড উইন্ট্যানলি (১৬০৯ - ১৬৫২) ১৬৫১ - ৫২ খ্রিস্টাব্দে ঞযব খধি ড়ভ ঋৎববফড়স
পুস্তিকায় ব্যক্তিগত সম্পত্তিকে বিলোপের মাধ্যমে একটি নতুন সমাজ ব্যবস্থা গড়ার পরিকল্পনা প্রণয়ন
করেন। ফরাসি দার্শনিক জাঁ মেলয়ে (১৬৬৪ - ১৭২৯), গাব্রিয়েল দ্য ম্যারি (১৭০৯ - ১৭৮৫) ও
মরেলির সাম্যের দাবি সমাজে রাজনৈতিক অধিকারে সীমাবদ্ধ রইল না। এই পর্বে জীবনের সবকিছুর
উপভোগকে বর্জন করে সমাজ গড়ার আদর্শ প্রচার করেছিলেন লেখকগণ। এরপর তিন মহান
ইউটোপীয় চিন্তাবিদ শোষণমুক্ত সমাজ গড়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে গ্রন্থ রচনা করেছিলেন, সংগ্রাম
করেছিলেন, নিজেদের সম্পত্তি উৎসর্গ করেছিলেন এবং স্ব স্ব ব্যক্তিগত জীবনে এর কিছু কিছু বাস্তবায়ন
ঘটানোর দৃষ্টান্তস্থাপন করেছিলেন। ফরাসি দার্শনকি ইউটোপীয় মতাদর্শের তাত্তি¡ক স্যানসিঁমোন (১৭৬০
- ১৮২৫) বলেছিলেন যে, উৎপাদনের উপায়সমূহের ব্যবহারের পরিকল্পনা ও সংগঠন রাষ্ট্রের অধীনে
থাকলে বিজ্ঞানের সাথে তাল মিলিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। তাঁর গ্রন্থ ‘নুভো ক্রিস্তিয়ানিজ’ - (নতুন
খ্রিস্টানবাদ) এ বিজ্ঞানের প্রতি আস্থা রেখেই তিনি নতুন খ্রিস্ট ধর্ম গড়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অপর
ফরাসি চিন্তাবিদ শার্ল ফুরিয়ের (১৭৭২-১৮৩৭) কল্পিত সমাজে যৌথভাবে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষ
(১৫ থেকে ১৬ শ জন) একটি অট্টালিকায় থাকবে, নির্দিষ্ট খামারে কাজ করবে। উৎপাদিত পণ্য ছক
মত ভাগ বাটোয়ারা হবে যেখানে উৎপাদনের
১২
৫ হারে আন্যান্য যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিরা

১২

১২

হারে পাবে। এ ধরনের একটি ধারণা তিনি প্রদান করেন। ব্রিটিশ ইউটোপীয় সমাজতন্ত্রের তাত্তি¡ক
ছিলেন রবার্ট ওয়েন (১৭৭১-১৮৮৫)। তাঁর লেখা ‘নিউ ভিউ অব সোসাইটি’ এবং ‘রিপোর্ট টু দি কান্ট্রি
অব ল্যানার্ক’ দুটি গ্রন্থে তাঁর মতামত বিশদভাবে লিপিবদ্ধ করেছেন। উৎপাদন বৃদ্ধির নামে শিল্পবিপ্লব
শ্রমিক শোষণের ব্যবস্থাই পাকাপোক্ত করেছিল বলে তিনি মনে করেন। শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের চরিত্র
পরিবর্তন করার উপর তিনি জোর দেন। রবার্ট ওয়েন নিজে পারিপর্শ্বিক ও শিক্ষার উন্নতির মাধ্যমে
সামাজিক সংস্কারে ব্রতী হন। রবার্ট ওয়েন ১৮৩০ থকে ১৮৪৮ সাল পর্যন্তইংল্যান্ডে ট্রেড ইউনিয়ন
আন্দোলনের একজন শক্তিশালী নেতা ছিলেন। ইতোমধ্যে ত্রিশের দশকে চার্টিস্ট আন্দোলন, ফ্রান্সে
লিঁওর তাঁতী-শ্রমিকদের আন্দোলন, জার্মানিতে কৃষক আন্দোলন ইউরোপে সমাজতন্ত্রের গ্রহণযোগ্যতাকে


শ্রমিক, দ্ররিদ্র জনগোষ্ঠী এবং শিক্ষিত সমাজের মধ্যে প্রবলভাবে জনপ্রিয় করে তোলে। কিন্তু পাশাপাশি
বুর্জোয়া শক্তির বিকাশের সাথে পাল্লা দিয়ে শ্রমিক শ্রেণীর আন্দোলনে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলে সফল হতে
সক্ষম হয়নি। তা ছাড়া তত্ত¡ নিয়েও নানা বিরোধ এবং দলাদলি ছিল। আসলে উনবিংশ শতাব্দীর ত্রিশের
দশকে ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের প্রত্যক্ষ প্রভাবে জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্যসহ সর্ব ক্ষেত্রে চিন্তা ও কর্মের
আমূল পরিবর্তন এবং অগ্রগতি সাধিত হয়। তখন প্রয়োজন হয়ে পড়ে এর নতুন ব্যাখ্যার। এ পর্যন্ত
সমাজতন্ত্রসম্পর্কীয় যে সব বক্তব্য ও আকাংক্ষা ব্যক্ত করা হয়েছিল সেগুলোতে বেশ কিছু জড়তা,
অজ্ঞতা ও অষ্পষ্টতা ছিল। ফলে শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থা কীভাবে করা যাবে তা ষ্পষ্ট ছিল না। দীর্ঘ এই
পর্বের সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শকে ইউটোপীয় বলে কার্ল মার্কস এবং ফ্রেডারিখ এঙ্গেলস তাঁদের
রচনাবলিতে উল্লেখ করেছেন।
মার্কস ও এঙ্গেলস তাদের আগের উপর্যুক্ত ইউটোপীয় সমাজতন্ত্রের মতাদর্শের যেসব বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত
করেছেন তা হচ্ছে :
ক) ইউটোপীয় সমাজতন্ত্রের প্রবক্তাগণ সমাজকে শ্রেণী বিভক্ত সত্তায় দেখেন নি, ফলে শ্রেণী দ্ব›দ্বও শ্রেণী
সংগ্রামের ধারণাকে তাঁরা উপলব্ধি করতে পারেন নি;
খ) ইউটোপীয় সমাজতন্ত্রেপূর্ববর্তী মানব সভ্যতা তথা সমাজ ব্যবস্থাগুলোকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা
সম্ভব হয়নি। আগের সমাজকে একক চরিত্রের বাইরে বহু গাঠনিকতায় গড়া একাধিক সমাজ
ব্যবস্থার ধারাবাহিকতায় দেখতে পারে নি এর প্রবক্তাগণ। ফলে সম্মুখে আর একটি নতুন সমাজের
অর্থনৈতিক ব্যবস্থাটি কীভাবে গড়ে তোলা যাবে তা উক্ত প্রবক্তাগণ স্পষ্টভাবে বলতে পারেননি;
গ) ইউটোপীয় সমাজতন্ত্রেসমাজ পরিবর্তনে বিপ্লবের অবশ্যম্ভাবিতা উপলব্ধি করা যায় নি। কতিপয়
ইউটোপীয় সমাজতন্ত্রের প্রবক্তা বুর্জোয়া ও শ্রমিকের মধ্যে মিলন, বন্ধুত্ব এবং চুক্তির মাধ্যমেই নতুন
সমাজ প্রতিষ্ঠার ধারণা ব্যক্ত করেছেন;
ঘ) ইউটোপীয় সমাজতন্ত্রেযুক্তি, নৈতিকতা এবং ব্যক্তিত্ব গঠনের মাধ্যমেই সমাজের সকল সম্পদের
ব্যবহার ঘটাতে হবে বলে বিশ্বাস করা হত;
ঙ) ইউটোপীয় সমাজতন্ত্রের চিন্তা অতীতের ‘স্বর্ণ যুগের মোহ’-এর উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। তাই ধারণা
করা হয়েছিল যে ভবিষ্যতে সেই অতীত ‘স্বর্ণ-যুগের’ পুনপ্রবর্তন ঘটবে;
চ) ইউটোপীয় সমাজতন্ত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে সকল সম্পদের সামাজিকীকরণের (ঝড়পরড়ষরুধঃরড়হ)
মাধ্যমে মানুষকে শোষণ, বঞ্চনা, দু:খ ও কষ্টের হাত থেকে মুক্ত করা। কিন্তু কীভাবে এই জটিল
কাজটি সম্পন্ন করা যাবে তা পরিষ্কার করে কেউ ব্যাখ্যা করতে পারেননি।
ইউটোপীয় সমাজতন্ত্রেপ্রবক্তাদের কাছে জ্ঞানবিজ্ঞানের কোনো শাখাই তখনও গভীরভাবে জানা ছিল না,
সমাজ ব্যবস্থার ব্যাখ্যাতে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিও ছিল না। বরং সে ক্ষেত্রে তারাই পরবর্তীকালে বৈজ্ঞানিক
দৃষ্টিভঙ্গি ও ব্যাখ্যার ভিত্তি রচনায় অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করেছিলেন। তারা সমাজের অসঙ্গতি ও
বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা যে বিদ্যমান তা ধরতে ও বুঝতে পেরেছিলেন বলেই নতুন শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা
গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, কল্পনা করতে পেরেছিলেন। তাঁদের জ্ঞানতত্ত¡কে অবলম্বন করেই উনবিংশ
শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে সমাজতন্ত্রের ধারণা নতুন তথা বৈজ্ঞানিক স্তরে উন্নীত করা সম্ভব হয়।
ইউরোপে শিল্প বিপ্লব, অর্থনৈতিক তত্ত¡ এবং দর্শন চিন্তায় যে বিপুল পরিবর্তন সাধিত হয়, তা থেকেই
সমাজতন্ত্রের মতাদর্শের নবায়ন অপরিহার্য হয়ে পড়ে। কার্ল মার্কস এবং ফ্রেডারিখ এঙ্গেলস সমাজতন্ত্রের
মতাদর্শের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রচনা করেন। সে কারণে তাদেরকে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা
হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে।



উনবিংশ শতাব্দীতে ইউরোপে জাতীয়তাবাদের মত সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শও শ্রমিক, দরিদ্র জনগোষ্ঠীসহ
শহরে জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়। প্রায় সব দেশেই শ্রমিক শ্রেণী সংগঠিত শক্তি
হিসেবে সমাজতন্ত্রের আদর্শ বাস্তবায়নে উদ্ধুদ্ধ হয়। তবে অনুন্নত পুঁজিবাদ, শিক্ষা ও রাজনৈতিক চিন্তায়
অনগ্রসরতার কারণে এই আন্দোলন ত্রিশের দশকের বিপ্লবী উত্থান, শ্রমিক আন্দোলনের যুগ থেকে
তেমন উল্লেখযোগ্য ফসল ঘরে তুলে আনতে পারেনি। ফলে শ্রমিক আন্দোলনে হতাশা যেমনিভাবে
নেমে এসেছিল, আবার নতুন নতুন পথের সন্ধানও চলেছিল। সমাজতান্ত্রিক ধারণার প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি
এবং সমাজতন্ত্রের অব্যাহত যাত্রার জন্যই এ তত্তে¡র চাহিদা মোতাবেক নতুন ব্যাখ্যার প্রয়োজন হয়ে
পড়ে। ব্যাপক অশিক্ষার কারণে শ্রমিক প্রতিনিধিদের পক্ষে এ সব জটিল ও দুরূহ ব্যাখ্যা প্রদান প্রায়
অসম্ভব ছিল। তবে শ্রমিক নেতৃবৃন্দের অনেকেই আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বেশ শিক্ষিত
রাজনীতিবিদে পরিণত হয়েছিলেন। কেউ কেউ সমাজতন্ত্রকে নিজেদের মতো ব্যাখ্যা করতে থাকেন।
তবে যে ব্যাখ্যায় দর্শন, অর্থনীতি, প্রাকৃতিক বিজ্ঞানসহ জ্ঞান-বিজ্ঞানের তৎকালীন অর্জনের সারাংশকে
ধারণ করা হয় তা প্রদান করেছিলেন জার্মান দার্শনিক, বিপ্লবী ও তাত্তি¡ক কার্ল মার্কস (১৮১৮ -
১৮৮৩) এবং ফ্রেডারিখ এঙ্গেলস (১৮২০ - ১৮৯৫)।
কাল মার্কস এবং এঙ্গেলস উনিশ শতকের চল্লিশের দশকের মাঝামাঝি থেকে যৌথভাবে দর্শন,
অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, ইতিহাস ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের গভীর পর্যলোচনায় মনোনিবেশ করেন। ১৮৪৭
সালে তাঁদের যৌথ মেধায় রচিত হয় ‘কমিউনিস্ট ইশতেহার’। ১৮৪৮ সালে তা প্রকাশিত হয়। ঐ ক্ষুদ্র
পুস্তিকায় তারা ইতিহাসের বস্তুবাদী ব্যাখ্যায় পূর্ববর্তী শ্রেণী সমাজের বির্বতন ও বিকাশের ধারাবাহিকতা
তুলে ধরেন, একই সাথে সমাজের দুই প্রতিদ্ব›দ্বী শ্রেণীর মধ্যকার দ্ব›েদ্বর মূল কারণ হিসেবে উৎপাদনের
মালিকানা, শোষক শ্রেণীর শ্রেণীস্বার্থ এবং উৎপাদনকারী শ্রেণীর শোষণকে চিহ্নিত করেছেন। তাঁরা
উভয়েই ইউরোপের তৎকালীন বিপ্লবী উত্থানের আলোকে প্রলেতারিয়েত তথা সর্বহারা শ্রেণীর নেতৃত্বে
বিপ্লব সংঘটিত করার মধ্য দিয়েই শ্রেণী সংগ্রামের নিষ্পত্তি হতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
ইশতেহারে তাঁরা বিপ্লবী পার্টি গঠনের কথা দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করেন। ইশতেহারে সে যুগে সমাজতন্ত্রের যে
সব মতাদর্শ ও গ্রট্টপ বিরাজ করেছিল কার্ল মার্কস ও এঙ্গেলস উভয়ে সেই সব ইউটোপীয়, জার্মান
সমাজতন্ত্র, ট্রু সোশালিজম ইত্যাদি নামের সংস্থার কর্মকান্ড ও কর্মসূচির পুঙ্খানুপুঙ্খ ব্যাখ্যা প্রদান
করেন। তাঁরা স্যান সিঁমোন, ফ্যুরিয়ের ও রবার্ট ওয়েনসহ পূর্বসূরিদের অবদানকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন
করেন, তবে এদের চিন্তাভাবনার সীমাবদ্ধতাও অতিক্রম করার কথা তাঁরা বলেন। ইশতেহারে বলা হয়
‘শৃঙ্খল ছাড়া প্রলেতারিয়েতদের হারাবার কিছু নেই। জয় করার জন্য তাদের রয়েছে একটি বিশ্ব, “ঞযব
চৎড়ষবঃধৎরধহং যধাব হড়ঃযরহম ঃড় ষড়ড়ংব নঁঃ ঃযবরৎ পযধরহং, ঞযবু যধাব ড়িৎষফ ঃড় রিহ)” কার্ল মার্কস
এবং এঙ্গেলস হঠাৎ করে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের জন্য দর্শন, অর্থনীতি ও ইতিহাসের বস্তুবাদী ব্যাখ্যা
হাজির করেন নি। এর ভিত্তি ইউরোপে অর্থনৈতিক দর্শন ও সমাজতন্ত্রের চিন্তায় তৈরি হয়েছিল। ফরাসি
বিপ্লবোত্তর ইউরোপে। জার্মান ধ্রæপদী দর্শন কান্ট, ফিখটে, হেগেল ও ফয়েরবাখের দর্শন চিন্তা
দারুণভাবে প্রভাব বিস্তার করে। বিশেষত হেগেলের ভাববাদী দ্ব›দ্ববাদ এবং ফয়েরবাখের বস্তুবাদের
চিন্তায় জার্মান তথা ইউরোপের তরুণ সমাজ আলোড়িত হয়েছিল। হেগেল তার পূর্বসূরি কান্টের কাছ
থেকে দ্বা›িদ্বক ধারণা গ্রহণ করেন এবং মতামত দেন যে সমস্তবিশ্বজাগতিক প্রক্রিয়া একটি যৌক্তিক
নীতি দ্বারা পরিচালিত হয়। এই নীতিই হেগেলের দ্বা›িদ্বক প্রণালী নামে পরিচিত। তাঁর দ্বা›িদ্বক প্রণালীতে
বস্তুতে বস্তুতে দ্ব›দ্ব স্বীকৃত, সব কিছু আপনাতে দ্ব›দ্বাতœক, আর অন্তর্দ্ব›দ্ব হল ‘সমস্তগতি এবং জীবনীশক্তির
মূল’। ‘সবকিছু পরিবর্তনশীল’ এই ধারণার পেছনে হেগেল যথাযথভাবে দ্ব›দ্বকেই কার্যকর হতে
দেখেছেন। সমস্তবিকাশের নিয়ামক হিসেবে দ্ব›দ্বকেই হেগেল সূত্রবদ্ধ ও করেছেন। মার্কস এবং এঙ্গেলস
দেখান যে, হেগেলের দ্ব›দ্বতত্ত¡ মানুষকে বস্তুর সত্তা থেকে নয়, বরং মানুষের চিন্তন থেকে দেখতে বলে।
হেগেলের দর্শনে সবই চিন্তনের, পরম ভাবের এবং প্রতিবিম্বিত রূপ মাত্র। তিনি সঠিকভাবেই বিকাশকে
অনন্তবলে দেখেন, অথচ তাঁর দার্শনিকতন্ত্রে‘পরম ভাব’ কথাটি উক্ত বিকাশকে বস্তুজগতে নয় মানুষের
চিন্তার জগতে সীমাবদ্ধ করার ফলে অনন্তবিকাশের ধারণা নস্যাৎ করে দিয়েছে। বস্তুজগৎকে বাদ দিয়ে


দ্ব›েদ্বর আধার হিসেবে ‘পরম ভাবকে’ নিরঙ্কুশ করার ফলে হেগেলের দ্বা›িদ্বকতা ভাববাদী হয়ে গেছে।
কেননা, বস্তুর অভ্যন্তরে পরাপর বিরোধী উপাদানের মধ্যে দ্ব›দ্ব অনিবার্য এবং চলমান। সেই দ্ব›দ্বই
মানুষের মস্তিস্কে প্রতিবিম্বিত হয়, প্রভাব ফেলে। সুতরাং, দ্ব›দ্ব বস্তুজগতে মানুষের উপলব্ধি করা ‘পরম
ভাব’ জাগ্রত হওয়ার আগেই বিরাজমান ও ক্রিয়াশীল ছিল বা আছে। বস্তুত, বস্তুজগতের অভ্যন্তরের দ্ব›দ্ব
ব্যক্তি মানুষের চেতনা নিরপেক্ষ, অর্থাৎ মানুষ তা ধরতে পারুক, বুঝতে পারুক, বিশ্বাস করুক আর না
করুক বস্তুজগত নিজস্ব নিয়মে চলে আসছে, সেখানে দ্ব›দ্ব চিরন্তন, বিকাশ ও চিরন্তন। হেগেল দ্ব›দ্ব ও
বিকাশকে দেখেছেন বস্তুতে নয়, মানুষের চিন্তনে, অপর দিকে কার্ল মার্কস দ্ব›দ্ব ও বিকাশকে মানুষের
চিন্তন বা ভাব, অনুভ‚তির আগে বস্তুজগতে সর্বাগ্রে ক্রিয়াশীল থাকতে দেখেছেন যা মানুষকে, মানুষের
চিন্তাশক্তিতে বিকশিত বা প্রভাবিত করার কথা বলেছেন। বস্তুবাদী ফয়েরবাখ হেগেলের ভাববাদী
দর্শনকে অতিক্রম করে বস্তুকে প্রধান বলে চিহ্নিত করলেন। তবে তিনি হেগেলের দ্ব›দ্বতত্ত¡কে বস্তুজগতে
দেখতে পাননি, বরং বর্জন করেছিলেন। ফলে ফয়েরবাখের বস্তুবাদী ধারণা যান্ত্রিক বা বিকাশহীন, অনড়
হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় ফয়েরবাখের বস্তুবাদী ধারণা এবং হেগেলের দ্ব›দ্বতত্ত¡কে বিচার করে মার্কস এবং
এঙ্গেলস বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের সারসংক্ষেপ করলেন এবং সমাজ, প্রকৃতি ও মানুষের চিন্তনকে নিরন্তর
বিকাশমান প্রক্রিয়া হিসেবে অভিহিত করেন। এর মূলে সত্তার (ইবরহম) পরস্পর বিরোধী মৌলিক
অবস্থানই দ্বা›িদ্বকভাবে ক্রিয়াশীল বলে তাঁরা উল্লেখ করেন। মার্কস দর্শনের দ্বা›িদ্বক বস্তুবাদের নিয়ম
প্রণালী হেগেলের ধারণা থেকে ধার নিলেও তিনি বস্তু এবং চিন্তন - এ দু‘য়ের দ্বা›িদ্বক সম্পর্কেই
বিষয়টিকে দেখিয়েছেন। মানব সভ্যতার ইতিহাস ও অর্থনীতিকেও তিনি শ্রেণী অবস্থানের দ্ব›দ্ব থেকে
বিশ্লেষণ করেছেন।
অর্থনীতির আলোচনায় মার্কস এডাম স্মিথ এবং ডেভিড রিকার্ডোর মূল্যের (ঠধষঁব) ব্যাখ্যাটিকে
সংশোধন করেছেন। পুঁজিবাদী তত্তে¡ কোনো পণ্যের মতই শ্রমিকের শ্রমশক্তি বিক্রয় হয়। সুতরাং এর
মূল্যও নির্ধারিত হয় যে পরিমাণ শ্রম সময় লেগেছে এর উৎপাদনে তার উপর। মার্কস উধং ঈধঢ়রঃধষ গ্রন্থে
পুঁজিবাদী অর্থনীতির উৎপত্তি, এর বিকাশ ইত্যাদি নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেছেন। মার্কসের
সব ভবিষ্যদ্বাণীই হুবহু প্রতিফলিত হয়নি। পশ্চিমা দুনিয়ার কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ এই গ্রন্থ নিয়ে
অনেকভাবে সমালোচনা করেছেন। কেউ কেউ একে অচল গ্রন্থ বলেও দাবি করেছেন। এর বৈজ্ঞানিক
ভিত্তি নিয়েও কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন। তবে যে যেভাবেই সমালোচনা করুক না কেন, মার্কসের উধং
ঈধঢ়রঃধষ পুঁজিবাদী আর্থ ব্যবস্থার উদ্ভব ও বিকাশের পুংখানুপুংখ বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে জ্ঞানজগতে এক
মহামূল্যবান গ্রন্থ হিসেবে এর অন্তর্ভূক্তি ঘটিয়েছে। উনিশ শতকে এমন একটি গ্রন্থে পুঁজিবাদকে যে
বিশ্ববীক্ষায় প্রামাণ্য দলিলসহ ব্যাখ্যা করা হয়েছে, তাতে একজন বিষ্ময়কর প্রতিভাধর মার্কসকেই আমরা
তাতে খুঁজে পাই। এ গ্রন্থ পুঁজিবাদী সমাজের সবল ও কুৎসিৎ উভয় দিককেই যুক্তি, তথ্য ও দর্শনসহ
তিনি তুলে ধরেছেন। পুঁজিবাদের উত্থান, বিকাশ এবং চরিত্র সম্পর্কে বইটি মার্কসীয় তত্তে¡র মৌলিক গ্রন্থ
- এতে কোনো সন্দেহ নেই।
কাল মার্কস এবং তাঁর সুহৃদ বন্ধু ফ্রেডারিখ এঙ্গেলস সমাজতন্ত্রের ধারণাকে বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা
প্রদানের জন্য অসংখ্য বই-পুস্তক ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন। তারা সমাজতন্ত্রেধারণা ফরাসি ও ব্রিটিশ
ইউটোপীয় সমাজতন্ত্রের তাত্তি¡কদের গ্রন্থ থেকে নিয়েছিলেন। সেগুলোকে তাঁরা সূত্রবদ্ধ করেছেন সমাজ
বিকাশের ব্যাখ্যা উপাস্থাপন করে। তবে তাঁদের জীবদ্দশাতেই সমাজতন্ত্রের বিভিন্ন প্রশ্নে বিপ্লবীদের মধ্যে
মতবিরোধ চলতে থাকে। প্রæধোনিস্ট, বাকুনিস্ট, নিহিলিস্ট ইত্যাদি বিভিন্ন ধারায় বিপ্লবীরা বিভক্ত হয়ে
পড়েন। ইউরোপে কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশলালের নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনকে বিভিন্ন দেশে
সমর্থন প্রদান করা হয়। সমাজতন্ত্রের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে প্যারির সাধারণ মানুষ ১৮৭১ সালে একটি
বিপ্লব সংঘটিত করে। ৭২ দিন প্যারির ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকার পর বিপ্লবীদের পতন হলেও প্যারি
কমিউনকেই পৃথিবীর ইতিহাস প্রথম সমাজতান্ত্রিক ধাঁচের ব্যর্থ বিপ্লব বলা হয়ে থাকে। এই বিপ্লবের
সীমিত তাৎপর্যও বিপ্লবের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। রাশিয়ার বলশেভিক বিপ্লবকেই প্রথম সফল


সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব বলে এতোদিন মনে করা হত।
সমাজতন্ত্রের ধারণাকে ইউরোপের সোশাল ডেমোক্রেটিক পার্টিগুলোও উদারভাবে গ্রহণ করেছে।
কমিউনিস্ট পার্টিগুলো বিপ্লবের মাধ্যমে রাষট্র ক্ষমতা দখল, ব্যক্তিগত সম্পত্তির উচ্ছেদ ইত্যাদি উপায়ে
সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাকে তাদের বিপ্লবী দায়িত্ব মনে করেছেন। সোশাল ডেমোক্রাটিক পার্টি, লেবার পার্টি
ও সোশালিস্ট পার্টিগুলো বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে বিশ্বাসী। তবে
দেশের অর্থনীতিতে সামাজিকীকরণ, কল্যাণবাদী ধারণা ইত্যাদি বিষয়গুলো তারা সমাজতন্ত্রের ব্যাপক
ধারণা থেকেই উদারভাবে গ্রহণ করেছে। তাহলে যে বিষয়টি আমাদের কাছে পরিষ্কার হচ্ছে তাতে বলা
যায় যে, সমাজতন্ত্রের সর্বজন গ্রহণযোগ্য একমাত্র কোনো তাত্তি¡ক মতাদর্শ ছিলনা, বিভিন্ন মত ও পথ
সমাজতন্ত্রকে ঘিরে রচিত হয়েছে; সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠাও তাই সহজ সরলীকৃতভাবে
হওয়ার নয়। এ ক্ষেত্রে নানা ধরনের নিরীক্ষা হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। বিপ্লব সম্পর্কে কার্ল মার্কসের
সব মতামত আজকের দিনেও অভ্রান্তবা সম্পূর্ণতা বলা যাবে না। তবে তাঁর দর্শন চিন্তা, ইতিহাস চিন্তা,
অর্থনীতি বিষয়ক তাত্তি¡ক ধারণার মূল্য এখনো বিস্ময়কর। আসলে সামাজিক বিকাশের জটিলতা সময়
সময় পরিবর্তিত হয়। সুতরাং, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নির্দিষ্ট দেশের অবস্থার গভীর মনোযোগ ও সূ²
বিশ্লেষণ। মেধাবী, সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব এবং কল্যাণবাদী অর্থনীতিতে চলমান অগ্রবর্তী দেশগুলোর
ভবিষ্যৎ চেহারাও আগামীতে লক্ষ্য করার বিষয় হতে পারে। আগামীতে সমাজতন্ত্রের ধরন কেমন হবে,
কোন পথেইবা সেটি অর্জিত হতে পারে তা দেখতে হলে ইতিহাসকে আরও গভীরভাবে অধ্যায়ন করতে
হবে, সমাজ বিকাশের জটিল প্রপঞ্চসমূহকে চিহ্নিত করতে হবে। সমাজ, অর্থনীতি ও মানুষের চিন্তনের
দ্রæত পরিবর্তনশীলতাকে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেই যদি রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে অপেক্ষাকৃত শোষণহীন, মানবিক,
কল্যাণবাদী রূপ দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায় তা হলে সেটি সমাজতন্ত্রের আদর্শ থেকেই উৎসারিত হতে
পারে। অন্য কোনো মতাদর্শ বা দর্শনে শোষণহীন সমাজ গড়ার কথা এতো বিস্তৃত ও গভীরভাবে
আলোচিত হয়নি। সুতরাং, সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শের গুরুত্বকে অবহেলা করার উপায় নেই। তবে গত
শতাব্দীতে রাশিয়ার বলশেভিকদের নেতৃত্বে সংঘটিত বিপ্লব প্রায় ৭৪ বছর ধরে সমাজতন্ত্রের একটি বড়
ধরনের অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষার বিষয় হয়ে আছে।


পাঠত্তোর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
১। সমাজতন্ত্রহচ্ছে
ক) মতাদর্শ ও সমাজব্যবস্থা খ) ইউটোপীয় দর্শন
গ) কার্ল মার্কসের মতাদর্শ ঘ) শ্রেণী সংগ্রাম তত্ত¡
২। ‘ইউটোপিয়া’ মানে -
ক) ইউরোপীয় খ) যে স্থানের অস্তিত্ব নেই
গ) সমাজতন্ত্রের তীর্থস্থান ঘ) দ্বীপ।
৩। ‘সূর্য্যরে শহর গ্রন্থটি রচনা করেন
ক) টমাস ম্যুর খ) টমাজ্জো ক্যাম্পানেল্লা
গ) জেফার্ড ইউন্ট্যালি ঘ) গাব্রিয়েল দ্য ম্যারি।
৪। কমিউনিস্ট ইশতেহার প্রকাশিত হয় -
ক) ১৮৪৬ সালে খ) ১৮৪৮ সালে
গ) ১৮৪৬ সালে গ) ১৮৪৯ সালে।
৫। রুশ বিপ্লব হয়
ক) ১৯১৭ সালে খ) ১৯১৮ সালে
গ) ১৯২০ সালে ঘ) ১৯২১ সালে
২। সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। সমাজতন্ত্রকী?
২। ইউটোপীয় সমাজতন্ত্রকী?
৩। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রকী?
৪। সমাজতন্ত্রের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আপনাদের ধারণা কি?
৩। রচনামূলক প্রশ্ন
১। ইউটোপীয় সমাজতন্ত্রের ধারণা সম্পর্কে আলোচনা করুন।
২। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের ধারণা সম্পর্কে আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]