ইতালির ঐক্য আন্দোলন ১। ইতালির ঐক্যের জন্য মাৎসিনির চিন্তাধারা আলোচনা করুন।
২। দেশপ্রেমিক ইতালীয়রা কেন পিডমন্টের নেতৃত্বে ইতালির ঐক্যের প্রচেষ্টায় নিয়োজিত হন তা
বিশ্লেষণ করুন।


এই পাঠ শেষে আপনি -
 ইতালির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বাধাগুলো কি ছিল সে সম্পর্কে জানতে পারবেন;
 ইতালিতে জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটার পর বিভিন্ন অঞ্চলকে একত্রীকরণের জন্য যে সব
 মতাদর্শ এবং পন্থার অবলম্বন করা হয় সে সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারবেন;
 এর দশকে ইতালির একত্রীকরণের পথগুলি কেন ব্যর্থ হয় এবং শেষ পর্যন্তকীভাবে পিডমন্টের
ইতালির ঐক্যের আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করে সে সম্পর্কে জানতে পারবেন;
 বিভিন্ন মতের অনুসারী জাতীয়তাবাদীরা চ‚ড়ান্তপর্যায়ে কেন পিডমন্ডের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন সে
সম্পর্কেও বিস্তারিত ভাবে অবহিত হবেন।
ইউরোপীয় রেনেসাঁসের জন্মভ‚মি বলে খ্যাত ইতালি অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ নাগাদ ইউরোপের
সবচাইতে পশ্চাৎপদ এলাকা হিসেবে রূপান্তরিত হয়। দেশটি অসংখ্য ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত ছিল। এর বেশ
কিছু অংশ বিদেশী শাসনের আওতাভ‚ক্তও ছিল। উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম থেকে ইতালিতে এক ধরনের
জাগরণ শুরু হয়। ১৮৬০ সালের ১৮৬১ সাল নাগাদ রোম ছাড়া দক্ষিণের সব রাজ্য সার্ডিনিয়া রাজ্যের
সঙ্গে যুক্ত হয়ে ইতালি রাজ্য গঠন করে। ১৮৭১ সালে রোম ইতালির সঙ্গে একীভ‚ত হয় এবং ইতালির
রাজধানী হিসেবে পরিগণিত হয়।
একত্রীকরণের পূর্বের অবস্থা
অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রী মেটারনিক ইতালি সম্পর্কে এক সময়ে বলেছিলেন ইতালি “একটি ভৌগোলিক
অভিব্যক্তি ছাড়া কিছুই নয়”। তিনি আরো বলেছিলেন, ‘ইতালিতে এক প্রদেশ আরেক প্রদেশের,
একশহর আরেক শহরের, এক পরিবার আরেক পরিবার এবং এক মানুষ আরেক মানুষের বিরুদ্ধে
লেগেই রয়েছে।’ যদিও মেটারনিকের বক্তব্য কিছুটা অতিরঞ্জিত তবুও তাঁর বক্তব্যে যথেষ্ট সত্যতা
রয়েছে। ইতালির ঐক্যের পক্ষে দুটো বাধা ছিল, প্রথমতঃ, রাজনৈতিক অনৈক্য এবং দ্বিতীয়তঃ,
অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা।
রাজনৈতিক অনৈক্য
কয়েকটি ক্ষুদ্র রাজ্য এবং ভ‚খন্ড ছাড়াও ১৮১৫ সালে ইতালিতে নয়টি রাজ্যের অস্তিত্ব বিরাজমান ছিল।
এগুলোর মধ্যে লোম্বার্ডি এবং ভেনেশিয়া অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা কর্তৃক নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। পারমা, মডেনা,
টুসকানি এবং লাক্কা রাজ্য সমূহ অস্ট্রিয়া রাজবংশ হ্যাপসবার্গের বিভিন্ন যুবরাজ শাসন করত। মোটকথা
ইতালির উপর অস্ট্রিয়ার প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ শাসন বজায় ছিল। পোপের নিয়ন্ত্রণাধীন দুটো রাজ্য ছাড়া
শুধুমাত্র পিডমন্ট কিছুটা নিজস্ব শাসক দ্বারা শাসিত হচ্ছিল। মধ্যযুগ থেকে অস্তিত্ব বজায় রাখা পিডমন্ট
রাজ্যটি অপরাপর রাজ্যগুলো থেকে কিছুটা উন্নত ছিল। নেপেলস রাজ্যটি ফরাসি বংশদ্ভ‚ত বুরবোঁদের
দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতো।
শুধুমাত্র রাজনৈতিকভাবে দেশটি বিভক্তই ছিল না, জনগণের মধ্যেও এমনকি একই এলাকার
অধিবাসীদের মধ্যে দ্ব›দ্ব ও রেষারেষি লেগেই ছিল। রোম ও ভেনিস নগরীগুলোর সঙ্গে মফস্বলীয়
এলাকাগুলোর স্বার্থ ও দৃষ্টিভঙ্গিগত বিরোধ ছিল। সিসিলি দ্বীপের অধিবাসীরা মূল ভ‚খন্ডের প্রতি
বিদ্বেষভাবাপন্ন ছিল। প্রাচীন রাজ্য জেনোয়া ভিয়েনা চুক্তির দ্বারা পিডমন্টের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিলো,
কিন্তু পিডমন্ট এই রাজ্যটিকে একীভ‚ত করতে যথেষ্ট অসুবিধার সম্মুখীন হয়। এছাড়া অজ্ঞতা, স্থানীয়
শত্রæতা, যোগাযোগের অভাব, ক্ষুদ্র ও সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গিকে আরো গভীরতর করে ফলেছিল।



অর্থনৈতিক পশ্চাদপদতা
ইতালির অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা ইতালির ঐক্যের পক্ষে একটি বড় বাধা ছিল। সপ্তদশ শতাব্দী নাগাদ
ইতালি অর্থনৈতিকভাবে এত দুর্বল ছিলো যে শহর থেকে লোকজন গ্রামাঞ্চলে জীবিকা নির্বাহের জন্য
ছড়িয়ে পড়ছিলো। মদ ও জলপাই তেলের মত কতগুলি কাঁচামালের মধ্যে ইতালির রফতানি সীমাবদ্ধ
ছিল। এর কারণ ছিল এই যে, ষষ্ঠদশ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্তছিল ইউরোপীয় যুদ্ধের কেন্দ্র বিন্দু।
দেশটিতে কয়লা এবং লোহার মতো কোনো প্রাকৃতিক সম্পদও ছিল না। তাছাড়া ইতালির প্রাকৃতিক
ভ‚মি অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য উপযোগী ছিল না। ফলে দেশটিতে বিভিন্ন রকমের শুল্ক বাধা হয়ে
বিরাজ করছিল, ভিন্ন ভিন্ন মুদ্রা ও ওজন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল। দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে
বিরাট অর্থনৈতিক বৈষম্য ছিল। দক্ষিণাঞ্চল উত্তরাঞ্চলের তুলনায় অনেক অনুন্নত ও দারিদ্র্য পীড়িত
ছিল। ইতালির ঐক্য আন্দোলনের নেতা গ্যারিবল্ডি যখন সঙ্গী সাথী নিয়ে ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে সিসিলিতে
অবতরণ করেন তখন তিনি অবাক হয়ে লক্ষ্য করেন যে, জনগণ পশুর চামড়া গায়ে জড়িয়ে জীবনযাপন
করছে।
ঐক্য প্রচেষ্টা ও ফরাসিশাসন
যদিও ইতালিকে একীভ‚ত করার বাহ্যিক আন্দোলন শুরু হয় ১৮১৫ সালের পর, কিন্তু নেপোলিয় কর্তৃক
ইতালি দখলে এর বীজ রোপিত হয়েছিল। নেপোলিয়নের শাসনকালে ফরাসি শাসন ইতালীয়দেরকে
একীভ‚তভাবে শাসিত হওয়ার সুবিধা সমূহের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়।
বিদেশী শাসন কালে ইতালিতে প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়, ইতালিতে অন্তশুল্ক ব্যবস্থা
লোপ করা হয়, নতুন নতুন রাস্তাঘাট তৈরি করা হয় এবং প্রচলিত আইনগুলোকে সুসংবদ্ধ ও মান সম্পন্ন
করা হয়। ফরাসি শাসন কালে একটি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উৎপত্তি ঘটে। গির্জার নিয়ন্ত্রণাধীন জমিগুলোক
বিক্রি করে দেওয়ার ফলে ভ‚মি ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক পরিবর্তন আসে। যেমন, বলোনায় ১৭৮৯ সাল
থেকে ১৮০৪ সাল পর্যন্তগির্জার জমি পরিমাণ ১৯ শতাংশ থেকে ৪শতাংশে নেমে আসে। অন্য দিকে
মধ্যবিত্তের অধীন জমির পরিমাণ ১৮ শতংশ থেকে ৩৪ শতাংশে উঠে দাঁড়ায়। এছাড়া সৈন্যবাহিনী এবং
প্রশাসনে বহু ইতালীয় নিয়োগ লাভ করে। ফরাসি শাসনে অর্জিত অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা মধ্যবিত্ত
শ্রেণী হারাবার পক্ষপাতি ছিল না। তাছাড়া ১৮১০ সাল নাগাদ ইতালিতে সামন্তপ্রথার উচ্ছেদ করা হয়
এবং ইতালির প্রায় সব অংশ কিছু দিনের জন্য এক ধরনের শাসনতান্ত্রিক সরকারের স্বাদ গ্রহণ করে।
ফলে জনগণের জন্য রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা এবং অংশগ্রহণের অভ‚তপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি
হয়েছিলো। কিন্তু ফরাসি শাসন ইতালীয় জনগণের নিকট মোটেই প্রিয় ছিলনা, বরং বিদেশী শাসনের
বিরুদ্ধে ক্ষোভের সঞ্চার করে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করছিলো। ফরাসিদের করারোপ, অর্থনৈতিক নানা
প্রতিবন্ধকতা এবং যুদ্ধের জন্য জোর করে লোক নিয়োগ ইত্যাদি ফরাসি বিদ্বেষ সৃষ্টি করেছিলো। কিন্তু
১৮১৫ সালের পর ভিয়েনা চুক্তির পর ইতালীয়দের উপর আরো দুঃসময় নেমে আসে।
অস্ট্রীয় শাসন ও গুপ্ত সংগঠনের আত্মপ্রকাশ
অস্ট্রিয়ার শাসনের ফলে ইতালির জনগণের উপর করের বোঝা বেড়ে যায়। সমস্তরাজনৈতিক কর্মকান্ড
কঠোর সেনসরশিপের এবং অত্যাচারী পুলিশী ব্যবস্থার মাধ্যমে নির্দয়ভাবে দমন করা হয়। অস্ট্রিয়ার
সরাসরি শাসনাধীন এলাকাগুলোতে অস্ট্রিয় শাসন ব্যবস্থা চালু করা হয় এবং অস্ট্রিয় ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত
করা হয়। এই অবস্থায় একত্রিত ইতালির ধারণা সদূরপরাহত বলে মনে হলো। স্বৈরাচারী, সন্দেহকারী
এবং রাজনৈতিক অধিকার হরণকারী সরকারের মোকাবেলায় ইতালির দেশপ্রেমিকরা কিছু সংখ্যক
শক্তিশালী গুপ্ত সংগঠনের মাধ্যমে তাদের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের প্রকাশ ঘটায়। “ইতালীয় ব্যাপার বলে
কিছুরই অস্তিত্ব নেই” মেটারনিকের এ ধরনের উচ্চারণ ছিল অন্তঃসারশূন্য।
গুপ্তসংগঠন সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল আদেলফিয়া নামক একটি সংগঠন। ফিলিপ্পো বুয়োনারট্টি
(ঋরষরঢ়ঢ়ড় ইঁড়হধৎড়ঃঃর) নামক একজন প্রাক্তন জ্যাকেবিন সামরিক অফিসার খ্রিস্টীয় গুপ্ত সমিতি


ফ্রিম্যাসন সমিতির সদস্যদের নিয়ে এই সংগঠনটি পিডমন্টে গড়ে তোলেন। এই সংস্থার লক্ষ্য ছিলো
জনবিপ্লব নয় বরং ষড়যন্ত্রএবং অনুপ্রবেশের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করা। আদেলফিয়া থেকে নরমপন্থী
এবং কিছুটা কম বিপ্লবী আরেকটি গুপ্ত সংগঠন ছিল। কারবোনারি নামে আরেকটি গুপ্ত সংগঠন ছিল।
এটি সামন্তবাদ-বিরোধী এবং শাসনতন্ত্রও প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের পক্ষে ছিলো। এসব লক্ষ্য অর্জনে
যে সমস্তরাজা তাদের প্রতি সহানুভ‚তিশীল ছিলেন তাদের সঙ্গে বিপ্লবীরা এক সাথে কাজ করতে আগ্রহী
ছিলেন।
১৮২০ খ্রিস্টাব্দে কার্বোনারি সংঘ নেপলসের বুরবোঁ রাজ বংশীয় রাজা চর্তুদশ ফার্দিনান্দের বিরুদ্ধে
বিদ্রোহ ঘোষণা করে। কার্বোনারিদের চাপে ফার্দিনান্দ একটি উদারতান্ত্রিক সংবিধান চালু করতে রাজি
হন। কিন্তু বিপ্লবীদের মধ্যে মধ্যবিত্ত এবং কিছুটা উচ্চবিত্তের অধিকারীরা কৃষক ও কারিগর থেকে উদ্ভ‚ত
বিপ্লবীদের মধ্যে চরমপন্থী কার্যকলাপের বিস্তার দেখে শঙ্কিত হয়ে উঠেন। বিপ্লবীদের মধো এই দ্ব›েদ্বর
ফলে ১৮২১ সালের মার্চ মাসে অস্ট্রিয়ানদের পক্ষে তাদেরকে পরাজিত করা সহজ হয়। ১৮২০ সালের
জুলাই মাসে সিসিলিতে আরো একটি বিদ্রোহ দেখা দেয়, অভিজাত কৃষক ও কারিগররা মিলে অস্ট্রিয়ার
দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে তোলে। কিন্তু নেপলসের মতো এখানেও বিপ্লবীদের
অনৈক্যের কারণে বিদ্রোহ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। ১৮২১ সালে পিডমন্টে একদল সামরিক কর্মকর্তা
যুবরাজ চার্লস আলবার্তকে অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে একটি বিদ্রোহ পরিচালিত করতে রাজি করান। যুবরাজ
আলবার্ত কিছুটা উদারনীতিতে বিশ্বাস করতেন। কিন্তু তাঁর ভাই ফেলিক্স তাঁর অবর্তমানে শাসনতন্ত্র
বাতিল ঘোষণা করেন এবং বিপ্লবীদেরকে বিপদে ফেলেন। ফলে ১৮২১ সালের মে মাসে অস্ট্রিয় বাহিনী
বিপ্লবীদেরকে পরাভ‚ত করেন। এর পর প্রায় এক দশক বিপ্লবীদের উপর নানা ধরনের নির্যাতন চলতে
থাকে।
১৮৩০ সালে ফ্রান্সে জুলাই বিপ্লব দেখা দিলে ইতালির জাতীয়তাবাদীরা পুনরায় বিদ্রোহী হয়ে উঠে।
মডেনার চতুর্থ ফ্রান্সিস এবং চার্লস আলবার্ত ঠিক করেন যে- তারা একত্রে অস্ট্রিয়ার হাত থেকে পিডমন্ট
উদ্ধার করবেন। ইতালি থেকে নির্বাসিত বিপ্লবীরা ফ্রান্স থেকে অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনা
করবে। কিন্তু দুইজন রাজাই তাদের প্রতিশ্রæতি রক্ষা করতে পারেন নি। কিন্তু এতদসত্তে¡ও ১৮৩১ সালের
ফ্রেব্রæয়ারি মাসে বিপ্লবীরা মধ্য ইতালির যুক্ত প্রদেশ বলে একটি রাষ্ট্রের ঘোষণা দিতে সমর্থ হয়েছিলো।
কিন্তু ক্ষণস্থায়ী স্বাধীন রাষ্ট্রটির অস্তিত্বের অবসান ঘটে যখন অস্ট্রিয়ার সৈন্যরা সেখানে উপস্থিত হয়।
এখন এটা সুষ্পষ্ট হয়ে উঠে যে গুপ্ত সংগঠনের মাধ্যমে ইতালির ঐক্য আনা সম্ভব নয়। জনগণের
স্বত:স্ফ‚র্ত সমর্থন, বিপ্লবীদের অনৈক্য, রাজাদের সাহসের অভাব সর্বপোরি অস্ট্রিয়ানদের শক্তি ইত্যাদি
কারণে বিপ্লবীদের বিদ্রোহ সফল হবার ছিল না। এর পর চারটি পন্থায় ইতালির ঐক্যপ্রচেষ্টা চালিয়ে
যাওয়া হয়। এগুলো হচ্ছে (১) ম্যাৎসিনির প্রজাতান্ত্রিক আদর্শের দ্বারা, (২) উদারনৈতিক সংস্কারবাদের
সাহায্যে; (৩) নব্য-গাল্ফবাদ এবং (৪) পিডমন্টের বিস্তারবাদের মাধ্যমে।
১. ম্যাৎসিনি এবং ইতালিয় প্রজাতন্ত্র
১৮০৫ সালে জেনোয়ায় জন্মগ্রহণকারী ম্যাৎসিনি ১৮২৭ সালে কার্বোনারির সদস্য হন। ১৮৩০ সালে
তাকে পিডমন্ট থেকে নির্বাসন দেয়া হয়। ১৮৩১ সালে তিনি তার গ্রন্থ ’নব্য ইতালি’ প্রকাশ করেন।
একই বৎসর তিনি ইতালির ভবিষ্যত সম্পর্কে তার চিন্তাধারা বাস্তবায়নের জন্য একটি সংগঠন গঠন
করেন।
ম্যাৎসিনির পরিকল্পনা ছিল স্বাধীন এবং ঐক্যবদ্ধ ইতালি। তিনি কোনো রূপ সমাজতন্ত্রবা সাম্যে বিশ্বাসী
ছিলেন না, কিন্তু জনগণের সার্বভৌমত্বে তিনি বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি চাইতেন ইতালি যুক্তরাষ্ট্র না হয়ে
বরং জনগণের সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে একীভ‚ত রাষ্ট্র হিসেবে আর্বিভ‚ত হোক। তিনি প্রচারণা এবং
শিক্ষায় বিশ্বাস করতেন এবং চাইতেন বিপ্লবীরা যথাযত শিক্ষিত হোক। তিনি চাইতেন যে মধ্যবিত্তের


শিক্ষিত শ্রেণী এবং শহরের কারিগররা তার কর্মসূচির বড় সমর্থক হবে। তিনি চাইতেন না যে কৃষক
এবং গরিবরা তার সমর্থক হউক। এরা পড়ালেখা জানে না- এই কারণেই যে তিনি এদেরকে অপছন্দ
করতেন তা নয় বরং তিনি বিশ্বাস করতেন যে, এদেরকে সমর্থন দানের মানে হবে বিপ্লবের মধ্যে শ্রেণী
বিভাজন সৃষ্টি করা। ম্যাৎসিনি চাইতেন ইতালির বিপ্লব হবে সারা ইউরোপের অগ্রগণী এবং মডেল। তাঁর
সহায়তায় ইয়ং পোল্যান্ড, ইয়ং জার্মানি এবং ইয়ং ইউরোপের মত কতগুলি আন্দোলনের জন্ম
হয়েছিলো।
ম্যাৎসিনি যতই চাইতেন জনগণকে নিয়ে বিপ্লব করতে, কিন্তু বাস্তবে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমেই তাকে অভীষ্ঠ
লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হয়েছিলো। ১৮৩০ এবং চল্লিশের দশকে তার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বেশ
কয়েকটি বিদ্রোহ সংগঠিত হয়েছিলো, কিন্তু সেগুলো ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। কিন্তু এতদসত্তে¡ও
ম্য্যৎসিনির আন্দোলন-পরবর্তী কালের ঘটনা প্রবাহে বিভিন্নভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রেখেছিলো,
মাৎসিনির লেখনীর ব্যাপক প্রসারতা পায় এবং জাতীয়তাবাদী আন্দোলন জোরদার হয়। প্রাচীন
গুপ্তসংগঠন গুলোর অবলুপ্তির পিছনে তার প্রভাব ছিল বলে ধরা হয়। এছাড়া ইতালীয় রাজন্যবর্গের জন্য
হত্যা এবং বিদ্রোহের হুমকি সর্বদা ছায়ার মত লেগে থাকত, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় ম্যাৎসিনির
অনুসারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেছিলো। ১৮৪৮ এবং ১৮৫৮ সালে তৃতীয় নেপোলিয়নকে হত্যার
দুটি প্রচেষ্টায় ম্যাৎসিনির অনুসারিরা জড়িত ছিল।
উদার নৈতিক সংস্কার প্রচেষ্টা
শিল্প বিপ্লবের ফলে ইংল্যান্ডের যে উন্নতি হয়েছিলো এবং রক্তাক্ত বিপ্লব ছাড়া দেশটি যে অর্থনৈতিক
সমৃদ্ধি লাভ করেছিলো অনেক ইতালীয় বুদ্ধিজীবি তাতে আকৃষ্ট হয়েছিলো। অনেকইে মনে করেছে যে,
ইতালির একত্রীকরণের জন্য দরকার সামাজিক সংস্কার এবং অর্থনৈতিক আধুনিকীকরণ। তাদের ধারণা
অর্থনৈতিক উন্নতি করতে পারলে দেশটি অর্থনৈতিকভাবে একীভ‚ত হবে।
অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে লক্ষ্য করে যে রাজ্যটি সর্বপ্রথম এগিয়ে আসে সেটি হলো টাসকানি। ১৮৪৮
সালের পর ঐ রাজ্যের সরকার কৃষির উন্নতি, অবাধ বাণিজ্য নীতি এবং সাধারণের জন্য শিক্ষার ব্যাপারে
বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ক্যাটানিও নামক একজন বুদ্ধিজীবী শিল্পায়ন এবং পুঁজির বিকাশের সপক্ষে
মতামত ব্যক্ত করেন। তিনি মনে করেন যে, সম্পদ বিকশিত হলে শ্রেণী বিদ্বেষ কমে যাবে। বিভিন্ন
অঞ্চল বিশেষ করে উত্তর এবং দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নতির মধ্যে বৈষম্য সম্পর্কে তিনি
অবহিত ছিলেন। যতক্ষণ পর্যন্তসকল অঞ্চলে একই ধরনের অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধিত না হয় ততক্ষণ
পর্যন্তবিভিন্ন অঞ্চল নিয়ে একটি যুক্তরাষ্ট্র গঠন না করার পক্ষে তিনি মতামত ব্যক্ত করেন। কাউন্ট
ক্যামিলো ডি ক্যাভুর (ঈড়ঁহঃ ঈধসরষষড় ফর ঈধাড়ঁৎ) নামক আরেক জন রাষ্ট্রনায়ক ইতালিয় ঐক্যের
জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের বড় প্রবক্তা ছিলেন। একটি অভিজাত পরিবারের সন্তান ক্যাভুর পিডমন্টের
সামরিক বাহিনীতে কিছুদিন কর্মরত ছিলেন। সামরিক বাহিনী ছেড়ে তিনি প্রচুর পড়াশুনা ও ভ্রমণ করেন
এবং শিল্প, বাণিজ্য ও যোগাযোগের গুরুত্ব সম্পর্কে অবহিত হন। তিনি উন্নয়নের জন্য ব্রিটেনকে মডেল
হিসেবে ধরে নেন। ইংল্যান্ড অর্থনৈতিক অগ্রগতির উদাহরণই ছিল না, বিপ্লব ছাড়া ভ‚স্বামীর নেতৃত্বে
কীভাবে দেশকে এগিয়ে নেয়া যায় তার জন্য সকলের আদর্শ ছিল। ক্যাভুর ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী রবার্ট
পিলের গুণগ্রাহী ছিলেন। ব্রিটেন ব্যাংক ও ব্যবসায় ব্যাপক পরিবর্তন এনে সমৃদ্ধি এনেছে, শ্রমিক শ্রেণীর
অসন্তোষ কমিয়েছে এবং প্রাচীন ভ‚স্বামী ও নব্য শিল্প ও ব্যবসা বাণিজ্যের ফসল মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে একই
কাতারে দাঁড় করিয়েছে। ক্যাভুর মনে করেন মধ্যবর্তী পন্থা অর্থাৎ অত্যধিক চরম নয় এমন পথে চললে
দেশ বিশৃঙ্খলা এবং স্বৈরাচারের হাত থেকে বাঁচতে পারে। তিনি শিল্প ও ব্যবসার উন্নতির পক্ষে
জোরালো মতামত পেশ করেন, মনে করতেন এ পথেই ভ‚স্বামী শ্রেণী এবং নব্য মধ্যবিত্ত সমাজের মধ্যে
সেতু বন্ধন চালু হতে পারে। তিনি শুধু উত্তর ইতালির একতার পক্ষে ছিলেন, দক্ষিণ ইতালির
অনগ্রসরতার কারণে উত্তর ইতালির সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে না বলে তিনি মনে করতেন।
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস - ২ পৃষ্ঠা-১২৮
জিওবেরটি (এরড়নবৎঃর) এবং নব্য গাল্ফবাদ (ঘবড়-এঁবষঢ়যরংস)
ভিনসেনজো জিওবেরটি নামক পিডমন্টের একজন ধর্মযাজক মনে করতেন যে, পোপের নেতৃত্ব এবং
ক্যাথলিক ধর্ম ইতালির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পথে কাজ করবে। ঐক্য সম্পর্কে জিওবেরটির ধারণা
ম্যাৎসিনির ধারণার উল্টোটি ছিল। মাৎসিনি যেখানে একীভ‚ত ইতালি চাইতেন জিওবেরটি চাইতেন
পোপের নেতৃত্বে একটি কনফেডারেশন বা সব রাজ্য মিলে একটি রাষ্ট্র সংঘ। তিনি জনবিপ্লবের দ্বারা
ইতালির ঐক্যের পথে ছিলেন না, তিনি বিশ্বাস করতেন ক্যাথলিক পিডমন্টের সৈন্যরা অস্ট্রিয়ানদেরকে
ইতালি থেকে বিতাড়িত করবে। তবে ম্যাৎসিনির সঙ্গে তার একটি ব্যাপারে চিন্তার মিল ছিল।
ম্যাৎসিনির মতো তিনি বিশ্বাস করতেন যে, ইতালি ইউরোপের অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোর সাহায্য ছাড়া
স্বাধীনভাবে নিজস্ব লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে। তিনি আশঙ্কা করতেন এই জন্য যে, ইউরোপের অন্যান্য দেশে
ক্রমবিকাশতমান চরমপন্থী মতবাদ ইতালিতে প্রবেশ করবে। তিনি আশা করতেন ইতালির ঐক্যের
আন্দোলন মধ্যবর্তী পন্থার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্তহয়ে থাকবে।
জিওবেরটির এই ধারণাগুলো মধ্যবর্তী পন্থা অনুসরণকারী, ভ‚-সম্পত্তির মালিক এবং উদারনৈতিক
অভিজাতদেরকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করে। কিন্তুএই মতবাদের মধ্যে কোনো সামাজিক ও রাজনৈতিক
সংস্কারের কর্মসূচি ছিল না। পোপের অধীন রাষ্ট্রগুলি ছিল ইতালির মধ্যে সবচাইতে কুশাসনপূর্ণ এলাকা।
তাছাড়া দেশপ্রেমিক রাজন্যবর্গ এবং উদারনৈতিক পোপের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতার কারণে মতবাদটি
কার্যকরি হয়নি। এছাড়া জিওবেরটি শক্তি দ্বারা উদ্দেশ্য হাসিলের কথা বললেও তিনি এ ব্যাপারে বেশি
অগ্রসর হতে পারেন নি। কেননা অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে শক্তি সঞ্চয়ের কথা প্রকাশ্যে উচ্চারণ করা মানেই
ছিল জিওবেরটির উপর ব্যক্তিগত আক্রমণের আশঙ্কা করা।
চার্লস আলবার্ত এবং পিডমন্টের সম্প্রসারণ
অনেক ইতালীয় মনে করতেন যে, চার্লস আলবার্তের নেতৃত্বে পিডমন্টকে কেন্দ্র করে সমগ্র ইতালি
একত্রিত হবে। সমগ্র ইতালিতে পিডমন্টের নেতৃত্বের কয়েকটি কারণ ছিল। পিডমন্টকে শাসনকারী
রাজতান্ত্রিক বংশটি ঐতিহ্যগতভাবে এলাকাবিস্তারকারী শক্তি ছিল - যার দ্বারা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভ‚খন্ড পিডমন্টের
অধীনে আসছিলো। এছাড়া পিডমন্টে ক্যাভুরের নেতৃত্বে একটি মধ্যপন্থার অনুসারি অভিজাত শ্রেণী ছিল
যারা আধুনিকতা এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতির মাধ্যমে পিডমন্টে স্থিতিশীলতা এবং পিডমন্টের প্রভাব
বাড়িয়ে দেওয়ার পক্ষপাতি ছিলেন। পিডমন্টের অধীনস্তজেনোয়া ও সার্ডিনিয়া এই দুটি রাজ্য
অনেকদিন থেকে শাসনতান্ত্রিক সংস্কার এমনকি আলাদা হবার দাবি জানিয়ে আসছিলো। এই
আন্দোলনকে দুর্বল করে দেওয়ার সহজ উপায় ছিল জনসমর্থন পুষ্ট জাতীয়তাবাদী আন্দোলন এবং
রাজ্যের এলাকা বিস্তারের নীতির মাধ্যমে। এছাড়া পিডমন্টের রাজা চার্লস আলবার্তের সঙ্গে অস্ট্রিয়ার
মেটারনিকের সম্পর্ক ভাল ছিল না। তিনি মেটারনিককে ঘৃণা করতেন। অস্ট্রিয়া কর্তৃক মদের ওপর এবং
রেলওয়ে নির্মাণের ওপর শুল্ক আরোপ করায় ১৮৪০ সালের দিকে পিডমন্টের সঙ্গে অস্ট্রিয়ার সম্পর্ক
আরো তিক্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু চার্লস আলবার্ত মোটেই কোনো বিপ্লবী ছিলেন না। ধর্মান্ধ ক্যাথলিক
চার্লস আলবার্ত দমন নীতির জন্য সর্বত্র পরিচিত ছিলেন। কোনো বৈদেশিক ব্যাপারে জড়িয়ে না পড়ার
তাদের পারিবারিক ঐতিহ্য ভেঙ্গে তিনি ১৮৩১ সালে অস্ট্রিয়ার সঙ্গে মৈত্রীতে আবদ্ধ হয়েছিলেন।
এতদসত্তে¡ও তার ভিতরে একটা স্বপ্ন ও মহা উদ্দেশ্য সাধন করার পরিকল্পনা লুক্কায়িত ছিল। এসমস্ত
কারণে পিডমন্ট ইতালির ঐক্য আন্দোলনের পুরোধা হয়ে দাঁড়ায়।
১৮৪৮-৪৯ সালে ইউরোপব্যাপী বিপ্লব দেখা দেয়। বিপ্লবের ঘটনাগুলি সুষ্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে,
ইতালির ঐক্য সাধনে কোন মতাদর্শ সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখতে পারবে। প্রথমত, পোপের
নেতৃত্বে ইতালির ঐক্য সাধন যে ধারণাটি জিওবেরটি পোষণ করতেন তা সম্পূর্ণরূপে ধ লিসাৎ হয়ে
যায়। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ১৮৪৬ সালে নির্বাচিত পোপ দশম পিয়াস পোপের অধীন
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস - ২ পৃষ্ঠা-১২৯
রাজ্যগুলিতে কিছু সংস্কার কর্মসূচি শুরু করেছিলেন। পোপের এই ধরনের কার্যাবলি জিওবেরটির স্বপ্নকে
কিছুটা প্রাণের সঞ্চার করলে বিপ্লবের সময়ে দেখা যায় দশম পিয়াস আসলে উদারনীতি এবং ইতালির
ঐক্যের বিরোধী ছিলেন। তাছাড়া পোপ গোঁড়া ক্যাথলিক ধর্মের অনুসারী হ্যাপসবার্গ রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে
যুদ্ধ পরিচালনা থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেন। মধ্যপন্থী এবং সংস্কারবাদীরা যে ধারণাটি করতেন যে
সংস্কারপন্থী এবং উদারনৈতিক রাজন্যবর্গ একত্রিত হয়ে ইতালিকে একটি শিথিল যুক্তরাজ্য গঠন করে
ঐক্যবদ্ধ করবে -এ ধারণাটিও বিপ্লবের ঘটনাবলিতে অসার প্রমাণিত হয়। সমগ্র ইতালিতে টাসকানি
ছিল সবচাইতে উদারনৈতিক রাজ্য এবং সবাইর জন্য ছিল একটি অনুকরণীয় আদর্শ। কিন্তু বিপ্লবের
সময় দেখা গেল গ্যান্ড ডিউক অব টাসকানি আসলে অস্ট্রিয়ানদের হাতের পুতুল মাত্র, অস্ট্রিয়ার অস্ত্রই
তাকে ক্ষমতায় রেখেছিলো। ইতালির ঐক্য প্রচেষ্টায় সবচাইতে প্রভাবশালী ছিলেন মাৎসিনি। কিন্তু
১৮৫০ সালের দিকে তিনি কয়েকটি ব্যর্থ বিদ্রোহের সূচনা করলে তার সমর্থকরা দুর্বল হয়ে পড়ে।
তাছাড়া মাৎসিনি সেই সমস্তসংস্কারের বিরোধী ছিলেন, যা কৃষক এবং শহরের শ্রমিক শ্রেণীকে আকৃষ্ট
করতে পারে।
১৮৫০ সাল নাগাদ ইতালির ঐক্যে হতাশ কর্মীরা বিভিন্ন মতাদর্শ অনুসরণ করার চেয়ে পিডমন্টের
নেতৃত্বে সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে দেশটিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে এই বাস্তব রাস্তাটি অনুসরণ করতে
দৃঢ়প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। এই সময় পিডমন্টের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হওয়ার কয়েকটি কারণ ছিল। সমস্ত
পিডমন্টের নেতৃত্বে সামরিক পন্থায় কীভাবে ইতালি ঐক্যবদ্ধ হয় তা পরবর্তী অধ্যায়ে আলোচনা করা
হয়। তবে এখানে এতটুকু বলা প্রয়োজন যে ১৮৫০ এর দশকে পিডমন্ট সমস্তজাতীয়তাবাদীদের
আশার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়। ইতালির রাজ্যগুলির মধ্যে এই সময় একমাত্র পিডমন্টের একটি
শাসনতন্ত্রছিল। উদারনীতিকদের জন্য তাই পিডমন্ট ছিল আশার আলোকবর্তিকা। ১৮৪৮ সালের
বিপ্লবের সময়ে পিডমন্ড দু’বার অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে ছিলো, চরমপন্থী জাতীয়তাবাদীরা
চাচ্ছিলেন পিডমন্ট এরকম আরো যুদ্ধ করুক। ভ‚-সম্পত্তির মালিক এবং মধ্যপন্থীরা পিডমন্টের অধীনে
ইতালি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন। কেননা তারা মনে করতেন যে, পিডমন্টের নেতৃত্ব চরমপন্থী
বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে শান্তিশৃঙ্খলার নিশ্চয়তা দিতে পারবে।
১৮৫৭ সালে পিডমন্টে ইতালির ঐক্যপ্রচেষ্টার উদ্দেশ্যে ন্যাশনাল সোসাইটি নামে একটি সংগঠন
প্রতিষ্ঠিত হয়। সিসিলির প্রজাতন্ত্রী গুইসপা-লা ফারিনা (এঁরংবঢ়ঢ়ব খধ ঋধৎরহধ)-এর নেতৃত্বে এই
সংগঠনটি ভ‚মির অধিকারী ব্যক্তি থেকে শুরু করে গ্যারিবল্ডির মত একনিষ্ঠ বিপ্লবীদেরকে আকৃষ্ট করে।
কীভাবে ইতালির অভ্যন্তরীণ সংস্কার আনা হবে এ ধরনের কোনো বক্তব্য প্রকাশ থেকে তারা বিরত
থাকে, কেননা তাদের ধারণা ছিল যে, এই ধরণের আলোচনা ইতালিয়দেরকে বিতর্ক ও বিভক্তিতে
নিমজ্জিত করবে।
সারসংক্ষেপ
সার্দিনিয়া রাজ্যের নেতৃত্বে যখন ইতালির বিভিন্ন অংশ, সিসিলির দুটি দেশ, মডেনা, টাসকানি,
আবরুজা এবং পোপের অধীন রাজ্যগুলি একত্রিত হয় তখনই ইতালির ঐক্যপ্রচেষ্টা সাফল্যমন্ডিত হয়।
কিন্তু ইতালির ঐক্যবদ্ধের প্রচেষ্টা দীর্ঘ সময়ের ঘাত-প্রতিঘাতের ফসল। বিভিন্ন মত এবং পথের মাধ্যমে
ইতালীয় ঐক্যের প্রচেষ্টা চালানো হয়। শেষ পর্যন্তচার্লস আলবার্তের নেতৃত্বে সশস্ত্রসংগ্রামের মাধ্যমে
ইতালিকে একত্রীকরণের প্রচেষ্টার প্রতি সবাই মনোযোগী হয়ে পড়েন।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস - ২ পৃষ্ঠা-১৩০
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
১. নেপোলীয়নের শাসন ইতালীয় জনগণকে ঐক্যের জন্য
(ক) উদ্বুদ্ধ করে
(খ) ঐক্যের প্রচেষ্টাকে সূদূরপ্রসারী করে তোলে
(গ) একটি সশস্ত্রআন্দোলনের সূচনা করে
(ঘ) অস্ট্রিয়াকে ইতালি আক্রমণ করতে প্রলুব্ধ করে।
২. ইতালিয় দেশপ্রেমিকরা গুপ্ত সংগঠন গড়ে তোলে কেননা
(ক) এরকম সংগঠন গঠন করা খুব সহজ ছিল
(খ) অস্ট্রীয় শাসকরা স্বৈরাচারী এবং প্রকাশ্যে রাজনীতিকে কঠোর হস্তেদমন করত
(গ) গুপ্ত সংগঠনের মাধ্যমে জনগণের নজর কাড়া সহজ ছিল
(ঘ) গুপ্ত সংগঠনের কার্যাবলির মাধ্যমে ইতালির রাজ্যগুলোকে একত্রিত করা সম্ভব ছিল।
৩. ম্যাৎসিনি কোনটিতে বিশ্বাস করতেন না
(ক) গণতন্ত্র
(খ) পার্লামেন্টারি ব্যবস্থা
(গ) সমাজতন্ত্র
(ঘ) উদারনীতিবাদ
৪. ক্যাভুর কোনটিতে বিশ্বাস করতেন
(ক) শিল্প ও ব্যবসার উন্নতি
(খ) সমাজতন্ত্র
(গ) সন্ত্রাসবাদ
(ঘ) অভিজাতদের শাসন
রচনামূলক প্রশ্ন
১। ইতালির ঐক্যের জন্য মাৎসিনির চিন্তাধারা আলোচনা করুন।
২। দেশপ্রেমিক ইতালীয়রা কেন পিডমন্টের নেতৃত্বে ইতালির ঐক্যের প্রচেষ্টায় নিয়োজিত হন তা
বিশ্লেষণ করুন।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের উত্তর
১. ক; ২. খ; ৩. গ; ৪. ক
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। গুপ্ত সংগঠনের মাধ্যমে ইতালির ঐক্য প্রচেষ্টা কেন ব্যর্থ হয় ?
২। পোপের নেতৃত্বে ইতালির ঐক্য প্রচেষ্টা সম্ভব নয় তা কীভাবে সুষ্পষ্ট হলো ?

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]