সম্পর্কে ধারণা লাভ করবেন।
ইতালির একত্রীকরণের পথে সমস্যাগুলো
১৮৫০ সাল নাগাদ ইতালীয় জাতীয়তাবাদ এবং বিভিন্ন অঞ্চলকে ভৌগোলিকভাবে একত্রীতকরণের
প্রচেষ্টা অনেকদূর পর্যন্তঅগ্রসর হয়। কিন্তুতারপরও ইতালি ঐক্যবদ্ধ হতে পারে নি। এর কারণ হিসেবে
প্রধানত দুইটি বিষয়কে চিহ্নিত করা যায়।
প্রথমত, ১৮৪৮ সালের পর উত্তর ইতালিতে অস্ট্রিয়ার দমনমূলক আচরণ আরো বৃদ্ধি পায়। এটা এবং
শক্তিশালী অস্ট্রিয়ান সামরিক উপস্থিতির জন্য জনগণের উপর করের বোঝা ইতালির জনগণকে অস্ট্রিয়ার
কর্তৃত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার চেতনাকে আরো উজ্জীবিত করে তোলে।
দ্বিতীয়ত, দ্বিতীয় বাধাটি ছিল পোপের নিয়ন্ত্রণাধীন রাজ্য দুটোর কারণে পোপের সরকার পুরো উপদ্বীপের
মধ্যে সবচাইতে দুর্নীতিপরায়ন এবং নিষ্পেষণকারী শক্তি ছিল। পোপ ইতালির একত্রীকরণের প্রচন্ড
বিরোধী ছিলেন। তাছাড়া ইতালির মাঝখানে অবস্থিত পোপের রাজ্য দুটি ঐক্য প্রচেষ্টার পথে
ভৌগোলিকভাবে বাঁধা ছিল।
ক্যাভুর ও গ্যারিবল্ডি
বিদেশী প্রভুদেরকে তাড়ানো এবং সমস্তরাজ্যগুলোকে একসূত্রে বাধার জন্য প্রয়োজন ছিল অসাধারণ
ক‚টনৈতিক এবং সামরিক নৈপূণ্যতা। কাউন্ট ক্যামিলিও ডি ক্যাভুর এবং জিওসপিও গ্যারিবল্ডি
(এরঁংবঢ়ঢ়ব এধৎরনধষফর) ইতালির অতীব প্রয়োজনীয় মুহূর্তে এই নেতৃত্ব প্রদান করেছিলেন। পূর্বের
অধ্যায়ে ক্যাভুর সম্পর্কে কিছু আলোকপাত করা হয়েছে। কৃষিকাজ এবং সাংবাদিকতা পেশা শুরু করে
ক্যাভুর ১৮৫০ সাল নাগাদ পিডমন্টের একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আর্বিভ‚ত হন। রাজনৈতিক
এবং অর্থনৈতিক বিভিন্ন তত্ত¡ এবং প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তাঁর অগাধ জ্ঞান ছিল। অপরদিকে একজন
ব্যবসায়ীর পুত্র গ্যারিবল্ডির পড়াশুনা ছিল সমান্য। একসময় তিনি মাৎসিনীর চিন্তাধারার অনুসারী হন
এবং গোপন সংগঠন কার্বোনারিতে যোগদান করেন। ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে নাইসে জন্মগ্রহণকারী বিপ্লবী
গ্যারিবল্ডিকে তথাকার কর্তৃপক্ষ তাড়িয়ে দেয়। পরবর্তী চৌদ্দ বছর তিনি উত্তর আমেরিকায় কাটান এবং
গেরিলা যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। ১৮৪৮ সালের বিপ্লবের সময় তিনি পিডমন্টে ফেরত এসে রাজা চার্লস
আলবার্তের কাছে নিজেকে সঁপে দিলেন। কিন্তু চার্লস আলবার্ত তাঁকে উৎসাহ না দিয়ে বরং সন্দেহ
করতে থাকেন। আবার গ্যারিবল্ডি দক্ষিণ আমেরিকায় নির্বাসিত জীবন যাপন করতে থাকেন। ১৮৫৯
সালের যুদ্ধে গ্যারিবল্ডি স্বদেশে ফেরত আসেন এবং লোম্বার্ডি দখলের যুদ্ধে অসাধারণ নৈপূণ্য প্রদর্শন
করেন।
ইতালির ভবিষৎ সম্পর্কে ক্যাভুর এবং গ্যারিবল্ডির চিন্তাধারায় যথেষ্ট পার্থক্য ছিল। ক্যাভুর সমগ্র ইতালির
ঐক্যের পক্ষে ছিলেন না, লোম্বার্ডি এবং ভেনেশিয়া নিয়ে তিনি বৃহত্তর পিডমন্ট গঠনের সপক্ষে ছিলেন।
অন্যদিকে গ্যারিবল্ডি ইতালির রাজ্যগুলোর সমন্বয়ে একক ইতালির সপক্ষে ছিলেন এবং এই লক্ষ্য
অর্জনে বিদেশী শাসকদের বিরুদ্ধে যেমন লোম্বার্ডিতে অস্ট্রিয়ানদের বিরুদ্ধে, রোম, সিসিলি এবং
নেপলসে ফরাসি বুরবোঁদের বিরুদ্ধে লড়তে প্রস্তত ছিলেন। অপর পক্ষে ক্যাভুর ক‚টনীতির মাধ্যমে
বিদেশীদেরকে বিতাড়নের পক্ষে ছিলেন।
ক্যাভুর এবং ইতালির ঐক্য
১৮৫২ খ্রিস্টাব্দে ক্যাভুর পিডমন্টের প্রধানমন্ত্রী হন। পিডমন্টকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে
শক্তিশালী করার জন্য তিনি কতগুলো সংস্কারে হাত দেন। তিনি পিডমন্টকে গণতান্ত্রিক পথে এগিয়ে
নিয়ে যাওয়ার পক্ষপাতি ছিলেন, কেননা তাঁর বিশ্বাস ছিল অপ্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা যদি মুষ্টিমেয় কিছু
লোকের হাতে সীমাবন্ধ রাখা হয় তাহলে বিপ্লব অনিবার্য। কতগুলো আইন পাশ করে তিনি
ধর্মযাজকদের বিচার করার জন্য প্রতিষ্ঠিত বিশেষ বিচারালয়ের বিলুপ্তি ঘটান। অপ্রয়োজনীয় মঠগুলো
তিনি উঠিয়ে দেন, গির্জার কর্তৃত্ব থেকে শিক্ষার নিয়ন্ত্রণ তুলে দিয়ে শিক্ষার উপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ স্থাপন
করেন। ক্যাভুর বিচারালয়, প্রশাসনিক এবং সামরিক বাহিনীতে অভিজাত ভ‚স্বামী শ্রেণীর চাকরি পাবার
একচেটিয়া অধিকারও খর্ব করেন। এর ফলে নব্য মধ্যবিত্ত শ্রেণী এসব পদ লাভ করার সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি
হয়। ক্যাভুর সরকারি নিয়ন্ত্রণ মুক্ত অর্থনীতিতে বিশ্বাস করতেন। কিন্তু অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার উদ্দেশ্যে
তিনি কিছু কিছু সরকারি হস্তক্ষেপের ব্যবস্থা চালু করেন। তিনি কয়েকটি বাণিজ্য চুক্তি করে শুল্কের হার
কমিয়ে পণ্যের বাজার সৃষ্টিকে উৎসাহিত করেন এবং কাঁচামালের মূল্য কমিয়ে আনতে সমর্থ হন।
আমদানিকৃত খাদ্যশষ্যের উপর শুল্ক রেয়াতের ফলে গরিব জনসাধারণ উপকৃত হয়। রাস্তাঘাট, রেলপথ
এবং পোতাশ্রয় উন্নয়নে সরকারি খরচ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত
করে। এসব সংস্কারের ফলে ১৮৫০-এর দশকে পিডমন্টের ব্যবসা-বাণিজ্য তিনগুণ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় এবং
শিল্পায়নের গতি বেগবান হয়। রাজনৈতিক ভাবে এসবের ফলাফল ছিল নেতিবাচক। ফলে বিভিন্ন শ্রেণীর
জনগোষ্ঠী ক্যাভুরের সমর্থক হয়ে যাওয়ার ফলে চরমপন্থীরা জনগণের আকর্ষণ হারাতে থাকে।
ক্যাভুরের ক‚টনীতি
পূর্বেই বলা হয়েছে ক্যাভুর পিডমন্টের সীমানা বাড়ানোর পক্ষে ছিলেন। কিন্তু এই জন্য তিনি শক্তি
প্রয়োগে বিশ্বাস করতেন না। ইয়ং ইতালি এবং কার্বোনারির ব্যর্থ আন্দোলন প্রমাণ করে যে শক্তি দিয়ে
অস্ট্রিয়াকে হারানো কঠিন। ক্যাভুর তাই বিশ্বাস করতেন অস্ট্রিয়াকে পরাজিত করার জন্য প্রয়োজন
ক‚টনীতি এবং বৈদেশিক শক্তির সাহায্য। ১৮৫০ এর দশকে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ক্যাভুরের পরিকল্পনা
বাস্তবায়নের সুযোগ এনে দেয়।
ক্রিমিয়ার যুদ্ধ
অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন যে, ইতালির ঐক্য সাধনের জন্য ক্যাভুর ইচ্ছাকৃতভাবে পিডমন্টকে
ক্রিমিয়ার যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলেন যেন ইতালি দুই বড় শক্তি ফ্রান্স ও বৃটেনের সহানুভ‚তি লাভ করে। কিন্তু
কোনো কোনো ঐতিহাসিক এতে দ্বিমত পোষণ করেন। তাঁদের মতে ক্রিমিয়ার যুদ্ধে মৈত্রীশক্তিই
পিডমন্টকে সৈন্য দিয়ে সাহায্য করতে আহŸান করে। মৈত্রীশক্তির উদ্দেশ্য ছিল পিডমন্ট যুদ্ধে জড়ালে
পিডমন্ট থেকে অস্ট্রিয়ার প্রতি দেওয়া হুমকি দূর হবে এবং অস্ট্রিয়া ক্রিমিয়ার যুদ্ধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে
মৈত্রীশক্তির সহযোগী হবে। যাই হউক, ক্যাভুর স্বেচ্ছায় ক্রিমিয়ার যুদ্ধে যোগদান করুন আর নাই
করুন, এই যুদ্ধের ফলে ইতালির ঐক্য প্রচেষ্টা যে বেশকিছু দূর পর্যন্তঅগ্রসর হয় এ ব্যাপারে কোনো
সন্দেহ নেই। এই যুদ্ধের ফলে অস্ট্রিয়া ইউরোপে বন্ধুহীন হয়ে পড়ে। বৃটেন এবং ফ্রান্স অস্ট্রিয়ার উপর
চটে যায়, কেননা শেষ পর্যন্তপ্রত্যাশিত অস্ট্রিয়ার সহায়তা তারা লাভ করতে পারে নি। রাশিয়ার বন্ধুত্বও
অস্ট্রিয়া হারায়, কেননা সে টের পায় যে অস্ট্রিয়া রাশিয়ার শত্রæ ব্রিটেন ও ফ্রান্সের সঙ্গে সহযোগিতা
করার কথা বিবেচনা করছিলো। এই যুদ্ধের পর ব্রিটেনের দৃষ্টিভঙ্গী ইতালির মুক্তি আন্দোলনের প্রতি
সহানুভ‚তিশীল হয়ে উঠে। তবে এর পিছনে অবশ্যই ব্রিটেনের স্বার্থ নিহিত ছিল। যদি উত্তর ইতালিতে
শক্তিশালী পিডমন্টের আর্বিভাব ঘটে। তাহলে এই অঞ্চলে ফরাসি উচ্চাকাঙক্ষা ধূলিসাৎ হতে পারে। পূর্ব
ইউরোপে অস্ট্রিয়া রাশিয়ার শক্তির ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে, তবে এর জন্য অস্ট্রিয়াকে অবশ্য
সমস্যা সঙ্কুল অধিকৃত ইতালিয় অঞ্চলের ভার থেকে মুক্ত হতে হবে।
ক্যাভুর ও ফ্রান্স
ইংল্যান্ডই নয় ফ্রান্সও ক্রিমিয়ার যুদ্ধের পর ক্যাভুবের আকাংক্ষার প্রতি সমর্থন জানায়। তবে ইংল্যান্ডের
মতো ফ্রান্সেরও এখানে স্বার্থ জড়িত ছিল, যদিও ফ্রান্সের সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়ন মাঝে মাঝে বলতেন
“ইতালির ব্যাপারে আমাদের অবশ্যই কিছু করণীয় রয়েছে”। স্বাধীনতা সংগ্রামে সহায়তা দিয়ে যদি
ইতালিকে বৈদেশিক নিয়ন্ত্রণের হাত থেকে উদ্ধার করা যায় তাহলে ফ্রান্সের অভ্যন্তরে তৃতীয়
নেপোলিয়নের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ¦ল হবে। তাছাড়া উত্তর ইতালির পিডমন্ট রাজ্যটিতে যদি একজন
কৃতজ্ঞ সরকার থাকে তাহলে তাকে দিয়ে এঅঞ্চলে ফ্রান্সের উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করা যাবে। ১৮৫৮
সালে একটি ঘটনা ঘটে যার ফলে তৃতীয় নেপোলিয়ন ইতালির ব্যাপারে কিছু করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ
হন। মাৎসিনির অনুসারী ইতালির একজন নাগরিক ওরসিনি বোমা ছুঁড়ে তৃতীয় নেপোলিয়ন ও রানীর
প্রাণনাশের ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালায়। সম্রাট ও রানী অক্ষত থাকলেও ওরসিনির বোমায় ১৫০জন গার্ড ও
পথচারী নিহত হয়। ফরাসি সম্রাট চ‚ড়ান্তসিদ্ধান্তেপৌঁছেন যে ইতালিতে অস্ট্রিয়ার উপস্থিতি ইউরোপে
সন্ত্রাস ও উৎকণ্ঠাকে আরো জোরদার করবে। ১৮৫৮ সালে সীমান্তশহর প্লেমবিয়ার্সে উপস্থিত হয়ে
তৃতীয় নেপোলিয়ন ক্যাভুরের সঙ্গে একটি চুক্তি সাক্ষর করেন। এতে সিদ্ধান্তহয় পিডমন্ট এবং ফ্রান্স
একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতা করে উত্তর ইতালিতে অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবে। চুক্তিতে
নি¤েœাক্ত সিদ্ধান্তসমূহ তুলে ধরা হয়।
(১) রাজা ভিক্টর ইম্যানুয়েলের অধীনে ইতালিতে একটি নতুন রাষ্ট্র সৃষ্টি করা হবে। এখানে উলেখ করা
প্রয়োজন যে রাজা চালর্স আলবার্তের উত্তরসূরী ছিলেন ভিক্টর ইম্যানুয়েল;
(২) মধ্য ইতালিতে টাসকানি এবং পোপের রাজ্যগুলো থেকে কিছু ভূখন্ড নিয়ে আরেকটি নতুন রাষ্ট্র সৃষ্টি
করা হবে;
(৩) এই চুক্তিতে আরো আশা প্রকাশ করা হয় যে, পোপের অধীন এক সময় একটি ইতালিয়
কনফেডারেশন গঠন করা হবে;
(৪) ইতালিকে সহযোগিতার বিনিময়ে তৃতীয় নেপোলিয়ন পিডমন্টের ফরাসি ভাষাভাষী অঞ্চল নিস এবং
স্যাভয় লাভ করবে।
ভিল্লাফ্রাঙ্কার সন্ধি
অস্ট্রিয়াকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যুদ্ধে টেনে আনা হলো। ফ্রান্স এবং পিডমন্টের যৌথবাহিনীর কাছে
অস্ট্রিয় বাহিনী পরাজিত হলো। পূর্বেই বলা হয়েছে গ্যারিবল্ডি এই যুদ্ধে তার অসাধারণ শৌর্য বীর্য
প্রদর্শন করেন। ম্যাজেনটা ও সলফেরিনোর যুদ্ধে পরাজিত অস্ট্রিয় বাহিনী এরপর লোম্বার্ডি হারায়। এর
পর পিছু হটে অস্ট্রিয় বাহিনী ভেনেশিয়া প্রদেশে নিজেদের অবস্থান নেয়। ঠিক এমনি সময় জয়ের পথে
অনেক দূর অগ্রসর ফরাসি বাহিনী হঠাৎ যুদ্ধ বন্ধ করে দেয়, কেননা তৃতীয় নেপোলিয়ন অস্ট্রিয়ার সঙ্গে
ভিল্লাফ্রাঙ্কার সন্ধি করেন। তৃতীয় নেপোলিয়নের এই ধরনের আচরণের কারণ সম্ভাবত তিনি মধ্য
ইতালিতে যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ দেখে বিচলিত হয়েছেন। যুদ্ধে জানমালের এত ব্যাপক ক্ষতি সাধিত
হয়েছিলো যে অস্ট্রিয়ার সম্রাট মন্তব্য করেছিলেন যে তিনি বরং “একটি প্রদেশ হারাবেন তবুও এরকম
নৃশংস অভিজ্ঞতার মুখোমুখি আর হবেন না”। যাই হউক, ইতালির জাতীয়তাবাদীরা ইতালির প্রতি
তৃতীয় নেপোলিয়নের বিশ্বাসঘাতকতা বলে এই চুক্তিকে মনে করে। ক্যাভুর রাজা ভিক্টর ইম্যানুয়েলকে
এই সন্ধি অগ্রাহ্য করার পরামর্শ দেন। কিন্তু রাজা এই সন্ধি স্বীকার করে লোম্বার্ডিকে পিডমন্টের সঙ্গে যুক্ত
করে সন্তুষ্ট থাকেন।
ইতালির মধ্যা›চলে বিদ্রোহ
লোম্বার্ডিতে ফরাসি এবং সার্ডিনিয়ার সাফল্য ইতালির মধ্যা›চলের জনগণের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
জনগণের বিদ্রোহের ফলে টাসকানির গ্র্যান্ড ডিউক অস্ট্রিয়ায় পলায়ন করে, পারমার ডাচেস
সুইজারল্যান্ডে আশ্রয় গ্রহণ করেন। মডেনার ডিউক অস্ট্রিয়ার শিবিরে আশ্রয় গ্রহণ করেন। বোলোনা
পোপের আনুগত্য অস্বীকার করে সার্ডিনিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়। পোপের অধীনস্তএলাকার কয়েকটি শহরও
একই পথ অনুসরণ করে। এই বিদ্রোহ দমন করার জন্য অস্ট্রিয়ার সৈন্যবাহিনী পাওয়া গেলো না।
শান্তিশৃঙ্খলা এবং সম্পদশালীদের ধনসম্পত্তি রক্ষার জন্য পিডমন্টের সৈন্যদেরকে ডেকে আনা হলো।
তৃতীয় নেপোলিয়ন স্বাভাবিকভাবেই মনে করলেন ক্যাভুর এরকম একটা পরিকল্পনা আগে থেকে এঁটে
রেখেছিলেন। নেপোলিয়ন এক ইতালি গঠনের পক্ষে ছিলেন না, তিনি শুধু চেয়েছেন উত্তরে পিডমন্ট
রাজ্যের কিছু বিস্তৃতি ঘটুক। ইতালি একত্রিত হলে নেপোলিয়নের সামরিক প্রাধ্যন্যের উপর হুমকি হতে
পারে। পোপের এলাকা ইতালির মধ্যে চলে গেলে ফ্রান্সের ক্যাথলিকরা তাকে ক্ষমা করবে না।
ভিল্লাফ্রাঙ্কার চুক্তি আসলে ইতালির জন্য আর্শীবাদ বয়ে এনেছিলো। অবশ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার খবর
প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাগে দুঃখে ক্যাভুর পিডমন্টের প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ করেন।
সার্ডিনিয়ার উপর ফরাসি চাপের ফলে পিডমন্ট তার সকল প্রতিনিধিকে মধ্য ইতালির বিদ্রোহী
এলাকাগুলো থেকে প্রত্যাহার করে নেয়। এর ফলে সেখানে এক শূন্যতার সৃষ্টি হয়। ফ্রান্স এবং অস্ট্রিয়া
কেউই সেখানে সৈন্য পাঠাতে সাহস করতে পারছিলো না। কেননা, এ ধরনের যে কোনো উদ্যোগ
ইউরোপীয় শক্তিসমূহের বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হবে। যাই হউক, শেষ পর্যন্তএই নাজুক পরিস্থিতি
দুটো ঘটনার দ্বারা পরিসমাপ্ত হয়। প্রথমত, বৃটেন ফরাসিদের উপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকে যেন
তৃতীয় নেপোলিয়ন তার ইচ্ছার বাইরে হলেও এক শক্তিশালী ও বৃহত্তম পিডমন্টের অস্তিত্ব স্বীকার করে
নেয়। দ্বিতীয়ত, ১৮৬০ সালের জানুয়ারিতে ক্যাভুর পিডমন্টের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফিরে আসেন।
তৃতীয় নেপোলিয়নের সঙ্গে তিনি একটি চুক্তিতে আবদ্ধ হন। তৃতীয় নেপোলিয়ন দেখলেন জনমত
উপেক্ষা করে মধ্য ইতালিয় বিদ্রোহী এলাকাগুলোকে ইতালির সঙ্গে যুক্ত হওয়া ঠেকানো যাবে না।
তৃতীয় নেপোলিয়ন মধ্য ইতালির রাজ্যগুলির পিডমন্টের সঙ্গে যুক্ত হওয়াকে মেনে নীতে রাজি হলেন
দুটি শর্তে। প্রথমত, ফরাসি ভাষাভাষী স্যাভয় এবং নিস ফ্রান্সকে দিয়ে দিতে হবে। আসলে ফরাসি
জনগণকে তুষ্ট করার উদ্দেশ্যেই তিনি এদুটি অঞ্চল দাবি করেন, যদিও ইতালিয়রা এতে অসস্তুষ্ট
হয়েছিলো। দ্বিতীয়ত, বিদ্রোহী রাজ্যগুলো গণভোটের মাধ্যমে তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করবে। এই চুক্তি
অনুসারে মডেনা, টাসকানি, পারমা, ও রোমানাতে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় ভ‚স্বামী ও বিশিষ্ট
ব্যক্তিবর্গ জনগণকে পিডমন্টের সঙ্গে সংযুক্তির পক্ষে রায় দেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করে। যাই হউক সংযুক্তির
পক্ষে শতকরা ৯৭ ভাগ ভোট পড়ে। ক্যাভুর লোম্বার্ডি এবং ভেনেশিয়াকে নিয়ে বৃহৎ পিডমন্ট
চেয়েছিলেন, কিন্তু ঘটনা প্রবাহ তার থেকে বৃহৎ আকারের একটি রাষ্ট্র সৃষ্টি করার দিকে নিয়ে যায়।
ক্যাভুরের কৃতিত্ব এখানে যে তিনি ঘটনা প্রবাহের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে পরিস্থিতিকে নিজের লক্ষ্য
অর্জনের দিকে নিয়ে যান। তিনি জনগণকে বোঝাতে পেরেছিলেন যে ভাবে প্রকৃত ঘটনা ঘটেছে তা তাঁর
পরিকল্পনা মতোই ঘটেছে।
গ্যারিবল্ডি ও ইতালির ঐক্য
ইতালির উত্তরের অংশের ঘটনাবলি সিসিলির পালেরমোতে একটি বিদ্রোহের সূচনা করে। মূলত পুরো
শতাব্দী ধরেই সিসিলির দুইটি দ্বীপে অশান্তপরিবেশ বিরাজ করছিলো। কৃষকের দারিদ্র্য এবং
অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছিল সিসিলির বৈশিষ্ট্য। বুরবোঁ বংশীয় রাজা ফ্রান্সিস নেপলস থেকে
সিসিলিকে নিয়ন্ত্রণ করতেন। সিসিলির লোকের নেপেলসের কর্তৃত্ব এবং রাজার খাজনা আদায়ের
কর্মচারীদেরকে পছন্দ করতো না। যাই হউক, এবারে সিসিলির বিদ্রোহ অন্য বিদ্রোহ থেকে আলাদা
ছিল, কেননা এবার দ্রæত বিদ্রোহের দাবানল চর্তুদিকে ছড়িয়ে পড়ছিলো, আর মাৎসিনিপন্থী প্রজাতন্ত্রীরা
একটা সফল বিপ্লব করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল। তারাই গ্যারিবল্ডিকে সিসিলিতে অভিযান চালানোর
আমন্ত্রণ জানায়। ১৮৬০ সালের মে মাসের প্রথম দিকে গ্যারিবল্ডি নেপলস নৌবাহিনীর চোখ এড়িয়ে
প্রায় এগারশ স্বেচ্ছাসেবী বহনকারী দুটি জাহাজ নিয়ে সিসিলিতে অবতরণ করেন। একটার পর একটা
যুদ্ধ জয় করে তিনি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথমার্ধে সিসিলির দ্বীপ দুটি দখল করে নেন। এর পর তিনি
মেসিনা প্রণালী অতিক্রম করেন। গ্যারিবল্ডির এই সহজ বিজয়ের কয়েকটি কারণ ছিল। ব্রিটিশ
নৌবাহিনীর কয়েকটি জাহাজের উপস্থিতি নেপলস বাহিনীকে গ্যারিবল্ডি এবং তাঁর জাহাজ দুটিকে
আক্রমণ করার সাহস জোগায়নি। তাছাড়া কৃষক ও শহরের শ্রমিকরা গ্যারিবল্ডির সিসিলিতে পৌঁছার
পূর্বেই বিদ্রোহ ঘোষণা করে ক্ষেত্র প্রস্তুত করে রেখেছিলো। গ্যারিবল্ডির সাফল্যের আরেকটি কারণ ছিল,
সম্পদশালী ও বিত্তবানরা তার বড় সমর্থক ছিল। বিশৃঙ্খলা এবং তাদের সম্পদ লুণ্ঠনের হুমকির মুখে
তারা মনে করেছে যে, পিডমন্টের সঙ্গে যুক্ত হওয়া একমাত্র রক্ষা কবচ। গ্যারিবল্ডি তাদের আশাকে
জাগ্রত করেছিলেন, কেননা তিনি সিসিলির কৃষক বিদ্রোহ দমন করেছিলেন। গ্যারিবল্ডির সাহস, ধৈর্য
এবং নেতৃত্বের গুণাবলিও তাঁর সহজ জয়ের রাস্তা তৈরি করেছিলো। নেপলসের রাজার সৈন্যরা ছিল
নির্জীব, আত্মবিশ্বাসহীন, জননিন্দিত এবং অদক্ষ নেতৃত্বাধীন। অপর পক্ষে গ্যারিবল্ডির অনুসারীরা ছিল
প্রাণবন্ত, স্থানীয় জনগণের নিকট প্রিয় এবং এমন একজন নেতার দ্বারা পরিচালিত যিনি ছিলেন গেরিলা
যুদ্ধে যথেষ্ট অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ।
গ্যারিবল্ডি ও ক্যাভুরের দ্ব›দ্ব
নেপেলস অধিকার করার পর গ্যারিবল্ডি পোপ নিয়ন্ত্রণাধীন রাজ্য দুটির দিকে মনযোগ দেন। গ্যারিবল্ডি
ঘোষণা দেন যে রোমে উপস্থিত হয়ে তিনি ইতালি রাজ্যের ঘোষণা দেবেন। এদিকে পোপের অবস্থা তখন
ছিল করুণ পর্যায়ে। তাঁর রাজ্যে একদল ফরাসি সেনাদল ঘাঁটি গেড়ে বসেছিল, কেননা ফরাসিরা
চেয়েছিলো রোমে যেন অন্য কোনো দেশ হস্তক্ষেপ না করতে পারে। পোপের সঙ্গে তৃতীয় নেপোলিয়নের
সম্পর্ক ভাল ছিল না। পোপ ফরাসি সম্রাটকে দেয় সংস্কারের প্রতিশ্রæতি পূরণে অস্বীকৃতি জানান এবং
হুমকি দেন যে যারা ক্যাথলিক চার্চের ব্যাপারে নাক গলাবে তাদেরকে খ্রিস্টান সম্প্রদায় থেকে বহিষ্কার
করবেন। পোপের আহŸানে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের ক্যাথলিকদের থেকে টাকা উঠানো হলো এবং
ধর্মভীরুদেরকে পোপের পবিত্র সেনাবাহিনীতে যোগদানের আহŸান জানানো হলো।
পিডমন্টের প্রধান মন্ত্রী ক্যাভুর এই সময় দেখলেন যদি গ্যারিবল্ডিকে তার সাফল্য অনুসরণে আরো
সূযোগ দেয়াও হয় তাহলে কয়েক ধরনের বিপদের সম্ভবনা তার রয়েছে। প্রথমত, গ্যারিবল্ডি ও তাঁর
সহযোদ্ধারা মাৎসিনির অনুসারী প্রজাতন্ত্রী। গ্যারিবল্ডির অগ্রাভিযান মানে হচ্ছে নেপেলস, পোপের
রাজ্যসমূহে এবং ভেনেসিয়ায় প্রজাতন্ত্রী সরকারের প্রতিষ্ঠা যা ক্যাভুর অপছন্দ করতেন। তাছাড়া ইতালির
এক অংশ হবে রাজতন্ত্রী এবং আরেক অংশ হবে প্রজাতন্ত্রী, এর ফলে রাজতন্ত্রী ও প্রজাতন্ত্রীদের মধ্যে
গৃহযুদ্ধের সম্ভবনা দেখা দিতে পারে। দ্বিতীয়ত, রোমে অবস্থিত ফরাসিদের আক্রমণ মানে হচ্ছে
নেপোলিয়ন কর্তৃক যুদ্ধ ঘোষণা এবং আরেকটি আন্তর্জাতিক যুদ্ধ। ১৮৬০ সালের আগস্ট নাগাদ ক্যাভুর
সিদ্ধান্তনিলেন যে গ্যারিবল্ডির অভিযানকে বন্ধ করতে হবে। ক্যাভুর গোপনে ষড়যন্ত্রকরছিলেন যেন
গ্য্যরিবল্ডির পূর্বেই তাঁর নিজস্ব বাহিনী বুরবোঁদেরকে পরাজিত করতে পারে। তাঁর গোপন ইঙ্গিতে
পোপের রাজ্যের মার্চেস নগরীর লোকেরা পোপ নিযুক্ত বিদেশী সৈন্যদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ
ঘোষণা করে এবং তাদেরকে রক্ষা করার জন্য পিডমন্টের সাহায্য প্রার্থনা করে। পোপ বিদ্রোহীদের দাবি
অনুযায়ী বিদেশী সৈন্যদেরকে প্রত্যাহার করে নিতে অসমর্থ হলে ক্যাভুর রোম ও আশেপাশের সামান্য
অঞ্চল বাদে পুরো এলাকা দখল করার জন্য এক বাহিনী প্রেরণ করেন। মাত্র দুসপ্তাহের যুদ্ধে পোপের
বাহিনী পরাজিত হয় এবং পোপ সমস্তক্ষমতা হারান। গ্যারিবল্ডির পরিকল্পনা ভেস্তেযাওয়ায় ক্যাভুরের
প্রতি তাঁর ঘৃণা এবং সন্দেহকে আরো গভীরতর করে তুলেছিলো। ইতোমধ্যে নেপেলসে অবস্থিত
গ্যারিবল্ডির পক্ষে রাজধানী দখল করা সম্ভব হলেও নেপলসের রাজা ফ্রান্সিসকে বিতাড়ন করা সম্ভব হয়ে
উঠলো না। মনে করা হয়েছিলো আক্রমণের মুখে ফ্রান্সিসের সৈন্যরা রাজাকে পরিত্যাগ করবে। কিন্তু
অধিকাংশ সৈনিকই অনুগত রইল। গ্যারিবল্ডি রাজা ভিক্টর ইম্যানুয়েলের সহযোগিতা কামনা করেন।
ক্যাভুরকে গ্যারিবল্ডি ঘৃণা করলেও রাজা ইম্যানুয়েলের প্রতি তিনি আকৃষ্ট ছিলেন। তিনি বলতেন, “ঈশ্বর
রাজা ইম্যানুয়েলকে ইতালির মুক্তি আনয়নের জন্য তৈরি করেছেন”। ভিক্টর ইম্যানুয়েলের সঙ্গে দেখা
হলে তিনি তাঁর সর্বময় ক্ষমতা রাজার হাতে ন্যস্তকরে রাজাকে “ইতালির রাজা” বলে সম্বোধন করেন।
তাঁর অনুসারী সৈন্যদের প্রতি রাজার মহানুভবতা কামনা করে গ্যারিবল্ডি তাঁর জন্মস্থানে চলে যান।
আপাত দৃষ্টিতে গ্যারিবল্ডির এহেন আচরণ অবাক করার মতো। কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে
গ্যারিবল্ডি ক্রমবর্ধমান কৃষক বিশৃঙ্খলা দেখে শঙ্কিত হয়ে পড়েন। তাছাড়া তাঁর কাছে তখন প্রজাতন্ত্রী
ইতালি থেকে ঐক্যবদ্ধ ইতালির গুরুত্ব ছিলো অনেক বেশি। রাজা ফ্রান্সিস তিনি মাস ধরে প্রতিরোধ
চালিয়ে যান। কিন্তু যখন দেখলেন কোনো ইউরোপীয় শক্তি তাকে সহায়তা করার জন্য এগিয়ে আসছে
না এবং অন্যদিকে খাদ্যাভাব ও রোগে শোকে তাঁর সেনাবাহিনীর অবস্থা পর্যুদস্ততখন তিনি পরাজয়
মেনে নিলেন। এর ফলে ফরাসিদের অধীন রোম এবং অস্ট্রিয়ার অধীন ভেনিস বাদে সারা ইতালি
ঐক্যবদ্ধ হলো। নতুন জয়করা স্থানগুলোতে গণভোট অনুষ্ঠিত হলো, এতে করে একক ইতালি এবং
ভিক্টর ইম্যানুয়েল এর শাসনতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের পক্ষে বিপক্ষে রায় দেওয়ার সুযোগ ভোটারদেরকে দেওয়া
হলো। জানুয়ারি ১৮৬১ সালে একক ইতালির পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ক্যাভুর সংখ্যাগরিষ্ঠতা
অর্জন করলেন, সবাইর সামনে ভিক্টর ইম্যানুয়েল “ইতালির রাজা” উপাধি গ্রহণ করলেন। মার্চ ১৮৬১
সালে ইতালিকে একটি রাজ্য হিসেবে গ্রহণ করা হলো। মাত্র দুই বছরের মধ্যে ২২ মিলিয়ন লোকসংখ্যা
নিয়ে একটি নতুন রাষ্ট্র পৃথিবীর মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ করল।
ইতালির ঐক্যের পথে আরো সমস্যা
এরপরও ইতালির একতার কিছু কাজ বাকি থেকে যায়। রোমকে ফ্রান্সের এবং ভেনিসকে অস্ট্রিয়ানদের
দখল থেকে মুক্ত করতে হবে। ১৮৬০ -এর দশকে গ্যারিবল্ডি স্বেচ্ছায় নির্বাসন থেকে ফিরে এসে এবং
মাৎসিনি অনেক অসফল যুদ্ধ চালিয়ে দুটি অঞ্চল মুক্ত করতে চেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্তঅঞ্চল দুটি
ইতালির অধিকারে আসে যখন ১৮৬০ -এর দশকের শেষ দিকে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বদলে যায়।
১৮৬৬ সালে সাত সপ্তাহের যুদ্ধ শুরু হলো। জার্মানির বিসমার্ক অস্ট্রিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে যাওয়ার পূর্বে
ইতালির সঙ্গে এক মৈত্রী চুক্তিতে আবদ্ধ হন। ইতালি ঐ যুদ্ধে পরাজিত হলেও ইতালিকে যুদ্ধে অংশ
গ্রহণ করার জন্য পুরষ্কৃত করা হয়। ইতালি ভেনেসিয়া লাভ করে। ১৮৭০-১ সালে ফ্রাঙ্কো-প্রæশিয়ার-যুদ্ধ
সংগঠিত হলো। যুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথে ফরাসি সৈন্যদেরকে রোম থেকে ডেকে পাঠানো হলো।
এই সুযোগে সেপ্টেম্বর ১৮৭০ সালে ইতালির সৈন্যরা রোমে প্রবেশ করে। রোম ইতালির রাজধানীতে
পরিণত হলো।
১৮৭০ সালের পরও সত্যিকারের একীভ‚ত ইতালি বাস্তবায়িত হতে প্রচুর সময় নিল। তিনটি জেলা ট্রেন্ট,
টিয়েস্টি এবং ইসট্রিয়া ইতালির বাইরে ছিল। এই সমস্যা ইতালির বড় সমস্যা-অভ্যন্তরীণ সংহতি
অর্জনের প্রশ্ন থেকে ইতালির দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। আসলে ইতালির ঐক্য এত দ্রæত বেগে সাধিত হয়েছিলো
যে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েই যায়। তাই পিডমন্টের এক
রাজনৈতিক নেতা ম্যাসিমো ডি আজিগলিও (গধংংরসড় ফদঅুবমষরড়) এক সময় বলেছিলেন “আমরা
ইতালি তৈরি করেছি। আসুন এবার আমরা ইতালিয়ান গঠন করি।”
সারসংক্ষেপ
১৮৫০ সালের পর অতি দ্রæত গতিতে ইতালি ঐক্যবদ্ধ হয়। ইতালির ঐক্যবদ্ধ করার পিছনে ক্যাভুর
এবং গ্যারিবল্ডির প্রচেষ্টা ছিল অপরিসীম। ক্যাভুর ক‚টনীতির মাধ্যমে বিদেশী সহায়তার দ্বারা ইতালির
ঐক্যকে এগিয়ে নিয়ে যান। আর গ্যারিবল্ডি বুরবোঁদের বিরুদ্ধে সিসিলি এবং নেপলসে সামরিক
অভিযানের মাধ্যমে ইতালির ঐক্যকে পূর্ণতা দান করেন। গ্যারিবল্ডি প্রমাণ করেন, বৈদেশিক সাহায্য
নয়, ইতালির জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে সুশিক্ষিত বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে ইতালিয়রা নিজেদের
স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে পারে। ক্যাভুর এবং গ্যারিবল্ডি যে ধরনের ইতালির ঐক্য কামনা করেছিলেন
সে ধরনের ইতালি অবশ্য বাস্তবায়িত হয় নি। ক্যাভুর চেয়েছিলেন বৃহৎ পিডমন্ট, আর গ্যারিবল্ডি
চেয়েছিলেন প্রজাতন্ত্রী ইতালি। বাস্তবের ইতালি হয়েছিল সকল এলাকা মিলে এক রাষ্ট্রএবং রাজার
নেতৃত্বে রাজ্য। ক্যাভুর এবং গ্যারিবল্ডির বড় সমর্থক ছিল ইতালির বুর্জোয়া বা মধ্যবিত্ত শ্রেণী। কেননা
তারা বুঝেছিলো এইসব নেতার মাধ্যমে তাদের বিত্ত এবং সম্পত্তি নিশ্চিত থাকবে, কৃষক ও শ্রমিক
শ্রেণীর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা হলে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে, ধনসম্পত্তির প্রতি হুমকি সৃষ্টি হবে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
১. বিভিন্ন শ্রেণীর জনগণ ক্যাভুরের সমর্থক হয় কেননা
ক) তিনি জনগণকে ভালবাসতেন
খ) চরমপন্থী ও সন্ত্রাসবাদীদের কঠোর হস্তেদমন করেছেন
গ) পিডমন্টের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্কার করেছেন
ঘ) অস্ট্রিয়ানদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছেন।
২. ক্যাভুর বিদেশীদেরকে বিতাড়নের জন্য
ক) সামরিক বাহিনীর সাহায্য কামনা করেছিলেন
খ) গুপ্ত সংগঠনের জন্ম দিয়েছেন
গ) জনবিপ্লবের ডাক দিয়েছেন
ঘ) ক‚টনীতির আশ্রয় নিয়েছেন।
৩. ভিল্লাফ্রাঙ্কার চুক্তি ইতালির জন্য ছিল আসলে
ক) আর্শীবাদ স্বরূপ
খ) মধ্য ইতালির জন্য বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কারণ
গ) তৃতীয় নেপোলিয়নের স্বেচ্ছাচারিতা
ঘ) ইতালির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ব্রিটেনের হস্থক্ষেপের সুযোগ করে দেয়।
৪. গ্যারিবল্ডি ক্যাভুরকে পছন্দ করতেন না কারণ ক্যাভুর ছিলেন -
ক) প্রজাতন্ত্রী
খ) সমাজতন্ত্রী
গ) তাঁর জন্মভ‚মি ফরাসিদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন
ঘ) ইতালির জনগণের স্বার্থ রক্ষা করেন নি।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. ক্যাভুর ক‚টনীতির মাধ্যমে কীভাবে ইতালির ঐক্যকে বেশ কিছুদূর এগিয়ে নিয়ে যান?
২. গ্যারিবল্ডি কীভাবে প্রমাণ করেন যে ইতালির জনগণ বিদেশী সাহায্যে তাদের স্বাধীনতা লাভ করে
নি?
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের উত্তর
(১) গ (২) ঘ (৩) ক (৪) গ
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. ক্যাভুর ও গ্যারিবল্ডির চিন্তাধারার পার্থক্য নিরুপন করুন।
২. শেষ পর্যন্তইতালি প্রজাতন্ত্রী না হয়ে কেন রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হলো?
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত