১. অস্ট্রিয়ার সঙ্গে বিসমার্কের বিবাদের কারণ কি আলোচনা করুন।
২. ফ্রান্সের সঙ্গে বিসমার্কের সম্পর্ক শীতল হওয়ার কারণ কি? এর ফলাফল কি হয়েছিলো?
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের উত্তর


বিসমার্কের আগমনের পূর্বে অস্ট্রিয়া ও প্রæশিয়ার অবস্থান
১৮৫০-এর দশক নাগাদ অস্ট্রিয়া বুঝতে পারল প্রæশিয়া এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে
শক্তিশালী হয়ে উঠছে এবং নানাভাবে ক্ষুদ্র রাজ্যগুলোর উপর প্রভাব খাটাচ্ছে। অস্ট্রিয়া আরো বুঝতে
পারল ক্রমেই সে অর্থনৈতিক দিক থেকে দুর্দশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। ১৮৫৩ থেকে ১৮৫৬ সালে মধ্যে
অস্ট্রিয়ার রফতানি আয় ১৮৪.৩ মিলিয়ন ট্যালার (ঃযধষবৎ -এক কালের জার্মান রোপ্যমুদ্রা) থেকে নেমে
১৫০.৩ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। ক্রিমিয়ার যুদ্ধোর পরবর্তী মন্দার সময় ইউরোপের মধ্যে অষ্ট্রিয়া ছিল
সবচাইতে ক্ষতিগ্রস্তদেশ। ভিয়েনার সরকার শেষ পর্যন্তবুঝতে পারল যে প্রæশিয়া কর্তৃক স্থাপিত
জোলভেরাইন শুল্কসংঘ অস্ট্রিয়াকে অর্থনৈতিকভাবে কোণঠাসা করে রেখেছে। অষ্ট্রিয়া এখন চাইলো
জোলভেরাইন আরো ব্যাপক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হউক এবং সমগ্র মধ্য ইউরোপে বিস্তৃত হোক।
অস্ট্রিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রীর ইচ্ছা ছিল রাইন অঞ্চল থেকে কৃষ্ণসাগর পর্যন্তমুক্ত বাণিজ্য স্থাপিত হোক এবং
এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু বার্লিন না হয়ে ভিয়েনা হোক। কিন্তু প্রæশিয়া জোলভেরাইন সংক্রান্ত
সংস্কারে অস্ট্রিয়ার সমস্তপ্রস্তাবকে পাশ কাটিয়ে যায়। ১৮৫৯ সালে অস্ট্রিয়া ইতালির যুদ্ধে জড়িয়ে
পড়ে। ১৮৬৪ সাল নাগাদ জোলভেরাইনের উপর প্রæশিয়ার কর্তৃত্ব এতই নিরঙ্কুশ ছিল যে অস্ট্রিয়ার জন্য
সীমিত কিছু সুযোগ সুবিধা দিয়ে একটি চুক্তি করতেও প্রæশিয়া রাজি হয় নি।
এটা ঠিক যে প্রæশিয়ার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং এই কারণে ছোট ছোট রাজ্যগুলোর উপর তার প্রভাব
প্রæশিয়াকে জার্মানির একত্রীকরণের জন্য উপযুক্ত করে তুলেছিলো। কিন্তু প্রæশিয়ার রাজনৈতিক আকাংক্ষা
পূরণে এটাই যথেষ্ট ছিল না। ১৮৬০ সাল নাগাদ প্রæশিয়ার কাছে সুষ্পষ্ট হয়ে উঠে যে জার্মান
কনফেডারেশন যতদিন অস্তিত্ব বজায় রাখবে ততদিন জার্মান ঐক্যের পক্ষে প্রতিবন্ধকতা থাকবে।
অস্ট্রিয়া জানত জার্মান কনফেডারেশন জার্মানির জন্য পূর্ণাঙ্গ এবং যথাযথ নয়। কিন্তু প্রæশিয়ার সঙ্গে
রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক কিম্বা ছোট ছোট রাজ্যগুলি প্রæশিয়ার প্রভাব বলয়ে থাকার ছেয়ে
কনফেডারেশন অষ্ট্রিয়ার নিকট অনেক বেশী গ্রহণযোগ্য ছিল। অনেক দোষক্রটি থাকা সত্তে¡ও
কনফেডারেশন সম্পর্কে অষ্ট্রিয়ার মন্ত্রী সোয়াজেনবার্গ বলেছিলেন জীর্ণদশাপ্রাপ্ত কোট একেবারে কোন
কোট না থাকার চেয়ে অনেক ভাল”। তাই দেখা যাচ্ছে ১৮৬০ দশকে প্রæশিয়া যেমন অস্ট্রিয়াকে
জোলভেরাইনের মধ্যে কোনো পরিবর্তন সাধন করতে বাধা দিচ্ছিল ঠিক তেমনি অস্ট্রিয়া জার্মান
কনফেডারেশনের মধ্যে কোন রকম শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তনের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল।
জার্মানির ঐক্যের পথে এই দুই শক্তির সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা এক ধরনের অচলাবস্থা সৃষ্টি করেছিলো।
রাজনৈতিকভাবে এই বন্ধ্যাত্ব যিনি দূর করতে এগিয়ে এলেন তিনি হচ্ছে অটো ভন বিসমার্ক। প্রæশিয়ার
রাজা প্রথম উইলিয়াম বিসমার্ককে ১৮৬২ সালে প্রæশিয়ার মিনি-- প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত করেন।
অটোভন বিসসমার্ক (১৮১৫-১৮৯৮) প্রাথমিক জীবন
বিসমার্ক বার্লিনের উত্তর পশ্চিমের সনহাউজেনে (ঝপযড়হযধঁংবহ) এক ভ‚মিহীন অভিজাত (ঔঁহশবৎ)



পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। বার্লিনের এক স্কুলে পড়ালেখার পর ১৮৩২ খ্রীষ্টাব্দে গটিনজেন
বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং পরে বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। তার উদ্দেশ্য ছিল আইন পাশ করে
সরকারি প্রশাসনে চাকুরী নেওয়া। কিন্তু পড়াশুনার জন্য তিনি প্রচুর সময় দিতে পারেন নি, এতদসত্তে¡
পরীক্ষায় পাশ করে সরকারি একটি পদের শিক্ষানবীস হয়েছিলেন। কিন্তু প্রæশিয়ার সরকারি চাকুরী তার
কাছে একঘেঁয়ে এবং অনাকার্ষণীয় মনে হওয়ায় তিনি ১৮৩৮ সালে চাকুরী থেকে পদত্যাগ করেন।
১৮৪৭ সাল পর্যন্তউচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন করতে থাকেন, অত্যধিক মদ্যপান এবং জুয়াখেলার মধ্যে তাঁর
সময় কাটত। ১৮৪৭ সালে বিবাহের পর তার জীবনের গতি পরিবর্তিত হয়। তিনি লুথারান ধর্মের
সংস্পর্শে এসে নৈতিক জীবন যাপন শুরু করেন। ১৮৪৭ সালে চতুর্থ ফ্রেডারিক উইলিয়ামের পার্লামেন্টে
সদস্যপদ লাভ করেন এবং এর পর থেকে তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। তিনি সারাজীবন প্রæশিয়ান
রাজতন্ত্রের সমর্থক ছিলেন এবং বিশ্বাস করতেন প্রæশিয়ার শাসনকারী রাজবংশ হোহেনজোলার্ন বংশ
প্রæশিয়াকে দৈবঅধিকারে শাসন করছে এবং প্রæশিয়া রাজ্যটি হচ্ছে ঐশ্বরিক বিশ্ব পরিকল্পনার অংশ।
রাজা ফ্রেডারিখ তাঁকে ১৮৫১ সালে প্রæশিয়ার প্রতিনিধি হিসাবে কনফেডারেশনের নির্বাহী পরিষদ বা
ডায়েটে নিযুক্ত করেন। এখানে দায়িত্ব পালন কালে তিনি অস্ট্রিয়ার রাষ্ট্র নেতাদের কার্মকান্ড দেখে তীব্র
অস্ট্রিয়া বিরোধী হয়ে উঠেন। প্রæশিয়ার সরকার বাধ্য হয়ে ১৮৫৯ সালে অস্ট্রিয়া বিদ্বেষী বিসমার্ককে
রাশিয়ায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে সেন্ট পিটার্সবার্গে প্রেরণ করেন। ১৮৬২ সালে তাঁকে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত করে
পাঠানো হয়।
বিসমার্কের চ্যান্সেলর পদ লাভ
১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে রাজা ফ্রেডারিখের পরবর্তী রাজা প্রথম উইলিয়াম বিসমার্ককে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য
বার্লিনে ডেকে পাঠান। কারণ রাজা উইলিয়াম এক সংকটে পড়েন। ১৮৪৯ সালে শাসনতন্ত্রঅনুযায়ী
প্রশিয়ায় দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি পার্লামেন্ট স্থাপিত হয়। শাসনতন্ত্রঅনুযায়ী রাজা প্রশাসনের প্রধান।
রাজা এবং প্রশাসন যৌথভাবে আইন তৈরি করার ক্ষমতা প্রাপ্ত। কিন্তু রাজা এবং পালামেন্টের মধ্যে
আইন তৈরিতে বিরোধ দেখা দিলে কীভাবে তার সমাধান করা হবে শাসনতন্ত্রেসে সম্পর্কে কিছু বলা হয়
নি। রাজা উইলিয়াম ছিলেন কিছুটা রক্ষণশীল, অন্যদিকে পার্লামেন্ট জাতীয়তাবাদী এবং
উদারনৈতিকদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ১৮৬০ সালে রাজা উইলিয়াম প্রæশিয়ার সামরিক বাহিনীর সংস্কারের
লক্ষ্যে একটি আইন পার্লামেন্টে উত্থাপন করেন। পার্লামেন্টে সংস্কারের বিপক্ষে কেউ ছিল না, কিন্তু তারা
এই জন্য রাজাকে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করতে অস্বীকার করে। আসলে পার্লামেন্ট প্রæশিয়ার অর্থের
উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে সরকারের উপর স্বীয় প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলো। দুই বছর ধরে এই
সমস্যার সমাধান না হওয়াতে সঙ্কট চলতেই থাকে। বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা সমস্যার সমাধানের চেষ্টা
করেন। কিন্তু রাজা এবং পার্লামেন্ট সমঝোতার ব্যাপারে নির্বিকার থেকে যায়। ১৮৬২ সালে রাজা
বিসমার্ককে এই জন্য ডেকে পাঠান নি যে তিনিই একমাত্র যোগ্য লোক বরং এই জন্য যে এই দায়িত্ব
আর কেউ নিতে রাজি হচ্ছিলো না। লিবারেলরা ভেবেছিলো বিসমার্ক একটা বড় ভুল করে বিশাল
সমস্যা সৃষ্টি করবে, তখন রাজ্য বাধ্য হয়ে পার্লামেন্টের নিকট নতি স্বীকার করবে। কিন্তু বিসমার্ক এমন
ভাবে সংকট মোকাবেলা করেন যে সবাই অবাক হয়ে যায়। তিনি পার্লামেন্টের অনুমতি ছাড়াই সামরিক
সংস্কারের জন্য অতিরিক্ত কর সংগ্রহ করতে থাকেন। তিনি যুক্তি দেখান শাসনতন্ত্রেএকটা অষ্পষ্টতা
রয়েছে, কিন্তু এই সমস্যা সমাধান পর্যন্তসরকারি প্রশাসন যন্ত্রথেমে থাকতে পারে না। যখন বিরোধীরা
বিসমার্ককে স্মরণ করিয়ে দেন যে প্রæশিয়া জার্মান রাজ্যগুলোর জন্য একটা বাজে উদাহরণ সৃষ্টি করছে,
তখন তিনি জবাব দেন যে অন্যরা তার উদারনীতির জন্য নয় বরং শক্তির জন্য প্রæশিয়াকে মর্যাদা দিয়ে
থাকে। পার্লামেন্টের এক ভাষণে তিনি বলেন, “বিতর্ক বা সংখ্যাগুরুর প্রস্তাব পাশের দ্বারা আমাদের
সময়ের বড় বড় সমস্যাগুলোর সমাধান হবে না ... রক্ত এবং লোহের দ্বারা সমস্যার একমাত্র সমাধান
হবে।”


বিসমার্কের ভবিষৎ পরিকল্পনা
ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডিসরেইলি বিসমার্কের সঙ্গে ১৮৬২ সালের সাক্ষাৎকার সম্পর্কে পরবর্তীকালে
বলেন,
‘কি অদ্ভুত মানুষ এই বিসমার্ক। তাঁর সঙ্গে এটা আমার
প্রথম দেখা, ঐ সাক্ষাৎকারে তিনি জানালেন তাঁর
পরিকল্পনা।’ তিনি ডেনমার্ক আক্রমণ করে úেজভিগ ও
হলস্টেন দখল করবেন, অস্ট্রিয়াকে জার্মান
কনফেডারেশন থেকে বিতাড়িত করবেন, তারপর ফ্রান্স
আক্রমণ করবেন। কি অতি আশ্চর্য এই মানুষটি।
বিসমার্কের আত্মজীবনীতেও তিনি এরকম একটা পরিকল্পনা সম্পর্কে ইঙ্গিত করেছেন যে তিনটি যুদ্ধের
মাধ্যমে তিনি জার্মানির ঐক্য সাধন করবেন। পরিকল্পনা করে এবং ঘটনা প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে বিসমার্ক
জার্মানির ঐক্য সাধন সম্পর্কে এই সব মতামত আধুনিক ঐতিহাসিকরা গ্রহণ করতে রাজি নন। কেননা,
ডিসরেইলির বিসমার্কের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের ঘটনা যখন তিনি প্রকাশ করেন তখন ডিসরেইলি বেশ বৃদ্ধ।
বিসমার্ক তাঁর আত্মজীবনী লিখেন তাঁর জীবন সায়াহ্নে। দ্বিতীয় যে কারণে ঐতিহাসিকরা বিসমার্কের
পূর্বপরিকল্পনা সমর্থন করতে রাজি নন তা হচ্ছে বিসমার্ক যখন ক্ষমতায় আসেন তখন ইউরোপের
ঘটনাপ্রবাহ ছিল ক্রমবর্ধমানভাবে অনিশ্চিয়তায় ভরা। ইউরোপের মানচিত্র অদূর ভবিষতে বিভিন্ন ভাবে
পরিবর্তিত হওয়ার সম্ভবনা ছিল। এই প্রেক্ষাপটে কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের পক্ষে ঘটনাপ্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করার
মতো আত্মবিশ্বাস থাকার কথা নয়। তৃতীয়ত, বিসমার্ক নিজেই যেমন বলেছেন, “আমার লক্ষ্যে পৌঁছার
জন্য অনেকগুলো রাস্তা রয়েছে। একটার পর একটা ইত্যাদি সকল পথেই আমি আমার চেষ্টা চালাব।
শেষ পর্যন্তসবচাইতে বিপদ সঙ্কুল পথটাকে আমার বেছে নিতে হবে।” তিনি আরো বলেছেন, “মানুষ
ঘটনা প্রবাহ সৃষ্টি করতে পারেনা। সে প্রবাহের সঙ্গে ভেসে থেকে সঠিক রাস্তা খুঁজে নিতে পারে”।
বিসমার্কের মধ্যে যে লক্ষণীয় ক্ষমতা ছিল তা হলো পরিস্থিতি বুঝে সঠিক সিদ্ধান্তনেওয়ার মতো ক্ষমতার
অধিকারী ছিলেন তিনি। বিসমার্ক না ছিলেন জাতীয়তাবাদী, না ছিলেন উদারনৈতিক, তিনি ছিলেন
একশত ভাগ প্রæশিয়ান। তিনি দেশে সংস্কার আনেন এই উদ্দেশ্যে নয় যে এর দ্বারা কোনো গ্রট্টপের
সুবিধা হবে, বরং উল্টো তিনি ভেবেছেন এর দ্বারা প্রæশিয়া শক্তিশালী হবে। তিনি জার্মান রাজ্যগুলোর
উপর প্রæশিয়ার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন কোনো সদূর প্রসারী জার্মান ঐক্যের পরিকল্পনার অংশ
হিসাবে নয় বরং তিনি বুঝেছিলেন জার্মানির ঐক্য অবসম্ভাবী, আর এটা প্রতিষ্ঠিত হোক প্রæশিয়ারই
নেতৃত্বে। তিনি গর্ব করে বলতেন, তিনি একজন বাস্তববাদী, কোন আদর্শের অনুসারী তিনি নন। তাঁর
এই নীতিকে বলা হতো জবধষ চড়ষরঃরশ বা সব কিছুর উপরে স্বীয় জাতির বাস্তব প্রাধান্য ও সাফল্যকে স্থান
দেওয়ার নীতি।
úেজভিগ ও হোলষ্টিন প্রশ্ন
পার্লামেন্টে লিবারেলদের সঙ্গে বিবাদের প্রেক্ষাপটে বিসমার্ক ভাবলেন যদি প্রæশিয়া তার প্রতিবেশি
দেশগুলোর এলাকার বিনিময়ে প্রæশিয়ার সীমানা বাড়াতে থাকে তাহলে প্রæশিয়ার জনগণ রাজতন্ত্রের
পিছনে দাঁড়াবে। আর এইভাবে লিবারেলরা কোনঠাসা হয়ে পড়বে। শীঘ্রই আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি তাঁর
অনুক‚লে গেল। ষোড়শ শতাব্দী থেকে úেজভিগ ও হোলস্টিন নামক দুটি ডাচি ডেনমার্কের রাজা
স্বতন্ত্রভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেন। ডেন সংখ্যাগরিষ্ঠ úেজভিগ এং জার্মান সংখ্যাগরিষ্ঠ হোলষ্টিন অঞ্চল দুটিকে
ডেনমার্কের অধীন এলাকা হিসাবে শাসন করার অধিকার ডেনমার্কের রাজার ছিল না। ১৮৫২ সালের
লন্ডন চুক্তিতে বৃহ্য শক্তিবর্গ পূর্ব ডাচি দুটির উপর ডেনমার্কের এ রকম কর্তৃত্ব বজায় রাখার পক্ষে সমর্থন
জানায়। কিন্তু ১৮৬৩ সালে ড্যানিশরাজ নবম খ্রিস্টান ডেনমার্কের জাতীয়তাবাদীদের চাপের মুখে
úেজভিগ ও হোলস্টিনকে নিজ এলাকা ভুক্ত করে নেন।
অস্ট্রিয়া, প্রæশিয়া এবং বিভিন্ন জার্মান রাজ্যগুলোতে ডেনমার্ক কর্তৃপক্ষের একক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র
ক্ষোভ দেখা দেয়। জার্মান অধ্যূষিত হলস্টিন প্রদেশ ছিল জার্মান কনফেডারেশনের সদস্য, ডেন


অধ্যুসিত úেজভিগ কনফেডারেশনের বাইরে ছিল। কিন্তু জার্মান জাতীয়তাবাদীরা মনে করত úেজভিগ
হলস্টিন প্রদেশের অন্তর্গত, কনফেডারেশনে তার আলাদা সদস্য পদ থাকা অবান্তর। বিসমার্ক দেখলেন
ঘটনাটি তার জন্য দুটি সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে প্রæশিয়ার জাতীয়তাবাদী এবং লিবারেলরা
úেজভিগ ও হোলস্টিনের প্রশ্ন নিয়ে আন্দোলন শুরু করে বিসমার্ককে বেকায়দায় ফেলতে পারে।
দ্বিতীয়ত, এই সমস্যার ব্যাপারে প্রæশিয়া এবং অস্ট্রিয়া পরস্পরকে সন্দেহ ও অবিশ্বাস করে যদি কোনো
উদ্যোগ না নেয় তাহলে সমস্য্যটি আন্তর্জাতিক সমস্যা হিসেবে দেখা দিবে, আর এই সুযোগে বাহিরের
শক্তি জার্মান রাজ্যগুলোর ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের সুযোগ পাবে। বিসমার্ক সবার আগে ডেনমার্কের নিন্দা
করলেন। আর অস্ট্রিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি করতে অগ্রসর হলেন। প্রæশিয়া জানতো কনফেডারেশনের
সদস্য হিসেবে যদি অষ্ট্রিয়া এবং প্রæশিয়ার যৌথবাহিনী অঞ্চল দুটি দখল করে তাহলে কনফেডারেশনের
সিদ্ধান্তঅনুযায়ী ডাচি দুটির ভাগ্য নির্ধারিত হবে। তাই কনফেডারেশনের বাইরে প্রæশিয়া অষ্ট্রিয়ার সঙ্গে
এ ব্যাপারে একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করে। চুক্তিতে স্থির করা হয় কনফেডারেশনের বাহিরে অষ্ট্রিয়া ও
প্রæশিয়া দ্বি-পাক্ষিক ভিত্তিতে ডাচি দুটির সমস্যার সমাধান করবে। ১৮৬৪ সালের জানুয়ারিতে
যৌথবাহিনী úেজভিগ ও হোলস্টিন আক্রমণ করে। যুদ্ধে ডেনমার্ক পরাজিত হয়ে ডাচি দুটিকে
যৌথবাহিনীর নিকট হস্তান্তর করে।
প্রæশিয়ার পার্লামেন্ট পুরো ব্যাপারে চুপচাপ ছিল। তারা ভেবেছিল যুদ্ধ করতে গিয়ে বিসমার্ক ভীষণ
সমস্যায় পড়বে। তাদের আরো ধারণা ছিল সঙ্কটে পড়ে উপায়ান্তর না দেখে বিসমার্ক শেষ পর্যন্ত
পার্লামেন্টের দ্বারস্থ হবে। কিন্তু নবঠিত প্রæশিয়ান সেনাবাহিনীর কৃতিত্ব দেখে পার্লামেন্টের সদস্যরা
হতভম্ব হয়ে পড়েছিলো। বিসমার্ক জার্মান জাতীয়তাবাদের সঙ্গে প্রæশিয়ার বিজয়কে একসঙ্গে করতে
সমর্থ হলেন
এদিকে অস্ট্রিয়া দখল করা úেজভিগ ও হোলস্টিন নিয়ে কী করবে ভেবে পাচ্ছিলেন না। এই জায়গা
দুটো নিয়ে অস্ট্রিয়ার সরাসরি কোনো স্বার্থ জড়িত ছিল না, অগাস্টেনবার্গের ফ্রেডারিক নামক এক
অপ্রাপ্তবয়স্ক জার্মান যুবরাজকে খুঁজে পাওয়া গেল যার একটু দুর্বল দাবি ছিল এলাকা দুটির উপর।
অস্ট্রিয়া ভাবল এলাকা দুটি তাঁকে দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু শীঘ্রই অস্ট্রিয়া বুঝতে পারল ভৌগোলিক
নৈকট্য এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক রাজার কারণে úেজভিগ ও হোলষ্টিন আসলে প্রæশিয়ার প্রভাবাধীন হবে। শেষ
পর্যন্তবিসমার্কের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে ঠিক হয় úেজভিগ যাবে প্রæশিয়ার নিয়ন্ত্রণে আর হোলস্টিন
অস্ট্রিয়ার শাসনাধীনে যাবে। ১৮৬৫ সালের আগস্ট মাসে স্বাক্ষরিত এই চুক্তি গ্যাসটিন চুক্তি নামে
পরিচিত।
অস্ট্রিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ
অনেক ঐতিহাসিকের মতে গ্যাষ্টিন সন্ধির পরেই বিসমার্ক অস্ট্রিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের জন্য ক‚টনৈতিক ও
সামরিক প্রস্তুতি আরম্ভ করেন। কিন্তু অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন ক্ষমতায় বসার পর পরই এ ব্যাপারে
তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে অস্ট্রিয়ার সঙ্গে আজ বা কাল হউক শত্রæতা ও সংঘর্ষ অনিবার্য। ক্ষমতায় আসার
আগে ১৮৫৬ সালে তিনি মন্তব্য করেছিলেন অস্ট্রিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ এড়ানো কঠিন হবে। যাই হউক,
বিসমার্ক এখন চাইলেন উত্তর জার্মানির উপর অস্ট্রিয়া তার কর্তৃত্ব ছেড়ে দিক। এই উদ্দেশ্যে তিনি
ফ্রান্সের সম্রাট নেপোলিয়নের সঙ্গে সুম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা শুরু করেন। ১৮৬৫ সালের পুরো সময়
বিসমার্ক নেপোলিয়নকে উত্তর জার্মানিতে প্রæশিয়ার কর্তৃত্ব মেনে নিতে রাজি করানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে
যান। নেপোলিয়নকে তিনি আশ্বাস দেন প্রæশিয়ার প্রস্তাবে রাজি হলে প্রæশিয়া বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ
এমন কি রাইনল্যান্ডে ফরাসি কর্তৃত্ব স্থাপনকে সমর্থন করবে। নেপোলিয়ন প্রæশিয়ার অনুরোধ অবজ্ঞা
করলে প্রæশিয়া বাধ্য হয়ে ফ্রান্সের শত্রæ অস্ট্রিয়া এবং রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলবে। নেপোলিয়ন
বিসমার্কের প্রস্তাবে সাড়া দেওয়া উপযুক্ত মনে করলেন। তিনি ভাবলেন অত্যাসন্ন সংঘর্ষের মুখোমুখি
অসিট্রয়া এবং প্রæশিয়া প্রায় সমান শক্তি সম্পন্ন, যুদ্ধ মানে হচ্ছে দুই শক্তির মাঝে ক‚টনৈতিক এবং
সামরিক অচলাবস্থা। এই সুযোগে ফ্রান্স দুই শক্তির মধ্যে সম্ভাব্য মধ্যস্ততার সুযোগ পাবে এবং পুরো
অঞ্চলে ফ্রান্সের প্রভাব বাড়ানোর এক মোক্ষম সুযোগ পাবে। ১৮৬৫ সালের অক্টোবরে ফ্রান্সের


বিয়ারিৎসে (ইরধৎৎরঃ) নেপোলিয়নের সঙ্গে মিলিত হন। যখন বিসমার্ক বার্লিনে প্রত্যাবর্তন করেন তখন
তিনি এই ধারণায় উপনীত হন যে নিকট ভবিষতে প্রæশিয়ার কোনো উদ্যোগে ফ্রান্স বাধা হয়ে দাঁড়াবে
না।
ফ্রান্সের সাথে বিসমার্কের এই ঘনিষ্ঠতা অস্ট্রিয়া চোখ এড়ায় নি। অস্ট্রিয়া ১৮৬৬ সালের জানুয়ারি মাসে
úেজভিগ ও হলস্টিনের শাসক হিসাবে ডিউক অব অগাস্টেনবার্গের সমর্থনে হলস্টেনে জনবিক্ষোভের
অনুমতি প্রদান করে। অবশ্য বিসমার্ক এর পাল্টাপাল্টি পুরুষ প্রাপ্ত বয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে
জার্মান কনফেডারেশনের জন্য একটি পার্লামেন্ট দাবি করে বসেন। রক্ষণশীল বিসমার্ক এ দাবি শুধুমাত্র
যে ডাচি দুটোর বিকাশমান গণতান্ত্রিক এবং লিবারেলদের কাছে প্রিয়ই হয় নি বরং সারা জার্মান
জাতিগোষ্ঠির গণতান্ত্রিক চেতনা এবং ভাবাবেগকে নাড়া দেয়। যাই হোক, অস্ট্রিয়া এর পর প্রæশিয়া
বিরোধী কতগুলি সামরিক ও ক‚টনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করে। প্রথমে অস্ট্রিয়া কনফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত
রাজ্যসমূহের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে। বাডেন-ওয়ারটেমবার্গ, হ্যানোভার, হেসেনকেসেল,
ব্যাভারিয়া সিদ্ধান্তনিল যে বিসমার্কের হুমকির সম্মুখে পড়া এতদিনের রাজনৈতিক ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার
সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে হ্যাপসবার্গীয়দেরকে সমর্থন করা। অষ্ট্রিয়ার দ্বিতীয় পদক্ষেপ ছিল প্রæশিয়ার সীমান্তে
সৈন্য সমাবেশ করা। প্রæশিয়ার রাজা প্রথম উইলিয়াম “ভাইয়ে ভাইয়ে - যুদ্ধে” মোটেও রাজি ছিলেন
না। কিন্তু শেষ পর্যন্ততিনি আংশিক সৈন্য সমাবেশের অনুমতি প্রদান করলেন।
বিসমার্ক ১৮৬৬ সালের মার্চ মাসে, ইতালির সঙ্গে অস্ট্রিয়া বিরোধী এক চুক্তি সম্পাদন করেন। ইতালি
পুরস্কার হিসাবে যুদ্ধের পর অস্ট্রিয়া অধিকৃত ভেনেশিয়া লাভ করবে। বিসমার্ক বহি:বিশ্বকে দেখাতে
চেয়েছিলেন যে প্রæশিয়া অযথা একটি সাম্রাজ্য বিস্তারকারী দেশ নয়, অকারণে সে যুদ্ধে লিপ্ত হয় না।
অস্ট্রিয়া প্রæশিয়ার জন্য সুযোগ করে দেয় যখন জুন মাসের প্রথম তারিখে অস্ট্রিয়া úেজভিগ হোলস্টিন
প্রশ্নটি জার্মান কনফেডারেশনের সভায় উত্থাপন করে, গ্যাস্টিন চুক্তি অনুযায়ী এটা ছিল দ্বিপক্ষীয়
ব্যাপার, কনফেডারেশনের সভায় উত্থাপন মানে হচ্ছে চুক্তি লংঘন। প্রæশিয়া চুক্তি লংঘনের দায়ে
অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।
সাত সপ্তাহের যুদ্ধ নামে অস্ট্রিয়া প্রæশিয়ার এ যুদ্ধ বেশি দিন স্থায়ী হয় নি। ১৮৬৬ সালের ৩ জুলাই
অষ্ট্রিয়ান বাহিনী কনিগ্রার্টজের যুদ্ধে চ‚ড়ান্তভাবে পরাজিত হয়। জুলাইর মাঝামাঝিতে প্রæশিয়ান সৈন্য
ভিয়েনায় উপস্থিত হয়। রাজা উইলিয়াম এবং জেনারেলরা চেয়েছিলেন বিজয় দীপ্ত ভিয়েনা প্রবেশ কিন্তু,
বিসমার্ক অস্ট্রিয়ার সঙ্গে সদয় আচরণের উপর জোর দেন। বিসমার্কতাঁর লক্ষ্য অনুযায়ী উত্তর জার্মানির
উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। এর পর অস্ট্রিয়াকে অপমান করার মানে হচ্ছে চিরশত্রæ সৃষ্টি করা।
তাছাড়া এতে ইউরোপের সন্দেহ বাড়বে, কেননা নতুন নতুন শক্তি অর্জন করে বিসমার্ক কি করবে তা
নিয়ে ইউরোপ নিশ্চিত হতে পারছিলো না। বিসমার্কের একটা উদ্দেশ্য ছিল অস্ট্রিয়ার প্রতি
সহানুভ‚তিশীল জার্মানদের মন জয় করা, অস্ট্রিয়াকে অপমান করা হলে সে লক্ষ্য পূরণ করা যাবে না।
বিসমার্ক অস্ট্রিয়ার সঙ্গে ১৮৬৬ সালের আগস্ট মাসে প্রাগের সন্ধির মাধ্যমে শান্তিস্থাপন করেন।
বিসমার্ক এর পর প্রæশিয়ার নেতৃত্বে ১৮৬৭ সালে বাইশটি রাজ্য নিয়ে উত্তর জার্মান কনফেডারেশন গঠন
করেন।
প্রæশিয়ায় বিসমার্কের অবস্থান সুসংহত করার চেষ্টা
এর পর বিসমার্ক প্রæশিয়ায় নিজের অবস্থান আরো সুসংহত করার চেষ্টা শুরু করেন। লিবারেলরা ছিল
তার বড় সমালোচক, তিনি তাদেরকে জয় করার চেষ্টা করেন। লিবারেলদেরকে তিনি প্রস্তাব করেন যে,
যদি পার্লামেন্ট তাঁকে ক্ষমা করতে রাজি হয় তাহলে তিনি স্বীকার করবেন যে তিনি পার্লামেন্টের
অনুমোদন ছাড়া অবৈধ শাসনকার্য পরিচালনা করেছেন। অস্ট্রিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জয়লাভের আনন্দে
আনন্দিত লিবারেলরা সম্মত হলো, তারা ভাবল একটা জাতীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠত হলে তাদের রাজনৈতিক
এবং অর্থনৈতিক কর্মসূচি অর্জিত হতে পারে। অবশ্য অনেকে আশঙ্কা করলেন জার্মান কনফেডারেশনে
বিসমার্ক সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার প্রস্তাব দিয়ে লিবারেলদেরকে পিছনে ফেলে উদারনীতির বড়


মুখপাত্র বনতে চান। আবার অনেকে মনে করেছেন বিসমার্ক নতুন কনফেডারেশন চালাতে পারবেন না,
বাধ্য হয়ে তিনি লিবারেলদের দ্বারস্থ হবেন, এর পর লিবারেলরাই জার্মান কনফেডারেশনকে তাদের
কর্মসূচি অনুযায়ী চালিয়ে নেবেন।
নতুন জার্মান কনফেডারেশনে প্রæশিয়ার অধিকৃত এলাকাছাড়া হ্যানোভার এবং স্যাকসনি এবং কয়েকটি
নামমাত্র স্বাধীন রাজ্য ছিলো। বিসমার্ক এসব স্থানে শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু করেন। রাজ্যগুলোর
প্রতিনিধিত্বকারী রক্ষণশীল নিয়ন্ত্রিত উচ্চকক্ষটি বৈদেশিক নীতি এবং অর্থনৈতিক বিষয়গুলো দেখাশুনা
করত। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের গোপন ব্যালটে নির্বাচিত পার্লামেন্টের নি¤œপরিষদটি ইউরোপের সবচাইতে
উদারনৈতিক প্রতিষ্ঠান। লিবারেলদের দীর্ঘদিনের আকাক্সক্ষা অনুযায়ী নি¤œপরিষদ কনফেডারেশনের
বাজেট নিয়ন্ত্রণ করত। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, অভিন্ন আইন কানুন, ধর্মীয় স্বাধীনতা, ফেডারেল ডাক ও
তার - ইত্যাদি লিবারেলদের অনেক দাবি কনফেডারেশন অল্পদিনের মধ্যে পূরণ করে। মনে হয়েছে এই
কনফেডারেশন শীঘ্রই কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থার অধীনে লিবারেল আদর্শে একটি রাষ্ট্র হতে চলেছে।
ফরাসিদের সঙ্গে বিসমার্কের দ্ব›দ্ব
বিসমার্ক এখন চেষ্টা শুরু করেন কীভাবে জার্মানির উত্তরাঞ্চলকে কনফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত করা যায়।
অবশ্য তিনি প্রথমে ভ‚খন্ডগত ঐক্য চান নি, তিনি বরং চেয়েছেন কোনো অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান যেমন
শুল্ক পার্লামেন্ট, বা শুল্ক কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে দক্ষিণ কনফেডারেশনের সঙ্গে উত্তরের যোগাযোগ।
উত্তরাঞ্চলের রাজ্যসমূহ যেমন জাভা, বডেন, ওয়ারটেমবার্গ - ইত্যাদি কনফেডারেশন থেকে দূরত্ব
বজায় রাখে, কেননা তাদের কাছে মনে হয়েছে কনফেডাশেন অতি লিবারেল, বেশি প্রটেস্ট্যান্ট এবং
সবার উপরে প্রæশিয়ার অতি প্রভাবাধীন। ব্যাভারিয়া এবং ওয়ারটেমবার্গ ছিল ফ্রান্সের প্রভাব বলয়ে।
বিসমার্ক ও তাই ভাবলেন যে এ অঞ্চল থেকে ফরাসি প্রভাব দূর করতে হবে। ফরাসিদেরকে বিব্রত
করার জন্য ১৮৬৬ সালের অসস্ট্রোন-প্রæশিয়া যুদ্ধের সময় নেপোলিয়ন ফরাসি নিরপেক্ষতার বিনিময়ে
স্যারল্যান্ড এবং রাইনল্যান্ডে ব্যাভারিয়ান ও হেসিয়ান ভ‚খন্ড দাবি করে যে পত্র বিসমার্ককে দিয়েছিলেন
তা প্রকাশ করে দেন। উল্লেখ্য বিসমার্ক ঐ সময় নেপোলিয়নকে এমন ধারনা দিয়েছিলেন যে, তিনি
এরকম দাবি বিবেচনা করতে তখন প্রস্তুত আছেন। বিসমার্ক নেপোলিয়নের লুক্সেমবার্গ ক্রয় করার
প্রচেষ্টার কথাও প্রকাশ করে দেন। বিসমার্ক ১৮৬৯ পর্যন্তধারণা করেন নি যে তাঁকে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
করতে হবে, তবে তার মনে হয়েছে যে এরকম একটা সম্ভাবনা একেবারে নাকচ করে দেওয়া যাবে না।
কিন্তু ১৮৭০ সালে স্পেনের সিংহাসন নিয়ে এমন একটা ঘটনা ঘটে যার ফলে বিসমার্ক মনে করলেন
ফ্রান্সের সঙ্গে তাঁর যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী।
স্পেনের সিংহাসন সমস্যা ও ফ্রান্সের সঙ্গে বিসমার্কের যুদ্ধের প্রস্তুতি
স্পেনীয় পার্লামেন্ট ১৮৭০ সালে দুবছর থেকে খালি থাকা সিংহাসনে হোহেনজোলার্ন বংশের যুবরাজ
লিওপোল্ডকে প্রস্তাব দেয়। প্রæশিয়ার রাজা প্রথম উইলিয়াম হোহেনজোলার্ন বংশের। যদিও প্রিন্স
লিওপোল্ডের সঙ্গে প্রæশিয়ার সম্পর্ক নামেমাত্র, তারপরও ফ্রান্স মনে করতে থাকে একদিকে প্রæশিয়া
অন্যদিকে লিওপোল্ডের স্পেন, এই দুই শত্রæ ইউরোপে ফরাসিদের অবস্থানের জন্য হুমকি স্বরূপ। অবশ্য
রাজা উইলিয়াম লিওপোল্ডের এই মনোনয়ন সমর্থন করেন নি। ফরাসিদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য তিনি
লিওপোল্ডকে স্পেনীয় সিংহাসন গ্রহণ করতে নিষেধ করে। ফ্রান্স এই ব্যাপারটিকে নিয়ে একটু বাড়াবাড়ি
করে ফেলে। ফ্রান্স রাজা উইলিয়াম থেকে এমন একটি গ্যারান্টি পত্র দাবি করেন যে প্রæশিয়ার রাজবংশে
কেউ কোনো দিন স্পেনের সিংহাসনে বসবে না। কিন্তু এ ধরনের মুচলেকা দিতে তিনি রাজি হন নি,
স্পেনের সিংহাসন গ্রহণের তার মৌখিক অসম্মতিই যথেষ্ট। রাজা উইলিয়াম ফ্রান্সের সঙ্গে তার আলোচনা
টেলিগ্রাফ যোগে বিসমার্ককে জানিয়ে দেন। বিসমার্ক দেখলেন যদি ফ্রান্সের সঙ্গে তিনি একটি যুদ্ধ
বাধাতে পারেন তাহলে জার্মানির সব জাতীয়তাবাদীদেরকে প্রæশিয়ার অধীনে একত্রিত করতে পারবেন।
তাছাড়া তিনি ইউরোপে প্রæশিয়াকে একটি শক্তি হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন। বিসমার্ক সচেতন
ছিলেন যে সামরিক দিক থেকে এখন প্রæশিয়া ফ্রান্সকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। বিসমার্ক রাজার টেলিগ্রাম
থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে সমঝোতা ও সৌহার্দ্যমূলক বাক্যগুলো অপসারণ করে সংবাদপত্রে প্রকাশ করে


দেন। সবাই ধারণা করলো রাজা ফ্রান্সের দূতকে অপমান করেছেন। ফরাসি জনগণের চাপে ফ্রান্স
১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৫ জুলাই তারিখ জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ফ্রান্স যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই
মৈত্রীহীন হয়ে পড়ে। রাইনল্যান্ডের উপর ফ্রান্সের যে দাবি বিসমার্ক প্রকাশ করেন তার ফলে দক্ষিণ
জার্মানির রাজ্যগুলো ফ্রান্সের পক্ষ ত্যাগ করে। লু´েমবার্গ, ব্যাভারিয়া এবং বেলজিয়াম উপর
নেপোলিয়নের লোলুপ দৃষ্টি কথা জেনে ব্রিটেন ফ্রান্সের প্রতি কোনো সহানুভ‚তি দেখায় নি। অস্ট্রিয়া ছিল
পর্যুদস্ত, আর বিসমার্ক তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে তাদেরকে সন্তুষ্ট করে রাখেন।
ফ্রান্স পরাজিত
যুদ্ধে সকল রাজ্য প্রæশিয়ার নেতৃত্বে একটি জাতীয় ক্রুসেড ভেবে এতে অংশগ্রহণ করে। ফরাসিরা
সম্পূর্ণরুপে পরাজিত হয়, সম্রাট নেপোলিয়ন ২ সেপ্টেম্বর ১৮৭০ সালে সেখানে বন্ধি হন। বিসমার্ক যুদ্ধ
দ্রæত শেষ করেন, কেননা তিনি ভাবলেন এটা দীর্ঘস্থায়ী হলে কোনো বৃহৎশক্তি এখানে হস্তক্ষেপ করবে।
স্বাভাবিকভাবে বিসমার্ক প্রæশিয়ার জন্য সুবিধাজনক শর্তে যুদ্ধ বন্ধ ঘোষণা করেন। জার্মানি ফ্রান্সের
নিকট হতে কৃষি ও খনিজ সম্পদে ভরপুর আলসেস ও লোরেনের এক অংশ নিয়ে নেয়। ফ্রান্সকে যুদ্ধের
ক্ষতিপূরণ হিসাবে ৫০০ কোটি ফ্রা দিতে বাধ্য করা হয়। আরো শর্ত দেওয়া হয় যে ১ মার্চ ১৮৭১ সালে
প্যারিসের মধ্য দিয়ে জার্মানির একটি বিজয় মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।
জার্মানির ঐক্য সম্পূর্ণ
যুদ্ধ শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে বিসমার্ক স্বীয় শক্ত সামরিক অবস্থানের সুযোগ নিয়ে দক্ষিণ জার্মানির
রাজ্যগুলোকে উত্তর জার্মান কনফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত করে জার্মান সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। এই
রাজ্যগুলোর সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুসারে তাদেরকে প্রচুর সায়ত্ত¡শাসন দেওয়া হয়। যেমন
ব্যাভারিয়াকে নিজস্ব সামরিক বাহিনী রাখার অনুমতি দেওয়া হয়। প্রত্যেক রাজ্যকে তাদের আলাদা
পোস্টাল সার্ভিস রাখা সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ১৮ জানুয়ারি ১৮৭১ সালে জার্মান সাম্রাজ্যের আনুষ্ঠানিক
ঘোষণা করা হয় এবং রাজা উইলিয়ামকে এই সাম্রাজ্যের সম্রাট হিসেবে ফ্রান্সের ভার্সাইয়ের মিরর হলে
অভিষেক দেওয়া হয়।
সারসংক্ষেপ
জার্মানি একত্রীকরণের উদ্দেশ্য বিসমার্ক কোনো পরিকল্পনা করেন নি। প্রæশিয়ার রাজতন্ত্রএবং প্রæশিয়াকে
জার্মান রাজ্যগুলোর মধ্যে শক্তিশালী করার উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি রাজনীতিতে আবির্ভ ত হন। লক্ষ্য
অর্জনের জন্য কোনো আদর্শবোধের চেয়ে বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সুযোগ বুঝে কাজ করার নীতিতে
তিনি বিশ্বাসী ছিলেন। প্রæশিয়াকে শক্ত অবস্থানে নেওয়ার জন্য “রক্ত ও লোহার’’ নীতিতে বিশ্বাসী
বিসমার্ক প্রতিবেশীদের সঙ্গে যুদ্ধ বাধান। বিসমার্ক ডেনমার্ক, অস্ট্রিয়া এবং সবশেষে ফ্রান্সেকে তিনটি
যুদ্ধে পরাজিত করে ঐ এলাকায় প্রæশিয়ার প্রাধ্যন্য প্রতিষ্ঠা করেন, আর এই ভাবে প্রæশিয়ার নেতৃত্বে
জার্মান রাজ্যগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়। বিসমার্ক প্রæশিয়ার সামরিক বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে জার্মানির ঐক্য
সাধন করেন। রাষ্ট্র এবং সামরিক বাহিনীর এই সম্পর্ক ইউরোপের জন্য সুফল বয়ে আনে নি। ইউরোপ
১৮৭০ পর সামরিকতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।


পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
১. ১৮৫০ এর পর প্রæশিয়া অস্ট্রিয়ার থেকে এগিয়ে যাওয়ার কারণ
(ক) সামরিক উন্নতি (খ) বাণিজ্যিক উন্নতি
(গ) ক‚টনৈতিক উন্নতি (ঘ) রাজনৈতিক উন্নতি।
২. বিসমার্ক কোন নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন?
ক) গণতন্ত্র (খ) উদারনীতি
(গ) সুবিধাবাদ (ঘ) সমাজতন্ত্র
৩. বিসমার্ক যদি úেজভিগ ও হোলস্টিন দখল না করতে তা হলে প্রæশিয়ার অভ্যন্তরে সমস্যা সৃষ্টি করত
(ক) জাতীয়তাবাদীরা (খ) বৃহৎশক্তিবর্গ
(গ) ডেনমার্ক (ঘ) অস্ট্রিয়া
৪. ১৮৭০ সালের ফ্রাঙ্কো জার্মান-যুদ্ধের পূর্বেই বিসমার্ক ফ্রান্সকে এক ঘরে করে ফেলেন তাঁর
ক) সামরিক শক্তির দ্বারা খ) ব্যবসা-বাণিজ্যের উৎকর্ষের দ্বারা
গ) ক‚টনৈতিক কলাকৌশলের সাহায্যে ঘ) ভয় দেখানোর দ্বারা
রচনামূলক প্রশ্ন
১. অস্ট্রিয়ার সঙ্গে বিসমার্কের বিবাদের কারণ কি আলোচনা করুন।
২. ফ্রান্সের সঙ্গে বিসমার্কের সম্পর্ক শীতল হওয়ার কারণ কি? এর ফলাফল কি হয়েছিলো?
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের উত্তর
১. খ; ২. গ; ৩. ক; ৪. গ।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. বিসমার্কের আদর্শের উপর আলোকাত করুন।
২. বিসমার্ক ফ্রান্সকে বিব্রত করতে কি কি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন?

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]