বার্লিন সম্মেলন

বার্লিন সম্মেলন
১৩ই জুন ১৮১৮ সালে বার্লিনে সম্মেলন শুরু হয়। চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী স্বাগতিক জার্মানীর বিসমার্ক
সম্মেলনের সভাপতি নির্বাচিত হন। বয়সের ভারে নুহ্য, এবং নানারোগে আক্রান্তবিসমার্ক যদিও আগের
তেজস্বীত হারিয়েছেন তবুও সম্মেলনের মধ্যমণি ছিলেন তিনি। নানা টানাপোড়ন এবং ভেঙ্গে পড়ার
উপক্রম হতে তিনি সম্মেলনকে সফল করেছিলেন। সম্মেলনের আরেকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ছিরেন বৃটেনের
প্রধানমন্ত্রী আশি বছর বয়স্ক যুবরাজ গোর চাকব। সম্মেলনে বলকান অঞ্চলের কয়েকটি রাজ্যও সম্মেলনে
প্রতিনিধি পাঠায়। তুরস্কের প্রতিনিধি সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। তাঁকে শুধু উপেক্ষা করা হয়নি
অপমানিত করা হয়েছিলো। বিসমার্ক তাঁকে কঠোরভাবে শুনিয়ে দেন যে যদি তিনি মনে করেন যে
সম্মেলন বসেছে তুরুস্ককে রক্ষা করতে তা হবে ভুল ধারণা। যদি সানষ্টিফানোর চুক্তির ফলে কিছু
ইউরোপীয় দেশের স্বার্থহানি না ঘটতো তাহলে ওটিই চ‚ড়ান্তথাকত। আগে থেকে ঠিকঠাক করা
সিদ্ধান্তসমূহকে চ‚ড়ান্তঅনুমোদন দেওয়ার জন্য বার্লিন কংগ্রেস বসে নি। বৈঠক বসার পূর্বে সাধারণ
একটা নীতিমালা ঠিক হয়েছিল, কোন নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তনেওয়া হয়নি। বার্লিন আলোচনা কালে কয়েকটি
বিষয়ে বিশেষ করে এশিয়া মাইনর এলাকায় রাশিয়া কতটু এলাকা লাভ করবে এবং দক্ষিণ বুলগেরিয়া
তুরস্ক কতটুকু কর্তৃত্ব রাখবে এসব বিষয়ে প্রচুর রাক বিতন্ডা হয়েছিলো, অনেক সময় মনে হয়েছে
সম্মেলন বুঝি ভেঙ্গে যাবে। শেষ পর্যন্ত১৩ জুলাই ১৮৭৮ সালে বার্লিন সন্ধি সাক্ষরিত হয়।
বার্লিন সন্ধির শর্তাবলী
১) স্যানষ্টিফানো সন্ধিার দ্বারা সৃষ্ট বুলগেরিয়াকে তিনটিভাগে বিভক্ত করা হয়। ম্যাসিডোনিয়া অঞ্চল
বুলগেরিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করে তুর্কী সুলতানের প্রত্যক্ষ শাসনে রাখা হয়। বলকান পর্বতের দক্ষিণে
অবিস্থিত পূর্ব রুমেলিযাকে বুলগেরিয়া থেকে আলাদা করে তুর্কী সুলতানের শাসনাধীনে সায়ত্ত¡শাসন
দেওয়া হয়। ঠিক হয় এ অঞ্চল একজন খ্রীষ্টান গভর্ণর শাসন করবে। বলকান পর্বতের উত্তরের অংশ
নিয়ে গঠিত হবে বুলগেরিয়া রাজ্য গঠিত হয়ে। বুলগেরিয়ার শাসনকর্তা বুলগারদের দ্বারা নির্বাচিত হবে,
তুরস্কের সুলাতান এই নির্বাচিত প্রার্থীকে অনুমোদন দিতে বাধ্য থাকবেন। মোট কথা স্যানস্টিফানোর
সন্ধিতে যে বুলগেরিয়া গঠিত হয়েছিলো বার্লিন চুক্তি তার তিনভাগের একভাগ নিয়ে গঠিত নব্য
বুলগেরিয়ার জন্ম দেয়।
২। সার্বিয়া এবং মন্টিনিেেগ্রার স্বাধীনতা তুর্কী সুলতান স্বীকার করে নেন। অবশ্য সানষ্টিফানোর চুক্তি
দ্বারা এই দুটিরাষ্ট্রযে ভ‚খন্ড লাভ করেছিলো তা বার্লিন সন্ধি দ্বারা কমিয়ে দেয়া হয়েছিলো।
৩) রুমানিয়া ও তুর্কী সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীনাত স্বাধীনতা লাভ করে। অবশ্য রুমানিয়া হতে দক্ষিণ
বেসারাবিয়া অঞ্চল আলাদা করে দিয়ে দেওয়া হয়। যদিও তুর্কী অঞ্চলভুক্ত দোবরুজা অঞ্চলের কিছু


অংশ ক্ষতিপুরণ হিসাবে রুমানিয়াকে দেওয়া হয় তুবুও। রুমানিযা বেসারবিয়া হারানোর শোক
ভ‚লতে পারে ন।ি এই বিষয় নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে তার শত্রæতা লেগেই ছিলো।
৪। বসনিয়া হার্জেগোবিনা সেখানে থকে সমস্যার উদ্ভব হয়েছিলো তা অষ্ট্রিয়াকে দখল ও শাসন করার
অধিকার দিয়ে দেওয়া হয়। অবশ্য অঞ্চল দুটিকে অষ্ট্রিয় সাম্রাজ্যভুক্ত করার অধিকার অষ্ট্রিয়াকে
দেওয়া হয় নি। সার্বিয়া এবং মন্টিনিগ্রোর মধ্যবর্তী বসনিয়া হার্জিগোবিনার অন্তর্গত নবীবাজার
এলাকার সঞ্জক নামক স্থানে অস্ট্রিয়াকে একটি দূর্গ স্থাপন করতে অনুমতি দেওয়া হয়।
৫। রাশিয়া দক্ষিণ বেসারবিয়া ছাড়া এশিয়া মাইনর এলাকার বাটুম, কারস আরদাহান এলাকা লাভ
করে।
৬। রাশিয়ার এশিয়া মাইনর এলাকায় এ অঞ্চলগুলো লাভ করায় বৃটেন সাইপ্রসাসের অধিকার করে।
বিনিময়ে বৃটেন প্রতিশ্রæতি দেয় যে ভবিষতে তুরস্কের অখন্ডতার প্রতি কোন রূপ হুমকি দেখা দিলে
বৃটেন তুরস্ককে সামরিক সহায়তা দান করবে। অবশ্য বৃটেন কোন দিনই তার এই প্রতিশ্রæতি রক্ষা
করে নি।
৭। গ্রীস সম্মেলনে ক্রীট, থেসালি, ইপিরাস এবং মেসিডোনিয়ার অংশ বিশেষ দাবী করে। কিন্তু
সম্মেলনে গ্রীসের দাবী অগ্রাহ্য করা হয়। তুরুস্কের সুলতানকে গ্রীসের সঙ্গে সীমান্তসংক্রান্তবিবাদ
মিটিয়ে ফেলার জন্য সম্মেলন আহবান জানায়।
বার্লিন চুক্তির প্রতিক্রিয়া
বলকান অঞ্চল : বার্লিন চুক্তি বলকান অঞ্চলে স্থায়ী শান্তিআনতে ব্যর্থ হয়। পূর্বেই বলা হয়েছে রুমানিয়া
দক্ষিণ বেসারবিয়া হারানোতে ক্ষুদ্ধহয়েছে এবং সে রাশিয়ার সঙ্গে এটাকে নিয়ে শত্রæতায় লিপ্ত হয়।
মেসোডোনিয়া সমুদ্রে যাবার পথ হারানোতে হতাশ হয়েছে এবং সানস্টিফানো চুক্তিতে যে বুলগেরিয়া
সুষ্টি করা হয়েছিলো তা সঙ্কুচিত করায় বুলগেরিয়াও বিক্ষুদ্ধ ছিলআর্বিয়ার হতাশা ছিল সবচাইতে তীব্র।
সার্বিয়া ঐ অঞ্চলে সার্ভদের নেতা হতে চেয়েছিলো এবং আশা করেছিলো বসনিয়া হার্জেগোবিনার
অধাকার সে লাভ করবে। কিন্তু এ প্রদেশ দুটি অস্ট্রিয়া হাঙ্গেরীকে দেওয়ায় সার্বিয়া অস্ট্রিয়াকে ককা
করতে পারে নি। সার্ব ও অষ্ট্রিয়ানদের দ্ব›দ্ব প্রথম বিশ্বযুদ্ধের একটি বড় কারণ ছিল।
তুরস্ক
বার্লিন চুক্তিতে তুরুস্ককে যে অপমানা করা হয়েছে তুরস্ক তা হজম করতে পারে নি। তুরস্কের ভ‚মি
রাশিয়া, বৃটেন এবং অন্যান্যদেরকে দেয়াই শুধু হয় নাই বরং তুরুস্ককে অভ্যন্তরীণ সংস্কার এবং তার
অধীনস্তখ্রীষ্টান প্রজাদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করার প্রতিশ্রæতি দিতে হয়েছে। মোটকথা তুরস্ককে
বাধ্যকরে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে যে খ্রীষ্টান প্রজাদেরকে সে ধর্মীয় কারণে নির্যাতন করছে।
বার্লিন চুক্তির হতাশা থেকে তুরুস্ক পরবর্তীতে তার ঐতিহ্যগত বন্ধু ইংল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্ক বিসর্জন
দিয়ে মিত্র খুঁজতে হতাশা থেকে তুরস্ক পরবর্তীতে তার ঐতিহ্যগত বন্ধু ইংল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্ক বিসর্জন
দিয়ে মিত্র খুঁজতে থাকে।
রাশিয়া
এই চুক্তি দ্বারা সবচাইতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে রাশিয়া। তুরস্কের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধের ফলে রাশিয়ার
ছেয়ে লাভবান হয়েছে অস্ট্রিয়া এবং বৃটেন। রাশিয়া বৃহৎ বুলগেরিয়া সুষ্টি করে তার প্রভাববলয় বাড়াতে
চেয়েছিলো, কিন্তু এই চুক্তি তা নস্যাৎ করে দিয়েছে।
সারসংক্ষেপ
১৮৭৫ সালে বসনিয়া হার্জেগোনিয়ায় কৃষক বিদ্রোহকে কেন্দ্র করে বলকান পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে।


তুর্কী সাম্রাজ্যের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে যে দুটি দেশ এ অঞ্চলে তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তার করতে
চেয়েছিলো তারা এই বিদ্রোহের পূর্ণ সদ্বব্যবাহার করে। úাভদের অধিকার এবং খ্রীস্টান নির্যাতনের
অভিযোগ রাশিয়া ও অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরী বলকান বিদ্রোহকে উৎসাহিত ও সহযোগিতা করতে থাকে। তুরস্ক
যখন বিদ্রোহীদের দমন করতে শুরু করে তখন রাশিয়া “প্যানúাভ” বাদের শ্লোগান তুরে তুরস্কের
বিরুদ্ধে অস্ত্রহাতে নেয়। রাশিয়ার হাতে তুরস্কের চ‚ড়ান্তপরাজয় বৃটিশ স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর তাই বৃটেন
রাশিয়ার অভিলাশের সামনে বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায়। বৃটেন আশঙ্কা করে ভারতের সাথে বৃটেনের
যোগাযোগের পথ এবং সুয়েজ খালে বৃটিশ আধিপত্য রুশ হুমকির সম্মুখীন হয়। ১৮৭৮ সালে বার্লিন
সম্মেলনে ইউরোপীয় সকল শক্তির স্বার্থ রক্ষা করার চেষ্টা করা হয়। তুরস্কের ভুমি ছিনিয়ে অস্ট্রিয়া বৃটেন
ও রাশিয়াকে দেওয়া হয়। সার্বিয়া, মন্টিনিগ্রো এবং রুমানিয়া স্বাধীনতা ও অতিরিক্ত ভ‚মি লাভ করে।
বুলগেরিয়া স্বায়ত্বশাসন লাভ করে। যদিও অধিকাংশ দেশ এই চুক্তিতে অসন্তষ্ট থাকে তবুও বার্লিন
চুক্তিতে যে ভৌগোলিক পরিবর্তন আনা হয় তা ১৯১২-১২১৩ পর্যন্তবহাল থাকে।


পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
১। রাশিয়া úাভদের বড় বন্ধু রুপে আবিভর্‚ত হয় কেননা -
ক) রাশিয়া ও বলকান úাভরা একই জাতিভ‚ক্ত
খ) তুর্কীরা úাভদেরকে অত্যাচার করত তাই রাশিয়া তাদেরকে রক্ষা করতে চেয়েছে।
গ) বন্ধুত্বের সুযোগে úাভ অঞ্চল দখল করলে রাশিয়ার সীমানা বৃদ্ধি প্রাপ্ত হবে।
ঘ) অস্ট্রিয়াকে সমুচিত শিক্ষা দিতে পারবে।
২। অষ্ট্রিয়ার পররষ্ট্র মন্ত্রী এ্যান্ডরেসী বসনিয়া-হার্জিগোবিনা অস্ট্রিয়ার সঙ্গে একত্রীত হউক এটা চাইতেন
না কেননা।
ক) তিনি অস্ট্রিয়ার সাম্রাজ্যবাদী নীতি পছন্দ করতেন না।
খ) তিনি তুরস্কের প্রতি সহানূভ‚তিশীল ছিলেন।
গ) তিনি বসনিয়া-হার্জিগোবিনার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করতেন
ঘ) মাইগাররা অস্ট্রিয়া হাঙ্গেরীতে সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে।
৩। বসনিয়া-হার্জিগোবিনার বিদ্রোহের বিস্তারের কারণ
ক) ইংল্যান্ডের প্ররোচনা
খ) রাশিয়া ও অস্ট্রিয়ার উৎসাহ
গ) মুললমানদের দ্বারা খ্রীষ্টানদের উপর নির্যাতন
ঘ) বিসমার্কের সাহায্য সহযোগিতা
৪। সানস্টিফানো চুক্তি অনুযায়ী বুলগেরিয়া সৃষ্টি হলে -
ক) এটি স্বাধীন রাষ্ট হিসাবে স্বীকৃতি পাবে
খ) বলকান জাতীয়তাবাদের স্বীকৃতি পাওয়া যাবে
গ) রাশিয়ার ছাউনিতে পরিণত হবে
ঘ) তুরস্ক খুশী হবে।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। বসনিয়া-হার্জিগোবিনা নিয়ে রাশিয়া ও অস্ট্রিয়ার দ্ব›েদ্বর কারণ বিশ্লেষণ করুন।
২। সানস্টিফানো চুক্তি বাস্তবায়িত হরে বৃটেনের স্বার্থ কিভাবে ক্ষুন্ন হয় তা আলোচনা করুন।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের উত্তর
১। ক ২। ঘ ৩। খ ৪। গ
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। বুলগেরিয়া সঙ্কটে ইউরোপীয় শক্তিগুলোর প্রতিক্রিয়া আলোচনা করুন।
২। বার্লিন চুক্তি কিভাবে বিভিন্ন শক্তিকে অসুন্তুষ্ট করেছিলো তা পর্যালোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]