ইউরোপে সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভব : হবসন ও লেলিনের তত্ত¡

 ইউরোপে সাম্রাজ্যবাদ উদ্ভবের পটভূমি
 সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে হবসন ও লেনিনের বিশ্লেষণ


পঞ্চদশ শতকের ইউরোপে রেনেসাঁস বা নবজাগরণের পটভূমিতে ইউরোপের বিশেষত পশ্চিম
ইউরোপের সমাজ ও অর্থনীতিতে এক বিশাল পরিবর্তন সাধিত হয়। দক্ষিণ ইউরোপের ইতালীরয়
ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের শহরগুলিকে ঘিরে স্বাধীন ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশ ঘটে। এই নতুন উৎপাদন
পদ্ধতি ও উৎপাদন সম্পর্কের বিকাশ ইউরোপের প্রতিষ্ঠিত সামন্তবাদ তথা আর্থ-সামাজিক কাঠামোকে
আঘাত করতে থাকে। পঞ্চদশ শতকের শেষ এবং ষোড়শ শতকের প্রথমার্ধের এই কালটিকে
ইউরোপের ইতিহাসে প্রাথমিক পুঁজি সঞ্চায়ণের যুগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ক্রমে ইউরোপে
সামন্তবাদের পতনের পটভূমিতে আধুনিক পুঁজিবাদী অর্থনীতির বিকাশ ঘটে। ষোড়শ শতকের মাঝামাঝি
সময় থেকে পশ্চিম ইউরোপের ব্যবসা-বাণিজ্যে অগ্রসর দেশগুলির মধ্যে প্রবল বাণিজ্যিক প্রতিদ্ব›িদ্বতা
শুরু হয়। এই সময়কালে পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল অটোমান তুির্কদের দখলে থাকার কারণে অর্থ
বাণিজ্যে অগ্রসর পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলির পক্ষে ভূ-মধ্যসাগরীয় জল পথে এশিয়ার সাথে বাণিজ্য
পরিচালনা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিম ইউরোপের বণিকেরা এশিয়ার পথে বিকল্প
বাণিজ্য পথ আবিষ্কারের জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালায়। ১৪৯২ সালে কলম্বাসের আমেরিকা মহাদেশ
আবিষ্কার এবং ১৪৯৮ সালে ভাস্কো দা গামার পশ্চিম ভারতের কালিকট বন্দরে উপস্থিতি এরই
ফলশ্রæতি। এই ভৌগোলিক আবিষ্কারের ফলে সমগ্র পৃথিবী পশ্চিমী ইউরোপীয় উন্নত দেশগুলির নাগালের
মধ্যে এসে যায়। সপ্তদশ শতকের শুরু থেকে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে স্পেন, পর্তুগাল, ইটালি, ফ্রান্স প্রভৃতি
দেশের বাণিজ্যিক কোম্পানিসমূহ এশিয়া, আফ্রিকা ও আমেরিকা মহাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে
পড়ে। ক্রমে ইউরোপের এই দেশগুলি এইসব মহাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করে তাদের রাজত্ব
কায়েম করে। সারা বিশ্বে ইউরোপীয় দেশগুলির দখলদারীত্ব কায়েমের এই প্রক্রিয়াকে ইতিহাসে
উপনিবেশবাদী যুগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই পর্বে উপনিবেশবাদের মূল বৈশিষ্ট্য ছিল যে কোনো
মূল্যে শোষণ, লুণ্ঠন এবং স্বদেশে লুণ্ঠিত সম্পদ প্রেরণ। উপরন্তু ছিল এই সকল অঞ্চলে খ্রিস্টান ধর্মের
প্রচার। ইউরোপের খ্রিস্টান মিশনারীদের জোরপূর্বক লক্ষ লক্ষ মানুষকে ধর্মান্তকরণ এই সময়ের
ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য দিক। উপনিবেশবাদের এই পর্যায়ে ইউরোপের অর্থনীতি ছিল প্রধানত
বাণিজ্য পুঁজি নির্ভর। এই যুগের বৈশিষ্ট্যসমূহ উনিশ শতকের মাঝামাঝি কাল পর্যন্তবিদ্যমান ছিল।
সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভব
আঠারো শতকের শিল্প বিপ্লব ইউরোপের সমাজ ও অর্থনীতিতে এক গুণগত পরিবর্তন সাধন করে।
কায়িক-শ্রমের পরিবর্তে যন্ত্রভিত্তিক উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু হয়। বস্তুত এই সময় থেকে পুঁজিবাদের ব্যাপক
উত্থান প্রক্রিয়া লক্ষ্য করা হয়। এর ফলশ্রæতিতে বাণিজ্য পুঁজির স্থান ক্রমাগত সংকুচিত হয়ে আসতে
থাকে এবং শিল্প পুঁজির প্রসার প্রবলভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। উনিশ শতকের প্রথমার্ধ কাল হলো বাণিজ্য
পুঁজি এবং শিল্প পুঁজির মধ্যে সংঘাতের সময়। এই সময়ে বাণিজ্য পুঁজির প্রবক্তারা একচেটিয়া বাণিজ্য



এবং অন্যদিকে শিল্প পুঁজির মালিকেরা অবাধ বাণিজ্যের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে। ফলে সারা পৃথিবীর
ইউরোপীয় উপনিবেশগুলিতে এই দুই ধারার সংঘাত চলতে থাকে।
উনিশ শতকের প্রথমার্ধে এশিয়া আফ্রিকা ও আমেরিকা মহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ইউরোপের
ঔপনিবেশিক শাসন, শোষণ এবং সীমাহীন অত্যাচারের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম ও স্বাধীনতার লড়াই
শুরু হয়। এই পটভূমিতে ১৮১৫ সালের মধ্যে আমেরিকা মহাদেশে ফরাসি উপনিবেশসমূহ হাতছাড়া
হয়ে যায়। ১৮২২ সালে দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিলের উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার করে নেয় পর্তুগাল।
১৮৫২ সালে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ডিজরেলি ঘোষণা করেন যে, ক্রমান্বয়ে ব্রিটিশ উপনিবেশসমূহকে স্বাধীনতা
প্রদান করা হবে। ১৮৬১ সালে ফরাসি সরকার এক ঘোষণাবলে সকল ফরাসি উপনিবেশের উপর নিয়ন্ত্রণ
শিথিল করে এবং এই সকল অঞ্চলে অবাধ বাণিজ্যের পথ প্রশস্তকরে দেয়। এক কথায় বলা যায় যে
উনিশ শতকের প্রথমার্ধে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলি তাদের দখলকৃত এলাকা তথা উপনিবেশসমূহে
নিয়ন্ত্রণ একের পর শিথিল করতে থাকে। বস্তুত এই শিথিলকরণ প্রক্রিয়া ছিল সাময়িক ব্যাপার মাত্র। এই
সময়ে গোটা ইউরোপে বাণিজ্য পুঁজির জায়গায় শিল্প পুঁজির প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। পশ্চিম ইউরোপের
প্রত্যেকটি দেশে শিল্প পুঁজির প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সাথে সাথে নতুন বাজার, কাঁচামাল সংগ্রহের
প্রয়োজনে নতুন নতুন দেশ দখল করতে থাকে। ১৮৭০ সালের পর থেকে ইউরোপীয় দেশগুলি
উপনিবেশসমূহ থেকে চলে আসার পরিবর্তে বিভিন্ন দেশে সাম্রাজ্য সা¤প্রসারণের নীতি গ্রহণ করে।
এশিয়া আফ্রিকা মহাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে পশ্চিম ইউরোপের শিল্পোন্নত দেশসমূহের নতুনভাবে সাম্রাজ্য
গড়ে তোলার এই পর্বকে ইতিহাসে সাম্রাজ্যবাদী যুগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ইউরোপের
ঐতিহাসিকেরা এই সাম্রাজ্যবাদের কালকে চিহ্নিত করেছেন ১৮৭০ সাল থেকে প্রথম মহাযুদ্ধের সময়
পর্যন্ত।
সাম্রাজ্যবাদ প্রসঙ্গে হবসন ও লেনিনের তত্ত¡
ইউরোপের সাম্রাজ্যবাদী যুগ সম্পর্কে অর্থাৎ এই যুগের উদ্ভব সম্পর্কে বিখ্যাত ইংরেজ অর্থনীতিবিদ জে
এ হবসন এবং সোভিয়েত বলশেভিক বিপ্লবের নেতা ভি আই লেনিন দুটি বিশ্লেষণ প্রদান করেছেন।
তাদের এই বিশ্লেষণ তাদের নামানুসারে হবসন এবং লেনিনের তত্ত¡ হিসেবে ইতিহাসে সর্বাধিক
পরিচিত। হবসনের মতে ইউরোপে শিল্প পুঁজি বিকাশের এই পর্বেপ্রচুর পরিমাণে মূলধন স্ফীতি ঘটে।
এই উদ্ধৃত্ত মূলধনের বিনোয়োগ এবং অধিকতর মুনাফার জন্য পুঁজিবাদী দেশগুলি এশিয়া, আফ্রিকার
বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিজেদের সাম্রাজ্যভূক্ত করে নেয়। হবসনের এই তত্ত¡কে সাম্রাজ্যবাদী যুগের স্বরূপ ব্যাখ্যায়
অর্থনৈতিক তত্ত¡ হিসেবে অভিহিত করা হয়। ভি আই লেনিন তাঁর তত্ত¡ উপস্থাপন করেছেন
ওসঢ়বৎরধষরংস রং ঃযব ঐরমযবংঃ ঝঃধমব ড়ভ ঈধঢ়রঃধষরংস নামক গ্রন্থে। তিনি সুস্পষ্টভাবে অভিমত প্রদান
করেছেন যে পুঁজির ধর্মই হলো দখল আর লুণ্ঠন করা। পুঁজিবাদ তার চূড়ান্তপর্বে নতুন নতুন বাজার
অন্বেষণের পরিবর্তে বিভিন্ন অঞ্চল দখল ও প্রভুত্ব কায়েমে লিপ্ত হওয়া। আর সাম্রাজ্যবাদ হলো পুঁজিবাদী
বিকাশের ধারাবাহিকতারই ফলশ্রæতি। লেনিনের তত্ত¡টিতে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের-এই
দুটি দিকই সন্নিবেশিত হয়েছে।
সাম্রাজ্যবাদ বিস্তার লাভের কারণ
উনিশ শতকে সাম্রাজ্যবাদ বিস্তৃত হওয়ার পেছনে অনেকগুলি কারণ বিদ্যমান ছিল। কারণসমূহ নি¤েœ
প্রদত্ত হলো :
(ক) ইউরোপে শিল্প সংরক্ষণ নীতি
উনিশ শতকে শিল্প বিপ্লব সংহত হওয়ার সাথে সাথে ইউরোপের শিল্পোন্নত দেশগুলিতে একদিকে প্রচুর
পুঁজির স্ফীতি ঘটে এবং অন্যদিকে এই দেশসমূহ কঠিন শিল্প সংরক্ষণ নীতি গ্রহণ করে। এই নীতির
লক্ষ্য ছিল বিদেশের সাথে বাণিজ্যিক প্রতিদ্ব›িদ্বতায় কম গুরুত্ব আরোপ করে স্বদেশের শিল্প
প্রতিষ্ঠানগুলিকে রক্ষা করা। এই শিল্প সংরক্ষণ নীতি আন্তইউরোপীয় বাণিজ্যে এক অচলাবস্থার সৃষ্টি


করে। এক দেশ থেকে অন্যদেশে পণ্য চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। যে কোনো মূল্যে পুঁজিপতিদের
মূল্যবৃদ্ধির প্রয়াস এবং অবাধ ও নির্মম শ্রমিক শোষণ পণ্যের অভ্যন্তরীণ বাজারকে সংকোচিত করে দেয়।
উনিশ শতকের শেষপাদ পর্যন্তএশিয়া ও আফ্রিকার দেশসমূহ ছিল একেবারে অনুন্নত। জনসংখ্যা বহুল
এই অঞ্চল ছিল ইউরোপের শিল্প পণ্যের সম্ভাবনাময় বাজার। নিজেদের শিল্পজাত পণ্যসামগ্রীর বাজার
সৃষ্টি তথা পণ্য বিক্রয়ের জন্য উন্নত ধনবাদী দেশগুলি জোরপূর্বক পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল দখল করে
নিজেদের রাজনৈতিক প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠা করতে থাকে। এভাবে সূচনা ঘটে সাম্রাজ্যবাদী যুগের।
(খ) কাঁচামাল ও খাদ্যশষ্যের যোগান নিশ্চিত করণ
শিল্পোন্নত ইউরোপ কাঁচামালের জন্য পুরোপুরিভাবে নির্ভরশীল ছিল এশিয়া, আফ্রিকা মহাদেশের উপর।
ইন্দো-মালয় ও পূর্ব ভারতীয় দ্বীপাঞ্চল ছিল রাবার সরবরাহ কেন্দ্র। ইউরোপের বস্ত্রশিল্পের কাঁচামাল তুলা
উৎপাদনের কেন্দ্র ছিল ভারতবর্ষ এবং মিশর। ইউরোপ খাদ্যশষ্য বিশেষত চা, চিনি, নীল, তামাক
প্রভৃতির জন্য নির্ভরশীল ছিল এশিয়া ও মধ্য আমেরিকা অঞ্চলের উপর। ইউরোপের মশলা সরবরাহের
কেন্দ্র ছিল ভারতবর্ষ, বার্মা, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও শ্রীলঙ্কা। এছাড়া আফ্রিকা অঞ্চলের কয়লা,
লৌহ, স্বর্ণ, তাম্র এবং মধ্যপ্রাচ্যের অফুরান তেল ভান্ডার ছিল তাদের শিল্পের কাঁচামালের জন্য জরুরি।
শিল্পের প্রয়োজনে কাঁচামালের যোগান নিয়মিতভাবে নিশ্চিত করা ছিল শিল্প উৎপাদনের পূর্বশর্ত। এই
শিল্পের কাঁচামাল এবং খাদ্যশস্যের সরবরাহ অব্যাহত রাখার জন্য শিল্পোন্নাত ইউরোপ এশিয়া আফ্রিকার
বিভিন্ন দেশ দখল করে তাদের সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটায়।
(গ) এশিয়া আফ্রিকার বিপুল জনসংখ্যা
উনিশ শতকে এশিয়া ও আফ্রিকা অঞ্চলে জনসংখ্যা ছিল অনেক বেশি। ফলে স্বাভাবিকভাবে ইউরোপের
চেয়ে এই অঞ্চলে শ্রম বাজার ছিল সস্তা ও সহজলভ্য। ইউরোপে শিল্প সংরক্ষণ নীতির কালে একদেশ
থেকে অন্য দেশে শ্রমিক চলাচল ছিল খুবই সীমিত। এশিয়া আফ্রিকার এই সস্তা শ্রম বাজার ইউরোপের
শিল্পপতিদের প্রবলভাবে আকর্ষণ করে। এই পটভূমিতে শিল্পোন্নত ইউরোপীয় দেশসমূহ অধিক মুনাফা
অর্জনের জন্য এশিয়া আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে কিছু কিছু শিল্প ইউনিট স্থাপন করতে থাকে। শিল্প
প্রতিষ্ঠান স্থাপন, মুনাফা অর্জন এবং সস্তা শ্রম বাজার দখলের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা সাম্রাজ্যবাদী
পরিকল্পনাকে ত্বরান্বিত করে।
(ঘ) উগ্র জাতীয়তাবাদের বিকাশ
উনিশ শতকের শেষদিকে ইউরোপের বিশেষত জার্মানি ও ইতালিতে উগ্র জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটতে
থাকে। অর্থ, বিত্ত শিক্ষায় অগ্রসর এই জাতিগুলি নিজেদেরকে আফ্রিকা, এশিয়ার জাতিসমূহের থেকে
শ্রেষ্ঠ মনে করতো। রাষ্ট্রীয় মর্যাদা বৃদ্ধি এবং নিজেদের শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে প্রতিপন্ন করার জন্য বিভিন্ন
অঞ্চল দখলের মনোবৃত্তি তাদের মাঝে প্রবল হয়ে উঠে। জার্মান ও ইতালির এই উগ্র জাতীয়তাবাদী
ভাবধারা সাম্রাজ্যবাদকে প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ করে তোলে। ফলে শুরু হয় দেশ ও অঞ্চল দখলের পালা।
(ঙ) সামরিক কারণ
ইউরোপের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি সংঘাতপূর্ণ হওয়ার কারণে সামরিক শক্তির বৃদ্ধি এই সময়ের ইউরোপের
ইতিহাসের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। নিজেদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধিকল্পে জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি ও বৃটেন
প্রবল প্রতিদ্ব›িদ্বতায় অবতীর্ণ হয়। এই দেশগুলির জনসংখ্যা কম হওয়ার কারণে আফ্রিকা ও এশিয়ার
দেশসমূহ থেকে সামরিক বাহিনীর সদস্য সংগ্রহে মনোনিবেশ করে। বস্তুত সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ এবং
সামরিক বাহিনীর সদস্য সংগ্রহের জন্য পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলি এশিয়া আফ্রিকার অনেক দেশ দখল
করে। একই সঙ্গে সামরিক ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করে নিজেদের সামরিক কমান্ড কাঠামো গড়ে তোলে। মূলত
উনিশ শতকের নতুন সাম্রাজ্যবাদী যুগের চূড়ান্তবিস্ফোরণ ঘটে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভেতর দিয়ে এবং এর


রেশ চলতে থাকে পুরো বিশ শতক জুড়ে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রধান কারণই ছিল বিভিন্ন দেশ দখল নিয়ে
ইউরোপীয় শক্তিবর্গের মধ্যে সংঘাত।
ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদের বিস্তার
১৮৭০ সালের পর থেকে পৃথিবীর ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা ঘটে। বিশেষত আফ্রিকা, এশিয়া ও
প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চল ইউরোপের উন্নত পুঁজিবাদী দেশগুলির দখলে চলে যায়। অরণ্য, পাহাড় আর
মরুভূমি বেষ্টিত আফ্রিকা দখলের প্রশ্নে ইউরোপের শক্তিগুলির মধ্যে সংঘাতের পরিবর্তে এক ধরনের
সমঝোতা লক্ষ্য করা যায়। এই সমঝোতার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে আফ্রিকা ভাগ করে নেয়ার
প্রক্রিয়াকে ইতিহাসে আফ্রিকা ব্যবচ্ছেদ হিসেবে অভিহিত করা হয়। কিন্তু এশিয়া ও প্রশান্তমহাসাগরীয়
অঞ্চলে সাম্রাজ্য বিস্তারকল্পে তীব্র সামরিক সংঘাতে লিপ্ত হয় ইউরোপীয় শক্তিগুলি।
ভারতে সাম্রাজ্যবাদ বিস্তার
ইউরোপের উন্নত ধনবাদী দেশগুলির মধ্যে এশিয়া ও প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চল দখল প্রশ্নে তীব্র
সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। সাম্রাজ্যবাদপূর্ব জমানায় মুঘল শক্তি শাসিত ভারতবর্ষে বাণিজ্যিক
প্রাধান্য বিস্তার এবং সামরিক ঘাটি স্থাপন করে স্থায়ী বাণিজ্য কেন্দ্র স্থাপনের প্রবল প্রতিদ্ব›িদ্বতায় অবতীর্ণ
হয় ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের ভেতর দিয়ে বাংলায় ইংরেজদের রাজনৈতিক
আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সময়ে ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নবাব সিরাজদ্দৌলাকে পরোক্ষভাবে
সমর্থন করেছিল। এই সময়ে ভারতবর্ষের সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে ইংরেজ ও ফরাসিদের সংঘর্ষ ছিল
নিয়মিত ব্যাপার। ১৭৬৩ সালে দক্ষিণ ভারতে ইংরেজ ও ফরাসিদের মধ্যে সংঘটিত কর্নাটকের তৃতীয়
যুদ্ধে ফরাসি শক্তি পরাজিত হয় এবং ভারতে তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ে। এরপর ইংরেজ কোম্পানি
একের পর এক ভারতীয় অঞ্চল দখল করতে থাকে। এই ধারাবাহিকতায় ১৮০৩ সালে দিল্লিতাদের
দখলে চলে আসে। তখন মুঘল সম্রাট নামেমাত্র টিকে থাকেন। ১৮৫৭ সালে ভারতীয় মহাবিদ্রোহের পর
বৃটিশ সরকার ভারতের শাসনভার গ্রহণ করে। একই সঙ্গে কোম্পানি শাসনের অবসান ঘটে। এই সময়ে
ইংল্যান্ডের শিল্পজাত পণ্য ভারতীয় বাজার পুরোপুরি দখল করে নেয়। বৃটিশ শিল্পের স্বার্থে এদেশে রেল
লাইন চালু হয়। বৃটিশ শিল্পপতিরা ভারতের সস্তা শ্রম বাজারের দিকে লক্ষ্য রেখে কলকাতা, বোম্বে ও
মাদ্রাজে কিছু কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। ১৮৬০ সালের পর ভারতে সাম্রাজ্যবাদী যুগের শুরু হয়।
চীনে সাম্রাজ্যবাদের বিস্তার
সপ্তদশ শতকে চীন অঞ্চলে বাণিজ্য বিস্তারের অগ্রগামী ছিল পর্তুগিজরা। দক্ষিণ চীনের ম্যাকাও বন্দর
দখল করে পর্তুগিজ শক্তি তাদের বাণিজ্য পরিচালনা করতে থাকে। ক্রমে ইংরেজ, ফরাসি ও ডাচ
কোম্পানি চীনের সমুদ্র উপক‚ল ধরে বাণিজ্য বসতি গড়ে তোলে। ক্যান্টন, হংকং, তাইওয়ান ইত্যাদি
অঞ্চলে ইংরেজ ফরাসি প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৩৯ সালে চীন সরকার ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া
কোম্পানির সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে নানকিং এর সন্ধিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন। এই চুক্তির
শর্তানুযায়ী সমুদ্র উপকুলের পাঁচটি বন্দর ইংরেজ কোম্পানির দখলে চলে যায়। এই সময়ে চীনে
ইংরেজদের আফিম ব্যবসা ও আফিম বাণিজ্যের বিরুদ্ধে চীনা জনগণের সংগ্রামের ফলশ্রæতি ছিল প্রথম
ইঙ্গ-চীন যুদ্ধ ও নানকিং সন্ধি। ১৮৫৬ সালে ইংরেজ ও ফরাসি কোম্পানি জনৈক ফরাসি ধর্মযাজক তার
কৃত অপরাধের জন্য চীন সরকার মৃত্যুদন্ড প্রদান করলে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স যৌথভাবে চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
ঘোষণা করে। এটাকে চীনের ইতিহাসে দ্বিতীয় চীন যুদ্ধ নামে অভিহিত করা হয়। এই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি
ঘটে তিয়েন সিয়েন সন্ধির মাধ্যমে। সন্ধির শর্তানুসারে সমুদ্র উপকুলবর্তী এগারোটি চীনা বন্দরে ইংরেজ
ও ফরাসি শক্তির প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
সাম্রাজ্যবাদী যুগে শিল্পোন্নত ইউরোপীয় দেশসমূহ চীন দখলের জন্য প্রতিযোগিতায় নেমে যায়। ১৮৭৬
সালে ইংল্যান্ড চীনের চারটি বন্দর দখল করে নেয়। একই সঙ্গে দখল করে নেয় ইয়ং উপত্যকা। ১৮৯৭

সালে জার্মানি চীনের নিকট থেকে জোরপূর্বক কিয়াওচাও বন্দর দখল করে নেয়। এই সময়ে ফ্রান্স
আনাম ও টঙ্কিন অঞ্চলে তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। টঙ্কিন থেকে ইউনান প্রদেশ পর্যন্তদীর্ঘ রেলপথ
স্থাপনের অধিকার আদায় করে নেয়। এইভাবে উনিশ শতকের শেষপাদ নাগাদ চীন দখলের জন্য যখন
ইউরোপীয় ধনবাদী শক্তিগুলির মাঝে প্রবল প্রতিদ্ব›িদ্বতা চলছে এবং চীনকে খন্ড বিখন্ড করার
ইউরোপীয়দের পরিকল্পনা চূড়ান্তপর্যায়ে তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনে বাণিজ্যের ব্যাপারে দৃষ্টি নিক্ষেপ
করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ও ব্যবসায়ী মহল বিশাল চীন সাম্রাজ্যের বণ্টন ও খন্ড বিখন্ড হয়ে
যাওয়ার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। কারণ এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এশীয় বাণিজ্যে সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা
ছিল। এই পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব জন হে চীনের রাষ্ট্রীয় অখন্ডতা বজায় রাখা
এবং সমগ্র চীন অঞ্চলে পশ্চিমা ধনবাদী দেশ সমূহের বাণিজ্যের সমঅধিকার সম্বলিত একটি প্রস্তাব
উত্থাপন করেন। এই প্রস্তাব ফ্রান্স, বৃটেন, স্পেন, ইতালি, পর্তুগালসহ সকল দেশ মেনে নেয়। জন হে
প্রস্তাবিত এই পরিকল্পনাকে চীনে ‘উন্মুক্ত দ্বার নীতি’ হিসেবে ইতিহাসে অভিহিত করা হয়। ১৯০১ সালে
গৃহীত চীনে উন্মুক্ত দ্বার নীতির মূল লক্ষ্যসমূহ ছিল নি¤œরূপ :
প্রথমত, এই নীতির আওতায় প্রত্যেকটি পশ্চিমা পুঁজিবাদী দেশকে চীনের অখন্ডতা এবং স্বাধীনতা মেনে
নিতে হবে;
দ্বিতীয়ত: চীনে বাণিজ্য পরিচালনায় আগ্রহী কিংবা বাণিজ্যরত দেশ ও কোম্পানিসমূহের কাছ থেকে
বাণিজ্য শুল্ক আদায় করবে চীন সরকার। বাণিজ্যরত কোম্পানি ও দেশ এই নীতি মেনে চলতে বাধ্য
থাকবে;
তৃতীয়ত, চীনে সকল পশ্চিমা দেশ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সমান অধিকার ভোগ করবে এবং বাণিজ্যের একই
নীতি অনুসরণ করবে;
চতুর্থত, চীন সরকার সকল দেশ ও বাণিজ্যিক কোম্পানিসমূহের জন্য সমানুপাতিক হারে শুল্ক ধার্য
করবে এক শুল্ক আদায়ে সকলের প্রতি একই নীতি অনুসরণ করবে;
পঞ্চমত, বাণিজ্য পরিচালনা করতে গিয়ে চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করা যাবে
না। একই সঙ্গে খ্রিস্টান মিশনারিদের তৎপরতাকেও প্রবলভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়;
এই উন্মুক্ত দ্বার নীতি কার্যকরী হওয়ার পটভূমিতে চীনের অখন্ডতা বজায় থাকে। কিন্তু চীন
সাম্রাজ্যবাদের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়। সকল প্রকার শিল্প বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ চলে যায়
পুঁজিবাদী দেশগুলির হাতে। ফলে চীনের স্বাধীনতা বলতে কিছুই অবশিষ্ট থাকেনি।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সাম্রাজ্যবাদ
সাম্রাজ্যবদী যুগে ইউরোপের পুঁজিবাদী দেশগুলির পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল দখলের তালিকায় দক্ষিণ
এশিয়া ও চীনের পরেই ছিল দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার তথা প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলের স্থান। শিল্পের
কাঁচামাল সমৃদ্ধ এই পুরো অঞ্চলের অবস্থান হলো সাগরতীরে। বিশেষত সুয়েজ খাল খননের পরে এই
অঞ্চলের সাথে ইউরোপের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়। চীনদেশের সাথে
সামঞ্জস্যপূর্ণ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল এবং জনসংখ্যার ঘনত্বের কারণে সস্তা শ্রম
সাম্রাজ্যবাদীদের আকর্ষণ করে। প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন যে সাম্রাজ্যবাদীদের যুগ শুরু হওয়ার বহু পূর্ব
থেকেই সমগ্র দক্ষিণ পূর্ব-এশিয়া অঞ্চলে পশ্চিম ইউরোপীয় ধনী দেশগুলির এক প্রকার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত
হয়েছিল। ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা প্রথমে পতুর্গিজ ও ওলন্দাজদের দখলে থাকলেও নতুন
সাম্রাজ্যবাদী যুগে শ্রীলঙ্কা দখল করে ইংরেজ শক্তি। ইংরেজ শক্তি তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থে শ্রীলঙ্কার
বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চা উৎপাদন শুরু করে। ক্রমে চা উৎপাদনে শ্রীলঙ্কা পৃথিবীতে অন্যতম শীর্ষস্থান
অধিকার করে। আঠারো শতকে মালয়েশিয়াতে পর্তুগিজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হলেও প্রতিযোগিতায় এরা
ইংরেজদের কাছে হেরে যায়। সাম্রাজ্যবাদী যুগে ইংরেজ শক্তি মালয়েশিয়া দখল করে। ফলে দূরপ্রাচ্যের
ব্যবসা-বাণিজ্যের উপর ইংরেজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৭০ সালে ওলন্দাজরা জাভা দ্বীপপুঞ্জ দখল

করে। ১৮৮৬ সালে ইংরেজ শক্তি বার্মা দখল করে ভারতের সাথে সংযুক্ত করে। থাইল্যান্ড ও
আশেপাশের অঞ্চলে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে ফ্রান্স। এই সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্পেনকে বিতাড়িত করে
ফিলিপাইন দখল করে নেয়।
সাম্রাজ্যবাদের ফলাফল
উনিশ শতকের সত্তরের দশক থেকে সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভব ও বিস্তার পৃথিবীর ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ
অধ্যায়ের সূচনা ঘটায়। পূর্ববর্তী ঔপনিবেশিক যুগের সাথে এই সাম্রাজ্যবাদী যুগের বেশ পার্থক্য ছিল।
তবে পাশ্চাত্য শক্তির শোষণের ধারাবাহিকতা অব্যাহত ছিল। সাম্রাজ্যবাদ বিস্তারের ফলাফল
ছিল নি¤œরূপ :
প্রথমত, সাম্রাজ্যবাদী যুগে ইউরোপের পুঁজিপতিরা আরও অধিক মুনাফার জন্য দখলকৃত বা সাম্রাজ্যভূক্ত
অঞ্চলসমূহে কিছু কিছু শিল্প স্থাপন করে। এর ভেতর দিয়ে এশিয়ার ইতিহাসে আধুনিক শিল্পের যাত্রা শুরু
হয়। এইক্ষেত্রে ভারতে পাট ও বস্ত্রশিল্পের কথা উল্লেখ করা যায়।
দ্বিতীয়ত, সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রধান লক্ষ্য ছিল তাদের শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহ ত্বরান্বিত করা। এই
শিল্পের প্রয়োজনে কাঁচামাল সরবরাহের গতিকে দ্রæততর করার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটায়।
দেশের প্রত্যন্তঅঞ্চলের সাথে বন্দরসমূহকে সম্পৃক্ত করে রেললাইন স্থাপন করা হয়। ফলে এশিয়ার
বিভিন্ন দেশে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার বিকাশ ঘটে। এই ক্ষেত্রে ভারতবর্ষ, চীন, বার্মা, জাভা,
মালয়েশিয়া ও চীনের উদাহরণ দেয়া যায়।
তৃতীয়ত, সাম্রাজ্যবাদী শক্তি তাদের দখলকৃত ও সাম্রাজ্যভূক্ত অঞ্চলে প্রশাসন পরিচালনার জন্য
প্রয়োজনীয় শিক্ষিত জনবল ছিল না। এই জনবলের জন্য তাদেরকে নির্ভর করতে হয় দখলকৃত
অঞ্চলের উপর। তাদের প্রয়োজনীয় জনবল সৃষ্টির জন্য পশ্চিমা দেশগুলি আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা
স্কুল, কলেজ গড়ে তোলে। এভাবেই এশিয়ার ইতিহাসে শুরু হয় আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার অভিযাত্রা।
সৃষ্টি হয় সাম্রাজ্যবাদ নির্ভর আধুনিক শিক্ষিত শ্রেণীর। ক্রমে এই শ্রেণীই সাম্রাজ্যবাদের রক্ষক হয়ে
দাঁড়ায়।
চতুর্থত, সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি শিল্পের কাঁচামাল ও খাদ্যশস্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে গিয়ে তাদের
প্রয়োজনে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে কৃষির বিকাশ ঘটায়। বিশেষত এশিয়ার বিভিন্ন দেশে তুলা, রাবার,
মসলা, চা, পাট উৎপাদন এবং আধুনিক বনায়ন তাদের কৃষি নীতিরই ফলশ্রæতি।
পঞ্চমত, পরিশেষে বলা যায় যে এশিয়া অঞ্চল ইউরোপীয় শক্তির সাম্রাজ্যবাদ বিস্তারের পটভূমিতে
ইউরোপের আধুনিক শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে। আধুনিক বিচার ও প্রশাসন ব্যবস্থার যাত্রা শুরু
হয়। যোগাযোগ ও শিল্পক্ষেত্রে আধুনিকতার সূচনা ঘটে। শিক্ষিত শ্রেণীর একাংশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির
অনুগত হলেও অন্য অংশ বিদেশী শাসনের অবসানকল্পে উদ্যোগী হয়ে উঠে। এই পটভূমিতে
সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আধুনিক জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের উন্মেষ ও বিকাশ ঘটে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের
পর সারা এশিয়া অঞ্চলে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন উত্তাল আকার ধারন করে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
১। সাম্রাজ্যবাদের সময়কাল চিহ্নিত করা হয়
(ক) ১৮৫০ সাল থেকে (খ) ১৮৭০ সাল থেকে
(গ) ১৯০৫ সাল থেকে (ঘ) ১৯৪৫ সাল থেকে


২। পর্তুগাল ব্রাজিলের উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার করে
(ক) ১৮০১ সালে (খ) ১৮২২ সালে
(গ) ১৮৫০ সালে (ঘ) ১৮৭০ সালে
৩। কর্ণাটকের তৃতীয় যুদ্ধ সংঘটিত হয়
(ক) ১৭৩২ সালে (খ) ১৭৫৭ সালে
(গ) ১৭৬৩ সালে (ঘ) ১৭৬৪ সালে
৪। চীনে উন্মুক্ত দ্বার নীতি প্রস্তাব করেন
(ক) জন এডওয়ার্ড (খ) জন হে
(গ) জন ফস্টার (ঘ) জন কলিন্স
৫। ইংরেজ শক্তি বার্মা দখল করে
(ক) ১৮৫০ সালে (খ) ১৮৭৬ সালে
(গ) ১৮৮৬ সালে (ঘ) ১৮৯০ সালে
উত্তর : ১। খ ২।খ ৩।গ ৪।খ ৫।গ
রচনামূলক প্রশ্ন
১। সাম্রাজ্যবাদ উদ্ভবের পটভূমি আলোচনা কর। সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে হবসন ও লেনিনের তত্ত¡ ব্যাখ্যা
কর।
২। সাম্রাজ্যবাদ বিস্তারের কারণসমূহ বিশ্লেষণ কর।
৩। ভারত ও চীনে সাম্রাজ্যবাদ বিস্তারের বিবরণ দাও।
৪। সাম্রাজ্যবাদের ফলাফল আলোচনা কর।
৫। চীনে উন্মুক্ত দ্বার নীতি আলোচনা কর।
সংক্ষেপে উত্তর দাও
(ক) সাম্রাজ্যবাদ বলতে কি বোঝায়?
(খ) সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে লেনিনের তত্ত¡টি কি?
(গ) ইউরোপে শিল্প সংরক্ষণ নীতির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় কি ছিল?
(ঘ) উন্মুক্ত দ্বার নীতি কি?
(ঙ) দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহ কি কি?

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]