উনিশ শতকে রুশ সাম্রাজ্য গঠিত হয়ে ছিল ইউরোপ মহাদেশের প্রায় অর্ধেক এলাকা এবং এশিয়ার এক
বিশাল অংশ নিয়ে। এই বিশাল ভূখন্ডে ছিল বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠী এবং বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ধর্মাবলম্বী
মানুষের বসবাস। মধ্য এশিয়া থেকে সাইবেরিয়া পর্যন্তবিস্তীর্ণ ভূভাগের অধিবাসীগণ ছিল মোঙ্গলীয় জাতি
গোষ্ঠীভুক্ত। এদের অধিকাংশই বৌদ্ধ ও ইসলাম ধর্মের অনুসারী। দক্ষিণের ক্রিমিয়া ও মধ্য এশিয়ার
সান্নিহিত বিশাল অঞ্চলে তাতার জাতির বসবাস। এরা ইসলাম ধর্মাবলম্বী। আর রুশ জনগোষ্ঠী শ্লাভ
জাতির অন্তর্ভূক্ত। ধর্মের দিক থেকে এদের অধিকাংশই গ্রিক চার্চের অনুসারী। লিথুনিয়া ও ইউক্রেন
অঞ্চলে পোলদের বসবাস। পোল্যান্ড তাদের আদি নিবাস হলেও এরা রুশদের সমগোত্রীয় এবং রোমান
ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বী। বাল্টিক অঞ্চলের অধিবাসীরা প্রোটেস্টান্ট। উনিশ শতকে রাশিয়ার সমাজে
প্রধানত, দুটি শ্রেণী ছিল। অভিজাত শ্রেণী এবং ভূমিদাস। অভিজাত শ্রেণী ছিল রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার
অধিকারী এবং রাষ্ট্রের সমুদয় সম্পদের মালিক। ভূমিদাসদের নিয়ন্ত্রণের জন্য গঠন করা হয় গ্রামিন সংস্থা
‘মির’। তাদের বসবাস করতে হতো বহুমুখী বিধিনিষেধ এবং প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে। বস্তুত রাশিয়ায়
ভূমিদাসরা ছিল জামিদার তথা মালিকদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি। রাশিয়ার শাসন ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্র
পরিচালনার কেন্দ্রস্থলে ছিল সম্রাট বা জার। জারের স্বৈরতন্ত্র বা স্বেচ্ছাতন্ত্রই ছিল সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রচলিত
আইন। সমগ্র সাম্রাজ্য কয়েকটি প্রদেশে বিভক্ত ছিল। এই প্রদেশের শাসন পরিচালনার জন্য থাকতো
একজন গভর্নর এবং একটি কাউন্সিল। এই দুটোকেই নিয়োগ করতো স্বয়ং জার। আর এই সকল পদে
নিয়োগ লাভ করতো অভিজাত পরিবারের সদস্যরা। জারের ক্ষমতা নিরঙ্কুশ এবং যে কোনো বিদ্রোহ
দমনের জন্য ছিল প্রোটিরিয়ান গার্ড বা জারের পুলিশ বাহিনী। ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায়
রাশিয়ার সাধারণ মানুষ ছিল অনেক বেশি অত্যাচারিত এবং অবদমিত। বিশাল ভৌগোলিক সীমানায়
বিস্তৃত হলেও রাশিয়া মূলত একটি স্থলবেষ্টিত দেশ। সরাসরি জলপথ সংলগ্ন হলো উত্তর মহাসাগর। এই
জলপথ প্রায় সারা বছর বরফাচ্ছাদিত ও নৌ চলাচলের অযোগ্য থাকে। আঠারো শতকের মাঝামাঝি
থেকে রাশিয়ার নেতৃত্বদুটি জলপথে রাশিয়ার প্রাধান্য বিস্তারের চেষ্টা চালায়। প্রথমটি হলো কৃষ্ণসাগর
থেকে দার্দানেলিস প্রণালীর ভেতর দিয়ে ভূমধ্যসাগরে প্রবেশ করানো। দার্দানেলিস প্রণালী তুরস্কের
দখলে থাকায় তুরস্ককে পরাভূত না করে ভূমধ্যসাগরে প্রবেশের কোনো সুযোগ রাশিয়ার ছিল না।
দ্বিতীয়টি হলো মধ্য এশিয়া অঞ্চল দখল করে ইরানের ভেতর দিয়ে পারস্য উপসাগরে প্রবেশ করা এবং
ভারত মহাসাগরের জলপথের সাথে সংযোগ সাধন করা। দক্ষিণের সাগর পথে যে কোনো মূল্যে
রাশিয়ার পথ তৈরির এই প্রয়াসকে ‘উষ্ণ পানির নীতি’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। অটোমান তুর্কি
সাম্রাজের উপর রাশিয়ার এই জোরপূর্বক দখল প্রয়াস উনিশ শতকে প্রাচ্য সমস্যার সৃষ্টি করেছিল।
রাশিয়ার ইতিহাসের এই সামাজিক, অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক অবস্থানের পটভূমি, জার প্রথম
আলেকজান্ডার এবং জার প্রথম নিকোলাসের শাসনামল মূল্যায়নের ক্ষেত্রে অবশ্যই মনে রাখতে হবে।
জার প্রথম আলেকজান্ডার : ১৮০১-১৮২৫ খ্রি:
জার প্রথম আলেকজান্ডার ১৮০১ সালে রাশিয়ার সিংহাসনে আরোহণ করেন। রাজপরিবারের
উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি রাজনৈতিক স্বৈরতন্ত্র ও স্বেচ্ছাতন্ত্র লাভ করেন। শিক্ষা জীবনে তিনি ছিলেন
সুইজারল্যান্ডের বংশোদ্ভুত শিক্ষক লা হরপ-এর ছাত্র। লা হরপ ছিলেন ফরাসি দার্শনিক রুশোর
মতাদর্শে গভীরভাবে বিশ্বাসী ও আস্থাশীল। তিনি ছিলেন ফরাসি বিপ্লবের আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং
উদারনৈতিক চিন্তার ধারক বাহক ও প্রচারক। শিক্ষক লা হরপের প্রভাবে জার প্রথম আলেকজান্ডার
উদারনৈতিক ধারায় দীক্ষিত হন। রাশিয়ার ইতিহাসে তিনি একজন উদারনৈতিক শাসক হিসেবে
বিবেচিত ছিল। উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই তিনি ইউরোপের রাজনীতিতে সমাদৃত হন।
নেপোলিয়ন বোনাপার্টের পরে ইউরোপের রাজনীতি ও নিরাপত্তাকে পুনর্গঠন ও সংহতকরণের ক্ষেত্রে
জার প্রথম আলেকজান্ডার পালন করেন এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ফলে এই সময় থেকে ইউরোপের
রাজনীতিতে রাশিয়ার গুরুত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকে।
প্রথম আলেকজান্ডারের গৃহীত উদার নীতি
জার প্রথম আলেকজান্ডারের গৃহীত উদারনীতিকে প্রধানত, দুই ভাগে বিভক্ত করা যায়। প্রথমত,
অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে গৃহীত উদারনীতি; এবং দ্বিতীয়ত, পররাষ্ট নীতির ক্ষেত্রে গৃহীত উদার নীতি।
অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে গৃহীত উদারনীতি সমূহ হলো নি¤œরূপ :
প্রথমত, ভূমিদাসদের মুক্ত করার পদক্ষেপ। রাশিয়ার সার্ফ বা ভূমিদাসদের অবস্থা ইউরোপের অন্যান্য
দেশের ভূমিদাসদের তুলনায় খারাপ ছিল। অবশ্য এটা বলা প্রয়োজন যে তখনো পর্যন্তরাশিয়া
ইউরোপের বিশেষত পশ্চিম ইউরোপের তুলনায় পিছিয়ে পড়া একটি দেশ ছিল। রাশিয়াতে ভূমিদাসরা
ছিল প্রকৃত অর্থেই ক্রীতদাস। ১৮১৫ সাল থেকে তিনি ভূমিদাসদের মুক্ত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
কয়েকটি প্রদেশে ভূমিদাসদের মুক্তি প্রদান করা হয়। ১৮১৮ সালে গৃহীত এক সরকারি পরিকল্পনার
অংশ হিসেবে সামন্তজমিদারদের অনেক গুলি জামিদারি সরকারি অর্থে ক্রয় করে ভূমিদাসদের মুক্ত
করার ব্যবস্থা করা হয়। একইসঙ্গে রাশিয়ার বৃহৎ সামন্তজমিদারিগুলিতে মাসের সুনির্দিষ্ট কয়েকটি দিন
ছাড়া ভূমিদাসদের বেগার খাটা বন্ধ করে দেয়া হয়। একইসঙ্গে বাল্টিক ও পোল্যান্ড অঞ্চলে ভূমিদাসদের
জমি চাষ এবং ফসল বিক্রয় করার অধিকার দেয়া হয়। জার প্রথম আলেকজান্ডারের গৃহীত এই
পদক্ষেপকে সময়ের আলোকে বৈপ্লবিক পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করা যায়।
দ্বিতীয়ত, ১৮১০ সালের পর থেকে তিনি দেশের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তথা গির্জাগুলিকে সংস্কারের পদক্ষেপ
গ্রহণ করেন। ১৮১২ সালে সরকারিভাবে ঘোষিত হয় বাইবেল সোসাইটি প্রতিষ্ঠার কথা। এর পরপরই
কেন্দ্র ও প্রদেশে বাইবেল সোসাইটি গঠিত হয়। এই সোসাইটির মূল লক্ষ্য ছিল সারা দেশে বাইবেলের
বাণী প্রচার এবং বাইবেল পাঠে সাধারণ মানুষকে উৎসাহিত করা। ১৮১৪ সালে সারা দেশের যাজকদের
বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করে সরকারিভাবে তাদের বেতন প্রদানের সিদ্ধান্তগৃহীত হয়। রাশিয়ার বিভিন্ন
স্থানে, বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা গির্জাসমূহের কর্মকান্ড সঠিকভাবে পরিচালনা ও তদারকির জন্য গঠন
করা হয় গির্জা সংক্রান্তসরকারি দপ্তর।
তৃতীয়ত, উনিশ শতকের শুরু পর্যন্তরাশিয়া পশ্চিম ইউরোপের তুলনায় শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে পিছিয়ে
ছিল। ১৮০১ সালে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার জন্য জার প্রথম আলেকজান্ডার পদক্ষেপ
গ্রহণ করেন। এই পরিবর্তনের মূল লক্ষ্য ছিল বৃটেনের অনুকরণে দেশে উদারনৈতিক শিক্ষা ব্যবস্থার
প্রচলন করা। দেশের সমগ্র শিক্ষা কাঠামো, পাঠক্রম, শিক্ষা ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৮১৯
সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সেন্ট পিটার্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়। একই সঙ্গে দেশে গির্জাসমূহের ব্যবস্থাপনার
বিষয়টিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়।
পররাষ্ট্রনীতি
জার প্রথম আলেকজান্ডার অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে উদারনীতিকে যতটা প্রয়োগ করতে পেরেছিলেন
পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে পরিস্থিতির বাস্তবতায় ততটা সক্ষম হয় নি। তিনি ছিলেন সাম্রাজ্য বিস্তারে বিশ্বাসী।
সাম্রাজ্যবাদ আর উদারনীতি ইতিহাসের দুটি পরস্পর বিপরীত মুখী প্রক্রিয়া। তবুও জার প্রথম
আলেকজান্ডারের পররাষ্ট্রনীতিতে উদারনীতির একটি ছাপ লক্ষ্য করা যায়। তিনি ফিনল্যান্ড দখল করে
সেখানে উদারনৈতিক শাসনতন্ত্র প্রবর্তন করেন। ঐতিহাসিক ভিয়েনা কংগ্রেসে তিনি উদারনীতির সমর্থক
ছিলেন। জার প্রথম আলেকজান্ডার ইতালি, ফ্রান্স ও জার্মানিতে উদারনৈতিক ধারায় শাসনতান্ত্রিক
পরিবর্তনের পক্ষে জোর তৎপরতা চালান। কিন্তু তার এই উদারনৈতিক চিন্তা স্বত:স্ফূর্ত ছিল না। উপরন্তু
তিনি তুর্কি সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চল দখলে প্রয়াসী ছিলেন। আবার জার্মানি ও স্পেনে জনগণের
আন্দোলন দমনে শাসনমহলকে ইন্ধন যোগান। এই পরস্পর বিরোধী নীতির কারণে জার প্রথম
আলেকজান্ডারের পররাষ্ট্র নীতি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
জার আলেকজান্ডারের উদারনীতির ব্যর্থতার কারণ
জার প্রথম আলেকজান্ডার দেশের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে বহুমুখী উদারনৈতিক সংস্কার পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও
তার গৃহীত নীতি কোনো ইতিবাচক ফল প্রদান করতে পারেনি। এমনকি ইউরোপের রাজনীতিতে তিনি
যে উদারনৈতিক পন্থা অবলম্বন করেছিলেন সেটা ধরে রাখতে পারেননি। এইজন্য রাশিয়ার ইতিহাসে
জার প্রথম আলেকজান্ডারকে একজন ব্যর্থ শাসক হিসেবে অভিহিত করা হয়। তার নীতির ব্যর্থতার
কারণে রাশিয়ায় গুপ্ত সমিতির জন্ম হয় এবং সমাজে অস্থিরতা দেখা দেয়। তার গৃহীত উদারনীতির
ব্যর্থতার কারণ সমূহ নি¤œরূপ:
(ক) জার প্রথম আলেকজান্ডার কর্তৃক গৃহীত উদারনীতি রাশিয়ার শাসক ও অভিজাত মহলে গৃহীত
হয়নি। বিশেষত ভূমিদাসদের মুক্ত করে দেয়ার বিষয়টি রাজপরিবারের সদস্যবর্গ এবং ক্ষমতা বলয়ের
সাথে যুক্ত অভিজাত সমাজ মেনে নিতে পারেনি।
(খ) তার নীতির ব্যর্থতার একটি অন্যতম প্রধান কারণ হলো ব্যক্তিগত চারিত্রিক দুর্বলতা এবং দূরদৃষ্টির
অভাব। তিনি উদারনীতি প্রয়োগে কঠোর ও বস্তুনিষ্ঠ হতে পারেননি। অন্যদিকে রাজপরিবারের সকলকে
এবং দেশের সামন্তঅভিজাতমহলকে বিষয়টির সাথে সম্পৃক্ত করতে পারেননি। বস্তুত উদারনীতির
বাস্তবায়নের জন্য দেশের বিদ্যমান স্বৈরতান্ত্রিক রাজতন্ত্র এবং অত্যাচারী সামন্ততন্ত্রের সংস্কার ছিল
অপরিহার্য পূর্বশর্ত। কেননা তৎকালীন রাশিয়ার সমাজ ব্যবস্থায় এই দুই প্রভাবশালী শ্রেণীর সহযোগিতা
ছাড়া কোনো জন কল্যাণমুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব ছিল না।
(গ) জার প্রথম আলেকজান্ডারের নীতি ও আদর্শে পরস্পর বিপরীতমুখিনতা লক্ষ্য করা যায়। একদিকে
তিনি ছিলেন ইউরোপের রাজনীতিতে উদার রাজনীতির ধারক এবং একইসঙ্গে তিনি ছিলেন সাম্রাজ্যবাদী
শাসক। তিনি জোরপূর্বক ফিনল্যান্ড দখল করেন। আবার ফ্রান্স ও বৃটেনের সঙ্গে একজোট হয়ে বিশাল
তুর্কি সাম্রাজ্য দখল করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন যে উনিশ শতকে বিশাল
অটোমান তুর্কি সাম্রাজ্যকে নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করার প্রশ্নে ইউরোপীয় শক্তিবর্গের মধ্যে যে
সংঘাত দেখা দেয় এটাই প্রাচ্য সমস্যা নামে পরিচিত। এই প্রাচ্য সমস্যা সৃষ্টিতে অর্থাৎ তুরস্ক সাম্রাজ্যকে
দখল করে নেয়ার ক্ষেত্রে রাশিয়া ছিল অগ্রগামী। তুরস্ক সাম্রাজ্যের সাথে রাশিয়ার বিশাল সীমান্তথাকার
কারণে এই অঞ্চল দখলে রাশিয়া ছিল তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী অবস্থানে। পরিশেষে অটোমান তুর্কি
সাম্রাজ্যের বিশাল অংশ রাশিয়ার দখলে চলে যায়।
(ঘ) তিনি রাজত্বকালের শুরুতে ইতালি, ফ্রান্স ও জার্মানিতে শাসনাতান্ত্রিক পরিবর্তনকে স্বাগত
জানিয়েছিলেন। ১৮১৫ সালের পর থেকে জার প্রথম আলেকজান্ডার তার নীতি থেকে সরে আসতে শুরু
করেন। পশ্চিম ইউরোপের রাজনীতিতে শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তনের বিরোধিতা করতে থাকেন। ১৮২০
সালের দিকে জার্মান ও স্পেনের গণ আন্দোলনকে দমনের জন্য উৎসাহ প্রদান করেন। ইউরোপের
রাজনীতিতে তার এই স্ববিরোধী নীতি দেশের উদারপন্থীরা প্রবলভাবে বিরোধীতা করতে থাকে।
সামগ্রিক মূল্যায়নে বলা যায় যে জার প্রথম আলেকজান্ডার একজন কল্পনাবিলাসী এবং একজন পরস্পর
বিপরীত চরিত্রের শাসক ছিলেন। তিনি ছিলেন দুর্বলচিত্তের মানুষ। কল্যাণমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও
দুর্বল নীতির কারণে তার পরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়িত হয়নি এবং সমাজে কোনো প্রকার কল্যাণ বহন করে
আনতে পারেনি। পরস্পর বিপরীতমুখী নীতির কারণে ইউরোপের রাজনীতিতে রাশিয়ার অবস্থা দুর্বল
হয়ে যায়। ১৮২৫ সালে জার প্রথম আলেকজান্ডার মৃত্যুবরণ করেন।
জার প্রথম নিকোলাস : ১৮২৫-১৮৫৫
জার প্রথম আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর তার কনিষ্ঠপুত্র জার প্রথম নিকোলাস ১৮২৫ সালে রাশিয়ার
সিংহাসনে আরোহন করেন। রাজতন্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী জার প্রথম আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর প্রথম
পুত্র কনস্টান্টটাইনের সিংহাসনে আরোহনের কথা ছিল। কিন্তু জীবিতকালেই প্রথম আলেকজান্ডার
কনিষ্ঠপুত্র নিকোলাসকে সিংহাসনে আরোহনের জন্য মনোনীত করে যান। তার ইচ্ছানুযায়ী জার প্রথম
নিকোলাস রাশিয়ার সিংহাসনে আরোহন করেন। প্রথম জীবনে নিকোলাস ছিলেন সেনাবাহিনীতে। ফলে
সৈনিকসুলভ কঠোর নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলা, বাস্তবতাবোধ এবং দৃঢ়তা ইত্যাদি বিষয়গুলি ছিল তার
চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। একইসঙ্গে তিনি ছিলেন প্রচন্ড রক্ষণশীল, প্রতিক্রিয়াশীল এবং সঙ্কীর্ণমনা। এই
চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসমূহ নিকোলাসের শাসনকালকে প্রবলভাবে আন্দোলিত করেছিল। তিনি ছিলেন
একজন স্বৈরাচারী ও সাম্রাজ্যবাদী শাসক। তিনি রাশিয়ায় গণতান্ত্রিক এবং উদারনৈতিক ভাবধারার
বিকাশকে কঠোর হস্তেদমন করেন। একই সঙ্গে তিনি পশ্চিম ইউরোপের জ্ঞানবিজ্ঞান, দর্শন ও
চিন্তাধারার প্রসারকে বাধা প্রদান করেন এবং রাশিয়ায় পশ্চিম ইউরোপীয় ধাচের লেখাপড়া বন্ধ করে
দেন। ফলে স্বাভাবিকভাবে জার প্রথম নিকোলাসের আমলে রাশিয়ার জনগণের মধ্যে বিদ্রোহ দেখা
দেয়। এই বিদ্রোহ দমন এবং প্রতিক্রিয়াশীল নীতির বাস্তবায়নই ছিল তার অভ্যন্তরীণ নীতির মূল লক্ষ্য।
অভ্যন্তরীণ নীতি
একথা পূর্বেই আলোচিত হয়েছে যে জার প্রথম নিকোলাস পরিচালিত হয়েছিলেন চরম প্রতিক্রিয়াশীল
নীতির দ্বারা। ফলে তার অভ্যন্তরীণ নীতিই ছিল দমন, পীড়ন, নির্যাতন এবং মানুষ ও সমাজকে
অবদমিত করে রাখা। তার অভ্যন্তরীণ নীতির প্রধান দিকসমূহ এখানে বর্ণিত হলো :
(ক) সেনা বিদ্রোহ দমন
জার প্রথম নিকোলাসের পিতা জার প্রথম আলেকজান্ডার কর্তৃক গৃহীত সামাজিক উদারনীতি এবং
গণতান্ত্রিক পন্থা বাতিল এবং চরম স্বৈরাচারী দমননীতির বিরুদ্ধে রাশিয়ার সর্বত্র বিক্ষোভ, অসন্তোষ এবং
আন্দোলন দানা বেঁধে উঠে। ১৮২৫ সালের ডিসেম্বর মসে পেত্রোগ্রাডে নিকোলাসের বিরুদ্ধে এক
সামরিক অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। তিনি এই সেনা বিদ্রোহ কঠোর হস্তেদমন করেন। বিদ্রোহী ইউনিটের
সেনাদের সকলকে হত্যা করা হয়। মূলত এটি ছিল একটি বিচ্ছিন্ন সেনা বিদ্রোহ। সেনাবাহিনীর অন্যান্য
ইউনিট তাদের সমর্থনে এগিয়ে আসেনি। উপরন্তু এই সামরিক অভ্যুত্থান ছিল দুর্বল এবং দেশের
নিয়ন্ত্রণভারে গ্রহণ করার মত শক্তি তাদের ছিল না। এই সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতি দু একটি গুপ্ত
সমিতির সমর্থন থাকলেও সাধারণ মানুষের সমর্থন ছিল না। ফলে খুব সহজেই জার প্রথম নিকোলাস
এ্ই সেনা অভ্যুত্থান দমন করতে সক্ষম হন। এই সেনা বিদ্রোহ, বিদ্রোহের প্রতি গুপ্ত সমিতির সমর্থন
ইত্যাদি থেকে এটা প্রমাণিত হয় যে রাশিয়ার রাজনীতিতে তখন এক অস্থির অবস্থা বিরাজ করছিল।
(খ) ডিকাব্রিস্তআন্দোলন দমন
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস - ২ পৃষ্ঠা-২০৫
১৮৩০ সালের দিকে ‘দক্ষিণী সমিতি’ নামের একটি গুপ্ত সংগঠন ব্যাপক গণ আন্দোলন গড়ে তোলে।
ডিসেম্বর মাসে শুরু হয়েছিল বলে এই আন্দোলনকে রাশিয়ার ইতিহাসে রুশ ভাষায় ডিসেম্বর মাসকে
ডিকাবর বলা হয়। যারা এই ডিসেম্বর বা ডিকাবর মাসে বিদ্রোহ করেছিলেন তাদেরকে ডিকাব্রিস্তবলা
হতো। ডিকাব্রিস্তআন্দোলন নামে অভিহিত করা হয়। গুপ্ত সংগঠন ‘দক্ষিণী সমিতি’ ছিল একটি জনপ্রিয়
গণসংগঠন। এই সংগঠনের কর্মসূচি ছিল সমাজে ভূমিদাসদের মুক্তি প্রদান, দেশে নিয়মাতান্ত্রিক সরকার
প্রতিষ্ঠা, আইনের চোখে সকলের সমতা আনয়ন, অভিজাত শোষণের অবসান প্রভৃতি। বস্তুত এই
সংগঠন পরিচালিত ছিল ফরাসি বিপ্লবের আদর্শে। এই সংগঠনের কর্মকান্ডের প্রতি যেমন জনগণের
সমর্থন ছিল এবং সমাজের শিক্ষিত তথা পন্ডিত, শিক্ষক, দার্শনিকদের সমর্থও ছিল। জার প্রথম
নিকোলাস এই ডিকাবিস্তআন্দোলনকে কঠোর ও নির্মমভাবে দমন করেন। তাদের বিদ্রোহের কারণ
অনুসন্ধানের জন্য একটি কমিশন গঠিত হয়েছিল। এই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত রাজনৈতিক নেতৃত্ব,
পন্ডিত, শিক্ষক ও দার্শনিকদের একটি অংশকে হত্যা করা হয় এবং অপর অংশকে সাইবেরিয়াতে
নির্বাসন দেয়া হয়। এর ফলে রাশিয়ার শিক্ষা ও সংস্কৃতির জগতে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছিল। ডিকাবিস্তদের
আন্দোলন ব্যর্থতার পর্যবসিত হলেও সংগ্রামে এর প্রভাব পড়েছিল অপরিসীম। বলা হয় যে ডিকাব্রিস্তদের
আন্দোলনের নেতৃত্বের আত্মত্যাগের মধ্যে রাশিয়ায় ভবিষ্যত সংগ্রামের বীজ নিহিত ছিল।
(গ) গোয়েন্দা বিভাগ সৃষ্টি
জার প্রথম নিকোলাস সরকার-বিরোধী আন্দোলন দমনের জন্য একটি গোয়েন্দা বিভাগ সৃষ্টি করেন। এই
গোয়েন্দা বিভাগের নাম ছিল থার্ড সেকশন। এই বিভাগ সারা দেশে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম
করেছিল। সমাজের পন্ডিত, দার্শনিক, শিক্ষক ও চিন্তাবিদদের জীবনকে এই সংস্থা দুর্বিসহ করে তোলে।
এই সংস্থার ব্যাপক অপতৎপরতার ফলে সমাজের অভ্যন্তরে বিশেষত প্রশাসন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এক
ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অনেক শিক্ষক, দার্শনিক, চিন্তাবিদ কর্মস্থল পরিত্যাগ করে গোপনে জীবন
যাপন করতে থাকেন। এর ফলে রাশিয়ার শিক্ষা ও সংস্কৃতির জগতে সৃষ্টি হয় এক শূন্যতা। এই সময়ে
জারের স্বৈর শাসনের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন প্রবলভাবে দানা বেধে উঠে।
(ঘ) ধর্মনীতি
জার প্রথম নিকোলাস ছিলেন গ্রিক চার্চের একনিষ্ঠ সমর্থক। তিনি রাশিয়ায় রোমান ক্যাথলিক এবং
প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মাবলম্বীদের ধর্মপালন ও জীবন যাপনে অনেক বিধি নিষেধ আরোপ করেন। তার গৃহীত
এই গোঁড়াপন্থী নীতির কারণে সমাজের বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী বা বিভিন্ন পথ অনুসারীদের মাঝে বিভেদ দেখা
যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবে সামাজিক ঐক্যে ফাটল ধরে এবং রাশিয়ার সমাজে অস্থিরতা দেখা দেয়।
ষোড়শ শতকে ইউরোপে ধর্ম সংস্থার আন্দোলন, ১৫৫৫ সালে সম্পাদিত অগসবার্গের শান্তিচুক্তি, সপ্তদশ
শতকের ত্রিশ বর্ষব্যাপী যুদ্ধ (১৬১৮-১৬৪৮) এবং ১৬৪৮সালে ওয়েস্টফেলিয়া শান্তিচুক্তি প্রভৃতি ঘটনা
প্রবাহের মধ্যে দিয়ে ইউরোপের সমাজে ধর্ম ও রাজনীতি সম্পূর্ণ আলাদা অবস্থানে চলে যায়। বস্তুত
১৬৪৮ সালের ওয়েস্টফেলিয়া শান্তিচুক্তির পর থেকে ইউরোপে ধর্ম ও রাজনীতি সম্পূর্ণ আলাদা
প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। বলা যেতে পারে আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ ব্যবস্থার উৎপত্তি ঘটে এখান
থেকেই। ইউরোপের ইতিহাসের দিকে আলোকপাত করলে দেখা যায় যে ওয়েস্টফেলিয়া শান্তিচুক্তির পর
ইউরোপে বড় ধরনের কোন ধর্মীয় সংঘাত দেখা যায়নি। কিন্তু জার প্রথম নিকোলাসের ধর্মনীতি ছিল
ওয়েস্টফেলিয়া শান্তিচুক্তির বিপরীত ধারায় প্রবাহিত। তার ধর্মনীতি সমাজে বিভেদ, সংঘাত ও সামাজিক
অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে।
(ঙ) অন্যান্য নীতি
নিকোলাস দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহকে সরাসরি সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনয়ন করেন। পশ্চিম ইউরোপ
তথা বৃটেন ও ফ্রান্সের উদারনৈতিক ধারার শিক্ষানীতি ও পদ্ধতি রাশিয়ায় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়।
তিনি রাশিয়ার নাগরিকদের পশ্চিম ইউরোপে যাতায়াত বা গমনাগমন বন্ধ করে দেন। সংবাদপত্রের
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস - ২ পৃষ্ঠা-২০৬
উপর প্রতিষ্ঠা করেন পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ। নিকোলাসের পিতা পোল্যান্ডে রাশিয়ার দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করে
একটি উদরনৈতিক ধারার শাসনতন্ত্র প্রদান করেছিলেন। তিনি এই শাসনতন্ত্র বাতিল করে পোল্যান্ডে
রাশিয়ার রক্ষনশীল কর্তৃত্ব দৃঢ়তর করেন।
জার প্রথম নিকোলাসের পররাষ্ট্র নীতি
জার প্রথম নিকোলাসের পররাষ্ট্রনীতি পরিচালিত হয়েছিল প্রধানত তুর্কি সাম্রাজ্য দখল এবং পশ্চিম
ইউরোপের উদারনীতিকে প্রতিহত করার লক্ষ্য নিয়ে। যদিও তিনি ইউরোপে রাশিয়ার সম্মান ও অবস্থান
দৃঢ় করার জন্য বেশ উৎসাহী ছিলেন কিন্তু তার গৃহীত প্রতিক্রিয়াশীল নীত এবং রক্ষণশীল অবস্থানের
কারণে এটা ফলপ্রসু হয়নি। দেশের অভ্যন্তরে উদারনৈতিক চিন্তাধারাকে কঠোরভাবে দমন করার কারণে
পশ্চিম ইউরোপের দেশ সমূহ কেবলমাত্র প্রচলিত কুটনৈতিক সম্পর্ক ছাড়া রাশিয়ার সাথে বিশেষ সম্পর্ক
স্থাপনে শিথীল মনোভাব প্রদর্শন করে। জার প্রথম নিকোলাসের পররাষ্ট্র নীতির প্রধান দিক সমূহ ছিল
নি¤œরূপ :
প্রথমত, নিকোলাসের প্রধান লক্ষ্য ছিল অটোমান তুর্কি সাম্রাজ্যকে ভাঙ্গনের মুখে ঠেলে দেয়া এবং
রাশিয়ার সীমান্তসংলগ্ন সমগ্র মধ্য এশিয়া অঞ্চল দখল করা। ১৮২১ সালে তুর্কি সাম্রাজ্যের দুর্বলতার
সুযোগে গ্রিকদের স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হলে রাশিয়া এতে পূর্ণভাবে সমর্থন জানায়। জার প্রথম
নিকোলাসের হস্তক্ষেপের ফলেই ১৮২৯ সালে গ্রিস স্বাধীনতা লাভ করে। ফলে পূর্ব ইউরোপে অটোমান
তুর্কিদের প্রভাব দুর্বল হয়ে পড়ে। আবার ১৮৩৩ সালে মিশরের শাসক মোহাম্মদ আলী পাশা তুর্কি
খলিফার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলে নিকোলাস তুর্কি খলিফাকে সমর্থন প্রদান করেন এবং সামরিক
সাহায্য প্রদান করে খলিফার আস্থা অর্জন করেন। এর বিনিময়ে ১৮৩৩ সালে রাশিয়া তুরস্কের কাছ
থেকে কৃষ্ণসাগরে প্রবেশের অধিকার লাভ করে। ক্রমে কৃষ্ণ সাগরে রাশিয়ার একাধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
এই ঘটনা থেকেই সূত্রপাত হয় ক্রিমিয়া যুদ্ধের।
দ্বিতীয়ত, জার প্রথম নিকোলাসের পররাষ্ট্র নীতির লক্ষ্য ছিল পশ্চিম ইউরোপ তথা সমগ্রইউরোপে
উদারনৈতিক রাজনীতি, সমাজনীতি, শিক্ষানীতি, গণতন্ত্র এবং ক্রম বিকশিত জাতীয়তাবাদকে ধ্বংস
করে ইউরোপের রাজনীতিতে স্বেচ্ছাতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করা। একইসঙ্গে তার দমননীতিকে
ইউরোপের সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়া। এই লক্ষ্যে নিকোলাস জার্মানির গণআন্দোলন দমন করতে সরাসরি
সাহায্য করেন। এই সময়ে সাহায্য করেন হাঙ্গেরিতে বিদ্রোহ দমনকল্পে অস্ট্রীয় সরকারকে। প্রথম
নিকোলাস ইউরোপে উদারনীতি প্রতিহতকরণের জন্য স্বৈরতান্ত্রিক সরকারগুলির একটি মৈত্রী জোট গড়ে
তুলতে প্রয়াসী হন। অবশ্য নিকোলাসের এই প্রয়াস সফল হয়নি।
জার প্রথম নিকোলাসের শাসনকাল পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করে বলা যায় যে তার শাসনামল এক চরম
দমন পীড়নের সময়কাল। হত্যা, খুন, নির্বাসন ইত্যাদির মাধ্যমে তিনি দেশে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম
করেন। এই চরম দমন নীতির কারণে রাশিয়াতে গুপ্ত সমিতির তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। সমাজে অরাজক
পরিস্থিতি বিরাজ করতে থাকে।
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস - ২ পৃষ্ঠা-২০৭
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
১। শ্লাভ জাতির লোকেরা ছিল
(ক) রোমান ক্যথলিক (খ) গ্রিক চার্চের অনুসারী
(গ) মুসলিম (ঘ) ইহুদি
২। তাতার জাতির ধর্ম ছিল
(ক) ইসলাম (খ) খ্রিস্টান
(গ) বৌদ্ধ (ঘ) হিন্দু
৩। মির ছিল একটি
(ক) শহরে সংগঠন (খ) প্রাচীন সংগঠন
(গ) শ্রমিক সংগঠন (ঘ) গুপ্ত সংগঠন
৪। জার প্রথম আলেকজান্ডার সিংহাসনে আরোহন করেন
(ক) ১৮০১ সালে (খ) ১৮১৫ সালে
(গ) ১৮২০ সালে (ঘ) ১৮২৫ সালে
৫। জার প্রথম আলেকজান্ডারের শিক্ষক লা হরপ ছিলেন
(ক) ইটালির অধিবাসী (খ) জার্মানির অধিবাসী
(গ) ফরাসির অধিবাসী (ঘ) সুইজারল্যান্ডের অধিবাসী
৬। সেন্ট পিটার্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়
(ক) ১৮০১ সালে (খ) ১৮১৫ সালে
(গ) ১৮১৯ সালে (ঘ) ১৮২৫ সালে
৭। জার প্রথম নিকোলাসের আমলে চেতনা বিদ্রোহ দেখা দেয়
(ক) মস্কোতে (খ) পেনোগ্রাদে
(গ) ত্রিমিয়াতে (ঘ) বাল্টিক অঞ্চলে
৮। দক্ষিনি সমিতি ছিল একটি
(ক) রাজনৈতিক দল (খ) গুপ্ত সংগঠন
(গ) ক্লাব (ঘ) সাংস্কৃতিক সংগঠন
৯। রাশিয়া তুরস্কের কাছ থেকে কৃষ্ণসাগরে প্রবেশের অধিকার পায়
(ক) ১৮২৫ সালে (খ) ১৮৩০ সালে
(গ) ১৮৩৩ সালে (ঘ) ১৮৪০ সালে।
উত্তর। ১।খ ২।ক ৩।ক ৪।ক ৫।ঘ ৬।গ ৭।গ ৮।খ
রচনামূলক প্রশ্ন
(১) জার প্রথম আলেকজান্ডারের উদারনৈতিক পদক্ষেপসমূহের বর্ণনা দিন।
(২) জার প্রথম আলেকজান্ডারের উদারনীতি ব্যর্থ হওয়ার কারণসমূহ আলোচনা করুন।
(৩) জার প্রথম নিকোলাসের অভ্যন্তরীণ নীতির প্রধান দিক সমূহ আলোচনা করুন।
(৪) জার প্রথম নিকোলাসের পররাষ্ট্র নীতির প্রধান দিকসমূহ বর্ণনা করুন।
(৫) জার প্রথম আলেকজান্ডার পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন তার বিবরণ
দিন।
(৬) জার প্রথম নিকোলাসের ধর্মনীতি আলোচনা করুন।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
(১) উষ্ণ জলীয় নীতি বলতে কি বোঝায়?
(২) ডিকাব্রিস্তআন্দোলন কি?
(৩) থার্ড সেকশন কি?
(৪) থার্ড সেকশনের কাজ কি ছিল?
(৫) জার প্রথম নিকোলাস গির্জাসমূহকে কোনো মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনয়ন করেন।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত