নতুন যগের সূচনা করে বলশেভিক বিপব। এই বিপব শুধ রাশিয়ার ইতিহাসে নয়, সমগ মানব সভ্যতার
ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক মাইল ফলক। এই বিপব সংগঠনে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল রাশিয়ার শ্রমিক শ্রেণী। রাশিয়ার শ্রমিক শ্রেণী, কষক সমাজ এবং সাধারণ মানুষ বিপবী মšে দীক্ষিত হয়েছিল
রাশিয়ান কমিউনিস্ট তথা ‘বলশেভিক’ পার্টির নেতৃত্বে। এই পার্টির মূলনায়ক ছিলেন ভ. ই. লেনিন বা
ভ াদিমির ইলিচ লেনিন। লেনিনের নেতৃতে সংঘটিত রাশিয়ার এই বিপব হলো পথিবীর প্রথম সফল সমাজতান্ত্রিক বিপব। বলশেভিক পার্টির নেতৃতে হয়েছিল বলে এই বিপবকে বলশেভিক বিপব নামে
অভিহিত করা হয়। আবার অক্টোবর মাসে হয়েছিল বলে এই বিপবকে অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপবও
বলা হয়ে থাকে। এই বিপবের মূল শক্তি ছিল শ্রমিক শ্রেণী। তাই চরিত্রগতভাবে এই বিপব হলো পলেতারিয়েত কমিউনিস্ট বিপব। ইতিপবে ১৭৮৯ সালের ফরাসি বিপব ছিল পথিবীর ইতিহাসে সফল বর্জোয়া বিপব। এই বিপবের মধ্য দিয়ে ইউরোপের সমাজ ও রাজনীতিতে সামš শাসন ও শোষণের
অবসান ঘটিয়ে বর্জোয়া যগের সূচনা করে। অন্যদিকে ১৯১৭ সালের বলশেভিক বিপব বর্জোয়া যগের
অবসান ঘটিয়ে শ্রমিক শ্রেণীর রাজত প্রতিষ্ঠা করে। বলশেভিক বিপবের প্রভাব, প্রতিক্রিয়া এবং ফলাফল রাশিয়াতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। এর প্রভাব অনভূত হয়েছিল আফ্রো-এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশে
দেশে। সারা পথিবীতে সমাজ পরিবর্তন ও বদলের লড়াইয়ে বলশেভিক বিপব এখনও পথিবীর দেশে
দেশে আদশ হিসেবে বিরাজমান। এই বিপব সারা পথিবীর মুক্তিকামী শোষিত, বঞ্চিত, অবহেলিত, নিপীড়িত মানুষকে পরো বিশ শতক ধরে মুক্তির দিক নির্দেশনা প্রদান করেছে এবং একবিংশ শতকেও
মুক্তির পথ দেখিয়ে চলেছে। প্রায় শতবষ পূতি হতে চললেও বলশেভিক বিপব এখনও পথিবীর মানষের
কাছে একটি জীবš ঘটনা হিসেবে বিরাজমান।
বলশেভিক বিপবের কারণসমূহ
বলশেভিক বিপবের মত বিশাল ঐতিহাসিক ঘটনার পটভূমি আকস্মিক ভাবে কিংবা স্বল্প সময়ের ভেতরে
তৈরি হয়নি। এই বিপবের সামাজিক পটভূমি তৈরি হয়েছিল উনিশ শতকে। বলা যায় ইউরোপে সমাজতন্ত্রবাদের উদ্ভব ও বিকাশ এবং রাশিয়াতে এই আন্দোলনের বি¯ততি বলশেভিক বিপবের পটভূমি প্র¯ত করেছিল। এই ঐতিহাসিক বিপবের কারণসমূহ হলো নি¤রূপ :
(ক) ইউরোপে সমাজতান্ত্রিক মতবাদের উদ্ভব ও বিকাশ
শিল্প বিপবোত্তর ইউরোপের সমাজ ও রাজনীতিতে বহুমুখী উত্থান পতনের ভেতরে পুঁজিপতিদের শোষণ, মানষের অধিকার প্রতিষ্ঠা, শ্রমিকদের কল্যাণ, দ্রæত শহরায়নের সমস্যাসমূহ মোকাবেলা প্রভতি বিষয়
প্রধান হয়ে উঠে। সমাজ পরিবর্তন, মানষের অধিকার রক্ষা, শ্রমিক শ্রেণীর কাজের সময়, বেতন ভাতা, ছুটি এবং সর্বোপরি পুঁজির শোষণের বিরুদ্ধে পশ্চিম ইউরোপে সামাজিক আন্দোলন দানা বেধে উঠে।
এই পটভূমিতে উৎপত্তি ঘটে সমাজতান্ত্রিক মতবাদের। ব্রিটিশ সমাজতন্ত্রী চার্লস ওয়েন, ফরাসি সমাজতন্ত্রী সেন্ট সাইমন, চার্লস ফুরিয়্যর, লুই বাঙ্ক, প্রæধোঁ, রাশিয়ার সমাজতন্ত্রী মিখাইল বাকুনিন,
ক্রপোৎকিন প্রমখে হাত ধরে উনিশ শতকেই সমাজতš একটি রাজনৈতিক মতাদশে পরিণত হয়। এই
সকল সমাজতন্ত্রী ইউরোপের সমাজ ও রাজনীতিতে সমাজতন্ত্রের পয়োজনীয়তা গভীরভাবে উপলব্ধি করলেও বিষয়টির পরিসর, রাজনীতির মতাদর্শের দিক থেকে এর পয়োগ, এই মতাদর্শের লক্ষ্য ও পরিসীমা নির্ধারণ করতে পারেননি। এই জন্য এই সকল সমাজতন্ত্রীকে কাল্পনিক সমাজতন্ত্রী বলা হয়ে
থাকে। এই সমাজতাšিক মতবাদের বা¯ব পরিপূণ রূপরেখা, যৌক্তিক পয়োগ পদ্ধতি এবং সমাজতš অজনের পথরেখা তলে ধরেন কাল মার্কস। এইজন্য মার্কসকে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের জনক বলা হয়। কাল মাকসের আদশ ও নির্দেশিত পথকে সামনে রেখে উনিশ শতকের শেষদিকে ইউরোপের দেশে
দেশে বিপবী কমিউনিস্ট ও সমাজতান্ত্রিক পাটি গড়ে উঠে। রাশিয়ার বলশেভিক পাটি কাল মাকসের নির্দেশিত আদর্শের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা একটি রাজনৈতিক দল। মহামতি লেনিন মাকসের
নির্দেশিত পথ ও আদশকে সজনশীলভাবে এগিয়ে নিয়ে যান এবং রাশিয়ায় বিপব সম্পন করেন। তাই বলা যায় যে বলশেভিক বিপব হলো উনিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে শুরু হওয়া সমাজ বদলের লড়াইয়ের চূড়াš পরিণতি।
(খ) রাশিয়ার সমাজ কাঠামোর অসারতা
আঠারো শতক থেকে ইউরোপের বিশেষত পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলিতে আথ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে বহুমুখী পরিবর্তন সাধিত হয়। পশ্চিম ইউরোপ হয়ে দাঁড়ায় আধুনিক শিক্ষা, সংস্কতি,
জীবনধারা, বিজ্ঞান ও পযুক্তি বিকাশের কেন্দ্র¯ল। ক্রমে এই দেশসমহে বিকশিত হয় আধুনিক
উদারনৈতিক চিšাধারা, গণতান্ত্রিক রাজনীতি, কল্যাণমুখী প্রশাসন এবং বিজ্ঞানভিত্তিক যুক্তিনির্ভর শিক্ষা ব্যব¯া। ইউরোপের এই সমাজ বিকাশের গতি থেকে রাশিয়া ছিল অনেক দূরে। উনিশ শতকেও রাশিয়াতে বিদ্যমান ছিল সামšবাদী আথ-সামাজিক কাঠামো। এই দুর্বল অসার সামš আথ-সামাজিক
ব্যব¯া রাশিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ছিল সম্পূণ অনুপযোগী। এই ব্যব¯ার কেন্দে ছিল জারের একনায়কতান্ত্রিক শাসন ব্যব¯া, শোষণ, নির্যাতন আর অত্যাচার। সামš সমাজ কাঠামো এবং রাশিয়ার সম্রাট জারের স্বৈরতান্ত্রিক নির্যাতন বলশেভিক বিপবের পথকে সুগম করেছিল।
(গ) জারতন্ত্রের অযোগ্যতা
রাশিয়ার বলশেভিক বিপবের পথকে এগিয়ে দিয়েছিল জারতন্ত্রের অযোগ্যতা। ১৮৫৪-৫৬ সালে ক্রিমিয়ার যদ্ধে রাশিয়ার পরাজয়, ১৯০৫ সালে জাপানের সাথে যদ্ধে রাশিয়ার পরাজয়, প্রথম বিশ্বযদ্ধে
রাশিয়ার সামরিক বিপর্যয় ইত্যাদি ঘটনাপ্রবাহ সাধারণ মানষের কাছে জারতন্ত্রের অযোগ্যতাকে
প্রকটভাবে তলে ধরেছিল। বিশেষত পশ্চিম ইউরোপে এমনকি এশিয়াতেও রাশিয়া একটি দুর্বল দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়। ফলে স্বাভাবিকভাবে রাশিয়ার মানুষ দুর্বল ও অযোগ্য জারতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে বিপবী বলশেভিকদের স্বাগত জানিয়েছিল।
(ঘ) চরম শ্রমিক অসšোষ ও শ্রমিক আন্দোলন
উনিশ শতকের সত্তরের দশকে রাশিয়ায় দ্রæত শিল্পায়ন ঘটে। সম্রাট দ্বিতীয় জার আলেকজান্ডারের শিল্পনীতি এই ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছিল। এই সময় পযš রাশিয়াতে ভূমিদাস শ্রেণী বহাল
ছিল। শিল্পায়নের সাথে সাথে এই ভূমিদাস বা সাফ শ্রেণী শ্রমিক শ্রেণীতে রূপাšরিত হয়। শ্রমিক শ্রেণীর
জীবনের মান ছিল খুবই নি¤। তাদের বেতন ভাতা এবং কাজের সময়ের কোনো সরকারি নীতিমালা ছিল না। ফলে রাশিয়ার শ্রমিক সমাজ ছিল চরমভাবে শোষিত এবং নির্যাতিত শ্রেণী। রাশিয়াতে শ্রমিক
ধর্মঘট এবং শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করা নিষিদ্ধ ছিল। এই পটভূমিতে সমাজতান্ত্রিক বা সাম্যবাদী মতাদশ এবং শ্রমিক শ্রেণীর রাষ্ট্রক্ষমতা দখল, পলেতারিয়েত সরকার প্রতিষ্ঠা, ভূমির উপর সামাজিক
মালিকানা আরোপ, কলকারখানা জাতীয়করণ প্রভতি বিষয়াবলী শ্রমিক শ্রেণীকে গভীরভাবে আন্দোলিত করে। মহামতি লেনিনের নেতত ও আদর্শের প্রতি শ্রমিক শ্রেণী সর্বাত্মকভাবে সমর্থন জানায়। লেনিনের
দীক্ষায় এই শ্রমিক শ্রেণী বিপবী শ্রেণীতে পরিণত হয় এবং বলশেভিক বিপবে মূল ভূমিকা পালন করে। তাই বলা যায় যে রাশিয়াতে শ্রমিক অসšোষ এবং শ্রমিক আন্দোলন বলশেভিক বিপবে পথ তৈরি করেছিল।
(ঙ) সাফ বা ভূমিদাস শ্রেণীর চরম অসšোষ
রাশিয়ার সমাজে ভূমিদাস শ্রেণীর দুদশা, তাদের উপর অত্যাচার, নির্যাতন ইত্যাদি ঘটনাপ্রবাহ সুদীঘ
সামাজিক অ¯িরতার কারণ হয়েছিল। জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার ভূমিদাস প্রথার বিলোপ সাধনের পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও তা ফলপ্রস হয়নি। এই পদক্ষেপের ফলে ভমিদাসরা সামš প্রভুর হাত থেকে গ্রামীণ সং¯া মির এর অধীনে ন্য¯ হয়েছিল মাত্র। তাদের বিদ্যমান আথ-সামাজিক অব¯ার কোনো
পরিবর্তন সাধিত হয়নি। পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলিতে সামšবাদের পতনের পটভূমিতে ভূমিদাস শ্রেণী
স্বাধীন কষকে পরিণত হয়েছিল। সমাজ পরিবর্তন এবং উন্নয়নে এর ফলাফল হয়েছিল অত্যš সুদূরপ্রসারী। রাশিয়ার সমাজে ভূমিদাস শ্রেণী কষকে পরিণত হতে পারেনি। এরা পরিণত হয়েছিল
ভূমিহীন শ্রেণীতে। ফলে রাশিয়াতে উনিশ শতকের শেষ এবং বিশ শতকের প্রথম দিকে একটি
শক্তিশালী মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উপ¯িতি লক্ষ্য করা যায় না। রাশিয়ার সমাজে বরাবরই দুটি শ্রেণী বিদ্যমান ছিল। একটি অভিজাত, অপরটি ভূমিহীন। উনিশ শতকের শেষদিকে রাশিয়ার একটি সামাজিক
পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে রাশিয়াতে প্রতি এক হাজার মানষের মধ্যে মাত্র সতেরো জন অভিজাত
শ্রেণীর, আর বাকি সকলেই ভুমিহীন। রাশিয়ার সকল জমিই ছিল রাজপরিবার এবং সামš অভিজাত
শ্রেণীর দখলে। তাই রাশিয়ার সমাজে ভূমিদাস বা ভূমিহীন শ্রেণীর সামাজিক অসšোষ, বিদ্রোহ ইত্যাদি
ছিল নৈমিত্তিক ব্যাপার। এই ভূমিহীন শ্রেণী বলশেভিক বিপবের পটভূমি প্র¯ত করেছিল।
(চ) লেখক দার্শনিকদের প্রভাব
১৭৮৯ সালের ফরাসি বিপবে ফরাসি কবি, লেখক, সাহিত্যিক, দার্শনিক ও অধ্যাপকেরা এক গুরুত্বপূণ
ভূমিকা পালন করেছিলেন। বলশেভিক বিপবের বেলায়ও এই বিষয়টি লক্ষ্য করা যায়। বলশেভিক
বিপবে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বি¯ার করেছিল জার্মান কালজয়ী দার্শনিক কাল মাকসের লেখনীমালা। রুশ সাহিত্যিক পুসকিন, লিও টলস্টয়, দ¯য়ভস্কি, ইভান তুগনেভ প্রমখের লেখায় জার শাসনের
স্বৈরাচারীতা, শোষণ, নির্যাতন আর অত্যাচারের চিত্র ফটে উঠেছিল। তাদের লেখনীমালা দেশের
সাধারণ মানষের মাঝে জার বিরোধী মনোভাবের সষ্টি করেছিল। সমকালীন বিটেন ও ফ্রান্সের কবি,
দার্শনিক, অধ্যাপক, পন্ডিতদের লেখা রাশিয়ার উদারপšী অভিজাত স¤প্রদায়কে সমাজ পরিবতনে অনুপ্রাণিত করে। এই সকল লেখক, দার্শনিক ও পন্ডিতের লেখনী বলশেভিক বিপব সংগঠনে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছিল।
(ছ) নিহিলিজম ও নারোদনিক আন্দোলনের প্রভাব
উনিশ শতকের রাশিয়াতে সমাজ পরিবতনের জন্য জার বিরোধী অনেক গুপ্ত আন্দোলন পরিচালিত
হয়েছিল। গড়ে উঠেছিল অনেক গুপ্ত সংগঠন। এই সংগঠনসমহের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূণ হলো
নিহিলিজম এবং নারোনিক (রুশ শব্দ নারোদ-অথ হচ্ছে জনগণ) আন্দোলন। এই দুটি আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল জার শাসনের অত্যাচার, শাসন, শোষণ ইত্যাদি থেকে দেশকে মক্ত করা এবং সাধারণ
মানষের আথ-সামাজিক মুক্তি সাধন। জার শাসনের চরম দমননীতির মখে এই দুটি আন্দোলনই
সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের দিকে ধাবিত হয়ে যায়। তাদের আন্দোলন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলেও মানষের মুক্তির সংগ্রামে তাদের প্রয়াস ও আত্মদান সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনকে শক্তিশালী করে। ক্রমে রুশ জনগণ বলশেভিকদেরকে মুক্তির দিশারী হিসেবে গ্রহণ করে নেয়।
(জ) রাশিয়াতে চরম অথনৈতিক সংকট
বলশেভিক বিপবের কারণ হিসেবে বিশ শতকের প্রথম ও দ্বিতীয় দশকে রাশিয়ার অথনৈতিক সংকটকে
চিহ্নিত করা যায়। জারতš ও অভিজাত শ্রেণীর ভোগবিলাসী জীবন যাপন, অর্থনীতিতে পরিকল্পনার
অভাব, কষিক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্ব, শিল্পক্ষেত্রে শ্রমিকদের আন্দোলন ও অসহযোগিতামূলক মনোভাব প্রভৃতি
মিলে অর্থনীতিকে অকার্যকর করে তোলে। দেশের অথনৈতিক সংকট সাধারণ মানুষ বিশেষত শ্রমিক ও ভূমিদাস শ্রেণীর জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। এই অব¯া থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য রাশিয়ার সাধারণ মানুষ জার শাসনের অবসান কামনা করে এবং বলশেভিক বিপবকে স্বাগত জানায়।
(ঝ) প্রথম বিশযদ্ধের অভিঘাত
প্রথম বিশ্বযদ্ধে রাশিয়ার সামরিক বিপর্যয় ঘটে। এই বিপযয়ের জন্য দায়ী জারের দু:শাসন আর চরম
দমন নীতি। এই যদ্ধে জারের প্রতি জনগণের কোনো প্রকার সমর্থন ছিল না। এই সামরিক বিপযয়ের মখে জার সরকার গ্রামের ভূমিহীন কষকদেরকে জোরপূর্বক সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করে। তাদের জন্য
সামরিক-বাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক করা হয়। ইতিমধ্যে যদ্ধে রাশিয়ার বাহিনীর বিপর্যয়,
সেনাবাহিনীতে অনিয়মিত সরবরাহ, খাদ্য ঘাটতি, কয়লার অভাবে নিষ্ক্রিয় যোগাযোগ ব্যব¯া ইত্যাদি
মিলে রুশ সেনাবাহিনীর মনোবলকে সম্পূণ ভেঙ্গে যায়। সেনাবাহিনীর এবং দেশের এই অব¯ার জন্য সাধারণ মানুষ জারকে দায়ী করে এবং জারের হাত থেকে দেশকে মক্ত করাকেই প্রধান কর্তব্য বলে মনে করে। দেশের এই বিপর্যয়কর পরি¯িতিতে রাশিয়ার জনগণ লেনিনের নেতৃতে বলশেভিক পাটিকেই
একমাত্র মুক্তিদাতা হিসেবে বিবেচনা করতে থাকে। এই সময়ে বলশেভিক পাটি রাশিয়ার প্রধান রাজনৈতিক দল এবং লেনিন রাশিয়ার কষক শ্রমিক ও মেহনতী মানষের অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হন। তেমন পটভূমিতে বলশেভিক বিপব অনিবায হয়ে উঠে।
বলশেভিক পাটি
উনিশ শতকের শেষ দুই দশকে রাশিয়াতে শ্রমিক আন্দোলন প্রবলভাবে দানা বেধে উঠে। গ্রামাঞ্চলে ভূমিহীন কষকদের আন্দোলন আগে থেকেই চলে আসছিল। এই সময়ে রাশিয়ার শ্রমিক সমাজ, কষক
সমাজ এবং সাধারণ মানুষ সমাজতান্ত্রিক মতবাদের দিকে ঝকে পড়তে থাকে। ১৮৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত
হয় সোস্যাল ডেমোক্রেটিক পাটি বা সামাজিক গণতান্ত্রিক দল। এই দল ছিল রাশিয়ার শ্রমিক শ্রেণীর
দল। এই দলের কর্মসূচির মধ্যে ছিল জারতন্ত্রের পতন, শ্রমিক রাজ প্রতিষ্ঠা, বহুমুখী সমাজ পরিবতনের কর্মসূচি। এই দলের মাধ্যমে তৎকালীন ইউরোপের অন্যান্য দেশের সোসালিস্ট ও কমিউনিস্ট পার্টিগুলির সাথে রাশিয়ার শ্রমিক শ্রেণীর সম্পক ¯াপিত হয়। রাশিয়াতে এই দল বহুদূর অগ্রসর হতে
পারেনি। এই পটভূমিতে ১৯০৩ সালে প্রতিষ্ঠা ঘটে বিপবী সমাজতন্ত্রী দলের। এই দলের ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে ছিল শ্রমিক শ্রেণীর রাজত প্রতিষ্ঠা, বহৎ জমিদারি বিলুপ্ত করে কষকদের মধ্যে জমি
বিতরণ, ভারী শিল্প জাতীয়করণ, কষিতে যৌথ মালিকানা প্রতিষ্ঠা প্রভতির মাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক সমাজ
প্রতিষ্ঠা। তণমূল পর্যায় থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পযš কঠোর দলীয় শৃঙ্খলা, আদর্শের প্রতি অবিচল আস্থা, সমাজ পরিবতনে দঢ় অব¯ান ইত্যাদি পশে বিপবী সমাজতন্ত্রী দলে ভাঙ্গন দেখা দেয়। আদর্শিক অব¯ান
এবং রাজনৈতিক লক্ষ্যে দর্বল অংশটি পাটি থেকে আলাদা হয়ে যায়। এরা সংখ্যায় ছিল কম। এই
নরমপšী অংশটিকে বলা হয় মেনশেভিক। কঠোর আদর্শিক অব¯ান এবং শ্রমিক শ্রেণীর রাজত প্রতিষ্ঠার
পক্ষে ছিল বিপবী সমাজতন্ত্রী দলের মূল অংশটি। এই অংশটি ছিল দলে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ। এদেরকে
বলা হয় বলশেভিক। দলের ভেতরে আদর্শিক বিভাজনের পর বলশেভিকদের নেতত গ্রহণ করেন বিপবী
নেতা ভ াদিমীর ইলিচ উলিয়ানভ লেনিন। তখন থেকেই এই পার্টির নাম হয়ে যায় বলশেভিক পার্টি।
বিশ শত-কের শুরুতে রাশিয়াতে শিল্প বিপব একটি নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উৎপত্তি ঘটায়। এই শ্রেণীর
একটি বড় অংশ জারতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে সমাজ পরিবতনের জন্য লেনিনের নেতৃতে বলশেভিক পার্টির পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হয়। বিশ শতকের প্রথম দশকেই রাশিয়ার শ্রমিক ও কষক শ্রেণীর একক সংগঠনে
পরিণত হয় বলশেভিক পার্টি। এই সময়ে লেনিন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম করার পাটি লাইন গ্রহণ করেন।
বলশেভিক বিপবের ঘটনাপ্রবাহ
বিশ শতকের শুরুতে রাশিয়ার শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণী পশ্চিম ইউরোপের আদলে আধুনিক
প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনতš তথা-প্রতিনিধিত্বমূলক জাতীয় পরিষদ, দায়িত্বশীল মন্ত্রীসভা, নাগরিক
স্বাধীনতা, সমাজে সকলের সমান অধিকার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, ধর্মের স্বাধীনতা, শিক্ষার স্বাধীনতা,
দায়িতশীল প্রশাসনিক কাঠামো ইত্যাদির আলোকে সমাজ সংস্কার ও সমাজ নির্মাণ করতে চেয়েছিল।
কিš রুশ সম্রাট জার দ্বিতীয় নিকোলাস এবং তার অত্যাচারী মন্ত্রী পিভি এই দাবির বিরুদ্ধে কঠোর নীতি গ্রহণ করে। ১৯০৫ সালে রুশ-জাপান যদ্ধে জাপানের কাছে রাশিয়ার পরাজয় জার শাসনের বিরুদ্ধে
দেশকে উত্তাল করে তোলে। বলশেভিক পার্টির নেতৃতে রাশিয়ার শ্রমিক শ্রেণী ও কষক সমাজ এই সময়
দেশব্যাপী ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে। পরি¯িতি অনেকটা নিয়šণের বাইরে চলে গেলে জার দ্বিতীয় নিকোলাস রাশিয়ার জাতীয় পরিষদ ডুমার অধিবেশন আহŸান করে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর দাবিগুলি অনেকটা
মেনে নেন। ফলে আপাতদৃষ্টিতে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কিছুটা সামাজিক সুবিধা অর্জিত হলেও শ্রমিক, কষক
ও মেহনতী মানষের মূল রাজনৈতিক লক্ষ্য অপূরণীয় থেকে যায়।
প্রথম বিশ্বযদ্ধে রাশিয়ার সামরিক বিপর্যয় বিশেষত পোল্যান্ড থেকে রাশিয়ার সেনা বিতাড়ন, জার্মানীর
কাছে রাশিয়ার পরাজয় ইত্যাদি ঘটনাপ্রবাহ থেকে রাশিয়ার সাধারণ মানুষ জারের প্রতি পচন্ড বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। সারা রাশিয়াতে পচন্ড অথনৈতিক সংকট ও খাদ্যের অভাব দেখা দেয়। সারাদেশে
গণঅভ্যুত্থান ঘটে, শ্রমিক ধর্মঘট শুরু হয় এবং কৃষক বিদ্রোহ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এই সময় মারাত্মক সংকটের মখে কমান্ডারদের আদেশ অমান্য করে দলে দলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা রণাঙ্গন
ছেড়ে এসে শ্রমিক, কষকের সাথে যোগ দেয়। ১৯১৭ সালের মাচ মাসে সারা রাশিয়ায় এক ব্যাপক অভ্যুত্থ্যান ঘটে। ৮ মাচ তারিখে শ্রমিক, কষকেরা রা¯ায় নেমে আসে। জনগণ পেত্রোগ্রাদ দখল করে
নেয়। জার দ্বিতীয় নিকোলাসের সেনাপতি ইভানভ অনেক কষ্টে পেত্রোগ্রাদ দখল করতে সক্ষম হন। জনগণের দাবির মখে জার সিংহাসন ত্যাগ করতে বাধ্য হন। এভাবেই এই প্রাচীন রোমানভ রাজ বংশের অবসান ঘটে। দেশের সামগ্রিক দায়িত ডুমা বা জাতীয় পরিষদ গ্রহণ করে। এভাবে রুশ বিপবের প্রথম অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটে।
রুশ বিপবের দ্বিতীয় পর্যায়ের পর অর্থাৎ ১৯১৭ সালের মাচ মাসে ব্যাপক গণ অভ্যুত্থানের মখে জারের সিংহাসন ত্যাগের পর একটি বর্জোয়া বা মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সরকার গঠিত হয়। দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর
বিভিন মডারেট গ্রট্টপ ও নরমপšীদের প্রতিনিধিরাই ছিল মন্ত্রীসভার সদস্য। এই মন্ত্রীসভা ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই তাদের লক্ষ্য ও কর্মসূচি ঘোষণা করে। তাদের লক্ষ্য ছিল নির্র্বাচিত গণপরিষদ, রাশিয়ার জন্য
সাংবিধানিক সংস্কার প্রবতন, গণপরিষদে দেশের ভূমি সমস্যার সমাধান সংক্রাš পদক্ষেপ গ্রহণ, দেশে গণতান্ত্রিক সংসদীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করা, ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার রক্ষা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রদান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারি হ¯ক্ষেপ বন্ধ, ধম ও বাক স্বাধীনতা প্রদান প্রভতি। মাচ বিপব পরবর্তী
এই কর্মসূচি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে এটা পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলির অনুকরণে একটি সংস্কার পদক্ষেপ। রাশিয়ার বিদ্যমান আথ-সামাজিক পরি¯িতিতে এই জাতীয় একটি সংস্কার পদক্ষেপ মোটেও
সময়োপযোগী ছিল না। সংস্কার পদক্ষেপের সাথে রাশিয়ার শ্রমিক ও কষক শ্রেণীর ভাগ্য পরিবতনের
কোনো প্রকার সম্পক ছিল না। অথচ মাচ বিপবে এই দুই শক্তি মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। মাচ
বিপবের সাফল্যে বলীয়ান হয়ে কষক ও শ্রমিক সমাজ আরও জোরালোভাবে আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে
তোলে। কষক সমাজ জমি বিতরণের দাবি করে এবং শ্রমিক শ্রেণী পুঁজিবাদ ধ্বংসের জন্য মরিয়া হয়ে
উঠে। এই পরি¯িতিতে শ্রমিক শ্রেণী ও কষকদের দাবি দাওয়া পূরণে বর্জোয়া সরকার সম্পূণ ব্যথ হয়।
একথা বলাই বাহুল্য যে মাচ বিপবে অগ্রণী ভূমিকা ছিল শ্রমিক শেণী ও কষক সমাজের। বিপবের
কৌশলগত কারণে বলশেভিক পাটি স্বৈরতন্ত্রের অবসানকল্পে বর্জোয়া শ্রেণীকে সমর্থণ করেছিল। কিš বলশেভিক পার্টির মূল লক্ষ্য ছিল পলেতারিয়েত বা শ্রমিক কষকের সরকার প্রতিষ্ঠা করা। মাচ বিপবের
সময় বলশেভিক পার্টির নেতা ভ াদিমির লেনিন রাশিয়ার বাইরে সুইজারল্যান্ডে অব¯ান করছিলেন।
তিনি ১৯১৭ সালের এপ্রিল মাসে-
¯দেশে ফিরে এসে বিপবের নেতত গ্রহণ করেন। লেনিন তখন
বলশেভিক পাটি ও রাশিয়ার জনগণের অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন। তিনি এসেই ঘোষণা করেন যে রাশিয়ায় বর্জোয়া গণতন্ত্রের কোনো পয়োজন নেই। রাশিয়ার সরকার পরিচালিত হবে শ্রমিক শ্রেণী ও
কষকের দ্বারা। তিনি মাচ মাসের বর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপবকে বলশেভিক বিপবের প্রথম পর্যায় হিসেবে
অভিহিত করেন। তিনি সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন যে বিপবের দ্বিতীয় বা চূড়াš ¯রের লক্ষ্য হলো
জমিদার ও পুঁজিপতিদের উচ্ছেদ করে পলেতারিয়েত সরকার প্রতিষ্ঠা করা। ভারি শিল্পের উপর রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠা এবং জমি কষকদের কাছে হ¯াšর করা। রাশিয়ার সমাজে দীর্ঘকাল ধরে এই ভূমির
ইস্যুটি ছিল অমীমাংসিত। এছাড়া লেনিন রাশিয়াতে চলে আসা এককেন্দ্রীক ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীভূত করে
¯ানীয় ক্ষমতা আঞ্চলিক সোভিয়েতের হাতে দেয়ার কথা ঘোষণা করেন।
১৯১৭ সালের এপ্রিল মে মাসের দিকে রাশিয়ার অভ্যšরে ব্যাপক অরাজকতা দেখা দেয়। বর্জোয়া সরকার যুদ্ধকালীন পরি¯িতি মোকাবিলায় সম্পূণ ব্যথ হয়। দেশের অভ্যšরে দেখা দেয় ভোগ্য পণ্যের
প্রচন্ড অভাব। খাদ্য সংকট তীব আকার ধারণ করে। জার্মান বাহিনী রাশিয়ার অভ্যšরে বিভিন অঞ্চল
দখল করতে থাকে। ক্রমে পেত্রোগ্রাদের নিরাপত্তা বিপন হয়ে পড়ে। দেশের চরম সংকটের মখে
সেনাবাহিনীতে বিদ্রোহ দেখা দেয়। এই পরি¯িতিতে বলশেভিকরা বিভিন অঞ্চলের উপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে থাকে। এই সময়ে লেনিনের নেতৃতে পাটির দুই নেতা ট্রটস্কি ও স্ট্যালিন
গুরুত্বপূণ ভূমিকা পালন করেন। বলশেভিক পার্টির হাজার হাজার সদস্য লেনিনের নেতৃতে জনগণকে সাথে নিয়ে সমগ রাশিয়ায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে এবং পেত্রোগ্রাদের দিকে অগসর হয়। ১৯১৭ সালের ৭ নভেম্বর বলশেভিকরা গুরুত্বপূণ সরকারি ভবন, রাষ্ট্রীয় ব্যাংক, টেলিফোন একচেঞ্জসহ সকল সরকারি
¯াপনা দখল করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। অতঃপর লেনিনের নেতৃতে বলশেভিক পাটি সরকার প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করে। এভাবে সম্পন হয় বলশেভিক বিপব
বলশেভিক বিপবের ফলাফল
১৯১৭ সালের বলশেভিক বিপব পথিবীর ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক ও যুগাšকারী ঘটনা। এই বিপব শুধ রাশিয়াতেই নয়, সারা পথিবীর রাজনীতি, সমাজ, সংস্কতি ও অর্থনীতিতে প্রভাব বি¯ার করেছিল।
এই বিপব সমগ মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত। বিশ শতকে সারা
পৃথিবীর নির্যাতিত, অবহেলিত ও নিপীড়িত মানষের মুক্তি সংগ্রামে বলশেভিক বিপব নিরšর প্রেরণার
উৎস। বলশেভিক বিপবের ফলাফল ছিল নি¤রূপ :
প্রথমত, বলশেভিক বিপব পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম সফল সমাজতান্ত্রিক বিপব। এই বিপবের ফলে রাশিয়াতে শ্রমিক শ্রেণীর বিপবী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। রাশিয়াতে দীর্ঘদিনের সামš ও ভূস্বামীদের
শোষণ, অত্যাচার এবং পুঁজিপতি শ্রেণীর শোষণের অবসান ঘটে। উনিশ শতক থেকে চলে আসা
ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক চিšা, দর্শন ও রাষ্ট চিšার বা¯ব রূপায়ন ঘটে এই বিপবের মধ্য দিয়ে। ফলে সারা পৃথিবীর আথ-সামাজিক প্রক্রিয়ায় এক নতুন ধারার অভিযাত্রা শুরু হয়।
দ্বিতীয়ত, এই বিপবের ফলে রাশিয়ার পুরনো সামাজিক সম্পর্ক, পুরনো প্রশাসনিক কাঠামো বাতিল হয়ে যায়। দেশে প্রতিষ্ঠিত হয় নতন সামাজিক সম্পক এবং নতন প্রশাসনিক কাঠামো। বিপবের পবে রাশিয়ার প্রশাসন ছিল সম্পূর্ণভাবে কেন্দ্রীভূত ও একনায়কতান্ত্রিক বিপবের পরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ব্যাপক
বিকেন্দ্রীকরণ করা হয় এবং প্রশাসনে শ্রমিক কষকের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়। ¯ানীয় প্রশাসন পরিচালনার দায়িত অর্পিত হয় আঞ্চলিক সোভিয়েতের উপর।
তৃতীয়ত, বলশেভিক বিপব পশ্চিম ইউরোপের পুঁজিবাদী সমাজ, সংস্কতি, অর্থনীতি এবং রাষ্ট ব্যব¯ার
উপর চরম আঘাত করে। পশ্চিমী সভ্যতার মূল শক্তির বিরুদ্ধে বলশেভিক বিপব ছিল এক সংগ্রামের
প্রেরণা। পুঁজিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে এই বিপব এক নতুন, বিকল্প এবং সামগ্রিক মানব কল্যাণমুখী সমাজ
প্রতিষ্ঠা করে। একই সঙ্গে পুঁজিবাদী সমাজ ভেঙে নতুন সমাজ প্রতিষ্ঠার পথ প্রদর্শন করে। ফলে উন্নত ধনবাদী দেশগুলিতে এক ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সষ্টি হয়। সমাজতšকে ধ্বংস করার জন্য সর্বাত্মক শক্তি নিয়োগ করে পুঁজিবাদ দেশগুলি। সমাজতন্ত্রের চরম বিরোধিতা থেকে পশ্চিম ইউরোপের পুঁজিপতিদের
প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ইউরোপে ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটে। মানব সভ্যতা ও সংস্কৃতির হুমকি এই
ফ্যাসিবাদের পতন ঘটে দ্বিতীয় বিশ্বযদ্ধের মধ্য দিয়ে।
চতুর্থত, বলশেভিক বিপব এশিয়া, আফ্রিকা ও লাটিন আমেরিকার পরাধীন দেশগুলিতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সষ্টি করে। বলশেভিক বিপবের আদশে অনুপ্রাণিত হয়ে উপনিবেশের জনগণ স্বাধীনতা ও আত্মনিয়šণের জন্য লড়াই শুরু করে। ক্রমে সারা পথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম। বলা
যেতে পারে বিশ শতকের সারা পথিবীর স্বাধীনতার লড়াই আর জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে বলশেভিক বিপব ছিল অফুরান প্রেরণার উৎস।
পঞ্চমত, বলশেভিক বিপব সারা পথিবীর শ্রমিক শ্রেণী ও কষক সমাজকে শোষণ বঞ্ছনার অবসান ঘটিয়ে বিপবের মাধ্যমে সমাজতš প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে উৎসাহিত করে, অনপ্রেরণা যোগায়। বলশেভিক বিপবের
ধারাবাহিকতায় ১৯৪৯ সালে সংঘটিত হয় চীনা সমাজতান্ত্রিক বিপব। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে
সারা পথিবীতে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন একটি প্রধান রাজনৈতিক স্রোতে পরিনত হয়। পথিবীব্যাপী সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের কাছে মডেল হিসেবে বিবেচিত ছিল বলশেভিক বিপব এবং বিপবের নায়ক
লেনিন। লেনিনের লেখা গ্রšাবলী ছিল বিপবীদের অধ্যয়ন অনুশীলনের প্রধান বিষয়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ
১। চার্লস ওয়েন
ক. ফরাসি সমাজতন্ত্রী খ. রুশ সমাজতন্ত্রী
খ. ব্রিটিশ সমাজতšী ঘ. জার্মান সমাজতšী
২। বলশেভিক বিপব সংঘটিত হয়
ক. ১৯০৫ সালে খ. ১৯১১ সালে
গ. ১৯১৭ সালে ঘ. ১৯২০ সালে
৩। ১৯০১ সালে প্রতিষ্ঠা ঘটে
ক. বিপবী সমাজতন্ত্রী দলের খ. বিপবী শ্রমিক দলের
গ. বিপবী কষক দলের ঘ. বিপবীগণতন্ত্রী দলের
৪। বর্জোয়া বিপব সংঘটিত হয় ১৯১৭ সালের
ক. জানুয়ারি মাসে খ. মাচ মাসে
গ. জুলাই মাসে ঘ. অক্টোবর মাসে
৫। বলশেভিক বিপবের পর রাষ্ট ক্ষমতা দখল করে
ক. শ্রমিক শ্রেণী খ. বর্জোয়া শ্রেণী
গ. পুঁজিপতি শ্রেণী ঘ. বুদ্ধিজীবী শ্রেণী
উত্তর : ১।গ ২।গ ৩।ক ৪।খ ৫।ক
রচনামূলক প্রশ
১। বলশেভিক বিপবের কারণ সমূহ আলোচনা করুন।
২। বলশেভিক পার্টির বিবরণ দিন।
৩। বলশেভিক বিপবের ঘটনাপ্রবাহ বর্ণনা করুন।
৪। বলশেভিক বিপবের কারনসমূহ আলোচনা করুন।
সংক্ষিপ্ত প্রশ
১। কাল্পনিক সমাজতন্ত্রীদের পরিচয় দিন।
২। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের জনক কে?
৩। কোন কোন রুশ সাহিত্যিক বলশেভিক বিপবের ক্ষেত্র তৈরি করেছিলেন?
৪। বলশেভিক বিপব কোন তারিখে সংঘটিত হয়?
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত