প্রথম মহাযুদ্ধের পটভুমিপ্রথম মহাযুদ্ধের কারণ অনুসন্ধান করতে হবে বিগত একশ বছরের ইউরোপের ইতিহাসের গতি প্রকৃতির
মধ্যে। দীর্ঘদিন সেখানে চলেছে ফরাসি বিপ্লব জাতীয়তাবাদের সাথে রক্ষণশীল মতবাদের দ্বন্দ¡। পুরানো
ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছিল, কিন্তুনতুন ব্যবস্থা তখনও সুনির্দিষ্ট রূপ নেয়নি। জাতীয়তাবাদ যেখানে জয়ী
হয়েছে সেখানে উগ্রমূর্তি ধারণ করেছে এবং অস্ত্রের ভাষায় কথা বলতে চেয়েছে। প্রথম মহাযুদ্ধের
পূর্ববর্তীচল্লিশ বছর আপাত দৃষ্টিতে শান্তিবজায় থাকলেও ঐতিহাসিকগণ একে সশস্ত্রশান্তির যুগ (অমব
ড়ভ ধৎসবফ ঢ়বধপব) আখ্যা দিয়েছেন। সমরসজ্জার ক্ষেত্রে, উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে, কূটনৈতিক
সম্পর্কের ক্ষেত্রে, সর্বত্রই চলছিল তীব্রপ্রতিযোগিতা। নি¤েœ প্রথম মহাযুদ্ধের পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ
কারণসমূহ ব্যাখ্যা করা হল ঃ
এক. উগ্রজাতীয়তাবাদের উম্মেষ
উনিশ শতকের শেষে এবং বিশ শতকের সূচনালগ্নে ইউরোপের দেশে দেশে উগ্রজাতীয়তাবাদী
মনোভাব বিদ্যমান ছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে উগ্রও ক্ষতিকর ছিল জার্মান জাতীয়তাবাদ। জার্মান
পন্ডিত, দার্শনিক ও ঐতিহাসিকরা এ কথা প্রচার করে থাকেন যে, জার্মানরা হচ্ছে বিশুদ্ধ আর্যএবং
পৃথিবীর সব জাতিগোষ্ঠীর চেয়ে উন্নত। তবে শুধুজার্মানি নয়, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, রাশিয়া, ইতালি ও
জাপানেও জাতীয়তাবাদ সংকীর্ণরূপ নিয়েছিল। ফলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিরোধ বৃদ্ধি পায়।
ফ্রান্স সেডানের যুদ্ধে হেরে গিয়ে জার্মানির কাছে আলসেস-লোরেন হারায়। এতে ফ্রান্স জার্মানির প্রতি
প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠে। অন্যদিকে অস্ট্রিয়ার কাছ থেকে ইতালিভাষী অঞ্চলগুলো উদ্ধারের কথা
ইতালি ভাবতে থাকে। এই উগ্রজাতীয়তাবাদী উন্মদনাই বলকান অঞ্চলকে বিষ্ফোরক করে তুলেছিল।
অন্যদিকে জাপান নিজকে দূরপাচ্যের ভাগ্য নিয়ন্তা মনে করতো। নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বপ্রমাণের জন্য এই
অঞ্চলে অস্ত্রের আশ্রয় নিতেও কুন্ঠাবোধ করতো না। এ সময় ইউরোপের সবদেশে মরণাস্ত্রতৈরির
হিঁড়িক পড়ে যায়। অস্ত্রব্যবসায়ীসহ তাদের নিয়ন্ত্রিত সংবাদপত্রগুলি যুদ্ধের উন্মাদনা সৃষ্টিতে ইন্ধন
যোগায়।
দুই. বাণিজ্যিক ও ঔপনিবেশিক প্রতিদ্বন্দি¡তা
প্রখম মহাযুদ্ধের কয়েক দশক পূর্বথেকে ইউরোপীয় শক্তিগুলির মধ্যে বাণিজ্যের প্রসার এবং এ জন্য
ঔপনিবেশ বিস্তার নিয়ে তীব্রপ্রতিদ্বন্দি¡তার সূচনা হয়। ইউরোপের শিল্পায়িত বৃহৎ ও ক্ষুদ্ররাষ্ট্রগুলির
উৎপাদন এ সময় বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। ফলে উদ্বৃত্ত পণ্য রফতানির জন্য নতুন বাজারের প্রয়োজন দেখা
দেয়। তাই দেখা যায় ইউরোপের সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো শিল্পপণ্য রফতানি এবং অতিরিক্ত বিনিয়োগের
জন্য পুরনো উপনিবেশের সম্প্রসারণ এবং নতুন ঔপনিবেশ স্থাপনের চেষ্টায় মরিয়া হয়ে ওঠে। ইতিহাসে
এই বিষয়টাকে সাম্রাজ্যবাদ (ওসঢ়বৎরধষরংস) বলা হয়। মার্কস থেকে লেনিন পুঁজিবাদী অর্থনীতির ব্যাখ্যা
বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন কীভাবে উদ্বৃত্ত পণ্য সংকট সৃষ্টি করে। লেনিন সাম্রাজ্যবাদকে ধনতন্ত্রের
সর্বোচ্চ পর্যায় (ঐরমযবংঃ ংঃধমব ড়ভ ঈধঢ়রঃধষরংস) বলে অভিহিত করেছেন। প্রথম মহাযুদ্ধের প্রাক্কালে
ইউরোপের বিভিন্নদেশের সাম্রাজ্যবাদী অবস্থান ও উপনিবেশের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ নি¤েœদেয়া হল ঃ
ক. ব্রিটেন ঃ বিশ শতকের প্রথম দিকে ব্রিটেন পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ সাম্রাজ্যের অধিকারী ছিল। সমগ্র
বিশ্বের মোট ঔপনিবেশিক অঞ্চলের শতকরা প্রায় ৪৫ ভাগ ছিল দেশটির দখলে। দুই গোলার্ধব্যাপী
বিস্তৃত ছিল সাম্রাজ্য। উপনিবেশগুলিই ছিল তার শক্তি ও সমৃদ্ধির প্রধান উৎস। এরপরও সে অতৃপ্ত
ছিল। উপনিবেশ স্থাপনের সামান্যতম সুযোগ সে হাতছাড়া করতে চাইতো না। ১৮৯৯ থেকে ১৯০২
খ্রিস্টাব্দ পর্যন্তবুয়র যুদ্ধের মাধ্যমে ব্রিটিশ শক্তি দক্ষিণ আফ্রিকায় একটি শক্ত ঘাঁটি তৈরির চেষ্টা করে।
এ সময় ইংরেজদের ক‚টনীতি মূলত পরিচালিত হচ্ছিল এশিয়া ও আফ্রিকার বিশাল সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা
বিধানের জন্য। নৌশক্তি বৃদ্ধির দিকেও ব্রিটেন মনোযোগ দেয়। তাই দেখা যায় যে, প্রথম মহাযুদ্ধের
সূচনার মুহ‚র্তেনৌ-বাণিজ্যের দিক থেকে ব্রিটেনের অবস্থান ছিল এক নম্বরে।
খ. ফ্রান্স ও বেলজিয়াম
ব্রিটেনের পর দ্বিতীয় সাম্রাজীবাদী দেশ হলো ফ্রান্স। দুই মহাদেশে (এশিয়া ও আফ্রিকা) ছড়ানো
উপনিবেশ থাকা সত্তে¡ও দেশটির ইচ্ছা পূরণ হয়নি। জার্মানির আপত্তি অগ্রাহ্য করেও ফ্রান্স উত্তর
আফ্রিকার মরক্কোতে অনুপ্রবেশ করে এবং ১৯১১ সালে মরক্কো সম্পূর্ণভাবে ফরাসি ঔপনিবেশে পরিণত
হয়। অন্যদিকে অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্রকিন্তুঅর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী বেলজিয়াম মধ্য আফ্রিকার কঙ্গো
অঞ্চলের বিস্তৃত ভূভাগ দখল করে নেয় এবং নির্দয় শোষণ শুরু করে।
তিন. পরোক্ষ সাম্রাজ্যবাদ, প্রভাবাধীন অঞ্চল ও জার্মানির অনুপ্রবেশ
সাম্রাজ্যবাদ শুধুপ্রত্যক্ষ ছিল এমন নয়, বিশ্বের অনেক অঞ্চলে পরোক্ষ সাম্রাজ্যবাদী অবস্থা বিরাজ
করেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রইংরেজ ও স্পেনীয়দের বিতাড়ন করে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে
অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। অন্যদিকে দূরপ্রাচ্যের চীন স্বাধীন হলেও দেশটিতে ব্রিটিশ, মার্কিন,
ফরাসি, রুশ, জার্মান ও জাপানি সাম্রাজ্যবাদীগণ নিজ নিজ প্রভাবাধীন অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করে। মধ্যপ্রাচ্যে
ইরান ছিল ব্রিটেন ও রাশিয়ার প্রভাবাধীন।
এই প্রক্রিয়ায় ক্রমবর্ধমান ঔপনিবেশিক অঞ্চলের বিস্তৃতি হয় এবং সমগ্রঅনুন্নত বিশ্বঅসংখ্য প্রভাবাধীন
অঞ্চল (ঝঢ়যবৎব ড়ভ ওহভষঁবহপব) -এ বিভক্ত হয়ে যায়। এতদিন ঔপনিবেশিক শক্তিগুলির মধ্যে
প্রতিযোগিতা থাকলেও একটি নীরব সমঝোতা ছিল। কিন্তু ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে এই
প্রতিযোগিতায় জার্মানির অনুপ্রবেশ ভারসাম্যটি (ইষধহপব ড়ভ ঢ়ড়বিৎ) নষ্ট করে দেয়। এরপর থেকে
ব্রিটেন ও জার্মানির মধ্যে তীব্রঅর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দি¡তা শুরু হয়।
জার্মান অনুপ্রবেশের পেছনে একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস আছে। অটোফন বিসমার্কনামে এক অসাধারণ
ক‚টনৈতিক ১৮৯০ সাল পর্যন্তজার্মানির চ্যান্সেলর ছিলেন। তিনি জার্মানিকে পরিতৃপ্ত রাষ্ট্র' বলে ঘোষণা
করেন যার অর্থদাঁড়ায় রাজ্য বিস্তারের কোনো প্রয়োজন নেই। ইউরোপীয় ক‚টনীতিতে তার একমাত্র
লক্ষ্য ছিল ১৮৭১-পরবর্তী ইউরোপের শক্তিসাম্য (ইষধহপব ড়ভ ঢ়ড়বিৎ) বজায় রাখা। ফ্রান্সকে মিত্রহীন ও
দুর্বল রেখে জার্মানির মিত্র রাষ্ট্রের সংখ্যা বৃদ্ধিই ছিল বিসমার্কের উদ্দেশ্য। এ লক্ষ্যে তিনি ১৮৭৩ সালে
জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও রাশিয়ার মধ্যে তিন সম্রাটের চুক্তি (ঞযৎবব ঊহঢ়বৎড়ৎ'ং খবধমঁব) এবং ১৮৭৯ সালে
জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার মধ্যে গোপনে দ্বি-শক্তি চুক্তি (উঁধষ অষষরধহপব)-সম্পাদন করেন। ১৮৮২ সালে
বিসমার্কঅস্ট্রিয়া ও জার্মানির সাথে ইতালিকেও সংযুক্ত করেন। সমকালীন ইতিহাসের এই মৈত্রীবন্ধন
ত্রিশক্তি চুক্তি (ঞৎরঢ়ষব অষষরধহপব) নামে পরিচিত। এরই ফাঁকে ১৮৮৭ সালে বিসমার্করাশিয়ার সাথে
(জব-রহংঁৎবহপব ঞৎবধঃু) স্বাক্ষর করেন। এতে বলা হয় যে, তৃতীয় কোনো শক্তি দ্বারা আক্রান্তহলে
দুপক্ষই নিরপেক্ষতা অবলম্বন করবে। এভাবে বিসমার্ক তার অসাধারণ ক‚টনৈতিক দক্ষতার দ্বারা
ফ্রান্সকে মিত্রহীন অবস্থায় রেখে সদ্য প্রতিষ্ঠিত জার্মান রাজ্যের নিরাপত্তা বিধান করেন। এই জটিল
ক‚টনৈতিক বিসমার্কের সাথে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে জার্মানির সম্রাট (কাইজার) দ্বিতীয় উইলিয়ামের সঙ্গে
তীব্রমতভেদ হওয়ায় বিসমার্কপদত্যাগ করেন। ফলে ইউরোপের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণপরিবর্তন সূচিত
হয়। বিসমার্কের বিদায়ের পর দ্বিতীয় উইলিয়াম সামুদ্রিক প্রাধান্য অর্জন করে সাম্রাজ্য বিস্তারের
মনোনিবেশ করেন। তিনি পরিষ্কার করে বলেন, “ঞযব ভঁঃঁৎব ড়ভ এবৎসধহু ষরবং ড়ভ ঃযব ংবধ" ফলে
বিসমার্কযেখানে ব্রিটেনের সাথে সংঘাত পরিহার করেছিলেন সেখানে উইলিয়াম তা অনিবার্যকরে
তোলেন।
উইলিয়াম প্রথমেই রাশিয়াকে ক্ষিপ্ত করে তোলেন। কারণ, বলকান অঞ্চলে তিনি অস্ট্রিয়াকে সমর্থন
করলে রাশিয়া ক্ষুন্ন হয়। অন্যদিকে ফরাসি শিল্পপতিরা রাশিয়ার শিল্পায়নে অর্থবিনিয়োগে উৎসাহী
ছিল। এর ফলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণে ১৮৯৩ সালে ফরাসি-রুশ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ফলে
জার্মানি-রাশিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত রি-ইনসিওরেন্স চুক্তি বাতিল হয়ে যায়। এভাবে জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও
ইতালির বিরুদ্ধে প্রথম ইউরোপীয় জোট গঠিত হয়। ফ্রান্সের দীর্ঘদিনের নিরাপত্তা চিন্তার কিছুটা উপশম
হয়।
ইউরোপীয় রাজনীতির এই নতুন মেরুকরণের সময়টাকে ব্রিটেন গৌরবময় বিচ্ছিন্নতার (ঝঢ়ষবহফরফ
ওংড়ষধঃরড়হ) নীতি অনুসরণ করছিল। তখন ব্রিটেনের আফ্রিকায় ফ্রান্সের সাথে, মধ্য এশিয়ায় রাশিয়ার
সাথে উপনিবেশ নিয়ে প্রতিদ্বন্দি¡তা চলছিল। এ অবস্থায় ব্রিটেন জার্মানির সাথে বন্ধুত্ব স্থাপনে আগ্রহী
ছিল, কিন্তুউগ্রসাম্রাজ্যবাদী নীতি এবং জার্মানির নৌশক্তির আকস্মিক বৃদ্ধিতে ব্রিটেন আতংকিত বোধ
করে। দ্বিতীয়ত, দক্ষিণ আফ্রিকায় ইংরেজদের বিরুদ্ধে (ইড়বৎ ডধৎ) যুদ্ধে জার্মানি ইংরেজদের বিরুদ্ধে
বুওরদের সমর্থন করায় ব্রিটেন হতাশ হয়। ফলে অনিচ্ছা সত্তে¡ও ব্রিটেন জার্মান-বিরোধী শিবিরে যোগ
দেয়। ১৯০৪ সালে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মধ্যে মৈত্রী স্থাপিত হয়। এর মাধ্যমে ফ্রান্স মিশরে ব্রিটেনের
অধিকার যেমন মেনে নেয় তেমনি ব্রিটেনও মরক্কোয় ফ্রান্সের প্রভুত্বের স্বীকৃতি দেয়।
এ ঘটনার তিন বছর পর ১৯০৭ সালে ব্রিটিন ও রাশিয়া একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এভাবে ইঙ্গ-রুশফরাসি ত্রি শক্তি মৈত্রী (ঞৎরঢ়ষব ঊহঃবহঃব) গড়ে ওঠে। সুতরাং, দেখা যাচ্ছে যে, বর্তমান শতাব্দীর
শুরুতে পরস্পর বিরোধী দুই সামরিক জোটের উদ্ভবে ইউরোপীয় রাজনীতিতে এক অস্থির পরিস্থিতির
সৃষ্টি হয়। ক‚টনৈতিক প্রতিদ্বন্দি¡তা দিনে দিনে সামরিক দ্বন্দে¡র দিকে এগুতে থাকে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের
ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়।
চার ঃ পরস্পর বিরোধী সামরিক জোটের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্নঅঞ্চলে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষব্রিটেন-ফ্রান্স ও
রাশিয়ার সমম্বয়ে গঠিত ত্রিশক্তি মৈত্রী ছিল ক্রমবর্ধমান জার্মানির প্রতিপত্তির প্রতি চ্যালেঞ্জস্বরুপ।
অন্যতম বৃহৎ শক্তির মর্যাদা লাভের আশায় জার্মানি বিশ্বের বিভিন্নঅঞ্চলে মৈত্রীর অন্তর্ভূক্ত শক্তিগুলোর
সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত হয়। এগুলো হল ঃ মরক্কোও আগাদির সমস্যা।
ক. মরক্কো ঃ উত্তর আফ্রিকার মুসলিম অধ্যুষিত দেশ মরক্কোতে ১৯০৪ সালের ইঙ্গ-ফরাসি চুক্তি অনুযায়ী
ফ্রান্সের রাজনৈতিক কর্তৃত্বস্বীকৃত হয়। ফ্রান্স যখন মরক্কোতে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চায় তখন
জার্মানি তীব্রআপত্তি জানায়। ১৯০৫ সালে জার্মান সম্রাট দ্বিতীয় উইলিয়াম স্বয়ং মরক্কোর তাঞ্জিরে গিয়ে
উপস্থিত হন এবং নিজেকে মুসলমানদের রক্ষাকর্তা হিসেবে দাবি করে দেশটির স্বাধীনতা রক্ষার
প্রতিশ্রæতি দেন। এটা ছিল ইঙ্গ-ফরাসি মৈত্রীর প্রতি প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ। ফরাসি প্রধানমন্ত্রী ডেলকাসে
যুদ্ধের বিনিময়েও ফ্রান্সের অধিকার অক্ষুন্নরাখতে চান। শেষ পর্যন্ত১৯০৯ সালে একটি আন্তর্জাতিক
সম্মেলনে মরক্কো সম্পর্কেএকটি বোঝাপড়া হয় এবং সিদ্ধান্তহয় যে, মরক্কোতে স্পেন ও ফ্রান্সের বিশেষ
অধিকার থাকবে। তবে অর্থনৈতিক দিক থেকে একটি মুক্তদ্বার নীতি (ঙঢ়বহ উড়ড়ৎ চড়ষরপু) অনুসরণ
করা হবে । এভাবে জার্মানি ইঙ্গ ফরাসি মৈত্রীতে ভাঙ্গন ধরাতে ব্যর্থহয়।
খ. আগাদির সমস্যা
১৯০৯ সালের চুক্তি অনুযায়ী মরক্কোয় ফ্রান্সের রাজনৈতিক অধিকারের পাশাপাশি জার্মানির অর্থনৈতিক
স্বার্থকেও স্বীকার করে নেয়া হয়। কিন্তু১৯১১ সালে রাজধানী ফেজে একটি উপজাতির বিদ্রোহ দেখা
দিলে ফ্রান্স তা দমন করেন। তখন ‘প্যান্থার' নামে একটি জার্মান জাহাজ আগাদির বন্দরে উপস্থিত হয়ে
পরিস্থিতির উপর নজরদারি শুরু করে। ফরাসি ও জার্মান সামরিক উপস্থিতিতে পরিস্থিতি জটিল হয়ে
ওঠে। ইংল্যান্ডেও একটি যুদ্ধ জাহাজ প্রেরণ করে। ইঙ্গ-ফরাসি ঐক্যবদ্ধ মোকাবিলার মুখে জার্মানি পিছু
হটে। কারণ সব রাষ্ট্রই ১৯০৯ সালের চুক্তি অনুযায়ী মীমাংসায় উপনীত হয়। ত্রি শক্তি মৈত্রীতে ফাটল
ধরানোর জার্মান প্রচেষ্টা দ্বিতীয়বারের মত ব্যর্থহয়।
পাঁচ ঃ বলকান সমস্যা ঃ প্রথম মহাযুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ
বলকান সমস্যাকে কেন্দ্রকরে মূলত প্রথম যুদ্ধের সূচনা হয়। বলকান সমস্যা ছিল বেশ জটিল ও
পুরানো। এ অঞ্চলে রাশিয়ার স্বার্থছিল দীর্ঘদিনের। সেই তুলনায় অস্ট্রিয়ার অনুপ্রবেশ অনেক পরের
ঘটনা। অস্ট্রিয়া তুর্কি সাম্রাজ্য থেকে নবগঠিত রাষ্ট্রসার্বিয়াকে গ্রাস করতে চাইতো। সার্বিয়া ছিল
রাশিয়ার মত ¯øাভ জাতিগোষ্ঠী অধ্যুষিত দেশ। অস্ট্রিয়ার ¯øাভ অধিবাসীরা সার্বিয়ার সাথে সংযুক্ত হতে
চাইতো। এই বিরোধে সার্বিয়াকে সমর্থন করতো রাশিয়া, আর অস্ট্রিয়ার পেছনে ছিল জার্মানি।
জার্মানির ঔপনিবেশিক চিন্তাও ছিল। বার্লিন-বাগদাদ রেলপথ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জার্মানির অর্থনৈতিক
স্বার্থবৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখা দিলে ইংল্যান্ড ও রাশিয়া অসন্তুষ্ট হয়।
এদিকে অস্ট্রিয়ার সার্বিয়া সমর্থক ¯øাভরা বিভিন্নগোপন সমিতি গঠন করে সন্ত্রাসবাদের আশ্রয় নেয়।
প্রাক্তন সামরিক কর্মীদের নিয়ে গঠিত এরকম একটি দলের নাম ছিল ‘বø্যাক হ্যান্ড' সার্বিয়া থেকেই এটি
পরিচালনা করা হতো। ১৯১৪ সালের ২৮ জুন অস্ট্রিয়ার যুবরাজ ফার্দিনান্ড ও তার স্ত্রী সোফিয়া বসনিয়া
রাজধানী সারায়েভা ভ্রমণে এলে সার্বিয় সন্ত্রাসীদের হাতে তিনি নিহত হন। এটি ‘সারাজেভো হত্যাকান্ড'
নামে ইতিহাস খ্যাত হয়ে আছে। এ হত্যাকান্ডের ফলে অস্ট্রিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং সার্বিয়াকে চরমপত্র
সম্বলিত কয়েকটি দাবি পেশ করে। সার্বিয়া কয়েকটি দাবি পূরণ এবং অন্যান্য দাবির জন্যে একটি
আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রস্তাব দেয়। কারণ, এগুলির সাথে তার সার্বভৌমত্বের প্রশ্নজড়িত ছিল।
অস্ট্রিয়া তা অগ্রাহ্য করে ২৮ জুলাই ১৯১৪ সালে সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেড আক্রমণ করে। এভাবে
মহাযুদ্ধের সূচনা হয়।
প্রথম মহাযুদ্ধ জলে ও স্থলে সর্বত্র বিস্তৃত হয়। স্থলভাগে গোটা ইউরোপ মহাদেশে যুদ্ধ চলতে থাকে।
পশ্চিম রণাঙ্গনে, জার্মানি নিরপেক্ষ দেশ বেলজিয়াম দখল করে। বেলজিয়াম রক্ষার জন্য ব্রিটেনের সকল
চেষ্টা ব্যর্থহয়। ফলে জার্মান সেনাদল রাইন সীমান্তও বেলজিয়াম-এর ভিতর দিয়ে নদীর স্রোতের মত
ফ্রান্সে ঢুকে পড়ে এবং তারা রাজধানী প্যারিসের ১৫ মাইলের মধ্যে এসে পড়ে। এরপর ফরাসি
সেনাবাহিনী সেনাপতি জোসেফ জোফ্রির নেতৃত্বেপ্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তারা প্রতি ইঞ্চি ভ‚মির
জন্যে লড়াই করে হানাদার জার্মানদের ফরাসি সীমান্তের বাইরে ঠেলে দেয়। জার্মান ও ফরাসি সৈন্য
বাহিনী পরিখা খনন করে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকে। এই সময় ব্রিটেনের ট্যাংক বাহিনী যুদ্ধরত
ফরাসিদের সাথে যোগ দেয় এবং ভার্দুনের যুদ্ধে এই মিলিত বাহিনী জার্মানদের হটিয়ে দেয়। জার্মান
বাহিনী তখন পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে যেতে থাকে। মিলিত বাহিনী যুদ্ধরত ফরাসিদের সাথে যোগ দেয়
এবং ভার্দুনের যুদ্ধে মিলিত হয়ে সোমের যুদ্ধে মিত্র বাহিনীর বহু ক্ষয়ক্ষতি করে। এদিকে ইতালি
জার্মান-অস্ট্রিয়ার মিত্রতা ত্যাগ করে মিত্রপক্ষে যোগ দেয়। ইতালির বিরুদ্ধে তখন অস্ট্রিয় বাহিনী
আক্রমণ চালায়। এইভাবে কিছুকাল পশ্চিম রণাঙ্গনে জয়-পরাজয় অনিশ্চিত থাকে। পূর্ব রণাঙ্গনে,
প্রথমদিকে রাশিয়ার সেনাদল জার্মানির গ্যালিসিয়া প্রদেশে ঢুকে পড়ে। কিন্তুদুর্ধর্ষজার্মান সেনাপতি
হিন্ডনবার্গের সহকারী সামরিক অফিসার লুডেনডফ রুশ সেনাদের জার্মানি থেকে বিতাড়িত করেন।
ট্যানেনবার্গ ও অগাস্টোভোর যুদ্ধে রুশদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। ১৯১৫ সালে হিন্ডেনবার্গ রাশিয়ার
ইউক্রেন ও ক্রিমিয়া দখল করে নেন।
অন্যদিকে জার্মানির মিত্র তুরস্ক গুরুত্বপূর্ণদার্দানালিস প্রণালী দিয়ে মিত্রশক্তির জাহাজ বন্ধ করে দেয়।
তখন মিত্রপক্ষ গ্যালিপোলি আক্রমণ করে শোচনীয়ভাবে পরাস্তহয় এবং মধ্যপ্রাচ্যে তুর্কিসেনাদের
বিরুদ্ধে কুৎ-এল আমারার যুদ্ধেও মিত্রবাহিনী বিফল হয়। অবশ্য ইংরেজ সৈন্যদল বাগদাদ দখল করে
নেয়।
সামুদ্রিক যুদ্ধে মিত্র শক্তির জাহাজগুলি জার্মান সাবমেরিন বা ডুবোজাহাজ দ্বারা প্রচন্ড ক্ষতির মুখোমুখি
হয়। অসংখ্য ব্রিটিশ ও ফরাসি জাহাজ এই গুপ্ত আক্রমণ মহাসাগরের তলদেশে হারিয়ে গেছে।
ডগারব্যাঙ্ক ও হ্যালিগোন্ডের নৌযুদ্ধে জার্মান ও ইংরেজ নৌবাহিনী প্রচন্ড ক্ষয়ক্ষতির সম্পুখীন হয়। তবে
জার্মান নৌবাহিনীর অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতি হয়। ফলে জার্মান নৌবহর ইংরেজদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধ এড়িয়ে
চলে।
এদিকে রাশিয়ায় বলশেভিক বিপ্লবের পর লেনিন যুদ্ধ ত্যাগ করার নীতি গ্রহণ করেন। ফলে রাশিয়া
জার্মানির সাথে ব্রেস্টালিটভস্কের সন্ধি অনুযায়ী যুদ্ধ ত্যাগ করে। তখন জার্মানি তার পূর্ব রণাঙ্গনের
সৈন্যদের পশ্চিম রণাঙ্গনের নিয়ে আসে। এই বাড়তি শক্তি নিয়ে জার্মানি পুনরায় বেলজিয়াম ও ফ্রান্স
আক্রমণ করে। এ সময় মিত্র শক্তির পক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রযোগ দেয় এবং জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা
করে। এর ফলে যুদ্ধের মোড় ঘুরে যায়। এশিয়ায় জাপানও জার্মানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগ দেয়।
বেশ কিছুস্থল যুদ্ধ (এমিয়েন্স ও ইপ্রেসের যুদ্ধ) সংঘটিত হবার পরও জয় পরাজয় অমীমাংসিত থাকে।
দীর্ঘকাল বিরতিহীন যুদ্ধ চলতে থাকায় জার্মানির শক্তি অনেক কমে যায়। অন্যদিকে সম্পদশালী
যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য নিয়ে মিত্র শক্তি নতুন উদ্যামে যুদ্ধ আরম্ভকরে। তাছাড়া মিত্র শক্তি প্রচার যুদ্ধেও
জার্মানির মনোবল ভেঙ্গে দেয়। ফলে জার্মানবাহিনী ইউরোপ ও এশিয়ার সব রণাঙ্গনেই পরাজিত হতে
থাকে। তার মিত্রবর্গতুরস্ক, বুলগেরিয়া ও অস্ট্রিয়া আত্মসমর্পণ করে। জার্মানি নৌবাহিনীর বিদ্রোহ
ঘোষণা করে এবং গণতন্ত্রপন্থীরা আন্দোলন শুরু করে। এই পরিস্থিতিতে কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম দেশ
থেকে পলায়ন করেন। জার্মানিতে একটি প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সরকার ১৯১৮ সালে
মিত্র শক্তির সাথে যুদ্ধ বিরতি স্বাক্ষর প্রথম মহাযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে।
প্রথম মহাযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ
জার্মানরা পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা জাতি। প্রথম মহাযুদ্ধ যখন শুরু হয়, তখন সমর পরিকল্পনা,
অস্ত্রশস্ত্র, সম্পদ ও জনবল সব মিলিয়ে জার্মানি মিত্রশক্তি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ছিল। জার্মানির কামান ও ডুবো
জাহাজের ক্ষমতা ছিল অপ্রতিদ্বন্দ¡ী। জার্মানির কোলন সেতুদিয়ে প্রতি দশ মিনিটে একটি করে সামরিক
ট্রেন চলতো। কিন্তুএরপরেও জার্মানি পরাজিত হয়। ঐতিহাসিক ও সমর বিশেষজ্ঞতা এই পরাজয়ের
কতকগুলো নির্ণয় করেছেন।
এগুলো হল ঃক. দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে জার্মানির অক্ষমতা
একটি দেশ হিসেবে জার্মানির যে ক্ষমতা ছিল তা দ্বারা স্বল্পকালীন যুদ্ধে জয়লাভ সম্ভব ছিল এবং জার্মানি
প্রথম দিকে এই জয় পেয়েছিল সত্য। কিন্তুজার্মানির পক্ষে দীর্ঘকালীন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল
না। অন্যদিকে মিত্র শক্তির সম্পদ ও শক্তি এমন ছিল যে, তারা দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের ভারবহন করতে সক্ষম
ছিল। ব্রিটেন ও ফ্রান্স তাদের বিশাল ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য থেকে সম্পদ ও সৈন্যদল সংগ্রহ করে। কিন্তু
কোনো উপনিবেশ না থাকায় জার্মানির এই সুযোগ ছিল না। এটা জেনে মিত্র শক্তি যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত
করে। ফলে এই দীর্ঘযুদ্ধে জার্মানির ‘দম' ফুরিয়ে যায়।
খ. নৌশক্তিতে মিত্রপক্ষের শ্রেষ্ঠত্ব
ব্রিটিশ ও ফরাসি নৌবহর সমুদ্রপথে জার্মানিকে অবরোধ করায় বহির্বিশ্বথেকে জার্মানির পক্ষে সামরিক
সরঞ্জাম ও খাদ্য দ্রব্য আমদানি সম্ভব হয় নি। উত্তর সাগরে ইংরেজ নৌবহর এবং ভ‚মধ্যসাগরে ফরাসি
নৌবহর জার্মান উপক‚লকে ঘিরে রাখে। জার্মান ডুবো জাহাজ দ্বারা ব্রিটিশ নৌ জাহাজগুলিকে ধ্বংস
করার ব্যবস্থা করা হলেও আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় নি। এরই মধ্যে ব্রিটেন সাবমেরিন ধ্বংস করার
অস্ত্রআবিষ্কার করলে জার্মানদের আক্রমণ অকার্যকর হয়ে যায়। হেলিগোল্যান্ডের নৌ-যুদ্ধে জার্মান
নৌবহর মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং এরপর জার্মানরা আর ব্রিটিশ নৌবাহিনীকে আক্রমণ
করার সাহস পায়নি। জলপথে ইংরেজ ও ফরাসিদের অপ্রতিদ্বন্দ¡ী ক্ষমতা তাদের সরবরাহ লাইনকে
অক্ষুন্নরাখে। অন্যদিকে একই ক্ষেত্রে জার্মানদের দুর্বলতা শেষ পর্যন্ততাদের পরাজয়ের কারণ হয়ে
দাঁড়ায়।
গ. একই সময় একাধিক ফ্রান্টে যুদ্ধ এবং শক্তি ক্ষয়
১৯১৪ থেকে ১৯১৭ সাল পর্যন্তজার্মানিকে একই সময়ে পূর্বও পশ্চিম সীমান্তেসৈন্য সমাবেশ করে যুদ্ধ
করতে হয়। ফলে কোনো একটি প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে পুরু সৈন্য সমাবেশ করা জার্মানের পক্ষে সম্ভব হয়
নি। ক‚টনীতি দ্বারা যদি জার্মানি তার পূর্বসীমান্তের দেশ রাশিয়ার সাথে মৈত্রী সম্পর্কঅথবা দেশটিকে
নিরপেক্ষ রাখতে পারতো তাহলে জার্মানির বিজয়ের সম্ভবনা ছিল। কিন্তুজার্মানির ক‚টনীতি প্রথম দিকে
সফল হয়নি। ১৯১৭ সালে রাশিয়া নিজ প্রয়োজনে যুদ্ধ থেকে সরে দাঁড়ায়। রাশিয়ার শূন্যস্থানটি তখন
পূরণ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
ঘ. জার্মান রণকৌশলের দুর্বলতা
‘আক্রমণই আত্মরক্ষার শ্রেষ্ঠ উপায়' এই জার্মান রণকৌশলটি আপাতত চমকপ্রদ মনে হলেও দীর্ঘস্থায়ী
যুদ্ধে এই কৌশলের দুর্বলতা প্রকটভাবে ফুটে ওঠে। অবশ্য জার্মানির হাতে বিকল্প কিছুছিল না। কারণ,
আক্রমণের মুখে পশ্চাদপসরণ করে দাঁড়াবার মত স্থান দেশটিতে ছিল না। যেমন রাশিয়া-তার বিরাট
ভ‚খন্ডের জন্যে আক্রমণের মুখে পিছুহটে শক্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধের পর যুদ্ধ করতে পারতো, জার্মানির কিন্তু
অনুরূপ কোনো সুযোগ ছিল না।
ঙ. ফরাসিদের জনযুদ্ধ
হানাদার জার্মানির বিরুদ্ধে ফ্রান্স সরকারকে সে দেশের আপামর জনগণ অভ‚তপূর্ব সহায়তা করে।
১৮৭০ সালে জার্মানির নিকট ফ্রান্সের পরাজয় দেশটির জনগণের মধ্যে জার্মান বিরোধী প্রবল জনমত
সৃষ্টি করে। ফলে যুদ্ধের প্রথম দিকে জার্মানি যখন দ্রæত বেগে রাজধানী প্যারিসের দিকে এগিয়ে যায়
তখন ফরাসি জনগণ স্বতস্ফ‚র্তভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
চ. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যোগদান
ইউরোপে শক্তিসাম্য অব্যাহত রাখা, মার্কিন বাণিজ্যের স্বার্থরক্ষা এবং সর্বোপরি নিরাপত্তা চিন্তা থেকে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রমিত্র পক্ষের যুদ্ধে যোগদান করে। উদীয়মান পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রবিপুল সমর
সম্ভার, জনবলসহ মিত্রপক্ষে যোগ দিলে জার্মানির জয়ের সকল সম্ভাবনা তিরোহিত হয়ে যায়।
এস এস এইচ এল
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস - ২ পৃষ্ঠা -২৩৬
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
১. প্রথম মহাযুদ্ধে শুরু হয়-
(ক) ১৯০৫ (খ) ১৯১৪
(গ) ১৮৭০ (ঘ) ১৯২৫
২. ধনতন্ত্রের সর্বোচ্চ পর্যায় হলো সাম্রাজ্যবাদ' কথাটি কে বলেছেন-
(ক) হিটলার (খ) মার্কস
(গ) চেম্বারলিন (ঘ) লেনিন
৩. প্রথম মহাযুদ্ধের প্রাক্কালে সমগ্রবিশ্বেব্রিটেনের উপনিবেশের পরিমাণ ছিল-
(ক) ৩০% (খ) ৪০%
(গ) ৪৫% (ঘ) ৯০%
৪. বিসমার্ককত সাল পর্যন্তজার্মানির চ্যান্সেলর ছিলেন-
(ক) ১৪৯০ (খ) ১৮৮০
(গ) ১৮৫০ (ঘ) ১৮৯৪
৫. আগাদি কোনো দেশের বন্দর-
(ক) সৌদি আরব (খ) ফ্রান্স
(গ) মরক্কো (ঘ) মিশর
৬. ১৯১৪ সালের ২৮ জুন নিহিত অস্টিয়ার যুবরাজের নাম হল-
(ক) বিসমার্ক (খ) রুমেল
(গ) হ্যানরী (ঘ) ফার্ডিনান্ড
৭. কোন জর্মান সেনাপতি রাশিয়ার কাছ থেকে রাশিয়ার ইউক্রেন ও ক্রিমিয়া দখল করেন।
(ক) রুমেল (খ) হিন্ডেন বার্গ
(গ) কাইজার (ঘ) বিসমার্ক
উত্তর : ১। (খ), ২। (ঘ), ৩। (গ), ৪। (ঘ) , ৫। (গ), ৬। (ঘ), ৭। (খ)
রচনামূলক প্রশ্ন
ক. প্রথম মহাযুদ্ধের পটভ‚মি বর্ণনা করুন।
খ. প্রথম মহাযুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ বর্ণনা করুন।
গ. প্রথম মহাযুদ্ধের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিন।
ঘ. প্রথম মহাযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ বর্ণনা করুন।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. উগ্রজাতীয়তাবাদ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম কারণ ব্যাখ্যা করুন।
২. প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বাণিজ্যিক ও ঔপনিবেশিক প্রতিদ্ব›িদ্বতার অংশ নির্ণয় করুন।
৩. আগাদির সমস্যা কি ?
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত