(১) নেপোলিয়নের সাম্রাজ্য বিস্তারের বিভিন্ন দিক আলোচনা করুন ।
(২) নেপোলিয়ন কেন সাম্রাজ্য বিস্তারে মনোযোগী হন ? তাঁর সাম্রাজ্যে বিস্তৃতি আলোচনা করুন।


সাম্রাজ্য বিস্তার
নেপোলিয়ন বোনপার্ট ফ্রান্সের সেনাবাহিনীর উচ্চ পদ লাভ করার পর বিভিন্ন যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়ে
সাফল্য অর্জন করেন। তিনি যখন সাফল্যের শীর্ষে অবস্থান করছিলেন সেই মুহূর্তে ফ্রান্সের রাজ
ক্ষমতারও অধিকারী হন। ফলে নতুন নতুন রাজ্যজয় তার নেশায় পরিণত হয়। এখানে তাঁর রাজ্য
জয়ের অর্থাৎ ফরাসি সাম্রাজ্য বিস্তারের বিভিন্ন দিক আলোচনা করা হল।
১) সাম্রাজ্যবাদ
অনেকে মনে করেন যে, পররাজ্য গ্রাস বা সাম্রাজ্যবাদী ¯পৃহা ছিল নেপোলিয়নের সাম্রাজ্য বিস্তারের মূল
উদ্দেশ্য। অবশ্য তিনি তাঁর রাজ্য লিপ্সাকে আদর্শের ছদ্ম আবরণে ঢেকে রাখেন। প্রথমত, তিনি ফ্রান্সের
প্রাকৃতিক সীমানা স্থাপনের লক্ষ্য নিয়ে রাইন সীমান্ত, বেলজিয়াম, ইতালির অরণ্যময় উপত্যকা ও
সুইজারল্যান্ড অধিকার করেন। ক্যাম্পোফোর্মিও, লুনভিল ও প্রেসবার্গের সন্ধির দ্বারা তার উদ্দেশ্য
পরিপূর্ণতা পায়। কিন্তু প্রাকিৃতিক সীমানা স্থাপনের পর তার উচ্চাকাক্সক্ষা বৃদ্ধি পায়। সমগ্র ইউরোপ জয়
করার উচ্চাশা তিনি পোষণ করেন। মধ্যযুগের সম্রাট শার্লামেইনের সর্ব ইউরোপীয় সাম্রাজ্যের আদর্শ
তাঁকে আচ্ছন্ন করে। তিনি নিজেকে শার্লামেইনের ন্যায় পবিত্র রোমান সম্রাট হিসেবে ঘোষণা করেন ।
২) বিপ্লবের আদর্শ প্রচার
কোনো কোনো ঐহিতাহাসিক মনে করেন যে নেপোলিয়ন ছিলেন বিপ্লবের তরবারি (ঘধঢ়ড়ষবড়হ রং ঃযব
ংড়িৎফ ড়ভ ঃযব জবাড়ষঁঃরড়হ)। ফরাসি বিপ্লবের সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার বাণী তিনি নিপীড়িত
ইউরোপের জনগণের কাছে পৌঁছে দেন, ইউরোপের স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রগুলো তাঁর আক্রমণে ভেঙে
পড়ে। এই ধবংস প্রাপ্ত রাজতন্ত্রের ভগ্নস্তুপের উপর তিনি জনসাধারণের সাম্য ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত
করতে চেয়েছেন। রেড্ডওয়ের (জবফফধধিু) মতে যেখানে নেপোলিয়নের ঈগল খচিত পতাকা উড়ে,
সেখানেই পুরাতনতন্ত্র আর ফিরে আসেনি (ডযবৎবাবৎ ঘধঢ়ড়ষবড়হরপ ঊধমষবং ভষব,ি ঃযরহমং বিৎব হড়ঃ
ঃযব ংধসব ধমধরহ)। তিনি ইউরোপের জনসাধানরণকে সামন্তশাসন ও স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের হাত থেকে
মুক্ত করে তাদের সমান সামাজিক অধিকার দেন।
৩) ইংল্যান্ডের বিরোধিতা
কারো কারো মতে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের নিরবিচ্ছন্ন বিরোধিতার ফলে নেপোলিয়ন সাম্রাজ্য বিস্তার
নীতি গ্রহণ করতে বাধ্য হন। নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, প্রæশিয়া ও রাশিয়াকে নিয়ে
একের পর এক জোট গড়ে তুলে। ইংল্যান্ডের নৌবহর ফ্রান্সের সামুদ্রিক আধিপত্যকে চুর্ণ করে দেয়।
প্রকৃত পক্ষে নেপোলিয়নের উচ্চাকাঙক্ষার এবং সাম্রাজ্য বিস্তার নীতির ফলেই ইংল্যান্ডের সাথে ফ্রান্সের



বিরোধিতা তীব্রতর হয়। নেপোলিয়ন বেলজিয়াম, রাইন সীমান্ত, ইতালি অধিকার করলে এবং অস্ট্রিয়া ও
এশিয়াকে পরাস্তকরলে ইংল্যান্ড আতঙ্কিক হয়ে পড়ে। মোট কথা নেপোলিয়নের সাম্রাজ্যবাদ নীতির
লক্ষ্য ছিল রাজ্যলিপ্সা, যদিও তৎকালীন পরিস্থিতি তাঁকে ইউরোপে একটি নতুন সমাজ বিধান স্থাপনের
সুযোগ দেয় কিন্তু শেষ পর্যন্তরাজ্যলিপ্সাই তাঁকে পেয়ে বসে।
নেপোলিয়নের সাম্রাজ্য বিস্তারকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় ।
১. সম্রাট রূপে অধিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে রাজ্য বিস্তার
২. সম্রাট রূপে সাম্রাজ্য বিস্তার এবং
৩. টিলজিটের সন্ধির পরবর্তী সাম্রাজ্য বিস্তার
ক. ইতালি অভিযান ১৭৯৬-৯৭
নেপোলিয়নের প্রথম অভিযান পরিচালিত হয় ইতালির বিরুদ্ধে ১৭৯৬ সালে। এই অভিযান এক বছর
স্থায়ী হয়। তাঁর এই অভিযানের সারাংশ এক কথায় বলতে গেলে ‘তিনি এলেন, দেখলেন এবং জয়
করলেন (ঐব পধসব, যব ংধ,ি যব পড়হয়ঁবৎবফ)। এই অভিযানে নেপোলিয়নকে সার্দিনিয়া ও অস্ট্রিয়ার
সম্মিলিত প্রায় ৭০,০০০ সৈন্যের মোকাবিলা করতে হয়। অথচ তাঁর নিজের সৈন্য সংখ্যা শত্রæপক্ষের
প্রায় অর্ধেক ছিল। তাই তিনি বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করেন। তিনি শত্রæ সৈন্যদের একত্রিত হওয়ার
সুযোগ দেননি। তিনি অস্ট্রিয়া এবং এর মাঝে অবস্থান করেন, প্রথমে পূর্বদিক অর্থাৎ অস্ট্রিয়ার বাহিনীকে
পূর্বদিকে বিতাড়িত করে পশ্চিমে সার্দিনিয়া আক্রমণ করে পরাজিত করেন। সার্দিনীয়রা শান্তির প্রস্তাব
করে এবং স্যাভয় (ঝধাড়ু) ও নিস (ঘরপব) কে ফ্রান্সের প্রদেশ হিসেবে স্বীকার করে।
খ. অস্ট্রিয়া অভিযান
ইতালি জয়ের পর নেপোলিয়ন অস্ট্রিয়ার প্রতি মনোযোগ দেন এবং আদা (অফফধ) নদী অতিক্রম করে
অস্ট্রিয়া অভিযান করায় নেপোলিয়ন ঞযব খরঃঃষব ঈড়ৎঢ়ড়ৎধষ নামে খ্যাত হন। অস্ট্রিয়ার শক্তিশালী দুর্গ
মানটুয়া (গধহঃঁধ) অবরোধ করাায় অস্ট্রিয়া আলপস (অষঢ়ধং) থেকে সৈন্য প্রেরণ করে মানটুয়া
পুনরুদ্ধারের জন্য। কিন্তু ফরাসি সৈন্যবাহিনীর প্রতিরোধের কারণে সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং
নেপোলিয়নের বাহিনীর নিকট অবশেষে ১৭৯৭ সালে জানুয়ারি মানটুয়া আত্মসমর্পণ করলে
নেপোলিয়নের বাহিনী আত্মসের দিকে অগ্রসর হয়। অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার দিকে অগ্রসর হতে
থাকে। তখন অস্ট্রিয়া শান্তির প্রস্তাব পাঠায়। শান্তিস্থাপনের মাধ্যমে অস্ট্রিয়া ফ্রান্সের অধীনে আসে।
গ. মিসর অভিযান
ইতালি ও অস্ট্রিয়া জয়ের পরে নেপোলিয়ন ফ্রান্সের শক্র রাষ্ট্র ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার
সিদ্ধান্তগ্রহন করেন। কিন্তু শক্তিশালী নৌবহর ব্যতীত সমুদ্র বেষ্টিত ইংলান্ড আক্রমণ করা ফ্রান্সের পক্ষে
আদৌ সহজ সাধ্য ছিলনা। তাই প্রাচ্যে ইংল্যান্ডের প্রভাব প্রতিপত্তি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্য এবং তার
ব্যবসা-বাণিজ্য ধবংস করে পরোক্সবাবে ইংল্যান্ডকে হীনবল করার জন্য নেপোলিয়ন প্রাচ্যের প্রবেশ পথ
মিসর আক্রমণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। নেপোলিয়নের এই পরিকল্পনা প্রাচ্য পরিকল্পনা (ঊধংঃবৎহ
চৎড়লবপঃ) নামে পরিচিত। তাঁর এই পরিকল্পপনার উদ্দেশ্য ছিল ভারতবর্ষে ইংল্যান্ডের প্রাধান্য বিনষ্ট এবং
কনস্টানটিনোপল অধিকার করা। এই উদ্দেশ্য নৌ বহরের তীক্ষè দৃষ্টি এড়িয়ে ১৭৯৮ সালে নেপোলিয়ান
মাল্টা অধিকার করে মিসরে উপস্থিত হন। পিরামিডের যুদ্ধে জয়লাভ করে নেপোলিয়ন মিসর অধিকার
করেন। এই সময় নেলসন (ঘবষংড়হ) এর নেতৃত্বে ইংরেজ নৌবাহিনী নীল নদের উপকূলে এসে
উপস্থিত হয় এবং আবুকির (অনঁশরৎ) উপসাগরে এক জলযুদ্ধে ফরাসি নৌ বাহিনীকে সম্পূর্ণরূপে ধবংস
করে। এই যুদ্ধ সাধারণত ‘নীল নদের যুদ্ধ’ নামে খ্যাত। ইংল্যান্ডের এই বিজয় নেপোলিয়ন ও তার
সৈন্যবাহিনীকে ফ্রান্সের সাথে সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। অতপর নেপোলিয়ন সিরিয়া আক্রমণ
করে কতিপয় শহর অধিকার করেন।


ঘ. দ্বিতীয় রাষ্ট্রজোটের মোকাবিলা
এ সময়ে ব্রিটেন, রাশিয়া, অস্ট্রিয়া ফান্সের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় রাষ্ট্রজোট গঠন করে। কিন্তু নেপোলিয়ন
সাহসের সঙ্গে এই রাষ্ট্রজোট মোকাবিলা করেন। তিনি কূটকৌশল অবলম্বন করে রাশিয়াকে জোট ত্যাগ
করতে বাধ্য করেন। আর অস্ট্রিয়াকে ম্যারেঙ্গো ও জোহনলিক্ষের যুদ্ধে পরাজিত করেন। ফলে অস্ট্রিয়া
১৮০১ সালে লুনেভিলের (খঁহবারষষব) সন্ধিতে স্বাক্ষর করে আত্মরক্ষা করে। এদিকে ব্রিটেন প্রতিকূল
অবস্থার মধ্যে শান্তিস্থাপন করতে বাধ্য হয়।
২) সম্রাটরুপে সাম্রাজ্য বিস্তার
১৮০৪ সালে নেপোলিয়ন ফ্রান্সের সম্রাটরূপে অধিষ্ঠিত হন। সম্রাট হিসেবে অধিষ্ঠিত হওয়ার পরও
নেপোলিয়নের সাম্রাজ্য বিস্তার অব্যাহত থাকে এবং সমগ্র ইউরোপে নেপোলিয়ন ফ্রান্সের প্রভাব প্রতিষ্ঠিত
করেন। এখানে সম্রাট রূপে নেপোলিয়ন বোনাপার্টের সাম্রাজ্য বিস্তার আলোচনা করা হল।
১. ট্রাফালগার যুদ্ধ
নেপোলিয়ন সর্বপ্রথম ইংরেজ রাজ কর্তৃক উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জার্মানির হ্যানোভার অবরোধ করেন
এবং এর বন্দর সমূহ ব্রিটিশ জাহাজের জন্য বন্ধ করে দেন। অতঃপর তিনি ইংল্যান্ড আক্রমণ করার
উদ্দেশ্যে বোলোনা ইড়ঁষড়মহধ এ বিরাট নৌবাহিনী গঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। কিন্তু উপযুক্ত
নৌবহরের অভাবে তিনি ইংল্যান্ড আক্রমণের পরিকল্পনা পরিত্যাগ করেন। ইতোমধ্যে ইংরেজ সেনাপতি
নেলসনের কাছে ইংল্যান্ডের বিজয় ফ্রান্সের নৌশক্তি ধবংস করে এবং নেপোলিয়ন প্রত্যক্ষভাবে ইংল্যান্ড
আক্রমণের আশা ত্যাগ করেন। অপরদিকে ইংল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, প্রæশিয়া, রাশিয়া এবং সুইডেন নিয়ে
ফ্রান্সের বিরুদ্ধে এক তৃতীয় রাষ্ট্র জোট গঠন করে। এই সময় অস্ট্রিয়া এবং রাশিয়া নেপোলিয়নের
আক্রমণাত্মক নীতির কারণে তাঁর প্রতি বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে। তৃতীয় রাষ্ট্রজোট গঠনের সংবাদে নেপোলিয়ন
তাঁর পরিকল্পনা পরিবর্তন করেন। ইড়ঁষড়মহধ এর বিরাট সৈন্যবাহিনী অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে পরিচালনা
করেন। তিনি উম (টষস) এর যুদ্ধে অস্ট্রিয়ার সেনাপতিকে বন্দি করেন। অতপর ১৮০৫ সালে
অস্টারলিটজ (অঁংঃবৎষরঃু) এর রণক্ষেত্রে তিনি রাশিয়া ও অস্ট্রিয়ার সম্মিলিত সৈন্যবাহিনাীকে
শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন। নেপোলিয়নের এই বিজয়ে তৃতীয় রাষ্ট্রজোট ভেঙ্গে যায় এবং অস্ট্রিয়া
প্রেসবার্গ চৎবংনঁৎম সন্ধির মাধ্যমে ভেনিস ও টাইরল (ঠবহরপব ধহফ ঞুৎড়ষ) নেপোলিয়নের হাতে ছেড়ে
দেয়। জার্মানিতে অবস্থিত অস্ট্রিয়ার ব্যাভারিয়া (ইধাধৎরধ) এবং ঊর্টেমবার্গ (ডঁৎঃবসঁৎম) স্বাধীন রাষ্ট্র
হিসাবে স্বীকৃত হয় -এতে অস্ট্রিয়া দুর্বল ও শক্তিহীন হয়ে পড়ে।
২. প্রæশিয়ার সাথে যুদ্ধ
১৭৯৫ সালে বাসলে ইধংষব এর সন্ধির মাধ্যমে দীর্ঘ দশবছর প্রæশিয়া ও ফ্রান্সের শান্তি অক্ষুন্ন ছিল।
এমন কি ফরাসি বাহিনী প্রæশিয়ার রাজ্য সীমা লঙ্ঘন করা সত্তে¡ও রাজা তৃতীয় ফ্রেডারিখ উইলিয়াম তাঁর
নিরপেক্ষ নীতি হতে বিচ্যুত হননি। কিন্তুু জার্মানিতে নেপোলিয়নের হস্তক্ষেপের দরুন প্রæশিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে
উঠে। নেপোলিয়ন প্রæশিয়াকে প্রদত্ত হ্যানোভার (ঐধহড়াবৎ) পুনরায় ইংল্যান্ডকে ফিরিয়ে দেবার প্রস্তাবে
প্রæশিয়ার ধৈর্যের সীমা অতিক্রম করে এবং প্রæশিয়ার ইংল্যন্ড ও রাশিয়ার সাথে মিত্রতা স্থাপন করে
ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু জেনা (ঔবহধ) এর যুদ্ধে প্রæশিয়ার বাহিনী নেপোলিয়নের নিকট
পরাজয় বরণ করে এবং ১৮০৬ সালে নেপোলিয়ন বার্লিন দখল করে ।
(৩) রাশিয়ার বিরুদ্ধে অভিযান
প্রæশিয়ার পর ১৮০৭ সালে নেপোলিয়ন ফ্রিডল্যান্ডের যুদ্ধে রাশিয়াকে পরজিত করেন এবং উভয়ের
মধ্যে টিলজিট (ঞরষংরঃ) সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়। এই সন্ধির মাধ্যমে প্রাশিয়াকে তার সাম্রাজ্যের প্রায় অর্ধেক
ছেড়ে দিতে হয় এবং ইউরোপকে ফ্রান্স ও রাশিয়ার মধ্যে ভাগাভাগি করে নেওয়ার গোপন সমঝোতা


প্রতিষ্ঠিত হয়। পশ্চিম ইউরোপে নেপোলিয়ন এবং ইউরোপে জারের প্রাধান্য স্বীকার করে নেওয়া হয়।
ফলে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধে জার প্রয়োজনীয় সাহায্য দেওয়ার প্রতিশ্রæতি দেয়।
টিলজিটের সন্ধি নেপোলিয়নের জন্য বিরাট সাফল্যের পরিচয় বহন করে।
৪. টিলজিট সন্ধির পরবর্তী নেপোলেয়নের সাম্রাজ্য বিস্তার
নেপোলিয়ন কর্তৃক টিলজিট সন্ধি পরবর্তী সাম্রাজ্য বিস্তারে বিবরণ প্রদত্ত হলো-
ডেনমার্ক, সুইডেন ও পর্তুগাল অভিযান
১৮০৭ সালে টিলজিটের সন্ধির পর ফ্রান্সের একমাত্র শত্রু রয়ে যায় ব্রিটেন। ব্রিটেনের ব্যবসা-বাণিজ্য
ধবংস করার জন্য নেপোলিয়ন রুশ জার প্রথম আলেকজান্ডারের সঙ্গে টিলজিটের সন্ধি কার্যকর করতে
এবং ডেনমার্ক, সুইডেন ও পর্তুগালকে ব্রিটিশ পণ্য বর্জন করার জন্য বল প্রয়োগ করতে উদ্যোগী হয়।
১৮০৭ সালে ডেনমার্ক ফ্রান্সের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়। একই বছর সুইডেনের রাজা চতুর্থ গুস্তাভাস ব্রিটেনের
সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ফ্রান্সের আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ় করেন। কিন্তু ফ্রান্সের ক্রমাগত
আক্রমণে পর্যুদস্তহয়ে সুইডেন স্ট্রাসল্যান্ড (ঝঃৎধংষধহফ) ফ্রান্সকে সমর্পণ করতে বাধ্য হয়। সুইডেন
নেপোলিয়নের মহাদেশীয় ব্যবস্থা গ্রহণে অস্বীকার করলে জার প্রথম আলেকজান্ডার ডেনমার্কের সাথে
চুক্তি বদ্ধ হয়ে সুইডেন আক্রমণ করে। ১৮০৮ সালে রুশ বাহিনী ফিনল্যান্ডের রাজধানী আবো (অনড়)
ও সংলগ্ন দ্বীপপুঞ্জ দখল করে। ১৮০৯ সালে গুস্ত-ভাসের উত্তরাধিকারী ত্রয়োদশ চার্লস (ঈযধৎষবং ঢওওও)
রাশিয়াকে ফিনল্যান্ড সমর্পণ করে এবং মহাদেশীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সম্মত হয় এবং ফ্রান্সের সঙ্গে
প্যারিসের সন্ধি (ঞৎবধঃু ড়ভ চধৎরং) স্বাক্ষর করেন। এর পরে নেপোলিয়ন পর্তুগালের বিরুদ্ধে অগ্রসর
হন। তিনি পর্তুগালের প্রিন্স রিজেন্টকে (চৎরহপব জবমবহঃ) ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার এবং
পর্তুগালে বিট্রেনের সকল সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার প্রস্তাব দেন। প্রিন্স রিজেন্ট এ প্রস্তাবে অসম্মত হলে
ফ্রান্স ১৮০৮ সালে পর্তুগালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।
(২) অস্ট্রিয়া অভিযান
অস্ট্রিয়া প্রথম থেকেই ফ্রান্সের প্রতি বিরূপ ছিল এবং স্পেনের গণআন্দোলনে উৎসাহিত হয়ে অস্ট্রিয়া
১৮০৯ সালে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে। অস্ট্রিয়ার সম্রাট প্রথম ফ্রান্সিস প্রæশিয়ার দুর্বলতার সুযোগ
নিয়ে জার্মানির নেতৃত্ব গ্রহণে উৎসাহিত হন। তিনি জার্মানিকে পিতৃভূমির স্বাধীনতা রক্ষার জন্য আহবান
জানালেই অস্ট্রিয়া বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। রুশ সম্রাট প্রথম আলেকজান্ডার অস্ট্রিয়াকে সমর্থন করতে
অস্বীকার করে। প্রæশিয়ার রাজা তৃতীয় ফ্রেডারিক উইলিয়াম অস্ট্রিয়ার সাথে মৈত্রী বন্ধন স্থাপনে অসম্মত
হন। ব্যাভারিয়া, ওয়েস্টফেলিয়া প্রভৃতি রাজ্যের সেনা বাহিনী অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে ফ্রান্সের সেনা বাহিনীতে
যোগদান করে। ১৮০৯ সালে রেটিসবর্ন এর যুদ্ধে (ইধঃঃষব ড়ভ জধঃরংনড়ৎহ, ১৮০৯) নেপোলিয়ন অস্ট্রিয়ার
সেনাপতি আর্চডিউক চার্লসকে শোচনীয়ভাবে পরাস্তকরেন এবং তিনি অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায়
প্রবেশ করেন। এর পর নেপোলিয়ন দানিয়ুব নদী অতিক্রম করে আর্চডিউকের উপর পুনরায় আক্রমণ
চালান। ১৮০৯ সালে আসপেরনের যুদ্ধে (ইধঃঃষব ড়ভ অংঢ়বৎহ, ১৮০৯) নেপোলিয়নের পরাজয় ঘটে এবং
তিনি যে অপরাজেয় নহেন এটা প্রতিপন্ন হয় এবং এই পরাজয় অস্ট্রিয়াকে উৎসাহিত করে। উভয় পক্ষে
পুনরায় ওয়াগবাসের রণক্ষেত্রে প্রবল যুদ্ধ শুরু হয়। এ যুদ্ধে অস্ট্রিয়া পরাজিত হয়। ব্রিটেন ১৮০৯
সালের জুলাই মাসে অস্ট্রিয়ার সাহায্যের জন্য চ্যাথাম (ঈযধঃযধস) এর অধীনে এক দল সৈন্য প্রেরণ
করে। কিন্তু ব্রিটিশ বাহিনী ফ্রান্সের বিরুদ্ধে সুবিধা করতে পারেনি। এর পরও নেপোলিয়ন বেশ কয়টি
যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন কিন্তু সেসব যুদ্ধে নেপোলিয়ন সাম্রাজ্য স¤প্রসারণ করার সুযোগ পাননি। একের


পর এক ব্যর্থতা নেপোলিয়কে এমনিভাবে ভর করে যে ১৮১৫ সালে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ওয়াটারলুতে
সংঘটিত যুদ্ধে জীবনের শেষ পরাজয় বরণ করতে বাধ্য হন।
(৩) নেপোলিয়নের স্পেন বিজয়
নেপোলিয়ন কর্তৃক ঘোষিত মহাদেশীয় ব্যবস্থার ক্ষেত্রে পর্তুগাল সহযোগিতা করতে অস্বীকার করলে
নেপোলিয়ন পর্তুগাল আক্রমণের জন্য স্পেনের ভিতর দিয়ে তাঁর সেনাদল পাঠান। ফন্টেনবø্যুর সন্ধির
দ্বারা নেপোলিয়ন ফ্রান্সের পর্তুগাল আক্রমণে স্পেনকে সাহায্য দিতে বাধ্য করেন। পর্তুগাল অভিযানকারী
ফরাসি সৈন্য বাহিনীর এক অংশ অকস্মাৎ স্পেনের দুর্গগুলি দখল করে নেয়। এতে ভীত হয়ে স্পেন রাজ
চতুর্থ চার্লস স্পেন থেকে পালাবার চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি ফরাসি সেনা দলের হাতে বন্দি হন।
স্পেনবাসীরা চতুর্থ চার্লসের পুত্র ফার্দিনান্দকে রাজা ঘোষণা করে ফরাসি সেনা দলকে স্পেন ত্যাগের
দাবি জানায়। চতুর্থ চার্লস ও যুবরাজ ফার্দিনান্দের অনুকূলে স্পেনের সিংহাসনের উপর তাঁর দাবি ছেড়ে
দেন। এসময় নেপোলিয়ন স্পেনের সিংহাসন দখলের পরিকল্পনা করেন। স্পেনের প্রজাদের মতামতকে
অগ্রাহ্য করে তিনি চার্লস ফার্দিনান্দকে স্পেনের সিংহাসন ছেড়ে দিতে বাধ্য করেন এবং তিনি স্পেনের
ঊভয় রাজাকে নির্বাসনে পাঠান। তিনি তাঁর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা যোসেফ বোনাপার্টকে স্পেনের রাজা ঘোষণা
করেন। ফরাসি সেনার সাহায্যে যোসেফ স্পেন শাসনের চেষ্টা করেন। যোসেফ নেপোলিয়নের
উদারনৈতিক সংস্কারগুলি স্পেনে প্রবর্তন করে জনমত প্রশমিত করার চেষ্টা করেন।
টিলজিটের সন্ধি
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ফ্রান্সে সম্রাট হিসেবে অধিষ্ঠিত হওয়ার পরও সাম্রাজ্য বিস্তার অব্যাহত রাখেন।
অস্ট্রারলিজের যুদ্ধে নেপোলিয়নের চমকপ্রদ সাফল্য নেপালিয়নকে স্থল পথে অপরাজেয় করে রাখে।
অস্ট্রিয়া পরাজিত হয়ে তৃতীয় শক্তিজোট ত্যাগ করে। ১৮০৫ সালে অস্ট্রিয়া নেপোলিয়নের সঙ্গে
প্রেসবার্গের সন্ধি স্বাক্ষর করে। প্রেসবার্গের সন্ধির ফলে জার্মানিতে নেপোলিয়নের প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ায়
প্রাশিয়া আতঙ্কিত হয়। প্রাশিয়া রাজ তৃতীয় ফ্রেডারিখ উইলিয়ামের রানী লুইসা তাঁর স্বামীকে
নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণে উৎসাহ দেন। কিন্তু জেনার যুদ্ধে নেপোলিয়নের রণকৌশলে প্রাশিয়া
বাহিনী বিধ্বস্তহয়। প্রæশিয়ার রাজধানী বার্লিন নগরি নেপোলিয়নের অধিকারে আসে। পরাজিত প্রæশিয়া
শনব্রনের সন্ধি (ঝপযড়হনড়ৎহ) দ্বারা যুদ্ধ ত্যাগ করে। পরজয়ের পর প্রæশিয়া তৃতীয় শক্তি জোটের
অবশিষ্ট সদস্য রাশিয়ার দিকে নজর দেয়। ১৮০৭ সালে রাশিয়া ফ্রিডল্যান্ডের যুদ্ধে ফরাসি বাহিনীর
নিকট পরাজিত হয় এবং টিলজিটের সন্ধি স্বাক্ষর করে (ঞৎবধঃু ড়ভ ঞরষংরঃ)। টিলজিটের সন্ধির মাধ্যমে
নেপোলিয়ন তাঁর সামরিক গৌরবের স্বর্ণ-শিখরে আরোহন করেন। টিলজিটের সন্ধির শর্তানুসারে (১)
নেপোলিয়ন ইউরোপে যে সকল রাজনৈতিক সংগঠন স্থাপন করেন রাশিয়ার জার তা মেনে নেন। যেমনক) জার্মানির পূর্ব-প্রান্তেওয়ারস রাজ্য নামে তাবেদার রাজ্য;
খ) পশ্চিম প্রান্তেওয়েস্টফেলিয়া রাজ্য নামে অপর তাবেদার রাজ্য;
গ) রাইন নদীর পশ্চিম দিকে জার্মান অংশ ফ্রান্সের অন্তর্ভূক্ত;
ঘ) জার্মানির ৩০০ টি রাজ্য ভেঙ্গে ৩৯ টি রাজ্য গঠন;
ঙ) জার্মানির দুই শক্তি অস্ট্রিয়া ও প্রাশিয়াকে দুর্বলকরণ;
চ) পরাজিত শক্তির নিকট থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়; প্রভৃতি শর্ত জার মেনে নেন। জার্মানির এই
রাজনৈতিক পরিবর্তন ফ্রান্সকে ইউরোপের এক ভয়ানক শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত করে। রাশিয়া,
অস্ট্রিয়া ও প্রæশিয়া স্বেচ্ছায় এই পরিবর্তন মেনে নেয়। এছাড়া ইতালি, বেলজিয়াম প্রভৃতি দেশের
উপর নেপোলিয়নের আধিপত্য জার স্বীকার করে নেয়।
(২) ফ্রান্স ও রাশিয়ার মধ্যে আতœরক্ষামূলক মিত্রতা স্থাপিত হয়;
(৩) রাশিয়ার সঙ্গে তুরস্কের, দ্ব›েদ্ব নেপোলিয়ন জারের পক্ষ নিতে রাজি হয়;
(৪) ইংল্যান্ডের সঙ্গে ফ্রান্সের দ্ব›েদ্ব জার মধ্যস্থতায় রাজি হয়;


(৫) ইংল্যান্ড এই মধ্যস্থাতার শর্ত অগ্রাহ্য করলে ইংল্যান্ডকে শাস্তিদিতে রুশ বন্দরগুলিতে ব্রিটিশ
বাণিজ্য বন্ধ করতে জার অঙ্গীকার করেন। জার আরও অঙ্গীকার করেন যে, ইংল্যান্ড তার মধ্যস্থতা
অগ্রাহ্য করলে তিনি তাঁর মিত্র সুইডেন, ডেনমার্ক ও পর্তুগালকে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অবরোধ
ঘোষণায় যোগ দিতে বাধ্য করবেন।
টিলজিটের সন্ধির ফলাফল
টিলজিটের সন্ধির মাধ্যমে নেপোলিয়নের গৌরব সর্বোচ্চ সীমায় উপনীত হয়। নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে
তৃতীয় শক্তি জোট ধ্বংস হয়। ইতালি, জার্মানি ও মধ্য ইউরোপ নেপোলিয়নের পদানত হয়। রাশিয়া
নেপোলিয়নের মিত্রে পরিণত হয়। অস্ট্রিয়া ও প্রæশিয়া নেপোলিয়নের হাতে পরাজিত হয়ে নিশ্চুপ হয়ে
যায়। পশ্চিমে ফ্রান্স হতে পূর্বে পোল্যান্ড এবং উত্তরে বাল্টিক সমুদ্রহতে দক্ষিণে ভূ-মধ্য সাগর পর্যন্ত
ভূভাগে নেপোলিয়নের নিয়ন্ত্রণ স্থাপিত হয়। কেবলমাত্র ইংল্যান্ড নেপোলিয়নকে অগ্রাহ্য করতে থাকে।
টিলজিটের সন্ধির দুর্বল দিক হচ্ছে এ সন্ধির দ্বারা রাশিয়ার জার লাভবান হননি। তিনি শীঘ্রই উপলব্ধি
করেন, ইংল্যান্ডের প্ররোচনায় তিনি এই সন্ধি অগ্রাহ্য করেন। টিলজিটের সন্ধি স্থাপনের সতর্কতামূলক
নীতি ত্যাগ করে পেনিনসুলার যুদ্ধ ও রুশ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। পরিণামে ত্ার পতন ঘটে। রাইকারের
মতে, “টিলজিটের সন্ধি এক দিক থেকে নেপোলিয়নের সৌভাগ্যের অবসান সূচনা করে।” (ঞরষংরঃ ধিং
রহ ধ ংবহংব ঃযব ঃঁৎহরহম ঢ়ড়রহঃ ড়ভ যরং ভড়ৎঃঁহবং)।
টিলজিটের সন্ধির ব্যর্থতা
১৮০৭ সালের টিলজিটের সন্ধির দ্বারা নেপোলিয়নের প্রতি জারের যে শ্রদ্ধা দেখা দেয় তা শীঘ্র ক্ষয়
পায়। জার বুঝতে পারেন যে, টিলজিটের সন্ধির দ্বারা রাশিয়ার কোনো প্রকৃত লাভ হয়নি। এই সন্ধির
দ্বারা তুরস্কের বিরুদ্ধে রাশিয়াকে সাহায্য করার জন্যে যে প্রতিশ্রæতি নেপোলিয়ন দেন তা তিনি পালন
করেননি। এতে জার প্রথম আলেকজান্ডার ক্ষুদ্ধ হন। তিনি বুঝতে পারেন যে, নেপোলিয়ন রাশিয়াকে
তাঁর তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে চান। ফরাসি তোষণনীতির পরিবর্তন না করা হলে রাশিয়া নিজেই
বিপন্ন হবে এটা তখন বুঝতে পারে। ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত জারকে একই কথা বোঝাতে থাকেন। তিনি
নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে অন্যান্য রাষ্ট্রের জোটে যোগ দেওয়ার জন্য রাশিয়ার জারকে পরামর্শ দেন। ফলে
জার প্রথম আলেকজান্ডার নেপোলিয়নের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নতুন করে পর্যালোচনা করেন। টিলজিটের
সন্ধির পর জারের সঙ্গে এরফুট (ঊৎভঁৎঃ) এর চুক্তি নেপোলিয়ন করেন। এই চুক্তির পরেও উভয় নেতার
মধ্যে সন্দেহ ও অবিশ্বাস দেখা দেয়। এছাড়া জার প্রথম আলেকজান্ডার বিশেষ করে কয়েকটি কারণে
নেপোলিয়নের প্রতি অসন্তুষ্ট হন।
প্রথমত, রাশিয়া ও অস্ট্রিয়াকে পরাস্তকরার পর নেপোলিয়ন পোল্যান্ডের গ্যালিশিয়া অঞ্চল অধিকার
করেন। এই অধিকৃত স্থান নিয়ে নেপোলিয়ন “গ্রান্ড ডাচি অফ ওয়ারস” নামক রাজ্য গঠন করেন। এই
রাজ্য রক্ষার জন্য কয়েক লক্ষ ফরাসি সেনাকে পোল্যান্ড রাখা হয়। এর ফলে পোল্যান্ড কার্যত ফরাসি
উপনিবেশে পরিণত হয়। পোল্যান্ডকে ফরাসি তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করায় রাশিয়ার নিরাপত্তা বিপন্ন
হয়। এ বিষয়ে জারের প্রতিবাদ নেপোলিয়ন অগ্রাহ্য করেন। রুশ রাজনীতিবিদরা আশঙ্কা করেন যে,
বিভক্ত পোল্যান্ডকে ঐক্যবদ্ধ করার অজুহাত দেখিয়ে রাশিয়ার অধিকৃত পোল্যান্ডের ভূমি নেপোলিয়ন
ফেরত চাইতে পারেন। জার দাবি করেন যে ঐক্যবদ্ধ ও স্বাধীন পোল্যান্ড গঠনের দাবি নেপোলিয়ন
করবেন না এই মর্মে তাকে প্রতিশ্রæতি দিতে হবে। কিন্তু নেপোলিয়ন তাতে রাজি হননি।
দ্বিতীয়ত, জারের ভগ্নিপতি ডিউক অফ ওল্ডেনবার্গ, কনটিনেস্টাল সিস্টেম অগ্রাহ্য করলে নেপোলিয়ন
তাঁর রাজ্য দখল করেন। ওল্ডেনবার্গের ডিউকের পতœী ক্যাথরিন ছিলেন জারের প্রিয় ভগিনী। ক্যাথরিন
তার ভাইয়ের নিকট আবেদন জানালে রুশ অভিজাত মহল অত্যন্তক্ষুদ্ধ হন। তাঁরা নেপোলিয়নের
বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জারকে পরামর্শ দেন।


তৃতীয়ত, জার তার বোন আনাকে (অহহধ) নেপোলিয়নের সাথে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায়
নেপোলিয়ন অপমান বোধ করেন। এর পর নেপোলিয়ন অস্ট্রিয়ার হ্যাপসবার্গ রাজকন্যা মারিয়া লুইসাকে
বিয়ে করেন। কিন্তু এই বিয়ের ফলে রাশিয়া মনে করেন যে ফ্রান্স ও অস্ট্রিয়া একত্রে রাশিয়ার ক্ষতি
করবে।
চতুর্থত, রুশ জার অনুভব করলেন যে নেপোলিয়নের মহাদেশীয় ব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে রাশিয়ার
অর্থনীতির ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে এবং ইংল্যান্ডের শিল্প দ্রব্যের অভাবে রাশিয়ার জনসাধারণের দুঃখ
দুর্দশা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, ফলে রাশিয়ায় দ্রব্য সামগ্রীর দাম বেড়ে গেছে। ব্রিটিশ বাণিজ্য বয়কট
করায় রাশিয়া বিশ্ব বাণিজ্য হতে বিচ্ছিন্ন হয় এবং রুশ কারখানাগুলোও অচল হয়ে পড়ে। এদিকে
নেপোলিয়ন নিজে অবরোধ ব্যবস্থা অগ্রাহ্য করে ফরাসি বণিকদের লাইসেন্স দেয় ব্রিটিশ দ্রব্য আমদানি
করার জন্য। অথচ রাশিয়াকে অবরোধ মানতে বাধ্য করে। এমতাবস্থায় জার আলেকজান্ডার ধীরে ধীরে
রুশ বন্দরগুলি ব্রিটিশ বাণিজ্যের জন্য খুলে দেন। এতে নেপোলিয়ন অত্যন্তক্ষুদ্ধ হন এবং রাশিয়া
আক্রমণ করার সিদ্ধান্তনেন।
পঞ্চমত, সুইডেন ছিল রাশিয়ার প্রতিবেশী দেশ। বাল্টিক সমুদ্রের উপর অধিকার নিয়ে রাশিয়া ও
সুইডেনের মধ্যে বিরোধ ছিল। জার সুইডেনকে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে এনে বাল্টিক সমুদ্রের উপর রাশিয়ার
একচ্ছত্র অধিকার স্থাপনের চেষ্টা করেন। কিন্তুনেপোলিয়ন সুইডেনের সিংহাসনে তাঁর অনুগত সেনাপতি
বার্নাডোটকে বসালে জার বিপন্ন বোধ করেন।
উপরোক্ত কারণ গুলোতে ফ্রান্সের সঙ্গে রাশিয়ার মিত্রতায় ভাঁটা পড়ে এবং টিলজিটের সন্ধি ব্যর্থতায়
পর্যবসিত হয়।
সারসংক্ষেপ
নেপোলিয়ন বেনোপার্ট ফ্রান্সের সেনাবাহিনীর উচ্চ পদ লাভ করার পর বিভিন্ন যুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়া এবং
সাফল্য লাভ করায় তাঁর মধ্যে রাজ্য বিস্তারের আকাক্সক্ষা সৃষ্টি হয়। সম্রাট হিসেবে ফ্রান্সের রাজ ক্ষমতা
লাভের পরও তার উচ্চাকাক্সক্ষা অব্যাহত থাকে। সাম্রাজ্য বিস্তারের আকাঙক্ষা, ফরাসি বিপ্লবের আদর্শ
ইউরোপের অন্যান্য দেশে প্রচার এবং ইংল্যান্ডের বিরোধিতা তাঁর সাম্রাজ্য বিস্তার নীতিকে আরো শক্তি
যুগিয়েছিল। সাম্রাজ্য বিস্তারের অভিপ্রায় তিনি ইতালি, অস্ট্রিয়া, মিসর, প্রæশিয়া, ডেনমার্ক, সুইডেন,
পর্তুগাল, রাশিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অভিযান পরিচালনা করেন এবং ফ্রান্সের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা
করেন। ১৮০৭ সালে রাশিয়ার সাথে টিলজিট সন্ধি স্বাক্ষরের মাধ্যমে নেপোলিয়ন তাঁর সামরিক
গৌরবের উচ্চ শিখরে উপনীত হন। রাশিয়াসহ ইউরোপের অনেক দেশ নেপোলিয়নের মিত্রে পরিণত
হয় এবং তাঁর আত্ম প্রত্যয় অত্যন্তবৃদ্ধি পায় ফলে তিনি পেনিনসুলার যুদ্ধ ও রুশ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন।
পরিণামে তাঁর পতন ঘটে।


পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
১। নেপোলিয়নের সাম্রাজ্য বিস্তার উদ্দেশ্য ছিল
ক. সাম্রাজ্যবাদ খ. বিপ্লবের আদর্শ প্রচার
গ.ক ও খ উভয়ই ঘ. কোনোটি না।
২। ইতালির বিরুদ্ধে নেপোলিয়নের প্রথম অভিযান পরিচালিত হয় কেন ?
ক.  ১৭৯৬ খ. ১৭৯৯
গ. ১৮০৪ ঘ. ১৮০৭
৩। কোন সন্ধির মাধ্যমে স্যাভয় ও নিসকে ফ্রান্সের প্রদেশ হিসেবে স্বাীকার করা হয় ?
ক.  কেম্পোফর্মিও সন্ধি খ. এ্যামিয়োন্সের সন্ধি
গ. টিলজিট সন্ধির ঘ. কোনোটি না।
৪। ঞযব ষরঃঃষব ঈড়ৎঢ়ড়ৎধষ নামে খ্যাত কে ?
ক. নেলসন খ. রাইকার
গ.  নেপোলিয়ন ঘ. প্রথম চালর্স
৫। নেপোলিয়ন টিলজিট সন্ধি কোন দেশের সঙ্গে স্বাক্ষর করেন ?
ক. ইংল্যান্ড খ. প্রæশিয়া
গ. অস্ট্রিয়া ঘ.  রাশিয়া
সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন
(১) নেপোলিয়নের সাম্রাজ্য বিস্তারের কারণ কি ?
(২) সম্রাট রূপে অধিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে নেপোলিয়নের সাম্রাজ্য বিস্তারের বর্ণনা দিন।
(৩) টিলজিট সন্ধির শর্তগুলো আলোচনা করুন।
(৪) ট্রাফলেগার যুদ্ধের বিবরণ দিন।
(৫) টিলজিট সন্ধি ব্যর্থহয় কেন ?
রচনামূলক প্রশ্ন
(১) নেপোলিয়নের সাম্রাজ্য বিস্তারের বিভিন্ন দিক আলোচনা করুন ।
(২) নেপোলিয়ন কেন সাম্রাজ্য বিস্তারে মনোযোগী হন ? তাঁর সাম্রাজ্যে বিস্তৃতি আলোচনা করুন।
(৩) নেপোলিয়নের সাম্রাজ্য বিস্তার ও টিলজিট সন্ধি সম্পর্কে আপনার মতামত ব্যাখ্যা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]