দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪১ সালের ২২ জুন হিটলারের সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ এবং ৭ ডিসেম্বর
জাপানের মার্কিন নৌঘাঁটি পার্লহারবারে বোমাবর্ষণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও সোভিয়েত ইউনিয়নের
মধ্যে অভ‚তপূর্ব মৈত্রী বন্ধনের সৃষ্টি করে। তারা জার্মানি-ইতালি-জাপান এই অক্ষ শক্তির বিরুদ্ধে
সম্মিলিতভাবে রুখে দাঁড়ায়। ফলে যুদ্ধের গতি পরিবর্তিত হয়। এই যুদ্ধকালীন মিত্রশক্তিবর্গের
রাষ্ট্রনেতাদের মধ্যে বিভিন্নসম্মেলনে অনেক গুরুত্বপূর্ণআলোচনা হয়েছিল। রণকৌশল বিষয়ে সিদ্ধান্ত
গ্রহণ এবং যুদ্ধোত্তর বিশ্বের পুনর্গঠন সম্পর্কে প্রস্তাব গ্রহণ এ সকল সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল। এই
সম্মেলনগুলোর সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে যুদ্ধোত্তর বিশ্বেজাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং বিভিন্নশান্তিচুক্তি
সম্পাদিত হয়েছিল। মিত্রশক্তির শীর্ষনেতৃবৃন্দের মধ্যে অনেকগুলো সম্মেলন হয়েছিল। এগুলো হলো
আটলান্টিক সম্মেলন (১৯৪১ ও ৪২), মস্কো সম্মেলন (১৯৪২), কাসাবøাংকা সম্মেলন (১৯৪৩),
তেহরান সম্মেলন (১৯৪৩), ইয়াল্টা সম্মেলন (১৯৪৫), পটস্ডাম সম্মেলন (১৯৪৫) ইত্যাদি। এসব
সম্মেলনের মধ্যে মোট চারটি সম্মেলন বেশ গুরুত্বপূর্ণ। নি¤েœ এসব সম্মেলনের বিভিন্নদিক নিয়ে
আলোচনা করা হলো।
এক. আটলান্টিক সম্মেলন
১৯৪১ সালের আগস্ট মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট ও ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল
আটলান্টিক মহাসাগরের নৌবহরে মিলিত হয়ে আটটি শর্তবিশিষ্ট শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেন। অতপর
দুদেশের রাষ্ট্রপ্রধান মিলিতভাবে একটি ঘোষণা দেন যা আটলান্টিক চার্টার নামে খ্যাত। এতে বলা হয়
যে, সকল জাতিকে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার ও রাষ্ট্রীয় সীমানা সম্পর্কেনিরাপত্তা দেওয়া হবে। প্রেসিডেন্ট
রুজভেল্ট যুদ্ধোত্তর পৃথিবীকে বাক স্বাধীনতা, ধর্মপালনের স্বাধীনতা এবং অনাহার ও ভীতি থেকে
মুক্তির আশ্বাসবাণী শুনিয়েছিলেন। সমুদ্রপথে অবাধ যাতায়াত, পররাজ্য গ্রাস নীতির অবসান,
নিরস্ত্রীকরণ ও স্থায়ী শান্তিপ্রতিষ্ঠা ইত্যাদি উচ্চ আদর্শের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। ১৯৪২ সালে ব্রিটেন,
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে আটলান্টিক চার্টারের উল্লেখিত নীতি ও
আদর্শকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। পরে আরও ২২টি দেশ এতে স্বাক্ষর করলে মোট সংখ্যা ২৬-এ উন্নীত
হয়। এই ঘোষণা জাতিসংঘ ঘোষণা (টহরঃবফ ঘধঃরড়হং উবপষধৎধঃরড়হ) নামেও খ্যাত। কারণ জাতিসংঘ
বা টহরঃবফ ঘধঃরড়হং কথাটি এ সম্মেলনের ঘোষণাপত্র থেকেই নেওয়া হয়েছিল।
দুই. তেহরান সম্মেলন
১৯৪৩ সালের নভেম্বর মাসে পারস্যের (বর্তমান ইরান) রাজধানী তেহরানে মিত্র পক্ষের একটি
সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সামরিক ও রাজনৈতিক উভয় দিক থেকেই এর গুরুত্বঅনেক। সামরিক ক্ষেত্রে
দুটো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তচূড়ান্তকরা হয়। ইতোপূর্বে আগস্ট মাসে কানাডার কুইবেকে অ্যাংলোআমেরিকান সম্মেলনে উত্তর ইউরোপে আক্রমণ পরিচালনার জন্যে অপারেশন ওভারলর্ড(ঙঢ়বৎধঃরড়হ
ঙাবৎষড়ৎফ) নামে যে সামরিক আক্রমণ পরিচালনার প্রাথমিক সিদ্ধান্তনেওয়া হয়Ñ এ সম্মেলনে
চূড়ান্তভাবে তা অনুমোদিত হয়। আরো সিদ্ধান্তনেওয়া হয় যে, ফ্রান্সের দক্ষিণ দিক থেকেও আক্রমণ
পরিচালনা করা হবে। রাজনৈতিক দিক থেকে দেখা যায় যে, স্ট্যালিন ও চার্চিলের মধ্যে ভুল-বুঝাবুঝি
ও সন্দেহ এখানে পরিদৃষ্ট হয় এবং রুজভেল্ট তাদের মধ্যে বিরোধ মীমাংসায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে
ভ‚মিকা পালন করেন।
তেহরানের সম্মেলনের মূল্যায়ন
তেহরান সম্মেলনে যদিও যুদ্ধোত্তর মীমাংসার ভিত্তি সম্পর্কেসাধারণভাবে আলোচনা করা হয়েছে তথাপি
কোনো বাস্তব রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। যুদ্ধোত্তর পৃথিবীতে একটি আন্তর্জাতিক
সংগঠন প্রতিষ্ঠার কাজে রুজভেল্ট স্ট্যালিনের সমর্থন আদায়ের জোর প্রচেষ্টা চালান। রুজভেল্ট,
স্ট্যালিন ও চার্চিল যুদ্ধোত্তর জার্মানির ভবিষ্যত নিয়েও আলোচনা করেন। তারা একমত হন যে,
জার্মানিকে খÐ বিখÐ করা হবে। কিন্তু, কীভাবে তা করা হবে সে বিষয়ে তারা ঐকমত্যে পৌঁছতে
পারেননি। পোল্যান্ডের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। রাশিয়া কার্জন লাইন (ঞযব
ঈঁৎুড়হ খরহব) এমনভাবে দেখানোর চেষ্টা করে যাতে লভভ (খাড়া) রাশিয়ার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়।
রুজভেল্ট ও চার্চিল স্বীকার করে নেন যে, পশ্চিম দিকে পোল্যান্ড সরে যাবে। ফলে পূর্বদিকে সোভিয়েত
ইউনিয়ন পোল্যান্ডের কিছুঅংশ পাবে বলে সিদ্ধান্তনেওয়া হয়। পূর্বইউরোপে সোভিয়েত ইউনিয়নের
ভ‚মি লাভের প্রশ্নেও পশ্চিমা নেতৃবৃন্দ কিছুটা নমনীয় মনোভাব পোষণ করেন। বিশেষভাবে প্রেসিডেন্ট
রুজভেল্ট দূর প্রাচ্যের যুদ্ধে রাশিয়ার অংশগ্রহণের পুরষ্কার হিসেবে তার ভৌগোলিক প্রয়োজন মিটাতে
রাজি ছিলেন। সবশেষে স্ট্যালিন যখন ফিনল্যান্ডের যুদ্ধকে সোভিয়েত ইউনিয়নের অনুক‚লে নিয়ে
আসার জন্যে মার্কিন ও ব্রিটিশ সাহায্য চান, তখন যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি বিপুল হবে এ অজুহাতে রুজভেল্ট
ও চার্চিল বিষয়টির বিরোধিতা করেন।
তিন. ইয়াল্টা সম্মেলন
বিলুপ্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্যতম প্রজাতন্ত্রএবং বর্তমান ইউরোপীয় দেশ ইউক্রেনের স্বাস্থ্য নিবাস
হচ্ছে ইয়াল্টা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে এখানে তিন প্রধান (ঞযব ইরম ঞযৎবব) অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের
রাষ্ট্রপতি এফ.ডি. রুজভেল্ট, সোভিয়েত ইউনিয়নের যোশেফ স্ট্যালিন এবং বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী উনস্টন
এস চার্চিলের মধ্যে শীর্ষসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। যুদ্ধকালীন সম্মেলনগুলোর মধ্যে ইয়াল্টা সম্মেলন অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এখানে যে সিদ্ধান্তনেওয়া হয়েছিল তা পরবর্তীকালের ইতিহাসকে প্রভাবিত করেছিল।
এখানেই যুদ্ধোত্তর পৃথিবীর রূপরেখা প্রণয়ন এবং নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার পরিকল্পনা করা হয়। এখানে
ভবিষ্যত পৃথিবীর জন্যে চারটি মৌল সিদ্ধান্তনেওয়া হয়। এসব সিদ্ধান্তহচ্ছেÑ
(১) জার্মানি সংক্রান্ত
(২) পোল্যান্ড সংক্রান্ত
(৩) দূরপ্রাচ্য সংক্রান্ত
(৪) জাতিসংঘ সংক্রান্ত।
এ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন দুজন। একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট এফ.ডি রুজভেল্ট অন্যতম
সোভিয়েত নেতা যোশেফ স্ট্যালিন। পরবর্তীকালে গবেষণায় দেখা গেছে যে, রুজভেল্ট নমনীয় ও উদার
মনোভাবসম্পন্নব্যক্তি ছিলেন। অন্যদিকে তার প্রতিপক্ষ স্ট্যালিন অত্যন্তএকরোখা ও অনমনীয় প্রকৃতির
ব্যক্তি ছিলেন। ফলে দেখা যায় যে, ইয়াল্টা সম্মেলনে সোভিয়েত স্বার্থপ্রতিফলিত হয়েছিল বেশি।
এস এস এইচ এল
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস - ২ পৃষ্ঠা -২৮০
অনেক পশ্চিমা ঐতিহাসিক মনে করেন যে, স্ট্যালিনের একরোখা মনোভাব দ্বারাই ইয়াল্টা সম্মেলন
প্রভাবিত হয়েছিল। রুজভেল্ট কেন নমনীয় ছিলেন এর উত্তরে অনেক গবেষক বলেছেন যে, রুজভেল্ট
ছিলেন ডেমোক্রেট দলের সদস্য যারা ঐতিহ্যগতভাবে উদারপন্থী।
উইলিয়াম চেম্বার লিনের মতে, ইয়াল্টা সম্মেলন ছিল সোভিয়েত ক‚টনীতির ব্যাপক সফলতার একটি
দৃষ্টান্তএবং একই সাথে মার্কিন তোষণনীতির একটি প্রমাণ।
ইয়াল্টা সম্মেলনের মূল্যায়ন
(ক) প্রথম সিদ্ধান্তঃ অক্ষ শক্তির পরাজয়ের সূচনা হয়েছিল পূর্বদিক থেকে। পূর্বইউরোপ তখন ছিল
সোভিয়েত ইউনিয়নের অধীনে। তখন একে বলা হতো স্বাধীন ইউরোপ বা (খরনবৎধঃবফ ঊঁৎঢ়ড়ব),
যুদ্ধের পর স্বাধীন ইউরোপে গণতান্ত্রিক সরকার কায়েম হবে। এই গণতন্ত্রের রূপ কি হবে তা স্পষ্ট করে
বলা হয়নি। এটা কি পুঁজিবাদী গণতন্ত্র, না সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রসেটাই ছিল প্রশ্ন। এ রহস্যময়তা বা
অস্পষ্টতার কারণে ১৯৪৫ সালের পরবর্তীসময়ে পূর্বইউরোপের অনেক দেশে সোভিয়েত ইউনিয়নের
একচ্ছত্র প্রভাবে সমাজতান্ত্রিক সরকার কায়েম হয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন সমাজতন্ত্রকে প্রকৃত গণতন্ত্র
বলে ব্যাখ্যা করে। অন্যদিকে পশ্চিমা পুঁজিবাদী দেশগুলো এ ব্যবস্থাকে নির্বাচনহীন এবং একনায়কতন্ত্র
বলে আখ্যায়িত করে।
(খ) দ্বিতীয় সিদ্ধান্তঃ ইয়াল্টাতে সবচেয়ে কঠিন সমস্যা ছিল পোল্যান্ড নিয়ে এবং এর পিছনে অধিকাংশ
সময় ব্যয় হয়। পোল্যান্ডের রাজনৈতিক ভবিষ্যত কি হবে তা নিয়ে স্টালিন অঙ্গীকার করলেন যে,
পোল্যান্ডে একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠিত হবে এবং সেখানে কিছুঅ-কমিউনিস্ট সদস্য নেওয়া
হবে। রুজভেল্ট এই বক্তব্য মেনে নেন।
(গ) তৃতীয় সিদ্ধান্তঃ রুজভেল্ট এবং চার্চিলের বক্তব্য ছিল স্ট্যালিনের কাছে যে, সোভিয়েত
ইউনিয়নকে সাহায্য করার জন্যে ঙঢ়বৎধঃরড়হ ঙাবৎষড়ৎফ করা হয়েছিল, তাই এখন স্ট্যালিনের উচিত
দূরপ্রাচ্য আক্রমণে তাদেরকে সাহায্য করা। একা মিত্রশক্তি ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে জাপানকে মোকাবিলা
করা সম্ভব ছিল না। তাই জার্মানির মতো দুদিক থেকে জাপান আক্রমণ করেই তাকে পরাভ‚ত করা সম্ভব
হবে। বলা হলো সোভিয়েত ইউনিয়ন যদি জাপান আক্রমণ করে তবে তাকে পুরষ্কার হিসেবে কুরিল
দ্বীপপুঞ্জ এবং মাঞ্চুরিয়া ও মঙ্গোলিয়ার কিছুঅংশ দেওয়া হবে। স্ট্যালিন জার্মানির আত্মসমর্পণের দুইতিন মাসের মধ্যে জাপানে আক্রমণে সম্মত হন।
(ঘ) চতুর্থসিদ্ধান্তঃ জার্মানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্যে জার্মানিকে চারভাগে ভাগ করার
সিদ্ধান্তনেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রত্যেকের অধীনে একটি করে অংশ
থাকবে এবং তখন তারা ক্ষতিপূরণ আদায় করে নেবে। প্রাথমিক আলোচনার পর নেতৃবৃন্দ মস্কোতে
ক্ষতিপূরণ সংক্রান্তএকটি কমিশন (জবঢ়ধৎধঃরড়হ ঈড়সসরংংরড়হ) স্থাপনে সম্মত হন।
(ঙ) পঞ্চম সিদ্ধান্তঃ জাতিসংঘ বিষয়ক দুটো গুরুত্বপূর্ণসিদ্ধান্তসম্মেলনে গৃহীত হয়। এগুলো হলোÑ
এক. ভোটদান পদ্ধতি নিয়ে একটি মীমাংসায় উপনীত হয়েছিলেন শীর্ষনেতারা। বলা হলো যে,
প্রস্তাবিত জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক শান্তিও নিরাপত্তার দাযিত্বথাকবে নিরাপত্তা পরিষদের হাতে। নিরাপত্তা
পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্য থাকবে এবং তাদের অনুমোদন ছাড়া বিশ্ব শান্তিও নিরপত্তার কোনো
সিদ্ধান্তনেওয়া যাবে না। পরবর্তীকালে এটাকে বলা হয়েছে ভেটো শক্তি (ঠবঃড় চড়বিৎ)। এ সম্মেলনে
স্ট্যালিন নিরাপত্তা পরিষদের সকল প্রস্তাবে ভেটো ক্ষমতা ব্যবহারের দাবি প্রত্যাহার করতে সম্মত হন।
স্থির হয় যে, কেবলমাত্র অপ্রণালীগত প্রস্তাবে যেমন বিশ্বশান্তিরক্ষা, যুদ্ধ বন্ধ ইত্যাদি প্রশ্নেভেটো ক্ষমতা
ব্যবহার করা যাবে।
দুই. এ সম্মেলনে সোভিয়েত ইউনিয়ন তার ১৫টি প্রজাতন্ত্রকে সদস্যপদ প্রদানের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে।
শেষ পর্যন্তপ্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট আপোষ প্রস্তাব দেন। সিদ্ধান্তহয় যে, সোভিয়েত ইউনিয়ন, বাইলোরুশ
ও ইউক্রেন জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করবে। বিশেষত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অসম সাহসিকতা প্রদর্শন ও
বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্তহওয়ার জন্যে প্রজাতন্ত্রদুটোকে জাতিসংঘের সদস্যপদ দেওয়া হয়।
পূর্বইউরোপ ও জার্মানি সংক্রান্তযে বিভক্তি সিদ্ধান্তনেওয়া হয়, তা পরবর্তীকালে ¯œায়ুযুদ্ধকে ত্বরানি¦ত
করেছিল। যদিও ইয়াল্টা সমঝোতাকে ব্যাপকভাবে সমালোচনা করা হয় তথাপি জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার
পথে ইয়াল্টা সম্মেলনকে একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বলা যেতে পারে। ১৯৪৫ সালের ১৭ জুলাই
পটস্ডাম সম্মেলন আরম্ভহয়। এই সম্মেলনে স্ট্যালিন, চার্চিল, এ্যাটলি এবং প্রেসিডেন্ট ট্যুম্যান যোগ
দেন। এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্বকরেছিলেন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট। কিন্তুতাঁর আকস্মিক মৃত্যুর পর
এই প্রথম ট্রুম্যান মার্কিন প্রতিনিধি হিসেবে শীর্ষসম্মেলনে যোগ দেন। অন্যদিকে ব্রিটেনে নির্বাচনে
জিতে চার্চিলের পরিবর্তেএ্যাটলি নতুন প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় সম্মেলনের বাকি দিনগুলোতে এ্যাটলি যোগ
দেন। স্ট্যালিনের প্রস্তাব অনুযায়ী ট্রুম্যান সভাপতির আসন গ্রহণ করেন। পটসডাম সম্মেলনে জার্মানি,
পোল্যান্ড ও পূর্বইউরোপ সংক্রান্তসিদ্ধান্তনেওয়া হয়।
(ক) জার্মানি সংক্রান্তসিদ্ধান্ত
মিত্রশক্তি জার্মানির প্রতি কী ধরনের নীতি অনুসরণ করবে সে বিষয়ে চূড়ান্তসমালোচনা ও সিদ্ধান্তগৃহীত
হয়। বাস্তব সুবিধার জন্যে রাজনৈতিক নীতিকে অর্থনৈতিক নীতি থেকে পৃথকভাবে বিবেচনা করা হয়।
মিত্রশক্তি কীভাবে জার্মানি দখল করবে তার একটি রাজনৈতিক নির্দেশাবলী ইউরোপীয় উপদেষ্টা
কমিশন তৈরি করে এবং এ বিষয়ে প্রায় সকল ক্ষেত্রেই ঐকমত্যে পৌঁছা সম্ভব হয়। জার্মানি দখলের
উদ্দেশ্য সম্পর্কেবলা হয়Ñ
(১) জার্মানির সম্পূর্ণনিরস্ত্রীকরণ ও অসামরিকীকরণ এবং সামরিক উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হতে
পারে এমন সব কলকারখানার অপসারণ বা নিয়ন্ত্রণ করা হবে;
(২) জার্মানির জনগণকে জানিয়ে দেওয়া যে, তারা একটি চরম সামরিক পরাজয় বরণ করেছে এবং
তারা যা করেছে তার দায়িত্বতারা এড়াতে পারে না;
(৩) নাৎসি দল এবং এর সহযোগী সংগঠন ও সংস্থাকে ধ্বংস করা। সকল নাৎসি প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে
দেওয়া যাতে কোনো সময় এগুলো আর পুনরুজ্জীবিত না হয়। জার্মানির সামরিক কার্যকলাপ
এবং প্রচারণা নিষিদ্ধ করা হবে;
(৪) গণতান্ত্রিক ভিত্তিতে জার্মানির রাজনৈতিক জীবন পুনর্গঠিত করা হবে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে
জার্মানিকে একটি শান্তিপ্রিয় দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হবে।
পট্সডাম সম্মেলনে মিত্রশক্তি জার্মানির অর্থনৈতিক নীতির ব্যাপারে একমতে পৌঁছান যে, জার্মানির
অর্থনৈতিক ক্ষমতা সীমাবদ্ধ রাখা হবে। এতে জার্মানির যুদ্ধ করার ক্ষমতা দুর্বল হবে। আরো বলা হয়
যে, মিত্র শক্তির দখলে থাকাকালীন জার্মানিকে একটি অখÐ একক হিসেবে গণ্য করা হবে। ক্ষতিপূরণ
প্রশ্নেসিদ্ধান্তনেওয়া হয় যে, ক্ষতিপূরণ এমনভাবে আদায় করা হবে যাতে, বিদেশি সাহায্য ছাড়া জার্মান
জনগণের জীবিকা নির্বাহের সম্পদ অবিশিষ্ট থাকে। আরো বলা হল যে, জার্মানির জনগণের
জীবনযাত্রার মান যেন ইউরোপের মূল ভ‚খÐের জনগণের জীবনযাত্রার মানকে অতিক্রম না করে এই
বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। জার্মানির কাছ থেকে আঞ্চলিক ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ আদায়ের কথা বলা
হয়েছিল।
(খ) অন্যান্য সিদ্ধান্ত
(১) অস্ট্রিয়াকে জার্মানি থেকে বিচ্ছিন্নকরে চারটি সামরিক অধিকৃত অঞ্চলে বিভক্ত করার সিদ্ধান্ত।
(২) পোল্যান্ডের সীমানা ক্ষুদ্রইউরোপীয় শক্তির সাথে শান্তিচুক্তির খসড়া সম্পাদনের দায়িত্বপ্রদান
করা হয়েছিল।
পটস্ডাম সম্মেলনের মূল্যায়ন
পটসডাম সম্মেলনে জার্মানি সম্পর্কেযে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তনেওয়া হয়, তাতে কোনো বাদানুবাদ
হয়নি। কিন্তুক্ষতিপূরণ এবং অন্যান্য প্রশ্নে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে ইঙ্গ-মার্কিন শক্তির তীব্র
বাদানুবাদ হয়। পটস্ডাম সম্মেলনের সিদ্ধান্তগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, ইউরোপীয়
বিষয়াবলীর সমাধানের ব্যাপারে এসব সিদ্ধান্তদীর্ঘস্থায়ী কোনো সমাধান দিতে পারেনি। এ সিদ্ধান্তগুলোর
মূল লক্ষ্য ছিল জার্মানিতে এবং ইউরোপের অন্যত্র জঙ্গি মতবাদ দ্বারা পরিচালিত সরকারের অবসান
করে গণতান্ত্রিক সরকার কায়েম করা। কিন্তুযুদ্ধোত্তর যুগে এই গণতন্ত্রের রূপরেখা গণতান্ত্রিক না
সমাজতান্ত্রিক ধাঁচে সংগঠিত হবে সে বিষয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ব্রিটেনের
মতবিরোধ দেখা দেয়। আর এভাবেই সূচনা হয় ¯œায়ুযুদ্ধের।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন।
১। আটলান্টিক চাটারে স্বাক্ষর করে কয়টি দেশ?
(ক) ১০টি (খ) ১৫টি
(গ) ২০টি (ঘ) ২৬টি।
২। তেহরান সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৫ সালেরÑ
(ক) সেপ্টেম্বর মাসে (খ) অক্টোবর মাসে
(গ) নভেম্বর মাসে (ঘ) ডিসেম্বর মাসে।
৩। ইয়াল্টা কোন দেশের স্বাস্থ্য নিবাসÑ
(ক) ব্রিটেন (খ) ইউক্রেন
(গ) রাশিয়া (ঘ) জাপান।
৪। ইয়াল্টা সম্মেলন সোভিয়েত ফেডারেশনের দেশগুলো জাতিসংঘের কয়টি সদস্যপদ দেওয়া হয়Ñ
(ক) ৩টি (খ) ৬টি
(গ) ৯টি (ঘ) ১৫টি।
৫। পটসডাম সম্মেলনে সভাপতিত্বকরেনÑ
(ক) স্ট্যালিন (খ) ট্র্যুম্যান
(গ) রুজভেল্ট (ঘ) এ্যাটলী।
উত্তর ১। (ঘ) ২। (গ) ৩। (খ) ৪। (ক) ৫। (খ)
রচনামূলক প্রশ্ন
১। আটলান্টিক ও তেহরান সম্মেলন সম্পর্কেআপনার ধারণা ব্যক্ত করুন।
২। ইয়াল্টা সম্মেলনের সিদ্ধান্তসমূহ পর্যালোচনা করুন।
৩। পটস্ডাম সম্মেলনের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিন।
সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি
১। ড.ঝ. ঈযঁৎপযর ওও ; ঞযব ঝবপড়হফ ডড়ৎষফ ডধৎ.
২। জ.ঙ. চধীঃড়হ ; ঊঁৎড়ঢ়ব রহ ঃযব ঞবিহঃরবঃয ঈবহঃঁৎু
৩। ই,এইচ,কার ; দুই মহাযুদ্ধের অন্তবর্তীকালীন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইতিহাস (বাংলা একাডেমি)
৪। অসিত কুমার সেন ; আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইতিহাস।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত