জাতিসংঘের উৎপত্তির পটভূমি
জাতিসংঘের প্রধান দুটি অঙ্গ সংস্থা সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদের ক্ষমতা ও কার্যাবলীর


একটি বিশ্ব সংগঠন হিসেবে জাতিপুঞ্জ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ প্রতিরোধ করতে পারেনি। ফলে সংগঠনটির
স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযদ্ধের ভয়াবহতা অবলোকন করে পৃথিবীর শান্তিকামী মানুষ স্থায়ী
শান্তিপ্রতিষ্ঠার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। অনেকেই এ সত্য উপলব্ধি করলো যে, আন্তর্জাতিক শান্তিও
মৈত্রী প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে সর্বাত্মক ধ্বংস এবং অপমৃত্যু অনিবার্য। যুদ্ধক্লান্তবিশ্ববাসীও অধীর
আগ্রহে একটি কার্যকর বিশ্ব সংগঠনের প্রার্থনা করতে থাকেন। মানব ইতিহাসের বিভিন্নপর্যায়ে যে
সকল আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংগঠন গড়ে উঠেছিল সেসব সংগঠনের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবং
সাফল্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ই নিরন্তর প্রচেষ্টা চালান। বিশ্বের
সার্বভৌম রাষ্ট্রসমূহের সম্মিলনের ভিত্তিতে একটি সর্বজনীন সংগঠন স্থাপন করে সমগ্রবিশ্বেস্থায়ী শান্তিও
নিরাপত্তার রক্ষা করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। চার বছরের উদ্যোগ ও আয়োজনের পরিণতিতে প্রতিষ্ঠিত
হয় জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের উৎপত্তির পটভ‚মিঃ বিভিন্নসম্মেলন
হিটলারের সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ ও দূরপ্রাচ্যে জাপানের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান
বিরোধ দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সাধারণ চরিত্রে পরিবর্তনের সূত্রপাত করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি
রুজভেল্ট ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল পরস্পরের মধ্যে সাক্ষাৎ ও আলোচনার প্রয়োজন অনুভব করেন।
নিউ ফাউন্ডল্যান্ডের কাছে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে অগাস্টা ও প্রিন্স অফ্ ওয়েলস রণতরীতে দুই
রাষ্ট্রনেতা এক গোপন বৈঠকে মিলিত হন। দিনটি ছিল ৯ আগস্ট ১৯৪১। যুদ্ধের লক্ষ্য ও নীতি বিশদ
আলোচনা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুদ্ধরোধে ও আন্তর্জাতিক শান্তিবজায় রাখতে এমন কিছুইঙ্গিত
এই বৈঠকে ছিল, বলা যেতে পারে যার মধ্যে ভবিষ্যতের জাতিসংঘের (টহরঃবফ ঘধঃরড়হং
ঙৎমধহরংধঃরড়হ) ইঙ্গিত ছিল। আটলান্টিক সাগরের এই বৈঠকে গৃহীত নীতিগুলি আটলান্টিক সনদ
(অঃষধহঃরপ ঈযধৎঃবৎ) নামে ইতিহাসে পরিচিত।
আটলান্টিক সনদ
আটলান্টিক সনদের তৃতীয় দফায় সুস্পষ্টভাবে সমস্তদেশ ও জাতির সার্বভৌমত্ব, সায়ত্ত¡শাসন ও জাতীয়
সত্ত¡া পুনরুজ্জীবনের আশ্বাস দেওয়া হয়। অবশ্য রক্ষণশীল ও ঘোর সাম্রাজ্যবাদী চার্চিল এই ঘোষণার
আওতা থেকে ভারত, বার্মা ও ব্রিটেনের সাম্রাজ্যকে বাদ দেন। তদুপরি এই সনদের বিভিন্নজাতির
মধ্যে সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠা, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি, শান্তিপূর্ণউপায়ে
পারস্পরিক বিবাদের সমাধান প্রভৃতির উল্লেখ করা হয়।



আটলান্টিক সনদ ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ব্রিটেনের দ্বিপাক্ষিক গোপন আলোচনার ফসল। ১৯৪২ সালের
জানুয়ারি মাসে ওয়াশিংটনে জাতিসংঘ ঘোষণাপত্র (টহরঃবফ ঘধঃরড়হং উবপষধৎধঃরড়হ) স্বাক্ষরিত হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথমে এতে স্বাক্ষর করে। পরে আরও বাইশটি
দেশ এটি অনুমোদন করে। আটলান্টিক সনদকে নীতিগতভাবে এই ঘোষণাপত্রে গ্রহণ করা হয়। ১৯৪৩
সালে নভেম্বর মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও সোভিয়েত ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীত্রয় কার্ডেল হাল, আন্টনি
ইডেন ও মলোটভ বিশ্বের সব শান্তিকামী দেশের জন্য এই আন্তর্জাতিক সংস্থার দ্বার উন্মুক্ত রাখার
আহŸান জানান।
এরপর তেহরান সম্মেলন (১৯৪৩) জাতিসংঘের কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনা হয়। ১৯৪৪ সালের
ওয়াশিংটনস্থডাম্বারটন ওকসের বৈঠকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রিটেন, চীন প্রভৃতি বৃহৎ
শক্তিবর্গ জাতিসংঘের রূপরেখা সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করেন। এই বৈঠকে ভেটো (ঠবঃড়) বা
নিরাপত্তা পরিষদে একক বিরোধিতায় কোনো প্রস্তাব নাকচ করার অধিকার নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়।
তাছাড়া সোভিয়েত ইউনিয়ন তার অন্তর্ভুক্ত সব প্রজাতন্ত্রের জন্য পৃথক ভোটাধিকার দাবি করায় সমস্যা
দেখা দেয়। এখানেই স্থির হয় যে, জাতিসংঘের কাঠামো, উদ্দেশ্য, আইনবিধি প্রভৃতি প্রণয়নের জন্য
অদূর ভবিষ্যতে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আহŸান করা হবে। ১৯৪৫ সালে ইয়াল্টা সম্মেলনের
রুজভেল্ট, চার্চিল ও স্টালিন স্থির করেন যে, পরবর্তী ২৫ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রানসিস্কোতে এক
সম্মেলন আহŸান করা হবে যেখানে প্রস্তাবিত জাতিসংঘের একটি সনদ (ঈযধৎঃবৎ) প্রণীত হবে।
নির্দিষ্ট দিনে কর্মব্যস্ত সানফ্রানসিস্কো শহরে সারাবিশ্বের মোট ৫১টি দেশের প্রতিনিধিবর্গ এক
মহাসম্মেলনে মিলিত হন। বিভিন্নসংশ্লিষ্ট বিষয়ে পুংখানুপুঙ্খ ও বিশদ আলোচনার পর জাতিসংঘের
উদ্দেশ্য, নীতি, সংগঠন প্রভৃতি বিষয়ে সিদ্ধান্তগ্রহণ করা হয়। পাঁচটি বৃহৎশক্তির ভেটো দেওয়ার
অধিকার, আঞ্চলিক নিরাপত্তা রক্ষার ব্যবস্থা, অছি (ঞৎঁংঃবব) সংক্রান্তসমস্যা প্রভৃতি প্রশ্নেকিছু
জটিলতা দেখা দেয়। বিস্তারিত আলোচনার পর ভেটো গ্রাহ্য হয়, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য
জাতিসংঘের প্রস্তাব কার্যকরী করার সাপেক্ষে অনুমোদিত হয়, জাতিসংঘের অধীনে পৃথক অছি পরিষদ
গঠনের সিদ্ধান্তনেওয়া হয়। ১১১টি ধারা সম্বলিত জাতিসংঘের সনদটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
জাতিসংঘ সনদ
প্রস্তাবনায় বলা হয়, ভাবী প্রজন্মকে যুদ্ধের বিভীষিকা থেকে রক্ষা ও মৌলিক মানব অধিকার ও ন্যায়
বিচার প্রতিষ্ঠা করতে জাতিসংঘ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বৃহত্তর স্বাধীনতার প্রেক্ষাপটে সামাজিক অগ্রগতি, উন্নততর
জীবনযাত্রার মান, জাতিতে জাতিতে সুপ্রতিবেশীসুলভ আচরণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শান্তিও নিরাপত্তা
সুনিশ্চিত করা জাতিসংঘের লক্ষ্য। সব জাতির সমান অধিকার ও আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবি স্বীকার করে
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও সহাবস্থান বৃদ্ধি করা জাতিসংঘের উদ্দেশ্য।
উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য
জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রবর্গ দ্বিপাক্ষিক বা আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধানে যুদ্ধ পরিহার করে সনদ
নির্দেশিত শান্তিপূর্ণপথে মীমাংসার অঙ্গীকার করে। সনদ লঙ্ঘনকারী রাষ্ট্রকে জাতিসংঘ শাস্তিদেওয়ার
অধিকারী ও সদস্য রাষ্ট্রবর্গ তা সমর্থন করবে। সাধারণ অবস্থায় কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে
জাতিসংঘ হস্তক্ষেপ না করলেও বিশ্বশান্তিবিঘিœত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে জাতিসংঘের এই অধিকার
নীতিগতভাবে স্বীকৃত হয়। আঞ্চলিক নিরাপত্তা সংগঠনগুলিকে জাতিসংঘ প্রয়োজনবোধে শান্তিরক্ষার
দায়িত্ব অর্পণ করতে পারে। জাতিসংঘের সনদে উল্লিখিত আচরণবিধি মেনে চলতে যে সব শান্তিকামী
রাষ্ট্রইচ্ছুক তাদের সদস্য হিসেবে গ্রহণ করা হবে। তবে কোনো রাষ্ট্রের যোগ্যতা বিচারে নিরাপত্তা
পরিষদের সুপারিশ ও সাধারণ পরিষদের মনোনয়ন প্রয়োজন। নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশ ও সাধারণ
পরিষদের সম্মতিতে অনুরূপভাবে কোনো রাষ্ট্রের সদস্যপদ বাতিলও হতে পারে।


সংগঠন ও উদ্দেশ্য
সানফ্রানসিস্কো সম্মেলনে গৃহীত সনদ অনুযায়ী ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর নিউইয়র্কশহরে জাতিসংঘের
প্রথম অধিবেশন বসে। মোট ছটি সংস্থা নিয়ে জাতিসংঘের সংগঠন গড়ে ওঠে। এইগুলি হলো (১)
সাধারণ পরিষদ (এবহবৎধষ অংংবসনষু) (২) নিরাপত্তা পরিষদ (ঝবপঁৎরঃু ঈড়ঁহপরষ) (৩) অর্থনৈতিক
ও সামাজিক পরিষদ (ঊপড়হড়সরপ ধহফ ঝড়পরধষ ঈড়ঁহপরষ) (৪) অছি পরিষদ (ঞৎঁংঃববংযরঢ় ঈড়ঁহপরষ)
(৫) আন্তর্জাতিক বিচারালয় (ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ঈড়ঁৎঃ ড়ভ ঔঁংঃরপব) ও (৬) দপ্তর (ঝবপৎবঃধৎরধঃ)
সাধারণ পরিষদ ঃ সব সদস্য রাষ্ট্রকে নিয়ে সাধারণ পরিষদ গঠিত। প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্রপাঁচজন
প্রতিনিধি প্রেরণ করতে পারবে যদিও এক রাষ্ট্রের এক ভোট। সাধারণ পরিষদ প্রতি বছর একজন
সভাপতি নির্বাচন করবে। এছাড়া তের জন সহসভাপতি ও সাতজন স্থায়ী কমিটির সভাপতি নির্বাচিত
হবে। সাধারণ পরিষদ কর্তব্য সম্পাদানের জন্য অন্য আরও কয়েকটি কমিটি গঠিত হয়। এগুলো হল
রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সংক্রান্তকমিটি, অর্থনীতি সংক্রান্তকমিটি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কমিটি,
শাসনতান্ত্রিক ও আয়-ব্যয় সংক্রান্তকমিটি, আইন সম্পর্কিত কমিটি প্রভৃতি।
কার্যাবলী ঃ
সাধারণ পরিষদের অধিবেশন বছরে একবার করে আহŸান করা হয়। তবে অধিকাংশ সদস্যের
অনুরোধে কোনো বিশেষ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ সভার অধিবেশন আহŸান করা যাবে। বিশ্বশান্তির
স্বার্থসম্পর্কিত যে কোনো বিষয়ে সাধারণ পরিষদ আলোচনা ও সুপারিশ করবে। সাধারণ পরিষদে
কোনো সমস্যার আলোচনা ও বিতর্ক বিশ্বজনমত সৃষ্টিতে সাহায্য করবে। মানবাধিকার সম্পর্কি
আলোচনাও এর কর্তব্য। বৃহৎ শক্তিবর্গের পারস্পরিক মতবিরোধের ফলে ও ভেটো ব্যবস্থার জন্য অনেক
সময় নিরাপত্তা পরিষদে অচলাবস্থা দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে সাধারণ পরিষদ হস্তক্ষেপ করে মীমাংসার
ব্যবস্থা করতে পারে। জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থাগুলি তাদের কার্যবিবরণী সাধারণ পরিষদের কাছে পেশ
করবে।
নিরাপত্তা পরিষদ ঃ জাতিসংঘের কার্যনির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী নিরাপত্তার পরিষদ। পাঁচজন স্থায়ী সদস্য
ও দশজন অস্থায়ী সদস্য (পূর্বেছিল ছয়) নিয়ে এই পরিষদ গঠিত। পাঁচজন স্থায়ী সদস্য হলো মার্কিণ
যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স, সমাজতন্ত্রবাদী চীন (পূর্বে ছিল তাইওয়ান)। অস্থায়ী সদস্যগণ
দু'বছরের জন্য পর্যায়ক্রমে সাধারণ পরিষদ কর্তৃক নির্বাচিত হন। ১৯৭৮ সালে একবার এবং ১৯৯৯-
২০০০ সালে একবার এ নিয়ে বাংলাদেশ দু'বার নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য নির্বাচিত হয়েছে।
নিরপত্তা পরিষদের প্রধান কর্তব্য আন্তর্জাতিক শান্তিও নিরাপত্তা রক্ষা করা। শান্তিবিঘিœত হতে পারে
এমন যে কোনো বিষয়ে পরিষদ তদন্তকরতে পারে। শান্তিপ্রতিষ্ঠার জন্য আলোচনা মধ্যস্থতা, বিচার
অথবা উপযুক্ত যে কোনো শান্তিপূর্ণপথ অবলম্বন পরিষদের ক্ষমতাভুক্ত। শান্তিভঙ্গকারী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে
প্রয়োজনমত ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা পরিষদের আছে। এই শান্তিমূলক ব্যবস্থা দু'রকম হতে পারেঅর্থনৈতিক বয়কট ও সামরিক হস্তক্ষেপ। সাধারণ পরিষদের কোনো সিদ্ধান্তকার্যকর করার দায়িত্বও
নিরাপত্ত পরিষদের।
সাধারণত ঃ গুরুত্বপূর্ণনীতি সংক্রান্তব্যাপারে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটেই পরিষদ সিদ্ধান্তগ্রহণ করে। কিন্তু
অনেক সর্বসম্মত সিদ্ধান্তগ্রহণের ওপর জোর দেওয়া হয়। এর থেকে ভেটো ব্যবস্থার সৃষ্টি। এর দ্বারা যে
কোনো একজন স্থায়ী সদস্যের অসম্মতিতে কোনো প্রস্তাব খারিজ হয়ে যেতে পারে। আপাতদৃষ্টিতে
ভেটো ব্যবস্থা অগণতান্ত্রিক মনে হলেও কোনো আন্তর্জাতিক সদস্যার সমাধানে বৃহৎ রাষ্টবর্গের একমত
হওয়ার প্রয়োজনীতার ওপর এর দ্বারা গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিশেষ কোনো বৃহৎ শক্তির মতের বিরুদ্ধে
সংখ্যাধিক্যের ভোটে কোনো সিদ্ধান্তকার্যকর করার চেষ্টা হলে জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে।
পক্ষান্তরে বৃহৎ শক্তিগুলিরও সংকীর্ণস্বার্থেএই অধিকার প্রয়োগ না করার দায়িত্বথাকে।


অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ:কার্যাবলী
আন্তর্জাতিক শান্তিও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে সুষ্ঠুঅগ্রগতি।
জাতিসংঘের সনদেও মানবজাতির জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়া শিক্ষার
প্রসার ঘটিয়ে সামাজিক বৈষম্য দূর করে মানব সমাজের সর্বাঙ্গীন মঙ্গলের অঙ্গীকারও সনদে স্বীকৃত
হয়। এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্যই অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের সৃষ্টি করা হয়। সাধারণ পরিষদ
তিন বছরের মেয়াদি ১৮ জন সদস্যকে এই পরিষদে নির্বাচন করে।
পরিষদের প্রধান কাজগুলি হল (১) সদস্য রাষ্ট্রগুলির সমাজ উন্নয়ন, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, শিক্ষা,
স্বাস্থ্যসহ জন-কল্যাণমূলক বিভিন্নকার্যাবলী সম্পর্কেতথ্য সংগ্রহ ও সাধারণ পরিষদকে এই মর্মেঅবহিত
করা। (২) সদস্য রাষ্ট্রগুলিতে ন্যূনতম মানব অধিকার অর্থাৎ মৌলিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক
স্বাধীনতা রক্ষা প্রভৃতি বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ। (৩) পরিষদের অধীনস্থবিভিন্নবিশেষজ্ঞ সংস্থার
কাজের মধ্যে সমন¦য় সাধন ও আর্থ-সামাজিক বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন আহŸান করা।
পরিষদের অধীনস্থসংস্থাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (টঘঊঝঈঙ),
খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (ঋঅঙ), আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংস্থা (ওখঙ), আন্তর্জাতিক অর্থ-ভান্ডার (ওগঋ),
প্রভৃতি। এছাড়া ইউরোপের জন্য নিযুক্ত অর্থনেতিক কমিশন (ঊঊঈ), এশিয়া ও দূর প্রাচ্যের জন্য নিযুক্ত
কমিশন (ঊঈঅঊ) ও ল্যাটিন আমেরিকার জন্য কমিশন (ঊঈখঅ) উল্লেখযোগ্য। আন্তর্জাতিক স্তরে শিশু
বিকাশের উদ্দেশ্যে গঠিত হয়েছে এক জরুরি তহবিল (টঘওঈঊঋ), ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রশাসন
(টঘজজঅ)।
অছি পরিষদ ঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে অধিকাংশ ঔপনিবেশিক শাসনেরই অবসান হয়েছে। এখনও
যারা পরাধীন ও অত্যন্তপশ্চাৎপদ তাদের রাখা হয়েছে জাতিসংঘের তত্ত¡াবধানে অছি পরিষদের
শাসনাধীনে। সনদে বলা হয়েছে যে, অছি ব্যবস্থার অধীনস্থঅঞ্চলগুলির রাজনৈতিক, সামাজিক,
অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মান উন্নয়ন করে পূর্ণস্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করে দেওয়া।
কার্যাবলী
জাতিপুঞ্জ বা লীগের অধীনস্থম্যানডেট অঞ্চলসমূহ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে অক্ষশক্তির হাত থেকে
মুক্তিপ্রাপ্ত অঞ্চলগুলি অছি পরিষদের দায়িত্বে রাখার ব্যবস্থা হয়। ম্যান্ডেট ব্যবস্থায় পূর্বতন অটোমান বা
তুরস্ক সাম্রাজ্যের বিভিন্নঅঞ্চল কয়েকটি বৃহৎ শক্তির মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। ম্যান্ডেট অঞ্চলগুলির
ওপর পরিদর্শন ক্ষমতা সেখানকার অধিবাসীদের কোনো অধিকার ছিল না। কিন্তুঅছি ব্যবস্থায় এর
সুযোগ আছে।
অছি অঞ্চলগুলি অধিকাংশই আফ্রিকায় অবস্থিত- যেমন, ইংরেজ ও ফরাসি টোগোল্যান্ড, ফরাসি
ক্যামেরুন, ইতালীয় সোমালিল্যান্ড, টাঙ্গানাইকা, রুয়ান্ডা-বুরুন্ডি প্রভৃতি। জাতিসংঘে আফ্রো-এশীয়
রাষ্ট্রগুলির প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় আছি অঞ্চলগুলির সুশাসন ও দ্রæত স্বাধীনতার ব্যবস্থা সুনিশ্চিত হয়।
নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যবর্গও সাধারণ পরিষদ কর্তৃক নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে অছি পরিষদ
গঠিত হওয়ার নিয়ম রাখা হয়। ষাট ও সত্তরের দশকের পর স্বাধীন রাষ্ট্রের উত্থানের পর অছি অঞ্চলের
প্রয়োজনীয়তা কমে যায়, ফলে অছি পরিষদও কার্যত গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে।
আন্তর্জাতিক বিচারলয় ঃ সানফ্রানসিস্কোতে স্বাক্ষরিত এক চুক্তির মাধ্যমে এই বিচারালয়ের সৃষ্টি হয়।
পরে চুক্তিটি সনদে সন্নিবেশিত করা হয়। জাতিপুঞ্জের অধীনস্থআন্তর্জাতিক বিচালালয়ের তুলনায় এই
বিচারালয় আরও বড় ও উন্নতমানের হয়। আইনজ্ঞ হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত ও নিজের দেশের সর্বোচ্চ


আদালতে নিযুক্ত হওয়ার যোগ্যতা সম্পন্নব্যক্তিকে এখানে বিচারক নিযুক্ত করা হয়। নিযুক্তির সময়
বিশ্বের বিভিন্নসভ্যতা ও আইন ব্যবস্থার প্রতিফলন হচ্ছে কিনা সেদিকে দৃষ্টি রাখা হয়। সাধারণ পরিষদ
ও নিরাপত্তা পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে বিচারকগণ নিযুক্ত হন নবছরের জন্য। বিচারকের সংখ্যা ১৫
জন। জাতিসংঘের সব সদস্য রাষ্ট্রই আন্তর্জাাতিক বিচারালয়ের সদস্য। আন্তর্জাতিক আইনের ব্যাখ্যা,
সদস্য রাষ্ট্রগুলির বিবাদের মীমাংসা, বিশেষজ্ঞ সমিতিগুলিকে আইনগত পরামর্শদান প্রভৃতি বিচারালয়ের
এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে। দি হেগে এর কার্যালয় অবস্থিত।
দপ্তর ঃ
জাতিসংঘের সনদে বলা হয়েছে যে, একজন মহাসচিব (ঝবপৎবঃধৎু এবহবৎধষ) ও সাংগঠনিক কর্মীদের
নিয়ে দপ্তরে গঠিত হবে। বিশ্বের বিভিন্নভৌগলিক অঞ্চল থেকে যোগ্যতা ও সততার মানের ভিত্তিতে
দপ্তরের কর্মচারীবৃন্দ নিযুক্ত হয়। নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশক্রমে সাধারণ পরিষদ মহাসচিব নিয়োগ
করে। আন্তর্জাতিক শান্তিও নিরাপত্তা বিঘিœত হতে পারে এরকম যে কোনো ঘটনা জাতিসংঘের মহাসচিব
নিরাপত্তা পরিষদের দৃষ্টিগোচরে আনবেন। জাতিসংঘের বিভিন্নসংস্থার মধ্যে সমম্বয় সাধন তাঁর অপর
একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এই সংস্থাগুলির কার্য পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য দপ্তর পরিবেশন
করবে। জাতিসংঘের নানান পত্রিকা প্রকাশনা. বৈজ্ঞানিক ও অন্যান্য জনকল্যাণমূলক সংগঠনগুলির
তত্ত¡াবধানও দপ্তরের কর্তব্য।
জাতিসংঘের আয়-ব্যয়ের হিসাব মহাসচিব সাধারণ পরিষদে উপস্থাপন করেন। এছাড়া সাধারণ
পরিষদের কার্যবিবরণী পেশ, কর্মসূচি প্রণয়ন প্রভৃতিও মহাসচিবের কর্তব্য। ব্যক্তি হিসেব তিনিই
একমাত্র জাতিসংঘের সংস্থা ও সংগঠনগুলির ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারেন। ট্রিগভে লীই (ঞৎুমাব
খরব) ছিলেন জাতিসংঘের প্রথম মহাসচিব। জাতিসংঘের সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে
অবস্থিত।
জাতিসংঘ ও জাতিপুঞ্জের পার্থক্য
দীর্ঘদিনব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বিশ্বের পরবর্তী প্রজন্মের শান্তিও নিরাপত্তার স্বার্থেমিত্রপক্ষ এক
আন্তর্জাতিক সংগঠনের কথা চিন্তা করেছিলেন। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে উভয় ক্ষেত্রেই একটি করে এই
প্রতিষ্ঠান আত্মপ্রকাশ করেÑযথাক্রমে জাতিপুঞ্জ (খবধমঁব ড়ভ ঘধঃরড়হং) ও জাতিসংঘ (টহরঃবফ ঘধঃরড়হং
ঙৎমধহরংধঃরড়হ)।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জেনেভায় যে জাতিপুঞ্জের উৎপত্তি হয় বিশ্ব শান্তিরক্ষায় তা ব্যর্থহয়। চৌদ্দ দফা
দাবির অংশ হিসেবে জাতিপুঞ্জ ছিল যেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি উইলসনের মানস সন্তান। এই ব্যর্থতার
অভিজ্ঞতা থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ও অন্যান্য মিত্রপক্ষীয় নেতাগণ
শিক্ষা নেন।
জাতিপুঞ্জের সৃষ্টি হয়েছিল বিশ্বযুদ্ধের অবসানে একটি আদর্শহিসেবে। ইউরোপ তথা বিশ্ব এর জন্য
প্রস্তুত ছিল না। বিশ্বশান্তিও নিরাপত্তার স্থলে মিত্রপক্ষের নেতৃবৃন্দ পরাজিত দেশ জার্মানিকেই শাস্তি
দেওয়ার ওপর জোর বেশি দেন। কিন্তুএবার যুদ্ধ অবসানের অনেক আগেই এই পরিকল্পনার শুরু হয়।
বিশেষ কোনো আদর্শবোধ নয়, বাস্তব প্রয়োজনই ছিল জাতিসংঘের গঠনের মূল চালিকা শক্তি।
১৯৪১ সালের আটলান্টিক বৈঠক রুজভেল্ট-চার্চিল আলোচন থেকে শুরু করে ১৯৪৫-এর সানফ্রানসিস্কো
সম্মেলন পর্যন্তবিভিন্নসময়, বিভিন্নপর্যায়ে জাতিসংঘ গঠনের আলোচনা চলেছে। ফলে জাতিপুঞ্জের
উৎপত্তির পর যে ধরনের সমস্যা বৃহৎ শক্তিবর্গের মধ্যে দেখা দেয় জাতিসংঘের ক্ষেত্রে সেগুলির অনেকটা
সমাধান পূর্বেই হয়ে যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের তুলনায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষেত্রে তিন রাষ্ট্রপ্রধান,
রুজভেল্ট, চার্চিল ও স্টালিন অনেক বেশি দূরদৃষ্টিসম্পন্নছিলেন।


জাতিপুঞ্জ ও জাতিসংঘের একই উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে দুটি বিভিন্নসময়ে সৃষ্ট দু'টি আন্তর্জাাতিক সংস্থা।
যুদ্ধ রোধ করার প্রচেষ্টা হয়ত অনেক পুরনো কিন্তুআন্তর্জাতিক স্তরে স্থায়ী শান্তিবজায় রাখার চেষ্টা কার্যত
জাতিপুঞ্জ দিয়েই শুরু হয়েছিল। সেই অর্থেজাতিসংঘ তারই উত্তরসূরী। প্রথমটি একটি ধারণার সৃষ্টি
করেছিল, দ্বিতীয়টি তার সার্থক পরিণতি হিসেবে কাজ করছে। কিন্তুউভয়ের মধ্যে কিছুগুরুত্বপূর্ণ
পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের তুলনায় জাতিপুঞ্জের পরিষদ অনেক বেশি অসংহত বা ভঙ্গুর ছিল।
প্রথমটিতে স্থায়ী সদস্যের ও তার সংখ্যার পরিবর্তন হয় বারবার। কিন্তুনিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্যের
সংখ্যা আজও অপরিবর্তিত আছে। শুধু রাজনৈতিক কারণে সর্বসম্মতভাবে স্থলাভিষিক্ত হয়েছে
সমাজতান্ত্রিক চীন।
জাতিপুঞ্জের ক্ষেত্রে পরিষদ ও সাধারণ পরিষদের মধ্যে ক্ষমতা ও দায়িত্বের সুষ্ঠুবিভাজন ছিল না,
জাতিসংঘের ক্ষেত্রে তা আছে। সাধারণ পরিষদ অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগ্রহণ করলেও শান্তিও
নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদই সুস্পষ্টভাবে অধিক ক্ষমতার অধিকারী।
জাতিপুঞ্জের বিধি অনুযায়ী কেবলমাত্র আক্রমণাত্মক যুদ্ধই ‘যুদ্ধ' হিসেবে বিবেচিত হতো। ফলে অনেক
রাষ্ট্রই অঘোষিত যুদ্ধের দ্বারা তার স্বার্থসিদ্ধি করেছে। কিন্তুজাতিসংঘের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র যুদ্ধই নয়, যুদ্ধের
সম্ভাবনা মাত্র দেখা দিলেই নিরাপত্তা পরিষদের হস্তক্ষেপ করার অধিকার আছে। তাছাড়া জাতিসংঘ
সেনাবাহিনীর ব্যবস্থা করতে পারে জাতিপুঞ্জের সে শক্তি ছিল না।
বলা হয় যে ‘ভেটো' ব্যবস্থা জাতিসংঘের কর্তব্য সম্পাদনে অন্তরায় সৃষ্টি করে। কিন্তুজাতিপুঞ্জের
সর্বসম্মত সিদ্ধান্তগ্রহণের নীতিও একইরকম বাধার সৃষ্টি করতো। জাতিপুঞ্জ পরিষদের অন্তর্ভুক্ত নয় এমন
সদস্য পরিষদের সিদ্ধান্তমানতে বাধ্য ছিল না, কিন্তুনিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তসব সদস্য রাষ্ট্রমেনে
নিতে বাধ্য।
জাতিপুঞ্জের তুলনায় জাতিসংঘের কর্মসূচি অনেক ব্যাপক। রাজনৈতিক দিক বাদ দিলেও জাতিসংঘে ও
তার অধীনস্থবিশেষজ্ঞ সংস্থাগুলির মাধ্যমে মানবাধিকার ও মানবকল্যাণসহ খাদ্য, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য
প্রভৃতি ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বাক্ষর রেখেছে। জাতিসংঘ শুধুমাত্র মুষ্টিমেয় বৃহৎশক্তির স্বার্থে
পরিচালিত হয় না।
জাতিপুঞ্জ ও জাতিসংঘের তুলনামূলক আলোচনায় বোঝা যায় যে জাতিসংঘ যেন জাতিপুঞ্জের এক
সংশোধিত ও পরিমার্জিত সংস্ককরণ। জাতিসংঘ অনেক বেশি সংগঠিত, সুসংহত। যুদ্ধের পুনরাবৃত্তি
রোধ অস্ত্রের বিনাশের মাধ্যমেই শুধুসম্ভব নয়। প্রয়োজন মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। আর্থ-সামাজিক
উন্নয়নের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক জাগরণের মধ্যে দিয়েই তা সম্ভব। জাতিসংঘ সেই ধারণারই প্রসার
ঘটিয়েছে।
সাফল্য ও ব্যর্থতা
অনেক রক্ত ও ধ্বংসের বিনিময়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অশুভ শক্তির পরাভব সুনিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছিল।
বিশ্বজনমত ফ্যাসিষ্ট শক্তির বিরুদ্ধে যায়। জাতিসংঘের জন্ম সেজন্য এক আশার আলোর সঞ্চার করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঔপনিবেশিক শক্তিগুলির সাম্রাজ্যের প্রায়শই অবসান ঘটায়। সদ্য স্বাধীন দুর্বল ও অনুন্নত
দেশগুলি জাতিসংঘের মধ্যে তাদের রক্ষাকর্তাকে খুঁজে পায়। ১৯৪৬ সালে ইঙ্গ-ফরাসি সৈন্য
মোতায়েনের বিরুদ্ধে সিরিয়া ও লেবাননের অভিযোগ, ইন্দোনেশিয়া ও কোরিয়ার স্বাধীনতার প্রশ্ন,


মিশরের সুয়েজ সমস্যা প্রভৃতি ক্ষেত্রে জাতিসংঘের ভ‚মিকা প্রশংসার দাবি রাখে। অন্যদিকে বিশ্বস্বাস্থ্য
সংস্থা, কৃষি ও খাদ্য সংস্থা, বিশ্বব্যাংক, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা, শ্রমিক সংস্থা, সামাজিক ও
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতা বৃদ্ধি সাহায্য করে। অনুন্নত দেশগুলির
অর্থনৈতিক, কারিগরি ও বাণিজ্যিক উন্নয়নে জাতিসংঘের ভ‚মিকা উল্লেখযোগ্য। মানবাধিকার ও শিশুকল্যাণের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের অধীনস্থসংস্থাগুলি আজও প্রশংসনীয় কাজ করে চলেছে।
জাতিপুঞ্জের একটি সহজাত দুর্বলতা ছিল ভার্সাই সন্ধির সঙ্গে তার সংযোগ। জাতিসংঘ এই সীমাবদ্ধতা
থেকে মুক্ত আছে। কিন্তুতার উন্মেষপর্বেজাতিসংঘকে ¯œায়ুযুদ্ধের ঘূর্ণাবর্তেপড়তে হয়। পশ্চিমী জোট
বনাম সোভিয়েত জোট এই দ্বন্দে¡ জাতিসংঘকে অনেক ক্ষেত্রে নীরব দর্শকের ভ‚মিকা নিতে হয়েছে।
এখন অবশ্য সেই দ্বন্দ¡ আর নেই। তবে এ মুহ‚র্তেমার্কিন যুক্ত রাষ্ট্রের একক কর্তৃত্ব পৃথিবীতে শান্তি
স্থাপনে নতুনভাবে বাধাঁ সৃষ্টি করছে, আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। আফ্রো-এশিয় দেশগুলি জাতিসংঘে
সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্তে¡ও চীন ছাড়া আর কেউই নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যের পদ পায়নি।
সনাতনী সাম্রাজ্যবাদের অবসান হলেও নতুন মোড়কে তার উপস্থিতি আজও বিশ্ববাসীর শংকার কারণ।
উচ্চমার্গের কূটনীতির দাবা খেলায় জাতিসংঘ এখনও অসহায় বোধ করে। জাতিসংঘের উপর একক
পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব আরো গভীর হয়েছে। কিন্তুএতদসত্তে¡ও জাতিসংঘের উপযোগিতা মোটেই
হ্রাস পায়নি। তৃতীয় বিশ্বের ক্ষুদ্রও অনুন্নত দেশগুলি তাদের দুর্বল অস্তিত্বের আশংকায় জাতিসংঘকেই
মনে করে শেষ বিচারের স্থল ¯œায়ুযুদ্ধের অবসানের পর জাতিসংঘের ভ‚মিকা আরো ব্যাপক হয়েছে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন


১। জাতিসংঘ ঘোষণাপত্র স্বাক্ষরিত হয়-
(ক) ১৯৪২ সালে (খ) ১৯৪৩ সালে
(গ) ১৯৪৪ সালে (ঘ) ১৯৪৫ সালে
২। জাতিসংঘের সনদ সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়-
(ক) ওয়াশিংটন সম্মেলনে (খ) মস্কো সম্মেলনে
(গ) সানফ্রান্সিকো সম্মেলনে (ঘ) তেহরুন সম্মেলনে।
৩। জাতিসংঘের প্রধান অঙ্গ সংখ্যা-
(ক) ৩ টি (খ) ৪ টি
(গ) ৫ টি (ঘ) ৬ টি
৪। বাংলাদেশ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে এ পর্যন্তনির্বাচিত হয়েছে
(ক) একবার (খ) দুইবার
(গ) তিনবার (ঘ) চারবার
৫। জাতিসংঘের প্রথম সহাসচিবের নাম-
(ক) কফি আনান (খ) উথান্ট
(গ) টিগেভে লীই (ঘ) বুট্রোস ঘালিঃ
উত্তর: ১। (ক) ২। (গ) ৩। (ঘ) ৪। (খ) ৫। (গ)
(খ) রচনামূলক প্রশ্ন
১. জাতিসংঘের উৎপত্তির পটভ‚মি আলোচনা করুন।
২. জাতিসংঘের প্রধান দুটি অঙ্গ সংস্থা সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদের ক্ষমতা ও কার্যাবলীর
সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিন।
৩. জাতিসংঘ এবং জাতিপুঞ্জের মধ্যে পার্থক্য বিশ্লেষন করুন। জাতিসংঘ কতটুকুসফল হয়েছে ?

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]