অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ:কার্যাবলী


অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ:কার্যাবলী
আন্তর্জাতিক শান্তিও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে সুষ্ঠুঅগ্রগতি।
জাতিসংঘের সনদেও মানবজাতির জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়া শিক্ষার
প্রসার ঘটিয়ে সামাজিক বৈষম্য দূর করে মানব সমাজের সর্বাঙ্গীন মঙ্গলের অঙ্গীকারও সনদে স্বীকৃত
হয়। এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্যই অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের সৃষ্টি করা হয়। সাধারণ পরিষদ
তিন বছরের মেয়াদি ১৮ জন সদস্যকে এই পরিষদে নির্বাচন করে।
পরিষদের প্রধান কাজগুলি হল (১) সদস্য রাষ্ট্রগুলির সমাজ উন্নয়ন, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, শিক্ষা,
স্বাস্থ্যসহ জন-কল্যাণমূলক বিভিন্নকার্যাবলী সম্পর্কেতথ্য সংগ্রহ ও সাধারণ পরিষদকে এই মর্মেঅবহিত
করা। (২) সদস্য রাষ্ট্রগুলিতে ন্যূনতম মানব অধিকার অর্থাৎ মৌলিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক
স্বাধীনতা রক্ষা প্রভৃতি বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ। (৩) পরিষদের অধীনস্থবিভিন্নবিশেষজ্ঞ সংস্থার
কাজের মধ্যে সমন¦য় সাধন ও আর্থ-সামাজিক বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন আহŸান করা।
পরিষদের অধীনস্থসংস্থাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (টঘঊঝঈঙ),
খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (ঋঅঙ), আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংস্থা (ওখঙ), আন্তর্জাতিক অর্থ-ভান্ডার (ওগঋ),
প্রভৃতি। এছাড়া ইউরোপের জন্য নিযুক্ত অর্থনেতিক কমিশন (ঊঊঈ), এশিয়া ও দূর প্রাচ্যের জন্য নিযুক্ত
কমিশন (ঊঈঅঊ) ও ল্যাটিন আমেরিকার জন্য কমিশন (ঊঈখঅ) উল্লেখযোগ্য। আন্তর্জাতিক স্তরে শিশু
বিকাশের উদ্দেশ্যে গঠিত হয়েছে এক জরুরি তহবিল (টঘওঈঊঋ), ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রশাসন
(টঘজজঅ)।
অছি পরিষদ ঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে অধিকাংশ ঔপনিবেশিক শাসনেরই অবসান হয়েছে। এখনও
যারা পরাধীন ও অত্যন্তপশ্চাৎপদ তাদের রাখা হয়েছে জাতিসংঘের তত্ত¡াবধানে অছি পরিষদের
শাসনাধীনে। সনদে বলা হয়েছে যে, অছি ব্যবস্থার অধীনস্থঅঞ্চলগুলির রাজনৈতিক, সামাজিক,
অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মান উন্নয়ন করে পূর্ণস্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করে দেওয়া।
কার্যাবলী
জাতিপুঞ্জ বা লীগের অধীনস্থম্যানডেট অঞ্চলসমূহ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে অক্ষশক্তির হাত থেকে
মুক্তিপ্রাপ্ত অঞ্চলগুলি অছি পরিষদের দায়িত্বে রাখার ব্যবস্থা হয়। ম্যান্ডেট ব্যবস্থায় পূর্বতন অটোমান বা
তুরস্ক সাম্রাজ্যের বিভিন্নঅঞ্চল কয়েকটি বৃহৎ শক্তির মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। ম্যান্ডেট অঞ্চলগুলির
ওপর পরিদর্শন ক্ষমতা সেখানকার অধিবাসীদের কোনো অধিকার ছিল না। কিন্তুঅছি ব্যবস্থায় এর
সুযোগ আছে।
অছি অঞ্চলগুলি অধিকাংশই আফ্রিকায় অবস্থিত- যেমন, ইংরেজ ও ফরাসি টোগোল্যান্ড, ফরাসি
ক্যামেরুন, ইতালীয় সোমালিল্যান্ড, টাঙ্গানাইকা, রুয়ান্ডা-বুরুন্ডি প্রভৃতি। জাতিসংঘে আফ্রো-এশীয়
রাষ্ট্রগুলির প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় আছি অঞ্চলগুলির সুশাসন ও দ্রæত স্বাধীনতার ব্যবস্থা সুনিশ্চিত হয়।
নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যবর্গও সাধারণ পরিষদ কর্তৃক নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে অছি পরিষদ
গঠিত হওয়ার নিয়ম রাখা হয়। ষাট ও সত্তরের দশকের পর স্বাধীন রাষ্ট্রের উত্থানের পর অছি অঞ্চলের
প্রয়োজনীয়তা কমে যায়, ফলে অছি পরিষদও কার্যত গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে।
আন্তর্জাতিক বিচারলয় ঃ সানফ্রানসিস্কোতে স্বাক্ষরিত এক চুক্তির মাধ্যমে এই বিচারালয়ের সৃষ্টি হয়।
পরে চুক্তিটি সনদে সন্নিবেশিত করা হয়। জাতিপুঞ্জের অধীনস্থআন্তর্জাতিক বিচালালয়ের তুলনায় এই
বিচারালয় আরও বড় ও উন্নতমানের হয়। আইনজ্ঞ হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত ও নিজের দেশের সর্বোচ্চ


আদালতে নিযুক্ত হওয়ার যোগ্যতা সম্পন্নব্যক্তিকে এখানে বিচারক নিযুক্ত করা হয়। নিযুক্তির সময়
বিশ্বের বিভিন্নসভ্যতা ও আইন ব্যবস্থার প্রতিফলন হচ্ছে কিনা সেদিকে দৃষ্টি রাখা হয়। সাধারণ পরিষদ
ও নিরাপত্তা পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে বিচারকগণ নিযুক্ত হন নবছরের জন্য। বিচারকের সংখ্যা ১৫
জন। জাতিসংঘের সব সদস্য রাষ্ট্রই আন্তর্জাাতিক বিচারালয়ের সদস্য। আন্তর্জাতিক আইনের ব্যাখ্যা,
সদস্য রাষ্ট্রগুলির বিবাদের মীমাংসা, বিশেষজ্ঞ সমিতিগুলিকে আইনগত পরামর্শদান প্রভৃতি বিচারালয়ের
এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে। দি হেগে এর কার্যালয় অবস্থিত।
দপ্তর ঃ
জাতিসংঘের সনদে বলা হয়েছে যে, একজন মহাসচিব (ঝবপৎবঃধৎু এবহবৎধষ) ও সাংগঠনিক কর্মীদের
নিয়ে দপ্তরে গঠিত হবে। বিশ্বের বিভিন্নভৌগলিক অঞ্চল থেকে যোগ্যতা ও সততার মানের ভিত্তিতে
দপ্তরের কর্মচারীবৃন্দ নিযুক্ত হয়। নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশক্রমে সাধারণ পরিষদ মহাসচিব নিয়োগ
করে। আন্তর্জাতিক শান্তিও নিরাপত্তা বিঘিœত হতে পারে এরকম যে কোনো ঘটনা জাতিসংঘের মহাসচিব
নিরাপত্তা পরিষদের দৃষ্টিগোচরে আনবেন। জাতিসংঘের বিভিন্নসংস্থার মধ্যে সমম্বয় সাধন তাঁর অপর
একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এই সংস্থাগুলির কার্য পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য দপ্তর পরিবেশন
করবে। জাতিসংঘের নানান পত্রিকা প্রকাশনা. বৈজ্ঞানিক ও অন্যান্য জনকল্যাণমূলক সংগঠনগুলির
তত্ত¡াবধানও দপ্তরের কর্তব্য।
জাতিসংঘের আয়-ব্যয়ের হিসাব মহাসচিব সাধারণ পরিষদে উপস্থাপন করেন। এছাড়া সাধারণ
পরিষদের কার্যবিবরণী পেশ, কর্মসূচি প্রণয়ন প্রভৃতিও মহাসচিবের কর্তব্য। ব্যক্তি হিসেব তিনিই
একমাত্র জাতিসংঘের সংস্থা ও সংগঠনগুলির ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারেন। ট্রিগভে লীই (ঞৎুমাব
খরব) ছিলেন জাতিসংঘের প্রথম মহাসচিব। জাতিসংঘের সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে
অবস্থিত।
জাতিসংঘ ও জাতিপুঞ্জের পার্থক্য
দীর্ঘদিনব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বিশ্বের পরবর্তী প্রজন্মের শান্তিও নিরাপত্তার স্বার্থেমিত্রপক্ষ এক
আন্তর্জাতিক সংগঠনের কথা চিন্তা করেছিলেন। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে উভয় ক্ষেত্রেই একটি করে এই
প্রতিষ্ঠান আত্মপ্রকাশ করেÑযথাক্রমে জাতিপুঞ্জ (খবধমঁব ড়ভ ঘধঃরড়হং) ও জাতিসংঘ (টহরঃবফ ঘধঃরড়হং
ঙৎমধহরংধঃরড়হ)।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জেনেভায় যে জাতিপুঞ্জের উৎপত্তি হয় বিশ্ব শান্তিরক্ষায় তা ব্যর্থহয়। চৌদ্দ দফা
দাবির অংশ হিসেবে জাতিপুঞ্জ ছিল যেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি উইলসনের মানস সন্তান। এই ব্যর্থতার
অভিজ্ঞতা থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ও অন্যান্য মিত্রপক্ষীয় নেতাগণ
শিক্ষা নেন।
জাতিপুঞ্জের সৃষ্টি হয়েছিল বিশ্বযুদ্ধের অবসানে একটি আদর্শহিসেবে। ইউরোপ তথা বিশ্ব এর জন্য
প্রস্তুত ছিল না। বিশ্বশান্তিও নিরাপত্তার স্থলে মিত্রপক্ষের নেতৃবৃন্দ পরাজিত দেশ জার্মানিকেই শাস্তি
দেওয়ার ওপর জোর বেশি দেন। কিন্তুএবার যুদ্ধ অবসানের অনেক আগেই এই পরিকল্পনার শুরু হয়।
বিশেষ কোনো আদর্শবোধ নয়, বাস্তব প্রয়োজনই ছিল জাতিসংঘের গঠনের মূল চালিকা শক্তি।
১৯৪১ সালের আটলান্টিক বৈঠক রুজভেল্ট-চার্চিল আলোচন থেকে শুরু করে ১৯৪৫-এর সানফ্রানসিস্কো
সম্মেলন পর্যন্তবিভিন্নসময়, বিভিন্নপর্যায়ে জাতিসংঘ গঠনের আলোচনা চলেছে। ফলে জাতিপুঞ্জের
উৎপত্তির পর যে ধরনের সমস্যা বৃহৎ শক্তিবর্গের মধ্যে দেখা দেয় জাতিসংঘের ক্ষেত্রে সেগুলির অনেকটা
সমাধান পূর্বেই হয়ে যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের তুলনায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষেত্রে তিন রাষ্ট্রপ্রধান,
রুজভেল্ট, চার্চিল ও স্টালিন অনেক বেশি দূরদৃষ্টিসম্পন্নছিলেন।


জাতিপুঞ্জ ও জাতিসংঘের একই উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে দুটি বিভিন্নসময়ে সৃষ্ট দু'টি আন্তর্জাাতিক সংস্থা।
যুদ্ধ রোধ করার প্রচেষ্টা হয়ত অনেক পুরনো কিন্তুআন্তর্জাতিক স্তরে স্থায়ী শান্তিবজায় রাখার চেষ্টা কার্যত
জাতিপুঞ্জ দিয়েই শুরু হয়েছিল। সেই অর্থেজাতিসংঘ তারই উত্তরসূরী। প্রথমটি একটি ধারণার সৃষ্টি
করেছিল, দ্বিতীয়টি তার সার্থক পরিণতি হিসেবে কাজ করছে। কিন্তুউভয়ের মধ্যে কিছুগুরুত্বপূর্ণ
পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের তুলনায় জাতিপুঞ্জের পরিষদ অনেক বেশি অসংহত বা ভঙ্গুর ছিল।
প্রথমটিতে স্থায়ী সদস্যের ও তার সংখ্যার পরিবর্তন হয় বারবার। কিন্তুনিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্যের
সংখ্যা আজও অপরিবর্তিত আছে। শুধু রাজনৈতিক কারণে সর্বসম্মতভাবে স্থলাভিষিক্ত হয়েছে
সমাজতান্ত্রিক চীন।
জাতিপুঞ্জের ক্ষেত্রে পরিষদ ও সাধারণ পরিষদের মধ্যে ক্ষমতা ও দায়িত্বের সুষ্ঠুবিভাজন ছিল না,
জাতিসংঘের ক্ষেত্রে তা আছে। সাধারণ পরিষদ অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগ্রহণ করলেও শান্তিও
নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদই সুস্পষ্টভাবে অধিক ক্ষমতার অধিকারী।
জাতিপুঞ্জের বিধি অনুযায়ী কেবলমাত্র আক্রমণাত্মক যুদ্ধই ‘যুদ্ধ' হিসেবে বিবেচিত হতো। ফলে অনেক
রাষ্ট্রই অঘোষিত যুদ্ধের দ্বারা তার স্বার্থসিদ্ধি করেছে। কিন্তুজাতিসংঘের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র যুদ্ধই নয়, যুদ্ধের
সম্ভাবনা মাত্র দেখা দিলেই নিরাপত্তা পরিষদের হস্তক্ষেপ করার অধিকার আছে। তাছাড়া জাতিসংঘ
সেনাবাহিনীর ব্যবস্থা করতে পারে জাতিপুঞ্জের সে শক্তি ছিল না।
বলা হয় যে ‘ভেটো' ব্যবস্থা জাতিসংঘের কর্তব্য সম্পাদনে অন্তরায় সৃষ্টি করে। কিন্তুজাতিপুঞ্জের
সর্বসম্মত সিদ্ধান্তগ্রহণের নীতিও একইরকম বাধার সৃষ্টি করতো। জাতিপুঞ্জ পরিষদের অন্তর্ভুক্ত নয় এমন
সদস্য পরিষদের সিদ্ধান্তমানতে বাধ্য ছিল না, কিন্তুনিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তসব সদস্য রাষ্ট্রমেনে
নিতে বাধ্য।
জাতিপুঞ্জের তুলনায় জাতিসংঘের কর্মসূচি অনেক ব্যাপক। রাজনৈতিক দিক বাদ দিলেও জাতিসংঘে ও
তার অধীনস্থবিশেষজ্ঞ সংস্থাগুলির মাধ্যমে মানবাধিকার ও মানবকল্যাণসহ খাদ্য, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য
প্রভৃতি ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বাক্ষর রেখেছে। জাতিসংঘ শুধুমাত্র মুষ্টিমেয় বৃহৎশক্তির স্বার্থে
পরিচালিত হয় না।
জাতিপুঞ্জ ও জাতিসংঘের তুলনামূলক আলোচনায় বোঝা যায় যে জাতিসংঘ যেন জাতিপুঞ্জের এক
সংশোধিত ও পরিমার্জিত সংস্ককরণ। জাতিসংঘ অনেক বেশি সংগঠিত, সুসংহত। যুদ্ধের পুনরাবৃত্তি
রোধ অস্ত্রের বিনাশের মাধ্যমেই শুধুসম্ভব নয়। প্রয়োজন মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। আর্থ-সামাজিক
উন্নয়নের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক জাগরণের মধ্যে দিয়েই তা সম্ভব। জাতিসংঘ সেই ধারণারই প্রসার
ঘটিয়েছে।
সাফল্য ও ব্যর্থতা
অনেক রক্ত ও ধ্বংসের বিনিময়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অশুভ শক্তির পরাভব সুনিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছিল।
বিশ্বজনমত ফ্যাসিষ্ট শক্তির বিরুদ্ধে যায়। জাতিসংঘের জন্ম সেজন্য এক আশার আলোর সঞ্চার করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঔপনিবেশিক শক্তিগুলির সাম্রাজ্যের প্রায়শই অবসান ঘটায়। সদ্য স্বাধীন দুর্বল ও অনুন্নত
দেশগুলি জাতিসংঘের মধ্যে তাদের রক্ষাকর্তাকে খুঁজে পায়। ১৯৪৬ সালে ইঙ্গ-ফরাসি সৈন্য
মোতায়েনের বিরুদ্ধে সিরিয়া ও লেবাননের অভিযোগ, ইন্দোনেশিয়া ও কোরিয়ার স্বাধীনতার প্রশ্ন,


মিশরের সুয়েজ সমস্যা প্রভৃতি ক্ষেত্রে জাতিসংঘের ভ‚মিকা প্রশংসার দাবি রাখে। অন্যদিকে বিশ্বস্বাস্থ্য
সংস্থা, কৃষি ও খাদ্য সংস্থা, বিশ্বব্যাংক, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা, শ্রমিক সংস্থা, সামাজিক ও
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতা বৃদ্ধি সাহায্য করে। অনুন্নত দেশগুলির
অর্থনৈতিক, কারিগরি ও বাণিজ্যিক উন্নয়নে জাতিসংঘের ভ‚মিকা উল্লেখযোগ্য। মানবাধিকার ও শিশুকল্যাণের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের অধীনস্থসংস্থাগুলি আজও প্রশংসনীয় কাজ করে চলেছে।
জাতিপুঞ্জের একটি সহজাত দুর্বলতা ছিল ভার্সাই সন্ধির সঙ্গে তার সংযোগ। জাতিসংঘ এই সীমাবদ্ধতা
থেকে মুক্ত আছে। কিন্তুতার উন্মেষপর্বেজাতিসংঘকে ¯œায়ুযুদ্ধের ঘূর্ণাবর্তেপড়তে হয়। পশ্চিমী জোট
বনাম সোভিয়েত জোট এই দ্বন্দে¡ জাতিসংঘকে অনেক ক্ষেত্রে নীরব দর্শকের ভ‚মিকা নিতে হয়েছে।
এখন অবশ্য সেই দ্বন্দ¡ আর নেই। তবে এ মুহ‚র্তেমার্কিন যুক্ত রাষ্ট্রের একক কর্তৃত্ব পৃথিবীতে শান্তি
স্থাপনে নতুনভাবে বাধাঁ সৃষ্টি করছে, আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। আফ্রো-এশিয় দেশগুলি জাতিসংঘে
সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্তে¡ও চীন ছাড়া আর কেউই নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যের পদ পায়নি।
সনাতনী সাম্রাজ্যবাদের অবসান হলেও নতুন মোড়কে তার উপস্থিতি আজও বিশ্ববাসীর শংকার কারণ।
উচ্চমার্গের কূটনীতির দাবা খেলায় জাতিসংঘ এখনও অসহায় বোধ করে। জাতিসংঘের উপর একক
পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব আরো গভীর হয়েছে। কিন্তুএতদসত্তে¡ও জাতিসংঘের উপযোগিতা মোটেই
হ্রাস পায়নি। তৃতীয় বিশ্বের ক্ষুদ্রও অনুন্নত দেশগুলি তাদের দুর্বল অস্তিত্বের আশংকায় জাতিসংঘকেই
মনে করে শেষ বিচারের স্থল ¯œায়ুযুদ্ধের অবসানের পর জাতিসংঘের ভ‚মিকা আরো ব্যাপক হয়েছে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন


১। জাতিসংঘ ঘোষণাপত্র স্বাক্ষরিত হয়-
(ক) ১৯৪২ সালে (খ) ১৯৪৩ সালে
(গ) ১৯৪৪ সালে (ঘ) ১৯৪৫ সালে
২। জাতিসংঘের সনদ সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়-
(ক) ওয়াশিংটন সম্মেলনে (খ) মস্কো সম্মেলনে
(গ) সানফ্রান্সিকো সম্মেলনে (ঘ) তেহরুন সম্মেলনে।
৩। জাতিসংঘের প্রধান অঙ্গ সংখ্যা-
(ক) ৩ টি (খ) ৪ টি
(গ) ৫ টি (ঘ) ৬ টি
৪। বাংলাদেশ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে এ পর্যন্তনির্বাচিত হয়েছে
(ক) একবার (খ) দুইবার
(গ) তিনবার (ঘ) চারবার
৫। জাতিসংঘের প্রথম সহাসচিবের নাম-
(ক) কফি আনান (খ) উথান্ট
(গ) টিগেভে লীই (ঘ) বুট্রোস ঘালিঃ
উত্তর: ১। (ক) ২। (গ) ৩। (ঘ) ৪। (খ) ৫। (গ)
(খ) রচনামূলক প্রশ্ন
১. জাতিসংঘের উৎপত্তির পটভ‚মি আলোচনা করুন।
২. জাতিসংঘের প্রধান দুটি অঙ্গ সংস্থা সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদের ক্ষমতা ও কার্যাবলীর
সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিন।
৩. জাতিসংঘ এবং জাতিপুঞ্জের মধ্যে পার্থক্য বিশ্লেষন করুন। জাতিসংঘ কতটুকুসফল হয়েছে ?

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]