স্নাায়ুযুদ্ধোত্তর বিশ্বপরিস্থিতির একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিন।


 নতুন বিশ্ব-ব্যবস্থার প্রকৃতি সম্পর্কেজানতে পারবেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রএবং সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বেযথাক্রমে ন্যাটো ও ওয়ারশো
প্যাক্ট গঠিত হয়। উভয় শিবিরের মধ্যে রাজনৈতিক আদর্শিক দ্বন্দ¡বিশ্বব্যাপী ¯œায়ুযুদ্ধের পরিবেশ তৈরি
করে। এ সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যকার প্রতিযোগিতা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্র এক
অস্বাভাবিক উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সম্পর্ক গড়ে উঠতে আরম্ভকরে যাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রদাঁতাত
(উবঃবহঃব) এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন শান্তিপূর্ণসহাবস্থান (চবধপবভঁষ ঈড়-বীরংঃপহপব) নামে অভিহিত
করে ছিল। এর ফলে ¯œায়ুযুদ্ধের গতি প্রকৃতি পরিবর্তিত হয় এবং আশির দশকের শেষ দিকে ¯œায়ুযুদ্ধের
অবসান হয়। যদিও কিউবা ক্ষেপণাস্ত্রসংকটের পর থেকে প্রকৃত অর্থেদাঁতাত-এর পর্যায় শুরু হয় তবে
তার সূচনা হয়েছিল আরো আগে। ১৯৫৩ সালে শক্তিশালী একনায়ক স্ট্যালিনের মৃত্যুর পর সবচেয়ে
বড় প্রতিবন্ধকতার অবসান হয়। ১৯৫৬ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতি
ঘোষণার পর আদর্শগত বাধা অপসারিত হয়। ১৯৫৯ সালে সোভিয়েত নেতা ক্রশ্চেভের যুক্তরাষ্ট্রভ্রমণ
উত্তেজনা প্রশমনের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ছিল।
তবে কিউবা ক্ষেপণাস্ত্রসংকটের পর থেকে ¯œায়ুযুদ্ধের মোড় পরিবর্তন হয়। কয়েকটি বিশেষ কারণ এই
চরম উত্তেজনাময় ¯œায়ুযুদ্ধের গতিকে হ্রাস করতে সাহায্য করে। যথা ঃ
১। কিউবা সংকট দুই পরাশক্তিকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয়। আর উভয়ই মনে করে যে, যদি উত্তেজনা
প্রশমন না করা যায় তবে আবার যুদ্ধের হুমকি সৃষ্টি করতে পার। সবাইকে নাড়া দেয় এ ঘটনা।
২। সে সময়ের প্রেক্ষাপটে পারমাণবিক যুদ্ধ বাঁধলে কেউই বিজয়ী হতে পারতো না। উভয়ই জানতো
পরস্পরকে ধ্বংস করার মতো যথেস্ট অস্ত্রমজুত আছে। কারণ ১৯৫০ এর দশকের পর থেকে উভয়
পরাশক্তির পারমাণবিক অস্ত্রের পাল্লা সমান ছিল। এমন কোনো সম্ভাবনা ছিল না যে, আকস্মিক আক্রমণ
করে তা দখল করা সম্ভভ হবে।
৩। পরবর্তীকালে যখন নিরস্ত্রীকরণ হয় তখন দেখা গেল উন্নত দেশগুলো অতি সতর্কীকরণ অবস্থায়
রয়েছে। যা কখনই ধ্বংস করা সম্ভব ছিল না। তখন তাদের মধ্যে এমন একটি ধারণা জন্মে যে, গোটা
পৃথিবী ধ্বংস হলেও বিজয়ী হওয়া কষ্টকর। তাই যে শক্তিসাম্য প্রতিষ্ঠিত হয় তার ফলে ধীরে ধীরে
উত্তেজনা প্রশমনে সহায়ক হয়।
৪। ষাটের দশকে তৃতীয় বিশ্বের অধিকাংশ দেশ স্বাধীন হয়ে যায়। এসব দেশ ¯œায়ুযুদ্ধের সঙ্গে জড়িত
হয়নি। তারা নিজেদের উন্নয়নের জন্যে উদগ্রীব ছিল এবং তারা জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন নামে একটি
তৃতীয় জোট গঠন করে। এ আন্দোলনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল ¯œায়ুযুদ্ধ অবসানে প্রচেষ্টা নেয়া এবং
পরাশক্তি দ্বয়কে অস্ত্রপ্রতিযোগিতা থেকে বিরত রাখা। এভাবে তৃতীয় বিশ্বের উত্থানের ফলে দ্বি-মেরুর
বিশ্ব ব্যবস্থায় প্রথম আঘাত আসে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো স্বাধীন ও স্বতন্ত্রঅবস্থান নেয়। এরা
জাতিসংঘের ভিতর ও বাইরে দুই পরাশক্তির উপর চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখে।



৫। ১৯৪৯ সালের পর শক্তিশালী দেশ হিসেবে চীনের আর্বিভাব ঘটে। ১৯৬০ এর দশকে সোভিয়েত
ইউনিয়নের সাথে তার মতবিরোধ ¯œায়ুযুদ্ধের উত্তেজনা হ্রাসে ভ‚মিকা রেখেছে। কারণ প্রথম দিকে চীন-
সোভিয়েত মৈত্রী ছিল লক্ষণীয় বিষয়। কিন্তু১৯৫০ এর দশকের শেষ দিকে এ দৃশ্যপটে ব্যাপক
পরিবর্তন দেখা দেয়া। চীন-সোভিয়েত সম্পর্কতিক্ততায় রূপ নেয়। সোভিয়েত নেতাদের তখন ধারণা
জন্মে যে, যুক্তরাষ্ট্রহয়তো চীনকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারে। এমনি কৌশলগত কারণ তারা
উত্তেজনা প্রশমনে আগ্রহী হয়ে উঠেন।
৬। সোভিয়েত ইউনিয়নের অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সমস্যা ও উত্তেজনা প্রশমনের আরো একটি
কারণ। ১৯৪০ ও ১৯৫০ এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন অর্থনৈতিক ও অন্যান্য খাতে অভ‚তপূর্বউন্নতি
করে। কিন্তু১৯৫০ এর দশকের শেষদিকে তার অবস্থা খারাপ হয়ে যায় এবং দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে
প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে। এ অবস্থায় উন্নয়ন অব্যাহত রাখা এবং প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্যে
দরকার ছিল পাশ্চাত্য থেকে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সাহায্য। কিন্তুপাশ্চাত্যের এ সাহায্য পেতে হলে
দরকার ছিল সম্পর্কস্বাভাবিকীকরণ করা। এ অবস্থায় সোভিয়েত ইউনিয়ন অনেকটা বাধ্য হয়ে যুক্ত
রাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতার পথ খোঁজে।
উত্তেজনা প্রশমনের সূচক
ষাটের দশকে উত্তেজনা হ্রাসের সুস্পষ্ট কতকগুলো লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। উত্তেজনা প্রশমনের
কতকগুলো সূচক বিশ্লেষণ করলে তা দেখা যাবে। যেমন১. অস্ত্রনিয়ন্ত্রণ ও সময়টাতে প্রাধান্য পেয়েছিল। দুই পরাশক্তি সামরিক শক্তিবৃদ্ধি ও শক্তি প্রয়োগ না
করে বরং সংযম দেখাতে শুরু করে। এতদিন তারা অস্ত্রপ্রতিযোগিতায় লিপ্ত ছিল, কিন্তুএ সময় থেকে
তা নিয়ন্ত্রণ শুরু হয়। যেমন উদাহরণ হিসেবে কৌশলগত অস্ত্রনিয়ন্ত্রণ আলোচনা (১) বা ঝঅখঞ-১ এর
কথা উল্লেখ করা যায়।
এ পর্যায়ে অর্থনৈতিক সাংস্কৃতিক ও খেলাধুলার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা চলতে থাকে। অর্থাৎ প্রতিযোগিতার
প্রথা পরিবর্তিত হয়ে যায়। এক্ষেত্রে অলিস্পিক একটি বড় উদাহরণ।
২। প্রকাশ্য সামরিক হস্তক্ষেপের পরিবর্তেদুই পরাশক্তির পরোক্ষভাবে পরস্পরকে দুর্বল করার প্রক্রিয়া
অব্যাহত রাখতো। যেমন টঝঅ পৃথিবীর বিভিন্নঅঞ্চলে কমিউনিস্ট বিরোধীদের হাত করার চেষ্টা
করতো। এবং একইভাবে পুঁজিবাদী বিশ্বেসোভিয়েত ইউনিয়ন কমিউনিস্টদের সহায়তা করতো।
অর্থাৎ কম ঝুঁকিপূর্ণও শান্তিপূর্ণপথে দ্বন্দ¡ চলতে থাকে। এটাই ছিল দাঁতাদের বড় বৈশিষ্ট্য। অবশ্য
মাঝে মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে গিয়েছিল, যেমন ১৯৭৮ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে ক্ষমতার
দখলে তারাবিকে সহযোগিতা করে বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। যুক্তরাষ্ট্রপরোক্ষভাবে
প্রতিরোধ কৌশল গ্রহণ করে। বিশেষকরে মুজাহিদদের অস্ত্রও অর্থদিয়ে সাহায্য দিয়েছে, কিন্তু
ভিয়েতনামের মতো সরাসরি সৈন্য পাঠায়নি। তাই এ সামরিক উত্তেজনা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
¯œায়ুযুদ্ধের অবসান
আশির দশকে ¯œায়ুযুদ্ধের উত্তেজনা কমতে কমতে শেষ পর্যন্তএর অবসানের লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠে।
অনেকে মনে করেন যে, ১৯৮৭ সালে দুই পরাশক্তির মধ্যে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক অস্ত্রনিয়ন্ত্রণ চুক্তি বা
চুক্তির মাধ্যমে এ প্রক্রিয়ার সূচনা হয়। মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রহ্রাসে এটি ছিল একটি অভ‚তপূর্বও
যুগান্তকারী চুক্তি। এতে মাঝারি পাল্লার মজুত ক্ষেপণাস্ত্রের একটি বড় অংশ ধবংস করতে দুই পরাশক্তি
ঐকমত্যে পৌছে। কাজেই এই প্রক্রিয়ায় ¯œায়ুযুদ্ধের অবসান ঘটে। তবে ১৯৯১ সালের ডিসেম্বর মাসে
পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মধ্য দিয়ে ¯œায়ুযুদ্ধের চূড়ান্তঅবসান ঘটে।
¯œায়ুযুদ্ধের বিশ্বপরিস্থিতি
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পূর্বেবিশ্ব ব্যবস্থা ছিল বহুমেরুর। যুদ্ধোত্তর পৃথিবীতে দ্বিমেরু ব্যবস্থা লক্ষনীয় হয়ে
উঠে। কিন্তুসোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এখন এককেন্দ্রিক ব্যবস্থায়
(টহরঢ়ড়ষধৎ ংুংঃবস) রূপ নিয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের অনুপস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ


করার মতো শক্তি আর কারো নেই। সাম্প্রতিককালের আফগানিস্তানের পরিস্থিতি ও ইরাক যুদ্ধ এই
বক্তব্যের স্বপক্ষে সবচেয়ে জোরালো প্রমাণ।
অনেকে মনে করেন যে, এই একমেরুর ব্যবস্থায় আগামী কয়েক দশক কোনো পরিবর্তন আসবে না।
আবার অনেকে মনে করেন এ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসতে বাধ্য। যদিও যুক্তরাষ্ট্রকে কেউ চ্যালেঞ্জ
করছেনা তবে এ অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী না হওয়ার সম্ভাবনাই অধিক : এর পেছনে কতকগুলো কারণ রয়েছে।
এখানে তা সংক্ষেপে আলোচনা করা হল:
এক ঃ মৈত্রী আসঞ্জনশীলতায় ভাঙ্গন ঃ
সোভিয়েত ভীতি দূরীভ‚ত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের এতদিনকার মিত্র দেশসমূহের সাথে সম্পর্কনতুন রূপ
নিয়েছে। বলা যায় মৈত্রী আসঞ্জনশীলতা (অষষরধহপব ঈড়যবংরড়হ) দুর্বল হয়ে পড়েছে। একত্রীকরণের
মাধ্যমে ইউরোপীয় রাষ্ট্রসমবায় বা ঊঁৎড়ঢ়বধহ টহরড়হ) বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী বক হিসেবে
আবির্ভূত হয়েছে। ঊঁৎড়ঢ়বধহ টহরড়হ এখন অনেক বিষয়েই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দ্বিমত পোষণ করে।
যেমন যুক্তরাষ্টের বসনিয়া নীতি ইউনিয়ন অনেক ক্ষেত্রেই সমর্থন করেনি। দ্বিতীয়ত, জাপানের নেতৃত্বে
প্রশান্তমহাসাগরীয় এলাকায় ‘ইয়েন বক' আত্মপ্রকাশ করেছে। অর্থনৈতিক ইস্যু নিয়ে জাপানের
সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধ বেড়েই চলেছে। যেমন, জাপানি গাড়ি কর্তৃক যুক্তরাষ্ট্রের বাজার দখল বিতর্ক।
অনেক দিনের পুরোনো ইস্যু এই সমস্যাটি আজো মীমাংসিত হয় নি।
দুই ঃ আঞ্চলিক শক্তির আবির্ভাব
¯œায়ুযুদ্ধের সময়েই বেশকিছু আঞ্চলিক শক্তির আবির্ভাব ঘটেছে। যেমন এশিয়ায় ভারত ও চীন,
আফ্রিকায় দক্ষিণ আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল। এরা ছোট ছোট ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করছে।
সম্প্রতি পারমাণবিক বিস্ফোরণ নিয়ে ভারত ও পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের হুশিয়ারি উপেক্ষা করেছে।
তিন ঃ মুসলিম মেীলবাদী শক্তির উত্থান
মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকায় বিকাশ লাভ করেছে মুসলিম মৌলবাদী শক্তি। এক সময়
যুক্তরাষ্ট্রএদেরকে অর্থ, অস্ত্রএবং প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। ইরান, আফগানিস্তানের তালেবান বিদ্রোহীরা
এবং সৌদি চরমপন্থী ওসামা বিন লাদেন এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রবল প্রতিপক্ষ। অথচ উভয় শক্তিই এক সময়
যুক্তরস্ট্রের ব্যাপক সমর্থন লাভ করেছি

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]