প্রাক ঔপনিবেশিক আফ্রিকার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লিখ। আফ্রিকার ইতিহাসউপাদানসমূহ

উত্তরা ভূমিকা : ১,১২,৬২,০০০ বর্গমাইল আয়তন বিশিষ্ট আফ্রিকা মহাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাদেশ এবং এ মহাদেশ প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদে পরিপূর্ণ। অথচ আফ্রিকা মহাদেশই হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে দারিদ্র্য ও অনুন্নত
মহাদেশ।
প্রাক ঔপনিবেশিক আফ্রিকার বৈশিষ্ট্য : নিম্নে প্রাক ঔপনিবেশিক আফ্রিকার বৈশিষ্টগুলো তুলে ধরা হলো: ১. দারিদ্র্য : প্রাক ঔপনিবেশিক যুগের আফ্রিকা ছিল অত্যন্ত দারিদ্র্য এবং কম আহারভোজী। জঙ্গলাঞ্চলের অধিবাসী অংধিকাংশ আফ্রিকানরা এমনকি রে যারা বাস করে তাদেরও দরিদ্রতা এত বেশি যে, পাশ্চাত্যের অধিবাসীরা প্রকৃতপক্ষে তার ধারণাও করতে পারে না। অন্যদিকে আফ্রিকার বান্টু অঞ্চলের লোকেরা সর্বাপেক্ষা কমপরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করে থাকে।
২. নিরক্ষরতা : আফ্রিকা মহাদেশ অত্যন্ত পশ্চাৎপদ ও নিরক্ষর। সমগ্র মহাদেশের শতকরা ৯০ জন অধিবাসীই সম্ভবত নিরক্ষর। আফ্রিকানরা যে পাশ্চাত্য লোকদের মতো সুযোগ-সুবিধা আদৌ পায় নি তা সহজেই অনুমেয়।
৩. অজ্ঞানতা : আধুনিক রাষ্ট্র ও সমাজ সম্পর্কে আফ্রিকানরা সচেতন নয়। অর্থাৎ পরিবার, গোষ্ঠী ও উপজাতির বাইরে অন্য প্রকার সম্পর্কের ধারণা অধিকাংশ আফ্রিকানদের নেই।
৪. ইউরোপীয়দের সম্বোধন : আফ্রিকানদের ইউরোপীয়রা নেটিভ, নিগ্রো, কৃষ্ণাঙ্গ প্রভৃতি নামে ডাকে। কিন্তু আফ্রিকানরা এগুলো পছন্দ করে না।
৫. রাজনৈতিক চেতনা : আফ্রিকার রাজনৈতিক চেতনা এককভাবে গড়ে উঠে নি। এমনকি আফ্রিকার একই জায়গায় জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার বিভিন্ন স্তর লক্ষ্য করা যায়। তবে আফ্রিকানরা বিদেশীয় শাসন মেনে নিতে পারে নি।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, প্রাক ঔপনিবেশিক যুগে আফ্রিকা মহাদেশ ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন পৃথিবী এবং এটা অন্যান্য পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। ফলে আফ্রিকা মহাদেশকে বলা হতো পৃথিবীর অন্ধকারাচ্ছন্ন দেশ।
প্রশ্না৪। আফ্রিকার ইতিহাস রচনার উপাদানগুলো কয়টি ও কী কী? অথবা, আফ্রিকার ইতিহাস রচনার উপাদানগুলো সংক্ষেপে লিখ ।
উত্তরা ভূমিকা : বিশ্বের প্রতিটি মহাদেশের রয়েছে তাদের নিজস্ব ইতিহাস ও ঐতিহ্য। এসব ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য রচিত হয় ইতিহাস এবং এ ইতিহাস রচনার মূল ভিত্তি হচ্ছে উপাদান ।
আফ্রিকার ইতিহাসউপাদানসমূহ
উপাদানসমূহ : ইতিহাস রচনার উপাদান যদি সহজেই সংগ্রহ বা হাতের কাছে পাওয়া না যায় তাহলেই ইতিহাস রচনা করা কঠিন। আফ্রিকার ইতিহাসও এর ব্যতিক্রম নয়। তারপর আফ্রিকার ইতিহাস রচনার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সংগৃহীত হয়েছে। মূলত প্রাক ঔপনিবেশিক আফ্রিকার ইতিহাসের উপাদানসমূহকে তিন স্তরে বিন্যাস করা হয়েছে। স্তর তিনটি নিম্নরূপ :
ক. মৌখিক উপাদান : প্রতিটি দেশের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে মৌখিক উপাদানের বিশেষ ভূমিকা থাকে। যদিও মুখস্থ ইতিহাসের নির্ভরযোগ্যতা ও সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকে। তথাপিও ইতিহাস রচনায় এর গুরুত্ব কম নয়। কারণ এ মুখস্থ ইতিহাস অনেক ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে যায় ।
খ. লিখিত বা বৈদেশিক বিবরণ : লিখিত উপাদান যে কোন দেশের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ” আধুনিক ইতিহাস রচনার মূল ভিত্তি হচ্ছে লিখিত উপাদান। তবে আফ্রিকার ক্ষেত্রে এর অভাব পরিলক্ষিত হয়। কারণ প্রাক ঔপনিবেশিক যুগে আফ্রিকানদের মধ্যে সচেতনতার অভাব ছিল ।
গ. প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান : প্রাক আফ্রিকার ইতিহাস রচনার জন্য সর্বশেষ সহায়ক উপাদান হচ্ছে প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান। পৃথিবীর যে কোন দেশের ইতিহাস রচনায় সেদেশের আবিষ্কৃত প্রত্নতাত্ত্বিক উৎস থেকে প্রাপ্ত উপাদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তেমনি প্রাক আফ্রিকার ইতিহাস রচনাতেও আফ্রিকায় আবিষ্কৃত প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান বিশেষ ভূমিকা
পালন করেছে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, পৃথিবীর প্রতিটি মহাদেশের ইতিহাস রচিত হয়েছে তাদের নিজস্ব উপাদান নিয়ে। তবে আফ্রিকায় বিশেষকরে প্রাক ঔপনিবেশিক আফ্রিকার ইতিহাস রচিত হয়েছে একটু ভিন্ন ধারায়। কারণ আফ্রিকানদের নিজস্ব রচিত গ্রন্থ নেই বললেই চলে । আফ্রিকার ইতিহাস রচনার মৌখিক উপাদানের ভাগগুলো উল্লেখ কর।
উত্তর ভূমিকা : প্রতিটি দেশের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে মৌখিক উপাদানের বিশেষ ভূমিকা থাকে। যদিও মুখস্থ ইতিহাসের নির্ভরযোগ্যতা ও সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকে, তথাপিও ইতিহাস রচনায় এর গুরুত্ব কম নয়।
মৌখিক উপাদানের ভাগ : প্রাক ঔপনিবেশিক আফ্রিকার ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে মৌখিক উপাদানকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো :
১. মৌখিক প্রথা : মৌখিক প্রথা একটি অবৈজ্ঞানিক ধারণা। আফ্রিকার মতো জটিল অথচ নিরক্ষর সমাজে নিতান্ত কার্যাবলির প্রয়োজনেই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিগত কালের ঐতিহ্যকে ধর্মীয়, আইন বিষয়ক, আভিজাত্য রক্ষামূলক ইত্যাদি শ্রেণিতে ইতিকথাকে ভাগ করে রেখে যেতে দেখা গেছে। সুতরাং প্রাক ঔপনিবেশিক আফ্রিকার ইতিহাস রচনার জন্য মৌখিক প্রথার গুরুত্বকে অস্বীকার করার উপায় নেই।
২. প্রথাগত ইতিহাস বিদ্যালয় : মৌখিক উপাদানের ক্ষেত্রে আরেকটি উপাদান হচ্ছে প্রথাগত ইতিহাস বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়গুলো অবস্থিত ছিল মূলত পশ্চিম আফ্রিকার বোনো মানসু এবং মধ্য আফ্রিকার রুয়াড়া অঞ্চলে। এ বিদ্যালয় গুলোতে ইতিহাস শিখানো হতো একজন ইতিহাস বিশেষজ্ঞের নেতৃত্বে, যার অধীনে থাকত নিম্নপদস্থ শিক্ষকরা।
৩. ইতিহাস কণ্ঠবিদ : ইতিহাস কণ্ঠবিদ হচ্ছে মূলত কোন রাজ্যের ইতিহাস মুখস্থকারী। আফ্রিকান অনেক রাজ্যে এ ইতিহাস কণ্ঠবিদদের দেখা যেত। তৎকালীন কেতু রাজ্যের বাবা এলেগুণকে সর্বদা ইতিহাস কণ্ঠস্থ রাখতে হতো।
৪. পেশাদার ইতিহাস বিশেষজ্ঞ : আফ্রিকা মহাদেশের কোন কোন রাজ্যে পেশাদার ইতিহাস বিশেষজ্ঞ রাখা হতো। এদের দায়িত্ব ছিল কোন রাজার সিংহাসনে আরোহণ কালে ঐ রাজ্যের পুরো ইতিহাস আবৃত্তি করা।
৫. রাজ ইতিহাস গুরুত্ব : কোন কোন আফ্রিকান রাজ্যের অন্দর মহলে নারী কিংবা পুরুষ শিক্ষক দ্বারা ইতিহাস শিখানো হতো। যেমন- বুশোঙ্গো রাজ্যে নসিইম রাজ পরিবারের অন্দর মহলে ইতিহাস শিখানো হতো শুং নামক নারী শিক্ষিকা দ্বারা ৷
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, আফ্রিকানদের নিজস্ব রচিত গ্রন্থ নেই বললেই চলে। তাই বিদেশিদের বিবরণীর উপর নির্ভর করতে হয়। তবে আফ্রিকানদের মৌখিক প্রথা ও প্রাক ঔপনিবেশিক যুগের আফ্রিকার ইতিহাস রচনায় বিশেষ ভূমিকা পালন করছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]