প্রশ্ন৷ আফ্রিকা মহাদেশ প্ৰাক ঔপনিবেশিক, ঔপনিবেশিক ও স্বাধীনতা পরবর্তী যুগের গোত্র বিভাজন উল্লেখ কর।

উত্তর ভূমিকা : পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাদেশ হচ্ছে আফ্রিকা মহাদেশ। এর রয়েছে সুবিশাল মরুভূমি, সুবিস্তীর্ণ বনভূমি, পর্বতমালা, প্রাকৃতিক সম্পদসহ সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ। কিন্তু তাদের গোত্র সংঘাত দিন দিন তাদেরকে অনুন্নয়নের পথে নিয়ে যাচ্ছে। নিম্নে বিভিন্ন যুগের গোত্র বিভাজন দেয়া হলো :
প্রাক ঔপনিবেশিক যুগের গোত্র বিভাজন : ঔপনিবেশিক শাসনের পূর্বে আফ্রিকায় ছিল গোত্র বিভাজিত সমাজকাঠামো। প্রতিটি অঞ্চলে ছিল ছোটবড় বহু গোত্র এবং এ গোত্রগুলো ক্ষমতার দ্বন্দ্বে সর্বদা সংঘর্ষে লিপ্ত থাকত। দৃষ্টান্ত স্বরূপ বলা যায় যে, নাইবেরিয়ায় ছোটবড় ২৫০টির অধিক গোত্র রয়েছে এবং কেনিয়ায় রয়েছে ১১৯টি গোত্র। এক রাষ্ট্রে এতগুলো গোত্র থাকলে সেখানে জাতি রাষ্ট্র গঠন সম্ভব হয় না। কারণ প্রতিটি গোত্রের রয়েছে আলাদা সমাজব্যবস্থা ও প্রচলিত নিয়মকানুন ।
ঔপনিবেশিক যুগের গোত্র বিভাজন : ১৮৮০ এর দশকে ইউরোপীয় শক্তিবর্গ গ্র্যাম্বলের মাধ্যমে আফ্রিকায় আগমন করে এবং সেখানে তাদের শাসনব্যবস্থা কায়েম করে। ইউরোপীয় শক্তিবর্গ একেক অঞ্চল দখল করে তাদের নিজস্ব শাসন পদ্ধতি চালু করে শুরু করে শোষণ প্রক্রিয়া। আফ্রিকানরা প্রথম পর্যায়ে ইউরোপীয়দের সাহায্য করে এবং এখানেও পরিলক্ষিত হয় গোত্র বিভাজন দ্বন্দ্ব। কারণ তারা ইউরোপীয় শক্তিবর্গকে সাহায্য করেছিল তাদের নিজেদের গোত্রীয় স্বার্থে কিছু সুযোগ সুবিধা পাওয়ার আশায় ৷
স্বাধীনতা পরবর্তী গোত্র বিভাজন : আফ্রিকানদের মধ্যে যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল তার পরবর্তী ফল জাতি রাষ্ট্র গঠনের পথ সুগম করেছিল। কিন্তু তা তারা করতে ব্যর্থ হয়। কারণ গোত্রীয় বিভাজন আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠে । সবাই চায় ক্ষমতা দখল। ফলে শুরু হয়ে যায় আবার গোত্রীয় দ্বন্দ্ব এবং জাতি রাষ্ট্র গঠনের পথে চলে আসে সবচেয়ে বড় বাধা। এ বাধার সাথে যোগ হয় ইউরোপীয় শক্তিবর্গের কূটকৌশল। কারণ ইউরোপীয় শক্তিবর্গ আফ্রিকা থেকে চলে যাওয়ার সময় আফ্রিকাকে জ্যামিতিক রাষ্ট্রীয় বিভাজনে বিভক্ত করে যায়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ইউরোপীয়রা যখন আফ্রিকা মহাদেশ দখল করে তাদের শাসন ও শোষণ অব্যাহত রাখে, তখন আফ্রিকানরা তাদের গোত্র বিভাজন ভুলে গিয়ে এক সাথে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলে ইউরোপীয় শক্তিবর্গের বিরুদ্ধে এবং ১৯৬০ এর দশকে আফ্রিকান দেশগুলো স্বাধীন হতে থাকে।

প্রশ্ন আফ্রিকার জাতি রাষ্ট্র গঠনের পথে বাধা হিসেবে সামরিক শাসনের সমস্যা উল্লেখ কর।


উত্তর ভূমিকা : নাইজেরিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন স্যার আবু বকর তাফাওয়া। ১৯৬০ সালে নাইজেরিয়া ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে এবং ব্রিটিশ শক্তি চলে যাওয়ার পর নাইজেরিয়ার শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করেন স্যার আবু বকর তাফাওয়া।

সামরিক শাসন ও সমস্যা আৰু বকর তাফাওয়া প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ার পর তিনি গোত্র বিভাজিত নাইজেরিয়ার জাতীয় সংহতি রক্ষা করে জাতি রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁর সে চেষ্টা ব্যর্থতায় পরিণত হয়। ফলে তিনি ১৯৬৫ সালে আততায়ী কর্তৃক নিহত হন।
স্যার আবু বকর তাফাওয়া বলেওয়ার মৃত্যুর পর নাইজেরিয়াতে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় এবং এ সুযোগের সহাবহার করে সেনাবহিনী নাইজেরিয়ার শাসন ক্ষমতা নিজেদের অধীনে নিয়ে যায়। ফলে নাইজেরিয়ায় শুরু হয় সামরিক শাসন। সামরিক শাসক প্রধান ছিলেন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল ইরোনজি। তিনি ছিলেন ইউরুবা গোত্রের লোক। স্বাভাবিকভাবেই তিনি ইউরুবা গোত্রের প্রতি সদাচরণ করে যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদান করেন। ফলে ইউরুবা গোত্রের লোকজন সরকারি উচ্চপদে নিযুক্ত হতে থাকে এবং সকল প্রতিষ্ঠান দখল করে নিজেরা লাভবান হতে থাকে। নাইজেরিয়ার রাজধানী লেগাসে ইকে গোত্রের লোক বেশি ছিল এবং তারা ছিল বিত্তবান কিন্তু শাসন ক্ষমতা ছিল ইউরুবাসের দখলে। ফলে জেনারেল ইরোজির সামরিক সরকার ইবোদের উপর অত্যাচার ও নির্যাতন শুরু করে। এতে ইবোনের মধ্যে অসন্তোষের জন্ম হয় এবং তারা ইরোনজির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করে। এরই প্রেক্ষাপটে ১৯৬৬ সালে আরেকটি পাল্টা সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে লেফট্যান্ট জেনারেল ইয়াকুবু গাজনের নেতৃত্বে। এতে জেনারেল ইরোনজি নিহত হন এবং সামরিক শাসক নিযুক্ত হন লেঃ জেঃ ইয়াকুব গান। তিনিও একই রীতি অনুসরণ করেন। কারণ তিনিও ছিলেন ইউরুবা গোত্রের লোক। তিনি তাঁর পূর্ববর্তী সরকারের ন্যায় ইবোদের উপর অত্যাচার ও নির্যাতন শুরু করেন।
উপসংহার : উপযুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে জাতি রাষ্ট্র গঠনে প্রধান প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে গোত্র। কারণ গোত্রীয় সংঘাতের কারণেই আফ্রিকার জাতীয় সংহতি অর্জন সম্ভব হচ্ছে না। আর জাতীয় সংহতি অর্জন সম্ভব না হলে জাতি রাষ্ট্র গঠনও সম্ভব নয়।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]