প্রশ্নঃ আফ্রিকার জাতি রাষ্ট্র গঠনের বাধা হিসেবে গৃহযুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক কূটনীতি উল্লেখ কর। আফ্রিকার জাতি রাষ্ট্র গঠনের পথে বাধা হিসেবে কাতাঙ্গা সমস্যাটি উল্লেখ কর।

উত্তর ভূমিকা : নাইজেরিয়ার বগ গোত্র দুটি হচ্ছে ইবো ও ইউরুবা; যাদের মধ্যে প্রায়ই ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ঘটে এ দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে উৎপত্তি হয়েছে বায়াফ্রা সমস্যা। নাইজেরিয়ার শাসন ক্ষমতা দখল নিয়ে প্রায়ই এ দুই গোত্রের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে এবং এ থেকেই শুরু হয়ে যায় গৃহযুদ্ধ ।
গৃহযুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক কূটনীতি : ইবোদের প্রধান অঞ্চল ছিল বায়াফ্রা এবং এখানে শুধু ইবোরাই বসবাস করতো। এখানকার সামরিক প্রশাসক ছিলেন মেজর জেনারেল ওজুকু। তিনি ছিলেন ইবো গোত্রের লোক। ইবোরা লেঃ জেঃ ইয়াকুবু গাত্তনের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে রাজধানী লেগাস ছেড়ে নিজ প্রদেশ বায়াফ্রা অঞ্চলে চলে আসে। এ প্রেক্ষাপটে ইবো গোত্রের মেজর জেনারেল ওজুকু'র রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের স্বপ্ন জেগে ওঠে। তিনি তাঁর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে বিদ্রোহের আশ্রয় নেয়। অর্থাৎ তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করেন এবং ইবো গোত্রের জনসমর্থন নিয়ে বায়াফ্রা নামক আলাদা রাষ্ট্র গঠনের ঘোষণা দেন। তিনি নাইজেরিয়া থেকে বায়াফ্রাকে বিচ্ছিন্ন করেন। ফলে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। মেজর জেনারেল ওজুকু ১৯৬৭ সালের ৩১ মে 'Independence Republic of Biafra' গঠন করেন ।
মেজর জেনারেল ওজুকু কর্তৃক বায়াষ্ট্রার স্বাধীনতা ঘোষণা করার পর নাইজেরিয়ার কেন্দ্রীয় সরকার বায়াফ্রা আক্রমণ করে। ফলে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। নাইজেরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এর ব্যাপক মিশ্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। তাঞ্জানিয়া, জাম্বিয়া, আইভরি কোস্ট, স্যাবন প্রভৃতি আফ্রিকান রাষ্ট্র বায়াফ্রার পক্ষে অবস্থান নিয়ে বায়ফ্রোর স্বাধীনতা যুদ্ধকে সমর্থন করে। এদিকে ইউরোপীয় শক্তি ফ্রান্স বায়াফ্রার স্বাধীনতার স্বীকৃতি দান করলে শুরু হয় পশ্চিমা বিশ্বের কূটনৈতিক সংঘাত । এ সংঘাতে সামিল হয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন নাইজেরিয়াকে সমর্থন করে এবং একই সাথে আফ্রিকার অন্যতম বৃহত্তম শক্তি মিশরও নাইজেরিয়াকে সমর্থন করে। উল্লেখ্য যে, এসব ইউরোপীয় শক্তির প্রধান উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ার তেল সম্পদ হস্তগত করা।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ১৯৭০ সালে মেজর জেনারেল ওজুকু আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। ফলে নাইজেরিয়ার গৃহযুদ্ধ শেষ হয়। কিন্তু বায়াফ্রা সমস্যার কোন সঠিক সমাধান হয় নি। ফলে আজও নাইজেরিয়ায় জাতি রাষ্ট্র গঠনে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

আফ্রিকার জাতি রাষ্ট্র গঠনের পথে বাধা হিসেবে কাতাঙ্গা সমস্যাটি উল্লেখ কর।


:
উত্তর ভূমিকা : কাতাঙ্গা হচ্ছে কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি প্রদেশ। কঙ্গো ছিল ইউরোপীয় শক্তি বেলজিয়ামের উপনিবেশ এবং দীর্ঘকাল এখানে বেলিজিয়ামের প্রত্যক্ষ শাসন চলার কারণে এখানে কোন রাজনৈতিক
প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে নি।
কাতাঙ্গা সমস্যা : কাতাঙ্গা প্রদেশের লুন্ডা গোত্রের প্রধান মইসি তমুম্বে বিদ্রোহ ঘোষণার মাধ্যমে কাতাঙ্গা স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং কঙ্গো থেকে কাতাঙ্গাকে বিচ্ছন্ন করে ফেলেন। কাতাঙ্গায বেলজিয়ামের তেল সম্পর্কিত স্বার্থ থাকায় বেলজিয়াম কাতাঙ্গার স্বাধীনতার স্বীকৃতি প্রদান করে। এতে কঙ্গোর সরকার বেকায়দায় পড়ে যায়। তারা জাতিসংঘের কাছে সেনা বিদ্রোহ দমনের জন্য সাহায্য প্রার্থনা করলে জাতিসংঘ ৩০০০ সৈন্য বাহিনীর একটি দল কঙ্গোতে পাঠায়
অন্যদিকে, লুম্বা সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছেও সাহায্য প্রার্থনা করেন। এতে পুঁজিবাদী দেশ অসন্তোষ প্রকাশ করে। কারণ একই সাথে পুঁজিবাদী ও সমাজতন্ত্রী দেশের সাহায্য কামনা সঠিক পন্থা নয়। এ প্রেক্ষাপটে কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট কাসাডুবু ক্ষিপ্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী লুমুম্বাকে পদচ্যুত করেন এবং লুমুম্বা ১৯৬১ সালে কাতাঙ্গার সেনাবাহিনীর হাতে ধৃত হয়ে প্রাণ হারান ।
লুমুম্বার হত্যাকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা বিশ্বে কূটনৈতিক সংঘাত শুরু হয়। কারণ এ হত্যাকাণ্ডের জন্য সমাজতন্ত্রী দল পুঁজিবাদ বিশ্বকে দায়ী করে। ফলে বিশ্বে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয়। এ অসন্তোষ দমনের জন্য জাতিসংঘের মহাসচিব দা হামার শেল্ড কাতাঙ্গায় যাওয়ার পথে বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান। তবে পরবর্তী মহাসচিব উথান্ট এসে পরিস্থিতি সামাল দেন। তিনি কাতাঙ্গায় ২০,০০০ শান্তিরক্ষী বাহিনী নিযুক্ত করেন। এ পরিস্থিতিতে মইসি তসুম্বে ইউরোপে পালিয়ে যান। ফলে শান্তিরক্ষী বাহিনী ১৯৬৩ সালে চলে যায়। কিন্তু পুনরায় গোত্রীয় সংঘাত শুরু হয় এবং বর্তমান পর্যন্ত তা চলছে। যা কঙ্গোর জাতি রাষ্ট্র গঠনে বাধা প্রদান করছে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত পালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে জাতি রাষ্ট্র গঠনে প্রধান প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে গোত্র। কারণ গোত্রীয় সংঘাতের কারণেই আফ্রিকার জাতীয় সংহতি অর্জন সম্ভব হচ্ছে না। আর জাতীয় অর্জন সম্ভব না হলে জাতি রাষ্ট্র গঠনও সম্ভব নয়।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]