আফ্রিকাকে কেন অন্ধকার মহাদেশ বলা হয়? প্রাক ঔপনিবেশিক আফ্রিকার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লিখ ।

উত্তরা ভূমিকা : পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাদেশ হলো আফ্রিকা মহাদেশ। এক সময় এ মহাদেশ সম্পর্কে মানুষের তেমন কোন ধারণা ছিল না। কেউ জানতো না আফ্রিকা সম্পর্কে। তখন সভ্যতার আলো সেখানে পৌঁছায় নি। মোটকথা, তখনকার যুগে আফ্রিকা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। কিন্তু আজ আর সেই অবস্থা নেই। এখন সবাই আফ্রিকাকে চেনে এবং জানে। এ কারণে ভৌগোলিকভাবে আফ্রিকা আজ সবার কাছে পরিচিত।

প্রাক ঔপনিবেশিক আফ্রিকার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লিখ ।


অথবা, প্রাক ঔপনিবেশিক আফ্রিকার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উপাদান তুলে ধর ।
উত্তরা ভূমিকা : ১,১২,৬২,০০০ বর্গমাইল আয়তনবিশিষ্ট আফ্রিকা মহাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাদেশ এবং এ মহাদেশ প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদে পরিপূর্ণ। অথচ আফ্রিকা মহাদেশই হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে দারিদ্র্য ও অনুন্নত মহাদেশ। তাইতো এক সময় বলা হতো পৃথিবীর 'অন্ধকারাচ্ছন্ন' দেশ হচ্ছে আফ্রিকা । এটা অবশ্য ঔপনিবেশিক শাসনের পূর্বে। বলা হতো। অর্থাৎ প্রাক ঔপনিবেশিক যুগে আফ্রিকা ছিল পৃথিবীর পশ্চাৎপদ, দারিদ্র্য, অনুন্নত- সর্বোপরি অন্ধকারাচ্ছন্ন
মহাদেশ।
প্রাক ঔপনিবেশিক আফ্রিকার বৈশিষ্ট্য : প্রাক ঔপনিবেশিক যুগে আফ্রিকার ক্ষেত্রে যেসব বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়, তা নিম্নে দেয়া হলো :
১. প্রাক ঔপনিবেশিক যুগের আফ্রিকা ছিল অত্যন্ত দারিদ্র্য এবং কম আহার ভোজী। জঙ্গলাঞ্চলের অধিবাসী অধিকাংশ আফ্রিকানরা এমনকি শহরে যারা বাস করে তাদেরও দরিদ্রতা এত বেশি যে, পাশ্চাত্যের অধিবাসীরা প্রকৃতপক্ষে তার ধারণাও করতে পারে না। অন্যদিকে, আফ্রিকার বান্টু অঞ্চলের লোকেরা সর্বাপেক্ষা কম পরিমাণ
খাদ্য গ্রহণ করে থাকে।
২. আফ্রিকা মহাদেশ অত্যন্ত পশ্চাৎপদ ও নিরক্ষর। সমগ্র মহাদেশের শতকরা ৯০ জন অধিবাসীই সম্ভবত
নিরক্ষর। আফ্রিকানরা যে পাশ্চাত্য লোকদের মত সুযোগ সুবিধা আদৌ পায় নি তা সহজেই অনুমেয়।
৩. আফ্রিকার রাজনৈতিক চেতনা এককভাবে গড়ে উঠে নি। এমনকি আফ্রিকার একই জায়গায় জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার বিভিন্ন স্তর লক্ষ করা যায়। তবে আফ্রিকানরা বিদেশীয় শাসন মেনে নিতে পারে নি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একটি ব্রিটিশ গভর্নরের কথোপকথন। ব্রিটিশ গভর্নরের বক্তব্যে জানা যায় যে, নাইজেরিয়ার তুলনায় উক্ত গভর্নরের শাসনাধীনে লোকেরা পঁয়ত্রিশ বছর পিছিয়ে রয়েছে। এ তথ্য পরিবেশন করার সাথে সাথেই গভর্নর মন্তব্য করেন, “কিন্তু তাই বলে এরূপ মনে করা চলবে না যে, আমরা তথা ব্রিটিশ জাতি আরও পঁয়ত্রিশ বছরকাল এখানে থাকতে পারব।” এ বক্তব্যে বুঝা যায় যে, আফ্রিকানরা ব্রিটিশ আধিপত্য সহজে মেনে নেয় নি।
৪. আধুনিক রাষ্ট্র ও সমাজ সম্পর্কে আফ্রিকানরা সচেতন নয়। অর্থাৎ পরিবার, গোষ্ঠী ও উপজাতির বাইরে অন্য
প্রকার সম্পর্কের ধারণা অধিকাংশ আফ্রিকানদের নেই ।
৫. ঔপনিবেশিক আগমনের প্রেক্ষাপটে আফ্রিকানদের মধ্যে পরিবর্তন আসে। তা হচ্ছে আফ্রিকানরা তাদের উপজাতীয় আবাস ত্যাগ করে শহর বা গ্রামে এসে বসতি স্থাপন করেছে এবং নতুন জীবন পথেরই তারা সন্ধান পেয়েছে। বিপুল সংখ্যক লোকের এভাবে বাস্তুত্যাগের ফলে যে সামাজিক জটিলতা ও নানাবিধ সমস্যা দেখা দিয়েছে তা প্রকৃতই ভয়াবহ। যেখানে উপজাতীয় জীবন ভেঙে দিয়ে আফ্রিকানরা শ্বেতাঙ্গদের শহুরে সমাজে প্রবিষ্ট হয়ে পড়েছে, সেখানেই তাদের মর্যাদা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এক সময় শ্বেতাঙ্গরা কৃষ্ণাঙ্গদের এলাকা নিজেদের দখলে নিয়েছিল। আবার কৃষ্ণাঙ্গরাই শ্বেতাঙ্গদের আফ্রিকায় অভিযান করেছে। ফলে সূত্রপাত ঘটে কৃষ্ণাঙ্গ
শ্বেতাঙ্গ সমস্যা।
৬. আফ্রিকানদের আচরণগত বৈশিষ্ট্য বৈচিত্র্যপূর্ণ। সকল সময়ে তাদের মেজাজ বুঝা বা তাদের সাথে মেলামেশা করা খুব সহজ নয়। কোন ইউরোপিয়ান বা আমেরিকান যদি তাদের প্রতি বেশি বন্ধুত্বের ভাব প্রদর্শন করে তাহলে তারা স্বভাবত সান্নিধ্য হয়ে উঠে। কোন আফ্রিকানদের পক্ষে ও শ্বেতাঙ্গদের সাথে প্রকৃতিতে নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতার বিকাশ দেখা যায়। নিজেদের সম্বন্ধে তাদের মধ্যে যে হীনম্মন্যতা ও নিরাপত্তাহীনতার ভাব বিরাজ করছে, তারই প্রতিক্রিয়াস্বরূপ তারা অনেক সময় আক্রমণাত্মক আচরণের পরিচয় দিয়ে থাকে। কোন আফ্রিকান নিগ্রো যদি পাশ্চাত্য জীবন পদ্ধতি অবলম্বন করতে এগিয়ে আসে; তাহলে প্রথমেই তাকে নিজেদের সমাজের ভিতরে অনেক অপ্রতিরোধ্য বাধা ও ব্যবধান অতিক্রম করতে হবে।
৭. আফ্রিকানরা ইউরোপীয়দের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ খুব কমই পায়। কারণ আফ্রিকায় বসবাসরত অধিকাংশ ইউরোপীয়ই বাড়ির চাকর বাকর ও অধীনস্থ কর্মচারী ব্যতীত অপর কোন আফ্রিকানের সাথে আসার সুযোগ কম পায়। তাদের মধ্যে অনেকে কোন শিক্ষিত ও উন্নত আফ্রিকানদের সাথে সাক্ষাতের সুযোগও হয়তো কোনদিন পায় নি। এজন্যই সমষ্টিগতভাবে সকল আফ্রিকানদের প্রতি ইউরোপীয়দের মনে এমন একটা হীনতাব্যঞ্জক ভাব গড়ে উঠেছে যে, তাদের মানুষ বলে মেনে নিতেও ইউরোপীয়রা প্রস্তুত নয়।
৮. ইউরোপীয়দের মতে, আফ্রিকা স্বাধীনতা অর্জন করেও তা ধরে রাখতে পারবে না। অর্থাৎ স্বাধীন হলে আফ্রিকানরা লব্ধ স্বাধীনতার অপব্যবহার করবে। অপরদিকে, তারা মন্তব্য করে যে, আফ্রিকানদের হাতে ক্ষমতা গেলে তারা স্বজাতীয়দের এমনভাবে শোষণ করবে যে সে শোষণ শ্বেতাঙ্গদের শোষণের চেয়েও কঠোরতর হবে এবং স্বাধীনতা প্রাপ্ত নতুন আফ্রিকা আদৌ গণতান্ত্রিক দেশ হবে না। অর্থাৎ ইউরোপীয়দের মতে, আফ্রিকানরা রাজনীতির ক্ষেত্রে উপযুক্ত নয় ।
৯. আফ্রিকানদের ইউরোপীয়রা নেটিভ, নিগ্রো, কৃষ্ণাঙ্গ প্রভৃতি নামে ডাকে। কিন্তু আফ্রিকানরা এগুলো পছন্দ করে
না। তারা নিজেদেরকে আফ্রিকান হিসেবেই অভিহিত করে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, আফ্রিকা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাদেশ এবং আফ্রিকা মহাদেশের কতিপয় বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এ বৈশিষ্ট্যগুলো আফ্রিকাকে পৃথিবীর অন্যান্য মহাদেশ হতে আলাদা ও স্বতন্ত্র করে রেখেছে। প্রাক ঔপনিবেশিক যুগে আফ্রিকা মহাদেশ ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন পৃথিবী এবং এটা অন্যান্য পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। ফলে আফ্রিকা মহাদেশকে বলা হতো পৃথিবীর অন্ধকারাচ্ছন্ন দেশ। তখনকার আফ্রিকা ছিল নিরক্ষর, পশ্চাৎপদ, কুসংস্কারাচ্ছন্ন, অজ্ঞ, গোত্র বিভাজিত, আদিম প্রভৃতির বৈশিষ্ট্যের সংমিশ্রণে। তবে বর্তমানে আর সে অবস্থা নেই। এখন আফ্রিকা সভ্যতার আলোর সন্ধান পেয়েছে, যে সন্ধান এসেছে ইউরোপীয়দের হাত ধরে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]