ইতিহাস কী? আফ্রিকার ইতিহাসের বৈশিষ্ট্যগুলো লিখ ৷

অথবা, ইতিহাসের সংজ্ঞা দাও। আফ্রিকান ইতিহাস রচনায় এই বৈশিষ্ট্যগুলো কতটুকু কার্যকর হয়েছে বলে তুমি মনে কর?
উত্তরা ভূমিকা : স্মরণাতীত কাল থেকে মানুষের চিন্তাভাবনা ও কর্মকাণ্ডকে নিয়ে ইতিহাসের কারবার। কোন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মানুষ অতীত থেকে বর্তমানে উপনীত হয়েছে সেটাই হলো ইতিহাসের প্রধান জিজ্ঞাসা। ইতিহাসের মধ্য দিয়ে পৃথিবী ও মানব সম্পর্কে অধিকতর জ্ঞান অর্জন করা যায়। এ পথ আমাদের ভবিষ্যতের পথকে সুগম করে দেয়।
ইতিহাস : ইতিহাস শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ 'History'। এ ‘History' শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘Histori' বা ‘Historic’ থেকে উৎপত্তি, যার অর্থ সত্য উদ্ঘাটনের জন্য গবেষণা বা অনুসন্ধান। তবে ইতিহাসের প্রকৃতি, বিষয়বস্তু, পদ্ধতি ও উপযোগিতার ভিত্তিতে সর্বজনস্বীকৃত কোন সংজ্ঞা পাওয়া কঠিন।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিভিন্নভাবে ‘ইতিহাস' প্রত্যয়টি সংজ্ঞায়িত করেছেন। নিম্নে তাঁদের প্রদত্ত কয়েকটি সংজ্ঞা উপস্থাপন করা হলো :
আর. সি. মজুমদার বলেছেন, “ইতিহাস মানবসমাজের অতীত কার্যাবলির বিবরণ।”
অক্সফোর্ড ইংরেজি ভাষার অভিধান অনুসারে, “ইতিহাস মানব জ্ঞানের ঐ শাখা, যা অতীত ঘটনাবলির বর্ণনা করে । ঐসব ঘটনাবলি লিখিত হয়ে থাকে বা অন্য কোনভাবে সত্য হিসেবে স্বীকৃত হয়। এটা অতীতের আনুষ্ঠানিক রেকর্ড, যা মানুষের কাজ ও বিষয়াবলির সাথে সম্পর্কযুক্ত এবং কিভাবে বিভিন্ন দেশ ও জাতি গঠিত ও বিকশিত হয়েছে এরই বিবরণ।”
উপর্যুক্ত সংজ্ঞা থেকে সামগ্রিকভাবে কিছু পাওয়া না গেলেও ইতিহাস সম্পর্কে কিছু তথ্য পাওয়া যায়। তাই আমরা বলতে পারি যে, ইতিহাস বিজ্ঞান বা অজানার উপর প্রশ্ন তুলে উত্তর খোঁজার প্রয়াস। এর বিষয়বস্তু মানুষের অতীত কর্মকাণ্ড। পদ্ধতিগত দিক থেকে এটা প্রামাণিক তথ্যের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মাধ্যমে অগ্রসর হয় এবং বিষয়টি মানুষের কর্মকাণ্ডের ধারা অনুধাবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আফ্রিকান ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য : প্রতিটি মহাদেশের ইতিহাসের যেমন কতিপয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তেমনি
আফ্রিকার ইতিহাসেরও রয়েছে। নিম্নে তা দেয়া হলো :
১. গবেষণা : ইতিহাস শব্দের অর্থ হচ্ছে গবেষণা বা সযত্ন অনুসন্ধান। তাই এখানে বিজ্ঞানের অভাব পাওয়া যায়। কারণ বিজ্ঞানও অজানাকে খুঁজে বের করে। সে অর্থে আফ্রিকার ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিকভাবে অনুসন্ধান করে তথ্য
সংগ্রহ করা হয়েছে যা আফ্রিকান ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য।
২. মৌখিক ইতিহাস : আফ্রিকান ইতিহাসের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মৌখিক প্রথা বা মুখস্থ ইতিহাস। ইতিহাস সাধারণত মৌখিক প্রথাকে স্থান দেয় না। কিন্তু আফ্রিকার ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম দেখা দিয়েছে। কারণ পর্যাপ্ত লিখিত উপাদানের অভাবে আফ্রিকান ইতিহাসে মৌখিক প্রথাকে স্থান দিয়েছে।
৩. দলিল দস্তাবেজ বা তথ্য : ইতিহাস হচ্ছে তথ্য বা দলিল দস্তাবেজের সাক্ষ্য প্রমাণের সারসংক্ষেপ। কারণ সাক্ষা বা গ্রামাণিক তথ্যের উপর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মাধ্যমে ইতিহাসের গতি প্রকৃতি নির্ণীত হয় এবং ইতিহাস রচিত হয়। আফ্রিকার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটে নি। আফ্রিকার ইতিহাস রচনার জন্য প্রচুর তথ্য বা দলিল দস্তাবেজ রয়েছে। তবে এসব দলিল দস্তাবেজ মহাদেশটির আনাচেকানাচে ছড়িয়ে রয়েছে এবং এগুলো সংগ্রহ করে ঐতিহাসিকগণ তা থেকে অতীত ঘটনাবলির উপর উত্থাপিত প্রশ্নাবলির উত্তর খুঁজে বের করে আফ্রিকার ইতিহাস রচনা করেছেন।
৪. আত্মোপলব্ধির চাবিকাঠি : ইতিহাস মানুষের আত্মোপলব্ধির চাবিকাঠি। কারণ ইতিহাসের মাধ্যমে মানুষ তার স্বীয় অতীত সম্পর্কে জানতে পারে এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে পারে। আফ্রিকার ইতিহাসেও এ বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। আফ্রিকার ইতিহাস পড়ে আফ্রিকানদের অতীত ঘটনার যাবতীয় তথ্য জানতে পারে এবং এ তথ্য নিয়ে ভবিষ্যৎ আফ্রিকা গড়ার চাবিকাঠি পায়। আফ্রিকার মানব সম্পর্ক কাজগুলোর সাথে সম্পর্ক হতে হলে মানুষের অতীত ঘটনাবলির সাথে পরিচিত হতে হবে এবং তা একমাত্র আফ্রিকান ইতিহাস পাঠে সম্ভবপর।
৫. চিন্তার ইতিহাস : ইতিহাস হচ্ছে চিন্তার ইতিহাস। কারণ ঐতিহাসিকগণ অতীতে যে ঘটনা নিয়ে তদন্ত করে তা মৃত নয় তা জীবন্ত । আফ্রিকার ইতিহাসও চিন্তার ইতিহাস এবং তা আমাদের সামনে জীবৃন্ত। চিন্তার ইতিহাস সম্পর্কে R C. Collingwood বলেছেন যে, ইতিহাস শব্দটির প্রচলিত দুটি অর্থ ঐতিহাসিক যে তদন্ত করেন এবং অতীতের বিভিন্ন ঘটনার সারি নিয়ে তদন্ত করেন। ঐতিহাসিক যে অতীত চর্চা করেন তা মৃত নয়। ঐ অতীত তখনও আমাদের মধ্যে বেঁচে আছে। অর্থাৎ ঐতিহাসিকের কাছে তা অর্থহীন মতবাদ নয়। তিনি এর পিছনে যে চিন্তা কাজ করছে তাকে বুঝতে পারেন। অতএব সব ইতিহাসই চিন্তার ইতিহাস। এক্ষেত্রে আফ্রিকান ইতিহাসও চিন্তার ইতিহাস ।
৬. উৎসভিত্তিক : ইতিহাস উৎসভিত্তিক। কোন অপ্রামাণিক বিষয় নিয়ে ইতিহাস রচিত হয় না। তেমনি আফ্রিকার ইতিহাসও উৎসভিত্তিক, এখানে কোন অপ্রামাণিক বিষয়ের স্থান নেই ।
৭. কুসংস্কারের স্থান নেই : ইতিহাসে কোন অযৌক্তিকতা বা কুসংস্কারের স্থান নেই। আফ্রিকার ইতিহাসে মৌখিক প্রথাকে স্থান দিলেও এখানে কোন কুসংস্কারের স্থান নেই। এটি সম্পূর্ণ মানুষ সংক্রান্ত বিষয়। ইতিহাস মানুষের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বর্ণনা ।
৮. বৃহত্তর মানবগোষ্ঠীর বিবরণ : আফ্রিকার ইতিহাসের একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে রাজা-মহারাজার জীবনবৃত্তান্ত, শাসনামল, যুদ্ধবিগ্রহ, রাজার ব্যক্তিগত দোষগুণ পরিশেষে প্রশান্তি ও নিন্দা। আফ্রিকার ইতিহাস বিদ্যার ভিন্ন একটি ধারা আছে, যাতে শাসক ও শাসনের ভালোমন্দের বিবৃতির পাশাপাশি বৃহত্তর মানবগোষ্ঠীর অবস্থা, সমাজ প্রগতিতে মানুষের ভূমিকা এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে ঘটনাবলির ইতিহাস অতীত সমাজকে বুঝতে বর্তমানের মানুষকে
সাহায্য করে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ইতিহাস হচ্ছে মানবসভ্যতার অতীত কার্যাবলির বিবরণ । এই ইতিহাসের কতিপয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ইতিহাসকে অন্যান্য শাখা থেকে পৃথক করে রেখেছে। পৃথিবীর প্রতিটি মহাদেশে যেমন ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য রয়েছে তেমনি আফ্রিকার ইতিহাসেও উপর্যুক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো বিদ্যমান এবং এই বৈশিষ্ট্যগুলো অন্যান্য মহাদেশ থেকে আফ্রিকাকে পৃথক করে রেখেছে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]