প্রাক-ঔপনিবেশিক আফ্রিকার রাজনৈতিক সংহতি অর্জনের পথে প্রধান বাধা কী ছিল বলে তুমি মনে কর?

উত্তরা ভূমিকা : জাতীয় সংহতি আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়ার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ভূমিকা পালন করে থাকে। আফ্রিকান দেশগুলো আজকাল যেসব সমস্যায় জর্জরিত এর মধ্যে সংহতি অর্জনের সমস্যাই প্রধান। নব্য স্বাধীন দেশগুলো ঔপনিবেশিক শাসনামলে নিজেদের মুক্তির প্রয়াসে অভিন্ন জাতীয়তাবোধে বিশ্বাসী হয়ে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিল। কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের অব্যবহিতকাল পরেই এসব দেশের জনগণের মধ্যে জাতীয় সংহতিবোধের অবনতি ঘটতে শুরু করেছিল এবং বর্তমানে জাতীয় সংহতি সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে ।
আফ্রিকার রাজনৈতিক সংহতি : জাতীয় সংহতি বলতে বুঝায় ঐক্যবদ্ধভাবে অবস্থান করা এবং জাতীয় রাষ্ট্র গঠন করা। কিন্তু আফ্রিকার ক্ষেত্রে এ সংজ্ঞা প্রযোজ্য নয়। কারণ আফ্রিকার জাতীয় সংহতি গড়ে উঠেনি আজও। এর পশ্চাতে অবশ্য দায়ী ছিল আফ্রিকার গোত্রভিত্তিক সমাজব্যবস্থা। সেই সুপ্রাচীনকাল থেকে আফ্রিকায় চলে আসছিল গোত্রতন্ত্র । গোত্রের বাইরে গিয়ে কেউ রাষ্ট্র গঠনের কথা ভাবতেও পারত না। কারণ আফ্রিকা ছিল তখনও অন্ধকার যুগে। যখন ইউরোপীয়রা আফ্রিকায় প্রবেশ করে তখন আফ্রিকানদের জাতীয় সংহতির অভাবে তারা উপনিবেশ স্থাপন করতে পেরেছিল ।
আফ্রিকার রাজনৈতিক সংহতি অর্জনের পথে বাধা : প্রাক-ঔপনিবেশিক আফ্রিকার রাজনৈতিক সংহতি অর্জনের পথে নানাবিধ বাধাবিপত্তি ছিল। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. দুর্বল জাতীয়তাবাদ : জাতীয় সংহতি রক্ষার অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে জাতীয়তাবাদ। আফ্রিকান দেশগুলোতে সবশেষে ইউরোপীয়রা প্রবেশ করেছিল এবং বিশ্ব প্রেক্ষাপটে খুব কম সময়ই শাসন করতে পেরেছিল। এর পূর্বে আফ্রিকাতে জাতীয়তাবাদ গড়ে উঠে নি। এ কারণে রাজনৈতিক সংহতি অর্জনও সম্ভব হয় নি ।
২. রাষ্ট্রের অনুপস্থিতি : আফ্রিকাতে গোত্র ব্যবস্থা অত্যন্ত মজবুত ছিল। যে কারণে এখানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যের উপস্থিতি দেখা যায়। একক কোন রাষ্ট্রের উদ্ভব এখানে ঘটে নি। ফলে রাজনৈতিক সংহতি অর্জন করাও সম্ভব হয় নি 1
৩. সমুদ্রবন্দরবিহীন আফ্রিকা : পৃথিবীর যে কোন দেশের রাজনৈতিক সংহতি রক্ষা করতে হলে আগে দরকার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। আর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পূর্বশর্ত হচ্ছে বৈদেশিক বাণিজ্য। বৈদেশিক বাণিজ্য নির্ভরশীল সমুদ্রবন্দরের উপর। কিন্তু আফ্রিকাতে কোন সমুদ্রবন্দর নেই। ফলে জাতীয় সংহতি বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল ।
৪. ধর্ম-বর্ণ ও বংশ সমস্যা : আফ্রিকাতে জাতীয় সংহতি অর্জনের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল জাতিগত ঐক্যের অভাব। বর্ণগত, বংশগত, ধর্মীয় ও আঞ্চলিক মতপার্থক্য ঔপনিবেশিক আমলের রাজনীতিতে তেমন গুরুত্ব না পেলেও পূর্বে তা পেত। এ কারণে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা দেখা দেয় ৷
৫. গোত্রবিভাজিত সমাজ কাঠামো : সুপ্রাচীনকাল থেকে আফ্রিকায় গোত্রবিভাজিত সমাজব্যবস্থা চলে আসছিল। গোত্রের মধ্যকার হাজার সমস্যার কারণে, আফ্রিকানরা কখনো এক হতে পারে নি। তাদের কাছে রাষ্ট্রের কোন আদর্শ না থাকায় গোত্রীয় আদর্শই প্রধান ছিল এবং এ কারণে রাজনৈতিক সংহতি অর্জন সম্ভব হয় নি।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আফ্রিকার রাজনৈতিক সংহতি অর্জনের পথে নানাবিধ বাধাবিপত্তি ছিল । এগুলো কাটিয়ে উঠা আফ্রিকার মানুষের জন্য অনেক কঠিন হয়ে পড়েছিল। পুরানো ধ্যানধারণা থেকে তারা কোনভাবে বের হতে পারছিল না। তাদের মধ্যে যোগ্য নেতৃত্বেরও সংকট ছিল। মূলত সভ্যতার আলো না আসা পর্যন্ত আফ্রিকার মানুষ অন্ধকারেই ছিল সবদিক থেকে।
প্রশ্ন ২৮ আফ্রিকা মহাদেশ বনজসম্পদে কতটা পরিপূর্ণ ছিল?
অথবা, আফ্রিকা মহাদেশের বনজসম্পদ সম্পর্কে লিখ।
উত্তরা ভূমিকা : পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাদেশের খ্যাতি আফ্রিকা অর্জন করেছে। কিন্তু এটি খুব সহজে হয় নি। কারণ একসময় আফ্রিকাকে কেউ চিনত না বা জানত না। পৃথিবী থেকে একরকম বিচ্ছিন্ন ছিল আফ্রিকা। কিন্তু আজ আর সে অবস্থা নেই । আফ্রিকা সম্পর্কে মানুষ এখন ভালো জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছে।
আফ্রিকার বনজসম্পদ : পৃথিবীর প্রতিটা দেশে রয়েছে বনজসম্পদ। নিম্নে আফ্রিকার বনজসম্পদ সম্পর্কে
আলোচনা করা হলো :
আফ্রিকা মহাদেশে রয়েছে পৃথিবীর বৃহত্তম বনভূমি। এখানে বনজঙ্গলে এত পরিপূর্ণ যে, অনেক অঞ্চলে সূর্যের আলো পর্যন্ত দেখা যায় না। ফলে আফ্রিকার অনেক অঞ্চলে প্রবেশ কষ্টসাধ্য। আফ্রিকার বিশাল বনভূতিমে রয়েছে নানা ধরনের গাছপালা। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মেহগনি, টিক, গাম, আবলুস, কর্পূর, রোজউড, কোকো, রাবার প্রভৃতি বৃক্ষ। আফ্রিকার বনভূমিতেও আবার পার্থক্য রয়েছে। কোথাও ছিল তৃণভূমি অঞ্চল আবার কোথাও ছিল মরু অঞ্চল। কেনিয়া, সুদান, তাঞ্জানিয়া ও জিম্বাবুয়েতে রয়েছে বিশাল তৃণভূমি অঞ্চল। এ অঞ্চলের গাছপালার প্রকৃতি আলাদা। মরু অঞ্চলে জন্মাত খেজুর গাছ। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে কর্ক, সিজার ও পাইন বৃক্ষ পাওয়া যায়। দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইথিওপিয়ার উচ্চ ভূমিতে নাতিশীতোষ্ণ বনভূমি দেখা যায়। এখানকার অঞ্চলে বিভিন্ন প্রকারের পত্রপতনশীল বৃক্ষও জন্মায়। আফ্রিকাতে স্বল্প বৃক্ষযুক্ত বিশাল সাভানা অঞ্চলও রয়েছে। আফ্রিকাতে নানা নাম না জানা বৃক্ষও রয়েছে। এখানকার বৃক্ষরাজি আফ্রিকাকে ঢেকে রেখেছে। ইউরোপীয়গণ আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপন করলেও এর অনেক অঞ্চলে আজও প্রবেশ করতে পারে নি।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আফ্রিকা মহাদেশ সম্পদের এক অন্যতম আকর। পূর্বে মানুষ সেভাবে এগুলোর সন্ধান পায় নি অথবা সন্ধান পেলেও আহরণ করতে পারে নি। বর্তমানে প্রযুক্তির কল্যাণে আফ্রিকার অফুরন্ত সম্পদকে কাজে লাগানো সম্ভব হয়েছে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]