'Scramble on the Ground' এ ব্রিটেন কোন অঞ্চলে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে? বার্লিন সম্মেলন কী?

উত্তরা ভূমিকা : বিসমার্কের আহ্বানে বার্লিন সম্মেলনের পর আফ্রিকার দখল প্রক্রিয়াকে আইনগত স্বীকৃতি দেয়া
হলে খুব দ্রুত আফ্রিকা দখল সম্পন্ন হয়। আফ্রিকায় ইউরোপীয়দের 'Scramble on the Ground' এ দেখা যায় যে, তারা আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চল দখল করে নিয়ে সেখানে নিজস্ব উপনিবেশ স্থাপন করেছে।
ব্রিটেনের উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা : পৃথিবীর যে কোন এলাকায় ব্রিটিশ উপনিবেশ স্থাপন করা হয়েছে প্রথমে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে এবং পরবর্তীতে তা সরকারিভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আফ্রিকার। ক্ষেত্রে ঠিক একই ঘটনা ঘটেছে। যেমন এ এলাকায় প্রথমে উপনিবেশ স্থাপন করে সিসিল রোডস নামক এক পর্যটক ও ব্যবসায়ী। সিসিল রোডস দক্ষিণ আফ্রিকার স্বর্ণের খনির কথা জানতে পেরে সেখানে স্বর্ণের খোঁজ করেন। স্বর্ণ আবিষ্কারের পর তিনি স্বর্ণ উত্তোলন করে তা বিক্রির মাধ্যমে ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হন। এরপর । নি স্থানীয়দের কাজ থেকে কিছু জমি ক্রয় করে সেখানে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন, যার নাম দেন 'ব্রিটিশ সাউথ আফ্রিকান কোম্পানি'। এরপর তিনি ম্যাসোনাল্যান্ড ও মেটাবেল্যান্ড নামক দুটি গোত্রের সাথে চুক্তি করে নামিবিয়া অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করেন। পরবর্তীকালে তিনি বতসোয়ানা, জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ের উপর আধিপত্য বিস্তার করেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বুয়র যুদ্ধ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ যুদ্ধ সংঘটিত হয় জার্মান অধ্যুষিত ট্রান্সভেল ও অরেঞ্জ ফ্রিস্টেট নিয়ে ১৯০৯ সালে গঠন করেন। সাউথ আফ্রিকান ইউনিয়ন এবং ১৯১০ সালে এতে দক্ষিণ আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র উপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয় ৷
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ১৮৮০ এর দশকে ক্র্যাম্বলের মাধ্যমে ইউরোপীয় দেশগুলো তরমুজের ন্যায় আফ্রিকাকে ভাগ করে নিজেদের সুবিধামত অংশ নিয়ে উপনিবেশ স্থাপন করে। ব্রিটেন আফ্রিকার দক্ষিণাংশে উপনিবেশ স্থাপন করে।

বার্লিন সম্মেলন কী?


উত্তরা ভূমিকা : Scramble for Africa নিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মধ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ্বের উপক্রম হয়। এ দ্বন্দ্ব অবসানের লক্ষ্যে জার্মানির বার্লিনে একটি সম্মেলন আহ্বান করা হয় যা বার্লিন সম্মেলন নামে পরিচিত।
বার্লিন সম্মেলন : ইউরোপে যখন এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়, তখন বিসমার্ক তাঁর নীতির পরিবর্তন করেন। অর্থাৎ তাঁর পূর্ব ইউরোপ বিস্তার নীতি ত্যাগ করে আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপন নীতি গ্রহণ করেন। কারণ ইউরোপীয় শক্তিবর্গ সবাই আফ্রিকার দিকে দৃষ্টি মনোনিবেশ করেন। অবশ্য জার্মানির জনগণ আফ্রিকার বিশেষকরে টঙ্গো, ক্যামেরুন ও দক্ষিণ পশ্চিম আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপনের জন্য বিসমার্ককে চাপ প্রয়োগ করে এবং বিসমার্ক যখন তাঁর নীতি পরিবর্তন করেন। তখন ইউরোপীয় শক্তি ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়। ফলে বিসমার্ক বিচলিত হয়ে পড়েন এবং ইউরোপের শক্তির ভারসাম্য রক্ষার জন্য বার্লিনে একটি সম্মেলন আহ্বান করে তাতে ইউরোপীয় দেশসমূহকে আমন্ত্রণ জানান ৷
পশ্চিম ইউরোপের দেশ জার্মানি একত্রিত হওয়ার পর তার রাজধানী করা হয় বার্লিন। বিসমার্ক ইউরোপীয় শক্তিবর্গকে নিমন্ত্রণ জানান। বার্লিনে তাই এ সম্মেলনের নাম হয় 'বার্লিন সম্মেলন। এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে ১৪টি ইউরোপীয় দেশ। শুধু সুইজারল্যান্ড অংশগ্রহন করে নি। তবে সম্মেলনে নেতৃত্বের আসনে চলে আসে পাঁচটি দেশ। যেমন- ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, পর্তুগাল ও ইতালি। এছাড়া এ সম্মেলনে পার্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিল যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক ও OICA বা Organization of Inter national congo Association। আশ্চর্য জনক হলেও সত্য যে, এ সম্মেলন আফ্রিকাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হলেও এখানে কোন আফ্রিকান দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয় নি।
উপসংহার : উপযুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, আফ্রিকার দখলকে কেন্দ্র করে ইউরোপীয় শক্তিবর্গের মধ্যে যে উত্তেজনা দেখা যায়, তা প্রশমনের উদ্দেশ্যেই বার্লিন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। অবশ্য
সম্মেলনের দ্বারা ইউরোপের মধ্যে উত্তেজনা হ্রাস পায়।

বার্লিন সম্মেলন অবশ্যম্ভাবী ছিল কি না উল্লেখ কর।


উত্তর ভূমিকা : Scramble for Africa নিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মধ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ্বের উপনে হয়। এ দ্বন্য অবসানের লক্ষ্যে জার্মানির বার্লিনে একটি সম্মেলন আহ্বান করা হয়। এ সম্মেলনের দ্বারা ইউরোপীয়দের মধ্যে উত্তেজনা হ্রাস করা হয়।
বার্লিন সম্মেলন অবশ্যম্ভাবী ছিল কি না : ইউরোপে শিল্পবিপ্লব সংঘটিত হওয়ার পর নতুন বাজার, কাঁচামাল, পুঁজি বিনিয়োগ প্রভৃতির কারণে ইউরোপীয় ব্যবসায়ী শ্রেণি আফ্রিকার দিকে দৃষ্টি দেয় এবং সেখানে উপনিবেশ স্থাপনের জন্য তাদের সরকারকে চাপ প্রয়োগ করে। এ অবস্থায় সরকারও তার সাম্রাজ্যবাদী আকাঙ্ক্ষা পূরণের লক্ষ্যে আফ্রিকার দিকে ঝুঁকে পড়ে। ফলে একসাথে ইউরোপের অনেকগুলো দেশ বিশেষকরে ফ্রান্স, ব্রিটেন, জার্মানি, পর্তুগাল, ইতালি, স্পেন ও বেলজিয়াম আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপনের জন্য এগিয়ে যায় এবং ইউরোপীয় শক্তিগুলোর মধ্যে ত প্রতিযোগিতা শুরু হয় যা Scramble for Africa নামে পরিচিত। এ Scramble for Africa নিয়ে ইউরোপের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করে এবং ইউরো~ে~ “ক্তির ভারসাম্য ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। এ পরিস্থিতিতে বার্লিন সম্মেলন ডাক হয়। তাছাড়া আফ্রিকায় উপনি, স্থাপনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল এ সম্মেলনে। সম্মেলন শোয়ে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় তাতে দেখা যায় যে, আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপনের আইনগত অধিকার ইউরোপীয়দের দেয়া হয এবং এর ফলে আফ্রিকা দ্রুত ইউরোপীয়দের ঔপনিবেশবাদের শিকার হয়। অন্যদিকে, এ সম্মেলনের পর ইউরোপে কোন দ্বন্দ্ব দেখা যায় নি সত্য, তবে তার স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ৩০ বছর। কারণ এরপরই ১৯১৪ সালে ইউরোপে প্রথম মহাযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। পরিশেষে বলা যায় যে, এ সম্মেলন অবশ্যম্ভাবী ছিল। তবে তা সাময়িক শান্তির জন্য। কারণ এর ফলে ইউরোপে সাময়িকভাবে উত্তেজনা হ্রাস পেয়েছিল।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, বার্লিন সম্মেলনের দ্বারা ইউরোপীয়দের মধ্যে উত্তেজনা হ্রাস করা হয় এবং আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপনের চার্টার ইউরোপীয়দের হাতে দেয়া হয় যার পরিণতিতে মাত্র ৩০ বছরের মধ্যে সমগ্র আফ্রিকা ইউরোপীয়দের দখলে চলে যায়।

বার্লিন সম্মেলনের কারণগুলো উল্লেখ কর।


উত্তর ভূমিকা : ইউরোপে বার্লিন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার মূল কারণ ইউরোপের শক্তিসাম্য নীতি বজায় রাখা ও আফ্রিকার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। তাছাড়া এ বার্লিন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার পশ্চাতে কতিপয় কারণ নিহিত ছিল। নিম্নে এ কারণসমূহ উল্লেখ করা হলো :
১. ইউরোপের তৎকালীন রাজনৈতিক পরিবেশ : ইউরোপে বার্লিন সম্মেলনের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল তৎকালীন ইউরোপের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। কারণ উনিশ শতকের ইউরোপ ছিল উগ্র- জাতীয়তাবাদের ইতিহাস। এ সময় ইউরোপীয় শক্তিবর্গ সর্বদা নিজেদের সভ্য ও উন্নত জাতি মনে করে এবং তারা অন্যদের পদানত করতে চাইত।
২. ব্রিটেনের মিশর দখল : ফ্রান্স ও ব্রিটেন যৌথভাবে মিশরে সুয়েজখাল খনন করে ১৮৬০ সালে এবং তা উন্মুক্ত করা হয় ১৮৬৯ সালে। এ খালটি ভূমধ্যসাগরের সাথে সংযুক্ত থাকায় এ অঞ্চলের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। কারণ এটিই ছিল ভারতবর্ষসহ চীনে আসার একমাত্র জলপথ। এ কারণে ব্রিটেনের কাছে আফ্রিকার মিশর ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ পরিস্থিতিতে ব্রিটেন ১৮৮২ সালে মিশর দখল করে। ফলে ফ্রান্স এতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ।
৩. ফ্রান্সের প্রতিক্রিয়া ও মায়াকো চুক্তি অনুমোদন : ব্রিটেন কর্তৃক মিশর দখলকে ফ্রান্স তীব্র প্রতিবাদ করে এবং এর প্রতিবাদস্বরূপ মাকাকো চুক্তি স্বাক্ষর করে। মাকাকো একটি ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্বাক্ষরিত চুক্তি যা স্বাক্ষর করে ফরাসি। পর্যটক ডি. ব্রাজা। ডি. ব্রাজা ১৮৮২ সালে আফ্রিকার কঙ্গো এলাকায় গিয়ে সেখানকার বড় গোত্র বাটিকার গোত্র প্রধান মাকাকোর সাথে একটি চুক্তি করেন এবং এ চুক্তির নাম দেয়া হয় মাকাকো-ডি. ব্রাজা চুক্তি। এ চুক্তির সূত্রে তিনি কঙ্গোর বিস্তীর্ণ এলাকার মালিক হয়ে তা অনুমোদনের জন্য ফরাসি সরকারকে চাপ দিয়ে আসছিল। এ পর্যায়ে এসে তা ফরাসি সরকার অনুমোদন করল।
৪. ইঙ্গ-পর্তুগিজ সন্ধি: ফ্রান্স কর্তৃক কঙ্গো এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের ফলে কঙ্গো নদী দিয়ে অন্যান্য দেশের জাহাজ চলাচল করতে পারবে না এবং ফ্রান্স তা বাধা দিবে। অন্যদিকে, পর্তুগাল দাবি করে আসছিল যে কঙ্গো এলাকা সম্পূর্ণ তার প্রাপ্ত। এ অবস্থায় ব্রিটেন পর্তুগালের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে যার নাম দেয়া হয় ইঙ্গ-পর্তুগিজ সন্ধি ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, আফ্রিকার দখলকে কেন্দ্র করে ইউরোপীয় শক্তিবর্গের মধ্যে যে উত্তেজনা দেখা দেয় তা প্রশমনের উদ্দেশ্যেই বার্লিন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বার্লিন সম্মেলন ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]