হুসেন শাহী যুগের গৌরব


হুসেন শাহী যুগের গৌরব
মধ্যযুগের বাংলার ইতিহাসে হুসেনশাহী শাসনকাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়কে বাংলার স্বাধীন
সুলতানদের সর্বাপেক্ষা গৌরবময় কাল হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। রাজ্যসীমা সম্প্রসারণ, প্রশাসনিক
স্থিতিশীলতা, ধর্মীয় সংস্কৃতির উন্নয়ন এবং সাহিত্য, শিল্পকলা ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ উৎকর্ষ ছিল
এ যুগের বৈশিষ্ট্য। এ সময় বাংলা রাজনৈতিকভাবে উত্তর ভারত থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ছিল যা এ অঞ্চলকে
এনে দিয়েছিল সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য। স্থানীয় পন্ডিতদের প্রচেষ্টায় এ যুগে সাহিত্যিক পুনর্জাগরণ ঘটে যা
পূর্ববর্তী সময় অবদমিত ছিল। নতুন শিল্পকলা উদ্ভাবনের সাক্ষ্য রাখতে না পারলেও সমকালীন চারুকলা ও
স্থাপত্যের নিদর্শন বাংলার সমৃদ্ধি ও উন্নয়নেরই পরিচয় বহন করে। হুসেন শাহী যুগের শাসকগণ তাঁদের
বিদেশী পূর্বসুরীদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে মুসলিমদের স্থানীয় আকাক্সক্ষা ও উন্নয়নের সাথে নিজেদের
সম্পৃক্ত করেছিল। তাঁরা এ সময় কমবেশী পরিচিত হয়েছে দেশজ সংস্কৃতির সাথে। হুসেন শাহী যুগ ছিল
বাংলায় ইউরোপীয়দের আগমনের যুগ। একই সাথে মুগলরাও বাংলার সীমান্তবর্তী এলাকায় এসে
পৌঁছেছিল। তবে তখন পর্যন্ত ইউরোপীয়রা এখানে ভালভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করতে পারেনি। বাংলার
নতুন শক্তির প্রাথমিক চিহ্নের সাক্ষ্য হুসেন শাহী যুগে পরিলক্ষিত হয়েছে যা পরবর্তী শতাব্দীতে দেশের
জীবন-যাত্রার মান নির্ধারণ করেছিল। আর তাই এ যুগকে বাংলার ইতিহাসের “স্বকীয়তার রূপদায়ক কাল”
রূপে চিহ্নিত করা যায়।এ যুগের গৌরব পরিলক্ষিত হয় রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম, অর্থনীতি, ধর্মীয় জীবনযাত্রা,
শিল্পকলা ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে।
প্রশাসন
হুসেন শাহী যুগ বাংলায় এক সুদৃঢ় প্রশাসন ব্যবস্থার সূচনা করে। প্রশাসনিক অনিয়ম রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতার
বিরুদ্ধে কাজ করছিল বলে আলাউদ্দিন হুসেন শাহ পাইকদের ভেঙ্গে দেন এবং আবিসিনীয়দের ধ্বংস
করেন। কারণ, এদের ষড়যন্ত্র ও উদ্দেশ্যমূলক কাজ দেশে সহিংসতার সৃষ্টি করেছিল। তিনি গৌড় থেকে
একডালা পর্যন্ত প্রশাসনিক ইউনিট তৈরি করে নিজেকে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এছাড়া বিভিন্ন
প্রদেশে দক্ষ গভর্নর নিয়োগ করে রাষ্ট্রদ্রোহীদের সরিয়ে দেন।
এ সময় বাংলার প্রশাসনকে দিল্লি সালতানাতের প্রশাসনের অনুরূপ মনে করা হতো। এ যুগের প্রতিষ্ঠাতা
হিসেবে আলাউদ্দিন হুসেন শাহ প্রশাসনিক ক্ষেত্রে যে সব নীতি প্রণয়ন করেছিলেন সেগুলো তাঁর উত্তরসুরী
নসরৎ শাহ, ফিরোজ শাহ এবং মাহমুদ শাহ কর্তৃক তেমন পরিবর্তিত বা পরিবর্ধিত হয়নি। আরব, পাঠান,



মোগল ও বাঙালি জাতির সমনি¦ত অভিজাত শ্রেণী এ সময় প্রাশাসনিক ক্ষেত্রে রেখেছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
তাছাড়া হুসেন শাহী বাংলার শাসকরা তাঁদের প্রতিদ্বন্দ¡ী উত্তর ভারতীয় প্রশাসকদের চেয়ে কোন দিক থেকে
ভিন্ন ছিল না। সামরিক গভর্নররা কর ধার্য করতো। এসময় উজির ছিলেন প্রধান প্রশাসক। কেন্দ্রে তিনি
অর্থনৈতিক ও সামরিক বিভাগের সাথেও সম্পৃক্ত ছিলেন। কখনো কখনো তিনি সুলতানের পদমর্যাদা লাভ
করতেন। হুসেন শাহী যুগের প্রদেশগুলো পরিচিত ছিল ইকলিম (ওয়ষরস), মুলক (গঁষশ), আরসাহ
(অৎংধয), হিসেবে। এগুলোর মধ্যে ছিল চাট্গাঁ মুয়াজ্জামাবাদ, মাহমুদাবাদ, মুহাম্মদাবাদ, ফতেহাবাদ,
খলিফাতাবাদ, হুসাইনাবাদ, নুসরাতাবাদ, বরবকাবাদ, সাতগাঁও, সাজলামানকবাদ, হাজিপুর (উত্তর বিহার),
মুঙ্গের (দক্ষিণ বিহার) এবং নতুনভাবে জয় করা কামরূপ ও কামতা। প্রত্যেকটি প্রদেশ “সর-ই-লস্কর- আউজির” নামক কর্মকর্তা দ্বারা শাসিত হতো। তাঁর অধীনে সামরিক এবং রাজস্ব কার্যাবলীও থাকতো। তবে
প্রাদেশিক প্রশাসন সাম্রাজ্যের সর্বত্র এক রকম ছিল না। হুসেন শাহী শাসন ছিল ধর্মীয় উগ্রতামুক্ত। সকল
শ্রেণীর ও ধর্মের লোক এ যুগে নানা ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারতো। রাজনৈতিক উদার মানসিকতা
দ্বারা শাসকরা প্রণোদিত হতো যা দেশের উন্নতির জন্য ছিল অত্যন্ত সহায়ক। হুসেন শাহী যুগে শাসক ও
শাসিতের মধ্যে ধীরে ধীরে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক পুন:স্থাপিত হয় যা বাংলাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে নতুন
সামাজিক ও রাজনৈতিক দিগন্তে।
অর্থনীতি
বিভিন্ন সাহিত্যিক উপাদান ও লিপিমালা থেকে হুসেন শাহী যুগে বাংলার অর্থনৈতিক উন্নয়নের তথ্য পাওয়া
যায়। ভার্থেমা, বারবোসা ও টোমে পিরেজ-এর ষোড়শ শতাব্দীর এবং পরবর্তীকালের জোয়া দ্যা ব্যারসের
লেখনিতে এবং বাংলা কবিতা, ফার্সি সাহিত্য ও লিপিমালা এ যুগের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাক্ষ্য বহন করে।
বাংলা প্রধানত কৃষি, ব্যবসা এবং শিল্প সম্পদে এ সময় সমৃদ্ধ ছিল। এ যুগে নগর ও গ্রামে বসবাসরত
জনগণের আনুপাতিক হার সম্পর্কে ধারণা করা সম্ভব নয়। মধ্যযুগের বাংলা ছিল মূলত: কৃষি নির্ভর । তাই
বেশির ভাগ লোক গ্রামে বাস করতো এবং তাদের সংখ্যাও ছিল শহর ও নগর থেকে বেশি। আর্থ-সামাজিক
দিক থেকে বিভিন্ন গোষ্ঠী ছিল পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল যা সামগ্রিক গ্রামীণ অর্থনীতিকে করেছিল সুদৃঢ়।
এ যুগের গ্রামগুলো ভূমি এবং এর উৎপাদনের ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া সীমিত কিছু ব্যবসা-বাণিজ্যের
সাথেও সম্পৃক্ত ছিল। তুলনামূলকভাবে শহর এবং নগরের লোকেরা ছিল প্রশাসন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের
সাথে অধিক সম্পর্কযুক্ত। এ সময় রাজনৈতিক এবং বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু শহর ও নগরের মধ্যে
ছিল গৌড়, পান্ডুয়া, সাতগাঁও, চট্টগ্রাম এবং সোনারগাঁও। আলাউদ্দিন হুসেন শাহ তাঁর রাজধানী একডালায়
স্থানান্তর করলেও বাংলায় মুসলিম শাসনের প্রাথমিককালে গৌড় এবং পান্ডুয়ার গুরুত্ব কম ছিল না।
রাজনৈতিক কেন্দ্র থেকে দূরে হলেও বাংলার জনগণের বাণিজ্যিক কার্যক্রমে এ দুটি নগরের অবস্থান ছিল
গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় টাকশালে নগরগুলো গড়ে উঠেছিল নদী তীরবর্তী স্থানে। এগুলো শুধু প্রশাসনিক কেন্দ্রই
নয় বরং বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবেও অধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এ সময় বাংলার বিভিন্ন বন্দরের মাধ্যমে চলতো
সামুদ্রিক বাণিজ্য। ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে সপ্তগ্রাম গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে। এর
ধর্মীয় পবিত্রতা এবং অর্থনৈতিক প্রাচুর্যের কিছু জীবন্ত বর্ণনা ফুটে ওঠে সমকালীন বাংলা সাহিত্য ও
বিদেশীদের বিবরণে। শীতলক্ষ্যা ও মেঘনার মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত সোনারগাঁও থেকে এ যুগে বিশ্বের
বিভিন্ন অঞ্চলে চাল ও কাপড় রপ্তানি হতো। কর্ণফুলী নদীর তীরে এবং বঙ্গোপসাগরের উপক‚লে অবস্থিত
চট্টগ্রামের অবস্থান ছিল বাণিজ্যিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর অধিকার নিয়ে বাংলা, ত্রিপুরা এবং
আরাকানের মধ্যে চলেছিল দীর্ঘকাল ধরে সংঘর্ষ। ‘পোর্ট গ্রান্ডে' হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামে পর্তুগিজরা সুবিধা
ভোগ করছিল। চট্টগ্রাম ও সোনারগাঁওয়ের আকর্ষণীয় অবস্থানের কারণে এগুলোর ওপর পর্তুগিজদের ছিল
লোলুপ দৃষ্টি। ষোড়শ শতাব্দীর শেষের দিক থেকে তারা এ দুটো অঞ্চলের শুল্ক নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে।
জোয়া দ্য ব্যারোস-এর মানচিত্রে সাতগাঁও, সোনারগাঁও এবং চট্টগ্রামের অবস্থান থেকে উপলব্ধি করা যায় যে
এ অঞ্চলগুলোর মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের সাথে বাংলার অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে
উঠেছিল। প্রাথমিক দিকে বাংলা ছিল একটি কৃষি প্রধান অঞ্চল, আর এর বেশির ভাগ লোক ছিল কৃষিজীবি।


এখানে বিভিন্ন প্রকার ধান প্রচুর উৎপাদিত হতো। এছাড়া অন্যান্য কৃষিজ পণ্যের মধ্যে ছিল তুলা, আখ,
আদা, হলুদ, সুপারী, ডাল ইত্যাদি। এ যুগে অভ্যন্তরীণ সামুদ্রিক বাণিজ্য বাংলার সমৃদ্ধিতে অবদান
রেখেছিল। স্থানীয় বাজারে মহাজন, মুদ্রাবিনিময়কারী এবং বণিকদের কার্যক্রমের কথা দেশীয় সাহিত্যে
একাধিকবার উল্লেখ আছে, যা এ যুগের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকেই স্মরণ করিয়ে দেয়।
হুসেন শাহী যুগে বাণিজ্যিক কর্মকান্ডের পূর্বশর্ত ছিল শিল্পক্ষেত্রে অগ্রগতি। বাংলার বস্ত্রশিল্প এ যুগে লাভ
করেছিল প্রসিদ্ধি। সুক্ষè সুতিবস্ত্র, পাটবস্ত্র এবং রেশমী কাপড়ের উৎপাদন আকর্ষণ করেছিল বিদেশী
ক্রেতাদের। এসময় বাংলায় উন্নতমানের চিনির উৎপাদন হতো। ধাতব শিল্পও এ যুগে লাভ করেছিল
সমৃদ্ধি। যার ফলে গড়ে উঠেছিল স্বর্ণকার, কর্মকার প্রভৃতি অর্থনৈতিক শ্রেণী।
হুসেন শাহী শাসকরা প্রচুর রৌপ্য মুদ্রা ও কিছু স্বর্ণ মুদ্রার প্রচলন করেছিল। নসরৎ শাহ এবং মাহমুদ শাহ
কিছু তামার মুদ্রা ব্যবহার করেছিলেন। এ যুগে কিছু উন্নতমানের রৌপ্য মুদ্রার আগমন ঘটেছিল যা
ক্রমবর্ধমান বৈদেশিক বাণিজ্যের ইঙ্গিত বহন করে।
বিদেশীদের বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, এ সময় বাংলার উচুঁ শ্রেণীর লোকেরা ছিল সম্পদশালী। তবে
সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা নির্ধারণ করা কঠিন। ‘চৈতন্য ভগবত' গ্রন্থে অসংখ্য দুর্ভিক্ষের উল্লেখ
রয়েছে যা হুসেন শাহী আমলে বাংলার জনগণের ওপর মারাÍক প্রভাব ফেলেছিল। সমকালীন দাস প্রথার
উল্লেখ থেকে সমাজের কিছু অংশে দারিদ্রের চিহ্নও পাওয়া যায়। এতদ্বসত্তে¡ও সামুদ্রিক বাণিজ্যের বিস্তার,
পণ্য উৎপাদনের পদ্ধতি এবং সংগঠিত মূলধনী অর্থনীতির ফলে এ যুগে বাংলার অর্থনৈতিক জীবনে
গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল। কিন্তু ব্যবসা, শিল্প ও কৃষিক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা আশানুরূপ
পরিবর্তন সাধনে বাধার সৃষ্টি করে। এসময় বিদেশী বণিকরাই বৈদেশিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতো। টোমে
পিরেজ মূলধন গঠনের ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট প্রতিবন্ধকতার কথা বলেন। এগুলোর মধ্যে ছিলÑ আন্তর্জাতিক
বাণিজ্যে বাঙালি বণিকদের দূর্বল অবস্থা, বাণিজ্যিক সংস্থা এবং নৌপরিবহন ক্ষেত্রে দক্ষ প্রযুক্তির অভাব
এবং নিচুমানের ব্যবসা-নীতি। কৃষির প্রযুক্তি ছিল আদিম যুগের। তাই কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক মূলধন গঠন
ছিল অসম্ভব।
ধর্মীয় জীবন
হুসেন শাহী যুগে বাংলার ধর্মীয় জীবনে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সমন¦য় পরিলক্ষিত হয়। এগুলোর মধ্যে ছিল
ইসলাম, বৈষ্ণববাদ, তান্ত্রিকবাদ মনসা এবং নাথ প্রভৃতি ধর্ম সম্প্রদায়। এ সময়ে ইসলাম মানুষের জীবনে
বিশেষ আধিপত্য বিস্তার করেছিল। দেশজ সাহিত্যের সতর্ক পাঠে দেখা যায় যে, সাধারণ মুসলমানদের
মধ্যে এক প্রকার লোকজ ইসলামের প্রচলন ছিল। এই জনপ্রিয় ইসলাম সংমিশ্রণ প্রক্রিয়ায় গঠিত হয়েছিল
বলেমনে করা হয়। মুসলমানদের মধ্যেমনসা পূজারও প্রচলন ছিল। নসরৎ শাহ নবীর পদচিহ্ন সংরক্ষণ
করার জন্য একটি সৌধ তৈরি করেন। বৌদ্ধ ধর্মের এ ধরনের সংস্কার হিন্দু মতবাদ, খ্রিস্ট মতবাদ এবং
ইসলামেও প্রবেশ করে। মুসলিম আধ্যাত্মবাদ এ সময় ইসলামে বিভিন্ন প্রকার তান্ত্রিক ও যৌগিক ধারণা ও
রীতির আবির্ভাব ঘটায়। এ সময় ‘আদিদেব' এবং ‘আদ্যশক্তি' ছিল ‘সংখ্য' ধারণার ‘পুরুষ' ও ‘প্রকৃতি'
পরিবর্ধিত সংস্করণ। মধ্যযুগের বাংলায়এগুলো ছিল বিবর্তনের মূলনীতি। এ যুগে বাংলার পীর সম্প্রদায়ের
প্রাধান্যের প্রমাণ পাওয়া যায়। সুফিবাদ দ্বারা সমাজ এ সময় বিশেষ প্রভাবিত হয়েছিল। চিশ্তিয়া সুফি নূরকুতুব-ই-আলম ছিলেন আলাউদ্দিন হুসেন শাহের শ্রদ্ধার পাত্র। তিনি পনের শতকের প্রথমার্ধে মৃত্যুবরণ
করেন। সাদ-উল্লাহ্পুরে নসরৎ শাহ সুফিআখি সিরাজউদ্দিনের সমাধি তৈরি করেছিলেন। নূর-কুতুব-ইআলমের শিষ্য শেখ হুসামউদ্দিন মানিকপুরী এবং হামিদ শাহ এ সময়মানুষের ধর্মীয় জীবনকে বিশেষ
প্রভাবিত করেছিলো। পনের শতকের প্রথম দিকে বাংলায় মাদারী সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটে এবং এর
ধারাবাহিকতা হুসেন শাহী যুগ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। ‘শূন্যপরাণ' গ্রন্থে মাদারী সম্প্রদায়ের ‘দম মাদার'
শ্লোগানের উল্লেখ পাওয়া যায়। মওলানা শাহ দৌলাহ্ রাজশাহী জেলার বাঘা নামক স্থানে বসতি স্থাপন
করেছিলেন। শেখ ইসমাইল গাজি এসময় ভক্তদের দ্বারা বিশেষভাবে পূজিত হয়েছিলেন। এ সকল পীর,


সুফিগণ যৌগিক এবং তান্ত্রিক দর্শন দ্বারা ইসলামি আধ্যাত্মবাদের সাথে একটি সাংস্কৃতিক সমন¦য় সৃষ্টি
করেছিলেন। লিপি প্রমাণ ও সাহিত্যিক সাক্ষ্য থেকে শিয়া প্রভাবের উল্লেখ পাওয়া যায়। এসময় বাংলার
সাথে পারস্য ও ইরাকের সামুদ্রিক বাণিজ্য সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। বারবোসা ষোড়শ শতকের প্রথমদিকে
বিভিন্ন পারসিক বণিকদের কথা উল্লেখ করেন। এসময় তারা সাফাভী শাসনাধীনে সামাজিক ও রাজনৈতিক
নিরাপত্তা না পাওয়ায় দলে দলে বাংলায় অভিবাসন করে।
এ যুগে শ্রী চৈতন্য বৈষ্ণববাদকে দিয়েছিলেন বাস্তব রূপ। চৈতন্য বৈষ্ণববাদের ইতিহাসের অত্যন্ত নিকটবর্তী
হলেও তিনি সম্প্রদায়ের জন্য কোন আধ্যাত্মিক বা দার্শনিক পদ্ধতির নির্দেশ দেননি। বৈষ্ণববাদের প্রতি
চৈতন্যর আবেগময় শ্রদ্ধা জনগণের মধ্যে এক আকর্ষণ সৃষ্টি করেছিল। ফলে বৈষ্ণববাদ ব্যাপক পরিচিতি
লাভ করেছিল। এ যুগে বৈষ্ণববাদ সূচনা করেছিল বাংলা ও সংস্কৃত ভাষায় সমৃদ্ধ সাহিত্যের। চৈতন্য বর্ণ
প্রথাকে বিলুপ্ত না করে সকল ধর্ম এবং বর্ণের মানুষের মনে বৈষ্ণববাদের প্রতি বিশ্বাস সৃষ্টি করেছিলেন।
বৈষ্ণববাদের উদার মানসিকতা গোঁড়া ব্রাহ্মণ্য রীতির প্রতিদ্বন্দ¡ী হয়ে উঠেছিল। চৈতন্যবাদের আবির্ভাবের
ফলে বাংলার সামাজিক ক্ষেত্রে এক অভূতপূর্ব ধর্মীয় সম্প্রীতির সৃষ্টি করেছিল।
এ যুগে রাজনৈতিক দিক থেকে বাংলা ছিল মুসলিম প্রভাবাধীন। তাই হিন্দুরা ধীরে ধীরে মুসলিম ধ্যানধারণা ও রীতি দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছিল। কিছু স্থানীয় সম্প্রদায়ের প্রতি ছিল ইসলামের সহানুভ‚তি। এ
সম্প্রদায়গুলোর আধ্যাতœবাদী ধারণা বিশেষ করে দর্শন পদ্ধতি ইসলামকে আকর্ষণ করেছিল। এ অবস্থায়
মানুষ ব্যাপক হারে ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়। চৈতন্য পছন্দ করতেন ভক্তিময়তা। বৃন্দাবন দাস উল্লেখ
করেছেন যে, এ সময় মানুষ সাধারণত চন্ডী, মনসা, বাসুকী প্রভৃতি শাক্ততান্ত্রিক দেবতাদের পূজা করতো।
যারা গীতা এবং ভগবত পাঠ করতো তাদেরও কৃষ্ণ বা বিষ্ণুর প্রতি তেমন শ্রদ্ধা পরিলক্ষিত হতো না।
সমকালীন লেখকগণ মনে করতেন ভক্তিমূলক সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করার জন্য চৈতন্যের আবির্ভাব হয়েছিল।
তাই বলা যায় যে, এ সময় বাংলায় বিরাজমান হিন্দু সমাজের দ্বন্দ¡ মীমাংসার জন্য চৈতন্যের আগমন
ঘটেছিল। বৈষ্ণববাদের উন্নয়নের ফলে বাংলায় ইসলামের প্রভাব বেশ কমে এসেছিল। ফলে ব্রাহ্মণ্যবাদের
স্রোত ভেঙ্গে হিন্দুধর্ম পেয়েছিল নিরাপত্তা।
পনের ও ষোড়শ শতাব্দীতে বাংলায় ‘ধর্মঠাকুর'-এর পূজারি সম্প্রদায়ের বিশেষ অবস্থান পরিলক্ষিত হয়।
এর সাথে ইসলামি ধ্যান-ধারণার এক গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। বিপ্রদাসের ‘মনসা বিজয়' গ্রন্থে এর
উল্লেখ পাওয়া যায়।
হুসেন শাহী যুগে ‘নাথ' ধর্মও একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় দর্শন হিসেবে প্রচার লাভ করে। এ সময়ে অন্যান্য
সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে ছিল ‘মনসা' ও ‘চন্ডি'র উপাসক' ‘মনসামঙ্গল' কাব্য, ‘চৈতন্য ভগবত' এবং
মুকুন্দরামের ‘চন্ডিমঙ্গল'-এ এই সম্প্রদায়গুলোর উল্লেখ পাওয়া যায়। সমকালীন বাংলায় তান্ত্রিক মতবাদও
প্রসার লাভ করেছিল বলে জানা যায়।
তাই বলা যায় যে, হুসেন শাহী যুগে বাংলার রাজশক্তিতে মুসলিম ধর্মের প্রভাব থাকলেও এসময় বিভিন্ন
স্থানীয় ধর্ম ও সম্প্রদায় সমাজে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছিল। ব্রাহ্মণ্যবাদের গোঁড়ামির ফলে স্বাধীনভাবে
বিকাশ লাভ করেছিল শ্রী চৈতন্যের বৈষ্ণব মতবাদ। অতএব, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ছিল এ যুগের একটি
গৌরবময় দিক।
সংস্কৃত ও বাংলা সাহিত্য
হুসেন শাহী যুগ সংস্কৃত এবং বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে এক বিশেষ উৎকর্ষের যুগ। এ সাহিত্যে প্রকাশ পায়
মানুষের ধর্মীয় ও পার্থিব ধ্যান-ধারণা। এ সময় বাংলা ভাষার উদ্ভব ও বাংলা সাহিত্যের বিকাশ ঘটেছিল যা
ছিল দেশীয় সংস্কৃতির প্রতীক। বাংলার রাজসভার সাথে ফার্সি ভাষার সম্পর্ক থাকলেও সাধারণ জনজীবনে
তা খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারেনি; ফলে এসময় তেমন কোন ফার্সি সাহিত্য সৃষ্টি হয়নি। এ যুগে বাংলার
শাসকগণ ছিলেন দেশীয় সাহিত্যের প্রতি আগ্রহী। তাই স্থানীয় কবিদের পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁরা এগিয়ে

আসেন। সাধারণ জনগণের সাথে সুলতানদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় তাঁরা বাংলা ভাষাকে বিশেষ মর্যাদা
প্রদান করেন। ফলে সাহিত্য ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে যা প্রাক্-মুসলিম যুগে সংস্কৃত
ভাষার দখলে ছিল। এ যুগে বাংলা কবি যশোরাজ খান, কবীন্দ্র পরমেশ্বর, শ্রীকর নন্দী, শ্রীধর দাস সরাসরি
রাজ পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন। বিজয়গুপ্ত ও বিপ্রদাস কোন প্রকার রাজ পৃষ্ঠপোষকতা না পেলেও তাঁরা
‘মনসার' অনুসারী সম্প্রদায়ের ওপর কবিতা রচনা করেন এবং হুসেন শাহের প্রতি তাঁদের আনুগত্য ছিল
প্রবল। মহাভারতের অনুবাদক কবীন্দ্র পরমেশ্বর এবং শ্রীকর নন্দী হুসেন শাহের অধীনে চট্টগ্রামে নিয়োজিত
শাসনকর্তা পরাগল খান ও তাঁর পুত্র ছুটি খানের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছিলেন। বৈষ্ণব পদাবলী
লেখকদের মধ্যে যশোরাজ খান হুসেন শাহের অধীনে কাজ করতেন। অন্যদিকে মুসলিম কবি শেখ কবির
সম্পৃক্ত ছিলেন নসরৎ শাহের সাথে। ১৪৯৮ থেকে ১৪৯৯ সালের মধ্যে শেখ জাহিদ তাঁর যৌগিক দর্শন
‘অদ্য পরিচয়' রচনা করেন। আর এটিই প্রথম যৌগিক ধারণা সম্পন্ন বাংলা কবিতা বলে মনে করা হয়।
বাংলা সাহিত্যের পার্থিব উপাদানের জন্যও এই যুগ বিশেষভাবে চিহ্নিত। ‘বিদ্যাসুন্দর' গ্রন্থের রচয়িতা শ্রীধর
নসরৎ শাহের পুত্র শাহজাদা ফিরোজের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিলেন। এর কিছুকাল পূর্বে মুসলিম কবি
সাবিরিত খান অপর একটি ‘বিদ্যাসুন্দর' রচনা করেছিলেন। এ সকল কবিদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিক
ঐতিহ্য অষ্টাদশ শতকের কবি ভারতচন্দ্র অনুসরণ করেন।
হুসেন শাহী যুগে সংস্কৃত সাহিত্যের এক বিশেষ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। এ সময় পন্ডিত রঘুনন্দন তাঁর
‘স্মৃতিতত্ত¡' রচনা করেন যা থেকে সমকালীন হিন্দু সম্প্রদায়ের স্মৃতিজ্ঞান সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়।
রঘুনন্দন ছিলেন স্মৃতিজ্ঞানের চর্চা কেন্দ্র ‘নবদ্বীপ' ধারার প্রধান উপস্থাপনকারী। তাঁর স্মৃতি চর্চা আজো
গোঁড়া হিন্দু সমাজের সমাজিক ও ধর্মীয় আচরণে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। রঘুনাথ তার্কিক শিরোমণি
কর্তৃক নবদ্বীপে ষোড়শ শতাব্দীর প্রথমদিকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘নব্যন্যায়' ধারা। তাঁর অসংখ্য রচনার মধ্যে
‘তত্ত¡চিন্তামণিদ্ধিত্' এবং ‘পদার্থ খন্ডনম্' বিখ্যাত। ভারতে নব্যন্যায়-এর প্রভাব অব্যাহত ছিল অষ্টাদশ
শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত। মধুসূদন সরস্বতী ‘অদ্বৈত' মতবাদের ওপর ষোড়শ শতাব্দীতে লিখেছিলেন
‘অদ্বৈতসিদ্ধি'। চৈতন্যের মৃত্যুর পর মুরারি গুপ্ত রচনা করেছিলেন ‘চৈতন্য চরিতামৃত'। এসময় রাধা-কৃষ্ণের
ওপরও নাটক রচিত হয়। এগুলোর মধ্যে ছিল, রূপগোস্বামীর ‘দানকেলি কৌমদি' ‘ললিতমাধব',
‘বিদগ্ধমাধব'। কাব্যের মধ্যে ছিল রুদ্রন্যায়-র-‘ভ্রমরদূত' রূপগোস্বামীর ‘হংসদূত', ‘উদ্ধব সন্দেশ'। এছাড়া
‘রূপপদাবলী' গ্রন্থে প্রাচীন ও মধ্যযুগের কবিদের বেশকিছু কবিতা সংকলিত হয়েছে।
স্থাপত্য ও শিল্পকলা
হুসেন শাহী যুগ স্থাপত্য ও স্থাপত্যের গাত্রালংকারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল। রাজ
পৃষ্ঠপোষকতায় এ সময় উল্লেখযোগ্য হারে স্থাপত্য নির্মিত হয়েছিল। ধ্রুপদী সংগীতও রাজ পৃষ্ঠপোষকতা
পেয়েছিলো। অসংখ্য আরবি ও ফার্সি লিপি ও মুদ্রা এ সময়ের হস্তলিপি শিল্পের উৎকর্ষের পরিচয় তুলে
ধরে। এ যুগ ছিল এই শিল্পের ‘নস্ক' ও ‘সুল্স' রীতির উন্নয়নের যুগ। তবে আলংকারিক ‘তুঘ্রা' রীতির
তীর-ধনুক শিল্পকর্ম ছিল এসময়ের জনপ্রিয় গাত্রালংকার। ‘তুঘ্রা' রীতি ছিল সুন্দর, ফুলেল এবংসাজানো।
তাছাড়া চিত্র শিল্প ছিল নসরৎ শাহের আমলের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। ‘সিকান্দর নামা' গ্রন্থের চিত্রণে এর
ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়েছে।
হুসেন শাহী যুগ শুরু হওয়ার কালেই বাংলায় স্থাপত্যিক ঐতিহ্যের যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছিল। ইলিয়াস শাহের
আমলে স্থাপত্য স্বতন্ত্র ঐতিহ্য লাভ করেছিল। হুসেন শাহী যুগ ছিল এরই ধারবাহিকতা। গৌড়ের
দরাস্বাড়ী মাদ্রাসার ধ্বংসাবশেষ এ সময়ের শক্তিশালী স্থাপত্য শিল্পের পরিচয় বহন করে। হুসেন শাহী
আমলে বাংলায় ইটের তৈরি স্থাপত্যের উন্নয়ন পরিলক্ষিত হয় লট্টন মসজিদ, গোমতি গেট, কদম রসুল,
ঝনঝনিয়া মসজিদ, বড় সোনা মসজিদ, ছোট সোনা মসজিদ ইত্যাদিতে। দিনাজপুরের সুরা মসজিদ ও
হেমতাবাদ মসজিদ, পাবনার বাঘা মসজিদ ও নবগ্রাম মসজিদ, ফরিদপুরের মজলিস আউলিয়া মসজিদ,
সিলেটের শঙ্কর পাশা মসজিদ এবংসোনারগাঁর গোয়াল্দি মসজিদ হুসেন শাহী যুগের স্থাপত্যের উৎকৃষ্ট
প্রমাণ। এ যুগের স্থাপত্যের মধ্যে বাংলার জীবন ও স্থানীয় সংস্কৃতির প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
এস এস এইচ এল
ইউনিট--- পৃষ্ঠা ৩৩৪
ওপরের আলোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, মধ্যযুগের বাংলার ইতিহাসে হুসেন শাহী আমল ছিল এক গৌরবময়
অধ্যায়। প্রশাসনিক কাঠামো, অর্থনৈতিক, শিল্প, সাহিত্য, ধর্ম ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে এ যুগ বাংলার অতীত
ঐতিহ্যের ধারা যেমন বজায় রেখেছিল, তেমনি সমাজের সর্বস্তরে নতুন নতুন দিক নির্দেশনা দিয়েছিল।
তাই হুসেনশাহী যুগ বাংলার মুসলিম শাসনামলের স্বর্ণযুগ।
সারসংক্ষেপ
হুসেনশাহী আমল বাংলার স্বাধীন সুলতানদের সর্বাপেক্ষা গৌরবময়কাল। রাজ্যসীমা সম্প্রসারণ,
প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা, ধর্মীয় সংস্কৃতির উন্নয়ন এবংসাহিত্য, শিল্পকলা ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে
তাৎপর্যপূর্ণ উৎকর্ষ এ যুগের বৈশিষ্ট্য। এ যুগেই বাংলার সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তাই
যুক্তিসঙ্গতভাবেই এ যুগকে ‘স্বকীয়তার রূপদায়ক কাল' রূপে চিহ্নিত করা হয়। এ যুগে শাসক ও
শাসিতের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপিত হয়। অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিকভাবে বাংলার সমৃদ্ধি ছিল
দৃষ্টান্তমূলক। বিদেশিদের বর্ণনায় এ চিত্র ধরা পড়েছে। ধর্মীয় জীবনে এক ধরনের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান
পরিলক্ষিত হয়। চৈতন্যবাদের আবির্ভাবের ফলে হিন্দুধর্মের জনপ্রিয়তাও বৃদ্ধি পায়। হুসেন শাহী যুগে
সংস্কৃত ও বাংলা সাহিত্যে উৎকর্ষ সাধিত হয়। স্থাপত্য ও শিল্পকলায় বাংলার জীবন ও স্থানীয়
সংস্কৃতির প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। সামগ্রিকভাবে এ যুগকে বাংলার মুসলিম শাসনামলের স্বর্ণযুগ বলা
যেতে পারে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন ঃ
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। কোনটি হুসেন শাহী যুগের প্রশাসনিক ইউনিট নয়?
(ক) আরসাহ (খ) ইকলিম
(গ) বিষয় (ঘ) মুলক।
২। হুসেন শাহের রাজধানী কোনটি?
(ক) সোনারগাঁও (খ) সাতগাঁও
(গ) একডালা (ঘ) গৌড়।
৩। কোন সুফি হুসেন শাহের শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন?
(ক) শাহজালাল (খ) নূর-কুতুব-ই-আলম
(গ) শেখ হুসামউদ্দিন মানিকপুরী (ঘ) বায়েজীদ বোস্তামী।
৪। ‘চন্ডিমঙ্গল'-এর রচয়িতা কে?
(ক) মুকুন্দরাম (খ) বিপ্রদাস
(গ) কবীন্দ্র পরমেশ্বর (ঘ) রঘুনন্দন।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ঃ
১। হুসেন শাহী যুগের প্রশাসন ব্যবস্থার বিবরণ দিন।
২। স্থাপত্য ও শিল্পকলার ক্ষেত্রে হুসেন শাহী যুগের উৎকর্ষ বর্ণনা করুন।
রচনামূলক প্রশ্ন


১। হুসেন শাহী যুগের গৌরব সম্পর্কে একটি নিবন্ধ রচনা করুন।
২। ধর্মীয় জীবনে হুসেন শাহী যুগের অগ্রগতি আলোচনা করুন।
৩। সাহিত্য ও শিল্পকলার ইতিহাসে হুসেন শাহী যুগের অবদান মূল্যায়ন করুন।
৪। প্রশাসন এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে হুসেন শাহী যুগে কি কি অগ্রগতি সাধিত হয়? এই যুগের অর্থনীতিকে
কৃষিভিত্তিক বলা যায় কি?
সহায়ক প্রন্থপঞ্জি
১। গ.জ. ঞধৎধভফধৎ, ঐঁংধরহ ঝযধযর ইবহমধষ.
২। আবদুলকরিম, বাংলার ইতিহাস।
৩। সুখময়মুখোপাধ্যায়, বাংলার ইতিহাসের দু'শো বছর, স্বাধীন সুলতানদের আমল।
৪। আবদুল মমিন চৌধুরী ও অন্যান্য, বাংলাদেশের ইতিহাস।
৫। আবদুর রহিম, বাংলার মুসলমানদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ইতিহাস।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]