আফ্রিকায় ব্রিটিশ উপনিবেশ স্থাপনের ইতিবৃত্ত পর্যালোচনা কর।

আফ্রিকায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ কর । অথবা, আফ্রিকায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তার সম্পর্কে লিখ।
অথবা, আফ্রিকায় ইংরেজ উপনিবেশ স্থাপনের পটভূমি লিখ ।
উত্তর ভূমিকা : উনিশ শতকে সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী উপনিবেশ ছিল ব্রিটেন এবং ব্রিটিশ উপনিবে পর্যন্ত ব্রিটেন আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপন করতে পারে নি। ১৮৮০ এর দশকে ব্রিটেন স্ক্র্যাম্বলের মাধ্যমে আফ্রিকায় প্রবে পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র স্থাপিত হয়েছিল। ফলে ব্রিটেন তখন বিশ্ব পরাশক্তির ভূমিকায় অবতীর্ণ। কিন্তু উনিশ শতকের মধ্যভাগ করে এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় এক আধিপত্যসহ অন্যান্য আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপন করে। আফ্রিকায় ব্রিটিশ উপনিবেশের প্রধান কারণ ছিল আফ্রিকার অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ করে ব্রিটেনে নিয়ে গিয়ে সেখানে শিল্প বিপ্লবে সহায়তা করা এবং উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রীর বাজার আফ্রিকায় তৈরি করা। অতএব আফ্রিকায় ব্রিটিশ উপনিবেশ বিস্তার ইতিহাসে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা কারণ এর পরই ব্রিটিশ নাগরিকরা গর্ব করে বলতে শুরু করে যে, “ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে কখনো সূর্য অস্ত যায় না।”
আফ্রিকার ব্রিটিশ উপনিবেশ স্থাপনের ইতিবৃত্ত : উনিশ শতকের শেষ দশকে অর্থাৎ ১৮৮০ এর দশরে গ্র্যাম্বলের মাধ্যমে ইউরোপীয় শক্তিবর্গ আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপন করে তাদের মধ্যে প্রধান হচ্ছে ব্রিটেন। নিম্নে ব্রিটিশদের আফ্রিকায় উপনিবেশের ইতিবৃত্ত বা প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. পর্যটকদের বিবরণ : কলম্বাসের জলপথ আবিষ্কারের পর ইউরোপীয়রা পৃথিবীর সর্বত্র আবিষ্কারের নেশায় বেরিয়ে পড়ে এবং এরা ছিল পর্যটক শ্রেণির। এ পর্যটকগণ আফ্রিকার বিভিন্ন এলাকায় পরিভ্রমণ করে এবং আফ্রিকার প্রাকৃতিক সম্পদের বিবরণ সম্বলিত গ্রন্থ প্রকাশ করে। এ পর্যটকদের মধ্যে ছিলেন ডেভিড লিভিংস্টোন, রিচার্ড বার্টন, মনগোপার জন স্পেক প্রমুখ। এদের বিবরণ পড়ে ব্রিটিশ ব্যবসায়ী শ্রেণি আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপনে উৎসাহী হয়ে পড়ে এবং শাসক গোষ্ঠীকে চাপ প্রয়োগ করে। ফলে সরকারও তাঁর নীতি পরিবর্তন করে আফ্রিকা সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে পড়ে।
২. পুঁজিপতিদের উদ্ভব : অষ্টাদশ শতকে ব্রিটেনে শিল্পবিপ্লব সংঘটিত হয়। এ শিল্পবিপ্লব বলতে বুঝায় শিল্পকারখানায় ব্যাপক উৎপাদন। অষ্টাদশ শতকে আধুনিক শিল্পকারখানার যন্ত্র আবিষ্কারের ফলে শিল্পকারখানায় ব্যাপক উৎপাদন হতে থাকে। ফলে শিল্পকারখানার মালিক শ্রেণির হাতে প্রচুর অর্থ আসে। এ অর্থ আসার ফলে ব্রিটেনে ধনতন্ত্রী ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটে। ধনতন্ত্রের উদ্ভবের ফলে ব্যক্তি মালিকানা সম্পত্তির সৃষ্টি করে এবং পুঁজিপতিদের উত্থান ঘটে। ঠিক ব্রিটেনের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। শিল্পবিপ্লবের ফলে ব্রিটেনে পুঁজিপতি শ্রেণির উদ্ভবে তাদের হাতে প্রচুর অর্থ পুঞ্জীভূত হতে থাকে। পুঁজিবাদের বিস্তারই ধনতন্ত্রী সমাজের মূল লক্ষ্য। কিন্তু পুঁজিবাদের বিস্তার ইংল্যান্ডে আর সঙ্কট ছিল না। কারণ ব্যাংক ঋণ ছিল খুবই কম। অন্যদিকে, পুঁজির বিনিয়োগ ইংল্যান্ডে অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে ইংল্যান্ডের পুঁজিপতি শ্রেণি বিকল্প দেশ হিসেবে আফ্রিকায় তাদের পুঁজিবিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করে সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করে যাতে সরকার আফ্রিকায় সুযোগ করে দেয়। সরকার ও ব্যবসায়ী শ্রেণিকে সন্তুষ্ট করার জন্য আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়।
৩. ব্রিটিশ বুদ্ধিজীবী শ্রেণির প্রচারণা : আফ্রিকার ব্রিটিশ উপনিবেশ স্থাপনের পিছনে ব্রিটিশ বুদ্ধিজীবী শ্রেণির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এ সময় তাঁদের প্রচার ও প্রচারণা ব্রিটিশ সরকার ও জনগণকে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল। এ সময় ব্রিটিশ বুদ্ধিজীবী শ্রেণি প্রচারণা চালায় যে, “আফ্রিকায় ব্রিটিশ উপনিবেশ স্থাপন, বাজার তৈরি ও ব্যবসায় বাণিজ্য পরিচালনার মাধ্যমে শুধু ব্যবসায়ী শ্রেণিই নয়, সমাজের সকলেরই লাভ হবে। তাছাড়া আফ্রিকার উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করলে পুঁজিবাদ বিকশিত হবে। ফলে সরকারের আয় বৃদ্ধি পাবে। সরকার এ বাড়তি আয় দিয়ে অধিক সংখ্যক রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।” সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপনে ব্রিটিশ বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় বেশ উৎসাহ যুগিয়েছিল ।
৪. নতুন বাজার অনুসন্ধান : আফ্রিকায় ব্রিটিশ উপনিবেশ স্থাপনের পিছনে অন্যতম প্রেক্ষাপট ছিল ব্রিটিশ ব্যবসায়ী শ্রেণির নতুন বাজার অনুসন্ধান করা। ব্রিটেনে শিল্পবিপ্লবের মাধ্যমে প্রচুর শিল্পজাত দ্রব্য উৎপাদিত হয় এবং ব্রিটিশ চাহিদা পূরণের পর বিপুল পরিমাণ দ্রব্য উদ্বৃত্ত থাকে। এ উদ্বৃত্ত দ্রব্যসামগ্রী বিক্রয়ের জন্য নতুন বাজারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কারণ ইউরোপের অন্যান্য দেশেও শিল্পবিপ্লব সংঘটিত হয়। ফলে ব্রিটিশ পণ্যের চাহিদা ইউরোপের বাজারে তেমন ছিল না। এ অবস্থায় ব্রিটিশ পণ্য বিক্রির জন্য একমাত্র পথ খোলা ছিল আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপন করা ।
৫. কাঁচামালের প্রয়োজনীয়তা : শিল্পবিপবের ফলে ইংল্যান্ডের প্রচুর শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। এসব শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত হতো প্রচুর কাঁচামাল বিশেষকরে লোহা, সোনা, হীরা, ম্যাঙ্গানিজ, এলুমিনিয়াম, তামা, ইস্পাত, কার্পাস তুলা প্রভৃতি। কিন্তু এ কাঁচামাল ইউরোপে তেমন না থাকায় ব্রিটেনে কাঁচামালের অভাব দেখা দেয়। ফলে কাঁচামালের সন্ধানে ব্যবসায়ীরা বেরিয়ে পড়ে। শিল্পের জন্য প্রচুর কাঁচামাল আফ্রিকা মহাদেশে ছিল। তাই ব্যবসায়ী শ্রেণি আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপনে আগ্রহী হয়ে পড়ে এবং সরকারকে এ ব্যাপারে চাপ দেয় ।
৬. খ্রিস্টান মিশনারি জিল : খ্রিস্টান মিশনারি জিল হচ্ছে খ্রিস্টান মিশনারিদের আবেগ। ইউরোপীয় খ্রিস্টান মিশনারিগণ নিজেদেরকে সর্বদা সেরা জাতি ভাবত এবং তাদের ধর্মকে মনে করত সেরা ও শান্তির ধর্ম। তারা বলত, যীশুর বাণী হলো শান্তির বাণী এবং এ বাণী প্রচার করে পৃথিবীতে শান্তি আনতে হবে। তাঁদের মতে, খ্রিস্টান জগৎ হচ্ছে সভ্য পৃথিবীর অন্যান্য জগৎ বিশেষ করে আফ্রিকান জগৎ হচ্ছে অসভ্য জগৎ। তাই অসভ্য জগৎকে সভ্য করার দায়িত্ব তাদের। এ জিল বা আবেগ থেকে তাদের মনে ব্যবসায়ী শ্রেণির ন্যায় আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপনের চিন্তা প্রবেশ করে। তাই তারাও সরকারের উপর আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপনের জন্য চাপ প্রয়োগ করে।
৭. উগ্র জাতীয়তাবাদ : উনিশ শতকের ইউরোপের ইতিহাস উগ্র জাতীয়তাবোধের ইতিহাস। এ সময় ইউরোপীয় দেশসমূহ নিজেদেরকে সেরা জাতি ভাবতে শুরু করে এবং অন্যান্য জাতিকে নিম্ন জাতি মনে করতো। তাঁদের মতে, উন্নত ইউরোপীয় জাতি অন্যান্য অনুন্নত জাতিকে পরাভূত করবে এটাই নিয়ম। এ সময় ব্রিটেনেও উগ্র জাতীয়তাবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। ফলে তারা আফ্রিকায় ঔপনিবেশিক রাজ্য প্রতিষ্ঠার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ডিজরেলী স্বয়ং নিজ জাতিকে জাতীয় গৌরবে উদ্বুদ্ধ করে যাতে আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপন সহজ হয়।
৮. প্রযুক্তিগত আবিষ্কার : আফ্রিকায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক রাজ্য প্রতিষ্ঠার পিছনে আরেকটি প্রেক্ষাপট হচ্ছে ব্রিটিশ প্রযুক্তির উন্নতি ও কিছু বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের আবিষ্কার। এ সময় ব্রিটেনে রেলওয়ে, গানপাউডার, কুইনাইন, টেলিগ্রাফ, বাষ্পচালিত জাহাজ প্রভৃতি আবিষ্কার করা হয় যা আফ্রিকার উপনিবেশ স্থাপনের মূল সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, আফ্রিকায় ব্রিটিশ উপনিবেশ স্থাপনে উপর্যুক্ত কারণ বা প্রেক্ষাপটসমূহ দায়ী ছিল। ১৮৮০ এর দশকে অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের সাথে প্রতিযোগিতা করে ব্রিটেন আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপন করে এবং তারা প্রথম উপনিবেশ স্থাপন করে দক্ষিণ আফ্রিকায়। পরবর্তীতে অন্যান্য আফ্রিকায়ও ব্রিটিশ উপনিবেশ স্থাপিত হয়। ফলে তারা আফ্রিকায় বেশিরভাগ অঞ্চল দখল করে এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের তুলনায় আফ্রিকায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশের সংখ্যা বেশি ছিল। আফ্রিকায় ব্রিটিশ উপনিবেশ স্থাপনের পর সেখানে তাদের শাসনব্যবস্থা কায়েম করে প্রায় অর্ধশতক বছর রাজত্ব করেছিল।

আফ্রিকার দক্ষিণ অঞ্চলে ইউরোপীয় সাম্রাজ্যের বিস্তার বর্ণনা কর । অথবা, দক্ষিণ আফ্রিকায় ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদের বিস্তার আলোচনা কর।
অথবা, দক্ষিণ আফ্রিকায় উপনিবেশবাদ সম্পর্কে প্রবন্ধ লিখ ৷


উত্তরা৷ ভূমিকা : দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাস অত্যন্ত জটিল ইতিহাস। দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্ভবের পিছনে ওলন্দাজদের কথা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ওলন্দাজ নাবিক জ্যান ভ্যান রিবেক ১৬৫২ সালের ৬ এপ্রিল প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ উপদ্বীপে আসে এবং এখানে তিনি ওলন্দাজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গঠন করেন। এরপর ক্রমান্বয়ে এ অঞ্চলে ওলন্দাজদের সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং তাদের মধ্যে কিছুসংখ্যক লোক উপকূলভাগের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় এখানকার অধিবাসীদের সাথে ওলন্দাজদের কয়েকটি যুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং এসব যুদ্ধে ওলন্দাজগণ জয়লাভ করে এখানে আধিপত্য বিস্তার করে। এ সময় ইংরেজগণ এ অঞ্চলে এসে পড়ে এবং ১৭৯৫ সালে ব্রিটেন ওলন্দাজদের কাছ থেকে উত্তমাশা অন্তরীপ কেড়ে নেয়। ফলে শুরু হয় ব্রিটিশদের বসবাস এবং বিপুল সংখ্যক ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক দলে দলে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে বসতি স্থাপন করতে থাকে। এদিকে ইংরেজদের দখলনীতির ফলে ওলন্দাজগণ কেপ এলাকা ত্যাগ করে দেশের অভ্যন্তরভাগে 'ভাল' নদীর তীরবর্তী এলাকায় গিয়ে বসবাস করতে থাকে। ১৮৫২ সালে ওলন্দাজ অভিযাত্রীরা আধুনিক ট্রান্সভালে ‘দক্ষিণ আফ্রিকা গণতন্ত্র' নামে এক শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন করে এবং এর দু'বছর পরে প্রতিষ্ঠিত হয় তাদের অরেঞ্জ ফ্রি স্টেট। পরবর্তী প্রায় পঞ্চাশ বছর কাল এ অঞ্চলে ইংরেজগণ ও ওলন্দাজ বুয়ারদের মধ্যে নানা ব্যাপারে তীব্র বিরোধ চলতে থাকে। অবশেষে ১৮৭৭ সালে ইংরেজগণ বলপূর্বক ওলন্দাজদের দ্বারা শাসিত দক্ষিণ আফ্রিকা গণতন্ত্র দখল করে নেয় এবং পরবর্তীতে এ অঞ্চল দক্ষিণ আফ্রিকা নামে পরিচিত হয়।
দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিটিশ আগমন : তৎকালিন যুগে ব্রিটেন ছিল সবচেয়ে বৃহৎ শক্তিশালী ঔপনিবেশিক শক্তি। তারা পৃথিবীর সর্বত্র উপনিবেশ স্থাপন করলেও আফ্রিকায় কোন উপনিবেশ স্থাপন করে নি উনিশ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত। ব্রিটেনের শিল্পবিপ্লবের পর ব্যবসায়ী শ্রেণি তাদের পুঁজি বিনিয়োগ, কাঁচামাল সংগ্রহ ও বাজার প্রতিষ্ঠার জন্য বেরিয়ে পড়ে। এ সময় ব্রিটেন পর্যটকগণ আফ্রিকা ঘুরে এসে ব্রিটেনের ব্যবসায়ী শ্রেণিকে সেখানে ব্যবসায় বাণিজ্যের জন্য উৎসাহ
উপনিবেশবাদের কারণসমূহ লেখ।
, উপনিবেশবাদের কারণ সম্পর্কে লেখ।
উত্তরা ভূমিকা : ১৮৮০ এর দশকে আফ্রিকায় ক্র্যাম্বলের মাধ্যমে ইউরোপীয় শক্তিবর্গ প্রবেশ করে। পরবর্তী শকের মধ্যে সমগ্র আফ্রিকা দখল করে নিয়ে সেখানে তাদের উপনিবেশ স্থাপন করে। তবে ইউরোপীয়দের এ বশের পশ্চাতে কিছু কারণ ছিল অকারণে তারা উপনিবেশবাদের সূচনা করে নি।
উপনিবেশবাদের কারণ : উপনিবেশবাদের কারণ সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. পর্যটকদের বিবরণ : কলম্বাসের জলপথ আবিষ্কারের পর ভারতসহ আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে ইউরোপীয় গণ আগমন করে এবং তারা আফ্রিকার অফুরন্ত ধন-সম্পদের সন্ধান পায়। তাদের বর্ণনা ইউরোপীয়দের থেকে পীয়দের মধ্যে এ সম্পদ আহরণের স্পৃহা দেখা যায় ।
২. ধর্মান্তরিত করার লক্ষ্যে : আফ্রিকা ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ, একারণে এখানে সভ্যতার আলো দেখানো জন ছিল । এ সুযোগ নেয় মিশনারিরা। তারা আফ্রিকাতে সভ্যতার আলো দেখানোর পাশাপাশি সেখানকার মানুষকে রিত করার চেষ্টায়ও উপনিবেশবাদের সূচনা করে ।
৩. শিল্পের কাঁচামাল আহরণ : অষ্টাদশ শতকে ইংল্যান্ডে শিল্পবিল্পব হবার পর শিল্পকারখানায় প্রচুর দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদিত থাকে । অন্যদিকে ইংল্যান্ডের পর ইউরোপের অন্যান্য দেশেও শিল্পবিপ্লব সংঘটিত হয়। এর ফলে শিল্প কারখানার উদ্বৃত্ত দেন সামগ্রী বিক্রয়ের জন্য বাজারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় । এ প্রয়োজনীয়তা থেকেই উপনিবেশবাদের সূচনা হয়।
৪. উন্নত আৰিষ্কাৰ : উনিশ শতকে ইউরোপে রেলইঞ্জিন, বাম্পচালিত নৌকা, টেলিগ্রাফ, গান পাউডারসহ বিভি উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপনের বাহ্যিক কারণগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। প্রথমে ঔপনিবেশিক শাসকরা বাহ্যিক দিকগুলো ভেবেছিল। পরবর্তীতে তারা গভীরভাবে অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো নিয়ে
প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হয়। এ সমস্ত আবিষ্কার আফ্রিকায় উপনিবেশবাদের উত্থান করে।
ভেবেছিল এবং সে অনুযায়ী কাজ করেছিল।
প্রশ্ন৷৷১৪। উপনিবেশবাদের বাহ্যিক কারণ সম্পর্কে লেখ।
অথবা, উপনিবেশবাদের বাহ্যিক কারণ কী ছিল?
উত্তর ভূমিকা : সভ্যতার জন্মলগ্ন থেকেই পৃথিবী মূলত যুদ্ধবিগ্রহের ইতিহাস দ্বারা গঠিত। কেননা তখন থেকেই এক জাতি আরেক জাতির উপর আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টায় লিপ্ত। সেই প্রাচীনকাল হতে বর্তমান কাল পর্যন্ত। আধুনিক যুগের সূচনায় পৃথিবীর কর্তৃত্বের হাল দখল করে রেখেছে ইউরোপীয় দেশ এবং তখন থেকেই উপনিবেশবাদ কথাটির উদ্ভব।
উপনিবেশবাদের বাহ্যিক কারণ : উপনিবেশবাদের বাহ্যিক কারণ সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো : ১. ধন সম্পদের লোভ : কলম্বাসের জলপথ আবিষ্কারের পর ভারতবর্ষসহ আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে ইউরোপ পর্যটকগণ আগমন করে। এসময় বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে খনিজ সম্পদ দেখে আশ্চর্যান্বিত হয়ে যায়। তারা দেশে কিন্তু ইউরোপীয় সরকারকে ঔপনিবেশ প্রতিষ্ঠার জন্য উৎসাহিত করে।
২. খ্রিস্টান মিশনারীদের প্রভাব : সভ্যতার ছোঁয়াবিহীন অন্ধকারাচ্ছন্ন আফ্রিকাকে সভ্য জাতিতে পরিণত করা শিক্ষার আলো দান করার জন্য ইউরোপীয় খ্রিস্টানদের আফ্রিকায় প্রবেশ করতে দেখা যায় এবং তারা আফ্রিকায় প্রে করে খ্রিস্টধর্ম প্রচার করে আফ্রিকানদের ধর্মান্তরিত করে, যা উপনিবেশবাদে সহায়তা করে ।
৩. কাঁচামালের প্রয়োজনীয়তা : শিল্পের জন্য প্রয়োজন কাঁচামাল। আর আফ্রিকা ছিল এর অশেষ এক আদ কাঁচামালের এই প্রয়োজনীয়তা থেকেও উপনিবেশবাদের সূচনা হয়।
৪. উগ্র জাতীয়তাবাদ : উনিশ শতকের ইউরোপের ইতিহাস ছিল উগ্র জাতীয়তাবাদের ইতিহাস। এ জাতীয়তাবাদ থেকে ইউরোপীয়রা আফ্রিকায় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের চেষ্টা করে ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইউরোপীয়দের জন্য উপনিবেশবাদ ছিল এক লাভজনক পন্থা। কারণ এ মাধ্যমে অনেক কিছু তাদের হস্তগত হয়েছিল। পৃথিবীর প্রায় সব জায়গাতেই তারা ঔপনিবেশিক শাসনের সূচনা করেছিল
প্রশ্ন ১৫
উপনিবেশবাদের অভ্যন্তরীণ কারণ সম্পর্কে লেখ।
অথবা, উপনিবেশবাদের অভ্যন্তরীণ কারণ কী ছিল?
উত্তরা ভূমিকা : ১৮৮০ এর দশকে আফ্রিকাকে নিয়ে ইউরোপে ‘ক্র্যাম্বল ফর আফ্রিকা' সংঘটিত হয়।। মাধ্যমে আফ্রিকায় ইউরোপীয়দের উপনিবেশ স্থাপন করা হয়। কিন্তু এ উপনিবেশ স্থাপনের পশ্চাতে শুধু বাহ্যিক কার দায়ী ছিল না, অভ্যন্তরীণ কারণ ও দায়ী ছিল।
উপনিবেশবাদের অভ্যন্তরীণ কারণ : উপনিবেশবাদের অভ্যন্তরীণ কারণ সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো ১. ভূখণ্ডগত কৌশল : আফ্রিকায় ইউরোপীয়দের উপনিবেশ স্থাপনের অন্যতম কারণ ছিল আফ্রিকার ভূখ শিল। কারণ ভূখণ্ডগত দিক দিয়ে আফ্রিকা ছিল উপনিবেশের জন্য সুবিধাজনক। এর প্রধান মাধ্যম ছিল আফ্রি নারি অঞ্চল। আফ্রিকা সম্পর্কে অজ্ঞ থাকলেও মিশর ও সুয়েজখাল সম্পর্কে ইউরোপীয়দের ব্যাপক আগ্রহ ছিল।
২. দাস ব্যবসা : দাস ব্যবসায় ছিল অত্যন্ত লাভজনক, আফ্রিকাতে এর ভালো উৎস ছিল। এ দাস ব্যবসায় হতো অঞ্চলে। এ অঞ্চলে দালাল শ্রেণি ইউরোপীয়দের সাহায্য করতো। এ কারণেও উপনিবেশবাদের সূচনা ত্বরান্বিত হয় ৩. পোত্র বিভাজিত সমাজের দ্বন্দ্ব : আফ্রিকা ছিল বহু পূর্ব থেকেই গোত্র বিভাজিত। এ গোত্রের মধ্যে প্র ল লেগে থাকত। এর পূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করে ইউরোপীয়রা। তারা আফ্রিকানদের সাহায্যের নামে নিজে রিত্বের সূচনা করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আফ্রিকায় ইউরোপীয়দের উপনিবেশ স্থাপনের অভ্যন্তরীণ কারণও গুরুত্বপূর্ণ। আফ্রিকাতে উপনিবেশ স্থাপন করা ছিল লাভজনক। এসব কথা বিবেচনা করেই, ইউরোপ

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]