বাংলায় হুসেন শাহী শাসন ঃ আলাউদ্দিন হুসেন শাহ


বাংলায় হাবশী শাসনের অবসান ঘটিয়ে উজির সৈয়দ হুসেন ‘সুলতান আলউদ্দিন হুসেন শাহ' উপাধি ধারণ
করে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। আর এরই মাধ্যমে হাবশী শাসনের দুর্যোগময় অধ্যায়ের অবসান ঘটে।
সূচিত হয় শান্তি ও শৃং´খলার যুগ। হাবশী শাসনের ধারাবাহিকতায় ছিল সিংহাসন নিয়ে বিবাদ, ষড়যন্ত্র,
হত্যা ও প্রজাসাধারণের ওপর নির্মম অত্যাচার। বাংলার মুসলিম রাজ্যে এ ধরনের শোচনীয় অবস্থায়
প্রয়োজন ছিল একজন যোগ্য ও বিচক্ষণ ব্যক্তির। আলাউদ্দিন হুসেন শাহ অত্যন্ত যোগ্যতার সাথে এই
দায়িত্ব পালন করেন এবং শান্তি-শৃং´খলা পুন:প্রতিষ্ঠা করে তিনি বাংলার মুসলিম শাসনকে এক নবজীবন
দান করেন। ১৪৯৩ হতে ১৫৩৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই বংশের চারজন সুলতান বাংলায় রাজত্ব করেন। তাঁরা
ছিলেন আলাউদ্দিন হুসেন শাহ, নসরৎ শাহ, আলাউদ্দিন ফিরোজ শাহ ও গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ শাহ। তাঁদের
শাসনকালে দেশে শান্তি-শৃ´খলা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় সামরিক ক্ষেত্রে সাফল্য ও বাঙালি প্রতিভার বহুমুখী
বিকাশ সম্ভব হয়েছিল। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য পেয়েছিল বিশিষ্ট রূপ। ধর্মীয় সহিষ্ণুতার ফলে বাঙালি
জীবনে নবজাগরণের সূচনা হয়েছিল। আর এ সময়ই প্রচার ও প্রসার ঘটেছিল বৈষ্ণব ধর্মের। এক কথায়
বলা যায়, এ সময় বাংলার সার্বিক উন্নতি পরিলক্ষিত হয়েছিল। তাই হুসেন শাহী যুগকে বাংলার মুসলিম
শাসনের ইতিহাসে গৌরবোজ্জল যুগ বলা যেতে পারে।
সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহ
বাংলার মুসলিম সুলতানদের মধ্যে আলাউদ্দিন হুসেন শাহকেই সর্বশ্রেষ্ঠ মনে করা হয়। তাঁর খ্যাতি এ
দেশের ঘরে ঘরে জনস্মৃতিতে আজও অ¤øান। উড়িষ্যা হতে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত ভূ-ভাগে
তাঁর নাম সুপরিচিত। সুশাসনই তাঁর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করেছিল। তাছাড়া তিনি ছিলেন শ্রীচৈতন্য দেবের
সমসাময়িক। ফলে চৈতন্যের সাথে তাঁর নামও বাঙালি স্মৃতিতে পেয়েছে স্থায়ী আসন।
বাংলার অন্যান্য সুলতানদের মত আলাউদ্দিন হুসেন শাহের প্রামাণিক ইতিহাস পাওয়া যায় না। তাঁর
শাসনকালের বেশ কিছু সংখ্যক লিপি পাওয়া গেছে। তবে সমসাময়িক লেখনিতে তাঁর রাজত্বকাল সম্বন্ধে
কেবল ইতস্তত বিক্ষিপ্ত তথ্য পাওয়া যায়। আরবি, ফার্সি, বাংলা, সংস্কৃত, উড়িয়া, অসমিয়া, পর্তুগিজ প্রভৃতি
ভাষায় লেখা বিভিন্ন সূত্রে আলাউদ্দিন হুসেন শাহ সম্বন্ধে খন্ড খন্ড তথ্য পাওয়া যায়। পরবর্তীকালের লেখা
ফার্সি ইতিহাসেও কিছু কিছু তথ্য আছে, তবে এগুলোর মধ্যে একমাত্র রিয়াজ-উস-সালাতীনে রয়েছে কিছুটা
বিস্তৃত ও ধারাবাহিক বিবরণ। সমসাময়িক বাংলা সাহিত্য বিশেষ করে চৈতন্য জীবনী গ্রন্থসমূহে আলাউদ্দিন
হুসেন শাহ সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায় তথ্য। তাছাড়া উড়িষ্যার মাদলাপঞ্জি, আসামের বুরঞ্জী এবং ত্রিপুরার



রাজমালায় ঐসব দেশের সাথে হুসেন শাহের যুদ্ধের কিছু বিবরণ রয়েছে। তবে এর কোনটিই সমসাময়িক
নয় এবং এদের বর্ণনায় পক্ষপাত সুস্পষ্ট। আলাউদ্দিন হুসেন শাহের রাজত্বকালেই পর্তুগিজরা প্রথম বাংলায়
পদার্পন করেন। ফলে কয়েকজন পর্তুগিজ পর্যটকের ভ্রমণ বৃত্তান্তে এবং জোয়া দ্য ব্যারোস প্রমুখ পর্তুগিজ
ঐতিহাসিকদের লেখনিতেও তাঁর সম্বন্ধে কিছু কিছু তথ্য পাওয়া যায়। মোটামুটিভাবে এসব সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য
হতেই আলাউদ্দিন হুসেন শাহের ইতিহাস পুনরুদ্ধার করা যায়। তবে তা কষ্টসাধ্য এবং স্থানে স্থানে কিছু
অস্পষ্টতা রয়েছে।
আলাউদ্দিন হুসেন শাহের বাল্যজীবন ও ক্ষমতা লাভ সম্বন্ধে তেমন স্পষ্ট কিছু জানা যায় না। বিভিন্ন সূত্রে
যে সব তথ্য আছে তার ওপর ভিত্তি করে আধুনিক পন্ডিতগণ বিভিন্ন মতবাদের অবতারণা করেছেন।
রিয়াজ-উস-সালাতীনের লেখক সলিমের মতে হুসেন শাহ তাঁর পিতা সৈয়দ আশরাফুল হোসেন ও ভ্রাতা
ইউসুফের সাথে সুদূর তুর্কিস্থানের তিরমিজ শহর থেকে আসেন এবং রাঢ়ের চাঁদপাড়া মৌজায় বসতি স্থাপন
করেন। সেখানকার কাজি তাঁদের দুই ভাইকে শিক্ষা দেন এবং তাঁদের উচ্চবংশ মর্যাদার কথা শুনে হুসেনের
সাথেতার নিজ কন্যার বিয়ে দেন। হুসেন বাংলার রাজধানী গৌড়ে যান এবং মুজাফ্ফর শাহের অধীনে
চাকুরি গ্রহণ করেন। নিজ যোগ্যতায় তিনি পরবর্তীকালে উজির পদে উন্নীত হন। সলিম ও ফিরিস্তা তাঁদের
লেখায় হুসেনকে ‘সৈয়দ' বলে উল্লেখ করেন এবং মনে করা হয় যে, তাঁরা আরবের অধিবাসী ছিলেন। লিপি
ও মুদ্রায় হুসেনের আরব ও সৈয়দ বংশের সাথে সম্বন্ধ প্রমাণিত হয়। বাল্যজীবনে চাঁদপাড়ার সাথে তাঁর
সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া যায় মুর্শিদাবাদ জেলার বহুল প্রচলিত কিংবদন্তীতে। মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গীপুর
মহকুমার ‘একানি চাঁদপাড়া' (বা চাঁনপাড়া) গ্রামের আশেপাশে হুসেন শাহের রাজত্বকালের বেশ কয়েকটি
লিপি আবিষ্কৃত হয়েছে। মুর্শিদাবাদে প্রচলিত কিংবদন্তী অনুসারে হুসেন বাল্যকালে চাঁদপাড়া গ্রামের এক
ব্রাহ্মণের বাড়িতে রাখালের কাজ করতেন এবং পরবর্তীকালে সুলতান হয়ে তিনি ঐ ব্রাহ্মণকে মাত্র এক
আনা করের বিনিময়ে চাঁদপাড়া গ্রামখানি ভোগ করার অধিকার দিয়েছিলেন। এখনও এই গ্রামের নাম
একানি চাঁদপাড়াÑ যা এই কাহিনীর সত্যতা প্রমাণ করে।
চাঁদপাড়া হতে হুসেন গৌড়ে যান এবং সেখানে চাকুরি গ্রহণ করেন। কৃষ্ণদাস কবিরাজ রচিত
‘চৈতন্যচরিতামৃত' গ্রন্থে এ সম্বন্ধে অন্য এক কাহিনীর অবতারণা করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে রাজ
সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হবার অনেক আগে সৈয়দ হুসেন ‘গৌড় অধিকারী' (উচ্চ রাজকর্মচারী) সুবুদ্ধি রায়ের
অধীনে চাকুরি করতেন। সুবুদ্ধি তাঁকে একটি দীঘি খননের কাজে নিয়োগ করেন এবং কাজে ত্রুটির জন্য
তাঁকে বেত্রাঘাত করেন। পরে সৈয়দ হুসেন সুলতান হয়ে সুবুদ্ধি রায়ের পদমর্যাদা বৃদ্ধি করেন। কিন্তু স্ত্রীর
প্ররোচণায় তিনি সুবুদ্ধি রায়ের জাতি নাশ করেন। এই কাহিনীর সত্যতা যাচাই করা সম্ভব নয়। তবে গৌড়ে
সুবুদ্ধি রায়ের অধীনে চাকুরি গ্রহণ মোটেই অস্বাভাবিক নয়।
ধারণা করা হয় যে, সামান্য চাকুরি হতে হুসেন নিজ যোগ্যতা বলে উচ্চ রাজপদে উন্নীত হন এবং খুব
সম্ভবত হাবশী সুলতান মুজাফ্ফর শাহের রাজত্বকালে তিনি উজির পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। গোলাম হোসেন
সলিম ও নিজামউদ্দিন আহমেদ বখ্শী তাঁকে উজির বলেই উল্লেখ করেছেন। মুজাফ্ফর শাহের হত্যার সাথে
তিনি জড়িত ছিলেন বলে ধারণা করা হয়। তবে তাঁর ভূমিকা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা করা কঠিন। খুব সম্ভবত
মুজাফফর শাহের মৃত্যুর পর রাজ্যের অমাত্যগণ মিলিত হয়ে হুসেন শাহকে সুলতান মনোনীত করেন।
আলাউদ্দিন হুসেন শাহের ছাব্বিশ বৎসর রাজত্বকালে বাংলায় মুসলিম রাজ্যের সীমা চারিদিকে ব্যাপক
বিস্তৃতি লাভ করে। তবে সাম্রাজ্য বিস্তারে মনোনিবেশ করার পূর্বে হুসেন শাহ অল্প সময়ের মধ্যেই রাজ্যে
পূর্ণ শান্তি ও শৃ´খলা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। এছাড়া অরাজকতা সৃষ্টিকারী সৈন্য দলকেও তিনি কঠোর
হস্তে দমন করেন। ইতোপূর্বে বিভিন্ন সুলতানের হত্যাকান্ডে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল দেহরক্ষী
পাইকদল। তাই হুসেন শাহ পাইকদের দল ভেঙ্গে দিয়ে নতুন এক রক্ষী বাহিনী গঠন করেন। সে সাথে
হাবশীদেরও তিনি রাজ্য হতে বিতাড়িত করেন এবং তাদের পরিবর্তে সৈয়দ, মোঙ্গল, আফগান ও হিন্দুদের
উচ্চ রাজপদে নিযুক্ত করেন। এছাড়া রাজ্যে শৃ´খলা ও শান্তি বিধানের উদ্দেশ্যে তিনি নিয়োগ করেন
অভিজ্ঞ রাজকর্মচারী।


অভ্যন্তরীণ শান্তি ও শৃ´খলা পুন:স্থাপন করে সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহ রাজ্য সীমা সম্প্রসারণের দিকে
মনোনিবেশ করেন। এক্ষেত্রে সিকান্দার লোদির সাথে সন্ধি ও উত্তর বিহার অধিকার ছিল তাঁর প্রথম
পদক্ষেপ। সিংহাসন আরোহণের দুই বৎসরের মধ্যেই হুসেন শাহ দিল্লির সুলতান সিকান্দর লোদির সাথে
সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। ১৪৯৪ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির সুলতান সিকান্দার লোদি ও জৌনপুরের শর্কী শাসক
হোসেন শাহ শর্কীর সংঘর্ষ চরমে পৌঁছে এবং দিল্লির সুলতান হোসেন শাহ শর্কীকে বেনারসের যুদ্ধে
সম্পূর্ণরূপে পরাজিত করেন। হোসেন শাহ শর্কী পরাজিত হয়ে বাংলা অভিমুখে পলায়ন করেন। বংলার
সুলতান হুসেন শাহ শর্কী সুলতানকে উপযুক্ত সম্মানের সাথে অভ্যর্থনা জানান। তিনি তাঁকে রাজনৈতিক
আশ্রয় দেন এবং ভাগলপুরের কাছে কহলগাঁও-এ থাকার ব্যবস্থা করেন। হুসেন শাহ সম্ভবত মনে
করেছিলেন যে, জৌনপুর রাজ্য দিল্লি ও বাংলার মধ্যে ব্যবধান হিসেবে থাকলে তাঁর পক্ষে মঙ্গলকর হবে।
জৌনপুরের শাসকদের প্রতি আলাউদ্দিন হুসেন শাহের এই মিত্রতাসূলভ আচরণে সিকান্দর লোদি অত্যন্ত
ক্ষুব্ধ হন। এক্ষেত্রে তিনি ১৪৯৫ খ্রিস্টাব্দে মাহমুদ খান লোদি এবং মুবারক খান লোহানীর নেতৃত্বে হুসেন
শাহের বিরুদ্ধে এক সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন। হুসেন শাহও এই আক্রমণ বাধা দেবার জন্য তাঁর পুত্র
দানিয়েলের নেতৃত্বে এক সেনাবাহিনী পাঠান।
বিহারের বারহ নামক স্থানে (পাটনার পূর্বাঞ্চল) দুই পক্ষ পরস্পরের সম্মুখীন হন। কিন্তু কোন যুদ্ধ ছাড়াই
শেষ পর্যন্ত সন্ধি স্থাপন করে উভয় পক্ষ স্ব স্ব রাজ্যে ফিরে যান। সন্ধির সময় হুসেন শাহের পক্ষে দানিয়েল
প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, সিকান্দর শাহের শত্রুকে ভবিষ্যতে আর বাংলায় আশ্রয় দেয়া হবে না। কিন্তু
পরবর্তী ঘটনাবলি থেকে বোঝা যায়, এই শর্ত পালিত হয়নি। সারণ ও মুঙ্গেরে আবিষ্কৃত হুসেন শাহের
শিলালিপি থেকে জানা যায়, হুসেন শাহ সমগ্র উত্তর বিহার ও দক্ষিণ বিহারের কিছু অংশ দখল করেছিলেন।
সম্ভবত সিকান্দর লোদির সাথে সন্ধির শর্তানুসারে অথবা সিকান্দর লোদির সৈন্যবাহিনীর প্রত্যাবর্তনের পর
যুদ্ধ করে তিনি এই এলাকাসমূহ দখল করেন। তবে এই বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত করা সম্ভব নয়।
পশ্চিম সীমান্তের ভয় দূরীভূত হলে হুসেন শাহ পূর্ব সীমান্তে রাজ্য বিস্তারে সচেষ্ট হন। হুসেন শাহ তাঁর
রাজত্বের প্রথম বৎসর হতেই মুদ্রায় নিজেকে কামরূপ, কামতা, জাজনগর ও উড়িষ্যা বিজয়ী বলে ঘোষণা
করেছিলেন। মুদ্রায় এই উল্লেখ একথা স্পষ্টই প্রমাণ করে যে হুসেন শাহ প্রথম থেকেই রাজ্যজয়ের
পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। এই উল্লেখযুক্ত মুদ্রাই তাঁর রাজত্বকালে বিভিন্ন সময় জারি করা হয়েছে। ৯২৪
হিজরি/ ১৫৯৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মুদ্রায় এরই উল্লেখ দেখা যায়। সপ্তদশ শতাব্দীতে রচিত ‘বাহারিস্তান-ইগায়বী' গ্রন্থে কামরূপ ও কামতা রাজ্যদ্বয়ের ভৌগোলিক অবস্থানের পরিচয় পাওয়া যায়। কামরূপ রাজ্যের
পূর্বসীমা ছিল ব্রহ্মপুত্র নদ এবং পশ্চিমসীমা ছিল বনসা বা মনসা নদী। কামতা রাজ্য বনসা হতে শুরু হয়ে
করতোয়া নদী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। খেন বংশীয় তৃতীয় রাজা নীলাম্বর সামরিক বিজয় দ্বারা রাজ্য দুটি
একত্রিত করেছিলেন। পূর্বে বরনদী হতে পশ্চিমে করতোয়া পর্যন্ত এক বিশাল ভূ-খন্ডের তিনি ছিলেন
একচ্ছত্র অধিপতি। হাবশী শাসনকালে খেনরাজগণ করতোয়ার পূর্ব তীরস্থ অঞ্চলেও প্রভাব বিস্তার
করেছিলো। এমনকি বাংলার মুসলিম রাজ্যের পূর্ব সীমান্তবর্তী ঘোড়াঘাট ও কান্তাদুয়ারও তাঁদের অধিকারে
ছিল। সুতরাং পূর্ব সীমান্তের এই শক্তিশালী শত্রুর বিরুদ্ধে আলাউদ্দিন হুসেন শাহের যুদ্ধে লিপ্ত হওয়াটাই ছিল
স্বাভাবিক।
বাংলার মুসলিম রাজ্যের সাথে কামরূপের সংঘর্ষ কোন নতুন ঘটনা নয়। মুসলিম রাজ্যের প্রাথমিক যুগ
থেকেই এই সংঘর্ষ চলে আসছিল। প্রচলিত কিংবদন্তীতে হুসেন শাহ এই বিজয়ে নীলাম্বরের মন্ত্রী কর্তৃক
প্ররোচিত হয়েছিলেন বলে উল্লেখ আছে। এই সংঘর্ষে হুসেনের সাফল্য সম্বন্ধে প্রায় সব সূত্রই একমত।
তবে কোন কোন সূত্রে উল্লেখ আছে যে, মুসলমানদের জয় হয়েছিল বিশ্বাসঘাতকাতর মাধ্যমে। মনে হয়
দীর্ঘকাল অবরোধের পর হুসেন শাহ জয় লাভ করেন এবং কামতাÑকামরূপ বাংলার মুসলিম রাজ্যের
অন্তর্ভুক্ত হয় এবং দানিয়েলের ওপর অর্পণ করা হয় বিজিত রাজ্যের শাসনভার। অসমীয়া বুরঞ্জীতে তাঁকে
দুলাল গাজি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। খুব সম্ভবত দানিয়েলের বিকৃত রূপই দুলাল গাজি। হুসেন শাহের
রাজত্বকালে কামরূপে মুসলমান অধিকার বজায় ছিল। কারণ আসমীয়া বুরঞ্জীর মতে পরবর্তী সুলতান নসরৎ


শাহের রাজত্বকালে কামরূপ রাজ্য বাংলার সুলতানের অধিকারে ছিল এবং সেখান থেকে আসামে অভিযান
পরিচালনা করা হয়েছিল।
মীর্জা মুহম্মদ কাজিমের ‘আলমগীর নামা', শিহাবউদ্দিন তালিশের ‘তারিখ-ফত-ই আসাম' (অথবা ফত্হিয়াই-ইব্রিয়া) ও গোলাম হোসেন সলিমের রিয়াজ-উস-সালাতীন' গ্রন্থে হুসেন শাহ কর্তৃক আসাম অভিযানের
উল্লেখ আছে। অসমীয়া বুরঞ্জীতেও এর সমর্থন পাওয়া যায়। ধারণা করা হয় যে, হুসেন শাহ কামরূপ
বিজয়ের পর ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় অভিযান প্রেরণ করেছিলেন। এই বাহিনীর সাথে প্রেরণ করা হয়েছিল এক
বিশাল অশ্বারোহী, পদাতিক সেনাবাহিনী এবং নৌবাহিনী। আসামের রাজা তাঁকে বাধা না দিয়ে সমতল
অঞ্চল ত্যাগ করে পার্বত্য অঞ্চলে চলে যান। হুসেন শাহ সমতল অঞ্চলে পুত্র দানিয়েলকে (দুলাল গাজি)
রেখে ফিরে আসেন। কিন্তু বর্ষার আগমনের সাথে সাথেই আসাম রাজ্য পাল্টা আক্রমণ করে। বর্ষাকালে
সমগ্র অঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় মুসলমান সৈন্যদল বিপদের সম্মুখীন হলে আসামরাজ এই সৈন্যদলকে পরাজিত
করেন এবং স্বরাজ্য হতে বিতাড়িত করেন। মোটামুটিভাবে বিভিন্ন সূত্রের ভিত্তিতে এটাই মনে হয় যে,
প্রাথমিক সাফল্যের পর হুসেন শাহের আসাম অভিযান শোচনীয় ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছিল। আসামের
হুসেনশাহী পরগণা নামে পরিচিত একটি অঞ্চল এখনও হুসেন শাহের স্মৃতি বহন করছে।
কামরূপ ও আসামের বিরুদ্ধে অভিযানের সঠিক তারিখ নির্ণয় করা কষ্টসাধ্য। ৮৯৯ হি:/১৪৯৪ খ্রি: হতে
৯২৪ হি:/১৫১৮ খ্রি: পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বিভিন্ন সময় উৎকীর্ণ মুদ্রায় কামরূপ-কামতা ও উড়িষ্যাÑ
জাজনগর জয়ের উল্লেখ আছে। তাই সিদ্ধান্ত করা হয় যে, ১৪৯৪ খ্রি: হতে আসাম অভিযান শুরু হয় এবং
খুব সম্ভবত ১৪৯৮ খ্রি: পর্যন্ত এই অভিযান চলে।
মুদ্রার উল্লেখ থেকে জানা যায় যে, উড়িষ্যার সাথেও হুসেন শাহের সংঘর্ষ হয়েছিল। ষোড়শ শতাব্দীতে
পর্তুগিজ ভ্রমণকারী বারবোসা এই সংঘর্ষের কথা উল্লেখকরেছেন। রিয়াজ ও বুকাননের পান্ডুলিপিতে এবং
সমসাময়িক বাংলা সাহিত্যে, বিশেষ করে বৃন্দাবন দাসের লেখনিতে, এই সংঘর্ষের উল্লেখ পাওয়া যায়।
উড়িষ্যার মাদলা পঞ্জিকায় ১৫০৯ খ্রিস্টাব্দে উড়িষ্যা গৌড়ের মুসলিম সেনা কর্তৃক আক্রান্ত হওয়ার উল্লেখ
পাওয়া যায়। সমসাময়িক উড়িষ্যারাজ প্রতাপরুদ্রদেব ছিলেন শক্তিশালী রাজা। তাঁর রাজত্বকালের ১৫১০
খ্রিস্টাব্দের এক লিপিতে মুসলিমরাজ কর্তৃক হৃত রাজ্যের পুনরুদ্ধারের উল্লেখ হুসেন শাহের আক্রমণের
কথাই প্রমাণ করে। তবে হুসেন শাহের সাফল্য দীর্ঘস্থায়ী হয়েছিল কিনা সে বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা
সম্ভব নয়। তবে ক্ষণস্থায়ী সাফল্য যে হয়েছিল সে বিষয়ে তেমন কোন সন্দেহ নেই।
হুসেন শাহ এবং ত্রিপুরার রাজার মধ্যেও অনেকদিন ধরে চলেছিল যুদ্ধ-বিগ্রহ। ত্রিপুরার রাজাদের ইতিহাস
‘রাজমালায়' এই সংঘর্ষের উল্লেখ রয়েছে। কখন হতে প্রকৃতপক্ষে ত্রিপুরার সাথে হুসেন শাহের যুদ্ধ শুরু হয়
সে বিষয়ে সঠিক ধারণা করা সম্ভব নয়। তবে সোনারগাঁওÑএ প্রাপ্ত হুসেন শাহের এক শিলালিপি থেকে
জানা যায় যে, ১৫১৩ খ্রিস্টাব্দের পূর্বেই তিনি ত্রিপুরার কিয়দংশ জয় করেছিলেন। এই লিপিতে হুসেন
শাহের কর্মচারী খওয়াস খানকে ত্রিপুরার ‘সর-ই লস্কর' (সামরিক প্রশাসক) বলা হয়েছে। কবীন্দ্র পরমেশ্বর
তাঁর মহাভারতে হুসেন শাহ কর্তৃক ত্রিপুরা জয়ের কথা উল্লেখ করেছেন। শ্রীকর নন্দীও লিখেছেন যে, তাঁর
পৃষ্ঠপোষক হুসেন শাহের অন্যতম সেনাপতি ছুটি খান ত্রিপুরার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে সাফল্য অর্জন করেছিলেন।
রাজমালায় হুসেন শাহ এবং ত্রিপুরারাজ ধান্য মানিক্যের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষের উল্লেখ পাওয়া যায়।
গৌড় মল্লিক ও হাতিয়ান খানের অধীনে প্রেরিত অভিযান ত্রিপুরা বাহিনী কর্তৃক বিতাড়িত হয়। তবে
পরবর্তীকালের অভিযান যে সাফল্য লাভ করেছিল তা লিপি প্রমাণ হতে নি:সন্দেহে বলা যায়।
এমনও হতে পারে যে, ত্রিপুরার বিরুদ্ধে সাফল্য চট্টগ্রামের আধিপত্য নিয়ে গৌড়, ত্রিপুরা ও আরাকান
রাজের মধ্যে সংঘর্ষের সাথে জড়িত ছিল। রাজমালা হতে জানা যায় যে, ধান্য মানিক্য কিছুকালের জন্য
চট্টগ্রামের ওপর আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন।এতে আরাকানরাজ কর্তৃক স্বল্প সময়ের জন্য চট্টগ্রাম
দখলেরও উল্লেখ আছে। তবে চট্টগ্রামে স্থায়ীভাবে হুসেন শাহের অধিকারেরও বহু প্রমাণ রয়েছে সমসমায়িক
বাংলা সাহিত্য ও অন্যান্য সূত্রে। আর তাই মনে হয় যে, চট্টগ্রাম অধিকারকে কেন্দ্র করে হুসেন শাহের সাথে
ত্রিপুরা ও আরাকানের রাজাদের সংঘর্ষ হয়েছিল। চট্টগ্রামের অবস্থিতি এবং বাণিজ্যিক কারণে এই সংঘর্ষ
ছিল খুবই স্বাভাবিক। তবে নি:সন্দেহে বলা যায় যে, আরাকান ও ত্রিপুরা রাজাদের চট্টগ্রামের ওপর অধিকার


খুবই ক্ষণস্থায়ী ছিল এবং ১৫১৭ হতে ১৫৩৮ খ্রি: পর্যন্ত সময়ে চট্টগ্রামের ওপর হুসেন শাহী শাসকদের
অধিকার ছিল অক্ষুন্ন। হুসেন শাহের পুত্র নসরৎ শাহ এবং খুব সম্ভবত পরবর্তীকালে পরাগল খান ও তাঁর
পুত্র ছুটি খান আরাকানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সাফল্য অর্জন করেন। পরাগল খান ও ছুটি খান চট্টগ্রামের
শাসনকর্তা ছিলেন। পর্তুগিজ দূত জাও-দা সিলভেরিওর উক্তি অনুসারে মনে হয় যে, ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দে
হুসেন শাহ চট্টগ্রাম অধিকার করেছিলেন। জোয়া দ্য ব্যারোস উল্লেখ করেছেন যে, আরাকানরাজ
গৌড়রাজের অধীন সামন্ত রাজা ছিলেন।
হুসেন শাহ তাঁর সুদীর্ঘ রাজত্বকালে সামরিকক্ষেত্রে যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছিলেন। তিনি কামতাপুরের
খেন রাজ্য ধ্বংস করেন। উড়িষ্যা ও ত্রিপুরা রাজ্যের কিয়দংশে অধিকার বিস্তার করেন। উত্তর বিহার ও
দক্ষিণ বিহারের অংশবিশেষে তাঁর আধিপত্য ছিল। চট্টগ্রামের অধিকার নিয়ে আরাকান ও ত্রিপুরারাজের
বিরুদ্ধেও তিনি লাভ করেছিলেন সাফল্য।একমাত্র অহোম রাজ্যের বিরুদ্ধেই তিনি ব্যর্থতার সম্মুখীন হন। এ
কথা বললে ভুল হবে না যে, বাংলার স্বাধীন সুলতানি আমলে তাঁর রাজত্বকালেই বাংলার মুসলিম রাজ্যের
শৌর্যবীর্য সর্বাপেক্ষা অধিক উদ্যম পেয়েছিল।
সোনারগাঁও-এর গোয়ালদী মসজিদে প্রাপ্ত শিলালিপি থেকে প্রমাণিত হয় যে, ৯২৫ হি:/ ১৫১৯ খ্রি: পর্যন্ত
আলাউদ্দিন হুসেন শাহ রাজত্ব করেন। ঐ একই বৎসর হতে তাঁর পুত্র নসরৎ শাহের মুদ্রা পাওয়া যায়।
সুতরাং নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, ১৪৯৩ খ্রি: হতে ১৫১৯ খ্রি: পর্যন্ত দীর্ঘ ২৬ বৎসর সাফল্যজনক রাজত্বের
পর হুসেন শাহের মৃত্যু হয়। বাবরের আতœকাহিনী হতে জানা যায় যে, তাঁর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল।
হুসেন শাহ সাধারণ অবস্থা থেকে নিজ ক্ষমতাবলে রাজসিংহাসন অধিকার করেন। যুদ্ধ-বিগ্রহ অত্যাচার ও
অনাচারের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে তিনি রাজ্যে শান্তি ও শৃ´খলা স্থাপন করেছিলেন। যদিও তাঁর রাজত্বকালের
বেশির ভাগ সময় কেটেছিল যুদ্ধ-বিগ্রহে। তথাপি এতে দেশের শান্তি ব্যাহত হয়নি। বরং এটি তাঁর সুষ্ঠু
শাসনব্যবস্থারই পরিচায়ক। সুশাসক হিসেবে আলাউদ্দিন হুসেন শাহ তাঁর রাজত্বের প্রথমদিকেই যে খ্যাতি
অর্জন করেছিলেন সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। বিজয় গুপ্ত কর্তৃক ১৪৯৪-৯৫ খ্রিস্টাব্দে রচিত মনসাঙ্গমল
কাব্যে হুসেন শাহের শাসনের উচ্ছ¦সিত প্রশংসা করা হয়েছে এবং তাঁকে ‘নৃপতি তিলক' বলে আখ্যায়িত
করা হয়েছে।
শাসনক্ষেত্রে হুসেন শাহ যে উদার ধর্মীয় নীতি অবলম্বন করেছিলেন তা বিভিন্ন উচ্চ রাজপদে হিন্দু
কর্মচারীদের নিয়োগ হতে বোঝা যায়। রাজকর্মচারীদের নিয়োগে তিনি নি:সন্দেহে ধর্ম অপেক্ষা যোগ্যতার
সম্মান দিয়েছেন।তাঁর রাজ্যের উজির ছিলেন পুরন্দর খান। গৌড় মল্লিক নিযুক্ত হয়েছিলেন ত্রিপুরা অভিযানে
সেনাপতি। রূপ ও সনাতন দুই ভাই ছিলেন তাঁর অত্যন্ত প্রিয় কর্মচারী। রূপ ছিলেন ‘সাকর মল্লিক' (মন্ত্রী
বিশেষ) ও সনাতন ছিলেন ‘দবীর খাস' (ব্যক্তিগত কর্মাধ্যক্ষ)। মুকুন্দ দাস ছিলেন তাঁর প্রধান চিকিৎসক।
তাঁর দেহরক্ষী ছিলেন কেশবছত্রী। অনুপ ছিলেন মুদ্রাশালার অধ্যক্ষ। দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলায় স্থানীয় ভুস্বামী
ছিলেন রামচন্দ্র খান। হিরণ্য দাস ও গোবর্ধন দাসের পরিবারের অবস্থাও ছিল অনুরূপ। জগাই ও মাধাই
নবদ্বীপের কোতওয়াল ছিলেন। হুসেন শাহের অধীনস্থ শাসনকর্তাগণও হিন্দু কবি ও সাহিত্যিকদের
পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। বাংলা ভাষায় মহাভারত প্রণেতা কবীন্দ্র পরেমশ্বর ও শ্রীকর নন্দী চট্টগ্রামের
শাসনকর্তা পরাগল খান ও ছুটি খানের পৃষ্টপোষকতা লাভ করেছিলেন।
হুসেন শাহ কর্তৃক সুবুদ্ধি রায়ের প্রতি আচরণ, উড়িষ্যা অভিযানকালে হিন্দু মন্দির ধ্বংস এবং জয়ানন্দ
কর্তৃক নবদ্বীপের হিন্দুদের প্রতি হুসেন শাহের নির্মম আচরণের উল্লেখ করে অনেক ঐতিহাসিক হুসেন
শাহের হিন্দু বিরোধী মনোভাবের কথা বলেছেন। কিন্তু এই সব ঘটনার প্রত্যেকটির পিছনেই ছিল কোন না
কোন কারণ। স্ত্রীর প্ররোচনায় সুবুদ্ধি রায়কে শাস্তি দান, রাজ্য জয়কালে হিন্দু মন্দির ধ্বংস এবং
রাজদ্রোহিতার অপরাধে নবদ্বীপের হিন্দুদের প্রতি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা অস্বাভাবিক নয়। সুতরাং এ সব
ঘটনাকে ধর্মীয় নীতির পরিচায়ক বলা বোধহয় যুক্তি সঙ্গত হবে না। উচ্চ রাজপদে হিন্দু কর্মচারী নিয়োগ
নিশ্চয়ই তাঁর ধর্মীয় উদারতার পরিচয় বহন করে। বৃন্দাবন দাস ও কৃষ্ণ দাস কবিরাজের লেখনিতে স্পষ্ট
প্রমাণ পাওয়া যায় যে, হুসেন শাহ শ্রী চৈতন্য দেবকে যথেষ্ট সম্মান করতেন এবং তিনি চৈতন্য দেবকে


অবতার বলে মনে করতেন। চৈতন্য দেবের গৌড় আগমনের সময় হুসেন শাহ তাঁর কর্মচারীদের তাঁর প্রতি
সম্মান প্রদর্শন ও সহযোগিতা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। হিন্দুদের প্রতি হুসেন শাহের উদারতাই
বিভিন্ন হিন্দু লেখককে তাঁকে ‘নৃপতিতিলক', ‘জগৎভ‚ষণ', ‘কৃষ্ণাবতার' প্রভৃতি উপাধিতে ভ‚ষিত করতে
প্রবুদ্ধ করেছিলেন।
হুসেন শাহ আরবি ও ফার্সি সাহিত্যের সাথে বাংলা সাহিত্যেরও পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন। বিজয় গুপ্ত,
বিপ্রদাস ও যশোরাজ খান পরম শ্রদ্ধার সাথে তাঁর নাম স্মরণ করেন। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে,
পরাগল খান ও ছুটি খানের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে কবীন্দ্র পরমেশ্বর ও শ্রীকর নন্দী বাংলা ভাষায়
মহাভারত প্রণয়ন করেছিলেন। সুতরাং আলাউদ্দিন হুসেন শাহের উদারনীতি সম্পর্কে সন্দেহের কোন
অবকাশ নেই।
হুসেন শাহ ছিলেন নিষ্ঠাবান মুসলমান। তিনি মালদহে একটি বিরাট মাদ্রাসা নির্মাণ, পান্ডুয়াতে নূর-কুতুবই-আলমের দরগাহ্তে বহু সম্পত্তি ও অর্থ দান করেন এবং একটি মসজিদ নির্মাণ করান। কথিত আছে যে,
প্রতি বৎসর তিনি পায়ে হেটে রাজধানী একডালা হতে পান্ডুয়াতে এসে এই সুফির দরগাহে সম্মান প্রদর্শন
করতেন। স্থাপত্যক্ষেত্রেও হুসেন শাহের অবদান রয়েছে। ইলিয়াসশাহী যুগে বাংলায় মুসলিম স্থাপত্য
শিল্পক্ষেত্রে যে নতুন ধারার সূচনা হয়েছিল হুসেন শাহের সময়েও সেই ধারার প্রচলন অব্যাহত ছিল। তাঁর
সময় নির্মিত বহু মসজিদের মধ্যে গৌড়ের ‘ছোট সোনা মসজিদ' এবং ‘গুমতিদ্বার' শিল্প সৌন্দর্যে বিশিষ্ট স্থান
অধিকার করে আছে।
মধ্যযুগীয় বাংলায় মুসলিম শাসনের ইতিহাসে আলাউদ্দিন হুসেন শাহের রাজত্বকাল নি:সন্দেহে অত্যন্ত
গৌরবজনক। অভ্যন্তরীণ শান্তি ও শৃ´খলা স্থাপন করে হুসেন শাহ রাজ্যসীমা সম্প্রসারণে প্রভুত সাফল্য
অর্জন করেছিলেন। তিনি সুষ্ঠু শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। দেশের জনগণের সার্বিক সহযোগিতায় আবার
বাংলায় শৌর্যবীর্যের যুগের সূচনা হয় যা ছিল আলাউদ্দিন হুসেন শাহেরই কৃতিত্ব। যদিও তাঁর কৃতিত্বের
সঠিক পরিচয় পাওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু আজও আলাউদ্দিন হুসেন শাহের জনপ্রিয়তা তাঁর কৃতিত্বের ও
সাফল্যের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]