সমন্বয়মূলক শাসনব্যবস্থা মূলত এক ধরনের প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা,

 উত্তরঃ ভূমিকা : ১৮৮০ এর দশকে ফ্র্যাম্বলের মাধ্যমে ইউরোপীয় শক্তিবর্গ আফ্রিকায় গমন করে এবং অফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ইউরোপীয় শক্তিবর্গ তাদের নিজস্ব উপনিবেশ স্থাপন করে। অন্যদিকে, আফ্রিকায় ছিল গোত্র বিভাজিত সমাজব্যবস্থা। ফলে সেখানে গোত্রীয় শাসন কাঠামো চালু ছিল। এসব কারণে আফ্রিকায় কোন একক ও কর্মকরী শাসনব্যবস্থা গড়ে উঠে নি। অর্থাৎ আফ্রিকায় যখন ঔপনিবেশিক শক্তিবর্গ শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করতে শুরু করে, তখনই তারা কতিপয় সমস্যার সম্মুখীন হয় এবং এ সমস্যার সমাধান করতে তারা শেষ পর্যন্ত চার প্রকারের শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করে। এ চার প্রকার শাসনব্যবস্থার মধ্যে অন্যতম ছিল সমন্বয়মূলক শাসনব্যবস্থা। সমন্বয়মূলক শাসনব্যবস্থা : সমন্বয়মূলক শাসনব্যবস্থা মূলত এক ধরনের প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা, যা সাধারণত মধ্যযুগে প্রচলিত ছিল। এ শাসনব্যবস্থায় কেন্দ্রের জনগণের সাথে প্রদেশের জনগণের কোন প্রকার পার্থক্য নির্ধারণ করা হয় না। আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপনের পর ইউরোপীয় কিছু দে স্থানে সমন্বয়মূলক শাসনব্যবস্থা চালু করে। যেমন- ফ্রান্স । এ সমন্বয়মূলক শাসনব্যবস্থা বলতে এমন এক ধরনের শাসনব্যবস্থাকে বুঝায়, যেখানে ঔপনিবেশিক দেশের জনগণের সাথে ঔপনিবেশিক শক্তির দেশের জনগণের কোন পার্থক্য নেই। অর্থাৎ উপনিবেশকে ধরা হতো রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান অঙ্গরাজ্য হিসেবে এবং সেখানে মূল রাষ্ট্রের শাসন পদ্ধতি চালু করা হতো। এ সমন্বয়মূলক শাসনব্যবস্থা আবার দুই প্রকার হয়ে থাকে। যথা :
১. ব্যক্তিক সমন্বয় ও
২. অব্যক্তিক সমন্বয় । নিম্নে এই দুই প্রকারের শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
 ১. ব্যক্তিক সমন্বয় : ব্যক্তিক সমন্বয়ের মূলকথা হচ্ছে ঔপনিবেশিক রাজ্যের জনগণের সাথে ঔপনিবেশিক শক্তির দেশের জনগণের সমন্বয় সাধন করে এ শাসন পদ্ধতি চালু করা। এ সম্পর্কে Joan G. Roland মন্তব্য করেন যে, "Theories of personal assimilation asserted that all men were equal irrespective of their racial origin or cultural background." [Africa: The Heritage and the challenge, P-190] তবে এ শাসনব্যবস্থা আফ্রিকার ক্ষেত্রে কার্যকর হয়ে উঠে নি। কারণ আফ্রিকার জনগণের সাথে ইউরোপীয় জনগণের অনেক পার্থক্য ছিল। আফ্রিকার জনগণ ছিল অজ্ঞ, কুসংস্কারাচ্ছন্ন, পশ্চাৎপদ ও অশিক্ষিত জাতি। অন্যদিকে, ইউরোপীয় জনগণ ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত অর্থাৎ শিক্ষিত, আধুনিক ও বিজ্ঞানচেতা। তাই আফ্রিকায় ব্যক্তিক সমন্বয়মূলক শাসনব্যবস্থা ব্যর্থ হয়ে যায়। ২. অব্যক্তিক সমন্বয় : যেখানে ব্যক্তিক সমন্বয় সম্ভব নয়, সেখানেই প্রয়োজন হয় অব্যক্তিক সমন্বয়ের এবং ই আফ্রিকার ক্ষেত্রেও এটা ছিল বেশি প্রযোজ্য। তাই ঔপনিবেশিক শক্তিবর্গ আফ্রিকায় অব্যক্তিক সমন্বয় চালু করে। তবে এ অব্যক্তিক সমন্বয়ের তিনটি পর্যায় রয়েছে। যথা :
ক. প্রশ্নসনিক সমন্বয়,
খ. রাজনৈতিক সমন্বয় ও
গ. অর্থনৈতিক সমন্বয় ।
ক. প্রশাসনিক সমন্বয় : প্রশাসনিক সমন্বয় বলতে বুঝায় প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে উভয় দেশের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা। আফ্রিকার ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থায় এ প্রশাসনিক সমন্বয় পরিলক্ষিত হয়। এক্ষেত্রে ঔপনিবেশিক শক্তিবর্গ তাদের দেশের প্রশাসনিক কাঠামো সম্পূর্ণ ঔপনিবেশিক রাজ্যে চালু করে। আফ্রিকার কিছু কিছু রাজ্যে এ প্রশাসনিক সমন্বয় দেখা যায়, বিশেষকরে ফরাসি উপনিবেশে। কারণ ফ্রান্স তার উপনিবেশকে আলাদা করে দেখত না, বরং তারই অংশ হিসেবে গণ্য করত। ফ্রান্স আফ্রিকান দেশ সেনেগালে এ প্রশাসনিক সমন্বয় চালু করে।
 খ. রাজনৈতিক সমন্বয় : রাজনৈতিক সমন্বয় সাধারণত রাজনৈতিক ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। অর্থাৎ ঔপনিবেশিক বা রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে ঔপনিবেশিক শক্তির রাজনৈতিক সংগঠনের সমন্বয় সাধন। যেহেতু আফ্রিকায় ঔপনিবে শাসনামল পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে উঠে নি, তাই গোত্রই ছিল রাজনৈতিক সমন্বয়ের কেন্দ্রস্থল। এর ঔপনিবেশিক শক্তিবর্গ স্থানীয় শক্তিশালী গোত্রপতির সাথে একটি চুক্তির মাধ্যমে তাকে কিছু রাজনৈতিক অধিকার এবং বিনিময়ে ঔপনিবেশিক শক্তিবর্গ স্থানীয় গোত্রপতির কাছ থেকে কিছু রাজনৈতিক অধিকার নিয়েছে। এর আফ্রিকান উপনিবেশে রাজনৈতিক সমন্বয় সাধন করা হয়েছে। এ রাজনৈতিক সমন্বয় সম্পর্কে Joan G. Rol বলেছেন যে, "The second form of non-personal assimilation advocated was that of over territories with the metropolitan." [ Africa: The Heritage and the challenge, P. গ. অর্থনৈতিক সমন্বয় : ঔপনিবেশিক রাজ্যগুলোর অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পঙ্গু করে দেয়ার পরিকল্পনাই ! অর্থনৈতিক সমন্বয়। অর্থাৎ ঔপনিবেশিক শক্তিবর্গ তাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে পরিপূর্ণ করে তোলার লক্ষ্যে উপনির রাজ্যগুলোর অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরি করা হয়েছিল। এ অর্থনৈতিক অবকাঠামোর মাধ্যমেই ঔপনিবেশিক রাজার শোষণ প্রক্রিয়া জোরদার হয়েছিল। অর্থাৎ শিল্পকারখানার জন্য কাঁচামালের প্রাচুর্য থাকা সত্ত্বেও আফ্রিকায় শিল্পকারখানা গড়ে তোলা হয় নি। সমস্ত শিল্পকারখানা গড়ে তোলা হয়েছিল ঔপনিবেশিক শক্তিবর্গের দেশে এবং সেখ উৎপাদিত দ্রব্য ঔপনিবেশিক রাজ্যে বিক্রি করা হতো। এভাবে অর্থনৈতিক সমন্বয়ের মাধ্যমে ঔপনিবেশিক শ আফ্রিকাকে শোষণ করত। যেমন- ফ্রান্স। আফ্রিকান দেশ সেনেগালে প্রচুর কফি থাকা সত্ত্বেও সেখানে কোন শিক্ষর্থী গড়ে তোলা হয় নি, গড়ে তোলা হয় ফ্রান্সে । মূল্যায়ন : উনিশ শতকের শেষ দিকে ইউরোপীয় শক্তিবর্গ আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপন করে এবং উপর স্থাপনের পর সেখানে তাদের শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনে উদ্যোগী হয়। কিন্তু ইউরোপীয় শাসনব্যবস্থা আফ্রিকায় প্রবর্তন অন্তর কারণ ইউরোপ ও আফ্রিকা ছিল দুটি ভিন্নধর্মী মহাদেশ এবং তাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। তাছাড়া সি ইউরোপীয় দেশ আফ্রিকা দখল করার কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব ছিল না। কারণ সকলের উদ্দেশ্য ছিল অ স্বার্থ উদ্ধার করা । তবে এসব সমসমাধানের চেষ্টা করা হয় কয়েকটি বিশেষ শাসন পদ্ধতি অনুসরণ করে এবং যার টা ছিল আফ্রিকাকে অর্থনৈতিক শোষণ করা। তাইতো তাদের শাসনব্যবস্থা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় ।
 উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, আফ্রিকায় ইউরোপীয়দের আগমন মূলত অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কারণে এবং এ আর্থ-বাণিজ্য স্বার্থ উদ্ধারের লক্ষ্যেই তারা আফ্রিকায় উপনিবেশ হ করে। ফলে তারা তাদের শাসন নীতি এমনভাবে বিন্যস্ত করে যে আফ্রিকায় কার্যকরী শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলার ে কতিপয় সমস্যা দেখা দেয়। এসব সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে তারা আফ্রিকায় ৪ ধরনের শাসন নীতি অনুসরণ করে, মধ্যে সমন্বয়মূলক শাসনব্যবস্থা অন্যতম। কিন্তু এ শাসনব্যবস্থা আফ্রিকায় কল্যাণ বয়ে আনতে পারে নি ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]