আফ্রিকায় কার্যকরী প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ঔপনিবেশি শক্তিবর্গের মধ্যে কেন মতানৈক্যের সৃষ্টি হয়? তারা সমস্যা সমাধা: কি পন্থা গ্রহণ করে?

  আফ্রিকায় ঔপনিবেশিক শাসনের প্রাথমিক বিপর্যয় কী ছিল? এ বিপর্যয়ের উ কিভাবে হয়েছে? লিখ। অথবা, আফ্রিকায় কার্যকরী শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলতে কী কী সমস্যা দেখা দেয়? এর সমা প্রক্রিয়া কিরূপ ছিল? লিখ । 
উত্তর ভূমিকা : ১৮৮০ এর দশকে স্ক্র্যাম্বলের মাধ্যমে ইউরোপীয় শক্তিবর্গ আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপন এবং আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ইউরোপীয় শক্তিবর্গ তাদের নিজস্ব উপনিবেশ স্থাপন করে। অন্যদিকে, অ ছিল গোত্র বিভাজিত সমাজব্যবস্থা। ফলে সেখানে গোত্রীয় শাসন কাঠামো চালু ছিল। এসব কারণে আফ্রিকায় একক ও কার্যকরী শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে নি। তাছাড়া ইউরোপীয় শক্তিবর্গের মধ্যেও কোন ঐকমত্য : সম্ভব হয় নি। তবে শেষে তারা একটা সমাধানে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছিল, ঔপনিবেশিক শাসনের শুরুতে কোন কার শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে নি।  মতানৈকোর কারা পর্যায়ে আফ্রিকা মহাদেশে ঔপনিবেশিক রাজ্য স্থাপনের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের যোগিতা পেলেও পরবর্তীতে ইউরোপীয়ারা অতিকোরে সম্মুখীন হয়। তবে সমস্ত প্রতিরোধ ভেঙে আফ্রিকায় তারা উপাদবেশ স্থাপন করলেও কার্যকরা गा গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কতিপয় সমস্যার সম্মুখীন হয়। এ সমস্যার অন্যতম ইউরোপীয় শক্তিবর্গের মধ্যে মতানৈকা । এর পশ্চাতে কতিপয় কারণ নিহিত ছিল।
যেমন- ১. সময়ের স্বল্পতা : অকায় কার্যকরী প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ইউরোপীয়দের মধ্যে মতানৈক্যের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে সময়ের স্বল্পতা, আফ্রিকা ইউরোপীয় শক্তিবর্গ উপনিবেশ স্থাপন করে উনিশ শতকের শেষে যখন বিশ্ব জুড়ে উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সমালোচনা শুরু হয়ে যায়। ফলে ইউরোপীয় শক্তিবর্ণ আফ্রিকায় স্বল্পতার জন্য কার্যকরী প্রশাসন ব্যবস্থা নিয়ে মতানৈকোর হয়। 
2. পরবর্তী সাম্রাজ্য বিস্তার নিয়ে বাতা : আফ্রিকার উপনিবেশ স্থাপনের পর ইউরোপীয় শক্তিবর্গ তাদের নিজ নিজ তাজ্য বিস্তার নিয়ে এতই রাত ছিলেন যে, তাদের মধ্যে ঐকমত্য গড়ে তোলা সম্ভব হয় নি। 
৩. আফ্রিকীয় সমাজ সংস্কৃতি সম্পর্কে অজ্ঞতা : যে কোন দেশে কার্যকরী প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সে দেশের সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা একান্ত আবশ্যক। কিন্তু আফ্রিকার সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ইউরোপীয়রা সম্পূর্ণ এম ছিল। ফলে তাদের মধ্যে ঐকমত্য গড়ে তোলা সম্ভব হয় নি। ৪. অস্থায়ী প্রশাসন ব্যবস্থা : অস্থায়ী প্রশাসন ব্যবস্থা বলতে বুঝায়, কোন এলাকায় স্থিতিশীল ও কার্যকর প্রশাসনিক হজ্বের অভাবে অঞ্চলভেদে সাময়িকভাবে শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করা। এ ব্যবস্থা নির্ভর করত চারটি ধরনের উপর ।
যথা : i. প্রশাসকের চরিত্র,
 ii. অঞ্চলের প্রকৃতি ও ধরন,
 iii. গোত্রগুলোর সাথে সম্পর্ক ও 
iv. ঔপনিবেশিক স্থাপনের ধরনের উপর এ ব্যবস্থার ফলে আফ্রিকায় কার্যকরী প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ঐকমত্যে পৌঁছা সম্ভব হয় নি। 
৫. ঔপনিবেশিক দায়িত্ববোধ : আফ্রিকায় যখন ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য স্থাপন করা হয়, তখন ইউরোপে আধুনিক যুগ ও গণতন্ত্রের যুগ চলছিল। ফলে আফ্রিকার উন্নয়নের জন্য ইউরোপীয় সচেতন সম্প্রদায় সবসময় সজাগ থাকত। এ সচেতনতার প্রেক্ষাপটে ঔপনিবেশিক শাসকবর্গের উপর আফ্রিকার উন্নয়নের জন্য একটা দায়িত্ববোধ এসে যায়। তবে এ দায়িত্ববোধের সৃষ্টি হতো ইউরোপীয় দেশের অঞ্চলভেদে । তাই মতানৈক্যের সৃষ্টি হয়। 
৬. ঔপনিবেশিক শোষণ : আফ্রিকায় ইউরোপীয়দের আগমনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং এ স্বার্থ থেকেই শোষণ প্রক্রিয়ার জন্ম। এ শোষণ প্রক্রিয়া নিজ নিজ ইউরোপীয় দেশের স্বার্থ অনুযায়ী চালাত। ফলে মতানৈক্য সৃষ্টি হয় । 
৭. পোত্রতন্ত্র : আফ্রিকায় কার্যকরী প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার পশ্চাতে অন্যতম সমস্যা হচ্ছে আফ্রিকার গোত্রতন্ত্র। অর্থাৎ আফ্রিকা ছিল গোত্রভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্রকাঠামো। ফলে আফ্রিকায় ইউরোপীয়দের জাতীয় রাষ্ট্র গঠন অসম্ভব হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে আফ্রিকায় কার্যকরী প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। সমাধানের প্রত্রিয়া : আফ্রিকায় ইউরোপীয়দের ঔপনিবেশিক স্থাপনের পর সেখানে কার্যকরী শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের ক্ষেত্রে যেসব সমস্যা দেখা দেয় তা সমাধানের লক্ষ্যে ইউরোপীয় শক্তিবর্গ নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন :
১. চুক্তি : আফ্রিকায় প্রশাসন ক্ষেত্রে ব্রিটেন চুক্তি নীতি অনুসারে ৪ ধরনের শাসন নীতি অনুসরণ করেছে। যথা : i. চুক্তির মাধ্যমে স্থাপিত ঔপনিবেশিক শাসন নীতি, ii. দখলের মাধ্যমে স্থাপিত ঔপনিবেশিক শাসন নীতি, iii. মরুভূমিতে বসবাসরত যাযাবর সম্প্রদায়ের প্রতি শাসন নীতি এবং iv. স্থায়ীভাবে বসবাসকারী আফ্রিকানদের প্রতি শাসন নীতি । 
২. সামাজিক দায়িত্ববোধ : আফ্রিকায় আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে তারা বিশেষ শাসন নীতি অনুসরণ করেছে। তবে এটা খুব কম ক্ষেত্রেই দেখা গেছে। এ শাসন নীতি তারা অনুসরণ করেছে সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে।
  ৩. অর্থনৈতিক শোষণ : আফ্রিকা মহাদেশে ইউরোপীয়দের আগমনের মূল উদ্দেশ্য ছিল অর্থনৈতিক ও বাণিি স্বার্থ উদ্ধার করা অর্থাৎ তাদের শিল্পের উন্নতি ঘটানো। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই তাদের প্রশাসনযন্ত্র এমনভাবে ঠি করেছে, যাতে তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থ সহজেই উদ্ধার হয়। ফলে দেখা যাচ্ছে যে, আফ্রিকায় ইউরোপীয় ঔপনিবেি শাসন নীতি পরিণত হয়েছিল ঔপনিবেশিক শক্তিবর্গের অর্থনৈতিক স্বার্থ উদ্ধার নীতিতে। উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, আফ্রিকায় ইউরোপীয়দের আগমন মূলত অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কারণে এবং এ আর্থবাণিজ্যিক স্বার্থ উদ্ধারের লক্ষ্যেই তারা আফ্রিকায় উপনিবেশে করে। ফলে তারা তাদের শাসন নীতি এমনভাবে বিন্যস্ত করে যে আফ্রিকায় কার্যকরী শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলার যে কতিপয় সমস্যা দেখা দেয়। এসব সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে তারা যে ধরনের শাসন পদ্ধতি প্রবর্তন করেছে, আফ্রিকানদের জন্য তেমন কোন কল্যাণ বয়ে আনতে পারে নি। 

আফ্রিকার ঔপনিবেশিক শাসনের ইতিবাচক দিকগুলো আলোচন কর। অথবা, আফ্রিকায় ঔপনিবেশিক শাসনের ইতিবাচক প্রভাব কতটুকু পড়েছিল? তোমার পা যুক্তি দাও ৷ অথবা, আফ্রিকার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ঔপনিবেশিক শাসে ইতিবাচক ফল আলোচনা কর। অথবা, আফ্রিকায় ঔপনিবেশিক শাসনের সুফলগুলো লিখ ৷

 উত্তর ভূমিকা : সুবিশাল আফ্রিকার ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে ঔপনিবেশিক শাসনের ইতিহ পৃথিবীর সর্বত্র ইউরোপীয়রা উপনিবেশ স্থাপন করেছে এবং শাসনও করেছে দীর্ঘকাল। যেমন- ভারতীয় উপমহাদে ২০০ বছর শাসন করেছে। ইউরোপীয় শক্তিবর্গ আফ্রিকায় যেমন আগমন করেছিল সবার শেষে, আবার শাসনও স্বল্প সময়। মাত্র অর্ধশতক বছর। অথচ ইউরোপীয় উপনিবেশ শাসনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি প্রতিফলিত হয়েছে আ মহাদেশে। অর্থাৎ শাসন করেছে কম কিন্তু প্রভাব ফেলেছে বেশি গভীরভাবে। তাই আফ্রিকার ইতিহাসে ইউরে ঔপনিবেশিক শাসনের প্রভাব অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ঔপনিবেশিক শাসনের ইতিবাচক প্রভাব বা দিক : আফ্রিকায় ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠা ইউরোপীয়রা আফ্রিকার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব রেখে গেছে। এসব প্রভাবকে মুক্তি বিচার করা যায়।
যেমন- ক. ইতিবাচক দিক ও খ. নেতিবাচক দিক। তবে এখানে আমরা আফ্রিকায় ঔপনিবে শাসনের ইতিবাচক দিক সম্পর্কে আলোচনা করব। মূলত এ ইতিবাচক দিক থেকে আফ্রিকায় ঔপনিবেশিক শাসনের ও তিনভাগে বিভক্ত। যথা : 
১. সামাজিক ইতিবাচক প্রভাব,
 ২. অর্থনৈতিক ইতিবাচক প্রভাব ও 
৩. সাংস্কৃতিক ইতিবাচক প্রভাব । নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো : ক. সামাজিক ইতিবাচক দিক বা প্রভাব : আফ্রিকায় ইউরোপীয় শক্তিবর্গ উপনিবেশ স্থাপন করে যে শাসনপদ্ধতি করেছিল, তার সামাজিক প্রভাব ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এসব সামাজিক প্রভাবগুলো হচ্ছে : অি অন্যদি ১. দাসপ্রথার বিলুপ্তি : ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শাসনের সামাজিক ক্ষেত্রে ইতিবাচক দিক হচ্ছে দাসপ্রথার বিলুপ্তি। ক্রমান্বয়ে বিশ্বে দাসব্যবস্থার সমালোচনা ও অমানবিক হলে তা বন্ধের আহ্বান করা হয়। উপনিবেশে প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন হওয়ায় ইউরোপ ও আমেরিকায় আফ্রিকা থেকে দাস পাঠানো অপ্রয়োজনীয় পড়ে। এ প্রেক্ষাপটে ঔপনিবেশিক শক্তিবর্গ দাসপ্রথা বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত নেয় এবং প্রথম দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করে আইন করা হয় ব্রিটেনে ১৮৩০ সালে। তবে আফ্রিকায় দাসপ্রথা বিলুপ্তি ঘটে বিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকে ।
 ২. শহরায়ন : আফ্রিকায় ঔপনিবেশিক শাসনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ইতিবাচক দিক হচ্ছে শহরায়ন বা নগরায়ণ। প্রাক ঔপনিবেশিক আফ্রিকায় মাত্র কয়েকটি শহর বা নগর ছিল। যেমন- কায়রো, আলেকজান্দ্রিয়া, মরক্কো, 1 ৰার্থেজ প্রভৃতি । । তবে আফ্রিকায় ইউরোপীয় উপনিবেশ স্থাপনের পর নতুন নতুন শহর গড়ে উঠে। ইউরোপীয়রা আফ্রিকায় দুটি উপায়ে নগরায়ণ বা শহরায়ন সূচনা করে। যেমন- ক. পুরাতন নগরের সংস্কার ও খ. নগরের অভ্যন্তরীণ উন্ন আফ্রিকায় ইউরোপীয়রা নগরায়ণ করে মূলত তাদের বসবাসরত এলাকায়, শিল্পকারখানার আশপাশে, ব্যবসায় বাণিজ্য কেন্দ্রে, খামার ও রেললাইনের কাছে। 
৩. মধ্যবিত্ত বা বুর্জোয়া শ্রেণি : ঔপনিবেশিক শাসনামলে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত আফ্রিকানরা ছিল মধ্যবিত্ত বা বুর্জোয়া শ্রেণি। কারণ তারা পাশ্চাত্য শিক্ষা গ্রহণ করে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক প্রশাসনের বিভিন্ন পদে নিয়োজিত এ এবং তারা ইউরোপীয়দের সংস্পর্শে আসার পর দেখল যে তারা শোষিত হচ্ছে। এ থেকেই তাদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটে এবং পরবর্তীতে তাদের আন্দোলনের মাধ্যমে আফ্রিকা স্বাধীন হয়। তাই আফ্রিকায় ইউরোপীয় শাসনের ইতিবাচক সামাজিক দিক হচ্ছে মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব ও বিকাশ। খ. অর্থনৈতিক ইতিবাচক দিক বা প্রভাব : আফ্রিকায় ইউরোপীয় শাসকবর্গ তাদের উপনিবেশ স্থাপন করে মূলত আফ্রিকার প্রাকৃতিক সম্পদসহ বিভিন্ন কাঁচামাল ইউরোপে পাচার করার উদ্দেশ্যে। তবে তারা যে অর্থনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে তার কিছু ইতিবাচক দিকও ছিল। নিম্নে এ ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরা হলো
: ১. মুদ্রা প্রথার প্রচলন : আফ্রিকায় ঔপনিবেশিক শাসনের প্রথম অর্থনৈতিক ইতিবাচক দিক হচ্ছে মুদ্রা প্রথার প্রচলন করা। আফ্রিকায় প্রাচীনকাল থেকে দ্রব্য বিনিময় প্রথা প্রচলিত ছিল। কিন্তু আধুনিক যুগে এসে এ প্রথা অকার্যকর হয়ে পড়ে। ফলে ইউরোপীয়রা আধুনিক মুদ্রা প্রথার প্রচলন করে যা আজও বিদ্যমান। 
২. পুঁজি বিনিয়োগ : যে কোন দেশের শিল্পকারখানার উন্নতির জন্য পুঁজির প্রয়োজন এবং পুঁজি ছাড়া কোন দেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হতে পারে না। ইউরোপে শিল্পবিপ্লবের পর সেখানে পুঁজিপতিদের হাতে প্রচুর অর্থ আসে। কিন্তু এ পৃক্তি বা অর্থ ইউরোপের বিনিয়োগের ক্ষেত্র ছিল না। তাই ইউরোপীয় পুঁজিপতি শ্রেণি তাদের পুঁজি আফ্রিকায় বিনিয়োগ করতে থাকে। ইউরোপীয়রা আফ্রিকার কৃষি, খনি ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে প্রচুর পুঁজি বিনিয়োগ করেছিল । 
৩. খনিজ সম্পদ উত্তোলন : আফ্রিকা ছিল খনিজ সম্পদে পরিপূর্ণ এবং এখানে রয়েছে প্রচুর সোনা, হীরা, তামা, এলুমিনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, তৈল, লোহা প্রভৃতি। কিন্তু এসব খনিজ সম্পদ উত্তোলনের কোন চেষ্টাই আফ্রিকানরা করে নি কারণ তারা ছিল অজ্ঞ এবং অদক্ষ। ইউরোপীয়রা আফ্রিকানদের এসব খনিজ সম্পদ উত্তোলনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উচুয়নে সহায়তা করেছে।
 গ. সাংস্কৃতিক প্রভাবের ইতিবাচক দিক : আফ্রিকায় ইউরোপীয় শাসনের ইতিবাচক দিকের অন্যতম হচ্ছে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে। ইউরোপীয় উপনিবেশ স্থাপনের পর তারা শাসন পদ্ধতি চালু করে এবং এ শাসন ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখায় তারা তাদের পাশ্চাত্য সংস্কৃতি আফ্রিকায় প্রবর্তন করে যা তাদের ভাষায় 'White man's Burden'। যদিও ইউরোপীয়রা তাদের নিজেদের স্বার্থে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি প্রচলন করে, তবে এটা আফ্রিকানদের জন্য কিছু ইতিবাচক দিক বয়ে এনেছিল। নিম্নে এ সম্পর্কে তুলে ধরা হলো :
 ১. খ্রিস্টধর্মের প্রসার : প্রাক উপনিবেশে আফ্রিকার কোন নির্দিষ্ট ধর্ম ছিল না। বিভিন্ন গোত্রে বিভিন্ন ধর্ম পালিত হতো এবং তারা একাত্মবাদে বিশ্বাসী ছিল না। ইউরোপীয়রা যখন আফ্রিকায় আগমন করে তখন তাদের সাথে খ্রিস্টান মিশনারিরাও ছিল। এ মিশনারিরা আফ্রিকায় খ্রিস্টধর্ম প্রচার করে। প্রথমে তারা সাধারণ আফ্রিকানদের মধ্যে খ্রিস্টধর্ম প্রচার করে কিন্তু একাজে তেমন সফলতা না আসলে গোত্রপতিকে খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত করানো হয়। এর ফলে ব্যাপক সফলতা আসে।
 ২. পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তন : আফ্রিকার জনগণ ছিল অজ্ঞ ও অশিক্ষিত। তাদের মধ্যে কোন শিক্ষার প্রচলন ছিল না এবং স্কুল কলেজও ছিল না। ইউরোপীয়রা আফ্রিকায় ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠার পর সেখানে তাদের পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রবর্তন করেন। ব্রিটেন তার কলোনীতে প্রথম স্কুল প্রতিষ্ঠা করে ১৮০৫ সালে সিয়েরালিওনে এবং ফ্রান্স ১৮১৮ সালে সেনেগালে । পরবর্তীতে ক্রমাগতভাবে স্কুল প্রতিষ্ঠা হতে থাকে এবং এ সময় কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর ফলে আফ্রিকানরা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে থাকে। এক পর্যায়ে আফ্রিকায় প্রশাসন তৈরি করার জন্যও শিক্ষাব্যবস্থা চালু হয়। এভাবে আফ্রিকান জনগণকে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত করে তাদেরকে দক্ষ প্রশাসক ও জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা হয়।
  ৩. জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ও বিকাশ : আফ্রিকায় ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শাসনের ইতিবাচক সাংস্কৃতি দিক হচ্ছে আফ্রিকানদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনার উদ্ভব ও বিকাশ। জাতীয়তাবাদ হচ্ছে একটি মানসিক ধারণা ১ চেতনা যার মাধ্যমে একটি গোষ্ঠী বা জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতীয় রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখে। ইউরোপীয়রা নিজেদের যা পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রবর্তন করে। কিন্তু এটা আফ্রিকানদের জন্য ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। কারণ তারা পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষি। হয়ে ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয় এবং এ চেতনা বিক হয়ে এক সময় জাতীয়তাবাদী আন্দোলন তীব্র হয় যার ফলে আফ্রিকায় স্বাধীনতা আসে। আফ্রিকান জাতীয়তার নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন ক্যাসলে হাইফোর্ড, মার্কস গার্ভে, ডুবয়, বেইসি ডেইগনী প্রমুখ । 
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, আফ্রিকার ইউরোপীয় ঔপনিবেশি শক্তিবর্গ যে শাসন নীতি অনুসরণ করে তার যেমন নেতিবাচক দিক ছিল তেমনি তার ইতিবাচক দিকও ছিল। এ ইতিবাচ দিক আফ্রিকার অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয়। আফ্রিকার ঔপনিবেশিক শাসনের সবচো গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক দিক হচ্ছে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তন যার মাধ্যমে আফ্রিকানদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনার উনে ঘটে এবং পরবর্তীতে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মাধ্যমে আসে স্বাধীনতা ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]