আফ্রিকার প্রতিরোধ আন্দোলনের ক্ষেত্রে ১৯০০-১৯৪৫ সাল পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেন? এটা আফ্রিকান স্বাধীনতা অর্জনে কতটা ভূমিকা রেখেছিল?

আফ্রিকার স্বাধীন আন্দোলনে ১৯০০-১৯৪৫ সালের প্রতিরোধ আন্দোলনের কৃতিত্ব মূল্যায়ন কম ।
উত্তর ভূমিকা : ১৮৮০ এর দশকে ক্র্যাম্বলের মাধ্যমে ইউরোপীয় শক্তিবর্গ আফ্রিকায় প্রবেশ করে এবং বাহিন সম্মেলনের পর আফ্রিকায় প্রবেশের পূর্ণ বৈধতা পায়। ফলে পরবর্তী ত্রিশ বছরের মধ্যে লাইবেরিয়া ও ইথিওপিয়া বাদে সমগ্র আফ্রিকা মহাদেশ ইউরোপীয় শক্তিবর্গের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। আফ্রিকায় যখন প্রথম ইউরোপীয় শক্তিবর্গ প্রবেশ করে তখন আফ্রিকানরা সহযোগিতা করে এবং আফ্রিকানদের সহযোগিতা নিয়েই ইউরোপীয় শক্তিবর্গ আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপনের সুযোগ পায়। যদিও প্রথম পর্যায়ে আফ্রিকানরা সহযোগিতা করে কিন্তু পরবর্তীতে তারা ইউরোপীয়দের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে ।
আফ্রিকান প্রতিরোধ আন্দোলনে ১৯০০-১৯৪৫ সাল : আফ্রিকানরা ইউরোপীয়দের বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলে তা মূলত ৫টি ভাগে বিভক্ত। যথা :
1. Resistance upto 1870; Uprising of the slave বা দাস বিদ্রোহ (১৫০০-১৮৭০ সাল পর্যন্ত)।
2. Tribal resistance 1870-1900 বা গোত্রীয় প্রতিরোধ (১৮৭০-১৯০০ সাল পর্যন্ত)।
3. Organized tribal rebellion, 1900-1914 বা সংঘবদ্ধ গোত্রীয় বিদ্রোহ (১৯৯০-১৯১৪ সাল পর্যন্ত)।
8. Growth of liberation movement 1914-1945 বা স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রাথমিক পর্যায় (১৯১৪-৪৫ সালে পর্যন্ত)।
৫. Preparation for independance বা স্বাধীনতার প্রস্তুতি পর্ব (১৯৪৫ সাল পর্যন্ত)।
উপর্যুক্ত পাঁচটি পর্যায়ের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় হচ্ছে দুটি পর্যায় তথা ১৯০০ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত কারণ এ পর্যায়ে আফ্রিকানদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনা জাগ্রত হয় এবং ক্রমান্বয়ে তা স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপ নেয় অবশেষে ১৯৬০ এর দশকে আসে আফ্রিকার স্বাধীনতা। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
ঐক্যবদ্ধ গোত্রীয় প্রতিরোধ : আফ্রিকানদের প্রতিরোধ আন্দোলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় হচ্ছে ঐক্যবদ্ধ গোত্রীয় প্রতিরোধের পর্যায় এবং এর সময়কাল ১৯০০-১৯১৪ সাল পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে সমগ্র আফ্রিকা ইউরোপীয়দের দখলে চলে যায় । শুধু লাইবেরিয়া ও ইথিওপিয়া বাদে সমগ্র আফ্রিকায় ইউরোপীয় উপনিবেশ স্থাপিত হয়। আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপনের পর ইউরোপীয়া সেখানে তাদের শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করে এবং শোষণ প্রক্রিয়া শুরু করে। ফলে আফ্রিকানরা সচেতন উঠে এবং ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। এ সময় তারা গোত্রীয় কাঠামোর বাইরে এসে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলে এবং তাদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটে। যেমন- মুজি (কঙ্গো), হিরেরা (পশ্চিম আফ্রিকা), হটেনটস (দক্ষিণ আফ্রিকা) প্রভৃতি গোত্র ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু করে। হয়ে
স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রাথমিক পর্যায় : আফ্রিকান প্রতিরোধ আন্দোলনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান পর্যায় হচ্ছে স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রাথমিক পর্যায়। এ সময়টা ধরা হয় ১৯১৪-১৯৪৫ সাল পর্যন্ত। এ সময়টা ছিল দু'বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময় এবং এ সময় ঔপনিবেশিক শক্তিবর্গের অত্যাচার, অনাচার ও নির্যাতনসহ শোষণ প্রক্রিয়া ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এক পর্যায় এ প্রতিরোধ আন্দোলন স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ নেয়। এ সময় বিশ্বে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা আফ্রিকানদের স্বাধীনতা আন্দোলনের সহায়ক হিসেবে কাজ করেছিল। যেমন-
১. ১৯১৭ সালে বলশেভিক বিপ্লবের মাধ্যমে গঠিত সমাজতান্ত্রিক সরকার আফ্রিকাসহ সমগ্র ঔপনিবেশিক রাজ্যের জনগণের পক্ষে অবস্থান নিয়ে তাদেরকে শোষণ ও শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের আহ্বান জানানো হয়। এ সময় প্রচার করা হয় "Declaration to the colonial people of the world. "
২. আফ্রিকায় পাশ্চাত্য শিক্ষা গ্রহণ করার পর অনেক আফ্রিকান ছাত্র উচ্চশিক্ষার জন্য ইউরোপে যায় এবং শিক্ষা শেষে তারা ইউরোপীয় দেশের উদারনৈতিক গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের ধারণা নিয়ে দেশে ফিরে। দেশে ফেরার পর তারা ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করে।
এ সময় আফ্রিকার জনজীবনে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে অর্থাৎ সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় এবং এটি প্রকাশিত হয় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। এসব সংবাদপত্রে ইউরোপীয় শাসন শোষণের বিরুদ্ধে লেখা প্রকাশ হতে থাকে। ফলে আফ্রিকায় জনসচেতনতা বৃদ্ধি পায়।
৪. এ সময় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে যা আফ্রিকানদের জন্য স্বাধীনতা আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করে। এটি হচ্ছে শ্রমিক সংগ্রাম ও ধর্মঘট। তাছাড়া শ্রমিকরা তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে শ্রমিক সংগঠন তৈরি করে এবং এ সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে আফ্রিকায় ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলা হয় । স্বাধীনতা অর্জনে ১৯০০-১৯৪৫ সালের ভূমিকা : আফ্রিকানদের প্রতিরোধ আন্দোলনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়কাল হচ্ছে ১৯০০-১৯৪৫ সাল পর্যন্ত। এ সময় আফ্রিকানরা তাদের চিরাচরিত প্রথা গোত্র প্রথা ভেঙে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতীয় রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখে। এ সময় ইউরোপীয়দের প্রবর্তিত পাশ্চাত্য শিক্ষা গ্রহণ করে আফ্রিকানরা সচেতন হয়ে উঠে এবং ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণ সম্পর্কে অবগত হয়। ফলে তাদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয় এবং এ ক্ষোভ গিয়ে পড়ে ঔপনিবেশিক শাসকদের উপর। ফলে তারা একত্রিত হয়ে থাকে এবং শুরু হয় ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। এ সময় তাদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন দানা বেধে উঠে এবং তা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপ নেয়। এ সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে উঠে এবং এ সংগঠনগুলো জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করে। এসব সংগঠনের সুযোগ্য নেতৃত্বে আফ্রিকান জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বিকশিত হয়ে তা স্বাধীনতা আন্দোলনে পরিণত হয়। ফলে শুরু হয় স্বাধীনতা আন্দোলন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তা মারাত্মক আকার ধারণ করে। যেমন- ১৯১২ সালে গড়ে উঠে ANC নামক রাজনৈতিক সংগঠন এবং এ সংগঠনের নেতৃত্বে পশ্চিম ও দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রবল জাতীয়তাবাদী আন্দোলন গড়ে উঠে। ফলে ঔপনিবেশিক শক্তির ভিত কেঁপে উঠে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আফ্রিকা থেকে ঔপনিবেশিক শক্তিবর্গ চলে যেতে বাধ্য হয়। ফলে আফ্রিকান দেশগুলো স্বাধীনতা অর্জন করে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ইউরোপীয়দের আগমনের প্রাথমিক পর্যায় আফ্রিকানরা সহযোগিতা করলেও পরবর্তীতে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলে। আফ্রিকানদের এ প্রতিরোধ আন্দোলন পাঁচটি পর্যায় এসে শেষ হয় কিন্তু এ পাঁচটি পর্যায়ের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় হচ্ছে দুটি পর্যায় । যথা : সংঘবদ্ধ গোত্রীয় বিদ্রোহ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রাথমিক পর্যায়। এ সময়কাল হচ্ছে ১৯০০ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যেই আফ্রিকানদের স্বাধীনতা আন্দোলনের বীজ অঙ্কুরিত হয়ে তা মহীরুহে প্রকাশ পায় এবং অবশেষে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তার ফল আসে তথা বহু কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা আসে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]