জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞা দাও । জাতীয়তাবাদের ভিত্তি লিখ । জাতীয়তাবাদের সুবিধাগুলো উল্লেখ কর ।

উত্তরা ভূমিকা : জাতীয়তাবাদ বর্তমান যুগের রাজনৈতিক জগতে একটি প্রবল শক্তি। জাতীয় রাষ্ট্রবাহ উন্নয়নের সাথে সাথে এর আদর্শ বিশ্ব ইতিহাসকেও নাড়া দিয়েছে। উনিশ ও বিশ শতকের মানচিত্রে এটি চরম পরিন ঘটিয়েছে।
জাতীয়তাবাদ : সুদীর্ঘকাল ধরে ঐতিহাসিক বিবর্তনের ফলে আমরা সম্প্রদায়গত যে জীবনে এসে তাকে বলা হয় জাতীয়তাবাদ। সম্প্রদায়ের দুটি দিক আছে সামাজিক ও রাজনৈতিক।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জাতীয়তাবাদের বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে কয়েকটি উল্লেখযে সংজ্ঞা উপস্থাপন করা হলো :
জে.এইচ. হ্যারেস তাঁর 'Easays and Nationalism' গ্রন্থে বলেছেন, “জাতীয়তাবাদ জাতীয়তা ও দেশপ্রেম দুটো আধুনিক অনাসক্ত বিষয়ে একটি আবেগপূর্ণ সমন্বয় ও অতিরঞ্জিতকরণ।”
অধ্যাপক লাস্কি বলেছেন, “জাতীয়তাবাদ সাধারণভাবে এক ধরনের মানসিকতা। এটি দু'ধারায় পরিপুষ্ট। এর প্রাচীন স্মৃতি সম্পদ এবং অপরটি পরস্পরের একত্রে বসবাস করার সম্মতি।”
জির্মান বলেছেন, “কোন নির্দিষ্ট আবাসভূমির সাথে সংশ্লিষ্ট সংঘবদ্ধভাবের বিশেষ অন্তরঙ্গ, গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদায় প্রকাশই জাতীয়তাবাদ।”
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী Hans Khon বলেছেন, "Nationalism is first and foremost of a state of mind an act consciousness."
স্নাইডারের মতে, “তায়তাবাদ রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং আধ্যাত্মিক চেতনার ফল। "
উপর্যুক্ত সংজ্ঞা বিশ্লেষণে এটি স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, জাতীয়তাবাদ মূলত এক প্রকার মানসিক চেতনা, এটি এক প্রব মানসিক প্রবৃত্তি এবং ভাবপ্রবণতা। এটি একত্রিত হওয়ার এবং একত্রে বসবাসের মানসিক প্রবণতা। জাতীয়তার জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার মধ্যেই মূর্ত হয়ে উঠে ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, জাতীয়তাবাদ একটি মানসিক ধারণা এবং এ ধারণার উদ্ভব হয় যুগ ধরে। বর্তমানে জাতীয়তাবাদ পরিপক্ক হয়ে উঠেছে। রাজনীতিতে জাতীয়তাবাদ এক ব্যাপক স্থান দখল করে আছে।

জাতীয়তাবাদের ভিত্তি লিখ ।


উত্তর ভূমিকা : জাতীয়তাবাদ মূলত ইউরোপীয় ধারণা। মতাদর্শ হিসেবে জাতীয়তাবাদের জন্ম কবে অনুসন্ধানী প্রশ্ন মাথায় রেখেও নির্দ্বিধায় বলা যায়, আধুনিক বিশ্বের রাজনীতিতে জাতীয়তাবাদ গভীরভাবে প্রভাবি করেছে।
জাতীয়তাবাদের ভিত্তি : জাতীয় সচেতনতাকে অনাবৃত করতে বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব সম্মিলিতভাবে কাজ করেন। ওয়াটসন লিখেছেন, “প্রাচীন জাতিগুলোর মধ্যে জাতীয় সচেনতার জন্ম দিয়েছে রাষ্ট্র ও সাম্রাজ্য।” এর উৎকৃষ্ট উদাহ ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স। উভয় রাষ্ট্রের সম্রাটদেরকে কট্টর আঞ্চলিক শক্তি এবং স্বাধীন মনস্ক সামাজিক অভিজাতদের বির সংগ্রাম করতে হয়েছে। কিছুসংখ্যক লেখকের মতে, জাতীয় সচেতনতার জন্য একটি সাধারণ অধিবাস অঞ্চল সবচে জরুরি। সাধারণ অধিবাসের ধারণা জাতিকে শক্তিশালী এবং স্থিতিশীল করতে সহায়ক হতে পারে কিন্তু জাতিগ অনিবার্য উপাদান কখনই হতে পারে না। ধর্ম আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ ।
ইসরায়েল রাষ্ট্রের তৈরি সম্ভব হয়েছে জাতি হিসেবে ইহুদিদের চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়েই। তবে এক্ষেত্রে একই ধর্ম বা সাধারণ ধর্মাবলম্বী সবাইকে হতেই হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। সাধারণ ভাষা একটি জনগোষ্ঠীকে কাছাকাছি। নিয়ে আসতে সক্ষম হয় এবং বিভিন্ন সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। বেশিরভাগ রাষ্ট্রই অসাম্প্রদায়িকতার চর্চা করে থাকে। আরব জাতীয়তাবাদ হলো কেবল ভাষা ও ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের একমাত্র উদাহরণ। জাতীয় সাহিত্য, জাতীয় ঐতিহ্য ও জাতীয় ইতিহাস সংকলনের পথে একটি বৃহৎ পদক্ষেপ একে বলা যায় জাতীয় ঐতিহ্যের পরিবাহক, যানবাহন। রামসে মুর এর মতে, “বীরত্ব গাথা সম্বলিত ইতিহাস ও ঐতিহ্য জাতীয় সত্তাকে শক্তিশালী ও দীর্ঘস্থায়ী করতে পারে।"
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রত্যেক জাতির স্বাধীন রাষ্ট্রগঠনের অধিকার থাকা উচিত। এ স্লোগানকে ভিত্তি করে জাতীয়তাবাদ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। জাতীয়তাবাদ আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যে একটি সংঘবদ্ধ জনগোষ্ঠীর সার্বভৌম ক্ষমতার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে।

জাতীয়তাবাদের সুবিধাগুলো উল্লেখ কর ।


উত্তর ভূমিকা : জাতীয়তাবাদী চেতনা পৃথিবীব্যাপী বিস্তারের ফলে ৬০ ও ৭০ এর দশক পর্যন্ত পৃথিবীর মানচিত্রে প্রায় শতাধিক স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। ফলে রাষ্ট্রীয় ঐক্যের মন্ত্র জাতীয়তাবাদকে কেউ কেউ রাষ্ট্রধর্ম বলেও বর্ণনা করেছেন। সুতরাং রাজনীতিতে জাতীয়তাবাদ এক ব্যাপক স্থান দখল করে রেখেছে ।
জাতীয়তাবাদের সুবিধা : নিম্নে জাতীয়তাবাদের সুবিধাসমূহ দেয়া হলো :
১. ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলগুলো বৃহত্তর একটি পরিচয়ের আবর্তে নিয়ে এসে তাদের মধ্যকার অন্তর্কলহ নিষ্পন্ন বা শেষ করা। জাতীয়তাবাদ হলো জনগণকে সংঘবদ্ধ বা ঐক্যবদ্ধ করার উপায়। অমর নন্দীর মতে, “এটা বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অভিন্ন গ্রুপকে একটি বৃহত্তর গ্রুপ বা শ্রেণিতে ঐক্যবদ্ধ করে।
৩. একটি অঞ্চল বা দেশের প্রাকৃতিক ও অন্যান্য সম্পদের উৎকৃষ্টতম ব্যবহার ও উপযোগিতা নিশ্চিত করে। ৪. একটি সাধারণ শাসকের দ্বারা শাসিত হতে হয় বলে বিভিন্ন শক্তির অপচয় রোধ হয় এবং তা গঠনমূলক খাতে
ব্যবহৃত হয়, যা জাতি গঠিত না হলে ধ্বংসাত্মক খাতে ব্যবহার হতে পারত ।
৫. দেশের জন্য জাতির প্রত্যেক সদস্য জীবন উৎসর্গ করতে মনস্থ ।
৬. আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার চর্চা করা যায়।
৭. সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদের বিরুদ্ধে জাতি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবাদ ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, জাতীয়তাবাদ শুধু ঐসব দেশেই ফলপ্রসূ ধারণা হিসেবে কার্যকরী হয়েছে, যেখানে এর সম্পর্কে অন্তত, একটি বৃহত্তম জনগোষ্ঠী বা শ্রেণি সচেতন। এটা একটা ঐতিহাসিক প্রক্রিয়া এবং মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক সহজাত প্রবণতা।

জাতীয়তাবাদের অসুবিধা উল্লেখ কর।


উত্তর ভূমিকা : জাতীয়তাবাদী চেতনা পৃথিবী ব্যাপী বিস্তারের ফলে ৬০ ও ৭০ এর দশক পর্যন্ত পৃথিবীর মানচিত্রে প্রায় শতাধিক স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। ফলে রাষ্ট্রীয় ঐক্যের মন্ত্র জাতীয়তাবাদকে কেউ কেউ রাষ্ট্রধর্ম বলেও বর্ণনা করেছেন। সুতরাং রাজনীতিতে জাতীয়তাবাদ এক ব্যাপক স্থান দখল করে রেখেছে।
জাতীয়তাবাদের অসুবিধা : সুবিধা বা গুণ থাকার পাশাপাশি জাতীয়তাবাদের কতিপয় দোষ বা অসুবিধাও বিদ্যমান। জাতীয়তাবাদের অসুবিধাগুলো নিম্নরূপ :
১. ব্যবহারিক বা বাস্তবক্ষেত্রে এর প্রয়োগ উৎকৃষ্ট কোন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে নি।
২. এক জাতীয়তাবাদের অন্তর্গত মানুষ, অন্য জাতীয়তাবাদকে ঘৃণা করতে পারে, যা ইতিবাচক নয় ।
৩. মানবসভ্যতার ইতিহাসে জাতীয়তাবাদের উদ্ভব ও বিকাশ নিয়ে এবং প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে অনেক যুদ্ধ সংঘটিত
হয়েছে।
৪. প্রায়ই জাতীয়তাবাদ সামরিক শক্তি প্রদর্শনের মতো হুমকির ভিত্তিতে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বা ঔপনিবেশিক দখলদার চরিত্র গ্রহণ করতে পারে।
৫. রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ভাণ্ডারীর মতে, “সংকীর্ণ ধারণার জন্য জাতীয়তাবাপ মানুষের মনে হিংসা, বিদ্বেষ ও ঘৃণা এবং তাঁর
সংঘাতময় সম্পর্কের সূচনা করতে পারে।"
৬. বিকৃত জাতীয়তাবাদ একটি ক্ষতিকর বিষয়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, জাতীয়তাবাদ শুধু ঐসব দেশেই ফলপ্রসূ ধারণা হিসেবে কার্যকরী যেখানে এর সম্পর্কে অন্তত একটি বৃহত্তর জনগোষ্ঠী বা শ্রেণি সচেতন। অনেক ক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদ আগ্রাসী এবং নির্ব হতে পারে কিন্তু আমরা তা থেকে বেরিয়ে আসতেও পারি না।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]