আফ্রিকান জাতীয়তাবাদ বিকাশের কারণ উল্লেখ কর। আফ্রিকান জাতীয়তাবাদ বিকাশের পর্যায়গুলো উল্লেখ কর।

উত্তরা ভূমিকা : জাতীয়তাবাদ একটি মানসিক চেতনা। এক প্রকার মানবিক প্রবৃত্তি এবং ভাব প্রবণতা থেকে জাতীয়তাবাদ সৃষ্ট। এটি মূলত একত্রিত হওয়ার এবং একত্রে বসবাস করার মানসিক প্রবণতা। এটা জনগণের আশা- আকাঙ্ক্ষার মধ্যেই মূর্ত হয়ে উঠে।
আফ্রিকান জাতীয়তাবাদ বিকাশের কারণ : নিম্নে আফ্রিকার জাতীয়তাবাদ বিকাশের কারণগুলো উল্লেখ করা হলো।
১. পাশ্চাত্য ভাষার প্রভাব
ভাষা আফ্রিকান জাতীয়তাবাদ বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ছিল। এটি আফ্রিকানদের জাতীয়তাবাদ বিকাশের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। এ ভাষা হচ্ছে পাশ্চাত্য ভাষা যাকে একটি অভিন্ন ভাষা হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছিল।
২. খেলাধুলা : ঔপনিবেশিক শাসকবর্গ বিভিন্ন সময়ে আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে বিভিন্ন খেলাধূলার প্রতিযোগিতার আয়োজন করে এবং এ খেলাধুলার মধ্যে ফুটবল, ক্রিকেট ছিল উল্লেখযোগ্য। এসব খেলাধুলাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন আফ্রিকানরা একস্থানে মিলিত হয়ে তাদের ভাবের আদান-প্রদান করে। ফলে তা পরবর্তীতে জাতীয়তাবাদ বিকাশ সহায়তা করে।
৩. ঔপনিবেশিক শাসনের চরিত্র : আফ্রিকানদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ও বিকাশ ঘটে অঞ্চল ভিত্তি ও সময় ভিত্তিক । অর্থাৎ আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে জাতীয়তাবাদের উদ্ভব ও বিকাশ হয়েছে কারণ ইউরোপীয় বিভিন্ন শক্তি আফ্রিকার ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চল দখল করে সেখানে তাদের শাসনব্যবস্থা কায়েম করে।
৪. রাজনৈতিক সংগঠনের ভূমিকা : আফ্রিকান জাতীয়তাবাদ উদ্ভব হয়েছে বিভিন্ন উপাদানের সংমিশ্রনে কিন্তু বিকশিত হয়েছে আফ্রিকার বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের মাধ্যমে। যেমন- National congress of British Wes Africa ঘানা (১৯১৮) ও West African Student Union। এ দুটি সংগঠন পশ্চিম আফ্রিকার জাতীয়তাবাদ বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
৫. দুই মহাযুদ্ধের প্রভাব : ইউরোপে অল্প সময়ের ব্যবধানে দুটি মহাযুদ্ধ বা বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ দুটি মহাযুদ্ধেই আফ্রো-এশিয়ানদের সৈনিক হিসেবে পাঠানো হয়। এসব সৈন্যরা যুদ্ধে থাকাকালে ইউরোপীয়দের কাছ থেকে যে আনন পেয়েছে, যুদ্ধ শেষে ফিরে তার ঠিক উল্টো আচরণ পেয়েছে। ফলে সৈন্যদের মাঝে হতাশা ও ক্ষোভ দেখা দেয় এবং তার ইউরোপীয় শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় আফ্রিকান জাতীয়তাবাদ ভিন্ন ও স্বপ্ন ধারায় গড়ে উঠেছে এবং এ জাতীয়তাবাদ হঠাৎ করে একদিনে একটি মাত্র কারণে উদ্ভব ও বিকাশ হয় নি।

জাতীয়তাবাদের উপাদানগুলো লিখ।


উত্তরা ভূমিকা : জাতীয়তাবাদ কি তা বুঝার জন্য জাতীয়তাবাদের উপাদান সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। কে সমাজে জাতীয়তার চেতনা দানা বাঁধার পিছনে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো ভূমিকা পালন করে, যা মূলত জাতীয়তাবাদের উপাদান।
১. ভৌগোলিক অখণ্ডতা বা ঐক্য : জাতীয়তাবাদের প্রথম ও প্রধান উপাদান হলো ভৌগোলিক একতা। জাতি করতে হলে কোন জনসমষ্টিকে একটি নির্দিষ্ট ও সংলগ্ন ভূখণ্ডে বসবাস করতে হবে।
২. বংশগত ঐক্য : বংশগত ঐক্য জাতীয়তাবাদের ক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে। এটা মানুষের মধ্যে এমন এক প্রকার সুদৃঢ় এক্যভাব গড়ে তোলে যা জাতি গঠনে অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে।
৩. ধর্মীয় ঐক্য : এটা জাতীয়তাবাদের অপর একটি উল্লেখযোগ্য উপাদান। জাতীয়তাবাদের ধারণার সৃষ্টি করে এবং তা জোরদার করার ক্ষেত্রে ধর্মীয় একতা একটি শক্তিশালী উপাদান হিসেবে কাজ করে। এটা জাতীয়তাবোধের সৃষ্টির এক জানে সূত্র এবং এর উপর ভিত্তি করে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে বহু জাতীয় রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়েছে।
৪. অর্থনৈতিক একতা : জনগণকে জাতীয়তাবোধে অনুপ্রাণিত করে অর্থনৈতিক একতা। অর্থনৈতিক দিক হতে যখন জনগণের মধ্যে ক্ষমতা বিরাজ করে, তখন তারা একত্রে বসবাস করার মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়। সব জনগণের স্বার্থ যখন এক ও অভিন্ন হয়, তখন তাদের মধ্যে জাতীয়তাবাদের বন্ধন সুদৃঢ় হয়ে উঠে।
৫. ভাবগত ঐক্য : জাতীয়তাবোধ গঠনের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ভাবগত ঐক্য। এটা ব্যতীত জাতি গঠনের অপরাপর উপাদানসমূহ তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ তাদের ছাড়াও একটি জাতি গড়ে উঠতে পারে।
৬. একক শাসনব্যবস্থা : এটা জাতীয়তাবাদ গঠনের অপর একটি উপাদান। একই শাসনব্যবস্থার অধীনে দীর্ঘদিন থাকলে স্বভাবতই জনগণের মধ্যে জাতি গঠনের স্পৃহা দেখা দেয় এবং তারা জাতিগঠনে উদ্বুদ্ধ হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, জাতীয়তাবাদ ইতিহাসের সৃষ্টি। সবদেশে একই ধরনের উপাদান এবং একইভাবে জাতীয়তাবাদ সৃষ্টি হয়েছে তা মনে করার কোন কারণ নেই। জোর করে কৃত্রিম উপায়ে পরিকল্পনা করে কোন জাতি সৃষ্টি করা যায় না।

আফ্রিকান জাতীয়তাবাদ বিকাশের পর্যায়গুলো উল্লেখ কর।


উত্তরা ভূমিকা : জাতীয়তাবাদ একটি মানসিক চেতনা বা অনুভূতি যে অনুভূতি নির্দিষ্ট কোন জনগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করে তোলে এবং জাতীয় রাষ্ট্রগঠনের স্বপ্নে বিভোর করে তোলে । জাতীয়তাবাদের উদ্ভব ও বিকাশ ঘটে ইউরোপে পঞ্চদশ শতকে রেনেসাঁর মাধ্যমে এবং পরবর্তীতে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
আফ্রিকান জাতীয়তাবাদের পর্যায় : নিম্নে আফ্রিকান জাতীয়তাবাদের পর্যায়গুলো উল্লেখ করা হলো :
ক. সচেতনতার পর্যায় : ঔপনিবেশিক শাসন শুরু হওয়ার পর আফ্রিকানরা আধুনিক যুগের মধ্যে প্রবেশ করে এবং স্বাভাবিকভাবেই তাদের মধ্যে আত্মসচেতনতা বৃদ্ধি পায়। এ আত্মসচেতনতা থেকে তারা ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণ সম্পর্কে অবহিত হয় যা তাদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটায়। ফলে এ ঔপনিবেশিক শাসনের যুগ থেকে সচেতনতার পর্যায় চিহ্নিতকরণ হয় এবং স্থায়ী ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী অধ্যায় পর্যন্ত। এ সময় তারা ইউরোপীয় শক্তিবর্গের শাসন ও শোষণ সম্পর্কে জ্ঞাত হয়ে সচেতনতার শেষ পর্যায় পৌঁছে যা তাদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনার জন্ম দেয়।
খ. প্রস্তুতির পর্যায় : আফ্রিকান জাতীয়তাবাদের প্রস্তুতি পর্ব শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এবং তা স্থায়ী ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত। অর্থাৎ এই দু' বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময় আফ্রিকানরা জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করে এবং এর মাধ্যমে তারা তাদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করে।
গ. চূড়ান্ত পর্যায় : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপীয় উপনিবেশিক শক্তিবর্গ দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে ঔপনিবেশিক রাজ্য ধরে রাখার সামর্থ হারায়। এ সুযোগ গ্রহণ করে আফ্রিকানরা স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ফলে আফ্রিকান জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের এ পর্যায়কে সশস্ত্র জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায় বলা হয়। কারণ এর ফলে আফ্রিকায় ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটে এবং আফ্রিকা মহাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। তাই আফ্রিকান জাতীয়তাবাদের চূড়ান্ত পর্যায় ধরা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে অর্থাৎ ১৯৪৫ পরবর্তী থেকে ১৯৬০ সালের মধ্যে। কারণ ১৯৬০ সালে ১৩টি আফ্রিকান দেশ স্বাধীনতা লাভের মধ্য দিয়ে আফ্রিকান জাতীয়তাবাদের সমাপ্তি হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রথম পর্যায়ে আফ্রিকানরা তেমনভাবে জাগ্রত না হলেও এক পর্যায়ে জেগে উঠে। ফলে তাদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটে এবং শুরু করে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]