জাতীয়তাবাদের ভিত্তি এবং এর সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ লিখ ।

উত্তর ভূমিকা : জাতীয়তাবাদ বর্তমান যুগের রাজনৈতিক জগতে একটি প্রবল শক্তি। জাতীয় রাষ্ট্রব্যবস্থার উন্নয়নের সাথে সাথে এর আদর্শ বিশ্ব ইতিহাসকেও নাড়া দিয়েছে। উনিশ ও বিশ শতকের মানচিত্রে এটি চরম পরিবর্তন ঘটিয়েছে। জাতিই হচ্ছে প্রধান চরিত্র, যার জন্য মানুষ সংগ্রাম করে, যুদ্ধ করে এবং মৃত্যুবরণ করে। জাতীয়তাবাদের প্রশ্নেই বিশ্বে দুটি মহাযুদ্ধে হাজার হাজার গ্রাম নগর এবং লক্ষ লক্ষ নরনারী ধ্বংসের করাল গ্রাসের স্বীকার হয়েছিল। সুদূর অতীতকাল থেকে এ জাতীয়তাবাদই আবার মুক্তির মন্ত্র হিসেবে কাজ করে আসছিল। আজও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রভাব লক্ষ করা যায়। তাই জাতীয়তাবাদ বিশ্বের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ আদর্শ ।
জাতীয়তাবাদের ভিত্তি : জাতীয় সচেতনতাকে অনাবৃত করতে বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব সম্মিলিতভাবে কাজ করেছে। ওয়াটসন লিখেছেন, “প্রাচীন জাতিগুলোর মধ্যে জাতীয় সচেতনতার জন্ম দিয়েছে রাষ্ট্র ও সাম্রাজ্য।” এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স। উভয় রাষ্ট্রের সম্রাটদেরকে কট্টর আঞ্চলিক শক্তি এবং স্বাধীন মনস্ক সামাজিক অভিজাতদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হয়েছে। কিছুসংখ্যক লেখকের মতে, জাতীয় সচেতনতার জন্য একটি সাধারণ অধিবাস অঞ্চল সবচেয়ে জরুরি। সাধারণ অধিবাসের ধারণা জাতিকে শক্তিশালী এবং স্থিতিশীল করতে সহায়ক হতে পারে কিন্তু জাতিগঠনে অনিবার্য উপাদান কখনই হতে পারে না। ধর্ম আরও একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। ইসরায়েল রাষ্ট্রের তৈরি সম্ভব হয়েছে জাতি হিসেবে ইহুদিদের চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়েই। তবে এক্ষেত্রে একই ধর্ম বা সাধারণ ধর্মাবলম্বী সবাইকে হতেই হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। সাধারণ ভাষা একটি জনগোষ্ঠীকে কাছাকাছি নিয়ে আসতে সক্ষম হয় এবং বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি করে যার ফলে দূরত্ব কমে আসে। এতে করে জাতীয় সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। বেশিরভাগ রাষ্ট্রই অসাম্প্রদায়িকতার চর্চা করে থাকে। আরব জাতীয়তাবাদ হলো কেবল ভাষা ও ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের একমাত্র উদাহরণ। জাতীয় সাহিত্য জাতীয় ঐতিহ্য ও জাতীয় ইতিহাস সংকলনের পথে একটি বৃহৎ পদক্ষেপ। একে বলা যায় জাতীয় ঐতিহ্যের পরিবাহক, যানবাহন। রামসে মুর এর মতে, “বীরত্ব গাথা সম্বলিত ইতিহাস ও ঐতিহ্য জাতির জাতীয় সত্তাকে শক্তিশালী ও দীর্ঘস্থায়ী করতে পারে।”
অভিন্ন রাজনৈতিক অভিব্যক্তি বা উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও ইচ্ছা একটি জাতিগঠনের সর্বা বিভিন্ন রকম উপাদান থাকতে পারে যেমন- অর্থনৈতিক স্বার্থভিত্তিক সমাজ। কিন্তু এ জন্য অনিবার্য নিয়ামক নয়। স্পেনগেলের মতে, “একটি জাতি না ভাষাভিত্তিক, জৈবভিত্তিক, জাতির মূলে আছে স্পিরিচুয়াল উপাদান।” স্বার্থ ও আদর্শের সমাজ ও নিহিত । সত্যিকার জাতীয়তাবাদ সবসময়ই মানবতাবাদী ও সাংস্কৃতিক।
জাতীয়তাবাদের সুবিধা : নিম্নে জাতীয়তাবাদের সুবিধাসমূহ দেয়া হলো ১. ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলগুলো বৃহত্তর একটি পরিচয়ের আবর্তে নিয়ে এসে তাদের মধ ২. জাতীয়তাবাদ হলো জনগণকে সংঘবদ্ধ বা ঐক্যবদ্ধ করার উপায়। অম
অভিন্ন গ্রুপকে একটি বৃহত্তর গ্রুপ বা শ্রেণিতে ঐক্যবদ্ধ করে।”
৩. একটি অঞ্চল বা দেশের প্রাকৃতিক ও অন্যান্য সম্পদের উৎকৃষ্টতম ব্যবহা ৪. একটি সাধারণ শাসকের দ্বারা শাসিত হতে হয় বলে বিভিন্ন শক্তির অপ ব্যবহৃত হয়, যা জাতি গঠিত না হলে ধ্বংসাত্মক খাতে ব্যবহার হতে পার ৫. দেশের জন্য জাতির প্রত্যেক সদস্য জীবন উৎসর্গ করতে মনস্থ। ৬. আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার চর্চা করা যায়।
৭. সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদের বিরুদ্ধে জাতি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রা জাতীয়তাবাদের অসুবিধা : সুবিধা বা গুণ থাকার পাশাপাশি জাতীর বিদ্যমান। এগুলো নিম্নরূপ :
১. ব্যবহারিক বা বাস্তবক্ষেত্রে এর প্রয়োগ উৎকৃষ্ট কোন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে
এক জাতীয়তাবাদের অন্তর্গত মানুষ, অন্য জাতীয়তাবাদকে ঘৃণা করতে মানবসভ্যতার ইতিহাসে জাতীয়তাবাদের উদ্ভব ও বিকাশ নিয়ে এবং প্রতিষ্ঠা

প্রায়ই জাতীয়তাবাদ সামরিক শক্তি প্রদর্শনের মত হুমকির ভিত্তিে দখলদার চরিত্র গ্রহণ করতে পারে।
৫. রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ভাণ্ডারীর মতে, “সংকীর্ণ ধারণার জন্য জাতীয়তাবাদ মানুে
সংঘাতময় সম্পর্কের সূচনা করতে পারে।”
৬. বিকৃত জাতীয়তাবাদ একটি ক্ষতিকারক বিষয় ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ধারণা হিসেবে কার্যকরী হয়েছে, যেখানে এর সম্পর্কে অন্তত একটি বৃহত্তর জন জাতীয়তাবাদ আগ্রাসী এবং নির্মম হতে পারে কিন্তু আমরা তা থেকে বেরিয়ে আ প্রক্রিয়া এবং মানবসভ্যতার ইতিহাসে এ এক সহজাত প্রবণতা।

আফ্রিকান জাতীয়তাবাদ বিকাশের কারণসমূ অথবা, আফ্রিকান জাতীয়তাবাদ বিকাশের মাধ্যমসমূহ লিখ ।


উত্তর ভূমিকা : জাতীয়তাবাদ একটি মানসিক চেতনা। একপ্রকার জাতীয়তাবাদ সৃষ্ট। এটি মূলত একত্রিত হওয়ার এবং একত্রে বসবাস করার আকাঙ্ক্ষার মধ্যেই মূর্ত হয়ে উঠে। কিন্তু আফ্রিকার ক্ষেত্রে একটু ব্যতিক্রম ঘটেছে সমাজকাঠামো এবং ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আফ্রিকায়
আফ্রিকান জাতীয়তাবাদ বিকাশের কারণ : পৃথিবীর যেখানেই জাতীয়তাবাদ গড়ে উঠেছে, সেখানেই কোন না কোন কারণ নিহিত ছিল। অর্থাৎ কারণ ছাড়া জাতীয়তাবাদ গড়ে উঠা সম্ভব নয়। ঠিক আফ্রিকার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটে নি। অর্থাৎ আফ্রিকান জাতীয়তাবাদ গড়ে উঠার পশ্চাতে কতিপয় কারণ নিহিত ছিল। নিম্নে এ কারণগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. পাশ্চাত্য ভাষার প্রভাব : ভাষা আফ্রিকান জাতীয়তাবাদ বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ছিল। এটি আফ্রিকানদের জাতীয়তাবাদ বিকাশের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। এ ভাষা হচ্ছে পাশ্চাত্য ভাষা যাকে একটি অভিন্ন ভাষা হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছিল। কারণ ঔপনিবেশিক শাসকবর্গ তাদের নিজ স্বার্থেই পাশ্চাত্য ভাষা প্রচলন করে এবং এ ভাষা আফ্রিকানরা শিখে নিজেদের মধ্যে ভাবের আদানপ্রদান শুরু করে। ফলে তাদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটে ।
২. খেলাধুলা : আফ্রিকান জাতীয়তাবাদ বিকাশে খেলাধুলা একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। ঔপনিবেশিক শাসকবর্গ বিভিন্ন সময়ে আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে বিভিন্ন খেলাধুলার প্রতিযোগিতার আয়োজন করে এবং এ খেলাধুলার মধ্যে ফুটবল, ক্রিকেট ছিল উল্লেখযোগ্য। এসব খেলাধুলাকে কেন্দ্র করে, বিভিন্ন আফ্রিকানরা একস্থানে মিলিত হয়ে তাদের ভাবের আদানপ্রদান করে। ফলে তা পরবর্তীতে জাতীয়তাবাদ বিকাশে সহায়তা করে ।
৩. ঔপনেশিক প্রশাসনের প্রভাব : ইউরোপীয় শক্তিবর্গ আফ্রিকান উপনিবেশ স্থাপনের পর সেখানে তাদের নিজস্ব প্রশাসন ব্যবস্থা চালু করে। কিন্তু এ প্রশাসনিক যন্ত্র চালাতে হলে প্রচুর জনশক্তির দরকার, যা ইউরোপ থেকে আমদানি সম্ভব নয়। ফলে ইউরোপীয়রা বাধ্য হয়ে স্থানীয় আফ্রিকানদের প্রশাসনে যুক্ত করে। এর ফলে আফ্রিকানরা প্রশাসনিক কর্মকর্তা সম্পর্কে অবহিত হয় এবং ইউরোপীয় শাসন ও শোষণ সম্পর্কে জ্ঞাত হয়। এতে তাদের মনে নিজস্ব প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলার মানসে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটে।
৪. ঔপনিবেশিক শাসনের চরিত্র : আফ্রিকানদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ও বিকাশ ঘটে অঞ্চল ভিত্তিক ও সময় ভিত্তিক। অর্থাৎ আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে জাতীয়তাবাদের উদ্ভব ও বিকাশ হয়েছে। কারণ ইউরোপীয় বিভিন্ন শক্তি আফ্রিকার ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চল দখল করে সেখানে তাদের শাসনব্যবস্থা কায়েম করে। ফলে এ শাসন চরিত্রের উপর আফ্রিকান জাতীয়তাবাদ অনেকটা নির্ভরশীল ছিল। যেমন- ব্রিটিশ শাসিত আফ্রিকায় দ্রুত জাতীয়তাবাদের চেতনা বিকশিত হয়। কিন্তু ফ্রান্স কিংবা বেলজিয়ামের আফ্রিকার জাতীয়তাবাদ বিকশিত হয় দেরিতে
৫. আফ্রো-আমেরিকানদের অবদান : আফ্রিকান জাতীয়তাবাদের বিকাশের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান পালন করেছেন আফ্রো-আমেরিকান নেতৃবৃন্দ। এ আফ্রো-আমেরিকান হচ্ছে আমেরিকায় বসবাসরত দাস শ্রেণির বংশধর। অর্থাৎ যেসব আফ্রিকানদের দাস হিসেবে আমেরিকায় বিক্রি করা হয়েছিল তারা কিংবা তাদের বংশধর পরবর্তীতে দাসত্ব প্রথা হতে মুক্তি পেয়েছিল ১৮৬৫ সালের পর থেকে। এরা পাশ্চাত্য শিক্ষা গ্রহণ করে আফ্রিকায় ফিরে এসে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন জজ প্যাডমোর, ডুবয়, মার্কাস গার্ডে, সিলভেস্টার প্রমুখ। এডওয়ার্ড ব্লাইডেনের মতে, “প্রত্যেক জাতিকে মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হতে হলে তাকে জাতীয়তাবাদের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে হবে।”
৬. পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত নেতৃবৃন্দের অভিজ্ঞতা : আফ্রিকায় পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তন করা হলে বহু আফ্রিকান পাশ্চাত্য শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং উচ্চশিক্ষার জন্য ইউরোপ ও আমেরিকায় যান। কিন্তু তারা এখানে এসে বর্ণবাদের শিকার হন। ফলে তাদের মনে পাশ্চাত্য শক্তিবর্গের শাসন ও শোষণ সম্পর্কে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয় এবং এ অভিজ্ঞতা থেকেই তাদের মনে জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটে।
৭. দুই মহাযুদ্ধের প্রভাব : ইউরোপে অল্প সময়ের ব্যবধানে দুটি মহাযুদ্ধ বা বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ দুটি মহাযুদ্ধেই আফ্রো-এশিয়ানদের সৈনিক হিসেবে পাঠানো হয়। এসব সৈন্যরা যুদ্ধে থাকাকালে ইউরোপীয়দের কাছ থেকে যে আচরণ পেয়েছে, যুদ্ধ শেষে দেশে ফিরে তার ঠিক উল্টো আচরণ পেয়েছে। ফলে এসব যুদ্ধ ফেরত সৈন্যদের মাঝে হতাশা ও ক্ষোভ দেখা দেয় এবং তারা ইউরোপীয় শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়।
৮. প্যান আফ্রিকানিজম : প্যান আফ্রিকানিজম হচ্ছে সারা বিশ্বে কালোদের নিয়ে গঠিত ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। অর্থাৎ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিশেষকরে ইউরোপ ও আমেরিকায় যেসব কালো আফ্রিকানরা বসবাস করতো তাদের নিয়ে একটি সংগঠন করে এবং এর মাধ্যমে শোষণ ও শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ আন্দোলন জাতীয়তাবাদ বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এ আন্দোলনের বক্তব্য ছিল, “আমরা কালো আফ্রিকানদের জন্য স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতা দাবি করছি। আমরা যুদ্ধ করব গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য।'
৯. খ্রিস্টান মিশনারিদের ভূমিকা : আফ্রিকায় প্রথম আসে ইউরোপীয় খ্রিস্টান মিশনারিরা এবং ধর্ম প্রচারই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল । তবে ধর্ম প্রচারের স্বার্থেই তারা আফ্রিকায় প্রথম মিশনারি স্কুল প্রতিষ্ঠা করে এবং এ স্কুলে আফ্রিকানরা শিক্ষা লাভ করে আধুনিক বিশ্বের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পায়। এ মিশনারি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আফ্রিকানরা ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম কথা বলে যা জাতীয়তাবাদের প্রথম পদক্ষেপ।
১০. গোত্ৰতন্ত্র : গোত্রতন্ত্রকে বলা হয় আফ্রিকার জাতীয় সংহতি অর্জনের পথে প্রধান বাধা। তাই স্বাভাবিকভাবে এটা জাতীয়তাবাদের পথেও বাধা হওয়ার কথা। কিন্তু কতিপয় ঐতিহাসিক বলেছেন, গোত্রতন্ত্র আফ্রিকার জাতীয়তাবাদ বিকাশে সহায়তা করেছে। উদাহরণস্বরূপ, Richard L. Sklar এর মন্তব্য ধরা যায়। তিনি বলেছেন যে, একটা পর্যায় পর্যন্ত গোত্ৰতন্ত্র জাতীয়তাবাদ বিকাশে ভূমিকা রেখেছে। যেমন- নাইজেরিয়ার ইউরোবা গোত্র। তবে তিনি এটাও বলেছেন যে, “এটা বড় গোত্রের ক্ষেত্রে প্রয়োজ্য, ছোট গোত্রের ক্ষেত্রে নয়।”
মূল্যায়ন : জাতীয়তাবাদ একটি মানসিক চেতনা যা জাতীয় রাষ্ট্র গঠনের ভিত্তি। কিন্তু এ ভিত্তি পৃথিবীর অন্যান্য দেশে দ্রুত গড়ে উঠলেও আফ্রিকার ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম ঘটে। কারণ আফ্রিকার জাতীয়তাবাদ গড়ে উঠেছে দেরিতে। তবে তা আবার দ্রুত বিকশিত হয়। অবশ্য এর পিছনে আফ্রিকার অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক কতিপয় কারণ নিহিত ছিল। আফ্রিকায় জাতীয়তাবাদের চেতনার উন্মেষ ঘটে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এবং তা ধীরগতিতে এগিয়ে চলে। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এ জাতীয়তাবাদ দ্রুত বিকশিত হয় এবং মাত্র ১৫ বছরের মধ্যে তা স্বাধীনতা আন্দোলনের চূড়ান্ত বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে আসে। অর্থাৎ ১৯৬০ সালে একসাথে ১৩টি আফ্রিকান দেশ স্বাধীনতা অর্জন করে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় আফ্রিকান জাতীয়তাবাদ ভিন্ন ও স্বতন্ত্র ধারায় গড়ে উঠেছে এবং এ জাতীয়তাবাদ হঠাৎ করে একদিনে একটি মাত্র কারণে উদ্ভব ও বিকাশ হয় নি। আফ্রিকান জাতীয়তাবাদ উপর্যুক্ত উপাদানের সমন্বয়ে উদ্ভব ও বিকশিত হয়েছে এবং কোনটির ভূমিকা কারও চেয়ে কম নয়। অর্থাৎ প্রায় সব উপাদানই আফ্রিকান জাতীয়তাবাদে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে এবং তাইতো আফ্রিকা মহাদেশ আজ স্বাধীন ও সার্বভৌম।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]