অনুপনিবেশিকরণ বলতে কী বুঝ? অনুপনিবেশিকরণের কারণগুলো উল্লেখ কর।

উত্তরা ভূমিকা : আফ্রিকায় ইউরোপীয় শাসন প্রতিষ্ঠার পর সেখানে চলে ঔপনিবেশিক শক্তিবর্গের শোষ‍ ক্রয়া। এ শোষণ প্রক্রিয়ার ফলে আফ্রিকানদের মধ্যে বিপ্লব দেখা দেয়, যার ফলে ইউরোপীয় শক্তিবর্গ
পনিবেশিকরণের মাধ্যমে আফ্রিকানদের স্বাধীনতা দিয়ে তারা আফ্রিকা ত্যাগ করে।
য় না। ঔপনিবেশিকরণের পূর্ব অনু নামক উপসর্গ দিয়ে গঠিত হয়েছে অনুপনিবেশিকরণ অর্থাৎ অনু+ঔপনিবেশিকরণ = অনুপনিবেশিকরণ : অনুপনিবেশিকরণ শব্দটি অত্যন্ত জটিল ও মিশ্র শব্দ । এ শব্দটিকে এক কথায় বিশ্লেষণ করা নুপনিবেশিকরণ। এ শব্দটির অর্থ দাঁড়ায় উপনিবেশ শব্দটির বিপরীত শব্দ। অর্থাৎ উপনিবেশ হচ্ছে কোন দেশই ম্রোজ্যবাদী শক্তির করদরাজ্যে পরিণত করে সেখানে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির শাসন প্রতিষ্ঠা করা। আর অনুপনিবেশিকরা চ্ছে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির শাসনব্যবস্থা প্রত্যাহার করা। ইউরোপীয় শক্তিবর্গ পৃথিবীর এশিয়া, আমেরিকা ও আফ্রিকা হাদেশের অজ্ঞ জনগোষ্ঠীর দেশকে দখল করে সেখানে ঔপনিবেশিক শাসন কায়েম করে এবং এসব মহাদেশের নগণকে শোষণ করে তাদের সম্পদ ইউরোপীয় দেশে পাচার করে। অন্যদিকে, উপনিবেশে ইউরোপীয় শক্তিবর্গ নিম্ন য়োজনে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সংস্কৃতি চালু করে। এর ফলে ঔপনিবেশিক জনগণ শিক্ষিত হয়ে জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে গাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। অন্যদিকে, পরপর দুটি বিশ্বযুদ্ধে ইউরোপীয় শক্তিবর্গ দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে চারা আর পূর্বের মতো উপনিবেশ ধরে রাখতে সমর্থ ছিলেন না। এরই প্রেক্ষাপটে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ঔপনিবেশিক [ক্তিবর্গ উপনিবেশ হতে তাদের রাজনৈতিক সমর্থন প্রত্যাহার করে ঔপনিবেশিক হতে চলে যায়। ইতিহাসে এটিই মনুপনিবেশিকরণ। এ প্রক্রিয়া শুরু হয় ১৯৬০ এর দশকে এবং তা অব্যাহত থাকে ১৯৮০ এর দশক পর্যন্ত।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, অনুপনিবেশিকরণ হচ্ছে ঔপনিবেশিক দশ হতে ঔপনিবেশিক শক্তিবর্গ চলে আসা এবং শাসন ক্ষমতা নেটিভদের হাতে অর্পণ করা। যা হোক মনুপনিবেশিকরণের মাধ্যমে আফ্রিকা মহাদেশের স্বাধীনতা আসে এটাই তাৎপর্যপূর্ণ ইতিহাস ।
অনুপনিবেশিকরণের কারণগুলো উল্লেখ কর।
উত্তরা ভূমিকা : ঔপনিাশক শক্তিবর্গ ১৮৮০ এর দশকে আফ্রিকায় প্রবেশ করে এবং সেখানে তাদের শাসন নীতি কায়েম করে। কোন একটি বিশেষ কারণে বা হঠাৎ করে অনুপনিবেশিকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয় নি। এর পশ্চাতে কতিপয় বিশেষ কারণ নিহিত ছিল। নিম্নে এসব কারণ উল্লেখ করা হলো :
১. ঔপনিবেশিক শোষণ : আফ্রিকায় ইউরোপীয় শক্তিবর্গ উপনিবেশ স্থাপনের পর সেখানে তাদের নিজস্ব শাসন পদ্ধতি, রীতিনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি চালু করে। তারাও উন্নত জাতি হওয়ার আশায় ইউরোপীয়দের সাথে একযোগে কাজ করার কামনা করে। কিন্তু ইউরোপীয়রা মানতে রাজী ছিল না। ফলে আফ্রিকানরা ইউরোপীয় শাসকবর্গের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করে, যা অনুপনিবেশিকরণে ভূমিকা রেখেছে।
২. চীনের প্রজাতান্ত্রিক বিপ্লব : চীনের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বৈদেশিক হস্তক্ষেপ শুরু হলে চীনের জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এ প্রেক্ষাপটে ১৯১১ সালে ড. সান ইয়াংসেনের নেতৃত্বে প্রজাতন্ত্রী বিপ্লব সংঘটিত হয়, যাতে মাঞ্চু সরকারের পতন ঘটে এবং বৈদেশিক তথা ঔপনিবেশিক শক্তির ভিত কেঁপে উঠে। ফলে অনুপনিবেশিকরণ একধাপ এগিয়ে যায়।
৩. রুশ বিপ্লবের প্রভাব : বিশ্বের যে কয়টি বিপ্লব সাড়া জাগানো ছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল রুশ বিপ্লব বা বলশেভিক বিপ্লব। রাশিয়ার এ বিপ্লব আফ্রিকানদের ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে অনুপ্রেরণা যোগায়, অনুপনিবেশিকরণের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দেয় ।
৪. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ঔপনিবেশিক জনগণ বিদ্রোহ করতে শুরু করে এবং তার জাতীয়তাবাদের চেতনায় জাগ্রত হয়। এ জাগ্রত হওয়াই অনুপনিবেশিকরণে সাহায্য করে।
৫. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমগ্র ইউরোপীয় শক্তির দুর্বলতা প্রকাশ পায়। ফলে উপনিবেশ ধরে রাখার সামর্থ্য তাদের ছিল না। তাইতো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরপরই অনুপনিবেশিকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, আফ্রিকার ইতিহাসে অনুপনিবেশিকরণ প্রক্রিয়া কোন বিশেষ কারণে সম্পন্ন হয় নি। উপযুক্ত কারণের সমন্বয়ে তা সম্পন্ন হয়। তবে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে - দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তার পরবর্তী বিশ্ব পরিস্থিতি। যা হোক অনুপনিবেশিকরণের মাধ্যমেই আফ্রিকা মহাদেশের স্বাধীনতা আসে এটাই তাৎপর্যপূর্ণ ইতিহাস ।
উত্তম দুশানবোশকরণ হচ্ছে ঔপনিবেশিক দেশ হতে ঔপনিবেশিক শক্তিবর্গের চলে আসা এবং ক্ষমতা নেটিভদের হাতে অর্পণ করা। ইউরোপীয় শক্তিবর্গ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে উপনিবেশ স্থাপন করে সেখানে তাদের শাসনব্যবস্থা কায়েম করে শোষণ প্রক্রিয়া চালু করেন।
অনুপনিবেশিকরণের পদ্ধতি : আফ্রিকায় অনুপনিবেশিকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল প্রধানত দুটি পদ্ধতির মাধ্যমে। নিম্নে পদ্ধতি দুটি সম্পর্কে উল্লেখ করা হলো :
১. ইতিবাচক পদ্ধতি : আফ্রিকায় ইউরোপীয় শক্তিবর্গ তাদের নিজস্ব শাসন পদ্ধতি, রীতিনীতি শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্ম
প্রভৃতি চালু করে। কিন্তু এ পদ্ধতি আফ্রিকানদের জন্য শাপে বর হয়ে দেখা দিল। আফ্রিকানরা পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত উঠলো। ইউরোপীয় শক্তিবর্গ তাদের নিজস্ব প্রয়োজনেই শিক্ষিত আফ্রিকানদের প্রশাসনের বিভিন্ন পদে এবং দোভাষী নিয়োগ দেয়। আফ্রিকানরা ইউরোপীয়দের সংস্পর্শে এসে পাশ্চাত্যের উন্নত ভাষা, জ্ঞানবিজ্ঞান, তথ্য প্রযুক্তি, শিক্ষা ও শাসন পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করতে থাকেন। এ সময় তারা পাশ্চাত্যের ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা সম্পর্কে হয়ে
শ্লেষণ করা বশিকরণ = গন দেশরে নবেশিকরণ ও আফ্রিক মহাদেশের ক্তিবর্গ নিজ উদ্বুদ্ধ হয়ে জেনে তা থেকে শিক্ষা লাভ করল। যার মাধ্যমে অনুপনিবেশিকরণ প্রক্রিয়া সুসম্পন্ন সম্ভব হয়েছিল।
২. নেতিবাচক পদ্ধতি : ইউরোপীয়রা উপনিবেশ সৃষ্টির পর তাদের উপনিবেশে যে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রবর্তন করে তার ফলে ইউরোপীয়দের জন্য নেতিবাচক দিক প্রতিফলিত হয়েছিল। এ নেতিবাচক ধারণা জন্ম নেয় পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত উচ্চবিত্ত আফ্রিকানদের মনে। তারা মনে করতে থাকে যে, ইউরোপীয় শাসকগোষ্ঠী আফ্রিকান সম্পদ পাচার করে ইউরোপীয় দেশে নিয়ে যাচ্ছে। এ সম্পদের পরিমাণ এতই বেশি যে, আফ্রিকান দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়ছে। সুতরাং এ পনিরে পাচার রোধ করতে হবে এবং এ নেতিবাচক ধারণা থেকে তারা জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে, যা অনুপনিবেশিকরণে সহজতর হয়েছিল ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ১৮৮০ এর দশকে ইউরোপীয় দেশগুলো আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপন করে তাদের নিজস্ব শাসন পদ্ধতি চালু করে এবং এ পদ্ধতি টিকিয়ে রাখার জন্য পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রবর্তন করে।

অনুপনিবেশিকরণে জাতিসংঘের ভূমিকা উল্লেখ কর।


উত্তরা ভূমিকা : অনুপনিবেশিকরণ হচ্ছে ঔপনিবেশিক দেশ হতে ঔপনিবেশিক শক্তিবর্গের চলে আসা এবং নিজস্ব শাসন। শাসন ক্ষমতা নেটিভদের হাতে অর্পণ করা। ইউরোপীয় শক্তিবর্গ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে উপনিবেশ স্থাপন করে সেখানে যোগে কাজ তাদের শাসনব্যবস্থা কায়েম করে শোষণ প্রক্রিয়া চালু করেন।
অনুপনিবেশিকরণে জাতিসংঘের ভূমিকা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বের শান্তি স্থাপনের জন্য প্রতিষ্ঠা করা জাতিসংঘ নামক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর ৫০টি দেশের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে। কিন্তু তখন পর্যন্ত বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ছিল উপনিবেশবাদের শিকার। তাই জাতিসংঘের সনদের ধারায় বলা হয় যে, “বিশ্বের প্রতিটি দেশ হবে স্বাধীন ও সার্বভৌম এবং প্রতিটি দেশের মধ্যে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকবে।” এরপর এশিয়া ও আমেরিকার অধিকাংশ দেশ স্বাধীন হয়ে যায় কিন্তু আফ্রিকার দেশগুলো স্বাধীনতা পায় শ বিপ্লব বনি। তারা উপনিবেশবাদের শৃঙ্খলে থেকে যায়। এ প্রেক্ষাপটে ১৯৪৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘ একটি আইন পাস করে, যার নাম ছিল 'Declaration of Decolonizational Rule' এ আইনটি আফ্রিকার অনুপনিবেশিকরণ প্রক্রিয়ার সহায়ক হাতিয়ার ছিল। এ আইনের গুরুত্বপূর্ণ শর্ত ছিল নিম্নরূপ :
১. উপনিবেশবাদ মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থী এবং বিশ্ব শান্তির প্রতি হুমকিস্বরূপ।
২. নিঃশর্তভাবে দ্রুতগতিতে উপনিবেশবাদের অবসান ঘটাতে হবে।
৩. জাতিসংঘ অনতি বিলম্বে সুস্পষ্ট কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে পরাধীন জনগোষ্ঠীর স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে। উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ইউরোপীয় দেশগুলো তাদের
সিকা রেখো শাসন পদ্ধতি টিকিয়ে রাখার জন্য পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রবর্তন করে। এ পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত আফ্রিকানরা এর স্বাধীন জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরু করলে অনুপনিবেশিকরণ নীতি জোরদার হয় এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা এ প্রক্রিয়াকে বাস্তবে রূপ দেয়।
অনুরালো পঞ্চম। বলতে কী বুঝ? অনুপনিবেশিকরণের প্রেক্ষাপটগুলো কী ছিল? লিখ ।
অথবা, অনুপনিবেশিকরণ বলতে কী বুঝ? অনুপনিবেশিকরণের কারণসমূহ বিশ্লেষণ কর।' অথবা, অনুপনিবেশিকরণ কী? এর পটভূমি কী ছিল লিখ ।
অথবা, কেন আফ্রিকায় অনুপনিবেশিকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল? লিখ ।
উত্তর ভূমিকা : পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাদেশ আফ্রিকা। এ বিশাল মহাদেশে বর্তমানে ৫৩টি স্বাধীন দেশ রয়েছে। কিন্তু ১৯৭০ এর দশক পর্যন্ত দুটি দেশ বাদে সমগ্র আফ্রিকা ছিল পরাধীনতার শৃঙ্খলে বন্দি। এ দেশগুলো ছিল। ইউরোপীয় শক্তিবর্গের বিশেষকরে ব্রিটেন, ফ্রান্স, পর্তুগাল, বেলজিয়াম ও জার্মানির উপনিবেশ। এসব ঔপনিবেশিক শক্তিবর্গ ১৮৮০ এর দশকে আফ্রিকায় প্রবেশ করে এবং সেখানে তাদের শাসন নীতি কায়েম করে। আফ্রিকায় ইউরোপীয় শাসন প্রতিষ্ঠার পর সেখানে চলে ঔপনিবেশিক শক্তিবর্গের শোষণ প্রক্রিয়া। এ শোষণ প্রক্রিয়ার ফলে আফ্রিকানদের মধ্যে প্রবল বিপ্লব দেখা দেয়, যার ফলে ইউরোপীয় শক্তিবর্গ অনুপনিবেশিকরণের মাধ্যমে আফ্রিকানদের স্বাধীনতা দিয়ে তারা আফ্রিকা ত্যাগ করে । তাই অনুপনিবেশিকরণ আফ্রিকার ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
অনুপনিবেশিকরণের প্রেক্ষাপট বা কারণ : কোন একটি বিশেষ কারণে বা হঠাৎ করে অনুপনিবেশিকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয় নি। এর পশ্চাতে কতিপয় বিশেষ কারণ নিহিত ছিল। নিম্নে এসব কারণ সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :
১. ঔপনিবেশিক শোষণ : আফ্রিকার ইউরোপীয় শক্তিবর্গ উপনিবেশ স্থাপনের পর সেখানে তাদের নিজস্ব শাসন পদ্ধতি, রীতিনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি চালু করে। আফ্রিকার কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও গোত্র বিভাজিত জাতি ইউরোপীয় উন্নত শাসন পদ্ধতি, সভ্যতা ও সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হয় এবং এগুলোর কিছু কিছু তারা গ্রহণ করে বিশেষ করে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে তারা জাতীয়তাবোধে জাগ্রত হয় । তারাও উন্নত জাতি হওয়ার আশায় ইউরোপীয়দের সাথে একযোগে কাজ করার কামনা করে । কিন্তু ইউরোপীয়রা তা মানতে রাজি ছিল না। ফলে আফ্রিকানদের সাথে ইউরোপীয়দের মানসিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে যায় এবং এক পর্যায়ে আফ্রিকানরা ইউরোপীয় শাসকবর্গের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করে, যা অনুপনিবেশিকরণে ভূমিকা রেখেছে।
২. তুর্কি বিপ্লব : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তুরস্কের সুলতান ছিলেন দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ। অবশ্য তিনি যুদ্ধের অনেক পূর্বেই ক্ষমতায় আসেন এবং তুরস্কে তিনি স্বৈরশাসন কায়েম করেন। তাঁর অত্যাচারে তুরস্কের জনগণ অতিষ্ঠ ছিল এবং তাঁর অত্যাচারের প্রেক্ষাপটে ১৮৯৬ সালে তুর্কি সাম্রাজ্যের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও পণ্ডিতবর্গ দেশ ছেড়ে যান। তারা ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে যান এবং সেখানে গিয়ে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। ১৯১৯ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্কের মিত্র জার্মানি পরাজিত হলে ভার্সাই সন্ধির দ্বারা তুরস্কের উপর কিছু শর্ত আরোপ করা হয়, যাতে তুর্কি সাম্রাজ্যের অখণ্ডতার উপর আঘাত হানে। এতে তুরস্কের জনগণ দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে, যা তুর্কি বিপ্লব নামে খ্যাত। তুর্কি বিপ্লবের ফলে ১৯২৪ সালে দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের পতন ঘটে এবং কামাল আতাতুর্ক ক্ষমতা গ্রহণ করেন। এ বিপ্লব আফ্রিকা অনুপনিবেশিকরণে সহায়ক ভূমিকা রাখে ।
৩. চীনের প্রজাতান্ত্রিক বিপ্লব : অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে চীনের মুক্তদ্বার উন্মুক্তকরণ নীতি দ্বারা বৈদেশিক শক্তিবর্গ চীনে প্রবেশ করে এবং বিভিন্ন বাণিজ্যিক সুযোগ সুবিধা লাভ করে। চীনে তখন মাঞ্চু সরকার প্রতিষ্ঠিত ছিল এবং এ সরকার বিদেশি শক্তির হাতের পুতুলে পরিণত হতে থাকে, যা মাঞ্চু সরকারের দুর্বলতা প্রকাশ করে। এদিকে চীনের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বৈদেশিক হস্তক্ষেপ শুরু হলে চীনের জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এ প্রেক্ষাপটে ১৯১১ সালে ড. সান ইয়াৎ সেনের নেতৃত্বে প্রজাতন্ত্রী বিপ্লব সংঘটিত হয়, যাতে মাঞ্চু সরকারের পতন ঘটে এবং বৈদেশিক তথা ঔপনিবেশিক শক্তির ভিত কেঁপে উঠে। ফলে অনুপনিবেশিকরণ একধাপ এগিয়ে যায়।
৪. রুশ-জাপান যুদ্ধের প্রভাব : আফ্রিকার অনুপনিবেশিকরণ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা তা (১৯০৪-০৫) সালের রুশ-জাপান যুদ্ধের প্রভাব। শাখালিন দ্বীপপুঞ্জের মাঞ্চুরিয়ার দখলকে কেন্দ্র করে প্রাচ্য দেশের ক্ষুদ্র শক্তি জাপানের সাথে পাশ্চাত্যের বৃহৎ শক্তি রাশিয়ার যুদ্ধ বাধে ১৯০৪ সালে এবং ১৯০৫ সালে জাপানের হাতে রাশিয়ার পরাজয় ঘটে। এ ঘটনায় ইউরোপের ইতিহাস প্রকম্পিত হয়। এ ঘটনা আফ্রিকার অনুপনিবেশিকরণে সাহায্য করে।
৫. রুশ বিপ্লবের প্রভাব : বিশ্বের যে কয়টি বিপ্লব সাড়া জাগানো ছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল রুশ বিপ্লব বা বলশেভিক বিপ্লব। এ বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল ১৯১৭ সালে এবং এর স্থায়িত্বকাল ছিল মাত্র ১০ দিন। এ বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল রাশিয়ায়। রাশিয়া ছিল জার শাসিত অঞ্চল এবং এখানে সামন্ত প্রভুরা ছিল সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী। সামন্ত। বা জমিদার শ্রেণী সার্ফ বা ভূমিদাসদের উপর অত্যাচার নির্যাতন করতো। ফলে নির্যাতিত জনগণের ক্ষোভ গিয়ে পড়ে। _জারের উপর। কারণ জার ছিল অত্যাচারী। তাই রাশিয়ার জনগণ লেনিনের নেতৃত্বে জার শাসনের বিরুদ্ধে বিপ্লবে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং জার শাসনের পতন ঘটিয়ে সমাজতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা করে। তাই এ বিপ্লবকে বলা হয় বলশেভিক সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব। রাশিয়ার এ বিপ্লব আফ্রিকানদের ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে অনুপ্রেরণা যোগায় যা অনুপনিবেশিকরণের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দেয়।
৬. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব : অস্ট্রিয়ার যুবরাজ ফার্ডিনান্দের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় এবং এ যুদ্ধ ছিল ইউরোপীয়দের মধ্যে পারস্পরিক দুটি শিবির তৈরি হওয়ার সুবাদে। এ যুদ্ধ যাদের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল তারা ছিল ঔপনিবেশিক শক্তিবর্গ এবং যুদ্ধ শেষে তারা দুর্বল হতে থাকে। এ সুযোগে ঔপনিবেশিক জনগণ বিদ্রোহ করতে শুরু করে এবং তারা জাতীয়তাবাদের চেতনায় জাগ্রত হয়। এ জাগ্রত হওয়াই অনুপনিবেশিকরণে সাহায্য করে।
৭. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই পোল্যান্ডকে কেন্দ্র করে শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং এ যুদ্ধের মূল নায়ক ছিলেন হিটলার। যদিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে হিটলারের পতন ঘটে। তথাপিও এ যুদ্ধে সমগ্র ইউরোপীয় শক্তির দুর্বলতা প্রকাশ পায়। ফলে উপনিবেশ ধরে রাখার সামর্থ্য তাদের ছিল না। তাইতো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরপরই অনুপনিবেশিকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়।
৮. মার্কিন নীতির প্রভাব : প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষেত্র ছিল ইউরোপ এবং এর অধিকাংশ দেশ ছিল ইউরোপীয়। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য নিয়েই মিত্রপক্ষ অক্ষ শক্তির বিরুদ্ধে জয়লাভ করেছে। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথা ইউরোপীয় দেশগুলো শুনতে বাধ্য ছিল। এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঔপনিবেশিক রাজ্যগুলোর প্রতি উদার নীতি গ্রহণ করে এবং তাদেরকে স্বাধীন, দেয়ার পক্ষপাতী ছিলেন। এক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসনের চৌদ্দ দফা স্মরণীয়। এতে প্রস্তাব করা হয় যে, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলো প্রতিষ্ঠিত হবে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধীনে। তাই দেখা যাচ্ছে যে, আফ্রিকার অনুপনিবেশিকরণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদারনীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল ।
৯. ঔপনিবেশিক রাজ্যে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন : আফ্রিকায় ইউরোপীয় শক্তিবর্গ ঔপনিবেশিক রাজ্য প্রতিষ্ঠা করার পর সেখানে তাদের নিজস্ব শাসন পদ্ধতি চালু করে এবং এ শাসন পদ্ধতি অক্ষুণ্ণ রাখার স্বার্থে সেখানে পাশ্চাত্য শিক্ষ প্রবর্তন করা হয়। প্রথম পর্যায়ে আফ্রিকানরা ইউরোপীয়দের সাহায্য করলেও পরবর্তীতে প্রতিরোধ করে। পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আফ্রিকানরা জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয় এবং তারা ঔপনিবেশিক শক্তিবর্গের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। তীব্র আন্দোলনের মুখে ইউরোপীয়রা আফ্রিকা ছাড়তে বাধ্য হয় এবং শেষপর্যন্ত অনুপনিবেশিকরণ প্রক্রিয়া শুরু করে।
মূল্যায়ন : অনুপনিবেশকরণের মাধ্যমে আফ্রিকার স্বাধীনতা আসে। তাই এ প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ১৮৮০ এর দশকে স্ক্র্যাম্বলের মাধ্যমে যে উপনিবেশকরণ নীতি গ্রহণ করা হয় তা অনুপনিবেশিকরণের মাধ্যমে প্রত্যাহার করা হয় এবং এ প্রক্রিয়া শুরু হয় ১৯৬০ এর দশকে। অনুপনিবেশিকরণের মাধ্যমেই আফ্রিকায় ইউরোপীয় শক্তিবর্গের রাজনৈতিক কর্তৃত্বের অবসান ঘটে এবং সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয় আফ্রিকানদের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব। তাছাড় অনুপনিবেশিকরণের মাধ্যমে আফ্রিকার জনগণ ইউরোপীয়দের অত্যাচার ও নির্যাতনের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছে এবং পেয়েছে তাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব। তাইতো আফ্রিকান দেশে ৫৩টি স্বাধীন ও সার্বভৌমত্ব দেশ রয়েছে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, আফ্রিকার ইতিহাসে অনুপনিবেশিকরণ প্রক্রিয়া কোন বিশেষ কারণে সম্পন্ন হয় নি। উপর্যুক্ত কারণের সমন্বয়ে তা সম্পন্ন হয়। তবে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তার পরবর্তী বিশ্ব পরিস্থিতি । যাহোক অনুপনিবেশিকরণের মাধ্যমে আফ্রিকা মহাদেশের স্বাধীনতা আসে এটাই তাৎপর্যপূর্ণ ইতিহাস

অনুপনিবেশিকরণ কী? অনুপনিবেশিকরণে জাতিসংঘের ভূমিকা আলোচনা কর।


উত্তর ভূমিকা : অনুপনিবেশিকরণ হচ্ছে ঔপনিবেশিক শক্তিবর্গের কাছ থেকে ঔপনিবেশিক রাজ্যে চলে আসা ং শাসনক্ষমতা নেটিভদের হাতে অর্পণ করা। ইউরোপীয় শক্তিবর্গ এশিয়া, আমেরিকা ও আফ্রিকা মহাদেশে উপনিবেশ স্থাপন করে এবং সেখানে তাদের শাসনব্যবস্থা কায়েম করে শোষণ চালু করে। ইউরোপীয় শক্তিবর্গ সর্বশেষ উপনিবেশ। স্থাপন করে ১৮৮০ এর দশকে আফ্রিকা মহাদেশে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর ইউরোপীয় রাজনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। এবং সেখানে তারা নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে উপনিবেশ ধরে রাখার সামর্থ্য তারা হারিয়ে। ফেলে। অন্যদিকে, আফ্রিকা মহাদেশে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন তীব্র হতে থাকে এবং এ আন্দোলন স্বাধীনতা আন্দোলনে। রূপ লাভ করে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপীয় শক্তিবর্গ নিজেদেরকে ঔপনিবেশিক রাজ্য থেকে প্রত্যাহার প্রক্রিয়া।
শুরু করে এবং ঔপনিবেশিক দেশগুলো স্বাধীনতা পেতে শুরু করে। মূলত ইউরোপীয় শক্তিবর্গ অনুপনিবেশিকরণের মাধ্যমে আফ্রিকানদের স্বাধীনতা দিয়ে তারা আফ্রিকা ত্যাগ করে। তাই অনুপনিবেশিকরণ আফ্রিকার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ।
অনুপনিবেশিকরণ : ইংরেজি Decolonization শব্দটির বাংলা অর্থ হলো অনুপনিবেশিকরণ বা বি- উপনিবেশিকরণ। অনুপনিবেশিকরণ শব্দটি অত্যন্ত জটিল ও মিশ্র শব্দ। এ শব্দটিকে এককথায় বিশেষণ করা যায় না। ঔপনিবেশিকরণের পূর্বে অনু নামক উপসর্গ দিয়ে গঠিত হয়েছে অনুপনিবেশিকরণ অর্থাৎ অনু + ঔপনিবেশিকরণ অনুপনিবেশিকরণ । এ শব্দটির অর্থ দাঁড়ায় উপনিবেশ শব্দটির বিপরীত শব্দ অর্থাৎ উপনিবেশ হচ্ছে কোন দেশকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দখলে এনে সেখানে সাম্রাজ্যবাদী শাসন প্রতিষ্ঠা করা। অন্যদিকে, অনুপনিবেশিকরণ হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির শাসন প্রত্যাহার করা। ইউরোপীয় শক্তিবর্গ আফ্রিকা দখল করার পর আফ্রিকার জনগণকে শোষণ করে তাদের সম্পদ ইউরোপে পাচার করে। এদিকে ইউরোপীয় শক্তিবর্গ উপনিবেশে তাদের নিজ প্রয়োজন পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সংস্কৃতি চালু করে। এর ফলে ঔপনিবেশিক জনগণ শিক্ষিত হয়ে জাতীয়তাবাধে উদ্বুদ্ধ হয়ে শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। অন্যদিকে, পর পর দুটি বিশ্বযুদ্ধে ইউরোপীয় শক্তিবর্গ দুর্বল হয়ে পড়ে। এরই প্রেক্ষাপটে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ঔপনিবেশিক শক্তিবর্গ আফ্রিকার উপনিবেশ হতে তাদের রাজনৈতিক সমর্থন প্রত্যাহার করে উপনিবেশ হতে চলে যায়। ইতিহাসে অনুপনিবেশিকরণ নামে পরিচিত। আফ্রিকায় এ প্রক্রিয়া শুরু হয় ১৯৬০ এর দশকে এবং তা শেষ হয় ১৯৮০ এর দশকে।
অনুপনিবেশিকরণে জাতিসংঘের ভূমিকা : দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর বিশ্বের শান্তি স্থাপনের জন্য জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। সংস্থাটি ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর ৫০টি দেশের প্রতিনিধি নিয়ে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু তখন পর্যন্ত বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ছিল উপনিবেশবাদের শিকার। তাই জাতিসংঘের সনদের একটি ধারায় বলা হয় যে, “বিশ্বের প্রতিটি দেশ হবে স্বাধীন ও সার্বভৌম এবং প্রতিটি দেশের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকবে। এরপর এশিয়া ও আমেরিকা মহাদেশের অধিকাংশ দেশ স্বাধীন হয়ে যায়, কিন্তু আফ্রিকার দেশগুলো স্বাধীনতা পায় নি। এদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের সাম্রাজ্যবাদ নীতি অনুযায়ী আফ্রিকার স্বাধীনতা আন্দোলনকে সমর্থন করে জাতিসংঘের মাধ্যমে। এ প্রেক্ষাপটে ১৯৪৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘ একটি আইন পাস করে যার নাম ছিল, "Declaration of Decolonizational Rule". এ আইনটি আফ্রিকার অনুপনিবেশিকরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল । এ আইনের গুরুত্বপূর্ণ শর্ত ছিল নিম্নরূপ :
১. উপনিবেশবাদ মৌলিক মানবাধিকার পরিপন্থী এবং বিশ্ব শান্তির প্রতি হুমকিস্বরূপ ।
২. নিঃশর্তভাবে দ্রুতগতিতে উপনিবেশবাদের অবসান ঘটাতে হবে।
৩. জাতিসংঘ অনতিবিলম্বে সুস্পষ্ট কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে পরাধীন জনগোষ্ঠীর স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে। জাতিসংঘের গৃহীত পদক্ষেপ : জাতিসংঘ আফ্রিকার অনুপনিবেশিকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য সাতটি পদক্ষেপ গ্রহণ করে। নিম্নে এগুলো আলোচনা করা হলো :
১. অছি পরিষদ : আফ্রিকার উপনিবেশগুলো স্বাধীনতার পর তাদের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এ প্রত্যাশায় অছি পরিষদে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
২. নিরাপত্তা পরিষদ : নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ১৫ হলেও ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত সদস্য সংখ্যা ছিল জন। নিরাপত্তা পরিষদের দায়িত্ব ছিল বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। আফ্রিক অনুপনিবেশিকরণের জন্য বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হয়।
৩. অনুপনিবেশিকরণের বিশেষ কমিটি : আফ্রিকার অনুপনিবেশিকরণের প্রক্রিয়াকে জোরদার করার জন্য বিশেষ কমিটি গঠন করে জাতিসংঘ। এ কমিটির মাধ্যমে অনুপনিবেশিকরণ প্রক্রিয়ার তদারকি, ঔপনিবেশিক শক্তিবর্গের উপর চাপ প্রয়োগ, বাস্তবায়ন ইত্যাদি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
8. নিষেধাজ্ঞা আরোপ : বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘ যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে তার মধ্যে নিষেধজ্ঞ আরোপ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। আফ্রিকার অনুপনিবেশিকরণ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের জন্য ঔপনিবেশিক শক্তিবর্গের উপর বিচ্ছি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় ।
পর্যবেক্ষণ প্রেরণ : যেহেতু আফ্রিকার উপনিবেশগুলো স্বাধীনতা পেতে দেরি করছে, তাই জাতিসংঘ পর্যবেক্ষ দল গঠন করে। এ পর্যবেক্ষক দল আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রেরণ করা হয় এবং অনুপনিবেশিকরণ প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করে স্বাধীনতার উপযোগী করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ।
৬. নির্বাচন তদারকি করা : আফ্রিকার অনুপনিবেশিকরণ প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন উপনিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হওয়ার লক্ষ্যে জাতিসংঘ নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল গঠন করে তা আফ্রিকায় প্রেরণ করা হয় ।
৭. কারিগরি সাহায্য : আফ্রিকার ঔপনিবেশিক রাজ্যের উন্নতির লক্ষ্যে জাতিসংঘ কারিগরি শিক্ষা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অনুপনিবেশিকরণ প্রক্রিয়া সহজীকরণ করে দেয় ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, পৃথিবীর যে কোন দেশ্যে অনুপনিবেশিকরণে কোন না কোন মাধ্যম বা সংগঠন কাজ করে। তেমনি আফ্রিকার অনুপনিবেশিকরণে জাতিসংঘের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গঠিত হয়েছিল জাতিসংঘ নামক আন্তর্জাতিক সংস্থাটি এবং এর প্রধান লক্ষ্য ছিল বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। এ শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন ছিল বিশ্বে স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের উদ্ভব কারণ ঔপনিবেশিক শক্তিবর্গ দ্বারা শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় । শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য দরকার শান্তিকামী মানুষ, যা ঔপনিবেশিক রাজ্যে ছিল । তাই জাতিসংঘ উদ্যোগী হয়ে অনুপনিবেশিকরণ প্রক্রিয়া শুরু করে এবং জাতিসংঘের আওতায়ই প্রথম লিবিয়া স্বাধীনতা পায়। পরবর্তীতে ১৯৬০ সালের পর দ্রুত আফ্রিকান দেশগুলো স্বাধীনতা পেতে থাকে। অতএব, আফ্রিকার অনুপনিবেশিকরণে জাতিসংঘের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]