ঘানার স্বাধীনতার জনক ড. নক্রুমা কে? তাঁর কর্মময় জীবন প্রণালীর সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধর।

উত্তরা ভূমিকা : পশ্চিম আফ্রিকার অন্যতম বৃহত্তম দেশ হচ্ছে ঘানা এবং ঘানার পূর্ব নাম গোল্ডকোস্ট। জান যায় যে, গোল্ডকোস্টের রাজধানী আক্রায় দাস ব্যবসায়ের জন্য একটি দুর্গ প্রাসাদ ছিল, যার প্রতিষ্ঠাতা ছিল দিনেমারগণ এবং এটা নির্মাণ করা হয় ১৬৬১ সালে। তবে এর নাম দেয়া হয়েছিল ক্রিশ্চিয়ান বার্গ ক্যাসল। যে ভূমিখণ্ডের উপর এ প্রাসাদ নির্মিত হয়েছে দিনেমারগণ সাত খণ্ড সোনার কাঠির বিনিময়ে স্থানীয় আরব দলপতিদের কাছ থেকে তা কিনে নিয়েছিল। তাই এর নামকরণ করা হয় গোল্ডকোস্ট। পর্যায়ক্রমে এ অঞ্চলে আসে পর্তুগিজ, ফরাসি, ওলন্দাজ ইংরেজগণ। তবে এখানে আধিপত্য বিস্তার করে ব্রিটেন। ঘানায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠার পর সেখানে চলে অত্যাচার, শোষণ ও নির্যাতন। ফলে এর প্রতিবাদে ঘানায় জাতীয়তাবাদী আন্দোলন সংঘটিত হয় এবং জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের চাপে ১৯৫৭ সালে ঘানা স্বাধীনতা অর্জন করে। ঘানার জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও স্বাধীনতা অর্জনের পিছে যার অবদান রয়েছে, তিনি হচ্ছেন ড. নক্রুমা, যাকে ঘানার স্বাধীনতা আন্দোলনের জনক বলা হয় ।
জন্ম ও পরিচয় : ড. নক্রুমা ১৯০৯ সালে ফরাসি উপনিবেশ আইভরিকোস্টের সীমান্তের নিকটবর্তী এনজি অঞ্চলের এনক্রুফুল নামক ক্ষুদ্র পলিতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শনিবারে জন্মগ্রহণ করেন বলে তাঁর নাম রাখা হ 'কোয়ামে'। এনজিমা এলাকার আঞ্চলিক ভাষার 'কোয়ামে' শব্দ শনিবার সংশিষ্ট একটা অর্থ প্রকাশ করে। তবে বড় হয় তিনি নক্রুমা নামে পরিচিত হন। তাঁর পিতা পেশায় ছিলেন স্বর্ণকার এবং মাতা ক্ষুদ্র দোকানদার। ড. নক্রুমার ভক্তর তাঁকে ‘থানার বিরাট পুরুষ, ঘানার ঈগল ও আফ্রিকার সিংহ' প্রভৃতি বিশেষণে আখ্যায়িত করে থাকেন।
শিক্ষাজীবন : ড. নক্রুমার শিক্ষাজীবনের বেশিরভাগ সময়ই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অতিবাহিত করেছেন। স্থানীয় মিশন স্কুলে নক্রুমা শিক্ষাজীবন শুরু করেন এবং পরে আক্রার নিকটস্থ আচিমোতা কলেজে বিদ্যাভ্যাস করেন। এর পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে তিনি তাঁর এক আত্মীয়ের সহায়তায় আমেরিকায় গমন করে সেখানে পেনসিলভ্যানিয়ার লিংকন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পান। আমেরিকায়ই তিনি বি.এ ও এম.এ পাস করেন। নক্রুমার সর্বশেষ শিক্ষাজীবন অতিবাহিত হয় ইংল্যান্ডে। তিনি লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিকস্ থেকে অর্থনীতিতে উচ্চতর জ্ঞান অর্জন করেন ।
নজুমার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য : নক্রুমার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিল উন্নত। তিনি মদ্যপান করতেন না। এমনকি তাঁর ধূমপানের অভ্যাসও ছিল না। মদ্যপান করতেন না এমন লোক মুসলমান ব্যতীত আফ্রিকার অপর কোন সমাজে খুব কমই দেখা গেছে। নক্রুমা ছিলেন এ শ্রেণির স্বল্পসংখ্যক লোকদের একজন। তিনি প্রধানত নিরামিষ জাতীয় আহার্যই পছন্দ করতেন। তিনি একাদিক্রমে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত কাজ করতে পারতেন। এতে তিনি ক্লান্ত হতেন না। তিনি যৌবনে কমিউনিস্টদের সাথে তাঁর মেলামেশা ছিল এবং তিনি পুরাদস্তুর একজন সমাজতন্ত্রবাদী।
বিপ্লবী সম্পর্কে নতুমার ধারণা : আফ্রিকায় যখন জাতীয়তাবাদী আন্দোলন দানা বেঁধে উঠে, তখন ড. নক্রুমা লন্ডনে ও আমেরিকার, প্যান আফ্রিকান আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে তিনি আফ্রিকায় চলে আসেন এবং বিপ্লব সম্পর্কে ধারণা দেন। তিনি বলেছেন যে, “গোল্ডকোস্টের বিপ্লবের ফলে আফ্রিকায় বিশেষত পশ্চিম আফ্রিকার মুক্তি ত্বরান্বিত হবে।” গোল্ডকোস্ট, নাইজেরিয়া ও পশ্চিম আফ্রিকার অন্যান্য অঞ্চলের সমন্বয়ে শেষ পর্যন্ত একটা ফেডারেশন গঠিত হবে এ ধারণাই তিনি পোষণ করতেন ।
নতুমার রাজনৈতিক জীবন : নক্রুমার রাজনৈতিক জীবন অত্যন্ত জটিল ও ঘটনাবহুল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ড. ৷ নক্রুমা ঘানা তথা তাঁর নিজদেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরেই তিনি সম্মিলিত গোল্ডকোস্ট কনভেনশন দলের সেক্রেটারির পদ গ্রহণ করেন। দু'মাস পরেই ঔপনিবেশিক সরকারের দমন নীতির প্রতিবাদে রাজধানী আক্রায় বিক্ষোভ মিছিল হয় এবং পুলিশের সাথে সংঘর্ষ সংঘটিত হয়। এ সময় পুলিশের গুলিতে ২৯ জন আফ্রিকান মারা যান। এতে নক্রুমা ক্ষেপে যান এবং তিনি বিলাতে ঔপনিবেশিক সদর দপ্তরে এক টেলিগ্রাম পাঠিয়ে কয়েকটি দাবি পেশ করেন । যেমন-
১. গভর্নরকে পদচ্যুত করাতে হবে। ২. ঘানার স্বায়ত্তশাসন অবিলম্বে দিতে হবে।
৩. ভাবী শাসনতন্ত্র প্রণয়নের উদ্দেশ্যে একটি কমিশন গঠন করতে হবে।'
কিন্তু নক্রুমার এ দাবি প্রত্যাখ্যান করা হয় এবং দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। এ প্রেক্ষাপটে ঘানার গভর্নর ড. নক্রুমাসহ কয়েকজন জাতীয় নেতাকে বন্দি করে নির্বাসনে পাঠিয়ে দেন।
নক্রুমাকে নির্বাসনে পাঠিয়েও পরিস্থিতি শান্ত করা যায় নি। ফলে বাধ্য হয়ে দেশের ভাবী শাসনতন্ত্র রচনার দায়িত্ব দেওয়া হয় আফ্রিকানদের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটির উপর। এরই প্রেক্ষাপটে ঘানায় নতুন গভর্নর হয়ে আসেন স্যার চার্লস আর্ডেন ক্লার্ক । তিনি ঘানায় এসেই নক্রুমাকে নির্বাসন থেকে ফিরিয়ে আনেন এবং তাঁকে লাটভবনে আমন্ত্রণ জানানো হয় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত করার ব্যাপারে আলাপ আলোচনার জন্য। এ পরিস্থিতিতে ১৯৫০ সালের ৫ জানুয়ারি ক্লার্ক-নক্রুমা বৈঠক হয় এবং ক্লার্কের প্রস্তাবসমূহ নক্রুমা কর্তৃক প্রত্যাখ্যান করা হয়। বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে তিনি সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেন। এতে নক্রুমাকে বন্দি করা হয় এবং দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয় ।
এ পরিস্থিতিতে নতুন শাসনতন্ত্র রচিত হয় এবং দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নক্রুমা জেলে বসে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। এ নির্বাচনে কনভেনশন দল ৩৮টি আসনের মধ্যে ৩৪টি আসন দখল করতে সমর্থ হলে নির্বাচনের ফলাফল দেখে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ নক্রুমাসহ সকল জাতীয় নেতাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হলেন এবং নক্রুমাকে প্রধানমন্ত্রী করে ১৯৫২ সালের মার্চ মাসে গোল্ডকোস্টের প্রথম নির্বাচিত সরকার গঠন করা হয়।
নক্রুমা দেশ চালাতে থাকেন এবং ১৯৫৪ সালে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ ঘানার শাসনতন্ত্র আর একবার সংস্কার করে ঘোষণা দিলেন যে, যথাসম্ভব শীঘ্র গোল্ডকোস্টের সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে দেয়া হবে ।
ঘানার স্বাধীনতা ও নজুমা : নক্রুমাকে প্রধানমন্ত্রী করার পরও জাতীয়তাবাদী আন্দোলন থেমে থাকে নি। বরং তা আরও চরমে পৌঁছে যায়। এ প্রেক্ষাপটে ১৯৫৭ সালের ৬ মার্চ ‘ঘানা’ নাম গ্রহণ করে গোল্ডকোস্ট কমনওয়েলথভুক্ত একটি পূর্ণ স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ করে । স্বাধীন ঘানার প্রথম প্রধানমন্ত্রী করা হয় ড. নক্রুমাকে এবং নক্রুমা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৬০ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি ঘানার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েই তিনি সমাজতন্ত্রের পথ অনুসরণ করেন এবং ঘানাকে আফ্রিকার মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে চাইলেন। তাই তিনি গিনি ও মালিকে নিয়ে একটি অর্থনৈতিক জোট গঠন করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি সফলতার মুখ দেখতে পারেন নি।

স্বাধীনতাত্তোর নাইজেরিয়ার জাতীয় সংহতির সমস্যাগুলো চিহ্নিত কর।


অথবা, স্বাধীনতা পরবর্তী নাইজেরিয়ায় জাতীয় রাষ্ট্র গঠনের পশ্চাতে বাধাসমূহ চিহ্নিত কর। অথবা, স্বাধীনতা পরবর্তী নাইজেরিয়ার জাতীয় সংহতি অর্জনের পথে প্রতিবন্ধকতাসমূহ
উল্লেখ কর।
উত্তর ভূমিকা : আফ্রিকা মহাদেশের বৃহত্তম দেশ হচ্ছে নাইজেরিয়া এবং এটা হলো জনসংখ্যাধিক্য দেশ। দেশে প্রায় ২৫০টি উপজাতি বা সম্প্রদায়ের বাস এবং সেসব সম্প্রদায়ের মধ্যে বহুবিধ ভাষা প্রচলিত। প্রকৃতপক্ষে, নাইজেরিয়ার বড় সমস্যাই হচ্ছে বিভিন্ন উপজাতির মধ্যকার ভাষার ব্যবধান এবং অন্যান্য ব্যাপারে বিরাট পার্থক্য ও তৎসংক্রান্ত ঐক্যবোধের অভাব। তাছাড়া নাইজেরিয়ার আরেক বড় সমস্যা হচ্ছে গোত্রতন্ত্র, যা স্বাধীনতাত্তোর নাইজেরিয়ার জাতীয় সংহতি অর্জনের পথে প্রধান প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। অন্যদিকে, স্বাধীনতাত্তর নাইজেরিয়ায় ঘনঘন সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে যা জাতীয় সংহতি অর্জনের পথে প্রতিনিয়ত বাধা সৃষ্টি করে রেখেছে।
স্বাধীনতাত্তর নাইজেরিয়ার জাতীয় সংহতির সমস্যা : নাইজেরিয়া ১৯৬০ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে । কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে নাইজেরিয়ার রাজনৈতিক অবস্থায় অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছিল এবং এর প্রভাব পড়ে নাইজেরিয়ার অর্থনৈতিক কাঠামোর উপর। ফলে নাইজেরিয়ার জনগণ পরিপূর্ণ দারিদ্র্যের মধ্যে জীবনযাপন করে। এ প্রেক্ষাপটে নাইজেরিয়ার জাতীয় সংহতি অর্জনের পথে কতিপয় সমস্যা দেখা দেয়। নিম্নে এ সমস্যাগুলো সম্পরে আলোকপাত করা হলো :
১. সরকারি কার্যকলাপ : স্বাধীনতাত্তর নাইজেরিয়ার প্রথম গভর্নর জেনারেল ছিলেন জেমস রবার্টসন। তিনি ছিলে ব্রিটিশ গভর্নর। তিনি ১৯৬২ সালে নাইজেরিয়ান আজিকিউয়ের হাতে ক্ষমতা অর্পণ করে ব্রিটেন চলে যান এব নাইজেরিয়ার প্রথম রাষ্ট্রপতি হন আজিকিউয়ে। তিনি ক্ষমতা গ্রহণ করেই নাইজেরিয়াকে প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষ করেন। প্রথমেই তিনি নাইজেরিয়ার আদমশুমারির ব্যবস্থা করেন। এতে উত্তরাঞ্চলের লোকসংখ্যা বেশি দেখানো হয় ফলে জনগণের মধ্যে ক্ষোভের দানা বেধে উঠে। এতে উপজাতিগত দাঙ্গা বাধার উপক্রম হয়।
২. বিরোধীদলের কর্মকাণ্ড : নাইজেরিয়ায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল গড়ে উঠে এবং এসব দলের মধ্যে জনপ্রিয় নে ছিলেন আকিনটোলা ও আউওলোউও। তারা সরকারি কর্মকাণ্ডে বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠেন এবং প্রতিবাদ করেন। ফলে শুরু সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ড। এদিকে ইউনাইটেড মিডল বেল্ট ছিল অন্যতম রাজনৈতিক সংগঠন। আউওলোউও এর স যুক্ত হন এবং ১৯৬১ সালে উত্তর নাইজেরিয়ার সাধারণ নির্বাচন উপলক্ষে একটি নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করা হ যাতে কতিপয় দাবি উত্থাপন করা হয়। যেমন-
ক. পশ্চিম নাইজেরিয়ার সাথে সমান্তরাল করে দৈনিক ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা।
খ. নাইজেরিয়ায় টিনের খনি জাতীয়করণ করা ।
গ. কৃষিক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা।
মিডল বেল্টকে আলাদা প্রাদেশিক রাজ্যের মর্যাদা দেয়া।
৬. কৃষকদের খামারগুলোকে সমাজবাদী সংস্থায় পরিবর্তন করা।
চ. ইংল্যান্ডের সাথে সামরিক সম্পর্ক ছিন্ন করা।
৩. দমন নীতি : সরকার বিরোধীদলের কার্যক্রমে ভীত হয়ে পড়ে এবং দমন নীতি প্রয়োগ করে। এর অংশ হিসেবে আজিকিউয়ে সরকার বিরোধী নেতা আউওলোউওকে বন্দি করে। এর ফলে নাইজেরিয়ার রাজনৈতিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায়, যা জাতীয় সংহতির অন্যতম প্রধান বাধা ।
৪. শিক্ষাক্ষেত্রে অস্থিরতা : শিক্ষাক্ষেত্রে অস্থিরতা নাইজেরিয়ার স্বাধীনতাত্তরকালে জাতীয় সংহতির অন্যতম প্রধান বাধা। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অস্থিরতার প্রভাব গিয়ে পড়ে শিক্ষাক্ষেত্রে। এর প্রেক্ষাপটে শিক্ষাঙ্গন হয়ে উঠে উত্তপ্ত এবং শুরু হয় ছাত্র রাজনীতি ও আন্দোলন। এ সময় বিভিন্ন প্রদেশে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি উত্থাপন করা হয়। এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নাইজেরিয়ায় তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। যেমন- রাজধানী লাগোসে, উত্তর নাইজেরিয়ার জারিয়া শহরে এবং পূর্ব নাইজেরিয়ার নসুককাতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। এদিকে সোকোটার সাদুয়ানা আহমেদু বেলোর বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ইবোকে উপাচার্যের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। তবে গোত্রজনিত দ্বন্দ্বের শিকার হয়ে তাঁকে ১৯৬৩ সালে অপসারণ করে তদস্থলে ইয়োরুককে উপাচার্যের দায়িত্ব দেয়া হয়। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষাক্ষেত্রের পরিবেশ আরও অশান্ত হয়ে উঠে ।
৫. উত্তরাঞ্চলে মুসলিম দ্বন্দ্ব : নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চল ছিল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। কিন্তু এ অঞ্চলে তাদের মধ্যে কোন ঐক্য ছিল না, বরঞ্চ ছিল দ্বন্দ্ব। স্বাধীনতার পূর্বে এখানে দুটি রাজনৈতিক দল ছিল । যথা : NPC যারা রক্ষণশীল দলভুক্ত এবং NEPU যারা প্রগতিশীল দলভুক্ত। স্বাধীনতার পর NEPU দলটি MONC এর সাথে মিলিত হয়ে গঠন করে United Progressive Grant Alaince নামক সংগঠন। ফলে স্বাধীনতাত্তর নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলে দুটি মুসলিম রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে উঠে। যেমন- NPC ও NNDP। এদের মধ্যে প্রায়ই দ্বন্দ্ব লেগে থাকতো।
৬. সামরিক অভ্যুত্থান : স্বাধীনতাত্তোর জাতীয় সংহতির অন্যতম প্রধান সমস্যা হচ্ছে সামরিক অভ্যুত্থান। স্বাধীনতার পর নাইজেরিয়ার জনগণ প্রায়ই সামরিক অভ্যুত্থানের শিকার হয়। স্বাধীনতাত্তর নাইজেরিয়ায় প্রথম সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে ১৯৬৬ সালে এবং এর নেতৃত্ব দেন জেনারেল ইরোনসি। এ সামরিক অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রী আফাওয়া বেলাওয়া প্রাণ হারান। এর পরপরই জেনারেল ইরোনসিও আরেক সামরিক অভ্যুত্থানে প্রাণ হারান। ফলে শুরু হয়ে যায় নাইজেরিয়ায় সামরিক অভ্যুত্থান এবং বেশ কয়েকবার নাইজেরিয়ার জনগণ সামরিক অভ্যুত্থানের কবলে পতিত হয় এবং এভাবে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত চলতে থাকে। ফলে দেখা যাচ্ছে যে, নাইজেরিয়ার জাতীয় সংহতির প্রধান সমস্যা হচ্ছে সামরিক অভ্যুত্থান ।
৭. গৃহযুদ্ধ : নাইজেরিয়ার জাতীয় সংহতির পথে আরেকটি প্রধান বাধা হচ্ছে গৃহযুদ্ধ। এ গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হয় নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের মধ্যে। তথা কেন্দ্রীয় সরকার ও বায়াফ্রা প্রদেশের মধ্যে যা বায়াফ্রা সমস্যা নামে পরিচিত। ১৯৬৭ সালে ইউরোবা ও ইবো গোত্রের মধ্যে যে জাতিগত দ্বন্দ্ব শুরু হয় তাই নাইজেরিয়ার গৃহযুদ্ধ নামে পরিচিত
। এ যুদ্ধ যদিও বর্তমানে শেষ হয়ে গেছে, তথাপিও তা জাতীয় সংহতির পথে বাধা সৃষ্টি করেছে। উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, নাইজেরিয়ায় বহু গোত্র বিভাজিত সমাজব্যবস্থা থাকায় এখানে প্রায়ই জাতিগত দ্বন্দ্ব দেখা দেয় এবং এ দ্বন্দ্বই জাতীয় সংহতি অর্জনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া স্বাধীনতাত্তোর নাইজেরিয়ার জাতীয় সংহতির পথে আর যেসব সমস্যা দেখা যায় তা হল রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, ধর্মীয় দাঙ্গা, সামরিক অভ্যুত্থান, গৃহযুদ্ধ প্রভৃতি। যদিও বর্তমানে নাইজেরিয়ায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তথাপিও জাতীয় সংহতির সমস্যা রয়েই গেছে ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]