উত্তরা ভূমিকা : পশ্চিম আফ্রিকার অন্যতম বৃহত্তম দেশ হচ্ছে ঘানা এবং ঘানার পূর্ব নাম গোল্ডকোস্ট। জান যায় যে, গোল্ডকোস্টের রাজধানী আক্রায় দাস ব্যবসায়ের জন্য একটি দুর্গ প্রাসাদ ছিল, যার প্রতিষ্ঠাতা ছিল দিনেমারগণ এবং এটা নির্মাণ করা হয় ১৬৬১ সালে। তবে এর নাম দেয়া হয়েছিল ক্রিশ্চিয়ান বার্গ ক্যাসল। যে ভূমিখণ্ডের উপর এ প্রাসাদ নির্মিত হয়েছে দিনেমারগণ সাত খণ্ড সোনার কাঠির বিনিময়ে স্থানীয় আরব দলপতিদের কাছ থেকে তা কিনে নিয়েছিল। তাই এর নামকরণ করা হয় গোল্ডকোস্ট। পর্যায়ক্রমে এ অঞ্চলে আসে পর্তুগিজ, ফরাসি, ওলন্দাজ ইংরেজগণ। তবে এখানে আধিপত্য বিস্তার করে ব্রিটেন। ঘানায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠার পর সেখানে চলে অত্যাচার, শোষণ ও নির্যাতন। ফলে এর প্রতিবাদে ঘানায় জাতীয়তাবাদী আন্দোলন সংঘটিত হয় এবং জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের চাপে ১৯৫৭ সালে ঘানা স্বাধীনতা অর্জন করে। ঘানার জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও স্বাধীনতা অর্জনের পিছে যার অবদান রয়েছে, তিনি হচ্ছেন ড. নক্রুমা, যাকে ঘানার স্বাধীনতা আন্দোলনের জনক বলা হয় ।
জন্ম ও পরিচয় : ড. নক্রুমা ১৯০৯ সালে ফরাসি উপনিবেশ আইভরিকোস্টের সীমান্তের নিকটবর্তী এনজি অঞ্চলের এনক্রুফুল নামক ক্ষুদ্র পলিতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শনিবারে জন্মগ্রহণ করেন বলে তাঁর নাম রাখা হ 'কোয়ামে'। এনজিমা এলাকার আঞ্চলিক ভাষার 'কোয়ামে' শব্দ শনিবার সংশিষ্ট একটা অর্থ প্রকাশ করে। তবে বড় হয় তিনি নক্রুমা নামে পরিচিত হন। তাঁর পিতা পেশায় ছিলেন স্বর্ণকার এবং মাতা ক্ষুদ্র দোকানদার। ড. নক্রুমার ভক্তর তাঁকে ‘থানার বিরাট পুরুষ, ঘানার ঈগল ও আফ্রিকার সিংহ' প্রভৃতি বিশেষণে আখ্যায়িত করে থাকেন।
শিক্ষাজীবন : ড. নক্রুমার শিক্ষাজীবনের বেশিরভাগ সময়ই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অতিবাহিত করেছেন। স্থানীয় মিশন স্কুলে নক্রুমা শিক্ষাজীবন শুরু করেন এবং পরে আক্রার নিকটস্থ আচিমোতা কলেজে বিদ্যাভ্যাস করেন। এর পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে তিনি তাঁর এক আত্মীয়ের সহায়তায় আমেরিকায় গমন করে সেখানে পেনসিলভ্যানিয়ার লিংকন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পান। আমেরিকায়ই তিনি বি.এ ও এম.এ পাস করেন। নক্রুমার সর্বশেষ শিক্ষাজীবন অতিবাহিত হয় ইংল্যান্ডে। তিনি লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিকস্ থেকে অর্থনীতিতে উচ্চতর জ্ঞান অর্জন করেন ।
নজুমার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য : নক্রুমার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিল উন্নত। তিনি মদ্যপান করতেন না। এমনকি তাঁর ধূমপানের অভ্যাসও ছিল না। মদ্যপান করতেন না এমন লোক মুসলমান ব্যতীত আফ্রিকার অপর কোন সমাজে খুব কমই দেখা গেছে। নক্রুমা ছিলেন এ শ্রেণির স্বল্পসংখ্যক লোকদের একজন। তিনি প্রধানত নিরামিষ জাতীয় আহার্যই পছন্দ করতেন। তিনি একাদিক্রমে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত কাজ করতে পারতেন। এতে তিনি ক্লান্ত হতেন না। তিনি যৌবনে কমিউনিস্টদের সাথে তাঁর মেলামেশা ছিল এবং তিনি পুরাদস্তুর একজন সমাজতন্ত্রবাদী।
বিপ্লবী সম্পর্কে নতুমার ধারণা : আফ্রিকায় যখন জাতীয়তাবাদী আন্দোলন দানা বেঁধে উঠে, তখন ড. নক্রুমা লন্ডনে ও আমেরিকার, প্যান আফ্রিকান আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে তিনি আফ্রিকায় চলে আসেন এবং বিপ্লব সম্পর্কে ধারণা দেন। তিনি বলেছেন যে, “গোল্ডকোস্টের বিপ্লবের ফলে আফ্রিকায় বিশেষত পশ্চিম আফ্রিকার মুক্তি ত্বরান্বিত হবে।” গোল্ডকোস্ট, নাইজেরিয়া ও পশ্চিম আফ্রিকার অন্যান্য অঞ্চলের সমন্বয়ে শেষ পর্যন্ত একটা ফেডারেশন গঠিত হবে এ ধারণাই তিনি পোষণ করতেন ।
নতুমার রাজনৈতিক জীবন : নক্রুমার রাজনৈতিক জীবন অত্যন্ত জটিল ও ঘটনাবহুল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ড. ৷ নক্রুমা ঘানা তথা তাঁর নিজদেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরেই তিনি সম্মিলিত গোল্ডকোস্ট কনভেনশন দলের সেক্রেটারির পদ গ্রহণ করেন। দু'মাস পরেই ঔপনিবেশিক সরকারের দমন নীতির প্রতিবাদে রাজধানী আক্রায় বিক্ষোভ মিছিল হয় এবং পুলিশের সাথে সংঘর্ষ সংঘটিত হয়। এ সময় পুলিশের গুলিতে ২৯ জন আফ্রিকান মারা যান। এতে নক্রুমা ক্ষেপে যান এবং তিনি বিলাতে ঔপনিবেশিক সদর দপ্তরে এক টেলিগ্রাম পাঠিয়ে কয়েকটি দাবি পেশ করেন । যেমন-
১. গভর্নরকে পদচ্যুত করাতে হবে। ২. ঘানার স্বায়ত্তশাসন অবিলম্বে দিতে হবে।
৩. ভাবী শাসনতন্ত্র প্রণয়নের উদ্দেশ্যে একটি কমিশন গঠন করতে হবে।'
কিন্তু নক্রুমার এ দাবি প্রত্যাখ্যান করা হয় এবং দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। এ প্রেক্ষাপটে ঘানার গভর্নর ড. নক্রুমাসহ কয়েকজন জাতীয় নেতাকে বন্দি করে নির্বাসনে পাঠিয়ে দেন।
নক্রুমাকে নির্বাসনে পাঠিয়েও পরিস্থিতি শান্ত করা যায় নি। ফলে বাধ্য হয়ে দেশের ভাবী শাসনতন্ত্র রচনার দায়িত্ব দেওয়া হয় আফ্রিকানদের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটির উপর। এরই প্রেক্ষাপটে ঘানায় নতুন গভর্নর হয়ে আসেন স্যার চার্লস আর্ডেন ক্লার্ক । তিনি ঘানায় এসেই নক্রুমাকে নির্বাসন থেকে ফিরিয়ে আনেন এবং তাঁকে লাটভবনে আমন্ত্রণ জানানো হয় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত করার ব্যাপারে আলাপ আলোচনার জন্য। এ পরিস্থিতিতে ১৯৫০ সালের ৫ জানুয়ারি ক্লার্ক-নক্রুমা বৈঠক হয় এবং ক্লার্কের প্রস্তাবসমূহ নক্রুমা কর্তৃক প্রত্যাখ্যান করা হয়। বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে তিনি সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেন। এতে নক্রুমাকে বন্দি করা হয় এবং দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয় ।
এ পরিস্থিতিতে নতুন শাসনতন্ত্র রচিত হয় এবং দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নক্রুমা জেলে বসে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। এ নির্বাচনে কনভেনশন দল ৩৮টি আসনের মধ্যে ৩৪টি আসন দখল করতে সমর্থ হলে নির্বাচনের ফলাফল দেখে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ নক্রুমাসহ সকল জাতীয় নেতাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হলেন এবং নক্রুমাকে প্রধানমন্ত্রী করে ১৯৫২ সালের মার্চ মাসে গোল্ডকোস্টের প্রথম নির্বাচিত সরকার গঠন করা হয়।
নক্রুমা দেশ চালাতে থাকেন এবং ১৯৫৪ সালে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ ঘানার শাসনতন্ত্র আর একবার সংস্কার করে ঘোষণা দিলেন যে, যথাসম্ভব শীঘ্র গোল্ডকোস্টের সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে দেয়া হবে ।
ঘানার স্বাধীনতা ও নজুমা : নক্রুমাকে প্রধানমন্ত্রী করার পরও জাতীয়তাবাদী আন্দোলন থেমে থাকে নি। বরং তা আরও চরমে পৌঁছে যায়। এ প্রেক্ষাপটে ১৯৫৭ সালের ৬ মার্চ ‘ঘানা’ নাম গ্রহণ করে গোল্ডকোস্ট কমনওয়েলথভুক্ত একটি পূর্ণ স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ করে । স্বাধীন ঘানার প্রথম প্রধানমন্ত্রী করা হয় ড. নক্রুমাকে এবং নক্রুমা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৬০ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি ঘানার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েই তিনি সমাজতন্ত্রের পথ অনুসরণ করেন এবং ঘানাকে আফ্রিকার মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে চাইলেন। তাই তিনি গিনি ও মালিকে নিয়ে একটি অর্থনৈতিক জোট গঠন করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি সফলতার মুখ দেখতে পারেন নি।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত