আফ্রিকান সমাজতন্ত্রের উদ্ভব ও বিকাশ সম্পর্কে লিখ। আফ্রিকান সমাজতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর

আফ্রিকার সমাজতন্ত্রের প্রবেশ ও এর বিস্তার সম্পর্কে আলোকপাত কর।
উত্তর ভূমিকা : ১৮৮০ এর দশকে আফ্রিকায় স্ক্র্যাম্বলের মাধ্যমে ইউরোপীয় শক্তিবর্গ উপনিবেশ স্থাপন করে এবং সেখানে ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণ কায়েম করে। আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপন করে পুঁজিবাদী দেশসমূহ এবং তাই স্বাভাবিকভাবেই আফ্রিকায় পুঁজিবাদের উদ্ভব ও বিকাশ হওয়ার কথা। কিন্তু বিংশ শতকের শেষ পর্যায়ে এসে যখন আফ্রিকান দেশগুলো স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, তখন প্রায় সব কয়টি আফ্রিকান দেশেই পুঁজিবাদের বিপরীত মেরু তথা সমাজতন্ত্রের উদ্ভব ও বিকাশ ঘটে। তবে আফ্রিকায় যে সমাজতন্ত্রের উদ্ভব ও বিকাশ ঘটে তা মূলত ভিন্ন ধারায় ও ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের আলোকে ঘটে। তাই সমাজতন্ত্রকে আফ্রিকান সমাজতন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
সমাজতন্ত্র : সমাজতন্ত্র বলতে এমন এক সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে বুঝায়, যে ব্যবস্থায় উৎপাদনের সকল উপাদান সমাজ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত, বণ্টন ও বিনিয়োগ ব্যবস্থা সমাজ কর্তৃক পরিচালিত এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তি তিরোহিত হয়। সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ইংল্যান্ডে লেভেলেস ও ডিপ্রার আন্দোলনে মানুষের স্বাধীন জীবনযাপনের কথা বলা হয়। আধুনিককালের সূচনায় সমাজতন্ত্রের সপক্ষে বক্তব্য রাখেন টমাস মুর। সমাজতন্ত্র একাধারে রাজনৈতিক তত্ত্ব ও আন্দোলন যার উদ্দেশ্য হলো উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষকে তাদের নিজস্ব স্বার্থে সাধারণ মালিকানা প্রদান করে ও সমাজকে যৌথ মালিকানা প্রদান করে। বিখ্যাত দার্শনিক জোয়াড বলেছেন, "Socialism is used to devote both a body dictrim and political movement."
আফ্রিকান সমাজতন্ত্রের উদ্ভব : আফ্রিকান সমাজতন্ত্রের উদ্ভবকাল ধরা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তরকাল থেকে ।
অর্থাৎ যখন প্যান আফ্রিকান আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তরকালে ১৯৪৫ সালের ষষ্ঠ প্যান আফ্রিকান আন্দোলনে নেতৃবৃন্দ ঘোষণা করেন যে, “আফ্রিকান আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য বিশেষ ধরনের সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রয়োজন।" তাই দেখা যাচ্ছে যে, এ থেকেই আফ্রিকান সমাজতন্ত্রের পথ চলার প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। এ সিদ্ধান্ত অনুসারেই স্বাধীনতা পরবর্তী আফ্রিকান সমাজতন্ত্রের উদ্ভব হয়ে তা বিকশিত হতে থাকে। তবে সেনেগালের জাতীয়তাবাদী। নেতা লিওপোল্ড সেডার সেংহার ১৯৫৬ সালে 'Socialism African' শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন। ঔপনিবেশিক সেনেগালে French Socialist Party' এর একটি শাখা খোলা হয়েছিল। কারণ সেনেগাল ছিল ফ্রান্সের উপনিবেশ। সেংহার এ শাখার নেতা ছিলেন। ফ্রান্স সেনেগালকে স্বাধীনতা দানে বিলম্ব করে, কিন্তু 'French Socialist Party' এ ব্যাপারে কোন ভূমিকা না রাখায় তিনি হতাশ হয়ে এ পার্টি থেকে বেরিয়ে আসেন এবং একটি নতুন পার্টি গঠন করেন। তিনি এটি ১৯৫৯ সালে গঠন করে, এর নাম দেন "Union progressiste Senegalaise" তিনি এ দলের আদর্শ হিসেবে আফ্রিকায় সমাজতন্ত্রের কথা বলেন, যাতে শুধু আফ্রিকার বৈশিষ্ট্য থাকবে। এ সম্পর্কে তিনি বলেছেন যে, "আফ্রিকাকে একটি বিশেষ সমাজতন্ত্রের রূপ দিতে হবে, যা হবে কেবলই আফ্রিকান ধাঁচের।" এরপর আফ্রিকান অন্যান্য নেতারাও আফ্রিকান সমাজতন্ত্রের কথা বলেন, যাদের মধ্যে ড. নজুমা, জুলিয়াস নায়ারে, গিনির সেতুতুরে, মডিবো কেইটা, কেনিয়াত্তা প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। আফ্রিকান সমাজতন্ত্রের ব্যাপক ব্যাখ্যা করেছেন ঘানার প্রেসিডেন্ট ড. নক্রুমা। তিনি ১৯৫৯ সালে তাঁর 'Guide to Pan - African Socialism' গ্রন্থে এর বিশদ ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেছেন, “আফ্রিকার পরিস্থিতির উপযোগী সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সুতরাং তাদের কথাই শেষ পর্যন্ত বাস্তবে পরিণত হয় এবং স্বাধীনতাউত্তর আফ্রিকার সমাজতন্ত্রের উদ্ভব হয় এবং তা বিকশিত হয়ে প্রায় দুই দশক পর্যন্ত স্থায়ী ছিল।
আফ্রিকান সমাজতন্ত্র বিস্তারের কারণ : আফ্রিকান দেশগুলোতে উপনিবেশ স্থাপন করেছিল পুঁজিবাদী ও গণতান্ত্রিক দেশসমূহ। তাই স্বাভাবিকভাবেই আফ্রিকায় স্বাধীনতার পর পুঁজিবাদের ও গণতন্ত্রের প্রভাব বিস্তার করার কথা । কিন্তু তা না হয়ে আফ্রিকায় সমাজতন্ত্রের উদ্ভব ও বিকাশ ঘটে। অবশ্য এর পশ্চাতে কতিপয় কারণ নিহিত ছিল। নিম্নে এ কারণগুলো সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :
১. উপনিবেশবাদ : ইউরোপীয় শক্তিবর্গ ছিল পুঁজিবাদী রাষ্ট্র ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। পুঁজির ধর্ম হচ্ছে বিস্তার লাভ করা। পুঁজির বিস্তারের প্রয়োজনেই ইউরোপীয় শক্তিবর্গ আফ্রিকায় ৬%। বেশ স্থাপন করে এবং ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের মাধ্যমে আফ্রিকার সম্পদ পাঁচার করে। অন্যদিকে, পুঁজিবাদের বিপরীত দিক হচ্ছে সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র সবসময় ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে কথা বলে। তাই আফ্রিকায় ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সমাজতন্ত্র সাহায্য ও সহযোগিতা করেছে। ফলে আফ্রিকা স্বাধীনতা অর্জন করে। এজন্য স্বাধীনতাত্তোর আফ্রিকা সমাজতন্ত্রের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
২. শোষিত ও নির্যাতিতদের আদর্শ : সমাজতন্ত্রের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে শোষিত ও নির্যাতিতদের পক্ষ সমাজতন্ত্র সর্বদা অবলম্বন করে, যা তার আদর্শ। আফ্রিকা ছিল ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দ্বারা শোষিত ও নির্যাতিত। ইউরোপীয় শক্তিবর্গ আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপন করার পর সেখানে অত্যাচার ও নির্যাতনের বুলডোজার চালিয়েছে। ফলে আফ্রিকান জনগণ পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদকে ঘৃণা করত। এ প্রেক্ষাপটে আফ্রিকায় সমাজতন্ত্রের আগমনের পথ সুগম হয়। ৩. অর্থনৈতিক উন্নয়ন : ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের ফলে আফ্রিকার অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অবনতি ঘটে এবং এর প্রভাব সমগ্র আফ্রিকান জনগণের উপর পড়ে। স্বাধীনতাউত্তর আফ্রিকান দেশগুলো দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের পদক্ষেপ নিতে চেষ্টা করে। এ লক্ষ্যে তারা দেখেন যে, সমাজতান্ত্রিক দেশ কিভাবে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন করছে। তাই তারা অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সমাজতন্ত্রকে তাদের মডেল হিসেবে গ্রহণ করেন।
৪. গোত্রতন্ত্রের অবসান : আফ্রিকা ছিল গোত্র বিভাজিত সমাজকাঠামো এবং গোত্রীয় সমাজে দ্বন্দ্ব প্রায়ই লেগে থাকত। ফলে জাতীয় রাষ্ট্র গঠন সম্ভব হতো না। এ কারণে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিরাজ করত এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভবপর হয়ে উঠে নি। একদলীয় রাজনৈতিক সংগঠন গোত্রতন্ত্রের অবসান করতে সাহায্য করে। সমাজতন্ত্রে একদলীয় ব্যবস্থা বিদ্যমান থাকায় আফ্রিকান দেশগুলো সমাজতন্ত্রের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠে।
৫. বামপন্থি রাজনৈতিক সংগঠনের সমর্থন : ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে আফ্রিকান দেশগুলো যখন জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তখন এ সময় ঔপনিবেশিক দেশের বামপন্থি রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ তাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে সমর্থন ও সহযোগিতা করেছিল। আফ্রিকান দেশগুলোর স্বাধীনতা আন্দোলনে এদের একটা বিশেষ ভূমিকা ছিল। এসব দেশের মধ্যে ফ্রান্স, ইতালি, ইংল্যান্ড প্রভৃতি দেশ উল্লেখযোগ্য। তাই স্বাধীনতার পর স্বাভাবিকভাবেই এসব বামপন্থি দলগুলোর প্রভাব ছিল। ফলে এদের প্রভাবে আফ্রিকান দেশগুলো স্বাধীনতাউত্তরকালে ল গ্রহণ করেছিল।

আফ্রিকান সমাজতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর


অথবা, কোন কোন বৈশিষ্ট্য নিয়ে আফ্রিকায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল? উল্লেখ কর ।
উত্তরঃ ভূমিকা : বিংশ শতাব্দীর শুরুতে বিশ্ব দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। একভাগে গড়ে উঠে সমাজতান্ত্রিক ধারণা এবং অন্যভাগে পুঁজিবাদী ধারণা। পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্র দুটি ভিন্ন ধারণা এবং এদের অবস্থান ভিন্ন মেরুতে সমাজতন্ত্র হচ্ছে সকলের মধ্যে সম্পদের সমান বণ্টন ও ভোগ। অর্থাৎ এর দ্বারা বুঝায় দেশের সম্পদ ব্যক্তিমালিকানায় না থেকে যৌথ মালিকানায় থাকবে এবং স্লোগান হচ্ছে যোগ্যতা অনুসারে কাজ কর এবং যোগ্যতা অনুযায়ী ভোগ কর। এ সমাজতন্ত্রের ধারণার উদ্ভব ও বিকাশ হয় রাশিয়ায় এবং তা ক্রমান্বয়ে অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে। স্বাধীনতার পর আফ্রিকান দেশগুলোতে সমাজতন্ত্রের ধারণা ছড়িয়ে পড়ে এবং স্বাধীনতাউত্তর আফ্রিকার অধিকাংশ দেশে সমাজতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
আফ্রিকান সমাজত.র বেশিষ্ট্য : সমাজতন্ত্রের ধারণা আফ্রিকায় বিস্তার ঘটে ঔপনিবেশিক শাসনের পূর্বে এবং তা দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীনতাউত্তর আফ্রিকান দেশে। তবে ইউরোপীয় সমাজতন্ত্রের সাথে আফ্রিকান সমাজতন্ত্রের পার্থক্য ছিল। আফ্রিকায় ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের আলোকে যে সমাজতন্ত্র গড়ে উঠে তা আফ্রিকান সমাজতন্ত্র নামে পরিচিত। এ আফ্রিকান সমাজতন্ত্রের প্রবক্তা হলেন সেনেগালের কবি, জাতীয়তাবাদী নেতা ও প্রেসিডেন্ট লিওপোল্ড সেডার সেংহার। তিনি ১৯৫৯ সালে Union Progressiste Senegalaise নামক সংগঠন গড়ে তুলে আফ্রিকান সমাজতন্ত্রের ধারণা প্রচার করেন। তাঁর মতে, আফ্রিকাতে একটি বিশেষ সমাজতন্ত্রের রূপ দিতে হবে, যা হবে কেবলই আফ্রিকান ধাঁচের। অন্যদিকে, আফ্রিকান সমাজতন্ত্র সম্পর্কে ঘানার প্রেসিডেন্ট ড. নক্রুমা বলেছেন, আফ্রিকার পরিস্থিতির উপযোগী সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যাহোক, আফ্রিকায় যে সমাজতন্ত্র গড়ে উঠেছিল তার কতকগুলো নিজস্ব বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান ছিল। নিম্নে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. দ্রুত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন : আফ্রিকা ঔপনিবেশিক শোষণের ফলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মারাত্মক অবনতি হয় এবং অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়ে। স্বাধীনতাউত্তর আফ্রিকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে শাসকগণ প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। কারণ আফ্রিকার অর্থনৈতিক উন্নতি না ঘটলে শাসনকার্য সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা সম্ভব নয়। তাই সবার আগে চাই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন। সমাজতান্ত্রিক দেশে দ্রুত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল। এজন্য আফ্রিকান দেশে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। তাই দ্রুত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন হচ্ছে আফ্রিকান সমাজতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য।
২. উৎপাদনমুখী সমাজতন্ত্র : আফ্রিকান সমাজতন্ত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে উৎপাদনমুখী সমাজতন্ত্র। তৎকালীন বিশ্বে সমাজতান্ত্রিক দেশ ছিল দুটি রাশিয়া ও চীন। এরা তাদের সমাজতান্ত্রিক আদর্শ বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। এ সমাজতন্ত্রের আদর্শ হচ্ছে সরকার নিয়ন্ত্রিত উৎপাদন ব্যবস্থা যেখানে উৎপাদনের কার্যক্রম ব্যাহত হয়। আফ্রিকান সমাজতন্ত্রে পুঁজিবাদ থেকে অর্থ দিয়ে দ্রুত উৎপাদনমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ফলে এটা উৎপাদনমুখী সমাজতন্ত্র ।
-জিতন্ত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে শ্রেণি সংগ্রাম থাকবে এবং শ্রেণি সংগ্রামের
মাধ্যমে সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠবে। কিন্তু আফ্রিকান সমাজতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে শ্রেণি সংগ্রামের কোন অস্তিত্ব নেই। অর্থাৎ শ্রেণি সংগ্রামহীন সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠে। এ সম্পর্কে আফ্রিকান সমাজতন্ত্র বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে, আফ্রিকান
সমাজ প্রধানত দুটি ভাগে বিভক্ত । যথা :
ক. সুবিধাভোগী শ্রেণি যাদের মধ্যে রয়েছে পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদী দেশ।
খ. সুবিধা বঞ্চিত শ্রেণি যাদের মধ্যে রয়েছে ঔপনিবেশিক জনগণ।
এ থেকে দেখা যায় যে, আফ্রিকান সমাজব্যবস্থায় শ্রেণি সংগ্ৰাম অনুপস্থিত।
৪. ব্যক্তিমালিকানার উপস্থিতি : সমাজতন্ত্রের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ব্যক্তিমালিকানার অনুপস্থিতি। কিন্তু আফ্রিকান সমাজতন্ত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ব্যক্তিমালিকানার উপস্থিতি। আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপন করে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রসমূহ এবং আফ্রিকার অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে এমনভাবে বিন্যস্ত করে তারা চলে যায় যে, তাদের সাহায্য ছাড়া আফ্রিকা অচল। ফলে আফ্রিকান দেশসমূহ বাধ্য হয়ে ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে এবং দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপর জোর দেয়। ফলে ইউরোপীয় সমাজতন্ত্রের সাথে আফ্রিকান সমাজতন্ত্রের এ বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় ।
৫. রাষ্ট্রের বিলুপ্তিকরণ নয় : আফ্রিকান সমাজতন্ত্রের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে রাষ্ট্রের বিলুপ্তিকরণ নয় বরঞ্চ রাষ্ট্রের অস্তিত্ব টিকে থাকবে। অথচ মার্কসবাদের সমাজতন্ত্রে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে, “সমাজতন্ত্রের এক পর্যায়ে প্রলেতারিয়েতদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে এবং রাষ্ট্রের আর কোন অস্তিত্ব থাকবে না।” কিন্তু আফ্রিকান নেতৃবৃন্দ জাতীয় রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তার কথা বার বার উচ্চারণ করেছেন। কারণ গোত্র বিভাজিত আফ্রিকান সমাজে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয় । তাই আফ্রিকান অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অবশ্যই জাতীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সুতরাং এখানে দেখা যাচ্ছে যে, ইউরোপীয় সমাজতন্ত্রের সাথে রাষ্ট্রের বিলুপ্তিকরণের বৈশিষ্ট্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় আফ্রিকান সমাজতন্ত্রে ।
৬. রাজনৈতিক দল : সমাজতন্ত্রে কোন রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব বা দলীয় কোন কার্যক্রম স্বীকার করা হয় না। এতে বলা হয় রাষ্ট্রই সব এবং জনগণই সকল দলের ঊর্ধ্বে যেখানে সকলকে নিয়ে রাষ্ট্র গঠন করা হয়। কিন্তু আফ্রিকান সমাজতন্ত্রে দলীয় সংগঠন বা রাজনৈতিক দলকে স্বীকার করে নেওয়া হয় এবং রাজনৈতিক দলের কার্যক্রমকে স্বীকৃতি দেয়া হয়। তবে এখানে বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে বিলুপ্তি করে একদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়। এ সম্পর্কে ঘানার প্রেসিডেন্ট ড. নক্রুমা বলেছেন যে, "একটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান থেকে দলীয় কর্মী পর্যন্ত সবাই যদি একই দলের হয়, তাহলে ঐ রাষ্ট্র উন্নতির দিকে অগ্রসর হবে। কেননা দলীয় সংগঠনের মাধ্যমে গোত্রসহ লোকদের একত্রিত করা যাবে।” সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, আফ্রিকান সমাজতন্ত্রে রাজনৈতিক দলের কার্যক্রমকে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে যা একটি বৈশিষ্ট্য হিসেবে গণ্য করা হয়।
মূল্যায়ন : আফ্রিকা মহাদেশে উপনিবেশ স্থাপন করে পশ্চিমা বিশ্ব তথা পুঁজিবাদী বিশ্ব এবং পুঁজিবাদ বিস্তারই তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পর আফ্রিকার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয় নি। অথচ পুঁজিবাদের শত্রু সমাজতন্ত্রবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আফ্রিকান বেশকিছু ছাত্র সমাজতান্ত্রিক দেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যায় এবং তারা সমাজতন্ত্রের ধারণা নিয়ে দেশে ফিরে ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই করে তাদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেয়। এর ফলে স্বাধীনতাত্তর আফ্রিকান দেশে সমাজতন্ত্রের উদ্ভব ও বিকাশ ঘটে। কিন্তু ইউরোপীয় সমাজতন্ত্রের ক্ষেত্রে যেসব বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় আফ্রিকান সমাজতন্ত্রে তা হয় নি। বরঞ্চ কতিপয় আলাদা বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। ফলে আফ্রিকান সমাজতন্ত্রের সাথে ইউরোপীয় সমাজতন্ত্রের ব্যাপক পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। তাইতো এটা ইউরোপীয় সমাজতন্ত্র না হয়ে আফ্রিকান সমাজতন্ত্র নামে পরিচিত হয়েছে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ইউরোপীয় দেশে সমাজতন্ত্রের উদ্ভব হয়ে তা অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে, বিশেষ করে আফ্রিকান দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপকভাবে। কিন্তু আফ্রিকায় সমাজতন্ত্রের বিস্তার ঘটলেও তা ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের আলোকে ঘটে এবং ইউরোপীয় সমাজতন্ত্র থেকে পৃথক হয়ে যায়। এ বৈশিষ্ট্যের মধ্যে ব্যক্তিমালিকানা, রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব, রাষ্ট্রের অস্তিত্ব, শ্রেণি সংগ্রামের অস্তিত্ব প্রভৃতি পরিলক্ষিত হয়। তবে এসব বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এবং আফ্রিকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যই রাষ্ট্রপ্রধানগণ সমাজতন্ত্র গ্রহণ করেন। তাইতো আফ্রিকান সমাজতন্ত্র আলাদা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]